ভালোবাসা পর্ব ১০

0
448

ভালোবাসা
পায়েল ব্যানার্জি
পর্ব ১০

* * ২৭ * *

সন্ধ্যে বেলা রজতকুমার যখন ওর ঘরে ডাকল তখন ভেবেছিলাম পলাশদের নিয়ে হয়ত কিছু বলবে। কিন্তু ওনার ঘরে গিয়ে ওনার ওই অদ্ভুত ব্যবহারে অবাকই হয়েছিলাম। আরও অবাক হলাম যখন ওনার প্রথম শর্ত বললেন আমার সাথে উনি বন্ধুত্ব করতে চান। কারণ একে তো উনি কত বড় সেলিব্রিটি, কত বড় মানুষ! আর আমি সাধারণ একটা ছোটো হোটেল মালিকের মেয়ে, একটা বেসরকারী স্কুলের শিক্ষিকা! ওনার আর আমার শ্রেনীপার্থক্য যে বিশাল। আর সেই পার্থক্য আমি ঘোচাতেও চাই না। কারণ ওনার জগতে আমি যেমন বেমানান, আমার জগতেও উনি বড়ই বেমানান। সুপারস্টারের প্রভাবের জন্যই ওনার কাছে সাহায্য চাইতে গেছিলাম দায়ে পড়ে। নইলে ওনার সামানে দাঁড়ানোর যোগ্যতাও আমার নেই। তবু উনি যখন বন্ধুত্ব করতে চাইলেন, বড়লোকের খেয়াল বলে মেনে নিলাম। জানি এ খেয়াল ওনার মাত্র কদিনের। তবু যখন উনি ওনার দ্বিতীয় শর্ত নিয়ে একেবারে আমার কাছে, আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন কেন জানি না বুকের ভেতরে যেন হাজার টা ড্রাম বাজতে লাগলো। ওনার অত কাছে দাঁড়িয়ে নেশা লেগে যাচ্ছিলো। অনেক কষ্টে নিজেকে শাসন করেছি। জানিনা কাল যদি ওনার দ্বিতীয় শর্ত মেনে ওনার সাথে ঘুরতে যাই তাহলে কি হবে!

রাতে সব কাজ সেরে নিজের ঘরে এসে ফোনটা খুলতেই চমকে উঠলাম। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ উনি মেসেজ করেছেন। উত্তর দেবো, কি দেবো না! এই ভাবতে ভাবতে উত্তরটা দিয়েই ফেললাম। কিন্তু উনি যেন আমার মেসেজেরই অপেক্ষা করছিলেন এমন ভাবে মেসেজ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পাঠাতে থাকলেন। কালকের যাওয়াটা নিয়ে উনি খুবই সিরিয়াস! এই অবস্থায় না গেলে অত বড় মানুষকে অপমান করা হবে! বিশেষ করে উনি যখন নিজে এত আগ্ৰহ দেখাচ্ছেন। তখন না যাওয়াটা অভদ্রতা হবে। বেশ যাবো কাল দুপুরে ওনার সাথে! তবে একটা অদ্ভুত জিনিস লাগলো, ঘুরতে যেতে হলে উনি অন্য কোথাও যেতে পারতেন। দার্জিলিং বা ঘুমে ঘোরার জায়গার তো অভাব নেই। সব ছেড়ে উনি খামোখা আমার জীবনের সঙ্গে জড়িত জায়গা গুলো কেন দেখতে চাইলেন। কি জানি! বড়লোকেদের কত রকমই খেয়াল হয়। সতিই!

* * ২৮ * *

সকালে উঠে ঘরের হাজার কাজের মধ্যে ভুলেই গেছিলাম ওনার কথা! ওনার সাথে বেড়াতে যাওয়ার কথা! কিন্তু উনি যে ভোলেন নি, আর আমার উত্তরের প্রতীক্ষা করে আছেন সেটা বুঝতে পারলাম বেলা এগারোটা নাগাদ ঘরের সব কাজ শেষ করে ফোনটা হাতে নিতেই। এতক্ষণ ফোন ধরার সময় পাই নি। এমনিও ঘরের কাজ থাকলে আমার ফোন থাকে এক জায়গায় আর আমি থাকি এক জায়গায়। এখন ফোন নিয়ে দেখলাম তিনটি মেসেজ এসেছে সকাল থেকে। প্রথমটি “হাই” , দ্বিতীয়টি “আজ কটায় বেরোবে বললে না তো!” আর তৃতীয়টি “কোথায় দেখা করবে বলো। আমি পৌছে যাবো।” একজন সুপারস্টার একজন সাধারণ মেয়ের সাথে ঘুরতে যেতে এতই উদগ্ৰীব এটা কেমন খাপছাড়া লাগছে! কি আর করা যাবে! উনি আমাদের হোটেলের গেস্ট, এতবড় সম্মানীয় ব্যক্তি যখন নিজে বারবার ঘুরতে যেতে চাইছে আর এড়ানো উচিৎ নয় বলে মেসেজ করেই দিলাম, দুপুর বেলা দুটো নাগাদ ঘুম স্টেশনে দেখা করবো। ওনাকে মেসেজ করে আমিও তৈরী হতে শুরু করলাম।

দুপুর দুটো বাজতে তখনও মিনিট দশেক বাকী! প্রতিদিনের মত ভাই এসে ওর আর বাবার দুপুরের খাবারটা নিয়ে চলে যেতেই আমি তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম স্টেশনের দিকে। জানি উনি সুপার্স্টার। ওনারা দেরী করে আসেন এসব গল্প অনেক শুনেছি। তাই ঠিক করলাম স্টেশনে পৌছে আমার এক বন্ধু ওখানে কাজ করে তার সঙ্গে খানিক গল্প করবো। কিন্তু স্টেশনে পৌছে আমিই চমকে গেলাম! রজতকুমার এসে একটি বেঞ্চে বসে আছে। হাতঘড়ি, স্টেশনের ঘড়ি মিলিয়ে দেখলাম। দুটো বাজতে পাঁচ মিনিট বাকী! সময় তো দিয়েছিলাম দুটোয়! উনি পাঁচ মিনিট আগেই এসে হাজির হয়েছেন! অবিশ্বাস্য! হয় উনি অন্যদের মত দেরী করেন না, স্বভাবতই সময়ানুবর্তী! আর নইলে আজকের জন্যই এত তাড়াতাড়ী এসেছেন। তবে আমার সাথে ঘুরতে যাবেন বলে পাঁচ মিনিট আগেই এসে বসে আছেন। এটা আবার আমার কিরকম লাগল। যাই হোক এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে। আমি এগিয়ে আসতে দেখেই উনি হাসামুখে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। সেই মাথায় ফিল্মি কায়দার চুল, কিন্তু মুখে গোঁফ-দাড়ি। চোখে রঙিন সানগ্লাস। পরনে ডেনিম জিন্স, একটা গাঢ় সবুজ রঙের হাইনেকের সঙ্গে লেদার জ্যাকেট। হিরোচিতই লুক। আমি সামনে গিয়ে দাড়িয়ে সৌজন্যের হাঁসি দিতেই উনি বললেন তাহলে যাওয়া যাক?
-কোথায়? আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম। আসলে উনি কোথায় যেতে চান সেটাই দ্বিতীয়বার নিশ্চিত হতে চাইছিলাম আর কি! উনি বললেন
-কেন! কাল যে বললাম! তোমার জীবনের সঙ্গে জড়িত জায়গাগুলোয় যাবো। তোমার প্রিয় জায়গাগুলোয় যাবো।
-হুম। বেশ চলুন। হাঁটতে পারবেন তো? এবার একটা অদ্ভুত উত্তর দিলেন উনি
-তুমি সাথে থাকলে সব পারবো। হাঁটা তো অনেক ছোটো ব্যাপার। ওনার এই উত্তরে আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো! এইরকম কথা উনি কেন বললেন! আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি হেসে আমার চোখের সামনে হাত নেড়ে বললেন কি হলো? আবার এত কি চিন্তা? আমি তোমার সাথে থাকলে তোমায় এত ভাবতে হবে না। ওটা আমি ভেবে দেবো বুঝলে। এবার চলো। ওনার কথায় ধ্যান ভাঙলো। মাথা নীচু করে বললাম চলুন। আগে আপনাকে আমার স্কুলে নিয়ে যাই। যেখানে আমার জীবনের বারোটা বছর কেটেছে। উনি আমার কথায় হেসে ব্যঙ্গ করে বললেন, আগে জন্মস্থান নয়, আগেই স্কুল! সত্যি তোমরা দিদিমনিরা আগেই স্কুল বোঝো, না? আমিও হেসে বললাম জন্মস্থান দার্জিলিংয়ে। ওটা পরে দেখাবো। স্কুল আর কলেজটা এখান থেকে কাছে, তাই ওটাই আগে দেখাচ্ছি। উনি হেসে অঙ্গভঙ্গীতে আমাকে ওনার পথপ্রদর্শক হয়ে এগোতে বললেন, আমিও হেসে এগিয়ে চললাম আমার জীবনের পাতাগুলো ওনার সামনে মেলে ধরবো বলে। উনিও আমাকে অনুসরণ করে চলতে লাগলেন।

* * ২৯ * *

সুজাতার সঙ্গে ওর স্কুলে যাওয়ার পথে ওর ছোটো বেলার গল্প শুনছিলাম। ও ছোটো বেলায় প্রথম স্কুলে পা রেখেছিলো ওর মায়ের হাত ধরে। ওর মা ওকে রোজ স্কুলে পৌছতে আসতেন, আর ও সারা রাস্তা স্কুল যাবে না বলে কাঁদতে কাঁদতে যেতো। স্কুলে ওদের ক্লাস টিচার ওকে এবং ওর মত যারা স্কুলে আসবে না বলে কাঁদত সবাইকে চকলেট দিতেন। পরে ওই চকলেটের লোভেই ওরা স্কুল যেতো।

তারপর আমরা স্কুলে পৌছলে ও দারোয়ানকে বলে স্কুলের ভেতরে ঢুকলো। দেখলাম বুড়ো দারোয়ানের সঙ্গে ওর বেশ খাতির আছে, সেই নিয়েও কত স্মৃতিকথা, এই দারোয়ান ওদের সময় থেকেই আছেন। ওনার টিফিনটাইমে গল্প করা, খাবারের ভাগ দেওয়া এসব ছোটো ছোটো স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছিলো ও আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলাম। আর ধীরে ধীরে চিনছিলাম আমার সুজাতাকে। আমিও আমার স্কুল জীবনের ঘটনা মাঝে মাঝে ওর সাথে ভাগ করে নিচ্ছিলাম। ওর মত শান্ত বা পড়াশোনায় ভালো আমি ছোটো বেলায় ছিলাম না। বরং আমার ছোটো বেলা, দুষ্টুমি, আর গার্জেন কলে ঠাসা ছিলো। সেই সব শুনে ওর অবাক দৃষ্টি আর আমার দুষ্টুমির কথা শুনে ওর অনাবিল হাসি আমাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছিলো।

ওর স্কুল থেকে বেড়িয়ে আমরা হাটতে লাগলাম ওর কলেজের পথে। পথে ওর জীবনের আরও অনেক গল্প শুনলাম। যেম মাত্র দশ বছর বয়সেই ও নিজের ভাইয়ের মায়ের ভুমিকা নিতে হয়েছিলো, কারণ ওর যখন ন বছর বয়স তখন ওর ভাইকে জন্ম দিতে গিয়ে ওর মা মারা যান। তারপর থেকে ও নিজের সাথে পরিবারের দায়িত্ব নিতেও শিখে যায়। ওর বাবা ওদের জন্য কত ত্যাগ করেছেন এসব। ওর কথা যত শুনছিলাম তত মনে এটাই হচ্ছিল সত্যি সুজাতা তুমি সবার থেকে আলাদা। আর তাই তুমি সবাইকে খুশী করার চেষ্টা করো। কিন্তু চিন্তা কোরো না, তোমার অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার ভার এখন থেকে আমার। কোনোদিন কোনো কষ্টকে তোমায় আর ছুঁতেও দেবো না।

ওর কলেজটা জোড়বাঙলোর দিকে ওখানে পৌছে বাইরে থেকে কলেজটা দেখে আবার গল্প করতে করতে ফিরে এলাম ঘুম স্টেশনে। এখানে আসার পর ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, এবার? আমি বললাম আর কোনো জায়গা নেই? ও হেসে বলল আমি গুড গার্ল ছিলাম, স্কুল বা কলেজ থেকে সোজা বাড়ীই ফিরতাম। বলেই হাহাহাহা! করে জোরে হেসে উঠল। এই প্রথম ওকে আমি এত জোরে হাসতে দেখলাম। ওর হাসি থামলে আমি বললাম বড় হওয়ার স্থান তো দেখলাম, জন্মস্থানটা দেখাবে না? ও আবার হাসলো, তারপর বলল তার জন্য আমাদের দার্জিলিং যেতে হবে যে! আমিও হেসে বললাম। ভালোই তো, আগে লাঞ্চ করে তারপর ঘুরতে পারবো তাহলে। ও আর কিছু না বলে সম্মতি জানালো। আমরাও রওনা হলাম দার্জিলিং-এর দিকে।

দার্জিলিং পৌছে দুজনেই প্রথমে একটি রেস্ট্যুরেন্টে গিয়ে ঢুকলাম। শিভলরি দেখিয়ে প্রথমে মেন্যুকার্ডটা ম্যাডামের দিকে এগিয়ে দিলাম। কিন্তু প্রথমে খানিকক্ষণ কার্ডটা ধরে বসে রইল, আমি ভাবলাম হয়ত পছন্দ করতে পারছে না কোনটা খাবে। কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম যে আলাপের প্রথম দিন থেকে মহারাণী আমার সব চিন্তাভাবনাকেই ভুল প্রমানিত করে আসছেন এবং এটাও প্রমান করছেন বারে বারে যে ওনাকে চিনতে আমার এখনও ঢের বাকী। খানিকপরে যখন ওয়েটার অর্ডার নিতে এলো আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হলো, কিছু ঠিক করলে? কি খাবে? ম্যাডাম মেন্যুকার্ড থেকে আমার দিকে চোখ তুলে করুণ মুখ করে বললেন কি খাবো? প্রচুর দাম তো এখানে! হায় রে রজতকুমার! শেষে তোর প্রেমিকা এই চিন্তা করছে! বৃথাই তোর এত রোজগার করা। আমি হেসে বললাম তুমি শুধু তোমার পছন্দের অর্ডারটা দাও। দাম নিয়ে একদম ভাববে না। তাও ম্যাডামের কিন্তু কিন্তু যায় না দেখে বাধ্য হয়েই আমিই চাইনিজ অর্ডার দিলাম দুজনের জন্য।

খাওয়া দাওয়া হলে দুজনে রেস্ট্যুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গল্প করতে করতে হাটতে থাকলাম। এখন ওর ভেতরের জড়তা অনেকটা কে‌‍‍টেছে আমার প্রতি। এটাই তো চাই‌। জড়তা কাটলে ও আমার কাছে আসবে কি করে! তবে আমি এটুকু বুঝেছি, সুজাতার জীবনের চাহিদাগুলোও ওরই মত, সাধারণ। তাই বিলাসিতা বাহুল্য ওকে আকর্ষন করে না। তাই ওর মন পেতে হলে আমাকেও ভুলে যেতে হবে আমার স্টারডম। একজন সাধারণ মানুষ হয়েই আমাকে ওর কাছে ধরা দিতে হবে। আমার ভেতরের আমিটাকে ওর সামনে দাঁড় করাতে হবে। বাইরের সুপারস্টার রজতকুমার নয়, আমার ভেতরের আসল রজত মিত্রকেই চেনাতে হবে ওকে।

এসব চিন্তা আর গল্পের মাঝেই আমরা কখন যে দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি, খেয়ালই নেই। হুঁশ ফিরল ওর কথায় এই যে, আমার জন্মস্থান। ওর ইশারায় সামনে সামনের দিকে তাকালাম। ও বলল, এখানে আমি আর ভাই জন্মেছিলাম। মাও এখানেই……… বলে আর কথাটা শেষ করতে পারল না ও। ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ওর চোখের জল আমার বুকে তিরের মত বিঁধতে লাগলো। আমি আর পারলাম না ওর চোখের জল সহ্য করতে, আমার একহাতে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে অন্য হাত দিয়ে ওর চোখের জলটা মুছিয়ে দিলাম। ও আমার দিকে তাকালো। ওর ওই দৃষ্টিটা আমাকে কষ্টে বেদনায় জর্জরিত করে দিচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো চেঁচিয়ে বলি তোমার অতীতের কষ্টের ওপর আমার কোনো প্রভাব নেই সুজাতা, কিন্তু ভবিষ্যতে তোমার ওপর আর কোনো কষ্টের ছায়াও আমি পড়তে দেবো না, এই আমার প্রতিজ্ঞা।

ওখানে দাঁড়িয়ে আর সুজাতাকে কষ্ট পেতে দিতে চাই নি। তাই ওকে একরকম তাড়া দিয়েই ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। ফেরার রাস্তায় ও চুপ করে ছিলো। হয়ত নিজেকে আবার গুছিয়ে নিচ্ছিলো। সত্যি বলছি সুজাতা, আমি যদি জানতাম এখানে এলে তুমি কষ্ট পাবে কোনোদিনও এখানে আসার কথা বলতাম না তোমায়।

দুজনে নিস্তব্ধ হয়ে হাটতে হাটতে ম্যাল মার্কেটে এসে পৌছলাম। এখান এসে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। আমার মা, বোন বা আমার সহকর্মী বান্ধবীদের দেখে এটুকু জেনেছি মেয়েদের হাজার মনখারাপ এক নিমেষে ভালো করে দিতে পারে শপিং। আমি যদি সুজাতার সঙ্গে শপিং করি, ওরও মন ভালো হতে পারে আর আমারও ওর পছন্দ অপছন্দ জানা হয়ে যেতে পারে! উফ্ আমার কি বুদ্ধি!

সুজাতাকে প্রস্তাবটা দিতে দেখলাম এই ব্যাপারে আমি সুজাতার সম্পর্কে ঠিকই অনুমান করেছি। ও-ও রাজী হয়ে গেলো। এই একটা ব্যাপারে সব মেয়েরাই সমান। তবে সুজাতা যে সবার মত হয়েও সবার থেকে আলাদা এটা আবার প্রমাণ করল ও। শপিং তো করলো। ওর পরিবারের সকলের জন্য। এমনকি আমি মায়ের জন্য, বাবার জন্য, বোনের জন্য কিছু কিনতে চাই শুনে নিজেই ওদের গিফ্ট পছন্দ করে দিলো। সত্যিই মেয়েটার পছন্দ আছে! যা যা পছন্দ করলো সেগুলো এক্সেলেন্ট। কিন্তু ম্যাডাম নিজের জন্য কিছুই কিছুই কিনছেন দেখে আমি নিজেই ওর জন্য কিছু গিফ্ট কিনলাম। তিনি তাও নিতে চান না। খালি কিন্তু, কিন্তু। শেষে আমাকে বলতেই হলো এটা আমাদের নতুন বন্ধুত্বের প্রতিক স্বরূপ। না নিলে আমি মাইন্ড করবো। ব্যাস! যে রোগের যে ওষুধ আর কি! আমার ইমোশনাল ওষুধে সুজাতারও কিন্তু কিন্তু রোগ সারল।

কেনাকাটা সেরে এবার ফিরতে হবে। যদিও গন্তব্য আমাদের একই তবু ফিরতে হবে আলাদা। সুজাতার একান্ত অনুরোধ এটাই। অগত্যা কি আর করা। কেভেন্টার্স অবধি একসাথে এসে আমি পিছিয়ে গেলাম, সুজাতা এগিয়ে গেলো। আমিও চাই না সুজাতার মনে পুরোপুরি জায়গা না করতে পারা অবধি ওর বাবার সামনে গিয়ে আমাদের ভালোবাসার কথা জানাতে, কারণ আমি নিজেই জানি না সুজাতা আমাকে…………. তবে আমি চেষ্টার ত্রুটি রাখবো না ওকে আমার মনের কথা বোঝাতে। ও নিশ্চয়ই বুঝবে আমার ভালোবাসা! হে ঈশ্বর মুখ তুলে তাকিও।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here