ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ৭

0
243

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৭

–শুধু অধিক লৌহযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

–সত্যিই,অনেক জানো তুমি প্রতিভা

–জেনে রাখা ভালো,যাতে কখনো কোনো প্রবলেমস না হয়,খাওয়া শুরু করুন সবাই
খাওয়ার সময় কথা বললে গলায় খাবার আটকে যাবে

–হুম

খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই চেয়ারে আয়েশ করে বসলো,প্রতিভা নিজের ঘরে গেছে সেভেনআপের বোতল আনতে,বোতল নিয়ে ওর মায়ের রুমে এসে দেখে সবাই কি একটা বিষয় নিয়ে খোশমেজাজে কথা বলছে,হাসছে,প্রতিভা কে দেখেই সবাই থেমে গেলো।

–কি হলো?

–তোকে কিছু বলার ছিল মা (ফাতেমা বেগম)

–আন্টি,আমরা তাহলে আসি
সব ঠিক থাকলে পরশুদিন একবারেই নাহয় আসবো (রিয়াজ)

–হুম আন্টি,আশা করি আপনাদের তরফ থেকে না শুনতে হবে না,আমরা কিন্তু সিরিয়াস,সব জেনেশুনেই বলছি।
আমার এই দেবর টা আমার ছোট ভাইয়ের মতো,এতো ভালো,ভদ্র ছেলে আজকালকার যুগে পাওয়া দুষ্কর,তবে সবটা আপনার ওপর,আপনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের জানাবেন। (রাজিয়া)

–আন্টি আজকে তাহলে আসি,সিদ্ধান্ত জানাবেন,অপেক্ষায় থাকলাম।
আসসালামু আলাইকুম (ইয়ামিন)

–আরে কোথায় যাচ্ছেন আপনারা,আরে এটা খাবেনতো নাকি (প্রতিভা)

–তুমি চাইলে শুধু আজকে কেন মাঝেমধ্যেই খাব,আজকে আসি বোন।ভালো থেকো (রাজিয়া প্রতিভার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে)

যাওয়ার সময় রিম ঝিম প্রতিভার গালে কিসি দিয়ে চলে গেলো।দরজা আটকে প্রতিভা নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো,ক্লান্ত লাগছে,শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।
প্রতিভার মা প্রতিভার ঘরে এসে প্রতিভার মাথার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো..

–মা,তোর সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল

–হুম বলো আম্মু,কি বলবে (মায়ের কোলে মাথা দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে)

–আমি তোর বিয়ে দিতে চাই,আমি চাই তুই সংসার করিস

–বারবার অযথা কেন এগুলো বলো তুমি।
আম্মু তুমিতো জানোই সবটা তাহলে কেন এমন বলছো,কেউ বিয়ে করবেনা আমাকে,কে চাইবে বলোতো এমম অসুস্থ মেয়েকে বিয়ে করতে

–ইয়ামিন চায়
হ্যাঁ আজ ইয়ামিন নিজে তোর সাথে ওর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আমাকে,ছেলেটা আমার হাত ধরে কান্না করেছে যাতে আমি ওকে ফিরিয়ে না দিই।
ছেলেটার চোখে আমি তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি,ও তোকে অনেক ভালোবাসে,বিয়ের পরে তোকে সুখি রাখবে মা।

–কিন্তু আম্মু,বুঝার চেষ্টা করো,বিয়েটা ছেলেখেলা নয়,আমি য…

–বেস,আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা,আমি চাই তুই ইয়ামিমকে বিয়ে করে সুখি হ,এটাই আমার শেষ কথা

–আম্মুউ (উঠে বসে,অসহায় স্বরে)

–তোকে আমার দিব্যি দিলাম প্রতিভা,আমি এ নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাইনা।
পরশুদিন তোদের বিয়ে,অনুষ্ঠান হবেনা,ছোট করেই বাড়িতে আয়োজন করবো,কাজি ডেকে বিয়ে পড়াবো।

–ঠিক আছে,কিন্তু আমি ওনার সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই

–যা ভালো লাগে কর,কিন্তু বিয়েটা হচ্ছে এটাই আমার শেষ কথা।
জীবনে তোর কাছে কিছু চাইনি,কোনো কিছুতে বারণ করিনি তোকে,কিন্তু আজকে আমি তোকে আদেশ করছি,তোর কাছে কিছু চাচ্ছি,আমার কথা ফেলবিনা আশা করি (কথাগুলো বলেই মিসেসঃ ফাতেমা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন)


সকাল ১১ঃ১০মিনিট
পার্কের একটা সিঁড়ি মতো জায়গাতে পাশাপাশি বসে আছে ইয়ামিন আর প্রতিভা।

–আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আমি কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবোনা,আমি মরণব্যাধি তে আক্রান্ত,সর্বোচ্চ ৩০বছর জীবিত থাকে এই রোগে আক্রান্ত রোগিরা,আমার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম নয়।আমার বর্তমান বয়স ১৯বছর,খুব বেশি হলে আর ১১বছর জীবিত থাকবো,এর বেশি নয়।

–যতদিনই জীবিত থাকো,আমি তোমার মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে চাই প্রতিভা,বিপদে আপদে সুখেদুখে তোমার পাশে থাকতে চাই,একসঙ্গে সমস্ত ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করতে চাই,তুমি কি আমাকে এই সুযোগ দিবেনা বলো।

–প্লীজ বুঝার চেষ্টা করেন,এটা সম্ভব নয়।
আপনি কখনো বাবা হওয়ার সুখটাও পাবেননা

–কেন পাবোনা,থ্যালাসেমিয়া রোগিরাও বাচ্চা জন্ম দিতে পারে

–হ্যাঁ পারে,কিন্তু তারাও এই রোগে আক্রান্ত হয়েই জন্ম নেয়,আমি জন্ম থেকে যে কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করছি,আমি চাইনা আমার সন্তানরাও সেম কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করুক

–আমরা ট্রিটমেন্ট করাবো,এমন কিছুই হবেনা,বুঝার চেষ্টা করো প্রতিভা

–থ্যালাসেমিয়া মেজর না হোক,থ্যালাসেমিয়া মাইনরে আক্রান্ত হলে তখন কি হবে।থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগিদের দেহে তাদের সমবয়সী বা সমলিঙ্গের যেকোনো ব্যাক্তির চেয়ে সংখ্যায় কম রক্তকণিকা উৎপন্ন হলেও তাদের কোনো লক্ষন বা জটিলতা দেখা যায় না,তারা জন্ম থেকেই জীবনে যতদিন বাঁচবে এভাবেই বাঁচবে,তাদের কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়না,এমনকি বেশিরভাগ থ্যালাসেমিয়া মাইনর রুগি জানেনওনা তারা এই রোগে আক্রান্ত।ভবিষ্যতে তাদের যে সন্তান হবে তারাও থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত হবে,বংশানুক্রমে চলতেই থাকবে,আমি এটা চাইনা।

–তুমিকি জানো,আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক কতটা উন্নত হয়েছে,আমি এতদিনে তোমার মুখে এসব নিয়ে অনেক কথাই শুনেছি,আমি নিজেও এই রোগ সম্বন্ধে স্টাডি করেছু শুধু তোমার জন্য,কারণ আমি তোমাকে জীবনসঙ্গী রূপে চাই।

–কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?

–অনাগত সন্তান রোগাক্রান্ত কিনা সেটা গর্ভাবস্থাতেই পরিক্ষা করা যায়,এই টেস্টের নাম হলো ❝অ্যান্টি নাটাল স্কিনিং❞
এছাড়াও শিশু জন্মের ১ম ছয়মাসের মধ্যে অর্থাৎ মেজর থ্যালাসেমিয়ার জন্য সুপার ট্রান্সফিউশান প্রোগ্রাম নেওয়া হয়,এক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিন ১২গ্রামের কমে নামতে দেওয়া হয়না,এই চিকিৎসার ফলে একজন রোগি ৩০বছর পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে।

–আমি এসব সহ্য করতে পারবোনা,আমি নিজে এই রোগে আক্রান্ত তাই আমি জানি এটা কতটা কষ্টকর,যন্ত্রণাদায়ক

–শোনো,আমার কোনো বেবি চাইনা বুঝেছো।তুমিই বেবির কথা তুলেছো তাই এগুলো বললাম।
মেইন কথা হচ্ছে আমার শুধু তুমি হলেই চলবে,আমি শুধু তোমাকেই চাই,বাচ্চাকাচ্চার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।

–ইয়ামিন ভাই (অসহায় স্বরে)

–বেস প্রতিভা,আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।এখনও কি তোমার কোনো অজুহাত আছে বিয়ে না করার??নাকি আমাকে তোমার পছন্দ না,আমি তোমার যোগ্য নই কোনটা? (উঠে দাঁড়িয়ে)

–ছিছি,এসব কি বলছেন।
আপনি যথেষ্ট ভালো একজন মানুষ,আপনার মতো মানুষ হয়না,আপনার মতো একজন মানুষকে স্বামীরূপে পাওয়া যেকোনো মেয়ের সৌভাগ্য বলা চলে।

–তাহলে সমস্যা টা কোথায়।
দেখো এখানেই ডিসিশন ফাইনাল করো তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি নাকি রাজি নও।যদি রাজি না থাকো তাহলে কথা দিচ্ছি কখনও তোমাকে ফোর্স করবোনা,ট্রান্সফার নিয়ে অন্য শহরে চলে যাব।
ডিসিশন তোমার,কি বলছো বলো

–(নিশ্চুপ)

–মৌনতা সম্মতির লক্ষন নাকি অসম্মতির,কি বুঝাতে চাচ্ছো তুমি প্রতিভা?

–(নিশ্চুপ)

–ফাইন,আমি ধরে নিচ্ছি তুমি রাজি নও।
ভালো থেকো,আর কখনও বিরক্ত করবোনা

কথাটা ব’লেই ইয়ামিন হাটা দিলো।

–ইয়ামিন ভাই

–কিছু বলবে (দাঁড়িয়ে পেছনে ঘুরে)

–আমি রাজি এই বিয়েতে

প্রতিভার কথা শুনে ইয়ামিনের ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।


ঘন্টাখানেক আগে প্রতিভা ইয়ামিনের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে,ইয়ামিনের ফ্ল্যাটে ইয়ামিনের বেডরুমে বিছানায় লাল বেনারসি পরে মাথায় বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে প্রতিভা।প্রতিভাকে নানান নিয়মকানুন রীতিরেওয়াজ শিখিয়ে দিচ্ছে মিসেসঃরাজিয়া খানম,প্রতিভা তার কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছে।
সবটা বুঝিয়ে দিয়ে রাজিয়া প্রতিভার মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,এরপর প্রায় মিনিট ১৫পর ইয়ামিন রুমে আসলো।
দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে বসলো প্রতিভা,ইয়ামিন দরজা লক করে ভেতরে আসলো।রাজিয়া খানমের কথানুযায়ী প্রতিভা বিছানা থেকে নেমে ইয়ামিনকে সালাম করতে গেলে ইয়ামিন প্রতিভার দু-কাধ ধরে আটকে নিলো।

–তোমার জায়গা আমার পদস্থলে নয় প্রতিভা,তোমার জায়গা আমার বক্ষস্থলে।
এই নাও,দেনমোহরের টাকা,গুণে নিও কিন্তু এটা তোমার অধিকার

–আরে গুনতে যাব কেন,আপনিই রাখুন টাকাগুলো,এগুলো আমার দরকার নেই

–বললাম না এটা তোমার অধিকার
আমার দ্বায়িত্ব আমি পালন করেছি,এবার এই টাকাগুলো দিয়ে তুমি কি করবে সেটা তোমার ব্যাপার

–কিন্তু…

–কাবার্ডে তোমার জন্য থ্রিপিস শাড়ি রাখা আছে,তুমি যেটাতে কম্ফোর্টেবল ফিল করো সেটা পড়ে অজু করে আসো,নফল নামাজ পড়ব দুজন……

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here