ভালোবাসা এমনও হয় পর্ব-১১

0
746

#ভালোবাসা_এমনও_হয়
#Writer_Nusrat_Jahan
#part_11

নেশাঃ ইশান ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে????

রিনাঃ হ্যা কেন তুই জানিস নাহ।।ইশান তো বললো তুই নাকি চিনিস মেয়েটাকে।

নেশাঃ কিন্তু আমি তো কিছু……

নেশা আর কিছু বলতে যাবে ইশান এসে পিছনে দাড়ালো।

ইশানঃ এনি প্রবলেম গাইস

নেশাঃ ??

রিনাঃ আরে তুই নাহ বললি নেশা সব জানে।।এখন ও বলছে যে ও কিছুই জানে নাহ।

ইশান একবার নেশার দিকে তাকালো।নেশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে

ইশানঃ আসলে খালামনি ওকে বলা হয়নি।।তুমি যাও আমি বলছি

রিনাঃ আচ্ছা। (রিনা চলে গেল)


নেশাঃ এটা কি ইশান ভাইয়া।।তুমি বিয়ে করছো

ইশানঃ হ্যাঁ কেন বিয়ে কি মানুষরা করে নাহ

নেশাঃ কিন্তু তুমি তো

ইশানঃ আমি তো?

নেশাঃ তুমি তো আমায় পছন্দ ক….

ইশানঃ আর ইউ মেড।তোকে আমি পছন্দ কেন করবো?।

নেশাঃ ককিন্তু তুমিই তো ওই দিন আইসক্রিম পার্লারে বললে

ইশানঃ কি বলেছি

নেশাঃ যে তুমি আমার জন্য ফিল করো

ইশানঃ আমি কি বলেছি যে আমি তোর জন্য ফিল করি।।আমি যাস্ট তোর টা জানতে চেয়েছি। আমি তোকে পছন্দ করি কবে বললাম

নেশাঃ তাহলে এতোদিন এতো কেয়ার ??এইসব কি ছিলো

ইশানঃ কিসব বলছিস নেশা এইসব

নেশাঃ কিছু নাহ

নেশা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ইশান ও রুমের চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে বাঁকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল

পরেরদিন –
সবাই মিলে মেয়ের বাড়িতে গেল।।নেশা ও গিয়েছে।।কারন তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে নাহ কিছু।।কে এই মেয়ে তা নেশাও দেখতে চায়।

আংটি বদল হয়ে গেল তাও নেশার সামনেই।।ইশান নেশার দিকে একবারও তাকালো নাহ।নেশা মনে মনে একবারে ভেঙে পরলো।আর মেয়েটা আর কেউ নাহ নিহা।।ইশান নিহাকে বিয়ে করবে বলে ভেবেছে।

এইদিকে আয়ানও এসেছে আজ।আজ পুরো ঘটনাতেই সে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে। কারন সে এই ব্যাপারের কিছুই জানতো নাহ।সে ভেবেছিলো ইশান নেশাকে ভালোবাসে।।
সব কিছু শেষ হওয়ার পর ইশানকে আয়ান টেনে ছাদে নিয়ে গেল।

ইশানঃ হোয়াট

আয়ানঃ এইসব কি ইশান।।তুই নিহাকে বিয়ে করছিস কেন

ইশানঃ তো অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ছিলো বুঝি।।আমি তো নিহা কেই ভালোবাসি।।তাহলে তাকে বিয়ে করবো নাহ কেন

আয়ানঃ আর নেশা।।ওর সাথে এতোদিন কি ছিলো

ইশানঃ কিসব বলছিস আয়ান।।ও আমার বোন হয়।।ওকে নিয়ে আমি এইসব কখনো ভাবি নি

আয়ানঃ সবাইকে এইটা বলে বিশ্বাস করাতে পারলেও আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবি নাহ।তুই কোন কারন ছাড়া কিছু করিস নাহ।।

ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে হেসে দিলো।

ইশানঃ ঠিক বলেছিস আয়ান।।আমি কোন কারন ছাড়া কিছু করি নাহ(বাঁকা হেসে)

আয়ানঃ তাহলে কেন তুই এইসব করলি

ইশানঃ নেশাকে কষ্ট দিতে

আয়ানঃ কিসব বলছিস তুই ইশান

ইশানঃ আচ্ছা আয়ান তুই আগে একটা কথা বল পার্টির দিন পর্যন্ত আমি নেশাকে ঘৃণা করতাম তাকে হঠাৎ করে এতো কেয়ার করতে শুরু করলাম কেন সেটা কি তোর মনে একবার ও আসে নি

আয়ানঃ কারন তুই ওকে ক্ষমা করে দিয়েছিলি

ইশানঃ ক্ষমা?।ওই বস্তির মেয়েকে আমি জীবনে ও ক্ষমা করবো নাহ।এতোসব কিছু সব নাটক ছিলো,অভিনয় ছিলো ওকে কষ্ট দেয়ার জন্য।।বাট দেখ পুরো প্লেন টা ফ্লপ হয়ে গেল।।আর কয়েকদিন নাটক টা করতে পারলে আরো বেশি করে ভালো করে ওই বস্তির মেয়েটার মনটা আরো সুন্দর করে ভাঙতে পারতাম।বাট যাই হোক।।আই এম সাকসেসফুল?

আয়ান কিছু বলতে যাবে দেখলো নেশা পিছনে দাড়িয়ে সব শুনছে।।

আয়ানঃ আরে নেশা তুমি
নেশা কিছু নাহ বলে বেরিয়ে গেল।

আয়ানঃ ইশান একটা কথা বলি। আজ তুই যা করলি তার থেকে খারাপ হয়তো আর কিছু হতে পারে নাহ।।তুই এতোদিন আমার বন্ধু ছিলি সেটা আমার ভাবতেই লজ্জা লাগছে।

ইশানঃ বন্ধু ছিলাম মানে!

আয়ানঃ মানে আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ।

ইশানঃ আয়ান তুই..
আয়ান চলে গেল।

 

রাতে নেশা সোজা ইশানের রুমে ঢুকে তার রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো

ইশানঃ হোয়াট?

নেশাঃ কেন করলে এমন ইশান ভাইয়া

ইশানঃ তোর সাহস কতো বেড়ে গেছে নেশা.আমার সাথে চোখ উঠিয়ে কথা বলছিস।।চোখ নামা বলছি

নেশাঃ কিন্তু আজ যে আমার জবাব চাই ইশান ভাইয়া।।তোমাকে তো জবাব দিতে হবে

ইশানঃ কিসের জবাব

নেশাঃ তুমি কেন করলে এমন। কি দোষ ছিলো আমার

ইশানঃ সব দোষ তোর সব দোষ।।আমার লাইফে যত কষ্ট ছিলো সব কিছুর জন্য দ্বায়ী শুধু তুই।। আর তুই ভেবেছিস আমি তোকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো।

নেশাঃ তাই বলে এইভাবে?

ইশানঃ ইয়েস মাই সিস।।এই ভাবেই।দেখ তোকে যদি অন্যভাবে কষ্ট দেয়ার প্লেন করি তাহলে তাতে আমার পরিবারেও এফেক্ট করবে।।তাই ভাবলাম তোকে ফিজিক্যালি নয় বরং মেন্টেলি কষ্ট দেই।।উফফ কতো সখ করে আমাকে প্রপোজ করার জন্য রুমটাকে সাজিয়েছিলি।।আর দেখ তোর সুন্দর মনটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলাম?।

নেশাঃ এতো অভিনয় কিভাবে করতে পারলে তুমি

ইশানঃ আরে প্লেন করেছি প্রোপারলি।ওইদিন পার্টির দিন রাতে রাফিকে আমি ইচ্ছা করেই মেরেছিলাম।যাতে তোর কাছে ভালো হওয়া যায়।।আর ওই ব্যাপারে যখন আয়ান আমার সাথে কথা বলছিলো তখনও আমি দেখেছিলাম তুই দরজার ওইখানে দাড়িয়ে আছিস তাই তোকে শুনিয়ে ওই নাটক টা করলাম।ওইদিন মোবাইল আমি ইচ্ছা করেই বাড়তে রেখে গেছিলাম।।কারন আমি জানি তুই আমার মোবাইল এর গ্যালারি দেখবি।।তাই আগের দিন রাতেই তোর ঘুমন্ত কয়টা ছবি তুলে রেখেছিলাম।।যাতে তুই ভাবিস আমি তোকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে যাই।।তারপর আমি প্লেন করেই তোকে কলেজে ভর্তি করাই।।বাট ওই নিরব আবার এসে সব প্লেন ফেল করে দিতে চায়।।কারন ও তোকে পছন্দ করা শুরু করে দেয়।।তাই যাতে কোন রিস্ক না হয় তাই চুপেচাপে তাকে সরিয়ে দিলাম।তারপর…..

নেশাঃ থাক আর জানতে হবে নাহ।।আমার কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে।।সত্যিই খুব ভালো অভিনয় করো তুমি।তোমাকে থিয়েটারে যাওয়া উচিত

ইশানঃ ?

নেশাঃ কিন্তু কাজটা নাহ করে যদি আমায় মেরে ফেলতে তাহলেও হয়তো এতোটা কষ্ট হতো নাহ।।তোমার প্রতি তো কোন অভিযোগ ছিলো নাহ।এতো অপমানের পরও কখনো তোমাকে কিছু বলি নি।।তবুও এতো রাগ তোমার আমার প্রতি।।কেন ইশান ভাইয়া।।আমি কি এতোই খারাপ।।এই ভালোবাসার নাটক টা না করলে কি হতো নাহ??।।

ইশানঃ নাহ রে।। অন্য কোন ভাবে তোকে শাস্তি দিলে হয়তো এতোটা শান্তি পেতাম নাহ যতোটা আজ পাচ্ছি।তোর ওই চোখের পানি গুলো দেখলেই কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়।।সত্যিই কাউকে কষ্ট দিয়ে যে এতো আনন্দ পাওয়া যায় আমি তা জানতাম নাহ।।

নেশাঃ দেখে নিন ইশান।।আজ আমায় কাদতে দেখে নিন।।আজ এই কান্নাই আমার শেষ কান্না। হ্যাঁ আপনি সত্যি আজ জিতে গেছেন।আমায় কষ্ট দিতে সফল হয়েছেন।।কিন্তু আপনি হারবেন।নিজের ভাগ্যের কাছে হারবেন।।তখন আমি দেখবো।

ইশানঃ নাইস জোক।।আর কি বললি তুই।। তোর সাহস করে হয় আমায় নাম ধরে ডাকার।

নেশাঃ কারন আজ থেকে আপনি আমার কেউ নাহ।।আজ থেকে আপনি শুধু অপরিচিত। একজন সার্থপর মানুষ।

ইশানঃ তু…

ইশানকে কিছু বলতে নাহ দিয়ে নেশা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

তারপর আর ইশান আর নেশাকে দেখেনি।।অবশ্য দেখার চেষ্টা ও করেনি

২৩ তারিখ-
আজ ইশানের গায়ে হলুদ। নিহা আর ইশানকে এক সাথেই হলুদ দেয়া হবে।।আর আজ নেশা আমেরিকা চলে যাবে।।প্লেন টা নেশারই।যেই স্কলারশিপ এর জন্য নেশা চান্স চেয়েছিলো সেটা পেয়েছিলো।।কিন্তু তখন যাবে ভাবে নি।।কিন্তু এখন যখন ইশান এই কাজটা করেই ফেললো তখন আর তার কলেজে যাওয়া টা ঠিক নাহ।তাই এই ডিসিশন নিয়েছে।বাবা,মাকে অনেক বলে রাজি করিয়েছে।
খুব ট্রাই করেছিলো এট লাস্ট বিয়ে টা দেখে যাওয়ার।। বাট পারলো নাহ।।এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।।এর পরে গেলে চান্স পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।
ইশান এইসবের কিছুই জানে নাহ।।নেশাই তার আম্মু কে জানাতে নাহ করেছে।।একটু আগে গিয়ে দুইজনকে হলুদ লাগিয়ে উইশ ও করে এসেছে।।
রাত ১২ টায় ফ্লাইট। মা,খালামনির থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অজানার উদ্দেশ্যে।
ইশান কে বলা হয়নি।।সে বিজি আছে তার নিহাকে নিয়ে।।অবশ্য নেশা জানাতে ও চায়নি।।কি হবে বলে।যে তাকে দেখতেই চায় নাহ, সহ্যই করতে পারে নাহ তাকে বলে কি হবে।।খালামনিকে অবশ্য বলে এসেছে ইশান জানে সব।

নেশার বাবা সাথে এসেছে।।নেশাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিতে।।বাবার থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনে উঠে বসলো।১২ টায় প্লেন আকাশে উঠে গেল।
আর নেশা চলে গেল সবাইকে ছেড়ে বহু দুরে।
হয়তো আবার দেখা হবে তাদের সাথে।।কিন্তু তখন কি আর আগের নেশাকে খুজে পাওয়া যাবে।।নাকি হারিয়ে যাবে অজানার ভীড়ে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here