#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৩ ( #লাভ_বাইট ? )
কুশনের থেকে উঁকি দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা! আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি খানিকক্ষণ’র জন্য হাসি থামিয়ে আমাকে বলেন,
“কি হলো দেখছো না কেন? দেখো।
“আপনি জানতেন নাহ!
“হ্যাঁ জানতাম তাই তো মানা করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো পাকনা ভূতনি নাহ, কথাই শুনতে চাও না। বড়দের কথা না শুনলে এমনি হয় বুঝলে।
“আপনি চ্যানেল চেঞ্জ করুন।
“না করবো না, দেখো তুমি!
“দেখুন আপনি কিন্তু এখন বেশি বেশি করেছেন।
“কবি বলেছেন কম কিছু করতে নেই, যা করবে বেশি করে করবে, সেটা ঝগড়া হোক কিংবা ভালোবাসা!
“কোন কবি বলেছে শুনি।
একটু হালকা কেশে বলে,
“আহিয়ান চৌধুরী!
“ওহ আচ্ছা!
অতঃপর তাকে কুশন দিয়ে মারতে শুরু করি। আজ খুব জ্বালিয়েছেন উনি আমাকে। উনি খাট থেকে নিচে নেমে যান। আমি উনার পিছনে পিছনে কুশন দিয়ে মারতে থাকি। উনিও খাট থেকে একটা কুশন। দুজনেই এবার কুশন দিয়ে মারতে থাকি। মারামারি করতে করতে কুশনের সব তোলা বের হয়ে আমাদের দুজনের শরীরে ছড়িয়ে যায়। উনি আমার চুল থেকে তুলো নিয়ে আবারো আমার মুখে ফু দিয়ে বলে,
“তোমার অস্ত্রের সমাপ্তি ঘটে গেছে।
আমি রেগে নিচ থেকে একগাদা তুলো নিয়ে উনার মুখে ছুঁড়ে মেরে দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। উনি আসার আগেই বেলকনির দরজা লক করে দেই। দরজা টা কাচের ছিল। বাইরে থেকে কেউ দেখতে পারবে না কিন্তু ভেতর থেকে দেখা যাবে। সম্ভবত উনি কাচের সামনে এসে দাড়িয়ে বলেন,
“দরজা খোল।
“না খুলবো না।
“ভূতনি।
“গোমরামুখো!
“কি বললে..
“শেওড়া গাছের ভূত আপনি।
“তোমাকে যদি পাই না।
“পাবেন না নিশ্চিত থাকুন।
“ঠিক আছে সারারাত এখানেই থাকো।
বলেই উনি বেলকনির পর্দা টেনে দিলেন। আমি কাঁচের ভেতর থেকে দেখার চেষ্টা করলাম উনি কি করেন। উনি হাঁটাচলা করছেন, আমি উনার হাঁটাচলা দেখতে পাচ্ছি। অনেক কষ্ট করে দেখতে হয়েছে। হঠাৎ করেই উনি ঘরের আলো নিভিয়ে দিলেন। যাহ! এখন কি হবে, আমি উনার উপস্থিতি এবার কি করে পাবো। এর মাঝেই মশার কামড়ানি শুরু হতে লাগল। কি মশারে বাবা, ওদের কামড়ে আমি লাফিয়ে উঠছি।
কিছুক্ষণ পর ভাবলাম উনি হয়তো ঘুমিয়ে গেছেন। আমি নিঃশব্দে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলাম। খুব সাহস নিয়েই ঢুকলাম। উনি কোথায় আছেন বোঝার চেষ্টা করছি। হঠাৎ করেই কেউ আমাকে টান দিল। আমি জানি এটা উনি ছাড়া কেউ না।
উনি আমাকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সবটাই আমার ধারনা কারন অন্ধকারে আমরা কেউই কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবে নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক’ই পাচ্ছিলাম। উনি বলে উঠেন,
“এখন বাঁচবে কিভাবে?
“বাঁচব কিভাবে মানে, আমি কি করেছি?
“এতোক্ষণ কি করছিলে?
“কিছুই না।
“কিছু করো নি না। দাঁড়াও!
বলেই আমার চুল টানলেন। আমি আহ বলে চুলে হাত দিলাম কিন্তু উনাকে ধরতে পারলাম না। রাগে আলো জ্বালাতে সুইচবোর্ডের কাছে যেতে নিলাম। কিন্তু এর মাঝেই উনি আবারো আমার মাথার চুল টানলেন। আমি উনাকে ধরতে গিয়েই ফসকে গেলেন। অন্ধকারের মাঝে উনি খেলা খেলছেন আমার সাথে। আমি উনার উপস্থিতি টের না পেলেও উনি বেশ পাচ্ছিলেন। তাই বার বার আমাকে জ্বালাতন করছেন। একবার চিমটি দিচ্ছেন তো একবার আমাকে ঘুরাচ্ছেন। তবে প্রত্যেকবার’ই বেঁচে যাচ্ছিলেন। হাতের নাগালে পাচ্ছিলাম না তাকে।
এক পর্যায়ে আমি উনার শার্ট ধরতে সক্ষম হলাম। আমি খামছি দিয়ে উনার শার্ট ধরে আছি। উনি হাত ছাড়াতে এলে আমি অন্ধকারে’ই উনার হাতে কামড় বসিয়ে দেই। উনি লাফ দিয়ে পেছনে চলে যায়। আমি সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেই। উনি আমাকে ধরার আগেই ঘর থেকে বের হয়ে দৌড় আমি।
দৌড়াতে দৌড়াতে আপুর রুমে চলে আসি। আপু নেই বলে ঘরটা এখন খালি। আমি দ্রুত ঘরের দরজা বন্ধ করে দেই। দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। উনি দরজা নক করে বলে,
“বের হও
“কেন, আপনার মার খেতে।
“আজ তোমাকে পেলে না, ভূতনি আমার হাতে কামড় দিয়ে কি করেছো দেখো।
“যা করেছি বেশ করেছি।
“ভূতনি দরজা খোল, এরপর দেখাচ্ছি তুমি কি করেছ?
“সরি! আজ আর আমি দরজা খুলছি না। আপনি বরং যেভাবে হেঁটে এসেছেন সেইভাবেই হেঁটে চলে যান।
“কি বললে তুমি!
“যা শুনেছেন তাই’ই বলেছি, যান এখন আমি ঘুমাবো। গুড নাইট।
“ভাবছো আজ রাতে এখানে থাকলেই বেঁচে যাবে।
“কচু করবেন আপনি আমার!
বলেই লাইট বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। উনি চলে গেছেন। ইশ বেচারার হাতে খুব জোরেই কামড় দিয়েছি। ব্যাথা পেয়েছে খুব। তো কি ! আমাকে যখন চিমটি মেরেছিলো তখন। আমি বুঝি ব্যাথা পেই নি। বেশ হয়েছে ব্যাথা পেয়েছে হুহ!
.
এই শীতের সকালে ঠান্ডা পানি আমার গায়ে ফেলে ঘুম থেকে জাগানোর ধান্দা করলেন উনি। সফল ও হয়েছেন এটাতে কোন সন্দেহ নেই। এই শীতের সকালে ঠান্ডা পানিতে আমি পুরোই জমে যাচ্ছি আর উনি হেসে যাচ্ছেন। কিন্তু কথা হলো উনি এখনে এলেন কিভাবে!
রুমের দরজা খোলা, দরজায় চাবি ঝুলে আছে। এর মানে এখানকার দরজা চাবি দিয়েও খোলা যায় আর উনিও সেটাই করেছেন। রাতে আসেন নি এসেছেন সকালবেলা আমার আরামের ঘুম হারাম করতে।
উনার হাসি দেখে রেগে গিয়ে আমার উনার মুখের দিকে বালিশ ছুঁড়ে মারি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু্ই হয় না। উনি বালিশ টা ধরে ফেলে। আমি রেগে ঘরে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে পরি শাওয়ার নেবার জন্য! রেগে চলে তো এলাম কিন্তু কাপড়’ই আনতে মনে ছিল না। আমি দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখি ঘরে কেউই নেই। তবে ঘরের দরজাটা খোলা। আমি ভাবলাম উনি হয়তো বাইরে চলে গেছেন। তোয়ালে দিয়ে কোনমতে শরীর পেঁচিয়ে রুমে ঢুকেই সোজা ঘরের দরজা বন্ধ করলাম।
অতঃপর সামনে ঘুরতেই উনার গলার স্বর পেলাম। “ভূতনি বের হয়েছ” বলেই উনি এদিকে এলেন। উনাকে দেখা মাত্রই বিছানার কম্বল উঠিয়ে নিজের শরীর পেঁচিয়ে নিলাম। উনি এসেই আমাকে এভাবে দেখে উল্টো ঘুরে নিলেন। আমিও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে মিশে গেলাম। উনি কঠিন স্বরেই বলেন,
“গাধার মতো কাজ করা কবে ছাড়বে বলো তো।
“আমি কি জানবো আপনি ঘরে আছেন। তাও তো ঘরে ছিলেন না বেলকনিতে ছিলেন।
“ডাকলেই তো পারতে। আমি তোমাকে আওয়াজ দিলেই তো বুঝতে ঘরে আছি কি নেই।
উনার কথা শুনে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি মারলাম। ইশ কেন যে এই কথাটা আমার মাথায় এলো না। আমি জিহবা কামড় দিয়ে বলি,
“আচ্ছা আপনি একটু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকুন আমি কাপড় টা নিয়ে চলে যাচ্ছি।
“কেন পিছনে ঘুরলে কি হবে।
রেগে বলি,
“বেশি করছেন কিন্তু!
উনি হেসে বলেন,
“বাহ দোষ করলে তুমি আর রাগ দেখাচ্ছো আমার উপর।
আমি রেগে আবারো বালিশ ছুঁড়ে মারলাম। জানি না কি করে উনি বুঝতে পারলেন আর একটু সরি দাঁড়ালেন। বালিশ টা উনার গা ঘেসে পাশে পড়ল। উনার হাসির আওয়াজ পাচ্ছি। জয়ের হাসি হাসছেন। আমার তো ইচ্ছে করছিল উনার মাথা টাই ফাটিয়ে দিতে। হেসে হেসে বলেন,
“যাহ এবারও মিস হয়ে গেল।
“আপনি বুঝলেন কি করে!
“তোমাকে এতো দিনে এতো টুকু ঠিক’ই চিনেছি। তুমি কিছু থেকে কিছু হলেই জিনিস ছুড়ে মারো। কাল রাতেও একবার মেরেছ। সকালেও একবার তাই এখন ও মারতে। আর প্রথমবার তো পেয়ারা মেরেছিলে।
“আফসোস হচ্ছে পেয়ারার জায়গায় যদি একটা ডাব থাকতো ভালো হতো তাহলে এই মাথাটা আর আস্ত থাকতো না।
“ভূতনি!
আমি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুম এ দৌড়!
.
চেঞ্জ করে এসে দেখি উনি কাপড় নিয়ে বিছানায় বসে আছেন। নিশ্চিত আমি বের হলেই ওয়াশরুম এ ঢুকবেন। আমি উনাকে দেখেই আবারো ওয়াশরুম এ ঢুকতে নিলাম এর আগেই উনি আমার হাতের বাহু ধরে বলেন,
“বোকার মতো কাজ করো না, বাড়িতে আরো ঘর আছে আমি তাদের রুমেও চলে যেতে পারি।
আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। বুঝলো কিভাবে আমি এটাই ভাবছিলাম। হঠাৎ করেই উনি চোখ টিপ দিয়ে বলেন,
“এখানে একটা সমস্যা হতে পারে বুঝলে, ধরো এমন তুমি বাথরুমে ঠিক’ই ঢুকলে কিন্তু আর বের হতে পারলে না। আমি বাইরে থেকে আটকে দিলাম কেমন হবে!
উনাকে কি জব্দ করবো তার আগে উনিই আমার সব প্ল্যানে জল ফেলে দিলেন। অতঃপর আমাকে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“সরো তো ভুতনি!
বলেই উনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। আমি বাইরে থেকে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি এমন করা যায় সেটাই ভাবছিলাম! উনার সাজসজ্জার সামনে এসে দাড়িয়ে ভাবতে থাকি কি করা যায়। তার কোন কাজে জল ফেলা যায়। উনি আজ ব্যায়াম করতে যান নি। কারন আমাদের দুজনের’ই আজ ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।
হঠাৎ করেই আমার চোখ পড়ল উনার পারফিউম এর দিকে। এটা উনার খুব পছন্দের। এটার ঘ্রাণ টাও অনেক সুন্দর আমি সবসময় উনার থেকে এটার ঘ্রাণ পাই। এটা নিয়ে কি ছেড়ছার করবো। উনি কখনো এটা দিতে ভুলেন না তার মানে এটা নিয়ে তিনি খুব সিরিয়াস। আর সিরিয়াস ব্যাপার নিয়েই যা করার করবো। কিন্তু করবোটা কি!
বুদ্ধি করে পারফিউম সবটা ফেলে দিয়ে ঠিক জায়গায় রেখে দিলাম। অতঃপর বিছানার উপর বসে নিজের ফোন দেখতে লাগলাম। একবার মা কে কল করা উচিত। অতঃপর মা কে কল করে কিছুক্ষণ কথা বললাম। কথা শেষ করেই দেখি উনি বের হয়ে এসেছেন। এসেই আয়নার সামনে বসে মাথা মুছছেন। আমি হাঁটতে হাঁটতে আগেই এসে দরজার কাছে দাড়ালাম। দৌড়াতে সুবিধা হবে।
গোমরামুখো টাও আমাকে অনেকক্ষন দাড় করিয়ে লাগল। এতোক্ষণ কি লাগে তৈরি হতে নাকি। একে একে কতোকিছু দিল এতো কিছুর নাম তো আমি মনেও রাখতে পারবো না। অতঃপর পারফিউম’র সময় এলো। উনি এসে নিয়ে নিজের গায়ে দেওয়ার পর শুকতে লাগলেন। মজার ব্যাপার ছিল আমি এটার মাঝে ভিনেগার রেখেছিলাম। এটা ভিনেগার কি না উনি হয়তো এটা বুঝতে পারি নি। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছেন এটা উনার পারফিউম না। উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাকে খুঁজতে লাগলেন। আমি ওকে ডেকে বলি,
“আমি এখানে!
উনি ভূতনি বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি এক দৌড়! উনিও আসছেন আমার পিছু পিছু! সোফার এদিকে উনি ওদিকে আমি। কিছুক্ষণ এভাবে দৌড়াদৌড়ি করার পর বলে,
“কি ছিল এটাতে বলো।
আমি হাসতে হাসতে বলি,
“ভিনেগার!
“আর আমার পারফিউম!
“আপাতত ফুলের টবে আছে!
“ভূতনিই! তুমি জানো ওটা আমার ফ্রেভরিট পারফিউম ছিল।
আমি হাসতে হাসতে বলি,
“তো কি! আগে হয়তো পারফিউম এর ঘ্রাণে মেয়েরা আসতো এবার নাহলে মাছিই আসলো! এতে আর বেশি কি হবে!
উনি কিছু না বলে রেগে উপরে চলে গেলেন। আবারো গোসল করলেন। বেশ হয়েছে আমার এতো সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিয়েছে আমি ছেড়ে দেবো নাকি। দেখুক শীতের দিনে দুবার গোসল করতে কেমন লাগে। হি হি হি!
.
দুজনেই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছি। বাবা খাওয়া শেষ করে উঠে গেছেন। আমরা দু’জনেও একসাথে উঠলাম। আমি উঠে রান্না ঘরে এসে হাত ধুয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে গিঁটু দিচ্ছি। আমি এক টান দিয়ে শাড়ির আঁচলটা ধরে বলি,
“কি চাই!
“বাহ বুঝে গেছো, এক কাপ চা দাও!
“দিচ্ছি!
“চা তে যদি কিছু করেছ না তো দেখো কি করি।
“কি করবেন, হুম কি করবেন!
“সেই চা তোমার মাথায় ঢালবো, আবারো ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবে বুঝতে পারবে।
বলেই উনি চলে গেছেন। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে চা বানিয়ে উনাকে দিয়ে উপরে চলে এলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা ভার্সিটির জন্য বের হবো। আমি ভেবেই রেখেছি উনাকে আজ নাজেহাল করে ছাড়বো। এখন নাজেহাল কিভাবে করা যাবে। হ্যাঁ উনার গাড়ির চাবি। গাড়ির চাবি লুকিয়ে ফেললে বেশ হবে। কিন্তু গাড়ির চাবি টা কোথায়?
পুরো ঘর খুঁজে ফেললাম গাড়ির চাবি টা পেলাম না। আমি দেখলাম ডেসিন টেবিলে উনার মানিব্যাগ পড়ে আছে। চাবি তো এখানেই থাকতে পারে। দ্রুত মানিব্যাগ টা নিয়ে খুঁজতে লাগলাম। আফসোসের বিষয় হলো মানিব্যাগ টাকা আর কার্ড ছাড়া কিছু ছিল না। উনার মানিব্যাগ আমার হাতে, একটা কথা মনে পড়ছে। একজন আর্দশ স্ত্রী! যে কি না স্বামীর মানিব্যাগ থেকে টাকা সরিয়ে রাখে। কিন্তু আমার মনে হয় আর আর্দশ স্ত্রী হওয়া হবে না। না কখনো উনার মানিব্যাগ থেকে টাকা সরাবো আর না কখনো এটার প্রয়োজন হবে।
কারো আসার শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি করে মানিব্যাগ টা জায়গায় রেখে বিছানায় বসে পরলাম। উনি এসেছেন! এসেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তৈরি হয়েছ, ভার্সিটি যাবে না।
“আমি তো তৈরিই, কিন্তু সময় তো আপনার লাগে।
“ভূতনি!
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে মুখ সরিয়ে নিলাম। উনি তৈরি হচ্ছেন আমি দেখছি। চাবি টা কোথায় রাখে এটা দেখা জরুরি। কিন্তু উনি তৈরি হয়ে নিচে নেমে গেলেন তবুও উনাকে চাবি নিতে দেখলাম না। আমি ভাবছি চাবি টা কোথায় রেখেছে। ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাছে এসে দুজনেই দাঁড়ালাম। চাবি তো উনি নিলেন না তাহলে ড্রাইভ করবে কিভাবে?
হুট করেই মনে হলো উনি আবারো আমার শাড়ির আঁচল ধরেছেন। তাকিয়ে দেখি উনি গিট্টু খুলছেন। মনেই তো ছিল না এটা গিট্টু দেওয়া ছিল। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি। ওমা! এটা কি হলো? উনি তো চাবি আঁচলে গিট্টু দিয়ে রেখেছিল! তার মানে চাবি আমার সাথেই ছিল আর এটা আমি সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজছিলাম। কপালে হাত দিয়ে আফসোস করতে লাগলাম।
উনি চাবি তো আমার গালে খোঁচা দিয়ে বলেন,
“এভাবে এভাবে তোমাকে বোকা ভুতনি বলে ডাকি।
“আপনি ইচ্ছে করে করলেন।
উনি হাসতে হাসতে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। আমি বেকুবের মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৪
ক্লাসে ইতি’র পাশে বসে আছি। তবে ক্লাস হচ্ছে না, আমি ইতির সাথে কথা বলবো বলেই এখানে নিয়ে এলাম। কিন্তু কিভাবে কথা বলবো এটাই বুঝে উঠতে পারছি না। ভাবছি ইতি আকাশ ভাইয়া কে যদি ভালোবেসে থাকে তাহলে আমাকে কেন বললো না। আর এতো দিনে যখন বলে নি তাহলে আজও বলবে না আমি নিশ্চিত। কিন্তু পেট থেকে তো কথা বের করতেই হবে। আমি গালে হাত দিয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে আছি। ইতিও আমাকে নকল করে সেভাবেই বসে আছে। আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিস!
“তোকে একটা কথা বলবো কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই ভাবছি।
“এতো ভাবাভাবির কি আছে বলে ফেল।
“আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্টে কথা বলতে এসেছি।
“কি ইম্পর্ট্যান্টে!
“আসলে আকাশ ভাইয়া আমাদের ক্লাসের একটা মেয়েকে ভালোবাসে।
ইতি আমার কথায় চমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি! কি বললি তুই!
আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইতিকে হাত ধরিয়ে বসিয়ে বলি,
“কি করছিস!
ইতির মুখের রং ততোক্ষণে উড়ে গেছে। তার মুখচোখ কেমন জানি শুকিয়ে গেছে। আশায় আছি এখন ও বলেই ফেলবে, “আমি আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসি!”
কিন্তু বজ্জাত মেয়েটা তা না করে ভারী ভারী গলায় জিজ্ঞেস করে,
“কোন মেয়েটা রে
ও কথা শুনে ইচ্ছে করছিল ওর মাথায় একটা বাড়ি মারি। বেয়াদব মেয়ে একটা! ভালোবাসিস এটা বলতে সমস্যা কি! কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি তোকে।
ইতি কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ওর গালে হালকা ভাবে চড় মেরে বলি,
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
“বল না কোন মেয়েটা।
“মেয়েটা আজ আসে নি। গতকাল দেখেছিলাম মেয়েটাকে
“নাম কি?
“আমি ক্লাসের তোর নাম ছাড়া আর কতো জনের নাম জানি বল।
ইতি কাচুমাচু হয়ে বলে,
“আচ্ছা মেয়েটা খুব সুন্দরী নাহ বল।
“আকাশ ভাইয়া যেমন তার পছন্দ করা মেয়ে কি সুন্দরী না হয়ে পারে
ইতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমি বলে উঠি,
“আরে এত কি ভাবছিস। এখন শোন আমাদের কি করতে হবে
“কি করবো আমরা।
“আকাশ ভাইয়া ওই মেয়ে টাকে প্রপোজ করবে তো আমরা সেই ব্যবস্থা করে দেবো।
“আমরা কেন করবো।
“আমরা তার বন্ধু তাই করবো। যেভাবেই হোক মেয়েটাকে আকাশ ভাইয়ার কাছে নিয়ে আসবো। এরপর আকাশ ভাইয়া তাকে প্রোপজ করবে।
“আচ্ছা মেয়ে টা যদি না মানে।
“দেবো একটা চড়!
“কাকে? মেয়েকে?
“না তোকে!
“আমাকে! কেন?
“এতো অলুক্ষণে কথা কেন বলছিস! এজন্য..
ইতির মুখটা মলিন হয়ে গেল। বেচারি বেশ কষ্ট পাচ্ছে এটা বুঝতে পারছি। সে বির বির করে কিছু একটা বলবো। আমি সেটা শুনতে পেয়েছিলাম। কথাটা এমন ছিল যে,
“তিনি আমাকে একবারও বলল না কোন মেয়েকে তিনি ভালোবাসেন!”
আমি আর ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। একটু বিরহে তাকে মন্দ কি! এর মাঝেই স্যারের প্রবেশ ঘটল কক্ষে। পুরো ক্লাসেই ইতির মনোযোগ ছিল না। তার মনোযোগ যে কোথায় ছিল তা আমি বেশ বুঝতে পারছি!
.
ক্লাস শেষে দুজনেই বের হলাম। দুরেই বট গাছের নিচে বসে উনারা সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমি আজ পর্যন্ত দেখলাম না আহিয়ান কে ভালোমত একটা ক্লাস করতে। সারাদিন শুধু আড্ডাই দেন উনি!
আমি আর ইতিও সেখানে গেলাম। ইতি কোন কথা বলছে না। আহিয়ান আমাকে ইশারা করল জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে? আমি ফোনটা নিয়ে উনাকে বড় একটা রচনা লেখে মেসেজ করলাম। উনি মনোযোগ দিয়ে পুরো মেসেজ টা পরে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বলি মেসেজ টা আকাশ ভাইয়া কে পড়তে দিতে। আকাশ ভাইয়া ও মেসেজ টা পরে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর তাকাল ইতির দিকে। বেচারা ইতি বিরহে গালে হাত দিয়ে আকাশ ভাইয়া’র দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি একটু হালকা কেশে বলে উঠি,
“আচ্ছা ভাইয়া মেয়ে টার নাম কি?
নিতি বলে উঠে,
“কোন মেয়ে?
“আকাশ ভাইয়া যে মেয়েকে পছন্দ করে সেই মেয়ে!
আমার কথায় সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল কিন্তু সেই শব্দ আমি পেলাম না। তার মানে কথাটা শুধু’ই আহিয়ান জানে। আর কেউ না। আমি ইতিকে দেখছিলাম, সে আকাশ ভাইয়া’র থেকে মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাল। মনে মনে শুধু বলছি বোন তুই কাদিস না নাহলে’ই সব শেষ।
হঠাৎ করেই আকাশ ভাইয়া’র বিষম লেগে গেল। আহিয়ান তার পিঠে থাপ্পর মেরে বলে “শান্ত হ! বাকি সবাই চেপে ধরে তাকে। আকাশ ভাইয়া বলে,
“নাম তো জানি না।
নাহান ভাইয়া বলে উঠে,
“ওহ আচ্ছা! প্রথম দেখাতেই তাহলে ভালোবাসা।
আকাশ ভাইয়া ইতির দিকে তাকিয়ে বলে,
“হুম!
ইতি আর সইতে না পারে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি।
আকাশ ভাইয়া বলে উঠে,
“কোথায় যাচ্ছ?
ইতি আকাশ ভাইয়া’র দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে আমি বলে উঠি,
“মানে তুই কোথায় যাচ্ছিস। বললাম না আমাদের সব প্ল্যান করতে হবে।
সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কিসের আবার প্ল্যান। অতঃপর আমি আকাশ ভাইয়ার পাশে বসে বলে উঠি,
“কিসের আবার প্ল্যান, আপনার প্রোপজালের প্ল্যান। আমি আর ইতি মিলে করেছি। যদিও ইতি শুধু মাথা নাড়িয়েছে। তোমরা সবাই শোন।
সবার মনোযোগ এখন আমার উপর। এমনকি আহিয়ানের ও। প্ল্যান টা এমন ছিল যে, যেই মেয়ে কে তিনি পছন্দ করে টিনা আর নিতি মিলে তাকে নিয়ে আসবে। আর আমরা সবাই মিলে অনেক ভালো মতো একটা এ্যারেঞ্জমেন্ট করবো প্রোপজালের জন্য।
ইতি কথায় কোন মন’ই ছিল না। ওর মনোযোগ পাবার জন্য জোরে জোরে বলে উঠি,
“ভাইয়া মেয়েটার বাসা আপনি চিনেন তো
ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হ্যাঁ আমি চিনি!
ইতি’র ভাবনায় মনে হয় বিস্ফোরণ হলো। সে বড় বড় চোখ করে আকাশ ভাইয়া’র দিকে তাকাল।
.
আহিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে তার পাশে বসে আমি হেসেই যাচ্ছি। আহিয়ান বলে উঠে,
“ভূতনি! আর কতোক্ষণ এভাবে হাসবে
“আপনি ইতির মুখটা দেখেছেন। ইশ দেখার মতো ছিল মেয়েটার মুখটা।
“তুমি মজা পাচ্ছো।
“সেই লেভেলের!
“তোমার না বেস্ট ফ্রেন্ড।
“কচুর বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার থেকে এতো বড় কথা লুকিয়ে রাখল যখন তখন মনে ছিল না।
“তুমি শোধ নিচ্ছ।
“হুম হুম!
আমার কথায় আহিয়ান ও হেসে উঠে!
.
সন্ধ্যার দিকে আকাশ ভাইয়া আসে আমাদের বাসায়। বিরহে যে ইতি একা তা না আকাশ ভাইয়াও আছে। আকাশ ভাইয়া যত’ই চেষ্টা করছে ইতি’র সাথে কন্টাক্ট করার জন্য কিন্তু ইতি তার ফোন’ই তুলছে না। ভাইয়া ভয়ে আমার বাসায় আসলো। অতঃপর আমি কল করলাম ইতি কে। দুবার রিং বাজার পর ইতি আমার কল রিসিভ করল। ওকে এখন কি বলবো না ভেবে বলে উঠি,
“ইতি শোন, আমাদের প্ল্যানটা দুদিন পর কার্যকরী হবে। আর তুই তো আমাদের সাথেই থাকবি। কিভাবে কি করবো সব তোর সাথে আলোচনা করতে হবে। কাল তাড়াতাড়ি আসিস।
ইতি হুম বলে ফোন কেটে দিল। আকাশ ভাইয়া’র যেন প্রাণ ফিরে পেল। অতঃপর এখানে আমি আরেকটা প্ল্যান বানালাম! আহিয়ান আর আকাশ ভাইয়া দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ ভাইয়া বলে উঠে,
“এতো প্ল্যান কোথাও রেখেছিলে তুমি নিহা!
“আমার এই মাথায়!
উনি বলে উঠেন,
“এই মাথায় বদবুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই নেই।
আমি চোখ ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালাম। তবে হ্যাঁ আকাশ ভাইয়ার এই প্রেম উদ্যোগ এর জন্য দুদিন আমাদের মাঝে ঝগড়া একটু কম ছিল। সারাদিন শুধু এটা নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবুও এর মাঝে উনি আমাকে জ্বালাতে ছাড়েন নি। এর মাঝে একবার গিয়ে দেখা করে এসেছিলাম দাদা আর দাদির সাথে। অনেকদিন দেখি না তাদের। বিকেল বেলা গিয়েছিলাম তারা রাতের খাবার খাইয়ে ছাড়ল আমাদের। ফিরত আসার সময় মিতু আর মুন্নি আপু কে দেখে এলাম। তারা দুজনেও বেশ ভালো আছে।
অতঃপর প্রোপজালের দিন..
একটা রেস্টুরেন্টে ছাদের প্রোপজের আয়োজন করেছি। যদিও রেস্টুরেন্ট টা ইতির পছন্দ করা। পুরো ছাদটাই আমরা সাজালাম, আমাদের সাথেও ইতিও। ইতি কে শুধু দিচ্ছি বেলুন ফুলাতে। সেও দিব্যি আনমনে বেলুন ফুলিয়ে যাচ্ছে। সবাই একসাথে কাজ করছে। সিফাত কেও দেখা গেল এখানে। একবার এসে আমাকে ভাবি বলে ডেকেছিল এরপর আর দেখা নেই। কিন্তু ওর কথা আমি এখনো ভুলে যায় নি কিন্তু সময় করে উঠতে পারছি না। ইতির ঝামেলা শেষ করেই এটা দেখতে হবে।
আমি বলুন গুলো বেঁধে বেঁধে কাজ করছি। ছাদে আয়োজন হবার কারনে বেলুন গুলোও বাতাসে উড়ে যাচ্ছে। আমি সব গুলো একসাথে করে বাঁধার চেষ্টা করছি। হঠাৎ এর মাঝেই আমার মাথায় বিস্ফোরণ ঘটল। আমি ফালিয়ে উঠলাম! বেলুন গুলো আবার চলে গেল। দু হাত কোমরে দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান দাঁত বের করে হাসছে। একটু আগে উনিই আমার মাথার উপর বেলুন ফুটিয়েছে। ভয়ে আরেকটু হলেই আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম!
“কি হলো এটা!
“কিছু না, একটু ঝগড়া করার ইচ্ছে হলো আর কি!
আমাদের কথা শুনে সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগল। আমি উনাকে বলে উঠি,
“হাসা বন্ধ করুন, বেলুন গুলো আবার সব উড়ে গেল। এবার তুলুন সব!
“আচ্ছা ভূতনি, তুমি উড়তে পারো না।
“কেন?
“সব ভূতনি রা তো উড়তে পারে তুমি পারো না।
“আপনি..
বলার আগে তিনি দ্রুত নেমে গিয়ে বলেন,
“আমি আকাশের কাছে যাচ্ছি, ওকে মানসিক ভাবে সাহস যোগাতে!
আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মজার ব্যাপার ছিল আকাশ আজ বেশ নার্ভাস আছে। শুধু ভাবছে কি না কি হবে। ভালোবাসলে এতো ভয় কেন পাবে। সে যখন ভালোই বাসে তাহলে বলতে সমস্যা কি। এতো ভয় নিয়ে কি ভালোবাসা হয় নাকি। আমি তাকে একটা বুদ্ধি দিয়ে এলাম। বললাম বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে। টেনশন চলে যাবে। এর এদিকে আমার বান্ধবী আছে বিরহে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল সবকিছু ঠিক করতে। আহিয়ান ও কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলেছে আকাশ ভাইয়া কে নিয়ে আসছে। আমি বললাম , ভাবী কে আমি আসছি।
আমার ভাবী বলায় ইতি অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল। সবাই চলে গেল ফ্রেস হতে। যদিও মেয়ে আনার কথা নিতি কে বলেছিলাম কিন্তু কোন মেয়ে কে আনবে তারা। তারা তো এখনো জানে না মেয়ে তাদের সামনে। তাই তাদের ফ্রেস হয়ে বলি এখানেই আবার চলে আসতে।
রেস্টুরেন্টে’র পাশেই একটা হোটেল ছিল। সেখানে রুম বুক করা ছিল। আকাশ ভাইয়া একটা ড্রেস কিনেছিল ইতির জন্য। এখন এটা পরেই তাকে নিয়ে যাবো।
রুমে ইতি কে নিয়ে এলাম। সে অনেকটা অবাক হলো। আমি বলি,
“তুই আপাতত ফ্রেস হয়ে এখানে রেস্ট নে। অনেকটা ক্লান্ত লাগছে তোকে। আমি আসছি।
“কোথায় যাচ্ছিস!
“মেয়েটাকে এখানে আসতে বলেছিলাম, দেখি এসেছে কি না। আচ্ছা এই প্যাকেট টা রেখে গেলাম দেখে রাখিস।
“কি আছে এতে?
“আকাশ ভাইয়া তার গফ এর জন্য একটা ড্রেস কিনেছে সেটাই! আচ্ছা আমি গেলাম!
বলেই বের হয়ে গেলাম। বাকি কাজ এভাবেই হয়ে যাবে। ইতি যে ড্রেস টা বার করবে আর রেগে গিয়ে সেটা পড়বে এটা আমি জানি। নিচে এসে দেখি আহিয়ান আর আকাশ ভাইয়া চলে এসেছে। আহিয়ান কে বলি আকাশ ভাইয়া কে নিয়ে চলে যেতে আমি ইতি কে নিয়ে আসছি। অতঃপর তারা চলে গেলে রুমে এসে দেখি ইতি ড্রেস টা পরে আয়নায় নিজেকে দেখছে। আমাকে দেখেই ও ঘাবড়ে গেল।
ইতি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
“আসলে ড্রেস টা অনেক সুন্দর ছিল, তাই পরে দেখছিলাম!
“বাহ বেশ মানিয়েছে তোকে।
“মানালে কি হবে? এটা তো আর আমার না!
বেচারার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিল। অনেকটা কষ্ট পেয়েছে সে। আমি ওর মন ভালো করার জন্য হেসে বলি,
“আচ্ছা পড়ে যখন ফেলেছিস বাদ দে।
“না আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।
“না লাগবে না। দেরি হয়ে গেছে, মেয়েও চলে এসেছে। অনেক সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে এসেছে তাও আকাশ ভাইয়ার পছন্দের। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা রাজি’ই হবেই।
“মেয়েটা মেয়েটা কি করছিস। নাম বল!
“সেটা আপাতত সাসপেন্স থাক, দেখলেই বুঝতে পারবি। চল এখন!
অতঃপর ইতি কে নিয়ে চলে এলাম। কথা ছিল আহিয়ান আকাশ ভাইয়া কে ভেতরে রেখে বাইরে চলে আসবে। বাকি সবাই ও বাইরে থাকবে। আমরা পরে ভেতরে যাবো। কিন্তু আহিয়ান কে বাইরে কোথাও দেখছি বাকি কাউকে না। তাদের আসতে এতোক্ষণ লাগে নাকি। আমি ইতি কে বলি,
“তুই একটু ভেতরে যা তো। আমি দেখে আসি উনি কোথায় গেল!
ইতি মুখ টা কাচুমাচু করে বলে,
“না গেলে হয় না।
“এতোদিন মেয়েটাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে ছিল। এখন যখন মেয়ে টা ভেতরে আছে তাহলে তুই দেখবি না।
ইতি অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল। আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে নিচে নেমে আসি। জানি সে ভেতরে যাবে, মেয়েটাকে দেখতে। তাই হলো! ইতি ভেতরে গেল। আমিও আবার উপরে চলে এলাম। আমার পিছনে বাকি সবাই এলো। তারা এতোক্ষণ ধরে বুঝতেই পারছিল না মেয়ে টা কে? কিন্তু এখন তারাও বুঝেছে কারন আহিয়ান ওদের সবাইকে বলেছে।
ভিতরে আসার দরজা কাঁচের তাই বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে,ইতি সামনে গিয়ে দেখল আকাশ ভাইয়া পেছন ফিরে তাকিয়ে আছে। ইতি আওয়াজ দেবার সাথে সাথে আকাশ ভাইয়া সামনে ফিরল। তাকে দেখেই ইতি একটা চমক গেল। বেশ লাগছিল তাকে দেখতে। আকাশ ভাইয়া ইতির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
“ইতি উইল ইউ মেরি মি!
একথা শোনার পর আমরা সবাই রীতিমতো হতবাক। কারন কথা ছিল প্রোপজের কিন্তু সেটা যে বিয়ের প্রোপজাল এটা বুঝতে পারি নি। আহিয়ান কে খোঁচা মেরে বলি,
“এটা কি হলো?
উনি ফিসফিসিয়ে বলেন,
“ইতি কে দেখতে নাকি ছেলে আসছে এই ভয়ে আকাশ বিয়ের প্রোপজাল দিয়েছে।
“আপনি যেমন ভাইয়াও তেমন , এখন কি হবে?
“জানি না দেখতে থাকো!
আমি ইতির রিয়েকশন দেখছি। বেচারি না হার্ট অ্যাটাক করে। সে হা হয়ে আকাশ ভাইয়া কেই দেখছে। এর মাঝেই আমরা সবাই এলাম। সবাই হাত তালি দিচ্ছি। কি জানি ইতি কি করে? আকাশ ভাইয়া ঘামছে, কপাল বেয়ে তার ঘাম পড়ছে। আকাশ ভাইয়ার হাতে একটা আন্টি। ইতি কি এখন হাত বাড়াবে, কিন্তু মনে হচ্ছে না সে শক থেকে বের হতে পরেছে। এর মাঝেই খুব জোরে শব্দ হলো। চারপাশ থেকে কিছু উড়ে গেল। আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে আহিয়ানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
যাক এতে একটা কাজ হয়েছে ইতি ঘোর থেকে বাস্তবে এসেছে। সে বিশ্বাস’ই করতে পারছে না, এই সে মুখে হাত দিয়ে হাসছে এই আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমি চোখের ইশারায় হাত বাড়াতে বলি। ইতি হাত বাড়ানোর সাথে আকাশ ভাইয়া তার হাতে রিং পড়িয়ে দিল। আকাশ ভাইয়া গলার টাই লুজ করতে করতে উঠে দাঁড়ালো। অনেকটা টেনশন নিয়ে ছিল সে। এর মাঝেই ইতি দৌড় জরিয়ে ধরে তাকে। আমার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আহিয়ান আমার হাত টেনে বাইরে নিয়ে এলো।
“উফ কি করছেন।
“ওদের একা থাকতে দাও।
“একা থাকতে দেবো মানে। এতো কিছু এ্যারেঞ্জম্যান্ট করলাম!
বলেই সামনে তাকাতে দেখি সবাই হাসতে হাসতে বের হয়ে আসছে। আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলেন।
টেবিলে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি আর ভাবছি। আহিয়ান ফোন টিপছে আর কফি খাচ্ছে। আমি আনমনে বলে উঠি,
“আচ্ছা ওখানে এখন কি হচ্ছে!
“তুমি এখনো এইসব ভাবছো।
“কেন ভাববো না।
“এতো অ্যাকসাইন্টমেন্ট তোমার।
“না থাকার কি কারন!
হঠাৎ এর মাঝেই টিনা বলে উঠে,
“তুমি তো বিবাহিত, তুমি জানো না এখন কি হচ্ছে। এটাও খোলাসা করে বলা লাগবে।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। আহিয়ান বলল,
“আইসক্রিম খাও!
নিতি হেসে চেয়ার টেনে বসে বলল,
“যাহ নিহা তো দেখছি শরম পেয়ে গেল।
আমি নিতির দিয়ে তাকিয়ে বলে উঠি,
“না তো, শরম কেন পাবো।
আহিয়ান আমার মাথা আইসক্রিম’র দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“তোমাকে আইসক্রিম খেতে বলেছি।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। এর মাঝেই সবাই হেসে উঠল। কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
#চলবে….