বৌপ্রিয়া পর্ব ২১ + ২২

0
688

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – ২১

হঠাৎ পেছন থেকে উচ্ছ্বাস কুসুমকে জড়িয়ে ধরতেই ভরকে গেল কুসুম। থরথর করে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ তার। হাত থেকে টাওয়াল খসে পরে গেল। ঘাড়ে উচ্ছ্বাসের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করল। সঙ্গে অনুভব করলে মৃদু নেশালো এক কন্ঠ,

‘ স-সরি কুসুম। ‘

কুসুমের বুকটা যেন ভেসে গেল। ভালো লাগায় প্রজাপতির ন্যায় উড়ে যেতে চাইল কিশোরী মন। কুসুম তবুও নিজেকে কঠিন রাখার চেষ্টা করে বলল,

‘ আ-আদিক্ষেতা দ-দেখাবেন না। ছ-ছাড়ুন। ‘

উচ্ছ্বাস ছাড়ল না। বরং হাতের বাঁধন আরো একটু শক্ত করল। কুসুমের পেটের উপর রাখা হাত আরো একটু চেপে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বলল,

‘ বিশ্বাস করো, অনেক ব্যস্ত ছিলাম। আমি কিন্তু ইচ্ছে করে দেরি করিনি। ট্রাস্ট মি কুসুম। ‘

কুসুমের বুকের ধড়ফড়ানি যেন বেড়েই চললো ক্রমাগত। হৃদপিণ্ডের তালও খুব একটা ভালো নয়। উচ্ছ্বাসের প্রথম এতটা গভীর স্পর্শ কুসুমের সহ্য হচ্ছে না। কুসুম মৃদু স্বরে বলল,

‘ ট্রাস্ট করেছি। ছাড়ুন এবার। ‘

উচ্ছ্বাস কুসুমের ঘাড়ে থুতনি রেখে আয়নায় কুসুমের দিকে তাকাল। চোখের পলক ফেলে জিজ্ঞেস করল,

‘ রাগ ভেঙেছে? নাকি আরো এক্সপ্লেইন করব? ‘

কুসুম উত্তর দিল না। বরং একটু জোড় খাটিয়েই উচ্ছ্বাসের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে সরে দাঁড়ালো। উচ্ছ্বাস খানিক দূরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে কুসুমের দিকে চেয়ে আছে। কুসুম মেঝে থেকে টাওয়াল তুলে চুলে বাঁধতে লাগল। বলল,

‘ আমি বোধহয় কারো কাছে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হয়ে গেছিলাম। সমস্যা নেই। প্রথম তো। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। যান, শাওয়ার নিয়ে আসুন। হসপিটাল যাবেন না আজ? ‘

উচ্ছ্বাস দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল। আজকে থেকে ছুটি শেষ। আজকে যেকোনো মূল্যে হসপিটাল যেতে হবে। সবে তিনদিনের ছুটি পেয়েছিল। আরো কটাদিন ছুটি পেত। কিন্তু হানিমুনে যাবে বলে সেসব ছুটি আপাতত উহ্য রাখা। বিয়েতে তাই বেশি ছুটি গ্রহন করে নি। উচ্ছ্বাস মাথা চুলকে কুসুমের দিকে তাকাল। এক ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
‘ তোমার রাগ ভাঙলে তারপর শাওয়ারে যাব। রাগ ভেঙেছে? ‘

‘ হু। ‘

উচ্ছ্বাসের বুঝতে বাকি নেই, এই রাগের বহর কটাদিন অব্দি চলবে। গরম আগ্নেয়গিরি শান্ত হতে সময় তো লাগবেই। লাভা হুট করে গলে যায় না। সময় দিতে হয় তাকে। উচ্ছ্বাস আর ঘাটাল না কুসুমকে। কুসুমের চুল থেকে এক টানে টাওয়াল খুলে শীষ বাজিয়ে বাথরুমে চলে গেল। কুসুম হতভম্ব হয়ে গেল। তার টাওয়াল তারই চুল থেকে খুলে নিয়ে গেল? খারাপ লোক।

কুসুম বিছানা গোছালো। উচ্ছ্বাসের শার্ট প্যান্ট সহ যাবতীয় জরুরী জিনিস বিছানার উপর রেখে নিচে এলো। খালামনি কুসুমকে দেখে এগিয়ে এসে বলেন,

‘ কুসুম পায়েস খাবি? বানিয়েছি আজকে। ‘

কুসুম মৃদু হেসে বলল, ‘ তুমি বানালে অবশ্যই খাব। ‘

খালামনি পায়েস প্লেটে নিয়ে কুসুমকে দিলেন। কুসুম নিজে খেল, খাওয়ার ফাঁকে ক’চামচ তুলে খালামণিকেও খাইয়ে দিল। দুজন মিলে বড্ড হাসাহাসি করছে। যা সিড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় উচ্ছ্বাসের কানে এলো। উচ্ছ্বাস মনেমনে কিছুটা তৃপ্তি পেল। কুসুমকে এই বাড়ির বৌ করে আনার সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে এবং আগ্রহ ছিল উচ্ছ্বাসের মায়ের। তিনি যেন ছোট থেকেই কুসুমকে একটু বেশিই পছন্দ করতেন। কুসুমের সঙ্গে উচ্ছ্বাসের কখনো ঝগড়া হলে বকার ভাগীদার কুসুম নয় বরং উচ্ছ্বাস নিজে হত। ছোটবেলায় এসব খারাপ লাগলেও, এখন মনে হচ্ছে কুসুম এবং তার মায়ের সম্পর্ক সারাজীবন যেন এমনই থাকে।

খাবার টেবিলে উচ্ছ্বাস কুসুমের পাশে এসে বসল। কুসুম ডান হাত উচু করে রুটিতে হাত দিবে, তার আগেই তার হাত বাঁধা পরল উচ্ছ্বাসের হাতে। কুসুম থমকে গেল। উচ্ছ্বাস নিজের বা হতে কুসুমের হাত দুমড়ে মুচড়ে নিচ্ছে। কুসুমের বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। টেবিল ভর্তি বড়রা! অথচ এই কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের কাজ দেখে হতবাক হয়ে যাচ্ছে কুসুম। কুসুম চোখ রাঙিয়ে তাকাল উচ্ছ্বাসের দিকে। উচ্ছ্বাস খেতে খেতে কুসুমের দিকে চেয়ে সবার অগোচরে ডান কানে হালকা ছুঁয়ে মিটমিট চোখে সরি বলল। উচ্ছ্বাসের এমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে সরি বলা দেখে কুসুম না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো। সঙ্গেসঙ্গে বাকি সবাই কুসুমের দিকে তাকাল। কুসুম সবার এমন জহুরী চাওনি দেখে থতমত খেয়ে গেল। উচ্ছ্বাসও ততক্ষণে কুসুমের ডান হাত ছেড়ে দিয়েছে। এমন ভাব করে খাচ্ছে, যেন তার মত লক্ষ্মী ছেলে আর একটিও নেই। কুসুম সবার এমন চাওনি দেখে একটু কেশে খেতে মন দিল। সবাই ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলেও কুসুম মনেমনে আরো একটুখানি প্রেমে পরল উচ্ছ্বাসের। ধীরে ধীরে এই ছেলেটা কুসুমের পুরো পৃথিবীকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিচ্ছে। কুসুম কেমন যেন জালের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে ছেলেটার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। চাইলেও সেই সুতো কেটে বের হতে পারছে না। কিন্তু কুসুম কি আদৌ তা চাইছে? উহু! মোটেও না।
___________________________________
গতকাল উচ্ছ্বাস সারাদিন বাসায় আসেনি দেখে ফেরা যাত্রা করা হয়নি। তাই বড়রা মিলে ঠিক করলেন, আজকে কুসুম নিয়মমাফিক নিজের বাপের বাড়ি যাবে। সঙ্গে উচ্ছ্বাসও যাবে। আগামীকাল শুক্রবার। উচ্ছ্বাসের হসপিটাল বন্ধ। তাই নিয়ম যথাযথভাবে পালন করা যাবে। উচ্ছ্বাস হসপিটাল থেকে ফিরতেই তোড়জোড় লেগে গেল সবার মধ্যে। শিউলি এবং উচ্ছ্বাসের বাকি কাজিনরা মিলে একদম সাদামাটাভাবে সাজিয়ে দিল কুসুমকে। হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরিয়ে তৈরি করা হল কুসুমকে। সন্ধ্যার চা পর্ব শেষ হতেই উচ্ছ্বাস, কুসুম, শিউলি আর উচ্ছ্বাসের ফুপাত ভাই সঙ্গে গেল কুসুমের বাড়ি। তারা যেতেই কুসুমদের বাড়িতে বিশাল হুলুস্থুল ব্যাপার ঘটে গেল। সাহেদা অর্থাৎ কুসুমের মা মেয়ের জামাই আর নিজের বোনের ছেলের জন্যে বেশ ঘটা করেই আয়োজন করলেন। ও বাড়ি প্রবেশ করতেই খাবারের বহর লেগে গেল। উচ্ছ্বাসকে ঘিরে ধরল কুসুমের অন্যান্য ভাই-বোনেরা। কুসুম এক ফাঁকে রান্নাঘরে মায়ের কাছে চলে এল।

সাহেদা রান্নার দিকটা দেখছেন। কুসুম গিয়ে মা’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। মেয়ের স্পর্শ পেতেই চোখ ছলছল করে উঠল সাহেদার। পেছনে ফিরে মেয়েকে মন ভরে দেখে নিয়ে ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ ভালো আছিস? ‘

কুসুম বুঝতে পারল মায়ের ভালো আছিস বলার অর্থ কি? কুসুম মৃদু হেসে বলল, ‘ ঐ বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালো রেখেছে। চিন্তা করো না। ‘

সাহেদা আশ্বস্ত হলেন। কিছুক্ষন কথাবার্তার পর সাহেদা জিজ্ঞেস করলেন,

‘ তোর অনার্স ভর্তি তো কিছুদিনের মধ্যেই। কী করবি ভেবেছিস? পড়াশোনার ব্যাপারে উচ্ছ্বাস কি বলল? ‘

কুসুম ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল তুলে সেটায় কামড় বসাল। রয়েসয়ে উত্তর দিল,

‘ খালামনি সেদিন বললেন নর্থ সাউথে পড়ার জন্যে। তারও তাই মত। বাসার পাশে আছে। তার অনেক চেনাজানা মানুষ আছে। সমস্যা হবে না বললেন। তবে এখন ভর্তি হব না। সেখান থেকে ফেরার পর হব। সে কথা বলে রাখবে বলেছে। ‘

সাহেদা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ এখন আবার কোথায় যাবি?’

দেখা গেল কুসুম লজ্জা পেল। মিনমিন করে বলল,

‘ এই মাসের শেষের দিকে কক্সবাজার যাব। সেখান থেকে ফিরে এলে। ‘

সাহেদার আর বুঝতে বাকি নেই, মেয়ে কিসের কথা বলছে। তাই তিনিও আর ঘাটালেন না মেয়েকে। উচ্ছ্বাসের কাছে যাবার জন্যে বলে কাজে লেগে গেলেন।

#চলবে

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – ২২

কুসুমকে ঘিরে বসে আছে ভাবি এবং বোনদের দল। কুসুম যেন সবার মধ্যমনি। সবাই কুসুমকে ঠেলেঠুলে বসেছে কুসুমের বিবাহিত জীবনের কথা শোনার জন্যে। কুসুম নাছোড়বান্দার মত বলছে না কিছুই। এতেই তারা টিপ্পনী কেটে যাচ্ছে। তাদের ধারণা মতে, উচ্ছ্বাস ভীষন রোমান্টিক একটি ছেলে। বউকে সে চোখে হারাবেই। কুসুম নিজেদের রসকষহীন কথা তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। কুসুম মিথ্যা বলছে। তারা সেই মিথ্যাকে সত্য করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। কুসুম একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সত্যকে মিথ্যা করে বলল,,

‘ হয়েছে হয়েছে। আমার জামাই আমাকে চোখে হারায়। সারাক্ষণ স্বামী নিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। সে খুব বেশি রোমান্টিক, রোমান্টিকতা তার উপচে পরছে। এবার বিশ্বাস হয়েছে? শান্তি? ‘

মেয়েদের দল এবার খুশিতে হৈ হুল্লোর করে উঠল। এটাই তো শুনতে চেয়েছিল তারা। অযথাই কুসুম মিথ্যা বলেছে। কুসুম কেন যেন এতক্ষণ মিথ্যা বলে তাদেরকে মায়াজালে রাখল। ইশ!
কুসুমকে যখন এটকথা জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল ঊষা বড় বোন হিসেবে সেখান থেকে উঠে গিয়েছিল। বড় বোন হয়ে ছোটবোনের স্বামীর রোমান্টিক ব্যাপার-স্যাপার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। ভাবি একজন বললেন,

‘ হ্যাঁরে কুসুম, বাচ্চা কবে নিবি? ‘

কুসুম হঠাৎ এই কথা শুনে মৃদু স্বরে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ এখনই বাচ্চা? ভাবি, তোমরা কতদূর চলে গেলে। উফ! ‘

আরেক ভাবি কুসুমকে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘ এমনভাবে বলছিস যেন জীবনেও বাচ্চা নিবি না। নিলে দ্রুত নিবি বুঝলি। এতে তোদের সংসার জীবনেরই মঙ্গল। ‘

এতসব কথা শুনে মাথা ভনভন করতে লাগল কুসুমের। কুসুম কানে দুহাত চেপে ধরে বলল, ‘ ভাবি, লুচ্চামি বন্ধ করো প্লিজ। আমার লজ্জা লাগছে। ‘

মেয়েদের দল কুসুমের কথা শুনে হাসিতে ফেঁটে পরল। কুসুম পুনরায় এক সমুদ্র লজ্জায় ঝাঁপ দিয়ে চোখ খিঁচল। তবে কুসুমকে এই অবর্ণনীয় লজ্জা থেকে বাঁচাতে ঊষা এলো। এসেই সবাইকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে তাড়া দিতে লাগল। কুসুম এই কথা শোনার পরপরই হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে ঊষার পেছনে পেছনে চলে গেল। মেয়েদের আসরও ভেঙে গেল।

খাবার খাওয়ার পর্ব শেষ করে, ইয়াহিয়া আর উচ্ছ্বাস সোফায় বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। ঊষা এই ফাঁকে কুসুমকে নিজের রুমে টেনে নিল। লাল রঙের ব্লাউজ এবং পেটিকোট হাতে দিয়ে বলল,
‘যা পরে আয়। সাজিয়ে দেই তোকে। ‘

কুসুম সেসব হাতে নিয়ে বলল, ‘এখন সাজব কেন? ঘুমাব না? ‘

ঊষা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলল। কুসুমের মাথায় চাটা মেরে বলল,’ দ্রুত পরে আয় গাঁধী। ‘

কুসুম বুঝতে পারল, সে বড্ড বোকামিপূর্ন কথা বলে ফেলেছে। কুসুম বাথরুমে গিয়ে সেসব পরে এলো। ঊষার হাতে সাদা রঙের, লাল পাড়ের শাড়ি। কুসুম বাথরুম থেকে বের হতেই ঊষা এগিয়ে এলো শাড়ি নিয়ে। তবে বিপত্তি সাজল পেটিকোটে শাড়ি গুজার বেলায়। পেটিকোট অনেক হালকা বাঁধন দিয়ে পরেছে কুসুম। ঊষা একবার বলল, ‘ পেটিকোটের ফিতে একটু টাইট করে বাঁধ। শাড়ি খুলে যাব নাহলে। ‘

কুসুম উত্তর দিল, ‘ হ্যাঁ বাঁধি। তারপর বিয়ের দিনের মত আমার পেটে কাটার মত দাগ বসে যাক। তারপর জ্বলুক ইচ্ছেমত। এভাবেই ঠিক আছে। পরিয়ে দাও। ‘

ঊষা আর কথা বাড়ালো না। সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিল কুসুমকে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে হালকা করে কাজল এঁকে দিল চোখে। ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে দিল। কুসুমকে পুরোপুরি তৈরি করে দিয়ে পাঠিয়ে দিল উচ্ছ্বাসের ঘরে। উচ্ছ্বাস সবে ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। কুসুম দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই উচ্ছ্বাস মুখ মুছে টাওয়াল সরিয়ে কুসুমের দিকে তাকালো। সঙ্গেসঙ্গে উচ্ছ্বাসের সর্বাঙ্গ থরথর করে কেপে উঠল। সাক্ষাৎ দেবী লাগছে কুসুমকে। কুসুম লজ্জায় মাথা নত করে এগিয়ে এলো।
কুসুম এগিয়ে আসতেই উচ্ছ্বাস গলা কেশে নিজেকে স্বাভাবিক করল। টাওয়াল বারান্দায় মেলে দেবার জন্যে যাবে, কুসুম পেছন থেকে বলল, ‘ আমার কাছে দিন, আমি মেলে দিচ্ছি। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হেসে কুসুমের হাতে টাওয়াল ধরিয়ে দিল। কুসুম বারান্দায় গিয়ে টাওয়াল মেলে দেবার জন্যে উদ্যত হল।মেলে দেবার জন্যে একটু উঁচু হতেই উন্মুক্ত হল কুসুমের মেদহীন ফর্সা কোমড়। সঙ্গেসঙ্গে বুকটা ধ্বক করে উঠল উচ্ছ্বাসের। উচ্ছ্বাস ঢোক গিলে ফ্যালফ্যাল চোখে সেদিকে চেয়ে রইল। আজকে কুসুমকে একটু বেশিই আকর্ষণীয় লাগছে না? কুসুম টাওয়াল মেলে দিয়ে নিচু হতেই কোমড় আবারও ঢেকে গেল শাড়ির আঁচলে। উচ্ছ্বাস চোখের পলক ফেলল। গলা কেশে, কপাল চুলকে নিজেকে স্বাভাবিক করল। কুসুম রুমে এলো। বিমোহিত উচ্ছ্বাসের দিকে চেয়ে বলল, ‘ রাত হয়েছে। ঘুমাবেন না? ‘

উচ্ছ্বাস অন্যমনস্ক হয়ে বলল, ‘ না…মানে হ্যাঁ। চলো ঘুমাই। তুমি শাড়ি পরে ঘুমাবে? ‘

কুসুম বোকা বোকা চোখে নিজের শাড়ির দিকে চেয়ে বলল,

‘ ঊষা আপু তো সেটাই বললো। বলল আপনি খুলে ঘুমাতে বলল ঘুমাব। নাহলে পরেই ঘুমাতে। ‘

উচ্ছ্বাস মনেমনে হাসল। এ কদিন যতটুকু বুঝতে পেরেছে, ঊষা এবং তার ভাবি দুজনেই মনেপ্রাণে চাইছে কুসুম এবং উচ্ছ্বাস মিলে যায়। তবে তারা এটা জানে না কুসুমের সবে ১৮ হয়েছে। আরো কটাদিন সে নিজেই কুসুমকে সময় দিচ্ছে। যেন দুজন দুজনকে ভালো করে চেনে নিক, জেনে নিক।! তারপর যেন এক হয়। সবাই এতটা অধৈর্য্য কেন তাদের সম্পর্ক নিয়ে? নাকি বয়সের এতটা পার্থক্য দেখে সবাই কিছুটা শঙ্কিত তাদের সম্পর্ক নিয়ে? হতেও পারে।

উচ্ছ্বাস নিজেকে সামলে বলল, ‘ শাড়ি খুলে ফেলো। নরমালি সেলোয়ার কামিজ পরে ঘুমাও না? সেটাই পরে ঘুমাবে। গো নাও। ‘

কুসুম মাথা নাড়ালো। চলে যেতে উদ্যত হলে খানিক পর উচ্ছ্বাস হঠাৎ করে পেছন থেকে বলে উঠল,

‘ ওয়েট! শাড়ি পরে ঘুমাতে তোমার কি খুব অসুবিধা হবে, কুসুম? একদিন দেখো ঘুমাতে পারো কি না। যদি না পারো, দেন নেক্সট টাইম থেকে ত্রি পিস পরেই নাহয় ঘুমাবে। শুধু আজকে একটু দেখো। প্লিজ! ‘

শেষের কথাটা বড্ড অসহায় শোনালো কুসুমের কানে। উচ্ছ্বাস কি নার্ভাস হচ্ছে? কুসুমের তো তাই মনে হচ্ছে। কুসুম হেসে ফেললো। বলল, ‘ আমি শাড়ি পরে ঘুমাতে পারব। চিন্তা নেই। ‘

কুসুম এই কথা বলে বিছানার দিকে যেতেই হুট করে ঝরঝর করে সমস্ত শাড়ি কোমড় থেকে খুলে নিচে পরে গেল। শুধু আঁচলটা পরে রইল শরীরে। আচমকা এমন পরিস্থিতিতে দুইজনেই হতভম্ব হয়ে গেল। উচ্ছ্বাস বড়বড় চোখে কুসুমের উন্মুক্ত পেটের দিকে চেয়ে আছে। কুসুম বোকা বোকা চোখে চেয়ে আছে নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা নিজের শাড়ির দিকে। যখন বুঝতে পারল নিজের হয়ে আচলটাই শুধু আছে, কুসুম কাদো কাদো চোখে উচ্ছ্বাসের দিকে চাইল। উচ্ছ্বাস অন্য নজরে চেয়ে আছে দেখে কুসুম এবার লজ্জায় আধমরা অবস্থা। এই কেঁদে দিবে ভাব। উচ্ছ্বাস কুসুমের অবস্থা বুঝতে পেরে সঙ্গেসঙ্গে নিজেকে সামলে ফেললো। চোখ সরিয়ে অন্যদিকে ঠোঁট কামড়ে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। কুসুম উচ্ছ্বাসকে এভাবে হাসতে দেখে এবার জোরে শব্দ করে চেচিয়ে উঠল, ‘ আমার এই অবস্থায় আপনি হাসছেন? বাজে লোক একটা। ‘

উচ্ছ্বাস আর পারল না। এবার শব্দ করেই হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি আসার জোগাড়। শরীর রীতিমত ঝাঁকিয়ে হাসছে। কুসুম এবার আর সহ্য করতে পারল না। কেঁদে ফেললো। উচ্ছ্বাস কুসুমের কান্নার শব্দ পেতেই চট করে হাসি থামালো। নিজের পেটফাটা হাসি কষ্ট করে নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে এসে মেঝে থেকে শাড়ির বহর হাতে তুলে বলল, ‘ শাড়ি পরতে পারো? নাকি পরিয়ে দিতে হবে? ‘

কুসুম রেগে এখন আগুন হয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাসের হাত থেকে শাড়ির নিজের হাতে নিয়ে বলল, ‘ লাগবে না। আমি শাড়ি পড়বই না। ত্রি পিস আছে। সেটাই পরব। সামনে থেকে সরুন। ‘

কুসুম পেছনে ফিরে চলে যেতে নিলে পেছনে থেকে উচ্ছ্বাস কুসুমের আঁচল পেছনে থেকে খপ করে ধরে ফেললো। কুসুম সঙ্গেসঙ্গে থেমে গেল। শাড়ির আঁচল শক্ত করে চেপে ধরল খুলে যাবার ভয়ে। পেছন থেকে উচ্ছ্বাস বড্ড মিষ্টি স্বরে বলল,

‘ শাড়িটা আমি পরিয়ে দেই? ‘

উচ্ছ্বাস এত সুন্দর ভাবে বলল যে কুসুম না চাইতেই সম্মোহিত হয়ে গেল। চুপ করে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। উচ্ছ্বাস বুঝতে পারল, কুসুমের সম্মতি আছে।
সে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো। কুসুমকে সামনে রেখে বেশ সময় নিয়ে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিল। উচ্ছ্বাসের সামনে এভাবে শাড়ি ছাড়া দাড়িয়ে ছিল ভাবতেই কুসুমের যেন পশম দাড়িয়ে যাচ্ছে। তবে নিজের স্বামী ভেবে নিজেকে একটু স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করল। শাড়ি পড়ানোর এক ফাঁকে উচ্ছ্বাস বড্ড আচমকা কুসুমকে জিজ্ঞেস করে বসল,
‘ ইয়াহিয়া ভাই কি ঊষাকে পছন্দ করেন? দেখে মনে হল আমার। তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু জানো? ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here