ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ৫৯

0
906

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫৯ [ #ভালোবাসা_প্রকাশ ]

“কি ব্যাপার এতো হাসছিস কেন?

“না এমনেই, তোর মনের অবস্থা বুঝে।

“আমার মনের অবস্থা বুঝে মানে..

“ছটফট করছিস তো জানার জন্য।

“তোকে আমি একবারও জিজ্ঞেস করেছি উনি ফোন করে কি বলেছেন।

“না তা করিস নি।

“তাহলে..

“তাহলে কি, আমি তোর মনের কথা টের পাচ্ছি।

“পেলে ভালো!
বলেই মুখ ফিরিয়ে বসলাম। ইতি আমার পিঠের সাথে ওর মাথা ঠেকিয়ে বলে,

“আচ্ছা থাক তোর বলা লাগবে না। আমি নিজেই বলে দিচ্ছি।

“শোন আমি কিন্তু জানতে চাই নি।

“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি, এতো ভাব দেখানো লাগবে না।

মুখ ভেংচি কাটলাম!

“শোন, ফোন করে জিজ্ঞেস করল তুই কি করছিস, খেয়েছিস কিনা। আমি বললাম খেয়ে খুব লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে। জিজ্ঞেস করল মতামত পাল্টালি কি না। মানে চলে আসবি কি না। আমি বললাম না তেমন কিছু বলে নি। ভাইয়া জিজ্ঞেস করল, এখন কি করছে? আমি বললাম ঘুমাচ্ছে। বলল,‌তাহলে এক কাজ করো এক বালতি পানি ওর ওপর ফেলে দাও! অতঃপর‌ আমি হেসে উঠলাম। কথা মতো পানিও দিলাম তবে এক বালতি না এক গ্লাস দিয়েছি। ভালো করেছি না।

“ব্যস এতো টুকুই!

“হ্যাঁ এতুটুকুই, এখন যদি তোর কথা বলতে ইচ্ছে করে তো ফোন করতে পারিস।

“দরকার নেই!

বলেই উঠে এলাম। নিচে নেমে আন্টির সাথে খানিকক্ষণ গল্প করতে লাগলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ টা ১৫ বাজে। রাত তাহলে ভালোই হয়েছে। খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসে বসলাম। ফোনটার দিকে তাকালাম। অনেকক্ষণ ধরেই অফ। অন করলাম এটাকে। অতঃপর শুধু শুধু টিপতে লাগলাম। কোন কারন ছাড়াই। ফেসবুক ক্লিক করে নিউজফিডে ঘুরতে লাগলাম। যদিও অ্যাকাউন্ট আমি খুলি নি। আপু খুলে দিয়েছিল। হঠাৎ করেই একটা পোস্ট সামনে এলো। বড় বড় করে লেখা,

“গৃহবধূ বাপের বাড়ী গেলেই স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরকিয়া!”

খানিকক্ষণ এটার দিকে তাকিয়ে থাকার পর ফোনটা বন্ধ করে ফেলে দিলাম। নিজের মাথা একটা ঝাড়া দিয়ে দু হাত দিয়ে চেপে বলি,

“কিসব ভাবছি আমি, উনি মোটেও এমন না। নিহা তোর মাথা ঠিক কর তুই!

অতঃপর দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে মাথা ঠিক করলাম। বিছানায় শুতেই ইতি দৌড়ে এসে আমার পাশে বসে বলল,

“নিহা দেখ দেখ কি হয়েছে!

আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে বলি,
“কি হয়েছে?

“দেখ আজকের ব্রেকিং নিউজ, “গৃহবধূ বাপের বাড়ী গেলেই স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরকিয়া!” দাঁড়া আমি তোকে বিস্তারিত বলছি।

“লাগবে না।

“আরে শোন না অনেক ইন্টারেস্টিং! গৃহবধূ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেলে স্বামী অন্য মেয়ে ঘরে এনে পরকিয়া করত। তারপর একদিন হুট করেই বধূ স্বামী কে না জানিয়ে নিজের বাসায় চলে আসার দেখতে পেল..

“তুই রাখ তো এসব।

“রাখব কেন? তুই শোন না।

“আমার শোনার কোন ইচ্ছে নেই। যতসব আজাইরা কথা।

“এটা মোটেও আজাইরা কথা না। এটা সত্যি। পুরুষ মানুষরা এমন’ই হয় বুঝলি! সুযোগ পেলে কেউই ছাড়তে চায় না।

বলেই আমার দিকে তাকাল। আমি রুদ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ইতি বলে উঠে,

“কি হয়েছে, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

“তুই আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না নাহ!

“যাহ বাবা আমি আবার কি করলাম!

“কিছুই করিস নি সব’ই আমার কপাল।
বলেই নিচে নেমে ব্যাগ গোছাতে লাগলাম। ইতি আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“ব্যাগ গোছাচ্ছিস যে..

“বাসায় যাবো।

“পাগল হলি নাকি, কতো রাগ হয়েছে দেখেছিস এতো রাতে তুই বাসায় যাবি।

“ইতি শোন..

“ওয়েট, তুই কি ভাবছিস আহিয়ান ভাইয়া!

“ইতি ছাড়!

“আরে বইন শোন তো, আমি মোটেও ভাইয়ার কথা বলি নাই। তওবা তওবা, আমি শুধু অন্যদের কথা বললাম। ভাইয়া কিন্তু মোটেও এমন না।

“হুম বুঝতে পেরেছি।

“কি বুঝতে পারলি।

“বাসায় যেতে হবে।

“আরে ইয়ার পাগল হলি নাকি।

“না পাগল হবো কেন, বাসায় যাবো। বাসায় যাওয়াটা কি পাগলামি।

“বাসায় যাওয়া পাগলামি না কিন্তু তুই যা ভেবে যাচ্ছিস তা পাগলামী। এছাড়া বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে এতো রাতে এভাবে তুই কি করে যাবি।

“যেতে পারবো, কিন্তু বাসায় আমি যাবোই!
বলেই বের হতে নিলাম। ইতি বলে উঠে,

“আচ্ছা আমিও যাবো।

“না আমি একাই যেতে পারবো।

“নিহা শোন তো..

বলার আগেই বের হয়ে এলাম। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে। বাইরে আসতেই শীতল বাতাস ছুঁয়ে গেল আমায়।‌বৃষ্টি ও পড়ছে তবে ঝিরিঝিরি। বৃষ্টির গতি বেড়ে যাওয়ায় আগেই আমাকে যেতে হবে!
.
ভাগ্য করে একটা সিএনজি পেয়ে গেলাম। অতঃপর বাসায় উদ্দেশ্য উঠে পড়লাম। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ইতি কল করেছে। তাকে বললাম, সিএনজি পেয়ে গেছি এখন বাসায় যাচ্ছি চিন্তা করিস না।

অতঃপর ফোনটা কেটে দিলাম। আহিয়ান’র নাম্বার ডায়াল করলাম ঠিক’ই কিন্তু ফোন করলাম না। না উনাকে না জানিয়ে আজ বাসায় যাবো।

আমি অস্থির হচ্ছি আমি বেশ বুঝতে পারছি।‌ নিজেকে কেমন দুর্বল বলে মনে হচ্ছে। আমি কি তাহলে আহিয়ানের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। সিএনজি বাড়ির সামনে থামতেই ভাড়া মিটিয়ে বের হলাম। বৃষ্টির গতি এখন বেড়েছে। বেশ জোরেই বৃষ্টি হচ্ছে তার সাথে আকাশ ও চমকাচ্ছে!
বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সব অন্ধকার। ব্যাপারটা কি? শুধু আমাদের বাড়ি না আশপাশ ও অনেক অন্ধকার! ফোনের আলো জ্বালিয়ে সদর দরজায় নড়া নাড়তেই, আমাকে দেখে দাড়োয়ান সদর দরজা খুলে দিল। জিজ্ঞেস করলাম,

“ব্যাপার কি চাচা, সবকিছু অন্ধকার যে..

“আর বলো না মা লোডশেডিং হয়েছে।

“ওহ আচ্ছা, উনি বাসায় আছে।‌

“আহি বাবা, হ্যাঁ বাসায় আছেন।

“আচ্ছা!

“তুমি এতো রাতে এলে যে মা!

“বৃষ্টির কারণে বান্ধবী’র বাসায় আটকা পড়েছিলাম তাই। পরে ভাবলাম এই বৃষ্টির কমবার নয় তাই চলে এলাম।

“ঠিক বলেছো, যা বৃষ্টির জোর!

অতঃপর আমি বাড়ির দরজার দিকে হাঁটা ধরলাম। দরজায় কড়া নাড়তেই মোমবাতি হাতে নিয়ে একজন এসে দরজা খুলল। তাকে দেখে প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। অতঃপর বাড়ির ভেতর থেকে প্রবেশ করলাম। পুরো বাড়ি অন্ধকার, আমি ফোনের আলো জ্বালিয়ে গুটিগুটি পায়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম। ব্যাগটা বসার ঘরে সোফায় রেখে বেডরুমের দিকে এগুলাম! নিজের চিন্তা ভাবনা দেখে লজ্জা হচ্ছে। আমি জানি উনি মোটেও এমন মানুষ না। কিন্তু কেন আমি তাও ছুটে এলাম। খুব অপরাধ বোধ হচ্ছে। ঘরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভাবলাম আর‌ যাবো না। আবার ভাবছি এতোদূর এসে এখন কি ফেরত চলে যাবো। আচ্ছা এসে যখন পড়েছি তখন এখানেই থেকে যাই। আর এখানে থাকতে হলে আমাকে ঘরেই যেতে হবে নাহ। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরের সামনে এলাম। ঘরে এসে দেখি মোমবাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উনি। উনাকে দেখেই চমকে উঠলাম। খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। আমি বলে উঠি,

“আপনি খালি গায়ে কি করছেন?

আচমকা আমার আওয়াজ পেয়ে উনি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। অতঃপর বলেন,

“তুমি, তুমি এখানে এতো রাতে, কিভাবে এলে?

আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে, ফোনের আলো উনার মুখের দিকে করে বলি,

“আপনি আগে আমার কথার উত্তর দিন পরে আপনার কথা, খালি গায়ে কি করছেন!

“গোসল করেছি মাত্র, আর এখন’ই লোডশেডিং হলো। কিছুই দেখতে পারছি না তাই খালি গায়ে।

“এতো রাতে গোসল কেন করতে গেলেন।

উনি কপালে হাত দিয়ে বলেন,
“গরম লাগছিল বলে, তা তোমার গোয়েন্দা কি শেষ হয়েছে।

“বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তবুও আপনার গরম লাগছিল!

“ভূতনি তোমাকে আমি…

আমি উনার থেকে মুখ ঘুরিয়ে ঘরের চারিদিকে দেখতে লাগালাম। কিন্তু কিছুই পেলাম। হঠাৎ করেই উনি আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালেন। আচমকা এমনটা হওয়ায় ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল। উনি তবুও আমার হাত ধরে আছেন। আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে। মোমবাতির আলোয় দু’জন দু’জনকে দেখছি। হঠাৎ করেই বাইরে বাজ পড়ল। আমার বোধ হলো। একটু সরে বলে উঠি,

“কি হচ্ছে টা কি?

“তুমি এতো রাতে কেন এসেছ? এই না বললে আসবে না।

“আমার বাড়ি আমার ঘর যখন ইচ্ছে আসবো আপনার কি হুম। ছাড়ুন আমায়!
বলেই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। আর সফল ও হলাম। আমি বলে উঠি,

“খালি গায়ে কেন ঘুরছেন, কিছু একটা পড়ুন।

উনি আমার হাতে মোমবাতি দিয়ে বলে,

“ধরো এটা!

“এটা রাখার জন্য আর কিছু পেলেন না।

“তুমি আছো তো, আর কিসের দরকার পড়বে!

“পারবেন তো শুধু খাটাতেই!
বলেই মোমবাতি হাতে নিলাম। উনি আলমারি থেকে একটা টি শার্ট বের করে পড়লেন। আমি নিচ থেকে ফোন টা উঠলাম। ফোনটা হাতে নিতেই বন্ধ হয়ে গেল। এই যা ফোনটা এখন’ই বন্ধ হবার ছিল। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি বলে উঠেন,

“কি হয়েছে?

“ফোনে চার্জ নেই.

“বাহ খুব ভালো, আমার ফোন চার্জে তাতেও চার্জ নেই। এখন মোমবাতি নিয়েই বসে থাকতে হবে।

“সারাদিন যে হারে ফোন গুঁতোগুতি করেন এটা যে আস্ত আছে এটাই বেশি।

“তুমি এখানে কেন এসেছ বলো তো।

“মন চাইলো তো।

“তাই বলে এতো রাতে, আমাকে বলতে আমি নিয়ে আসতাম।

“কেন এসে কি আপনার খুব সমস্যা করেছি।
বলেই চলে যেতে নিলাম।

হুট করেই উনি আমার হাত ধরলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

“সত্যি করে বলো তো তুমি এখানে কেন আসেছ।

“বললাম তো এভাবেই এসেছি।

“না তুমি এভাবে আসো নি কিছু তো একটা আছে।

আমি মোমবাতি উনার মুখের সামনে নিয়ে বলি,
“আরেকটা বাজে কথা বললে আমার মুখ পুড়িয়ে দেবো বুঝলেন।

উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। অতঃপর হেসে বলেন,

“আচ্ছা পুড়াও!

বলেই দিলেন একটা ফু। সাথে সাথে মোমবাতি নিভে গেল। আমি রেগে উনাকে বলি,
“কি করলেন এটা!

“যা করেছি বেশি করেছি!

“আপনাকে তো..
বলেই উনাকে মারতে লাগলাম। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তবুও আমি ভালোই উনাকে অনুভব করতে পারছিলাম। একসময় মারামারি করতে করতে দুজনেই বিছানায় ধপাস করে পড়ে গেলাম। উনি এসে পড়লেন আমার গায়ের উপর। অতঃপর বুঝতে পেরে দ্রুত সরে গেলেন। বিছানার এক পাশে উনি আর আরেকপাশে আমি। দুজনেই বাইরের বৃষ্টি দেখছি। একটু পর পর’ই বাজ পড়ছে। আকাশ চমকাচ্ছে। দুজনেই নিশ্চুপ। হঠাৎ উনি বসে বলে উঠেন,

“আমার সিনেমার কথা মনে পড়ছে।

আমি উঠে বসে বলি,
“মানে।

“ওই যে বৃষ্টির মাঝে বাজ পড়লে নায়িকা নায়কে জরিয়ে ধরে তেমন!

“তাই বুঝি, আপনি তাহলে এসব ভাবেন তাকে নিয়ে!

“এই তাকে টা কে?

“আপনার সেই ভালোবাসার মানুষ টা!

“ভূতনি বাজে কথা বন্ধ করে দেখ তো ওখানে ম্যাচ আছে কি না, মোমবাতি টা জ্বালাই।

“থাক না আঁধার’ই ভালো লাগছে!

“আঁধারে ভালো লাগার মতো কি আছে!

“অনেক কিছু, যা আলোর মাঝে ধরা পরে না।

“যেমন!

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
“বাদ দিন, এইতো ম্যাচ পেয়েছি‌। নিন মোমবাতি জ্বালান।

“থাক তুমি তো বললে আঁধারে থাকবে।

“তবে সবসময় আঁধারে থাকতে ভালো লাগে না।

বলেই ম্যাচের একটা কাঠি ধরালাম। আমি উনার মুখ এতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। উনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমিও তাকিয়ে আছি উনার দিকে। বাইরে বৃষ্টি এর মাঝে আমাদের দু’জনের এই চোখাচোখি মন্দ না। খুব সুন্দর মুহুর্ত! হঠাৎ করেই উনি আমার হাত ধরে ম্যাচ টা নিভিয়ে দিলেন।‌ মুখ ফুটে বলে উঠেন, “ভূতনি!

বুঝতে পারলাম আরেকটু হলেই আমার হাত টায় একটু আগুনের তাপ লাগত। তবে এতে আমি মরে যেতাম না। কিন্তু আজ সকালে উনার বলা কথাটা যেন এর চেয়েও আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। উনি আমার হাত ধরে বলেন,

“লেগেছে তোমার!

“না আমি ঠিক আছি!
বলেই উঠে দাঁড়ালাম। উনি উঠে দাঁড়ালেন। আমি বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কোথাও একটা ব্যাথার অনুভব করছি। আহিয়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

“আহিয়ান একটা কথা বলব!

শীতল গলায় বলেন,
“বলো!

আমি উনার হাত টা ধরে নিজের গালের কাছে নিয়ে বলে,
“আমাকে এভাবে একটু ধরে রাখবেন।

আহিয়ান খানিকটা অবাক হলো। হবে নাই বা কেন? আমার মুখে এমন কথাটা শুনে উনার তো অবাক হবার’ই কথা।
আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে হাত টা আমার মাথায় দিয়ে বলেন,

“তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে!

“না ঠিক আছি আমি। আমার প্রশ্নের জবাব আমি পেয়ে গেছি।

“তুমি প্রশ্ন কখন করলে!

“কিছু না !

বলেই ফু দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিলাম। আমি উনার আরো সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি হয়তো এখনো অবাক হয়ে আছেন। দু’জনের নিঃশ্বাস’র শব্দ আসছে। হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চমকালো। আমরা দুজনে দুজনের মুখটা দেখতে পেলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠি,

“আহিয়ান আপনাকে তখন বললাম না আঁধারের মাঝেও অনেক কিছু দেখা যায় যা অনেক আলোর মাঝে দেখা যায় না। আজ তেমন কিছুই বলবো আমি এই আঁধারের মাঝে আপনি শুনবেন তো।

“কি বলবে তুমি!

“আপনি দয়াকরে কোন কথা বলবেন না। শুধু শুনবেন ঠিক আছে। হ্যাঁ, এটারও উওর দিবেন না আপনি!

বলেই উনার আরো কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছে আমি পুরো পুরো উনার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছি। আমি উনার ঘাড়ে হাত রাখলাম। আহিয়ান বুঝতে না পেরে আমার কোমর আলতো রাখল। বাইরে এখন জোরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে।‌ শীতল বাতাস এসে আমার গায়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আমার শরীর শিউরে উঠছে। হাত কাঁপছে। আমি কি করতে চলেছি আমি জানি। আমি পা দুটো উঁচু করে আহিয়ানের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলি,

“আমি আপনাকে ভালোবাসি আহিয়ান! হ্যাঁ আহিয়ান আমি আপনাকে আমি ভালোবাসি।

হঠাৎ করে আবারো বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। আমি উনার শার্টের কলার আঁকড়ে ধরলাম। উনার মুখখানা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে উনি। আমি উনার ঘাড়ে হাত রেখে উনার ঠোট দুটো আঁকড়ে ধরলাম। উনি আমার কোমর আঁকড়ে ধরলেন!

কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই ঘরের সব আলো জ্বলে উঠল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিল। আমি উনার ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে উনার থেকে সরে এলাম। আমার চোখের কোনে অশ্রু জমতে লাগল। সবকিছু’ই নিরব নিস্তব্ধ! আহিয়ান এক পা এগিয়ে সামনে এসে বলল,

“নিহা আমি..

কথা শেষ হবার আগেই আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠি,
“আহিয়ান, আপনি আমার হয়েও আমার না!

বলেই ঘর থেকে চলে আসি! দৌড়ে চলে আসি আপুর ঘরে। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। আমি এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। খাটের উপর বসে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরলাম। চোখ থেকে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়ছিল। শুধু কানে একটা কথাই বাজছিল,

“উনি আমার না! আহিয়ান আমার হয়েও আমার না!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here