#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৮
“ইতি তুই!
“ঘুমিয়েছিলি নাকি!
“হ্যাঁ একটু ঘুমিয়েছিলাম। আয় ভিতরে আয়।
“পড়াতে যাবি না!
“হ্যাঁ ৩ টায় বের হবো। তা বস! চা খাবি
“না, ইচ্ছে করছে না
“না করলেও খেতে হবে। আমার চোখের ঘুম ভাঙাতে হবে আর সেটার জন্য চা প্রয়োজন।
“তাহলে বানা।
“দু’মিনিট, ফ্রেশ হয়ে আসছি!
অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে, চুল খোঁপা করতে করতে রান্না ঘরে ঢুকলাম। ইতিও এলো আমার পিছু পিছু। চুলোয় পানি বসিয়ে ইতি’র দিকে তাকালাম। বেশ চুপচাপ! আমি ইতির দিকে তাকিয়ে বলি,
“আমি জানি তুই কি বলবি!
“ব্যাপারটা কি?
“তুই এটাই জানতে এসেছিস না আহিয়ান কেন আমাকে সবার সামনে টেনে নিয়ে আসলো।
“তোরা যাবার পর’ই নিতি, আনিকা আর টিনা রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে গেল। নাহান ভাইয়া থেকে শুনলাম গ্রামের ঘটনা তুই কি আবার পালিয়ে এসেছিস নিহা!
আমি ওর কথা শুনতে লাগলাম। চা পাতি বের করে লিকার করলাম। ইতি অনেক অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বলি,
“চা খেতে খেতে বলছি, বিছানায় গিয়ে বস তুই!
ইতি চলে গেল। চা দুই কাপে ঢেলে রুমে নিয়ে এলাম।
“ঘরে বিস্কিট নেই, আজ সকালে’ই ফিরেছি এখনো কিছু কিনি নেই। ঘরে কোন বাজার নেই কিনতে হবে।
“শুধু চা’ই চলবে। তুই বল কি হয়েছে?
“কি আর হবে, আবারো পালিয়ে এলাম।
“খালেদ কে পুলিশে দিয়েছিস।
“আমি তো পালিয়েই এসেছি। কিভাবে জানবো কি হয়েছে না হয়েছে?
“তোর সাথে কি আহিয়ান ও এসেছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলি,
“হুম
“আহিয়ান তোকে এভাবে কেন নিয়ে গেল!
“চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
“তুই বল না।
“তেমন কিছু না। শুধু উনাকে না বলে, ট্রেনে একা রেখে চলে এসেছিলাম তাই!
“তুই একা রেখে এলি।
“উনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই।
“এমন পাগলের মতো কাজ কে করে।
“আমি করি।
অতঃপর দুজনেই হেসে উঠি। ইতি কে বিয়ের কোন কথাই বললাম না। বলে কি লাভ? আমি তো নিজেই মানি না এই বিয়ে তো ইতি কে বলে আর কি লাভ।
অনেকক্ষণ বসে দুজনেই গল্প করলাম। ইতি’র কথায় বেশ বুঝতে পারলাম নিতি আমার উপর বেশ ক্ষেপে আছে। হয়তো আমাকে পেলে আর আস্ত রাখবে না। ভাবছি কাল ভার্সিটিতে’ই যাবো না। নিতি’র মুখোমুখি ও হতে হবে না তাহলে।
.
টিউশনি তে বেরিয়ে গেলাম। আজ একটু দেরি করেই বের হয়েছি। শরীরটা তেমন ভালো লাগছিলো না বলেই দেরি হলো। রিনু কে পড়াতে গেলাম। তার মা আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করল এতো দেরি করে কেন আসলাম। বললাম গ্রামে গিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হলো। অতঃপর তিনি আর কিছু বললেন না।
তোহা’র আম্মু তেমন কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। শুধু ভালো আছি কি না এসব’ই জিজ্ঞেস করলেন। তুহিনের আম্মু অবশ্য অনেক গল্প করলেন। কিভাবে ছুটি কাটিয়েছেন, কি কি করলেন এসব বললেন।
অর্ণ’র মাও সবার মতো কেমন আছি এসব জিজ্ঞেস করলেন। তবে অর্ণ জিজ্ঞেস করল,
“ম্যাম আপনি এতো লেট করে কেন এলেন।
“আজ সকালে গ্রাম থেকে ফিরেছি তো তাই।
“বছরের প্রথম দিন কেন এলেন না।
“গ্রামে ছিলাম তো তাই। কেন?
“আপনি জানেন আমি নতুন বই নিয়ে আপনার জন্য বসে ছিলাম।
“আচ্ছা সরি। এখন তো এলাম বই দেখাও
“না দেখাবো না।
“কেন?
“এটা আপনার পানিশমেন্ট আপনি কেন দেরি করলেন?
“এখন বই না দেখালে আমি পড়াব কি বলো।
“হ্যাঁ এটাও তো কথা।
“আচ্ছা অর্ণ শোন! যারা সরি বলে তাদের পানিশমেন্ট দেয় না বুঝলে।
“তাহলে আমি পানিশমেন্ট দেবো না।
“কেন দেবে আমি তো সরি বলেছি।
“তাহলে বলুন এমনটা আর কখন করবেন না।
“আচ্ছা করবো না। এখন পড়তে বসো!
অতঃপর অনেক কষ্ট করে পড়াতে বসলাম অর্ণ কে। তাকে পড়িয়ে বের হতে দেখি অন্ধকার হয়ে গেছে সবকিছু! এখন বাজারে যেতে হবে, চাল ডাল কিছু কিনতে হবে। ঘরে কিছু নেই! আসার আগে দেখেছিলাম একটু চাল আছে তবে তা আজ রাতে খাওয়ার মত। আকাশ ভাইয়া যেই টাকা গুলো দিয়েছিল সেখান থেকে কিছু নিয়ে বাজার টা করবো। বাকি টাকা’র সাথে আরো কিছু জোগাড় করে ইতি কে দিয়ে দেবো।
অর্ণ’র বাড়ির সেই গলিতে আজ হাঁটছি। এখানে এখন লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগের মতো ভয় লাগছে না। রাস্তায় আড্ডা দেওয়া সেই ছেলে গুলোও এখন আর নেই। সেই রাতের মারামারি’র পর কখনো রাতে এখানে আসি নি। হয়তো সেদিনের ঘটনার পর সবাই এখন সতর্ক। মানুষের স্বভাব’ই এমন। তারা কোন কিছু খারাপ হবার অপেক্ষায় থাকে। যখন খারাপ কিছু ঘটে যায় তখন’ই সেটার জন্য পদক্ষেপ নেয়।
গলি দিয়ে বের হয়ে হাটছি, হাঁটতে হাঁটতে সেই আইসক্রিম দোকানের সামনে এলাম। দোকানের দিকে তাকাতেই থমকে তাকিয়ে রইলাম। দোকানের সামনে আহিয়ান বাইকে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে একমনে। ব্যাপার কি উনি এখানে কেন? আর আমি কি ঠিক দেখছি এটা। আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? আমাকে অসুস্থ করার ধান্দা করছো নাকি!
“আপনি এখন, এখানে?
“হ্যাঁ তো!
“কি করছেন?
“এই প্রশ্ন টা আমি জিজ্ঞেস করতে পারি না তোমায়?
“পারবেন। কিন্তু উওরের আশা করা বৃথা!
“তোমার উওরের আশা করবে কে শুনি। যাই হোক আইসক্রিম খাবে।
“না আপনি খান! এই শীতের সময় নাকি আবার আইসক্রিম!
“এটা খাবার মজা আলাদা। তা কোথায় যাচ্ছ?
“বাসায় যাচ্ছি!
বলেই হাঁটা ধরলাম। হঠাৎ মনে হলো উনি বাইকে চড়ে এদিকে আসছে। আর তাই হলো! উনি বাইকে চড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,
“বাইকে চড়ো।
“আমি হেঁটেই যেতে পারবো।
বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। উনি আমার পাশে বাইক নিয়ে ধীরে ধীরে আগাতে আগাতে বলেন,
“জানো তোমাকে আর আমাকে এভাবে মানুষ দেখলে কি বলবে?
“কি বলবে?
“যাই বলুক না কেন খারাপ বলবে। একটা মেয়ের পাশে পাশে এভাবে বাইক নিয়ে চলা ঠিক না।
“ওহ আচ্ছা তাহলে বাইকে চড়ে গেলে বুঝি কিছু মনে পড়বে না। বাহ!
“করবেই তো না। তারা কি আর জানবে তুমি কে ? হেলমেট পরে চড়বে কে জানবে তুমি কে আর আমি কে?
আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। উনি বলেন,
“বসো!
আমি কি ভেবে হেলমেট পরে উনার পিছনে বসলাম। উনি সমান গতিতে বাইক চালাচ্ছে। মা বাবা’র বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আকাশ ভাইয়া’র সাথে কথা হয়েছে আপনার।
“হ্যাঁ হয়েছে, তোমার মা আর বাবা এখন ভালো আছে।
“খালেদ কি কিছু করে নি।
“না করে নি।
“কিছু না করে সে থাকবে বলছেন।
“কেন থাকবে না।
“আপনি কিছু লুকাচ্ছেন!
“লুকানোর কিছু নেই। আকাশ বলেছে তেমন কিছু হয় নি। শুধু তোমার ভাইয়া আর ভাবী একটু ঝামেলা করেছে।
“মা..
“দুজনেই ঠিক আছে, আর আমার বাড়িতে আছে।
“আপনার বাড়িতে
“হুম!
অতঃপর আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।মেইন রাস্তায় আসার পর বাসার দিকে যেতে নিবেন আমি বলে উঠি,
“এই দিকে যান।
“তোমার বাসা তো ওদিকে?
“না বাজার করতে হবে।
“এতো রাতে? দিনে কি করেছিলে?
“ঘুমিয়েছিলাম।
“কে বলেইলো ঘুমাতে।
“আপনি!
উনি চুপ হয়ে গেলেন। বেশ ভালো জব্দ করলাম উনাকে।
বাইক নিয়ে এলেন বাজারের কাছে। অতঃপর বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলতে যাবে তখন আমি বলি,
“খোলার দরকার নেই এভাবেই চলুন।
“কেন?
“এভাবেই দেখতে বেশ ভালো লাগছে।
“তার মানে তুমি বলতে চাও আমি দেখতে সুন্দর না।
“বাহ খুব ভালো অনুমান করেন তো!
বলেই হেঁটে চলে এলাম। উনি পেছন থেকে “ভূতনি” বলে ডাক দিয়ে আমার পাশে পাশে চলতে লাগলেন। বলেন,
“তুমি আমাকে বার বার ইন ডাইরেক্টলি অপমান করছো এটা কি তুমি বুঝতে পারছো।
“পারছি বলেই তো করছি তাই না।
“তোমাকে আমি পরে দেখে নেবো।
“সেটাই ভালো এখানে তেমন আলো নেই ভালো দেখতে পারবেন না।
বলেই উনার দিকে তাকালাম। উনার মুখটা তখন দেখার মতো ছিল। জানি না কেন উনার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক দিনের চেনা উনি।
দুজনেই বাজারের ভেতর এলাম। বাজারে এখনো অনেক ভিড়। উনি বির বির করে বলেন,
“বাজারে এখনো এতো ভিড়।
“এটা এতো না কম। কখনো মনে হয় বাজারে আসেন নি।
“দরকার পরে নি
“পরবে। দেখবেন যখন আপনার বিয়ে হবে তখন ঠিক’ই দরকার পড়বে।
“যখন বিয়ে হবে মানে তো এখন কি?
আমি নিজের কথায় এবার নিজেই ফেসে গেলাম। কি বলতে কি বলেছি। আমি আর উওর না দিয়ে একটা সবজির দোকানে গেলাম। ফুলকপি, বাঁধাকপি,টমেটো, সিম সহ আরো অনেক রকমের সবজি। ফুলকপি’র দাম এখনো অনেক বেশি। আমি এসব বাদ দিয়ে আলুর দাম জিজ্ঞেস করলাম,
“আলুর কেজি কত?
“একদাম ১৫ টাকা!
হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“৫ কেজি দিন!
আমি উনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দোকানিকে বলি,
“এই না ২ কেজি দিন!
উনি বলে উঠেন,
“দু কেজি!
“নাহলে কতো ৫ কেজি। পাগল হয়েছেন নাকি।
“কেন?
“আমি একা মানুষ, ৫ কেজি আলু কিনে কি করবো?
“কেন খাবে, রেখে দিবে!
“রাখতে রাখতে পচে যাবে সব।
“কিন্তু এখন তো শীতের দিন।
“তো কি? আলু কি কখনো পচবে না নাকি।
এর মাঝেই দোকানি আলু মেপে পলিথিনে রেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমরা দু’জনেই ঝগড়া বন্ধ করে দিলাম। উনি আলু নিয়ে দোকানিকে টাকা দিলেন। আমিও তখন টাকা বের করেছি দেবার জন্য। উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“আপনি কেন টাকা দিলেন?
উনি কথা না বলে আমার বাহু টেনে ধরে সামনের দিকে আগাতে আগাতে বলেন,
“তো কি হয়েছে?
“না আপনি কেন দিবেন। আমি কিনছি আমি দেবো।
“আমি তো আমার দায়িত্ব পালন করছি।
“লাগবে না কিছু!
বলেই সামনে হাঁটা ধরলাম। রাগে শরীর জ্বলছে। আসছে দায়িত্ব পালন করতে। হুহ!
অতঃপর চাল,তেল, ডাল আর পেঁয়াজ কিনলাম। কিছুটা উনার হাতে আর কিছুটা আমার হাতে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“এতো টুকুই!
“বিয়ের বাজার করতে আসছি না চল্লিশার।
“এমন হলে বিয়ের বাজার হতো আমার আর চল্লিশার বাজার হতো তোমার.
“আমার মৃত্যু কামনা করছেন।
“মোটেও না।
দুজনেই এসে আবার বাইকে চড়লাম। উনি আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলেন। আমি হাত সবকিছু নিয়ে উনাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আগাতে লাগলাম আর উনি তখন বলে উঠেন,
“তোমার এতো হেল্প করলাম আর তুমি আমাকে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য বলছো না।
আমি উনার দিকে ফিরে বলি,
“শুধু রং চা পাবেন আর কিছু না। ঘরে বিস্কিট নেই যদি চলে তাহলে আসুন।
“এভাবে কেউ দাওয়াত করে।
“এটা দাওয়াত না। আমি সেধে আসতে চাইছেন।
“থাক যাবো না।
“কথায় কথায় বাচ্চাদের মতো রাগ না করে চা খেতে চাইলে আসুন।
বলেই সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। উনিও এলেন! আমি সব কিছু নিচে রেখে উপরে দরজা খুলছি। উনি আমার পাশেই দাঁড়ানো। ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালালাম। উনি ভেতরে এলেন। পুরো ঘরের দিক বিস্ময় চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“অবাক হচ্ছেন
“খানিকটা! পুরোই ব্যাচেলার দের মতো।
“হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। আপনি হাত মুখ ধুয়ে ওই শেষের বিছানায় গিয়ে বসুন আমি চা নিয়ে আসছি। আর এই যে ওয়াশরুম!
উনি বাথরুমে চলে গেলেন। আমি সবকিছু রান্না ঘরে রেগে চুলোয় চায়ের জন্য পানি বসালাম। উনি বাথরুম থেকে বের হতেই তোয়ালে দিলাম। উনি এসে বিছানায় বসে বলেন,
“তোমার খাট নেই!
রান্না ঘর থেকে বলি,
“পালিয়ে আসার সময় এতো কিছুর মনে থাকে না।
“এখানে আরো দুজন থাকে।
“হ্যাঁ থাকে। দুজন আপু থাকে তারা অবশ্য বোন বোন।
“ওহ আচ্ছা! কিন্তু তারা এখন কোথায়?
“অফিসে আসতে মনে হয় দেরি হবে।
উনি উঠে রান্না ঘরের কাছে এলেন। আমি তখন পানিতে চা পাতা দিচ্ছি। আমি পেছন ঘুরে বলি,
“কিছু বলবেন?
“তুমি কি এখন রাঁধবে।
“হ্যাঁ আরেকটু পরে।
“এতো রাতে রান্না করে খাবে কখন।
“রাঁধতে কতোক্ষণ লাগবে।
চা কাপে ঢেলে উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“চায়ে ক চামচ চিনি দেবো।
“দু চামচ!
আমি চা বানিয়ে উনার কাছে এলাম। দুজনেই দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উনার দিকে তাকাই। উনিও চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। বলে উঠি,
“চা কেমন হলো?
“ভালোই!
“আচ্ছা গ্রামে কি সত্যি সব কিছু ঠিক আছে।
“হুম আছে। আমি সাথে করে ফোন টা আনি নি ভুলে গেছি। কাল নিয়ে আসবো তখন তোমার চাচা’র সাথে কথা বলে জেনে নিও।
“আচ্ছা! তা আপনি কি এখন চলে যাবেন
“হুম!
বলেই চায়ের কাপ’টা রেখে উনি চলে গেলেন। আমি রান্না ঘরের জানাল থেকে দেখলাম উনি বাইকে করে চলে যাচ্ছেন।
অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাত চড়িয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর’ই মিতু আর মুন্নি আপু এলো। তারা আমাকে দেখে বেশ অবাক হলো তবে মিতু আপু বেশ খুশি। মিতু আপুর সাথে খানিকক্ষণ গল্প করলাম। অতঃপর রান্না শেষ করে পড়তে বসলাম।
.
আসবোনা আসবোনা করেও চলে এলাম ভার্সিটিতে। এসেই একটু চমকে গেলাম। কারন আকাশ ভাইয়া চলে এসেছে। দূরে তারা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। আহিয়ান ও আছে ওখানে। আকাশ ভাইয়া আমাকে না দেখলেও আহিয়ান ঠিক’ই দেখল। মনে হলো সেই আকাশ ভাইয়া কে ইশারা করল। আকাশ ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর..
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯
আকাশ ভাইয়া হেসে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“কেমন আছো নিহা!
“ভালো আপনি!
“হুম ভালো।
“আচ্ছা ভাইয়া..
“জানি কি বলবে, চলো ক্যান্টিনে যাই সেখানে চা খেতে খেতে কথা বলি।
আমি মাথা নাড়লাম। অতঃপর ভাইয়ার পিছু পিছু গেলাম। দেখলাম ওপাশ থেকে নিতি উঁকি দিয়ে আমায় দেখছে।
ভাইয়া চেয়ারে বসে চা আনতে বলল। আমাকে জিজ্ঞেস করল আর কিছু অর্ডার করবে কি না। আমি বললাম শুধু চা’ই চলবে। অতঃপর বলি,
“মা আর বাবা কেমন আছে?
“হুম ভালো!
“খালেদ কিছু করেছে সকাল বেলা। মানে লোকজন নিয়ে এসে কি ধমকাধমকি করেছে।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি আরো উত্তেজিত হয়ে বলি,
“কি হলো ভাইয়া বলছেন না কেন?
“আহি তোমাকে কিছু বলে নি।
“না তো!
এর মাঝেই চা চলে এলো। ভাইয়া আমাকে চা নিতে বললেন। বলেন,
“নাও একটু চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো আগে। অনেক উত্তেজিত তুমি!
আমি চায়ের কাপ টা একবার চুমুক দিলাম। ভাইয়াও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
“তোমার মনে আছে তোমার বিয়ের পর আমি আর আহি একটু বাইরে গেছিলাম।
“ভাইয়া আমি সেটাকে বিয়ে বলে মানি না।
“হুম বুঝতে পারছি, কোন মেয়ে’ই মেনে নিবে না সেটা।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
“ভাইয়া তখন কি হয়েছিল।
“সেদিন আমরা তোমার ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম
“হ্যাঁ মনে আছে মা আর বাবা কে নিয়ে এসেছিলেন।
“তা তো এনেছি তার সাথে আরেকটা কাজ ও করেছি
“কি কাজ?
“আহি তোমাকে নিয়ে আসার পর’ই সবাই সবকিছু জেনে গেছিল। তারা সবাই তোমাদের খুঁজতে তখন’ই বের হতে গেছিল।
“তারপর!
“তখন.. [ অতীত …
আহিয়ান যেতেই খালেদ এসে তার কলার ধরতে যাবে তখন’ই আকাশ ভাইয়া খালেদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। পুরো গ্রামের লোক এক হয়ে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এসে আহি কে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
“নিহা কোথায়? কি করেছো তুমি তার সাথে?
ভাইয়া আর ভাবী ও এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
“নিহা কোথাও?
আমার মা দূরে এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল। আহিয়ান একবার আমার মা’র দিকে তাকিয়ে সবার সামনে বলল,
“ও এখন নিহা না নিহারিকা নিহা আহিয়ান চৌধুরী মানে আমার বিবাহিতা স্ত্রী। যাকে আমি সদ্য বিয়ে করেছি।
আহিয়ানের কথায় তৎক্ষণাৎ সবাই রেগে যায়। খালেদ রেগে আহিয়ানের কাছে আসতে গেলে ভাইয়া তাকে আটকায়। সবাই উঠে পড়ে লাগে তার উপর। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আসে সেখানে। যদিও পুলিশদের আহিয়ান’ই ডেকে রাখে। খালেদ পুলিশ কে দেখে বলে,
“স্যার, স্যার এই পোলা আমার বউ রে নিয়া পালাইছে।
পুলিশ আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হয়েছে আহিয়ান! [ পুলিশ আহিয়ানের পরিচিত ছিল ]
“কিছুক্ষণ আগেই এখানে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মেয়েটার ভাইয়া ভাবী তার সাথে জড়িত। শুধু তাই নয়, এই চেয়ারম্যান ও জড়িত তার সাথে
চেয়ারম্যান রেগে বলেন,
“এই ছেলে তুমি কিসব বলছো আমার নামে। নিহা নিজে রাজি হয়েছে বিয়েতে।
পুলিশ চেয়ারম্যান’র দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“আমি কথা বলছি! আপনি দয়া করে চুপ থাকুন। আহিয়ান তুমি যা বলছো তা প্রমাণ করতে পারবে।
“হ্যাঁ পারবো। আমার কাছে তখনকার ভিডিও আছে আর গ্রামের সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল।
পুলিশ এবার চোখ ঘুরিয়ে চেয়ারম্যান’র দিকে তাকায়। বলে উঠে,
“আপনি জানেন ও কে?
চেয়ারম্যান সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আহিয়ানের দিকে। পুলিশ বলে উঠে,
“নাহিয়ান চৌধুরী নাতি ও !
চেয়ারম্যান সাহেবের মুখে এবার চিন্তিত আর ভীতির দুটোর’ই ছাপ পড়ে। নাহিয়ান চৌধুরী’র এখানে না থাকলেও তার রাজত্ব এখনো টিকে আছে সেখানে। এছাড়া অনেক বড় বড় লোকদের সাথে হাত আছে তাদের। চেয়ারম্যান সাহেব যে নিজের পদে আর টিকে থাকতে পারবে না এটা সে এতোক্ষণে বুঝে গেছে। তাই সে চুপ হয়ে যায়। এদিকে খালেদ চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“আফনে কি ওগো লগে স্যার। আমার বউ রে নিয়ে গেছে ওই পোলায়। কাল সকালে তার লগে আমার বিয়ার কথা ছিল।
আহিয়ান শান্ত ভাবেই বলে,
“নিজের বউ নিজের বউ বলা বন্ধ করো। বিয়ে হবার কথা ছিল বিয়ে হয় নি। আর বিয়ে যদি হয় সেটা আমার সাথেই হয়েছে। এই যে পেপার যাতে নিহা নিজের ইচ্ছায় সাইন করেছে!
বলেই পেপার টা পুলিশের হাতে দেয়। ভাবী বলে উঠে,
“আফনি ওরে ভয় দেখাইমা বিয়া করছেন। আমরা জানি আর সেই দোষ আমগো দিতাছেন। স্যার এই পোলায় সব মিথ্যা কইতাছে।
আহিয়ান জবাবে পুলিশ কে বলে,
“আংকেল আপনি চাইলে আমার বাড়িতে যেতে পারেন। নিহা এখনো ওখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
“সেটা পরেও করা যাবে তার আগে ওদের সবাই কে নিয়ে চলো। ধর্ষনের চেষ্টা করার অপরাধে আপনাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হলো।
অতঃপর ভাইয়া, ভাবী আর খালেদ কে পুলিশে ধরে নিয়ে গাড়িতে বসায়। আহিয়ান গাড়ির সামনে গিয়ে খালেদের দিকে তাকায়। খালেদ বলে উঠে,
“ছেমড়া তুই কামটা ভালা করলি না।
আহিয়ান হেসে বলে,
“আসলেই! তোকে নিজের হাতে মারতে পারলে আরো শান্তি লাগত তবে সেটা কিছুদিনের অপমান হতো। আমি চাই তুই সারাজীবন অপমান নিয়ে থাকবি আর তাই এই ব্যবস্থা। আর বিশ্বাস কর তোদের এতো তাড়াতাড়ি আমি জেল থেকে ছাড়া পেতে দিবো না। ( আমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ) এক টাকেও না!
সবাই ভীত চোখে আহিয়ানের দিকে তাকায়। আহিয়ান বাঁকা হেসে পিছনে ফিরতেই আকাশ ভাইয়া বলে,
“আংকেল তো দেখি চেয়ারম্যান’র সাথে কথা বলছে।
“আমিই বলতে বলেছি। ওকে আমার কাজে লাগবে।
“যেমন
“দেখতে পারবি চল!
বলেই চেয়ারম্যান’র কাছে যায়। চেয়ারম্যান সাহেব ভীত স্বরে বলে,
“স্যার যদি এইবারের মতো আমারে ক্ষমা কইরা দেন।
আহিয়ান পুলিশের দিকে তাকায়। পুলিশ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আহিয়ান চেয়ারম্যান সাহেব তার দোষ স্বীকার করছে। এজন্য সে অনুতপ্ত। তুমি কি বলো! উনার উপর কেস টা উঠিয়ে নিবে।
“হুম আংকেল! উঠিয়ে নিন।
চেয়ারম্যান সাহেব কৃতজ্ঞতা চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে বলে,
“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে স্যার।
“ধন্যবাদ বলে লাভ নেই, একটা ফেভার করতে হবে।
চেয়ারম্যান সাহেবর উত্তেজিত হয়ে বলে,
“বলুন কি করতে হবে! আপনি যা বলবেন তাই করবো।
পুলিশ আংকেল বলে উঠে,
“আহিয়ান তুমি কথা বলো আমি চলে যাচ্ছি।
“আংকেল?
“চিন্তা করো না ওদের সহজে ছাড় পেতে দিবো না।
“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
“এটা আমার দায়িত্ব! আকাশ এলাম!
আকাশ ভাইয়া মুচকি হাসি দিয়ে তাকে গাড়ি অবদি নিয়ে গেল। আহিয়ান চেয়ারম্যান কে বলল,
“আপনাকে একটা কাজ করতে দেবো।
“বলুন কি করতে হবে। যা বলবেন তাই করবো।
“বড় কোন কাজ না। শুধু নিহা’র মা আর বাবা দের সেফটি দিতে হবে। ওরা এখন থেকে আমার জমিদার বাড়িতে থাকবে আমার আত্মীয় হয়ে। ওদের সব দায়িত্ব আমার
“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি বেঁচে থাকতে ওদের কিছু হবে না।
“আমি আজ রাতেই চলে যাবো। তবে আকাল এখানে থাকবে। সব কিছু সেই’ই দেখবে। এছাড়া আমি ফোন করে সব জানবো।
“আচ্ছা স্যার! আপনার অনেক দয়া!
অতঃপর আহিয়ান তাকাল মা’র দিকে। তিনি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছেন। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজের ছেলে আর ছেলের বউ কে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। মা কিছুই বললেন না। হয়তো তিনি ও এটাই চেয়েছিলেন।
আহিয়ান মা কাছে গেলেন। মা আঁচলে মুখ দিয়ে কেঁদে উঠলেন। আহিয়ান এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কাঁদবেন না আন্টি! আমি আংকেল’র চিকিৎসা’র ব্যবস্থা করবো। খুব তাড়াতাড়ি তিনি সুস্থ হয়ে যাবে।
“তুমি কি সত্যি আমার মাইয়ারে বিয়া করছো।
“জ্বি আন্টি, বিশ্বাস রাখুন ওর সব দায়িত্ব আমার!
মা আহিয়ান কে ধরে কেঁদে কেঁদে বললেন,
“আমার মাইয়াটারে দেইখো। ওই আমার রক্তের মাইয়া না। আমার সতীনের মাইয়া। ছোটবেলা থেকে মাইয়াটারে একটুও আদর করি নাই। যা ছিল সব ছেলেরে দিলাম আর দেখলা সেই ছেলে এখন আমারে রাখতে চায় না।
আহিয়ান মা কে সাত্বনা দেবার চেষ্টা করলেন। অতঃপর সবাইকে নিয়ে আমাদেরকে বাড়িতে এলেন। আকাশ ভাইয়া কে বললেন,
“আমি আজ চলে যাবো। তুই পরে আসবি। চাচা উনাদের সব ব্যবস্থা করে আসবি।
“আচ্ছা!
অতঃপর আমরা চলে এলাম। আর পরেরদিন আকাশ ভাইয়া মা, বাবা আর চাচা কে আহিয়ান দের জমিদার বাড়িতে উঠালেন। এখন তারা সেখানেই থাকে। ভালো আছেন। ভাইয়াদের কেস টা কিছুদিন পর কোর্টে উঠবে। ততোদিন তারা পুলিশের হেফাজতে থাকবে। চেয়ারম্যান সাহেব চেষ্টা করছেন যাতে তারা একদম কঠিন শাস্তি পায় এছাড়া মা আর বাবা কে দেখে রাখছে।
.
আমি এসব কথা শুনে হা হয়ে বসে আছি। আমার সামনের চায়ের কাপ টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আকাশ ভাইয়া এই নিয়ে দু কাপ চা খেয়ে ফেললো। নিজেকে একটা ঘোরের মধ্যে বলে মনে হচ্ছিল। আশপাশ সবকিছু যেন মনে হয় থমকে গেছে। হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠেন,
“নিহা!
“জ্বি ভাইয়া।
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঘটনা টা তোমার উপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কি?
“জ্বি ভাইয়া!
“উত্তেজিত হয়ো না। আমি সব দেখে শুনেই এসেছি। সবকিছু এখন ঠিকঠাক আছে।
আমি শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। ভাইয়া বলল,
“এক কাপ চা দিতে বলি।
“না ভাইয়া!
এর মাঝেই ইতি উদয় হলো সেখানে। এসে বলল,
“শুধু কি নিহা কে চা খাওয়াবেন নাকি।
“আরে ইতি বসো। বলো কি খাবা শুধু কি চা’ই নাকি।
“শুধু চা’ই চলবে।
“বসো!
ইতিও বসল আমার পাশে। আরো দু কাপ চা এলো। ইতি চা খাচ্ছে আর কথা বলছে। আমি শুধু চা’ই খাচ্ছি। কোন কথা আমার কানে ঢুকছে না। শুধু ঘটনা গুলো সাজাচ্ছি একের পর এক।
আকাশ ভাইয়া উঠে চলে গেলেন। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তার। আমি আর ইতিও বের হলাম। ইতি এখনো বক বক করছে তবে তা আমার কানে আসছে না।
ক্লাসরুমে যেতে গিয়ে দেখলাম উনি মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখে বির বির করে বললাম,
“গোমরামুখো একটা! এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ আমাকে কিছু বললো না। ঘটে গেল কেন বলছি সবগুলোই তো উনি ঘটালেন। এতো কিছু পরও তার চেহারায় কোন আভাস পেলাম না। কেমন স্বাভাবিক সবকিছু! কিভাবে রাখলেন এতো কথা নিজের পেটে। আর কতো কি রেখেছে কে জানে। একদিন দেখবো উনার পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ভালোই হবে তখন আমি ফটাস করে সেটা ফুটে দেবো।
বলেই হেসে দিলাম!
ইতি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“কিরে পাগলের মতো বির বির করে আবার হাসছিস কেন?
“ককই হাসলাম!
“এই যে আবার বির বির ও তো করছিস। পাগল টাগল হলি নাকি।
“পাগল আমি না তুই হয়েছিস তাই ভুলভাল সব দেখছিস। চল ক্লাসে চল লেট হচ্ছি!
বলেই ওকে টেনে ক্লাসরুমে চলে এলাম।
#চলবে….্