ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ৯

0
227

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৯

শান্তিতে ঘুম হবে আজ ওর,প্রতিভার প্রথমে অস্বস্তি হলেও সে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।এতকাল একা কাটিয়েছে,এই প্রথম কোনো ছেলের পাশে ঘুমাবে তাও তার বুকে,এমন অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক।


সকাল ৭ঃ৩০
ঘুম ভাঙার পর প্রতিভা নিজেকে ইয়ামিনের বুকে আবিস্কার করলো,ইয়ামিন এক দৃষ্টিতে প্রতিভার দিকে তাকিয়ে আছে,ব্যপারটা খেয়াল করতেই কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো প্রতিভা,লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো সে।ইয়ামিন মুচকি হেসে প্রতিভার কপালে চুমু দিয়ে উঠে বসলো।

–এতো লজ্জা পেওনা প্রকৃতি কন্যা,আমার হৃদয়েশ্বরী,লজ্জা পেলে তোমাকে অনেক মায়াবী দেখায়,পুরো ক্যান্ডি,ঘুম থেকে উঠার পর তোমাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে সেটা কি জানো তুমি,কবে যেন হার্ট ফেইল করে মারা যাই আমি,এতটা পাগল করোনা আমার প্রাণেস্বরী,এতে যে আমার প্রাণ যায়।

মৃত্যুর কথা শুনে প্রতিভা দ্রুত ইয়ামিনের মুখে হাত দিলো।

–আলাইবালাই কাতি কালাই,ছু
একদম আজেবাজে কথা বলবেননা আপনি,সকাল সকাল কিসব অশুভ কথা শুরু করেছেন।

–ফাইন,সরি বউ আর বলবোনা।
যদি কখনো কিছু হয়,তুমি আছোতো,আমাকে বাচিয়ে নিও তুমি (প্রতিভা কে নিজের বাহুডোরে নিয়ে)
শান্তি লাগছে,এবুকের মরুভূমিতে অবশেষে তুমি নামক বৃষ্টি নামলো বলো,আমি পরিপূর্ণ তোমাকে পেয়ে,পরিপূর্ণ আমার হৃদয়,ইহকালে আল্লাহ আমাকে যতটুকু দিয়েছেন সবটা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট,আর কিছু চাইনা আমার।ভালোবাসি প্রতিভা।

–আমিও আপনাকে ভালোবাসি (লজ্জায় মাথা নুইয়ে)

–ওহে প্রিয়তমা,এভাবে লজ্জা পেওনা।আমিতো এখনও কিছুই করিনি,এতো লজ্জা পেলে কি হবে বলো

–ইশশ

–যাও ফ্রেশ হয়ে নাও,আমারতো কেউ নেই তুমি ছাড়া।আজ নাহয় আমিই তোমাকে ব্রেকফাস্ট করে খাওয়াই

–নাহ্ না,আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আমি আছিতো,আমি রান্না করবো

–অবশ্যই করবে,কিন্তু আজ নয়,কাল থেকে।আমি তোমাকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করবো।জানোতো স্ত্রীর প্রতিটি কাজে স্বামীর সাহায্য করা সুন্নত,যাও এখন ফ্রেশ হয়ে নাও।

–হুম

প্রতিভা ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো,ইয়ামিন পাশের রুমের ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে গেলো।ডিম্পোচ আর আলু পরোটা বানিয়ে নিয়ে রুমে আসলো সে।প্রতিভা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে,কতটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে ওকে,ইয়ামিন খাবারের প্লেট টা বিছানার উপরে রেখে প্রতিভার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

–প্রিয়তমা,আমার মন যে ছটফট করছে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য,তুমি কেন এত দূরে বলোতো

–ইশশ,সবসময় বাজে কথা,চলুন ক্ষুধা পেয়েছে

–বাজে কথা নয়,এটা ভালোবাসা।
এসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিব

–কি?

–হুম,আমি তোমাকে তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে,এতে ভালোবাসা বাড়ে

–এতো ভালোবাসা কোই রাখেন হুম।

–মনের গহীন রাখি,শুধু তোমার জন্য।
একটা গান আছে জানো,খুব মিলে যায়,বলি?

–কি

–বুকের ভেতরে,মনের গহীনে তুমি ছাড়া আর কেহ নাই,না-ই গো,তুমি ছাড়া আর কেহ নাই

–হয়েছে হয়েছে,চলুন এবার (মুচকি হেসে)

এরপর ইয়ামিন বিছানায় বসে প্রতিভাকেও ইশারায় ওর পাশে বসতো বললো।

–বিছানায় বসে খাবার খেতে হয়না বুঝলেন,এতে সংসারের আয় কমে যায়

–কে বলেছে এসব কথা হুম,এটা কুসংস্কার

–কিছু কিছু কুসংস্কার না মানলেই নয়,মেঝেতে বসুন।মেঝেতে বসে খাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম।

ইয়ামিন আর কথা বাড়ালোনা,ফ্লোরে এসে বসলো সে।স্বামীস্ত্রী একে-অপরকে খাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।


দু’দিন পরে…
ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে প্রতিভার মা ফাতেমা বেগম,ইয়ামিনের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেননি ছেলেটা বারবার মা বলে ডেকে,মা-ছেলের দোহাই দিয়ে বলেছে তিনি যেন তার ছেলের বাড়িতে থাকেন।মানে ফাতেমা বেগমকে নিজেদের সঙ্গে ফ্ল্যাটে রাখতে চায় ইয়ামিন,ফাতেমা বেগম এতে আপত্তি জানালেও শেষ অবধি ইয়ামিনের কথা আর ফেলতে পারেননি।তবে তারও একটা শর্ত,সেটা হলো বসেবসে মেয়েজামাইয়ের টাকায় তিনি চলবেননা,আগে যেমন দরজির কাজ করে আয় করতেন,এখন এখানে থেকেও সেটা করবেন।ফাতেমা বেগমের ঘোর আত্মসম্মানবোধের কাছে হার মেনে ইয়ামিনও আর আপত্তি করেনি।ফেরনিতে প্রতিভাকে নিয়ে এবাড়িতে এসে তার মাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে ইয়ামিন।


বিয়ের পরে কেটে গেছে ১বছর..
আজ ইয়ামিন আর প্রতিভার বিবাহবার্ষিকী,আর্ট স্কুলে জাঁকজমক আয়োজন করেছে ইয়ামিন।বেলুন,কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সবটা,বিয়েতে যেহেতু অনুষ্ঠান হয়নি তাই ১ম বিবাহবার্ষিকী তে ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান হবে,আর সেটা এই আর্টস্কুলে,এটা যে প্রতিভার প্রাণভোমরা।প্রতিভার চাচা,চাচিদেরকেও ইনভাইট করা হয়েছে যাতে ওনারা আসেন আর দেখেন প্রতিভার মতো মেয়েরাও সুখী থাকতে পারে,বিয়ে করে সংসার করতে পারে,হোকনা সেটা ক্ষনস্থায়ী,পৃথিবীতে কেউই অবহেলা লাঞ্ছনার পাত্রি না।
ফাতেমা বেগমও অনেক খুশি,মেয়েকে একজন সঠিক ছেলের হাতে তুলে দিয়ে,বিগত একবছরে ছেলেটা প্রতিভার যত্নআত্তি তে কোনো ত্রুটি রাখেনি,একজন কাজের লোকও রেখেছে যাতে প্রতিভার কষ্ট না হয়।প্রতি দেড়মাস অন্তর ইয়ামিন নিজে প্রতিভা কে মেডিক্যালে নিয়ে যায়,নিজে ৩মাস পরপর রক্ত দেয়,আর মাঝের মাস টাতে ইয়ামিনের এক কলিগ রক্ত দেয়,যার জন্য রক্ত নিয়ে এখন কোনো অসুবিধা হয়না প্রতিভার।প্রতিভা ইয়ামিনের সম্পর্কটাও আর পাঁচটা দম্পতির মতোই স্বাভাবিক,তবে ইয়ামিন এখন অবধি বাচ্চা নেওয়ার কথা মুখেও আনেনি কারণ সে চায়না প্রতিভার কিছু হোক,সে প্রতিভাকে কিছুতেই হারাতে চায়না।

স্কুলের সমস্ত বাচ্চাদের গার্জিয়ানরাও এসেছে,কেক কাটা,খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে ইয়ামিন বাচ্চাদের সঙ্গে মেতে উঠলো,ইয়ামিন যে বাচ্চা প্রেমী সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে প্রতিভা,নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে ওর।আজ ওর জন্য ইয়ামিন বাবা হওয়ার সুখ আনন্দ থেকে বঞ্চিত,সে-তো বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখে,সে ক্ষমতাও তার রয়েছে,অক্ষম তো প্রতিভা নিজে।এমন নয় যে সে বাচ্চা জন্ম দিতে পারবেনা,কিন্তু বাচ্চাটাও যদি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয় তখন কি হবে,সেই যন্ত্রণা গুলো যে অনেক কষ্টকর,কোনো মা’ই চায় না তার সন্তানরা কষ্ট পাক,এইজন্যই প্রতিভা বাচ্চা নিতে চায়না।

–(না,আমাকেই কিছু একটা করতে হবে,আমিতো বেশিদিন বাচবোনা,হয়তো সাড়ে নয় বছর বাচবো আর,এরপর ইয়ামিনের কি হবে,তাকে আমি কখনোই সন্তানসুখ থেকে বঞ্চিত করতে পারবোনা,তার অধিকার আছে বাবা হওয়ার,ও তো অক্ষম নয়।))

রিমের জড়িয়ে ধরায় ভাবনার জগত থেকে বের হলো প্রতিভা,মুচকি হেসে রিমকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দিলো।

–মামনি,রাক্ষস আঙ্কেল কে দেখো এতগুলো বাচ্চা পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে,ঝিমটাও ওদের দলে যোগ দিয়েছে,এখন আমি কি করবো হুম।ইশ আমার যদি একটা ভাইবোন থাকতো,দুজন মিলে ঝিম আর রাক্ষস আঙ্কেলকে মজা দেখাতাম।

–তাই,তোমার আরও ভাইবোন চাই বুঝি সোনা

–হুম এত্তগুলো

রিম ঝিমের মা রাজিয়া এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,

–কি হয়েছে প্রতিভা,পাজিটা আবার কি করছে?

–কিছুনা ভাবি,ও ভাইবোন নিয়ে আফসোস করছে,বেবিতো নিতেই পারেন

–নাগো,দু’টো হয়ে গেছে আর চাইনা,আর তাছাড়াও ঝিমের বেলার সিজার করার সময় লাইব্রেশন করে নিয়েছি,আর বেবি হবে না

–ওও

–মামনি,তুমি আমাকে ভাইবোন এনে দাও,তাহলেই হবে,আমি ওর সঙ্গে সারাদিন খেলবো (রিম)

রিমের মুখে এই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো প্রতিভা,প্রতিভার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে রাজিয়া ঝিমকে খেলতে পাঠিয়ে দিলো।

–কিছু মনে করোনা প্রতিভা,রিম বাচ্চা মানুষ,ও তো কিছু বুঝেনা।
আমাদের ইয়ামিনটাকে দেখো,বাচ্চা পেলে একদম মাথা ঠিক থাকেনা,কি করে বাচ্চাদের সাথে খেলছে দেখো,শিং ভেঙে বাছুরের দলে যোগ দিয়েছে হাহাহা

–আপনার দেবর খুব বাচ্চা পছন্দ করে তাইনা ভাবি?

–হুম খুব,রিম যখন হলো,ইয়ামিনতো রিমকে কারোর কাছেই দেয়না,অফিসের কাজ শেষে রাত ১১টা ১২টার দিকে হলেও আমাদের বাড়িতে আসতো রিমকে আদর করার জন্য,ঝিমের বেলায়ও তাই।পাগল একটা

–ওও

প্রতিভা আর কথা না বাড়িয়ে সেখানে থেকে সরে এসে একসাইডে চেয়ারে বসলো,নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী লাগছে ওর।ইয়ামিন যতোই বিয়ের জন্য পাগলামি করুক,ওর একদম রাজি হওয়া উচিত হয়নি।প্রতিভা চুপচাপ বসে আছে আর চোখের পানি মুছছে,হঠাৎ ওর সামনে লেবুপানির গ্লাস ধরলো কেউ,প্রতিভা মাথা তুলে দেখে একজন অপরিচিত মেয়ে।

–আপনিই??

–আমি তোমার হসজবেন্ডের কলিগ,ইয়ামিন এটা পাঠালো,খেয়ে নাও।

মেয়েটির কথা শুনে প্রতিভা সাইডে তাকাতেই ইয়ামিন ইশারায় খেতো বলে আবার বাচ্চাদের সঙ্গে মস্তিতে যোগ দিলো।প্রতিভা মেয়েটির থেকে গ্লাস নিয়ে খেয়ে নিলো লেবুপানি।

–তোমার নামতো প্রতিভা তাইনা?

–জ্বী আপু

–আমি লামিয়া,কেমন আছো

–এইতো আলহামদুলিল্লাহ

–ভাগ্য করে বর পেয়েছোগো,জানো আমি কতগুলো বছর ধরে ইয়ামিনকে পটানোর চেষ্টা করেছি,কিন্তু ও বারবার আমাকে রিজেক্ট করেছে,ওর নাকি কোনো মেয়েকেই মনে ধরেনা,অবশেষে তোমাকে মনে ধরলো,আবার বিয়েও করলো।
আর আমি চিরকুমারী থেকে গেলাম হাহাহা

–ভালোবাসেন ইয়ামিনকে??

–ভালোবাসি মানে,খুব ভালোবাসি গো,কিন্তু আল্লাহ তো সবার কপালে সবাইকে রাখেনা,ইয়ামিন আমার ভাগ্যে ছিলোনা তাই ওকে পাইনি,তুমি পেয়েছো।আমি দূর থেকেই দেখি,ভালোবাসলে যে পেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

–ভাগ্য তো সহায় হতেও পারে আপু,হতে পারে আপনি ইয়ামিনকে পেয়ে গেলেন

–মানে,কি বলতে চাচ্ছো তুমি…….

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here