ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ৬

0
240

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_০৬

–ধিক জানাই এই সমাজব্যবস্থা আর মানুষদের এই মানসিকতার ওপরে।যেখানে অসহায় মানুষদের ছোট করে তাদের আরও অসহায়ত্ব করে তোলা হয়,মানসিক ভাবে তাদের শেষ করে দেওয়া হয় (উত্তেজিত হয়ে জোরেজোরে শ্বাস নিয়ে)

ইয়ামিন প্রতিভার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো,প্রতিভা বোতলটি নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো।


কেটে গেলো ৫টা মাস,ইয়ামিনের সঙ্গে প্রতিভার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে,দেড়মাস পরপর ইয়ামিন নিজেই প্রতিভাকে নিয়ে মেডিক্যালে যায়,সে যেহেতু ৩মাস পরপর রক্ত দিতে পারবে তাই মধ্যের মাসটায় অন্যএকজন ডোনারের প্রয়োজন,ইয়ামিন নিজেই দুজন ডোনারের ব্যবস্থা করেছেন,একজন ইয়ামিনের কলিগ,অন্যজন অপরিচিত এক ব্যক্তি,ব্লাড নিয়ে প্রতিভাকে এখন আর সমস্যার মুখে পরতে হয়না।
প্রতিভার মা ফাতেমা বেগম ইয়ামিনের ওপর চরম কৃতজ্ঞ,বহুবার তিনি প্রতিভাকে বলেছেন ইয়ামিনকে বাড়িতে নিয়াসার কথা,কিন্তু ইয়ামিন আসেনি,তার একটাই কথা সময় মতো অবশ্যই যাব বলতে হবেনা,তোমার ২০তম জন্মদিনে তোমার বাড়িতে আসবো আমি,এটা আমার প্রমিস।
আর হ্যাঁ,ওইদিন তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে মনে রেখো।
সপ্তাহে দু’দিন প্রতিভা,ইয়ামিন আর্টস্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে পদ্মাপাড়ে যায়,প্রাকৃতিক শোভা গায়ে মাখতে,প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে,নদীর স্নিগ্ধ জলরাশি আর বাতাশে নিজেকে উজার করতে।

আজ প্রতিভার জন্মদিন,আজকে ইয়ামিনের ব্যস্ততা যেন অত্যাধিক বেরে গেছে,যে ছেলেটা দিনে ১০বার করে কল করে খোঁজ নেয়,তার আজকে কোনো খবরই নেই,প্রতিভা বেশ কয়েকবার ডায়াল করেছে বাট নো রেসপন্স।
কথানুযায়ী আজ ইয়ামিনের প্রতিভাদের বাড়িতে আসার কথা,ফাতেমা বেগম নিজের সাধ্য অনুযায়ী কতোকি রান্না করছেন,অথচ যার জন্য এতো আয়োজন সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিই লাপাত্তা,সকাল থেকে মেজাজটাই চটে আছে প্রতিভার।
এখন সময় বিকাল ৫ঃ৩০
প্রতিভা আর্ট স্কুলে ক্লাস শেষ করলো মাত্রই,বাচ্চারা ছবি একে প্রতিভাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে,প্রতিভা সকল বাচ্চাদের চকোলেট আর বেলুন কিনে দিয়েছে আজ।


সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিট
প্রতিভা শশা আর রুআফজা কিনে মাত্রই বাড়ি ফিরেছে,বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাই ফ্যান ছেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে ও।থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগিদের ক্ষেত্রে এটা একদমই নরমাল,খুব তাড়াতাড়িই ক্লান্ত হয়ে পরে তারা,অল্পতেই হাঁপিয়ে পরে তারা,প্রতিভার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়,হোকনা তার রোগের উপসর্গ গুলো কম।
সবে চোখটা লেগে এসেছে,রুমের বাইরে হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে ঘুমটাই উড়ে গেলো প্রতিভার,এমনিতেই মন খারাপ ছিল,এখন মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো ওর।
বিছানা থেকে উঠে গায়ে ওড়না জড়িয়ে চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলো প্রতিভা।

–আম্মুউ,এতো হৈ-হুল্লোড় করছে কে বলোতো,মাথা ব্যথা করছে আমার,এই সন্ধ্যা বেলা এমন চেচামেচি করার মানে কি বু….

প্রতিভা সামনে তাকিয়ে দেখে ইয়ামিন পকেটে দুহাত গুজে মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে,পাশে চেয়ার পাতা রয়েছে,চেয়ারে রিয়াজ (রিম ঝিমের বাবা),তার পাশের চেয়ারে একজন মেয়েও বসে রয়েছে।
আর হৈ-হুল্লোড় করছে রিম আর ঝিম,প্রতিভাকে দেখে ওরা দুজন দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো প্রতিভাকে।
প্রতিভা নিচু হয়ে বসে রিম আর ঝিমের গালে কিস করলো,ওরা দুজনও একসঙ্গে প্রতিভার গালে কিস করলো।

–হ্যাপি বার্থডে আপ্পি (ঝিম)

–এই আপ্পি না,মামানি বল
হ্যাপি বার্থডে মামানি,তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসা (রিম)

–মামানি?
মামানি কি করে হলাম শুনি

–রাক্ষস আঙ্কেলের বউকে মামানি বলবো কব্বে থেকে ভেবে রেখেছি জানো,তুমি যখন ওই রাক্ষস আঙ্কেলের বউ হবে তারমানে তুমিই আমাদের মামানি (রিম কথাটা বলেই রিমঝিম দুজনে একসঙ্গে খিলখিল করে হেসে উঠলো)

এদের কথার আগামাথা কিছুই বোধগম্য হলোনা প্রতিভার।
প্রতিভা কিছু বলতে যাবে তখনই ইয়ামিন প্রতিভাকে ডেকে বসার জায়গায় নিয়াসলো

–প্রতিভা,এটা আমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজ,রিমঝিমের বাবা,ওকেতো তুমি চেনোই।
আর ইনি হলেন আমার শ্রদ্ধেও ভাবিজান,রিয়াজের ওয়াইফ,রিমঝিমের মা মিসেসঃরাজিয়া খানম।

–আসসালামু আলাইকুম ভাবি,কেমন আছেন (মিষ্টি হেসে)

–আলহামদুলিল্লাহ,তুমি কেমন আছো

–আলহামদুলিল্লাহ

–সবার মুখে তোমার সম্পর্কে এতএত কথা শুনেছি কি বলব,আমার দুই মেয়েতো সবসময়ই তোমার কথা বলে,আর আমার এই দেবরের কথাতো বাদই দিলাম,কি জাদু করেছো মেয়ে,দেবর আমার অবশেষে বিয়েতে রাজি হলো।
মানতে হবে,যথেষ্ট সুন্দরী ও গুণবতী তুমি প্রতিভা,মাশাল্লাহ,আল্লাহ তোমাকে নিজ হাতে সময় নিয়ে গরেছেন

–ভাবি,আপনিও বেশ সুন্দর
দুই বাচ্চার মা,দেখে মনে হয়না।রিয়াজ ভাইয়ার পছন্দ আছে

–হাহাহা,তোমার ভাইয়ার কাছে আমি পৃথিবীর বিশ্রী সুন্দরী বুঝলা,ওনার বাইরের মেয়েদের প্রতি নজর বেশি

রিয়াজ সবে শরবত মুখে নিয়েছিলো,বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে বিষম খেলো সে,রাজিয়া সঙ্গে স্বামীসেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো,মাথায় হালকা করে চাপড়াতে লাগলো,যাতে বিষম থেমে যায়।

–কিযে করো তুমি,ধীরেসুস্থে খাবেনা

–ভাইয়া,আপনি শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন ঠিক হয়ে যাবে।


রাতে খাওয়ার সময়..
সবই মেঝেতে মাদুর পেতে খেতে বসেছে,পোলাও,গরুর মাংস,পুইশাকের ডালনা,মাছ ভাজা,পায়েস আর ডিমভোনা,মিষ্টি দই।
সবার খাবার এক হলেও প্রতিভার খাবার আলাদা,সে খাচ্ছে ভাত,করলা ভাজি,কাচকলা দিয়ে সরপুঁটি মাছ,আর একটু টকদই।প্রতিভার খাবার গুলো সরিষার তেলে রান্না করা,কারণ সয়াবিনে অনেক আয়রন রয়েছে।

–প্রতিভা,আমাদের সঙ্গে একদিন এভাবে খেতে পারো,খুব কি সমস্যা হবে তোমার।
আমরা এগুলো খাচ্ছি আর তুমি (রাজিয়া)

–না ভাবি,সমস্যা নেই।আপনারা খান,আমার ফুড চার্ট অনুযায়ী আমাকে খেতে হয়,একদিনের একটু খাবার ইচ্ছে পূরনের জন্য বড় কোনো প্রবলেমস হয়ে যেতে পারে।

–আমি শুনেছি,এই রোগে আক্রান্ত রোগিদের নিজস্ব ফুডচার্ট রয়েছে,তুমি সবটাই জানো কোনগুলো খাওয়া উচিত কোনগুলো নয়,কখনও ভুল হয়ে যায়না??

–থ্যালাসেমিয়া রোগীদের খাবার নিয়ে সবসময়ই চিন্তা থাকে রোগি ও তার বাবামায়ের,আমি বাংলাদেশের একটা সাধারণ খাবারতালিকা ফলৌ করে চলি,যেটা আমার বাবাও জীবদ্দশায় ফলৌ করতেন,আমার ডায়েরি তে আমি সেটা লিখেও রেখেছি,আমাদের মূলত কম আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত আর অধিক আয়রনযুক্ত খাবার বর্জন করে চলতে হয়,এটা নিয়ে আমি ভালো ভাবে চার্ট করে রেখেছি,আপনারা চাইলে বলতে পারি (মুচকি হেসে)

–হুম বলো শুনি,আমােরও জানা প্রয়োজন।

–আমি চার্ট আকারে বলছি,শুনুন।

১.মাংস ও মাংস জাতীয় খাবারঃ
**অধিক লৌহ→
গরুর মাংস,খাসীর মাংস,কলিজা,ডিমের কুসুম,ইলিশ,কৈ,চিংড়ি,চিতল,শিঙি,টেংরা ও ছোট মাছের শুটকি।
**কম লৌহ→
রুই,কাতল,পাংগাস,বোয়াল,মাগুর,সরপুঁটি,সোল ও বাচা মাছ।

২.শাকসবজিঃ

**অধিক লৌহ→
কচুশাক,লালশাক,পালংশাক,পুঁইশাক,ফুলকপি শাক,ব্রকলি,পুদিনাপাতা,ধনেপাতা,ফুলকপি,সিম,বরবটি,মটরশুঁটি,কাঁকরোল,কাচাপেপে,সাজনা,কাঁচা টমেটো।
**কম লৌহ→
বাঁধাকপি,মিষ্টি আলু,করলা,মিষ্টি কুমড়া,ঢেড়স,মূলা,শালগম,কাঁচা কলা,ঝিংগা,পাকা টমেটো,লাউ,চাল কুমড়া।

৩.ফলঃ

**অধিক লৌহ→ আনারস,বেদানা,শরিফা,খেজুর,তরমুজ।
**কম লৌহ→
পাকা আম,লিচু,কলা,পাকা পেপে,কমলালেবু,বেল,জামরুল,আমলকী,কাগজি লেবু,পেয়ারা,আঙ্গুর।

৪.খাদ্য শষ্য এবং তা থেকে তৈরি খাবারঃ

**অধিক লৌহ→
খৈ,কর্ণফ্লেক্স,শিশু খাদ্য যেগুলোতে লৌহ সংযুক্ত আছে যেমনঃ- সেরিল্যাক,কাউ & গেট ইত্যাদি।
**কম লৌহ→
চাল,ময়দা,পাউরুটি।

৫.ডালঃ

**অধিক লৌহ→
ছোলা,ছোলার ডাল।
**কম লৌহ→
মসূর ডাল।

৬.বিবিধঃ

**অধিক লৌহ→
গুড়,বাদাম,চীনাবাদাম,কিসমিস,সিমের বিচি,তিল,পান,সয়াবিন,জিরা,ধনে,সরিষা,ডিম।
**কম লৌহ→
মধু,দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার তথা-দই,ছানা,পনির,রসগোল্লা ইত্যাদি।

আরও অনেক কিছুই রয়েছে,আমি এই চার্ট টাই ফলৌ করি,আশা করা যায় এই চার্ট অনুযায়ী চললে আমার মতো সকল থ্যালাসেমিয়া রোগি ভালো থাকবে।শুধু অধিক লৌহযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে…..

To be continue….

((কেমন হচ্ছে জানাবেন,রেসপন্স খুবই কম।এই জন্যই বাস্তবের সাথে মিল করে স্টোরি লিখিনা,এসব গল্পে রিচ খুবই কম পরে))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here