#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৩
সকালে ভেবেছিলাম হয়তো উনি আমাকে নিতেই আসবেন না। কিন্ত তা না করে উনি এলেন। একটু আগেই এলেন। আমি রান্নাঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনাকে। অতঃপর নিচে নেমে এলাম।
আমাকে দেখে একটা স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে হেলমেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। রাগ কি তাহলে কমে গেল, যদিও জানতাম রাগ থাকবে না।
আমি হেলমেট পরে উনার পিছনে চড়ে বসলাম। উনি বলে উঠেন,
“চা খাবে ভূতনি!
“দোকানে গিয়ে চা খাবেন না কি।
“হুম, আজ অনেক শীত করছে। দেখেছ এখনো কিন্তু কুয়াশা আছে।
“হুম তা আছে।
উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে গেলেন আমার সেই পার্কের কাছে। পার্কে এখন তেমন কেউই নেই। থাকবে কি করে বাচ্চারা তো এখন স্কুলে। এমন একটা খালি পার্কে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম আমি। উনি বাইক সেখানে থামিয়ে ওদিকে গেলেন দেখলাম। হয়তো সেখান থেকে চা আনবেন।
বাগানের দিকে তাকিয়ে আছি। জবা ফুলের সিজন নয় বলে জবা ফুল দেখতে পাচ্ছি না। বাগানটা কেমন জানি খালি খালি লাগতে শুরু করেছে। চারদিকে আবছা আবছা কুয়াশা। আমি পা তুলে বেঞ্চে বসে আছি। শীতে আমার পা দুটো ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আহিয়ান এলো হাতে দু কাপ চা নিয়ে। চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়ছে।
উনি এসে আমার হাতে এক কাপ চা দিলেন। আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কাপে চুমুক দিলেন। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। চা টা খেয়ে কেন জানি বেশ ভালো লাগল। অসাধারণ চা! একটা লোক কি এতো সুন্দর চা বানাতে পারে আমি জানতাম না।
আহিয়ান বলে উঠে,
“চায়ের টেস্ট টা ভালো, নাহ!
“দারুন খেতে।
“হুম।
আমি চায়ের কাপে আবার চুমুক দিয়ে বলি,
“গতকাল রাতে আকাশ ভাইয়ার সাথে ছিলেন।
“হুম
“আপনার মা বাবা কবে আসবে?
“কাল হয়তো এসে পড়বে।
“ওহ আচ্ছা!
উনি মাথা নাড়লেন। আমি বলে উঠি,
“একটা কথা বলবো
“কি কথা?
“আপনি কি আমার উপর রেগে ছিলেন গতকাল কে?
“আমার মনে হয় তুমি রেগে ছিলে!
আমি মাথা নিচু করে চায়ের কাপে আবারো চুমুক দিলাম। উনি আর কিছু বললেন না। চা শেষ করার পর দুজনেই ভার্সিটিতে চলে এলাম। আজও নিতি’র আগেই আমরা চলে এসেছি। কি মনে আজ লাইব্রেরিতে আসলাম। হঠাৎ করেই আসা তাই ঘুরতে লাগলাম। যদি কোন বই পছন্দ তো ভালো।
আমি বই খুঁজতে লাগলাম, আশপাশ মানুষ নিঃশব্দে বসে বই পড়ছে। আমি বই খুঁজতে খুঁজতে সামনে তাকাতেই সিফাত নামের ছেলেটা কে দেখি। হঠাৎ করেই তাকে দেখার পর খানিকটা ভয় পেয়ে যাই।
ছেলেটা অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ছেলেটা ফিসফিসিয়ে বলল,
“কি গো সুন্দরী! কি করছিলে এখানে?
আমি কথা বলতে গিয়েও বললাম না। এখানে কথা বলা নিষিদ্ধ আর এই ছেলেটার সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলার তো কোন মানেই হয় না।
আমি কিছু না বলে চলে এলাম। বাইরে আসার পর হুট করেই ছেলেটা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আরে সুন্দরী! কথা না বলে যে চলে যাচ্ছ?
“আপনার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই আমার, তাই!
“একবার বলেই তো দেখো, দেখবে ইচ্ছের চেয়ে বেশি নেশা লাগবে
আমি মুচকি হেসে বলি,
“নেশা জিনিসটা সবার প্রতি আসে না আর না এটা তৈরি করা যায়। এটা যখন আসবে নিজ থেকেই আসবে।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। তখন ছেলেটা পেছন থেকে বলে উঠে,
“তোমার সেই নেশা টা কি তাহলে আহিয়ান!
আমি থমকে যায়। ছেলেটা হেঁটে আমার সামনে এসে বলে,
“কি হলো, অবাক হলে নাকি।
“না হলাম না।
“জানতে চাইবে না আমি এই কথা কেন বললাম।
“আপনি নিশ্চিত দেখেছেন আহিয়ান তার বাইকে করে এখানে আমাকে নিয়ে এসেছে তাই।
“তুমি তো দেখছি..
বলার আগেই আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি,
“আর কথা বলতে চাইছি না আপনার সাথে!
বলেই দ্রুত চলে এলাম। তার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন ইচ্ছা নেই আমার।
একটু হাঁটার পর’ই হঠাৎ করেই দেখা হলো ইতি’র সাথে। বেচারি কে আজ বেশ দুঃখি দুঃখি লাগছে দেখতে। মুখটা কেমন জানি মলিন, চুপচাপ লাগছে বেশ। ওর মতো মেয়েকে এমন চুপচাপ থাকলে ভালো লাগে না আমার কাছে।
আমি অনেক জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই কিছু বলছে না। অতঃপর অনেক খোঁচাখোঁচির পর বলল,
“কাল আমাকে দেখতে ছেলে আসছে
“আলহামদুলিল্লাহ! ভালো কথা তো।
ইতি আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি । রাগে সে লাল হয়ে গেছে। রাগী গলায় বলে উঠে,
“তুই দেখছিস না আমার মন খারাপ।
“এই কারনে তোর মন খারাপ।
“তা নয়তো কি?
“কিন্তু খারাপ কেন? কি হয়েছে, তুই কি এই বিয়ে করতে চাস না।
“না চাই না।
“তাহলে বলে দে আংকেল আর আন্টি কে।
“বলতে পারলে’ই তো হতো।
বলেই মুখটা অন্ধকার করে ফেলল। আমি ওর ঘাড়ে মাথা রেখে বলি,
“তোর এখন বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না, ভালো কথা। ছেলে দেখতে এলেই বিয়ে হয়ে যায় না। তুই বেশি ভাবছিস।
“তুই বলছিস!
“হ্যাঁ বলছি। তুই বলে দিবি ছেলে কে তোর পছন্দ না দেখবি তোকে কেউ এই নিয়ে জোর ও করবে না। এই জেনারেশনে মা বাবারা এইসব নিয়ে বেশ এলার্ট থাকে। ছেলে মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারা বিয়ে দিতে চায় না। তোর কি মনে হয় তারা এমন করবে!
“না!
“তো। ভালো কথা আমি শুনেছি মেয়ে দেখতে এলে ছেলেরা নাকি তাকে টাকা দেয়। তুই যে সুন্দরী ভালো টাকা পাবি। তখন ট্রিট দিতে ভুলিস না।
ইতি আমাকে একটা চিমটি মেরে হেসে বলে,
“তোর মাথায় এতো শয়তানি বুদ্ধি আসে কোথা থেকে বল তো।
“এভাবে এভাবেই আসে।
“তুই অনেক হারামি, জানিস এটা।
“না। তবে শুধু তুই জানলেই হবে অন্যকেউ জানার কোন দরকার নেই।
অতঃপর দুজনেই হেসে উঠলাম।
.
উনার কথামতো আজ রাস্তার সেই মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষন। কিন্তু উনার দেখা নেই। তবে আজ ভার্সিটি ছুটির পর উনাকে দেখতে পাই নি। একবার ভাবলাম চলে যাবো আবার ভাবলাম না উনি আসবেন।
খানিকক্ষণ পর উনি ঠিক চলে এলেন। আমাকে দেখে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলল,
“সরি একটু লেট হয়ে গেছে
“ঠিক আছে।
উনি আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন,
“খাও!
“কি এগুলো!
“ঝাল মুড়ি! এটাই আনতে গিয়েছিলাম। জানো সেখানে মেয়েদের কি বড় লাইন ছিল।
দাঁত বের করে হেসে বলি,
“আপনি কি মেয়েদের সাথে সেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাকি।
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে অতঃপর একটু ভাব নিয়ে বলে,
“তুমি শুধু ভূতনি না বোকা ভূতনি। তোমার মনে হয় সেখানে আমি দাঁড়াব
“আকাশ ভাইয়া দাঁড়িয়েছে!
উনি জোরে হেসে বলেন,
“ওর অবস্থা টা দেখতে একবার।
“বেচারা কে সবসময় খাটান আপনি।
“এখানে খাটানোর কি হলো?
“এখানে হয় নি কে বললো, এর আগেও এমন করেছেন। গ্রামে তাকে একা রেখে চলে এসেছেন।
“তোমাকে আমি নিয়ে আসতাম বলে ওকে রেখেছিলাম বুঝলে।
“হুম বুঝেছি!
বলেই উনার বাইকে বসলাম। উনি ধীরে বাইক চালাচ্ছেন আমি পিছনে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছি। অতঃপর খেয়ে বলি,
“আমি ইচ্ছে করে এতো ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ি বানিয়ে এনেছেন।
“ঝাল লেগেছে তোমার।
“না লাগেনি। আরেকটু হলেও লাগতো না।
“পরেরবার বলবো আরো একটু বেশি ঝাল দিতে।
“কেন ঝাল খাইয়ে মারবেন আমাকে নাকি।
“তাহলে তো তুমি সত্যি সত্যি ভূতনি হয়ে আসবে। আগে চড়তে আমার বাইকের পিছনে তখন চড়বে ঘাড়ে।
“আপনার ঘাড় মটকে দেবো।
“জানতাম এটাই বলবে। আমার মনে হয় তোমাকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া উচিত।
“আমি স্বাভাবিক আছি। যদি অস্বাভাবিক কেউ থাকে সেটা আপনি। আপনাকে পাগলা গারদে ঢুকিয়ে দেওয়া উচিত।
“হুহ তখন দেখবো বাইকে করে কে তোমাকে দিয়ে আসে।
“মেয়েদের মতো ঝগড়ার মাঝে খোঁচা দেওয়া কি আপনার স্বভাব
“সত্যি কথা বললে তোমরা মেয়েরা এমন ছেত করে উঠে কেন। আমি কি মিথ্যে বলেছি নাকি।
আমি মুখ ভেংচি কেটে চুপ করে যাই। অতঃপর রিনুর বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবার চলে গেলেন উনি।
.
রাতে ঠিক সময়ে নিতে এলেন আমাকে। আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেন। আমি বলে উঠি,
“চা খাবেন না আজ!
“না ঘুম পাচ্ছে, বাসায় গিয়ে এখন ঘুমাবো।
“কাল রাতে আপনি ঘুমান নি।
“তুমি কিভাবে জানো?
“এমনেই বললাম, দুই বন্ধু মিলে নিশ্চিত সারারাত জেগেছেন
“হ্যাঁ আড্ডা দিয়েছিলাম ছাদে বসে। শেষ রাতে দুজনে মিলেই ছাদে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে আন্টি এসে দুজন কে উঠালো।
“সাবধানে যাবেন, আপনার চোখে ঘুম।
উনি মাথা নাড়লেন। আমি হেসে বলে উঠি,
“আপনি বরং এক কাপ চা খেয়ে যান। চোখের ঘুম কেটে যাবে।
“উহু!
আমি কিছু না বলে হাঁটা ধরবো তখনই উপর থেকে দাদু ডাকলেন আহি কে!
“আরে নাতি যে!
আহিয়ান হেসে উপরে তাকালেন। বলেন,
“কেমন আছেন দাদু!
“কেমন আর থাকবো দাদু! বুড়ো বয়স হলে আর যা হয়। তুমি তো ভুলেই গেলে তোমার এই দাদু কে
“না দাদু ভুলি নি। সময় হচ্ছিল না।
“আজ হবে, আসবে! তোমার দাদি কে তোমার জন্য চা চড়াতে বলি।
“আসছি দাদু!
বলেই তিনি বাইক থেকে নামলেন। হেলমেট খুলে আমার দিকে তাকালেন। আমি দুই হাত বাহুতে গুঁজে তাকিয়ে আছি তার দিকে। তিনি হেসে বলেন,
“দেখলে আমার ভাগ্য আজ তোমার সাথে বাঁধা ছাড়তে চাইছে না
আমি উনার কথায় হেসে বাড়িতে ঢুকলাম!
.
দাদু আর আহিয়ান বসার ঘরে সোফায় বসে সিগারেট খাচ্ছে আর গল্প করছে। দাদি আর আমি রান্না ঘরে। আমি বড়া ভাজছি। ডালের বড়া! দাদি কাই বানিয়ে আমাকে দিলেন ভাজতে। ডালের সাথে আরো অনেক কিছুই আছে। দাদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে চা বানাচ্ছেন। দাদির হাতের চাও কিন্তু দারুন। সকালে আহিয়ানের আনা চায়ের মতোই। দুজনকে ১০ এর মধ্যে দিলে ১০ ই পাবে।
বসার ঘর থেকে খুকখুক কাশির শব্দ আসছে। দাদা কাশছেন কিন্তু তবুও হাত থেকে সিগারেট ছাড়ছেন না। তিনি জানেন সিগারেট খাবার কারনেই আজ তার এই অবস্থা তবুও এই অভ্যাস ছাড়তে রাজি না তিনি। দাদা’র কাশির শব্দ পেয়ে দাদি বলল,
“বুড়োর ঢং দেখছিস! কিভাবে কাশছে তাও সিগারেট খাওয়া বন্ধ করছে না।
“কেন গো দাদি তুমি বলতে পারো না এসব বন্ধ করতে।
“মরণ! বললে কি বলে জানিস!
“কি বলে?
“বুড়োর কথা শুনলে তুই হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাবি।
“তুমি বলো না!
“শোন বুড়ো বলে, সিগারেট নাকি আমার মতো। সে যেমন তার নেশা আমিও নাকি তার নেশা। যদি সিগারেট ছাড়তে পারে তাহলে নাকি আমাকেও ছাড়তে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
আমি মিটিমিটি হেসে বলি,
“মন্দ কি ভালোই তো বলেছে। দেখেছ কি ভালোবাসা।
“ভালোবাসা না ভীমরতি! বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে, নাহলে এই ধরনের কথা কে বলে। বলে কি না এই বুড়ো বয়সে আমাকে ছেড়ে দিবে হুহ!
আমি আর না হেসে পারলাম না। জোরে জোরে হেসে দিলাম। আমি দাদি টা বুড়ো দাদার ভালোবাসা বুঝলো না।
দাদি আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
“থাম রে ছেমড়ি এতো হাসিস না। দাঁত মুখ থেকে বের হয়ে আসবে।
“দাদি আমার দাঁত তোমার মতো না। আমি এখনো বুড়ি হই নি।
“বুড়ো হয়ে গেছি বলে আজ এই কথা বললি। যা বুড়ো কে চা দিয়ে আয়!
আমি চা নিয়ে গেলাম। দেখি তারা দুজনেও হাসছে। নিশ্চিত দাদা দাদির কোন মজার ঘটনা আহিয়ান কে বলেছে। আমি দাদা কে চা দিয়ে বলি,
“নাও তোমার বুড়ো বউ চা পাঠিয়েছে, বড়া আসছে একটু পর।
দাদা হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলেন। আহিয়ান কে চা দিলাম। সিগারেটের অ্যাশট্রে তিনি সিগারেট নিভিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিলেন। ভালোই দাদা নাতি দুজনেই সিগারেট খাচ্ছে একসাথে মিলেমিশে আর কি লাগে।
উনি চায়ের কাপ মুখে দিয়ে বলল,
“তোমার বুড়ি কিন্তু ভালো চা বানাতে পারে দাদু জানো!
দাদা হেসে বলেন,
“এই চায়ের জন্য’ই তো তার প্রেমে পড়েছি।
আমি উত্তেজিত হয়ে বলি,
“সত্যি দাদু!
উনি আমাকে ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“এখানে কি করছো তুমি? বড়দের মাঝে তুমি ছোট হয়ে কি কথা শুনছ? যাও দাদির কাজে সাহায্য করো।
আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। দাদু একদফা হাসলেন। আসছে আমার বড় হতো। কোনদিক থেকে আমার বড় তিনি। মানি না তাকে বড়। তার জন্য আমার মেজাজ টাই বিগড়ে গেল। একরাশ রাগ নিয়ে ঢুকলাম রান্না ঘরে। দাদি বড়া ভেজে উঠিয়ে আমাকে দিলেন। আমি সাফ জানিয়ে দিলাম আমি যাবো না তুমি যাও। দাদি দু চারটে কথা শুনিয়ে বড়া নিয়ে চলে গেল।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৪
আজ শুক্রবার! ভার্সিটি ছুটি , কোন কাজ নেই বলেই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। ঘুম থেকে উঠে মিতু আপু কে দেখতে পেলাম না। মুন্নি আপু মরার মতো ঘুমাচ্ছ। তার এই ঘুম দুপুরের আগে ভাঙবেনা আমি জানি। সে অনেক রাগ জেগে বসে বসে ফোন টিপে বিধায় এতো তাড়াতাড়ি তার ঘুম ভাঙবে না। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে এসে রান্না ঘরে গেলাম। দেখি আপু রান্না করছে। আমাকে দেখে বলে উঠল,
“কিরে এতোক্ষণে ঘুম ভাঙ্গল তোর।
“জানি না কি করে এতোক্ষণ ঘুমোলাম।
“তা ভালোই করেছিস, উঠেই বা কি করতি।
আমি মাথা নেড়ে আপুর দিকে তাকালাম। দেখি মুচকি মুচকি হাসছে সে। আমি বলে উঠি,
“কি ব্যাপার আপু , তোমাকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে।
আমার কথায় আপু ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। হুট করেই মনে পড়ল আপুর আজ তার প্রেমিকার সাথে ঘুরতে যাবার কথা। আমি হেসে বলে উঠি,
“ওহ্ আজ তো তোমার ডেট! তা কখন যাচ্ছো?
“দুপুরের পর যাবো।
“সেজে যাবে না।
“হুম সেজেই যাবো। তাকে বলেছি একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়তে আর আমি সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়বো।
“তা ভালো তো!
“কিন্তু?
“কিন্তুর কি হলো?
“আমি যে শাড়ি পড়তে পারি না নিহা, কি করে পরবো বল তো।
“আচ্ছা চিন্তা করো না আমি পারি পড়াতে তোমাকে পড়িয়ে দেবো।
“এই সত্যি! বাহ কত গুণ রে তোর।
“তা তোমার বোন কে কি বলবে?
“ওকে সব বলা আছে চিন্তা করিস না।
“তাহলে তো হলোই!
.
আপু শাড়ি পড়বে বলে তার বড় ব্যাগ টা থেকে প্রায় অনেক গুলোই শাড়ি বের করল। আমি অবাক হয়ে বলি,
“এতো শাড়ি কেন বের করেছ?
“আরে সবুজ রঙের শাড়ি টা খুঁজে পাচ্ছি না।
“আগে থেকে গুছিয়ে রাখবে তো!
মুন্নি আপু একবার চোখ ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আবারো ফোনের দিকে মুখ গুজল। তার কানে হেডফোন কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না তিনি আদৌও কিছু শুনেছেন।
আপুর শাড়ি পেয়ে গেল, আমার ও নজর গেল একটা শাড়ির প্রতি। কালো একটা একটা শাড়ি। শাড়িটা সুতির শাড়ি দেখতে বেশ ভালো। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই চাইলে এটা পড়তে পারিস।
“আমার কাছে ব্লাউজ এসব কিছু নেই আপু।
“আমার কাছে আছে। তোর হবে মনে হচ্ছে আর একদিন’ই তো একটু পড়বি।
আমি এবারো মাথা নাড়লাম। অনেক ঝামেলা করে আপু কে শাড়ি পড়ালাম। ঝামেলাটা তার কারনেই হচ্ছিল। শুধু নড়াচড়া একটু স্থির ছিল না।
আয়নার সামনে বসে আপু একাই সাজতে লাগল। চুল গুলো খোঁপা করে তাতে নকল ফুল লাগাল। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক আরো কিছু দিল। শেষ করল কপালে একটা সবুজ রঙের ছোট টিপ দিয়ে। বেশ লাগছে তাকে দেখতে।
আপু আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল। আমি একবার ভাবলাম শাড়ি পড়বো না। বিছানায় চোখ পড়তেই দেখি মুন্নি আপু ঘুমিয়ে গেছে। অতঃপর একবার ভাবলাম পড়েই দেখি। আপু সব কিছুই রেখে গিয়েছিল।
কালো রঙের শাড়িটা পড়েই ফেললাম। খোঁপা করা চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। আমার চুল লম্বা বটে তবে ঘন নয়। তাও যা আছে বেশ আছে। শাড়ি পরে একা একাই আয়ানায় দাঁড়িয়ে ছিলাম খানিকক্ষণ।
আয়নার দিকে তাকতেই হঠাৎ উনার কথা মনে পড়ল। আজ সারাদিনে একবার ও দেখা হয় নি উনার সাথে। আর না উনি এলেন আমার সাথে দেখা করতে। কি ভাবছি এসব। উনি আসবেন কেন আর এটা কি কোন আহামরি ব্যাপার নাকি।
শাড়ি পড়েছি, দাদি কে গিয়ে একবার দেখিয়ে আসি। অতঃপর ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম। হঠাৎ করেই বাইকের আওয়াজ পেলাম। মনে হলো উনি, আবার মনে হলো না এটা উনি না। উনি এখন কেন আসবেন, আর যদি আসতেন ও তাহলে আমাকে তো এই বিষয়ে কিছু বলেননি।
আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলাম। আবারো কেউ বাইকের হর্ন বাজাচ্ছে। একবার দেখলেই বা কি হবে, দেখি গিয়ে কে এসেছে। আমি সিঁড়ি কোনে দাঁড়িয়ে উপর থেকেই দেখলাম। সত্যি সত্যি উনি এসেছেন!
উনাকে দেখে নিজের মুখে আচমকা হাসি ফুটল। ছুটে নিচে নামলাম। গেটের কাছে এসে দেখি উনি নিজের হেলমেট খুলছেন। তাকে দেখেই আমি চক্ষু চড়কগাছ! শুধু আমার না উনারও! দুজনেই একসাথে বলে উঠি,
“আপনি!
“ভূতনি!
“আপনি এই রঙের পাঞ্জাবি কেন পড়েছেন।
“তুমি এই রঙের শাড়ি কেন পড়েছ! ওয়েট তুমি শাড়িই কেন পড়েছ!
“শখ হয়েছে তাই পড়েছি, কেন?
“এই রঙের কেন পড়লে।
“আগে বলুন আপনি কালো রঙের পাঞ্জাবি কেন পড়লেন। রঙ চুরি কেন করলেন?
“রঙ চুরি করতে কেন যাবো। আম্মু বলেছে আজ এই পাঞ্জাবি পড়তে তাই পড়েছি!
“আপনার মা বাবা চলে এসেছে!
“হুম সকালে এসেছে, তা এখন তুমি বলো? কেন পড়লে এই রঙের শাড়ি!
“বিয়ে লেগেছে তাই পড়েছি
“কার বিয়ে?
“আমার বিয়ে!
“দুবার বিয়ে তো ছেলেরা করে, তুমি করতে যাবো কেন?
“রঙ লেগেছে তাই।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি সোজা ভাবে কেন উওর দিতে পারো না বলো তো।
“আপনি সোজা ভাবে কেন জিজ্ঞেস করছেন না বলুন। চরকিড় মতো শুধু ঘুরপাক খাচ্ছেন কেন!
“আচ্ছা বাদ দাও। বাইরে যাবা।
“এখন!
“কেন বিয়ে ছেড়ে যেতে পারবা না নাকি!
“কেন যাবো আর কোথায় যাবে!
“মাটি দিতে যাবে আমাকে!
বলেই উনি বাইকে গিয়ে বসলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে এলাম। আচ্ছা এই লোকটা কি ভালো কথা বলতে পারে না। ভালো কথা কেন বলবে। ভালো জিনিস কি আর খারাপ মানুষের পেটে হজম হয়। বদ মানুষের এক শেষ।
ঘরে এসে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাবো, হঠাৎ মনে পড়ল মুন্নি আপু তো ঘরে। তাকে না বলে খালি ঘরে একা ফেলে চলে যাবো। এর মধ্যে তিনি আবার ঘুমাচ্ছেন। আমি তাকে ডেকে ঘুম থেকে উঠালাম। সে চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে হতচকিত বলল,
“শাড়ি পেলি কোথাও?
“আপু দিয়েছে!
“আমার ঘুম কেন ভাঙালি!
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি দরজা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।
“বাইরে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি খাবড়ে না গিয়ে বলি,
“ইতি’র সাথে যাচ্ছি। আমাকে নিতে এসেছে সে!
“আচ্ছা!
অতঃপর আমি বের হয়ে এলাম!
.
হেলমেট পড়ে বান্দা রেডি হয়ে বসে আছে। আমি সামনে আগাতেই উনি হেলমেট টা আমার দিকে দিলেন। আমি হেলমেট পড়ে উনার পিছনে চড়ে বসলাম!
উনি বাইক চালাচ্ছেন, কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায় সেটাই তো জানা হলো না!
“আচ্ছা আমরা কোথাও যাচ্ছি!
“গন্তব্য ছাড়া পথ! আবার এটাও বলতে পারো সেখানে দু চোখ যায় সেখানেই যাবো।
“ঝগড়া করে এসেছেন নাকি!
“না তো, তোমার কেন এটা মনে হলো।
“ঝগড়া করলেই মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে বলে, যেখানে দু চোখ যায় সেখানে যাবো।
“তুমি কি আমাকে তোমার মতো মনে করো।
“মানে!
“কিছু না। এভাবেই বের হলাম। মন চাইলো ঘুরতে তাই।
“আর সঙ্গ হিসেবে আমাকেই পেলেন।
“সারাদিন ঝগড়া করি নি তাই ঝগড়া করতে মন চাইলো।
আমি একটু রেগেই বলি,
“তার মানে আমি আপনার ঝগড়ার পার্টনার!
উনি হেসে বলেন,
“ঠিক বলেছ! লাইফ পার্টনার হও আর না হও ঝগড়ার পার্টনার ঠিক হবে। এমন যদি হয় তোমার আর আমার ১০ বছর পর দেখা তখনও আমরা প্রথম আলাপ ঝগড়া দিয়েই শুরু করবো।
আমি উনার ঘাড় শক্ত করে ধরলাম। ইচ্ছে তো করছিল একটা চিমটি মেরে দিই। বলে কি না আমি সারাক্ষন ঝগড়া করি। উনি বলে উঠেন,
“ভূতনি আমার ঘাড় মটকানোর চেষ্টা করছো!
“হ্যাঁ করছি, পারলে সত্যি’ই মটকাতাম।
উনি হেসে দিলেন। আমি বলে উঠি,
“এতো হাসবেন না তো। এক হাতে তালি বাজে না বুঝলেন।
“বাজে যদি তার সাথে শক্ত জাতীয় কিছু জিনিস থাকে। যেমন ধরো আমার গাল!
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে বলি,
“আপনি কি সেদিনের চড়ের কথা বলছেন।
“আমি আজীবন মনে রাখবো বিশ্বাস করো।
উনার কথায় আমার লজ্জা মাথা কাটা যাচ্ছিল আবার হাসিও পাচ্ছিল। হঠাৎ করেই তখন বাইক থেমে গেল।আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি সবার গাড়ি থেমে গেছে। উনি বলে উঠেন,
“জ্যামে আটকা পড়েছি বুঝলে!
আমি উনার দিকে তাকালাম। বাইকের আয়ানায় উনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
“তোমায় দেখছি।
“দেখছেন মানে।
“কিছু না।
বলেই তিনি চোখ সরিয়ে নিলেন। আমিও চোখ সরিয়ে নিলাম। অনেকক্ষণ ধরেই জ্যামে আটকা দুজন। আশপাশ অনেক গাড়ি। আজ অফ ডে! সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে তাই এই অবস্থা! আমি পিছনে ফিরে একবার তাকালাম। একটা রিক্সায় একটা মেয়ে আর ছেলে বসে আছে। ছেলেটার মুখটাই দেখা যাচ্ছে, মেয়েটার মুখ দেখতে পারছি না। সে ছেলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে আছে। রিক্সার হুড তোলা। ছেলেটার গায়ে সবুজ রঙের একটা পাঞ্জাবি। সবুঝ রঙের পাঞ্জাবি দেখেই মনে পড়ল মিতু আপুর কথা। আমি সাথে সাথে মেয়েটার শাড়ি দেখলাম। হ্যাঁ এটা মিতু আপুই আর এটা তার’ই প্রেমিক। বাহ কি দৃশ্য! জ্যামে আটকা পড়ে হুড তোলা রিক্সায় প্রেমিকার ঘাড়ে মাথা গুঁজে বসে আছে প্রেমিকা, যদি অনেকক্ষণ এই জ্যামে আটকা পড়ে থাকে তবেও তার খারাপ লাগবে না বরং ভালো লাগবে। প্রেমিকের ঘাড়ে মাথা গুজার শান্তি সবাই পায় না। হয়তো ঠিক করেছে আজ দুজনেই সারাদিন রিক্সায় করে ঘুরবে। চন্দ্র বিলাস, সমুদ্র বিলাসের মতো রিক্সা বিলাস করবে আজ তারা। এই দৃশ্য সচরাচর আমার চোখে পড়ে না। তবে বলতে হবে ছেলেটা দেখতে বেশ সুর্দশন। মিতু আপুর সাথে বেশ মানাবে! ইশ! মিতু আপু কে জ্বালাতন করতে পারবো না নাহলে খুব বলতাম এই কথা। খুব পচাতাম তাকে। জিজ্ঞেস করতাম প্রেমিক এর ঘাড়ে মাথা গুঁজে কি ভাবছিল সে?
নিজেকে কেমন জানি অন্যরকম অন্যরকম লাগলো। এমন কথা তো আমি কখনো বলি না। প্রথম অনুভূতি হলো এমন কিছুর। কারন টা কি?
হঠাৎ উনার কথায় ঘোর ভাঙল।
“এভাবে অন্যের উপর নজর দিও না। বেচারাদের সম্পর্ক ভেঙে যাবে।
“আপনার কি মনে হয় বলুন তো আমার নজর খারাপ!
“খারাপের চেয়েও খারাপ!
“হুহ!
সামনে তাকিয়ে বসে রইলাম। আর তাকাবো না পিছনে। দেখলাম সামনের কিছু মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে গুলো কে দেখতে কমবয়সী! আমি বলে উঠি,
“ওরা আমাদের কি এমন ভাবে দেখছে!
“হুম দেখছে।
“কেন দেখছে?
“কারন তুমি আর আমি এক রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়েছি।
“এতে কি? এতো উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার মানে কি?
“সেটা তুমি বুঝবে না। ভূতনিদের মাথায় এসব ঢুকে না।
আর কিছুই বললাম না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই শুধু অপমান করে। জ্যামের অবশান ঘটল। বাইক আবারো ছুটল। সেই রিক্সাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বাইক থামালেন উনি। বাইক এখানেই রেখে হাঁটতে লাগলেন। উনার পিছু পিছু আমিও হাঁটছি। আকাশে ভালো রোদ্দুর, রাস্তার দু’পাশে জমজমাট ভীড়। আশপাশ অনেক দোকানে ছোটখাটো ভিড়। আমি আর উনি হেটেই যাচ্ছি। ভীড় বাড়ছে! এক পর্যায়ে উনি আমার হাত ধরে আমাকে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন,
“হাটো!
আমি হাঁটছি সামনে আর উনি পিছনে। অনেক কাপল এসেছে এখানে। ছেলে আর মেয়ের গায়ে এক রঙের পাঞ্জাবি আর শাড়ি। একদম আমাদের মতো। উনি পেছন থেকে আমার চুল গুলো ধরে বলেন,
“এগুলো বাঁধ, আমাকে জ্বালাতন করছে। তুমি যেমন তোমার চুল ও তেমন। সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাতষ করার ধান্দায় থাকো।
“ভূতনির চুল তো তাই চুল ও আমার কথা শুনে!
বলেই আমি হেসে দাঁড়িয়ে চুল গুলো খোঁপা করলাম। ভিড় কাটিয়ে দুজনে একটা শান্ত জায়গায় এলাম। যদিও এটা শান্ত জায়গা না। সামনেই একটা চায়ের দোকান। উনি আমাকে নিয়ে বসলেন সেখানে। দু কাপ চা দিতে বললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চুল গুলো খুলে ফেল।
“কেন?
“জানি না কেমন জানি লাগছে তোমায় দেখতে!
“তাহলে তো ভালো খুলবো না।
বলেই হেসে দিলাম। এর মাঝেই আশপাশ থেকে একটু হৈচৈ এর শব্দ পেলাম। একজন ছেলে হাঁটু গেড়ে একগাদা ফুলের তোরা নিয়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করছে। তার আশেপাশে তার বন্ধুরা তাকে চেয়ার আপ করছে। মেয়েটা হেসে ফুল গুলো হাতে নিতেই হৈচৈ জোরে হলো। এর মাঝেই আমার চুল গুলো আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। উনি চুল গুলো খুলে ফেলেছেন। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছেন।
“আপনি দেখলেন?
“কি?
আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম। উনি সেখানে একবার চোখ বুলিয়ে বলেন,
“এসব দেখে আমি কি করবো!
“কিছুই না!
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চা চলে এলো। একটা বৃদ্ধ লোক চা দিয়ে গেলেন। তার মুখে তখন মায়া ভরা একটা হাসি ছিল। চা গুলো দেওয়া হয়েছে মাটির কাপে। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে থম মেরে গেলাম। এনার চা দাদি’র থেকেও অনেক ভালো। আমি ভাবতাম দাদি’ই হয়তো বিশ্বের সেরা চা বানান কিন্তু আমার সেই ভুল তিনি ভাঙালেন। কে জানে? তার মতো এমন আর ক’জন আমার ভুল ভাঙাবে। আচ্ছা দাদু কি তার চা খেয়ে প্রেমে পড়তেন।
চা খেয়ে দুজনেই কিছুক্ষণ হাঁটলাম। উনি আমাকে এইবার নিয়ে গেলেন ফুচকার দোকানে। নিজেই বললে দু প্লেট ফুচকা দিতে। তার মানে উনিও ফুচকা খেতে ভালোবাসেন।
আমি সবে একটা ফুচকা মুখে দিলাম। এর মাঝেই হঠাৎ করে কেউ আমার ঘাড়ে হাত রেখে পিছনে ঘুরিয়ে বলল,
“আরে নিতি!
আমি চমকে তার দিকে তাকালাম। উনি এতোক্ষণ আমার সাথে কথা বলছিলেন। তিনিও অবাক হয়ে পিছনে ঘুরলেন। দুজনেই চুপ কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক আমার সামনে থাকা মানুষটি! হয়তো আমাকে এখানে আশা করি নি সে!
#চলবে….