#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৮
–নফল নামাজ পড়ব দুজন।
আজকে নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে আমাদের সুখি দাম্পত্যের প্রার্থনা করব।
প্রতিভা ইয়ামিনের কথায় মুচকি হেসে সম্মতি দিলো,কাবার্ড থেকে একটা খয়েরী রঙের সুতির শাড়ি,ব্লাউজ,পেটিকোট নিয়ে ওয়াসরুমে গেলো সে।চেঞ্জ করে অজু করে এসে দেখে ইয়ামিন ফ্লোরে দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে,প্রতিভা কে ওয়াসরুম থেকে বেরোতে দেখে ইয়ামিনও এবার ওয়াসরুমে গেলো নিজে অযু করার জন্য।
ইয়ামিন অযু করে আসার পর স্বামীস্ত্রী দু’জনে মিলে নফল নামাজটা আদায় করে নিলো,তারপর আল্লাহর কাছে নিজেদের নতুন জীবন ও সুখি দাম্পত্যের জন্য প্রার্থনা করলো।
সবশেষে প্রতিভা নিজেই জায়নামাজ গুছিয়ে জায়গামতো রেখে দিলো।ইয়ামিন কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করে আবারও ওয়াসরুমে গেলো চেঞ্জ করার জন্য,চেঞ্জ করে এসে দেখে প্রতিভা বিছানায় পা দুলিয়ে বসে আছে,মাথা নিচু করে।ইয়ামিন গিয়ে প্রতিভার পাশে বসতেই সে নড়েচড়ে উঠলো,ইয়ামিন বেশ বুঝতে পারছে প্রতিভার অস্বস্তির কারণ।ইয়ামিন কিছু না বলে প্রতিভার হাত ধরে মুঠোবন্দি করে নিলো।
–জানো প্রতিভা,আমি তোমাকে ১ম দেখেছিলাম সেই পদ্মাপাড়ে,মন দিয়ে আর্ট করছিলে,বাতাসে তোমার ছোট চুলগুলো বারবার চোখের ওপর পরায় নাকমুখ কুঁচকে নিচ্ছিলে অস্বস্তি তে,কপালে ভাজ পরছিলো,স্কাই কালার থ্রিপিস পরিহিতা তোমাকে অপরূপ লাগছিলো,আমার চোখে তোমাকে প্রকৃতি কন্যা মনে হয়েছিল।বাচ্চা আপ্পি আপ্পি বলে যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরছিলো,তোমার সেই তৃপ্তিময় হাসিতে আমি মরেছিলাম সেদিনই।রিমঝিম দের জন্য আমার স্কেচ বানিয়ে যখন রাক্ষস বানিয়ে খিলখিল করে হাসছিলে,তোমার সেই প্রাণবন্ত হাসি আর চোখের অমায়িক দৃষ্টি তীরের মতো আমার বুকে এসে বিধেছিলো,ঘায়েল করেছিলো আমার মন।ভালোবেসে ফেলেছিলাম সেদিনই,কিন্তু ওইদিনের পর তোমার আর দেখা পাইনি,তোমার নামটাও জানতামনা যে খুঁজবো।
সময় পেলে প্রতিবার আমি পদ্মাপাড়ে গিয়েছি,কিন্তু তোমার দেখা পাইনি।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম,আমার ভালোবাসা যদি পবিত্র ও সত্যি হয় তাহলে সেই প্রকৃতিকন্যার সাথে আমার যেন আবার দেখা হয়।আল্লাহ আমাকে ফেরাননি,ওইদিন মেডিকেলে ব্লাড দিতে গিয়ে অবশেষে দেখা পেলাম তোমার,১মে বুঝতে পারিনি তবে সাইড থেকে বারবার কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল,নার্সের থেকে তোমার নাম জেনে নিয়ে তোমাকে যখন ডাকলাম,তুমি আমার দিকে ঘুরতেই বিশ্বাস করো হার্টবিট মিস করেছি ১০০%।
সেদিনই জানতে পারলাম তুমি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত,তবে বিশ্বাস করো এতে তোমার প্রতি আমার সেই ভালোবাসা,ভালোলাগা একবিন্দুও কমেনি,উলটে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পর তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা,শ্রদ্ধা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
ছোট্ট এই জীবনে কম মানুষের সঙ্গে তো মিশিনি,কতকত মেয়ের সঙ্গে আলাপচারিতা হয়েছে,কাউকে দেখে মনের মধ্যে উথালপাথাল হয়নি,যেট তোমায় দেখে হয়েছিলো।
হ্যাঁ বলতে পারো এটা সিনেমাটিক্স,সব ছেলের কমন ডায়লগ।আমি বলবো না,তোমার ভাবনা ভুল নয়,হতে পারে এটা কমন ডায়লগ,তবে আমার ক্ষেত্রে বাস্তব।সিদ্ধান্ত তো সেই ১ম দেখাতেই নিয়েছিলাম,বিয়ে করলে এই কন্যাকেই করব,এই মেয়েকেই জীবনসঙ্গী করব।ক্ষনস্থায়ী এই জীবনে এই মেয়ের সঙ্গেই জীবনের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ গুলো উপভোগ করবো।সেদিন তোমাকে না আমি চিনতাম,না তোমার বিষয়ে কিছু জানতাম,তবুওতো ভালোবেসেছি,একটা রোগ কেন আমার ভালোবাসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে,মানুষ চাইলে কি-না পারে,মৃত্যুকেও জয় করতে পারে।
ভালোবাসি আমি তোমাকে,তোমার শরীর কে নয়,তোমাকে।আমৃত্যু তোমার সঙ্গে কাটাতে চাই,আল্লাহ যদি সেটা ভাগ্যে না রাখে তবুও আফসোস নেই।আমৃত্যু তোমার হাজবেন্ড রূপে,তোমার সঙ্গে কাটানো #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ গুলোর স্মৃতি আঁকড়ে অনায়াসে জীবন পার করে দিতেও আমার সমস্যা নেই।
তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পর তোমাকে আমার মনের কথাগুলো জানাতে চেয়েও পারিনি,কারণ তুমি এই বিয়ে,সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে চেয়েছো,এসব বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে,ভেবেছিলাম আমি এগুলো বলার পর যদি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব টাও নষ্ট করে ফেলো,আমার কি হবে,তাই সাহস করে বলতে পারিনি।কিন্তু আমিতো মানুষ,একজন প্রেমিক পুরুষ।ভীষন লোভ হচ্ছিলো নিজের প্রেয়সীকে একবার স্পর্শ করার,তার হাতটা আঁকড়ে ধরার,তাকে বুকের মাঝে আগলে রাখার,সেই লোভের বসির্ভুত হয়ে অবশেষে সব ভয়কে জয় করে তোমার মা’কে সবটা জানালাম,আন্টিও রাজি হয়ে গেলো।
তবে ভয়টা থেকেই গিয়েছিলো,তুমি রাজি হবে তো,যদি ফিরিয়ে দাও আমাকে।আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার এই রোগ সম্পর্কে অনেক স্টাডি করেছি,যাতে তোমাকে মানাতে পারি,বিয়ের পর সঠিকভাবে তোমার টেককেয়ার করতে পারি,জীবমে সাকসেস হতে অনেক স্ট্রাগল করেছি,সাকসেস হওয়ার পরেও ততটা আনন্দ হয়নি যতটা আনন্দ হয়েছিলো তুমি বিয়েতে রাজি হওয়ার পরে,নিজেকে একজন সার্থক সাকসেসফুল মানুষ মনে হয়েছিল আমার।আমার কাছে তোমাকে নিজের করে পাওয়ার স্ট্রাগল টাই বেশি কঠিন ছিলো।সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে আমাদের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ উপস্থিত হলো,ভালোবাসি প্রতিভ,অনেক ভালোবাসি তোমাকে।জানিনা তোমার মনের গহীনে আমার জন্য কোনো অনুভূতি আছে কিনা,তবে জেনে রাখ আমার মনের গহীনের সবটা জুড়ে শুধু তোমারই বিচরণ।আই লাভ ইউ (হাতের তালুতে চুমু দিয়ে)
প্রতিভা এতক্ষণ মন দিয়ে ইয়ামিনের কথা শুনছিলো,নিজের অজান্তেই চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি পরছে ওর,এ পানি দুঃখের নয়,সুখের,আনন্দের।
–প্রতিভা,একটা অনুরোধ করব,রাখবে?
–হুহ
–আমার না ভীষন লোভ হচ্ছে একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরার,নিজের বুকে আগলে তোমাকে নিয়ে ঘুমানোর।বলতে পারো আমি লোভি,স্বীকার করতে আপত্তি নেই,হ্যাঁ সত্যিই আমি এ বিষয়ে লোভি।
তুমি কি অনুমতি দেবে আমাকে??
প্রতিভা প্রতিত্তোরে কিছু না বলে ওপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো,ইয়ামিন রাজ্য জয় করা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো প্রতিভা কে,যেন নিজের বুকের মাঝে ঢুকিয়ে নেবে।ইয়ামিনের মনে হচ্ছে সে যেন জীবনের সবটাই পেয়ে গেছে,প্রতিভাও ইয়ামিনকে জড়িয়ে ক্রমাগত সুখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে,নিজেকে কেমন যেন ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ওর।ওর মতো মেয়ের ভাগ্যে এতো ভালোবাসা,এত ভালো একজন স্বামী লেখা ছিলো,সে কি আদৌও এতটা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।এই মানুষটা যে একদম নিঃস্বার্থ ভাবে ওকে ভালোবাসে,তারও উচিত নিজের সবটা দিয়ে এই মানুষটাকে ভালোবাসা,নিজেকে উজার করে এই মানুষটার খেয়াল রাখা।
–আমিও আপনাকে ভালোবাসি ইয়ামিন,আপনার মতো একজন মানুষকে স্বামীরূপে পেয়ে আমি ধন্য,নিজেকে সে ভাগ মনে হচ্ছে।
আমি কি এতো ভালোবাসা,আপনার মতো একজনকে স্বামীরূপে পাওয়ার যোগ্যতা রাখি।
ইয়ামিন প্রতিভাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে প্রতিভার চোখের পানি মুছে দিলো।
–এ চোখে আমি কখনও পানি দেখতে চাইনা প্রতিভা,আমি চাই সারাজীবন তোমাকে হাসিখুশী রাখতে,ভালোবাস এমন এক জিনিস যেখানে চাওয়া-পাওয়া,যোগ্যতা এগুলোর স্থান নেই।যোগ্যতার কথা যদি তুলো,তাহলে বলবো আমি কি আদৌও তোমার যোগ্য,আমি কি পারবো তোমার মা’কে দেওয়া কথা রাখতে,তোমার ঠিক করে যত্ন নিতে।
–এভাবে বলবেননা প্লিজ
–তাহলে যোগ্যতায় প্রসঙ্গ টেনে এনোনা।
আল্লাহতায়ালা নিজেই জোড়ি তৈরি করে রাখেন,কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে সেটা তিনিই ঠিক করে রাখেন।আমার সঙ্গে তোমড় জুটিটাও তিনিই তৈরি করেছেন,তাই আজকে আমরা বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে-অপরের সঙ্গে রয়েছি।
আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি প্রতিভা,আমি একজন আদর্শ স্বামী হওয়ার চেষ্ট করব,আজীবন তোমাকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব,নিজের সবটা দিয়ে তোমাকে রক্ষা করব,আগলে রাখব,কখনও জেনেশুনে তোমার চোখে পানি আসতে দিবোনা,তোমার যত্নে কোনো ত্রুটি রাখবোনা।
–আমিও আপনাকে কথা দিচ্ছি ইয়ামিন,আমি একজন আদর্শ দ্বায়িত্ববান স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করব,সমস্ত বিপদে আপদে আপনার পাশে থাকার চেষ্টা করব,আপনার ভালোমন্দ দেখার দ্বায়িত্ব আমার,আমি নিজের দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবো।
–অনেক ধকল গেছে আজ তোমার ওপর দিয়ে,তোমার এতো রাত জাগা ঠিক নয়।প্রবলেম হবে তোমার,ঘুমিয়ে পড়ো প্রতিভা।
ইয়ামিন প্রতিভাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে সুয়ে পড়লো।
–অভ্যেস করে নাও,এখন থেকে আমৃত্যু আমার বুকেই তোমাকে ঘুমোতে হবে।জানোতো স্বামীর বুক হলো মেয়েদের সবচেয়ে নিরাপদ ও শান্তির জায়গা।
প্রতিভা মুচকি হেসে ইয়ামিনকে আঁকড়ে ধরলো,ইয়ামিনও মুচকি হেসে প্রতিভার কপালে চুমু একে দিলো।আজ অনেক শান্তি লাগছে ওর,এতো বাধা পেরিয়ে অবশেষে নিজের প্রিয়তমা কে নিজের কাছে পেয়েছে সে,শান্তিতে ঘুম হবে আজ ওর……
To be continue……
((এই গল্পটি আর ২-৩পর্বেই শেষ করে দেব,বাস্তবভিত্তিক গল্প আর জীবনে লিখবোনাা,রিচ এতো কম হবে ভাবতেও পারিনি।গল্পটার উদ্দেশ্য ছিল মরণব্যাধি থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে সবাইকে অবগত করা,আর এক দম্পতির কাহিনি তুলে ধরা,গল্পপ্রেমিদের জন্য গল্পের মাধ্যমে কিছু ইনফরমেশন দেওয়া।আমি ব্যর্থ,নেক্সট টাইম কেউ আমাকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে কিছু লিখতে বলবেননা।
আমি অবাস্তব কাল্পনিক লেখিকা,আমার লেখার উদ্দেশ্য সবার মনরন্জন করা,আমি সেটাতেই ঠিক আছি।))