ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ৩৫+৩৬

0
1059

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৫

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। আহিয়ান প্রথমবার নিতি”র নাম শুনে অবাক হলেও মেয়েটা কে দেখে এখন সে শান্ত। চুপচাপ ফুচকা খাচ্ছে। মেয়েটা আর কেউ না টিনা। সেও যেমন আমাকে দেখে চুপ আমিও চুপ। টিনা আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে উনি ফুচকা খাচ্ছে। টিনা বলে উঠে,

“আহি!

আহিয়ান বলে উঠে,
“ফুচকা খাবি!

উনার কথায় আমি আর টিনা দু’জনেই থমকে গেলাম। টিনা আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি ভাবলাম তোর সাথে নিতি এসেছে!

আহিয়ানের ফুচকা খাওয়া শেষ। সে ফুচকার প্লেট টা রেখে বলে,
“এখন তো দেখলি নিতি নেই। তা তুই এখানে!

টিনা চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো চমকটা এখনো নিতে পারে নি সে। পিছনে একটা ছেলেকে দেখছি।সে তাকিয়ে আছে টিনা’র দিকে। মনে হচ্ছে অপেক্ষা করছে হয়তো টিনার জন্য, তার সাথেই এসেছে।
আহিয়ান ও দেখল ছেলেটাকে। অতঃপর আমাকে বলল,

“দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি শেষ করবে।

“আর খাবো না।

“তাহলে রেখে দাও!

উনি আমার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে রেখে দিলেন। টিনা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান টিনা কে বলল,

“কিছু বলবি!

টিনা মাথা নাড়িয়ে না বলল।

উনি টিনার সামনেই আমার হাত ধরে নিয়ে চলে গেল। টিনা মনে হচ্ছে একের পর এক শক খাচ্ছে, তার সাথে আমিও। কিছুতেই এই শক থেকে বের হতে পারছি না। আমি পিছনে ফিরে একবার টিনা কে দেখতে চাইলাম। উনি আমাকে বলেন,

“পিছনে ফিরো না, চুপচাপ সামনে হাটো।
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ হেটে যাচ্ছি।

সন্ধ্যা নেমে গেছে, আমি উনার বাইকের পেছনে বসে আছি। উনি বাইক চালাচ্ছে। আমার মন কেমন জানি লাগছে। এরপর কি হবে? নিতি কি আমায় আস্ত রাখবে।

“আচ্ছা এরপর কি হবে?

“কি আর হবে? নিতি তোমার ক্লাস নিবে।

“আপনার কি মজা লাগছে।

“না তা কেন লাগবে?

“তাহলে এভাবে কেন বলছেন।

“যা সত্যি তাই তো বললাম

“আপনি জানেন আমি কতোটা ভয় পাচ্ছি।

“ভয় কেন পাচ্ছ, ও কি বাঘ না ভাল্লুক!

“না তা না।

“তাহলে, তোমার মতোই মানুষ সে। সে তোমাকে বলতে পারলে তুমি কেন পারবে না।

“কারন আমি ওর মতো না।

“ওকে কিছু বলতে হলে ওর মতো হতে হবে না বুঝলে।

আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আমি সত্যি’ই পারবো না ওর সাথে। কেন জানি ভয় করে ওকে, সাহস হয় না কিছু বলার।
.
বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। মাথায় টেনশন নিয়ে ঘরে গিয়ে বসলাম। এর মাঝেই মুন্নি আপু এলো। বলে উঠে,

“কোথায় গেছিস?

“এখানে!

“ইতি কি ছেড়ে দিল তোকে এখানে।

“হুম।

“বাসায় আনলি না কেন।

“আসতে চাইলো না।

“ওহ আচ্ছা ‌

“হুম।

অতঃপর আপু উঠে চলে গেল। কেন এতো কিছু জিজ্ঞেস করল, কি জানতে চাইল আমি কিছুই জানি না। আমার মাথায় শুধু ঘুরছে নিতি’র কথা। কি হবে কাল!
.
পরদিন ভার্সিটি যাবো না বলেই ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু আজ না গেলে তো পরেও যাবো তখন তো ঠিক’ই আমায় পাবে। কিন্তু আজ আহিয়ানের সাথে যাবো না। কারন আমি জানি আজ নিতি ভার্সিটিতে সবার আগে এসে বসে থাকবে। আর তখন আমাদের একসাথে দেখলে আরো আমার উপর রাগ ঝাড়বে।

আমি আগে আগেই বের হয়ে গেলাম। ভার্সিটিতে এসে পৌঁছালাম। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। নিতি অনেক আগেই এসেছে। শুধু সে না তার সাথে টিনা, আনিকা, নাহান, ‌আনাফ আর সিফাত ও। আকাশ ভাইয়া কে দেখছি না কোথাও। এখনো আসে নি নাকি।

আমি ভয়ে ভয়ে ঢুকছি ভার্সিটিতে। তখনই আমার সামনে এসে নিতি দাঁড়াল। আমি একটা ঢোক গিলে তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিল।

পুরো ক্যান্টিনে একটা হাসির পাত্র হয়ে গেছি আমি। সবাই দেখে হাসছে আমাকে। নিতি একটু একটু আগেই আমার মাথার উপর রান্না করা নুডুলস ফেলেছে। আমি ব্যাগ শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে আছি। সবাই হাসছে। মজা করছে আমাকে নিয়ে। নিতি একটা কোকাকোলা’র ক্যান হাতে নিয়ে আমার চারপাশে ঘুরছে আর বলছে,

“গতকাল খুব সুন্দর করে সেজে, শাড়ি পরে নাকি ঘুরতে গিয়েছিলে আহি’র সাথে। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এতো সাহস পাও কিভাবে তুমি!

আমি চোখ বন্ধ করে সব শুনছি। নিতি আমার মাথার উপর কোকাকোলা ফেলছে আর বলছে,

“তোমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এতে। বুঝি না কি এমন আছে তোমার মাঝে যা দিয়ে তুমি আমার আহি কে এভাবে বশ করছো।

আশেপাশের সবাই দেখছে আর হাসছে। অনেকে অনেক কথা বলছে। এক পর্যায়ে টিনা এসে নিতি’র কানে কি জানি বললো। নিতি রেগে আমার দিকে তাকাল। আমার থিতুনি চেপে বলল,

“তুই নাকি রোজ আহির বাইকে করে ভার্সিটি আসিস। তলে তলে এতোদূর চলে গেছিস। দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারিস না। আর এখন কথা বলছিস না কেন?

জোরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলো। আমি চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।‌ হঠাৎ করেই সবাই চুপচাপ হয়ে গেল। টিনা নিতি কে ডাক দিল। নিতি আমার থিতুনি ছেড়ে দিয়ে সামনে পেছনে তাকাল। আহিয়ান, ইতি আর আকাশ। তিনজন’ই একসাথে এসেছে। আহিয়ানের মুখ শান্ত,‌গম্ভীর। ইতি আর আকাশ দুজনেই অবাক। আহিয়ান দাঁড়িয়ে দেখছে আমাকে। জানি সে কিছু বলবে না কারন সে আগে থেকেই বলে দিয়েছে সে কিছু বলবে না।

সবাই চুপ হয়ে গেল, পুরো জায়গা নিরব, নিস্তব্ধ! আমি দ্রুত হেঁটে বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। বাইরে বার হতেই সবার নজর আমার দিকে। চোখ বড় বড় দেখছে সবাই আমাকে। হাসাহাসি ও করছে। কাঁদতে কাঁদতে ভার্সিটির বাইরে চলে গেলাম আমি। হাঁটছি আমি, এর মাঝেই একটা গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে আহিয়ান বের হলো।

সে আমার হাত ধরে গাড়িতে বসাল। আমি চুপচাপ গাড়িতে তার পাশে বসে আছি। চোখ থেকে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে। উনি ড্রাইভ করতে করতে বলেন,

“কাঁদছো কেন?

আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“নুডুলস গুলো কি খুব ঝাল ছিল নাকি!

রেগে বলে উঠি,
“মজা করছেন আপনি!

“আহ মজা কেন করবো, তুমি কাঁদছো তাই জিজ্ঞেস করছি।

“জানেন না কেন কাঁদছি।

“তোমার কাঁদতে কারন লাগে বুঝি, তুমি তো সবসময় কাঁদো। তোমার নাম কাঁদুনি ভূতনি হওয়া দরকার ছিল।

“আমাকে এখানে নিয়ে এসে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি।

“কি বোঝাব।

“কি বোঝাবেন মানে। সবার সামনে কেন কিছু বলেন নি আপনি।

“তোমাদের মেয়েদের ঝগড়ার মাঝে আমি কি বলবো।

“কেন এভাবে তো দেখাতেন আসেন আপনি আমার স্বামী,তো সেখানে কেন পালন করলেন না স্বামীর দায়িত্ব।

“তুমি বলো সেখানে আমার দায়িত্ব কি ছিল।

“কি ছিল মানে, অনেক দায়িত্ব ছিল। সবাইকে বলা উচিত ছিল আমি আপনার স্ত্রী! কেন তারা আমাকে এভাবে হেনস্তা করছে, কোন সাহসে।

উনি গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“কথাটা তো তুমিও বলতে পারতে তাই না!

উনার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললাম। উনি আবারো গাড়ি চালাতে শুরু করেছেন। আমি ধীরে ধীরে বলি,

“আমি বললেই কি তারা বিশ্বাস করতো নাকি।

“সেটা পরের ব্যাপার। বিশ্বাস করার দায়িত্ব আমার। তোমাকে আমি জোর করে শুধু বিয়েই করেছি কখনো জোর খাটাই নি। আর না খাটাবো। তুমি আমার পরিচয় চাও না তাই আমি দিই নি। তুমি চাইলে নিয়ে নিবে আমার দিতে হবে না। অধিকার আছে তোমার।

“ঘোড়ার ডিমের অধিকার!

“এই তোমার সমস্যা বুঝলে। বাইরে কিছু বলতে পারো না কিন্তু সব ঝাল মিটাও আমার উপর এসে।

আমি চোখ ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকাই। উনি হেসে বলেন,
“এতো সাহস নিতির সামনে দেখালেই পারতে।

“চুপ করুন তো আপনি।

“আচ্ছা বুঝেছি তোমার মাথা গরম, হয়তো ক্ষিদে পেয়েছে তা কি খাবে নুডুলস।

“চুপ না করলে আপনার মাথা ফাটিয়ে দেবো আমি।

“আচ্ছা খুনখারাবি না করি। নাও পানি খাও মাথা ঠান্ডা করো।
বলেই একটা পানির বোতল দিল। আমি সেটা নিয়ে কয়েকবার উনাকেই মারলাম। উনি মজা নিচ্ছে আমার সাথে। কি আজব! আমি কাঁদছি আর উনি মজা নিচ্ছে। আজ ছাড়বো না উনাকে।

“ভূতনি গাড়ি ড্রাইভ করছি, এমন করো না এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।

“ভালোই হবে।

উনি আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে বলেন,
“ভূতনির ভালো করতে নেই। যাও খাওয়া লাগবে না তোমার পানি।

আমিও মুখ ঘুরিয়ে গাড়ির বাইরে দেখতে লাগলাম। উনি কিছু না কিছু বলছেন আমি কিছুই বলছি না। একসময় আমাকে চিমটি মেরে বলেন,

“কিছু বলছো না কেন?

“আপনার সাথে নাকি আমি ঝগড়া করি, তাহলে কথা বলছেন কেন সেধে সেধে!

“সবসময় তো করো না। কিন্তু একটা কথা কি জানো আজ যা হলো তার জন্য তুমি দায়ী।

“আপনি কি একটা সেকেন্ড ও আমার দোষ না খুঁজে শান্তি পান না

“এখানে দোষ আসলেই তোমার। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা না করে চলে এলে কেন?

“ভালো করেছি এসেছি।

“না মোটেও ভালো করো নি। শুরুটাই আজ খারাপ হলো। বাইকের কি হলো কে জানে। বের হতে হতে দেরি হয়ে গেল। তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে পেলাম না। তারপর ভার্সিটিতে এসে তোমাকে খুঁজতে লাগলাম। উফ অনেক ঘুরেছি আমি। ঠিক’ই বলে মেয়েরাই পারে শুধু তাদের পিছনে ছেলেদের ঘুরাতে। আর তুমি তো ভূতনি। আমাকে চরকার মতো ঘুরিয়ে ছাড়লে।

“তো এখানে আমার দোষ কি? আপনার সাথে যখন আসতাম তখন হয়তো কিছু বলতো না তাই বলে কি পরে পেত না। ক্ষোভ জমিয়ে রেখে পরে শোধ তুলতো।

“তুমি ওদের এতো ভয় কেন পাও বুঝছি না।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। চুপ হয়ে গেলাম। হ্যাঁ ভয় আমি পাই। যাকে ভয় পাই এমনেতেই পাই। এখন সাথে যে কেউই থাকুক না কেন আমার ভয় তখনো কমে না। ভয়টা যে আঁকড়ে ধরেছে আমায়।
.
বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন উনি। আমি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ঘরে চলে এলাম। সোজা ঢুকলাম গোসলখানায়। গোসল করে বের হয়ে এসে বসে রইলাম রান্না ঘরের মেঝেতে। দেওয়ালে ঠেসে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলাম। ঘুমিয়ে গেলাম কখন গেলাম টের পেলাম না।

দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে ঘুম ভাঙল আমার। কে আছে দরজার ওপাশে এমন ভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে মনে হচ্ছে আজ দরজা ভেঙেই ফেলব। আমি উঠে চোখ ঢলতে ঢলতে দরজার কাছে গেলাম। খুলে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ ঢলতে ঢলতে বলে,

“আপনি।

“এতো গভীর ঘুম তোমার, কখন থেকে দরজা নক করছি।

“নক করছিলেন না দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলছিলেন।

ভ্রু কুঁচকে বলে,

“ঘরে ঢুকতে দেবে না নাকি!

“আমি দরজা ছেড়ে দাঁড়ালাম। উনি ঘরের ভেতর এলেন। দরজা বন্ধ করে উনাকে বলি,

“কেন এসেছেন!

“ভাবলাম তুমি যদি মরে টরে যাও তাই দেখতে এলাম।

“মরতে যাবো কেন?

উনি বিছানায় গিয়ে বসে বলেন,
“বাহ যা হলো আজ তোমার সাথ, অন্য কেউ হলে তো সুইসাইড করতো কিন্তু তুমি তো দেখছি আরামছে ঘুমাচ্ছিল।

“আপনি আমাকে খোঁচা মারছেন কেন

“তোমাকে কিছু বললেই তোমার কেন মনে হয় বলো তো আমি তোমার খোঁচা মারছি।

আমি মুখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজাইরা কথা ছাড়া কিছু আসে না উনার মুখে। আমি বলে উঠি,

“চা খাবেন

“না তুমি এখানে আসো।

“কেন?

“দরকার আছে।

আমি সামনে যেতেই উনি হাত ধরে আমাকে বসালেন। অতঃপর প্যাকেট থেকে একটা বক্স বের করে আমাকে দিলেন।

“কি এটা?

“ফোন!

“ফোন নিয়ে আমি কি করবো।

“কথা বলবে!

“আমাকে কল করবে কে?

“আমি করবো।

“কেন করবেন?

“প্রেম করার জন্য!

“কিহহ!

“হ্যাঁ! ( বাক্সটা আমার মাথায় মেরে ) স্টুপিড ভূতনি!

“আপনি অসভ্য!

“তুমি ভূতনি!

“গালাগালি কেন করছেন! আর মারছেন কেন?

“তুমি বোকা বোকা কথা কেন বলছো। ফোন রেখে দিবা, আমি বলছি তাই। কথা বলবে তোমার চাচা’র সাথে, মা সাথে বাবার সাথে।

“আপনার ফোন আমি কেন নেবো

“সকালে না বললে আমি স্বামীর দায়িত্ব কেন পালন করি না এই যে করলাম। এটা শুরু!

“কচু! আসছে নাটক দেখাতে।

“এই বকবক করা রেখে চা বানাতে যাও তো। তোমার বক বক এ আমার মাথা ধরে গেছে।

“হুহ। তো আসছেন কেন?

“তুমি যাবে!

আমি উঠে চলে যেতে নিলাম উনি আমার হাতে ফোনটা দিয়ে বলেন,

“দেখো পছন্দ হয় কি না।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ফোনটা হাতে দিয়ে রান্না ঘরে এলাম। এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠল। ব্যাপার টা কি হলো? ফোন বাজল কিভাবে? আর কাল’ই বা করল কে? আমি তাকিয়ে আছি ফোনের স্ক্রিনের দিকে। এদিকে ফোন বেজে যাচ্ছে!

#চলবে….

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৬

ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে চুপ হয়ে থাকি। ওপাশ থেকেও চুপ! নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি আমি। বলে উঠি,

“হ্যালো!

ওপাশ থেকে বলে উঠে,
“ভূতনি!

আমি ঘরে এসে উঁকি দিয়ে দেখি উনি কানে ফোন নিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে। কোমরে হাত রেখে বলে,

“এটা কি হলো!

“কি আর হবে, দেখলাম তুমি আমার গলা চিনতে পারো কি না।

“আমার সেই কুখ্যাত ডাকনাম শুনে যে কেউ চিনতে।

“কুখ্যাত কেন বলছো বলো বিখ্যাত। নাম্বার টা সেভ করে রাখো পারলে মুখস্থ করো। যখন দরকার পরবে তখন’ই ফোন করবে। আমি কোন সুপার হিরো না যে তুমি বিপদে পড়লেই আমি বুঝে চলে আসবো। বুঝলে!

“কিন্তু আজ পর্যন্ত তো এমনটাই হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

“তবে সময়সাপেক্ষ! যদি আমি বুঝতে পারতাম তাহলে আমি আরো আগেই আসতাম।

“নিতি কে কিছু বলেছেন।

“চা আনতে বলেছিলাম তোমাকে?

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে উঠে গেলাম। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এসে উনার সামনে বসলাম। দেখি উনি নিজের জ্যাকেট খুলছেন। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,

“জ্যাকেট খুলছেন কেন?

“গরম লাগছে তাই!

“গরমের মধ্যে চা খাবেন।

“চা খাবো মাথাব্যাথা কমাতে।
বলেই চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলেন। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলি,

“কিছু বলেছিলেন নিতি কে?

উনি শীতল গলায় বলেন,
“ওকে কিছু বলার চেয়ে কথা না বলে থাকা ভালো।

“মানে!

“মানে না এমন তুমি কারো উপর বেশি রেগে থাকলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দাও। সে এমনেতেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে।

“আপনাদেরকে বন্ধুত্ব তো অনেক দিনের

“তাই বলে সবকিছুর ক্ষমা হয় না

“আপনার মনে হয় সে আমাকে সরি বলবে।

“সরি তো বলবে, তার সাথে কাল থেকে তুমি আমার সাথেই ভার্সিটিতে যাবে।

“যেন আমার আরো ভাল ক্লাস নিতে পারে।

“সেই চান্স নেই, আমি থাকবো তোমার সাথে।

“তাহলেই হলো।

“হ্যাঁ হবে তো অনেককিছু! এতো কিছু করছে তোমার থেকে আমাকে আলাদা করার জন্য। কিন্তু এতো কিছুর পরও যদি দেখে তুমি আমার সাথেই আছো তখন নিজ থেকেই হার মেনে যাবে।

“আপনার মনে হয় নিতি সেই দলের লোক।

“না তবে মানুষ বদলাতে সময় লাগে না।

উনার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! অতঃপর উনি আমার ফোন থেকেই চাচা কে কল করলেন। চাচা, মা বাবা সবার সাথে কথা বললাম। মা কে বলে দিলাম এটা আমার ফোনের নাম্বার। যখন মন চায় সে যেন তখন’ই কল করে।
.
দুজনেই একসাথে বের হলাম। আমাকে বাইকে করে রিনুর বাসার সামনে নামিয়ে দিলেন। আমি উনাকে বিদায় দিয়ে তিনতলায় উঠলাম। রিনুরা তিনতলায় থাকে। দরজা নক করতেই রিনুর মা দরজা খুলে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন। তার তাকানোতে আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম। আমি রুমে গিয়ে বসলাম। তিনি আমার পাশে এসে বসলেন। আমি বলি,

“রিনু নেই।

“এই একটু বাইরে গেছে এসে পরবে, আচ্ছা নিহা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।

“জ্বি করুন

তিনি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তার চাহনিতে আমার শরীর শিউরে উঠলো। কে জানে কি জিজ্ঞেস করবে। উনি বলে উঠেন,

“তুমি সাথে যে ছেলেটা রোজ আসে সে কে?

তার কথায় আমি বেশ ভালো ভাবেই চমকে যাই। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলি,

“কোন ছেলে?

“মিথ্যে বলো না। আমি জানি তুমি একা থাকো। তোমার সেই দাদা দাদী তোমার একমাত্র আশ্রয় কিন্তু ইদানিং দেখছি তুমি প্রতিদিন একটা ছেলের বাইকে করে আসো। সে কে?
বলেই সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তৎক্ষণাৎ বলি,

“আন্টি সে আমার বন্ধু!

উনার চোখ থেকে সন্দেহ এবার চলে গেল। শীতল গলায় বলেন,

“ছেলে বন্ধুরা সবসময় ভালো হয় না। এই শহরে তুমি একা থাকো তোমারটা তোমার নিজেকেই দেখতে হবে। মেয়ে মানুষ হলো ফুলের মত। এর সৌন্দর্য সবাই নিতে চায়। কিন্তু সবাই সেটা রাখতে চায় না। একবার তার সৌরভ নিয়েই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তোমাকে তাই সাবধান করছি সতর্ক থেকো।

তার কথায় আমি ভালো মেয়ের মতো নাড়লাম। তিনি হয়তো আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা আর বলা হলো না।‌ দরজা আবারো কেউ নক করল। রিনু এসেছে। তাকে দোকানে পাঠানো হয়েছিল কিছু আনার জন্য হয়তো। পলিথিন ব্যাগ টা আম্মু কে দিয়ে আমার কাছে চলে আসে সে।

রিনু কে পড়িয়ে বের হলাম তোহার বাসায় যাওয়ার জন্য বের হই। রাস্তায় হাঁটছি আর রিনুর আম্মুর কথা গুলো ভাবছি। তার মানে আমাকে আর আহিয়ান কে দেখেছিলেন একসাথে। আর সেটা একবার না অনেকবার তাইতো এই কথা বলেছেন। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কারন তিনি আর যাই বলুক না কেন এসব আমার ভালোর জন্য ভেবেই বলেছেন। তিনিও আমার ভালো চান তাহলে !
.
সন্ধ্যায় উনি আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ইয়ান নাকি তাকে বলে দিয়েছে জলদি জলদি বাসায় ফিরতে। দু চার বার ফোন ও দিয়ে ফেলেছে বাইকে চালানোর সময়। তাই আর উনি আজ থাকলেন না। আমি ঘরে না গিয়ে গেলাম দাদা দাদী’র কাছে। কিছুক্ষণ তাদের সাথে গল্প করার জন্য’ই গেলাম তাদের কাছে। অতঃপর গল্প করে বের হতে অনেক দেরি হয়ে গেল। ঘরে এসে দেখি ঘরের দরজা খোলা। এর মানে মিতু আর মুন্নি আপু চলে এসেছে।

ঘরে এসে ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসে পড়লাম। মিতু আপু রান্না ঘর থেকে বলল,

“নিহা চলে এসেছিস।

“হুম আপু।

“এতো দেরি হলো যে!

“আরো আগেই এসেছি, দাদির কাছে ছিলাম।

“ওহ আচ্ছা!

বাথরুম থেকে মুন্নি আপু বের হলো। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আমাকে বলল,
“বাসায় আজ কেউ এসেছিল!

“না তো।

“তোর সাথে দেখা করতে কেউ আসে নি।

“না তো।

“কোন মেয়ে!

আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
“না।

আপু চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
“কোন ছেলে!

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। মিতু আপূ হাতে খুন্তি নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলল,
“কি সব বলছিস তুই মুন্নি!

মুন্নি আপু কোন ভাবান্তর হলো না। সে তোয়ালে রেগে বিছনায় গা এলিয়ে দিয়ে শীতল গলায় বলল,

“কি জিজ্ঞেস করলাম নিহা, কোন ছেলে এসেছিল।

“ননা তো!

“তুই সিউর।

আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আসার মধ্যে শুধু আহিয়ান এসেছিল। ওর কথা বললে সবাই এখন খারাপ ভাববে। মুন্নি আপু আবারো বলে উঠে,

“কিছু বলছিস না কেন?

মিতু আপু বলে,
“ও যখন একবার না বলেছে তারপরও এতোবার জিজ্ঞেস করছিস।

“করছি তার কারন আছে।

“কি কারন!

মুন্নি আপুর কথায় আমার বুক কেঁপে উঠলো। পুরো শরীর কাঁপতে লাগল। মুন্নি আপু বিছানার ওপাশ থেকে একটা জ্যাকেট বের করে বলল,

“এটা কার নিহা!

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। এই জ্যাকট তো আহিয়ানের। তার মানে উনি জ্যাকেট নিতে ভুলে গেছেন আর এটা মুন্নি আপুর হাতে পড়েছে। ইয়া আল্লাহ এটাই বাকি ছিল। শেষমেষ মুন্নি আপু।

“কিরে কিছু বল!

“আপু!

মিতু আপু বলে,
“হয়তো এটা নিহা’র।

“কিন্তু এটা ছেলেদের।

“এখন কি ছেলে আর মেয়ে আছে নাকি। যার যেটা পছন্দ সে সেটাই পরে।

“কিন্তু নিহা তোকে তো কখনো এটা পড়তে দেখে নি।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলি,
“আপু এটা আমার না।

মিতু আপু কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকায়। মুন্নি আপু হেসে বলে,
“জানতাম। এখন বল এটা কোন ছেলের!

“কোন ছেলের না আপু। এটা ইতি’র। গতকাল আমরা দু’জন বের হয়েছিলাম না। ইতি এই জ্যাকেট পড়ে এসেছিল। পরে গরম লাগছিল বলে খুলে আমার হাতে দেয় আর আমি নিয়ে আসি।

“কই আমি তো কাল তোর হাতে এটা দেখলাম না।

“হাতেই তো ছিল। হয়তো তুমি খেয়াল করো নি।

“কিন্তু..

বলার আগেই মিতু আপু বলে,
“তুই কখনো ভালো ভাবে কিছু্ই দেখিস না। এটা ওর’ই ছিল হয়তো তুই খেয়াল করিস নি। এখন বাদ দে তো এসব।

বলেই মিতু আপু রান্না ঘরে চলে গেল। মুন্নি আপু খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে জ্যাকেট টা আমার কাছে দিল। বাহ কি সুন্দর মিথ্যে বললাম আমি। যদিও মনে হচ্ছে না মুন্নি আপু সেটা বিশ্বাস করেছে। তার মনে নিশ্চিত এই ব্যাপারে কিছু চলছে।
.
পরপর তিনদিন ভার্সিটিতে গেছি, আহিয়ান তিনদিন’ই চিপকে আমার সাথে লেগেছিল। আমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে ক্লাস শেষ হওয়া অবদি ক্লাসের বাইরে থাকতো। নিতি’র সাথে এই তিনদিন কোন কথা বলে নি সে। শুধু তিনি না আকাশ ভাইয়া ও চুপ। এর মাঝে ঘটেছে আরেকটা কান্ড! ইতি আমার আর আহিয়ানের বিয়ের ব্যাপারটা জেনে গেছে। এই নিয়ে বেশ হইচই করেছে সে। তবে আমি তাকে জানিয়ে দিয়েছি একথা যেন সবাই না জানে। কারন আহিয়ানের মা বাবা এখনো বিয়ের কথা জানে না। তারা জানার আগে অন্যকেউ এই ব্যাপারে জানলে সেটা আহিয়ানের বাবার কানে যেতে সময় লাগবে না। নিজের ছেলের বিয়ের কথা অন্য জনের মুখ থেকে শুনলে অবশ্যই তার সেটা ভালো লাগবে না!

বলা বাহুল্য আহিয়ান টিনা থেকে শুরু করে নাহান এদের কারো সাথেই কোন কথা বলছে না। এখানে নাহান আর আনাফ ভাইয়া কিছু করে নি সেটা ঠিক তবে এতো কিছু দেখেও তারা কিছু বলেনি তাই তাদের উপর আহিয়ানের ক্ষোভ জমে আছে।
.
আজ ক্যাটিনে বসে আমরা চারজন গল্প করছি। কিছুক্ষণ পর পরই খিলখিলিয়ে হাসছি সবাই শুধু আহিয়ান বাদে। উনার হাসি অমাবস্যার চাঁদের মতো। সবসময় দেখা যায় না।

এর মাঝেই তারা সবাই এসে উপস্থিত হলো ক্যান্টিনে। নিতি আমার দিকে একবার তাকাল। আমি ঠিক আহিয়ানের পাশে বসে আছি। এটা দেখে যে তার বেশ জ্বলছে সেট আমি বুঝতে পারছি। এদের সবার সাথে আজ সিফাতকেও দেখা যাচ্ছে। যদিও গত ৩ দিন ওর মুখ দর্শন হয় নি।

তারা সবাই আহিয়ানের কাছে সরি বলল। আহিয়ান বলল,

“আমার সাথে কিছু করেছিস যে সরি বলেছিস।

নিতি উঠে আমাকে সরি বলল। আহিয়ান উঠে দাঁড়াল। আমার হাত ধরে বাইরে বের হলো। পেছন পেছন বাকি সবাই বের হলো। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সামনে আসতেই নিতি এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“সরি তো বলছি তারপরও এতো ইগনোর কেন করছিস!

আহিয়ান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“সবার সামনে যেভাবে অপমান করেছিস তেমনি সবার সামনে ওর কাছে ক্ষমা চাইবি। পুরো ভার্সিটি দেখবে তোকে ক্ষমা চাইতে।

“আহি পাগল হয়েছিস।

“তোর কাছে যা মনে হয়। ৩০ সেকেন্ড দিলাম এর মধ্যে ভেবে নে কি করবি। ক্ষমা চাইবি নাকি ওকে নিয়ে চলে যাবো আমি।

নিতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক ৩০ সেকেন্ড পর’ই আহিয়ান আমার হাত ধরে চলে যেতে নিলে নিতি বলল সে সরি বলবে।

অতঃপর পুরো ভার্সিটির সামনে তারা সবাই আমার কাছে ক্ষমা চাইলো। অন্যান্য স্টুডেন দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখতে লাগল। আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই আহিয়ান আমার হাতটা খপ করে ধরল। এর মানে হলো চুপ থাকো। আমি চুপ হয়ে গেলাম।

ক্ষমা চাওয়ার কিছুক্ষণ পর নিতি বলে উঠে,

“কি হলো নিহা ক্ষমা করবে না নাকি।

ইতি এর মাঝে বলে উঠে,
“হেনস্তা করার সময় মনে থাকে না এখন এসেছে সরি বলতে।

তার কথায় আকাশ ভাইয়া তার দিকে তাকাল। ইতি একটা মুখ ভেংচি দিল। আকাশ ভাইয়া মুচকি হাসি দিল। নিতি বলে উঠে,

“আমার পক্ষে যেভাবে সরি বলা দরকার সেভাবেই বলেছি। এখন যদি বলো পা ধরে ক্ষমা চাইতে তাহলে আমি তাই করছি!

ইতি পাশ থেকে বলে উঠে,
“তাই করো।

ইতির কথায় সবাই চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায়। ইতি কাউকে পাত্তা দেয় না। নিতি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বলে উঠি,

“আরে না না আপু! কি করছো? আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাদের সবাইকে!

“বাঁচালে আমায়!

আনিকা আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,
“তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড! যেহেতু তুমি আহি আর আকাশের ভালো বন্ধু তাহলে আমাদের ও বন্ধু!

আমি আহিয়ানের দিকে তাকালাম। উনি বললেন,

“তোমার ইচ্ছা!

আমি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলাম। দুজনেই হাত মিলালাম। টিনা, নিতি তারাও হাত মিলাল! তবে নিতির হাসি আমাকে যেন অন্যকিছু বলছিল!
.
কয়েকদিন পর..
মনে হচ্ছে আজকের সারা দিনটাই আমার ভালো যাবে। দিনের শুরু ভালো হলে নাকি সবকিছুই ভালো হয়। আর আমার সকাল শুরু হলো ভোরের আকাশ দেখে। চমৎকার ছিল এইটা!

বাইকে করে চলে এলেন উনি। আমি সাথে সাথেই ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম। উনার বাইকে চড়ে বসলাম। দুজনেই একসাথে এলাম ভার্সিটিতে!
আমাকে নামিয়ে দিয়ে উনি আবারো বাইক ব্যাক করলেন। আমি বলে উঠি,

“চলে যাচ্ছেন যে!

“আকাশের গাড়ি মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে গেছে। ওর কাছে যাচ্ছি।

“ওহ আচ্ছা!

অতঃপর উনি চলে গেলেন। আমি একা একা এসে ক্লাসরুমে বসলাম। অপেক্ষা করছি ইতি’র! প্রায় অনেকক্ষণ”ই বসে রইলাম এভাবে। ইতি এখনো আসে নি।
হঠাৎ করেই ক্লাসে সিফাত এলো। সে ইশারায় আমাকে ডাকছিল। যদিও কয়েকদিন আগেই তার সাথে সবকিছু ঠিক হলো আমার। খুব ভালো ব্যবহার করেছে এ ক’দিন সে। আহিয়ান আমাকে বলেছে সিফাত কে সে তার ছোট ভাইয়ের মতো দেখে!

আমি সিফাতের কাছে যেতেই সিফাত বলল,

“আহি ভাইয়া তোমায় ডাকছে।

“চলে এসেছেন উনি।

“হুম!

আমি ক্লাসরুম থেকে বের হলাম। আমার পেছন পেছন সিফাতও এলো‌। আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যাবো সিফাত বলে উঠে,

“আরে আরে নিচে কোথাও যাচ্ছো!

“উনি!

“ভাইয়া তো উপরে গেছেন।

“উপরে!

“হুম।

সিফাতের কথা বিশ্বাস করে আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। উপরের ক্লাসরুম গুলো বরাবর খালিই থাকে। সিফাত আমাকে কোনার রুমে চলে যেতে বলল। বলেই আবারো সিঁড়ি’র দিকে গেল। আমি ভেবেই নিলাম সিফাত সত্যি বলছে। তা না হলে আমাকে রেখে সে চলে যেত না। আমি হাঁটতে হাঁটতে কোনার রুমে চলে এলাম। রুমটা অন্ধকার নয়। বেশ আলো আছে এতে। আমি আহিয়ান কে ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতরে চলে এলাম। ক্লাসরুমটা খুব বড়। পুরো ক্লাসরুম খুঁজেও তাকে না পেয়ে পিছনে ফিরতেই সিফাত কে দেখতে পেলাম।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here