বোনু Part_20_ধামাকা?

0
469

বোনু
Part_20_ধামাকা?
#Writer_NOVA

হঠাৎ একটা গুলির শব্দে ও একটা চিৎকারে পুরো গোডাউন স্তব্ধ হয়ে গেলো। সিয়ান এক হাতে উষার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।গুলির শব্দে সবাই ভয় পেয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলো সিয়ান এক হাত চেপে ধরে আছে।হাতের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে রক্তের ধারা বইছে।ধপ করে হাত ধরে বসে পরলো সিয়ান।ব্যাথায় বেচারার জান যায় যায় অবস্থা। সৃজান রেগে অরূপের কাছে গেলো।

সৃজানঃ আর ইউ মেড অরূপ? কি করলে তুমি এটা?তোমাকে আমি অর্ণবকে মারতে বলেছি।আর তুমি আমার ভাই কে গুলি করলে কেন?
অরূপঃ সরি সরি সরি।আমার ভূল হয়ে গেছে। আমি আসলে একটুও খেয়াল করিনি।গালতিসে মিসটেক।
(ভয় পাওয়ার অভিনয় করে)
ঈশান নিচের থেকে ময়লা ঝারতে ঝারতে উঠলো।ইশাত মিটমিট করে হাসছে।অর্ণব ও আদিল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তারিনের সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। উষার ঠোঁটে টেডি স্মাইল।
ঈশানঃ ইস,অরূপ কি করলি তুই এটা?কাজটা মোটেও ঠিক হলো না।(হাসতে হাসতে)
অরূপঃ একদম ঠিক বলেছিস ছোট ভাই।
সৃজানঃ অরূপ তুমি এমন করছো কেন?
অরূপঃ আরে ভাই সরি বললামতো।আমি মোটেও এমন করতে চাই নি।
(কপালে রিভেলবার দিয়ে স্লাইড করতে করতে)
সৃজানঃ তাকিয়ে দেখছো কি তাহলে ওদের সবাইকে শেষ করে দেও।
অরূপ রিভেলবার হাতে ঈশানের দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর সোজা ওর কপাল বরাবর ঠেকালো।এক ঝাটকায় ঈশানের কপাল থেকে সরিয়ে অর্ণবকে যে বডিগার্ডটা ধরে রেখেছে তার কপাল বরাবর গুলিটা শুট করলো। ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পরলো।
সৃজানঃ কি শুরু করেছো তুমি অরূপ?আমাদের লোক মারছো কেন?
অরূপঃ অনেক ভয় পাইছি।প্লিজ বস এবারের মতো মাফ করে দেন।আবারও গালতিসে মিসটেক হয়ে গেলো।কি ভেবেছিলি সৃজান আহমেদ এবারও এমনটা বলবো।নো ওয়ে।
ইশাতঃ তুই তো ভাই পুরো ফাটায় দিলি।
আদিলঃ ইউ আর প্রাউড অফ ইউ।
অরূপঃ ধন্যবাদ ভাইরা আমার।
সৃজানঃ কি হচ্ছে টা কি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
সৃজানের কথা শুনে চার ভাই ও অরূপ,উষা, তারিন সবাই একসাথে হেসে উঠলো। অরূপ ঈশান ও ইশাতের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
অরূপঃ আরে ভাই ওকে কেউ পুরো ঘটনা খুলে বল। নয়তো স্ট্রোক করে এখানেই মরে পরে থাকবে।
ঈশান দুই হাত মেলে হাই তুলতে তুলতে বললো।
ঈশানঃ সরি ডিয়ার ভাইয়ার বন্ধু। তুমি কি ভেবেছো তোমাদের প্ল্যানে আমরা ধরা দিয়েছি।নো মোঃ সৃজান আহমেদ। আমাদের জালে তোমরা ফেঁসে গেছো।অরূপ আমাদের আরেক ভাই। কি করে বিশ্বাস করলে তোমরা সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য ও তোমাের সাথে হাত মিলিয়েছে।এটাই তো তোমাদের সবচেয়ে বড় ভূল।
উষাঃ ঐ ছোট ভাইয়ু আমার হাতের বাঁধন খুলে দে।অনেক ড্রামা করছি।আর পারবো না।আমি এখন একটু জিরিয়ে নিবো।তারু বেবি এদিক আয় তো।

তারিন এগিয়ে এসে উষার হাতের বাঁধন খুলে দিলো।সৃজান হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কিছু বুঝতে পারছে না।
আদিলঃ মুখটা বন্ধ কর। নয়তো মাছি ঢুকবে।
সৃজানঃ তোরা আমার সাথে কি শুরু করেছিস?
অর্ণবঃ যে খেলা তোরা শুরু করেছিস সেটা আমরা শেষ করি।এতো দিন তোরা যা প্ল্যান করেছিস সবকিছুর ওপরে আমরা প্ল্যান করেছি।
ইশাতঃ আমার বোনু এখানে আছে সেটা তো আমরা কবের থেকেই জানি।
সৃজানঃ কিভাবে?
ঈশানঃ বোনুর গাউনের মধ্যে যে বড় পাথরটা দেখতে পাচ্ছিস সেটার ভেতরে জি পি এস এবং সি সি টিভি ক্যামেরা সেট করা আছে।আমরা নিশ্চিন্তে ছিলাম।কোন টেনশন হয়নি।
ইশাতঃ কারণ আমরা জানি উষাকে সেফ রাখার জন্য আমাদের আরেক ভাই আছে।
আদিলঃ বোনু কিছু খয়ছিস?
উষাঃ অরূপ ভাইয়ু আমাকে কাচ্চি বিরিয়ানি খাইয়ে দিছে।অনেক মজা ছিলো খেতে।ইয়াম্মি??।অরূপ ভাইয়ুর হাতে অনেক দিন পর খাবার খেলাম।
তারিনঃ উষানি বেবি তোর ঠোঁটের কোনা কেটে গেছে। চোখ, মুখ কালো হয়ে গেছে।
উষাঃ ধূর ছেমরি। এগুলো তো মেকআপ করছি।অরূপ ভাইয়ু আমাকে মারার কথা বলে রুমে নিয়ে গেছিলো।সেখানে গিয়ে সুন্দর করে মেকআপ করেছি, ভাইয়ু নিজের হাতে বিরিয়ানি খাইয়ে দিছে।
সৃজানঃ অরূপ তুই আমাদের সাথে বেঈমানী করলি।তোকে আমরা ছারবো না।
অরূপঃ শালায় কয় কি?আমি যেই প্লেটে খাই সে প্লেট ছিদ্র করি না।আমার ভাইরা আমার জান।তুই কি ভাবছিস সামান্য প্রপার্টির লোভ দেখিয়ে তোরা আমায় কিনে নিছিস।আরে সারা পৃথিবীর সব কিছু আমার পায়ে ঢেলে দিলোও আমি আমার ভাইদের সাথে বৈঈমানী করবো না।কারণ তারা কখনও আমায় নিজের ভাই ছারা অন্য চোখে দেখে নাই। আমার বোনুর দিকে কেউ তাকালে তার চোখ উপরে ফেলি সেই বোনুকে আমি কষ্ট দিবো।হাউ ফানি।মনে রাখিস বোনটা শুধু চার ভাইয়ের নয়।বরং ৫ ভাইয়ের।

সৃজান বডিগার্ডদের উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে উঠলো।

সৃজানঃ তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? মার ওদের।একটাও যাতে জিন্দা না বাঁচতে পারে।
উষাঃ লাভ নেই। আমার ভাইয়ুদের সাথে তুই কখনি পারবি না।তারু বেবি আয় তো আমরা সোফায় বসি। সোফায় আরাম করে বসে বসে আমরা একশ্যন মুভী দেখবো।(ভাইদের দিকে তাকিয়ে) ভাইয়ুরা শুরু হয়ে যাও।তোমাদের টাইম স্টার্ট হয়ে গেছে।

???

গোডাউনের একপাশে চারটা সোফা রাখা। সামনে বড় একটা টি-টেবিলের ঝুড়িতে সুন্দর করে ফল সাজানো।উষা সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে মনের সুখে কলা খাচ্ছে। আর ওর ৫ ভাই হিরোদের মতো ফাইটিং করছে।তারিন কিছুই বুঝতে পারছে না।

উষাঃ তারু নে ধর কলা খা।
তারিনঃ তুই এখন খাওয়ার মুডে আছিস।ঐ দিকে ভাইয়ুরা ফাইট করছে। আমার ভীষণ ভয় করছে।
উষাঃ ধূর ছেমরি এতো ভয় পাইস না তো।জিতবো আমরাই।আমার ৫ ভাই যেখানে একসাথে আছে সেখানে কেউ কোন কিছু করতে পারবে না।তুই বরংচ কলা খেতে খেতে একশ্যন সিন দেখতে থাক।কলা না খাইলে এখানে আপেল আছে,আঙ্গুর আছে কিংবা কমলা। যেটা মন চায় খেতে পারিস।
তারিনঃ তুই খা তোর জামাইয়ের নাম ডুবাইয়া।আমি চিন্তায় শেষ হয়ে যাইতাছি আর উনি পরছে খাবার নিয়া।যা ভাগ। (রেগে)

উষা খুব আগ্রহ নিয়ে কলা খাচ্ছে আর ভাইদের মারামারি দেখছে।মনে হচ্ছে সে তামিল মুভির একশ্যন সিনে ডুবে আছে।হঠাৎ ভাইদের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে বললো।
উষাঃ ভাইয়ুরা যদি আজকে জিততে না পারো তাহলো বাড়ি নিয়ে গিয়ে প্রত্যককে কানে ধরিয়ে উঠবস করাবো।একটার কপালেও খাবার জুটবো না।গমলা ভর্তি করে গরুর ভূসি খেতে দিবো।আর যদি জিতো তাহলে পাবে আমার পক্ষ থেকে একটা ২৪ প্যাকেটের মি.নূডুলস। তার সাথে থাকছে আকর্ষনীয় একটা মগ ফ্রী। এই অফারটা সবার জন্য। যে জিতবে তাকেই দেওয়া হবে।
তারিনঃ তুই কি শুরু করলি?ঐ দিকে ভাইয়ুরা কি কষ্ট করে ফাইটিং করছে।আর তুই মি.নূডুলস নিয়ে পরলি কেন?
উষাঃ আরে তুই কোন চিন্তা করিস না তারু।জিতবো তো আমরাই। তাই মি.নূডুলসের পুরো প্যাকটা আমরাই নিবো।সাথে আকর্ষণীয় মগটাও।

তারিনের কিছুটা খটকা লাগছে উষার ব্যবহারে।কারণ উষা স্মৃতি শক্তি যাওয়ার আগে সবসময় এমন দুষ্টামীগুলো করতো।এখন হঠাৎ এতোদিন পর আবার সেই ব্যবহার করছে।ঈশান ফাইট করতে করতে ওদের কিছুটা সামনে এলো।
উষাঃ আরে ছোট ভাইয়ু এতো আস্তে মারিস কেন?আরো জোরে মার।আমিতে ফাইটিং এর শব্দই পাই না।খাবার তো ঠিকই গিলতে পারস।বলার সময় তো বড় মুখে বলিস তোর সাথে কেউ পারবে না।আর এখন মনে হচ্ছে হাতও চলছে না।এতো আস্তে কেউ মারে।এমনভাবে মারছিস যেনো হাত দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছিস।

উষার কথায় কাজ হলো ঈশান ওর ওপর রেগে সেই রাগ বডিগার্ডদের ওপর ঝারতে লাগলো।উষা অবশ্য এটাই চেয়েছিলো।
উষাঃ মেজু ভাইয়ু এদিক দিয়ে একটা ঘুষি মারো ডিসিম,ঐদিক দিয়ে একটা দেও ডিসুম।পায়ে তোমার কুংফু স্টাইলের শর্ট মার।মাথাটা রড দিয়ে বারি মেরে ফাটিয়ে ফেল।একটা কেও ছারবি না।বজ্জাত গুলো।
তারিনঃ কি রে তুই কি শুরু করলি?
উষাঃ তোকে না বেশি কথা বলতে মানা করছি। চুপচাপ ফাইটিং দেখ।বিনামূল্যে চোখের সামনে তামিল মুভির ফাইটিং দেখছি।আমার যে কি মজা লাগছে তোকে আমি বুঝাতে পারবো না। তাই ভাবলাম আমি যদি একটু রেফারিগিরি না করি তাহলে কি মানায়?ভাইয়ুরা বলে দিচ্ছি ইচ্ছে মতো মার ওদের। নইলে তোদের কপালে আজকে কূড়া-ভূসি জুটবে।
ইশাতঃ বোনু আর পারতাছি না।শক্তি নাই শরীরে।
উষাঃ ধূর ভাইয়ু কি কস?খাওনের সময় তো এক গামলা খাস, সেগুলো যাই কই?যদি খেয়ে খেয়ে হাতির মতো শুধু ফুলোস তাহলে তো তোদের খাবার মাইনাস।এতটুকু মারামারি করে এখনই বলিস শক্তি নাই।আর তোমরা নাকি রাজ্য জয় করবা।কথার সময় তো মুখ দিয়ে খই ফুটে।কাজের সময় ঠনঠনা ঠন ঘন্টা কেন?
তারিনঃ তুই কিন্তু আমার ইশাতকে অপমান করছিস?
উষাঃ ওলে আমাল বাবুটালে।আসো কোলে আসো।আমি তো ভূলেই গেছিলাম সেজু ভাইয়ুকে কিছু বললো তোমার গায়ে আবার ফোস্কা পরে।আমার ভাই আমি যা খুশি তাই বলবো তোর কি রে??
তারিনঃ উষানি তোর কি স্মৃতি শক্তি ফিরে আসছে?তুই এভাবে কথা বলছিস যে।
উষাঃ এখানে একটা সিকরেট আছে।পরে বলবো সবাইকে একসাথে ?।
আদিল সৃজানের সাথে ফাইট করছে।অর্ণব,ইশাত,ঈশান,অরূপ সবাই ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে।
উষাঃ তারু আপেলটা খেয়ে দেখ অনেক মিষ্টি। আমি একটু পানি খেয়ে নেই। অনেকখন ধরে বকবক করে গলা শুকিয়ে গেছে।
তারিনঃ তুই কি চুপ করবি?তুই এখানে বক্তব্য দিচ্ছিস আর ঐদিকে—
উষাঃ কিছু হবে না।আমরাই জিতবো।আর ২৪ প্যাকেটের নূডুলসটা আমাদেরি হবে।সাথে মগটা।তুই এতো নূডুলসের জন্য কাঁদিস না।তোকে ২৪ প্যাকেটের থেকে ২ প্যাকেট দিয়ে দিবোনি।
তারিনঃ কি আমি নূডুলসের জন্য কান্না করছি??
উষাঃ মুখ বন্ধ কর।যা সত্যি তাই বলছি।ওয়েট তারু বেবি কোন শব্দ পাচ্ছিস?(কান খাঁড়া করে)
তারিনঃ আমিতো শুধু ডিসিম,ডুসুমের শব্দ পাচ্ছি।
উষাঃ মনে হচ্ছে কিছু একটা চাপা আতর্নাদ করছে।কি রকম কুই কুই শব্দ করছে।দাঁড়া আমি দেখে আসছি কোথা থেকে এই শব্দ আসছে।
তারিনঃ আমার কথা শোন—

তার আগেই উষা উল্টো দিকে খুঁজতে চলে গেল।কিছু সময় পর উষা একটা ছোট বাদামী কালার কুকুরের বাচ্চা আদর করতে করতে ফিরে আসলো।
উষাঃ দেখ তারু কত সুন্দর একটা পাপ্পি।এটা জানিস ঐ বাক্সটার নিচে পড়ে ছিলো।নিশ্চয়ই অনেক ব্যাথা পেয়েছে। কিরকম করে কান্না করছিলো।কোথা থেকে এসেছে কে জানে?মনে হচ্ছে বিদেশি। যেখান থেকেই আসুক আমার কি, এটা এখন আমার কাছেই থাকবে।
তারিনঃ এই কুকুর দিয়ে তুই কি করবি?
উষাঃ ঐ এটা কুকুর না। ওকে কুকুর বলবি না।ওর নাম পাপ্পি।
তারিনঃ কুকুরকে কুকুর বলবো না তো কি বলবো?আর তুই জানলি কি করে ওর নাম পাপ্পি?
উষাঃ আমিই তো মাত্র ওর নাম পাপ্পি রাখলাম।
তারিনঃ ??।

উষা এখন ফল খাওয়া রেখে কুকুর ছানাটাকে আদর করতে লাগলো।সাথে যে তারিন আছে সেটা সে ভূলে গেছে।সৃজানের সাথে ঈশান ফাইটিং করছে। হঠাৎ সৃজান কিছু গার্ডকে তারিন ও উষাকে ইশারা করে ধরতে বললো।তারিন ও উষাকে চারজন গার্ড ঘেরা দিয়ে ধরে ফেললো।
উষাঃ আরে ছেমরারা করস কি?ছাড় আমাকে ছাড় বলছি।আমার পাপ্পি??।ঐ ছেমরা তোদের লজ্জা করে না।একটা মেয়েকে দুইজন ধরছিস।তোরা তো ব্যাটা ছেলে জাতির কলঙ্ক। ভাইয়ু বাঁচা আমাদের।আমি কিন্তু এখন কামড় দিবো।
তারিনঃ বলতাছিস কেন জোরে একটা বসিয়ে দে।

উষা ও তারিন গার্ডদের হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দিলো।এটা ওদের কাছে নতুন কিছু নয়।এরকম দুষ্টামী ওরা অনেক করছে।অবশ্য কেউ ওদের ধরতে পারতো না।একজন গার্ডের হাত আলগা হতেই আরেকজনেকে ধাক্কা মেরে তারিন সামনে পরে থাকা ছোট রডের টুকরো থেকে একটা নিজে নিয়ে আরেকটা উষার হাতে তুলে দিলো। ইচ্ছে মতো চারটাকে দুজন সাইজ করতে লেগে গেলো।
তারিনঃ বালাতি ইন্দুরের বাচ্চার চামচারা।কি ভাবছিস তোদের সাথে আমরা পারবো না।তবে রে ব্যাটারা এবার তোদের বুঝিয়ে দিবো আমরা কি?
উষাঃ তারু আমার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। তুই বরংচ চারটাকে সাইজ কর আমি আমার পাপ্পিটাকে দেখি।
তারিনঃ চুপচাপ আমার সাথে ওদেরকে ধোলাই দে।নইলে এই ডান্ডার বারি তোর ওপর পরবে।?
উষাঃ আচ্ছা ??।

???

সবাই ফাইট করতে করতে ক্লান্ত। প্রত্যকের অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে। শরীর, মুখ, নানা জায়গা থেকে রক্ত পরছে। হয়রান হয়ে অরূপ পা মেলে বসে পরছে।ঈশানকে একটা গার্ড মারতে আসলে তাকে থামিয়ে দিলো।
ঈশানঃ আরে ভাই একটু থাম।তোরাও জিরিয়ে নে আমরাও জিরিয়ে নেই। দুই পক্ষ হাঁপিয়ে গেছি।এখন একটু রেস্ট নেই তারপর আবার শুরু করবো।

এমনভাবে বললো মনে হলো ওরা এখানে বক্সিং খেলতে এসেছে।এখন আর পারছে না তাই খেলা স্টপ রাখবে।আশ্চর্যের বিষয় গার্ডটাও ওর কথা শুনে ধপ করে বসে জিরাতে লাগলো।

উষাঃ সুজিনা বাবু কেমন লাগলো মারগুলো।আমার ভাইয়ারা নিশ্চয়ই অনেক আদর করেছে তোমায়।তোমার ভাই কি কাপুরষ? দেখো দেখি।একটা গুলি খেয়ে দুই ঘন্টা ধরে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।এখন যদি ওর হুশ থাকতো তাহলে সিয়ানও তো কিছু ডোজ মার খেতে পারতো। তা নয় সামান্য একটা গুলি খেয়ে চিৎপটাং হয়ে পরে আছে।আর আমাকে দেখো তিন তিন বার মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরে আরাম করে সেই তোমার সামনে বসে আছি। আচ্ছা তুমি যে আমার এক্সিডেন্টে আগের দিন দেশে আসছিলা তোমার মনে আছে।আমাকে কফি হাউসে দেখা করতে বললা।কার সাথে যেনো মিট করে দিবে আমার সাথে। এমনটাই তো বলেছিলে।
সৃজানঃ তুমি এতকিছু মনে রাখলে কি করে? তোমার তো স্মৃতি শক্তি চলে গেছে।
উষাঃ দেখো দেখি ভাইয়ুরা বোকা ছেলে কি বলে?
সৃজানঃ উষা তোমার স্মৃতি শক্তি ফিরে এসেছে?
অর্ণবঃ ভাইরা আমার কেউ ওর কনফিউশান দূর কর?বেচারা বোধহয় বি পি লো হয়ে যাচ্ছে।
উষাঃ আমি দূর করছি ভাইয়া।যেহেতু খেলাটা আমাকে দিয়ে শুরু হয়েছে। শেষটা তো আমায় করতে হয়।আরে সৃজান আহমেদ আমার তো স্মৃতি শক্তি যাই নি আসবে কোথা থেকে?
তারিনঃ কি-ই-ই-ই??? তোর স্মৃতি শক্তি হারায় নি।এতোদিন তুই ড্রামা করছিস?
উষাঃ হুম তারু বেবি। আমি এতদিন নাটক করছি।আমি তো মাথায় ব্যাথাই পাই নি স্মৃতি শক্তি হারাবে কি করে?তবে সত্যি আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল। যখন ট্রাক পেছন থেকে আমার গাড়িকে ধাক্কা মারছে তখন সাথে সাথে আমি গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।তাই হাত পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম।অবস্থা এতটা খারাপ ছিলো না যে আমি মরে যাবো।
আদিলঃ তুই কি ভেবেছিস তোরা একের পর এক প্ল্যান করে যাবি আর আমরা কিছু টের পাবো না।প্রত্যকটা প্ল্যান ছিলো মাসফির।মাসফি আমাদের বোনুর ক্ষতি করতে চেয়েছিলো।কিন্তু তোরা সেটা ওর আগে বাস্তবায়ন করে ফেলেছিস।আর সব দোষ পরেছে মাসফির ঘাড়ে।
অর্ণবঃ একটা মানুষ তিন তিন বার কি করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারে? নিশ্চয়ই তোর মনে এই প্রশ্নটা ঘুরছে।তাহলে সেটাও বলছি।তোরা যেমন মাসফির প্ল্যানে কাজ সম্পন্ন করেছিস।তেমনি আমরাও তোদের ওপর দিয়ে প্ল্যান করে আমার বোনুকে বাঁচিয়ে নিয়েছি।

উষাঃ এবার আমি ধামাকা গুলো বলি মিঃ সৃজান আহমেদ। ১.তোরা এক্সিডেন্ট ঠিকই করেছিলি কিন্তু আমার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।তাই ভাইয়ুরা তোদের ধরতে আমাকে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে যাওয়ার অভিনয় করতে বলে।২.হসপিটালে আরান শিকদারের বন্ধুর মাধ্যমে তোরা যখন আমাকে মারতে পাঠালি তখন আমার অবস্থা সত্যিই কিছুটা খারাপ ছিলো।তাই বলে এতোটা খারাপ নয় যে মারা যাবো। তারপরও ভাইয়ুরা নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করছিলো।ভাইয়ুদের সন্দেহ হয় যে আমাকে এক্সিডেন্ট করিয়েছে সে নিশ্চয়ই আবার আমাকে মারতে আসবে।সত্যি তাই হলো।তোরা রুমান ভাইকে পাঠালি।উনি আমার অক্সিজেন মাস্ক খুলে চলে গেল।আমি তো স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। আমার তাতে কোন সমস্যা হয়নি।এখানে দুইটা প্রশ্ন আছে। ১ম প্রশ্ন আমি কেন তখন নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না এমন অভিনয় করলাম।এবং ২য় প্রশ্ন আমি সুস্থ থাকা অবস্থাও মুখে অক্সিজেন মাস্ক কেন লাগিয়ে ছিলো ডাক্তার। ১ম প্রশ্নের উত্তর, আমরা জানতাম তোরা আই সি ইউ এর ভেতরে সি.সি টিভি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলি।তাই আমাকে তখন সেরকম অভিনয় করতে হয়েছে।যাতে তোদের সন্দেহ না থাকে আমি অনেক গুরুতর অসুস্থ। ২য় প্রশ্নের উত্তর, ভাইয়ুরা তোদের ১মেই সন্দেহ করেছিলো।তাই সিউর হওয়ার জন্য আমার অবস্থা অনেক খারাপ বলে চারিদিকে খবর ছরিয়ে দিলো।যাতে তোরা ফিরতি আবার আমাকে মারতে আসিস।আর ভাইয়ুরা তোদের চিনতে পারে।তোরাও টোপটা গিলে নিলি।রাতেই মারতে লোক পাঠিয়ে দিলি।ভাইয়ুরা খবর নিয়ে তোদের কথা জেনে গিয়েছিলো।

সৃজানঃ কিন্তু তোমায় যে রোহান ও নিলয় বালিশ চাপা দিয়েছিলো সেটার কি হলো?
উষাঃ আমি আর বলতে পারবো না।এবার তোমরা কেউ বলো।
ইশাতঃ এবার তাহলে আমি বলি।রোহান ও নিলয় কে মাসফি পাঠিয়ে ছিলো।তাদের কে তোরা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিস।সেবারও চেয়েছিস মাসফির প্ল্যান তোরা নিজেদের কাজ হাসিল করবি।যাতে করে পরবর্তীতে ধরা পরে গেলোও মাসফির ওপর সব দোষ দিয়ে তোরা বেঁচে যাবি।সবচেয়ে বড় কথা রোহান ও নিলয় আমাদের লোক। তাদেরকে আমরাই পাঠিয়েছিলাম তোদের কাছে।আসল রোহান, নিলয়কে আটকে রেখে আমাদের লোককে নকল রোহান, নিলয় সাজিয়ে প্রথমে মাসফির দলে তারপর তোদের দলে পাঠিয়েছি।তোরাও ওদের ওপর কাজ দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলি।
অর্ণবঃ অনেক দিন ধরে ব্যংককে যাওয়ার নিয়ত করছিলাম।কিন্তু তা আর হয়ে উঠছে না।আমরা জানলাম তোরা ব্যংককে আছিস।আমার বিজনেসর কিছু কাজ ছিলো।আদিলের দরকার ছিলো তোদের বিরুদ্ধে প্রমাণ। তোরা সেই সুযোগ করে দিলি।বোনুর কিছু দিন রেস্টের প্রয়োজন ছিলো।তাই সাত পাঁচ না ভেবে সবাই পাড়ি দিলাম ব্যংককে।তোরা জানলি আমাদের বোনু মারা গেছে।
ঈশানঃ অরূপকে পাঠালাম তোদের দলে।আমাদের জানার দরকার ছিলো অনেক তথ্য।তোরা অরূপকে নিজেদের সাথে দেখে এতটাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরেছিলি যে আসলে ওর ব্যাপারে কোন খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলি না।এতো আমাদের কাজটা আরো সহজ হতে শুরু করলো।অরূপ তোদের যে মাস্টার মাইন্ড তার বিশস্ত হতে লাগলো। পাশাপাশি আমাদেরকে তোদের সব আপডেট দিতে লাগলো।তোদের একটু ধারণা থাকা উচিত ছিলো।যে অরূপকে মাসফি শিকদারের লোক হাজার চেষ্টা করে কিনতে পারেনি। বরং তাদের লোককে মেরে গুম করে দিয়েছে।সেই অরূপ নিজ থেকে তোদের কাছে ধরা দিলো।অরূপ আমাদের আরেক ভাই।ওর পুরো নাম কি তোরা জানিস না।অরূপ মির্জা ওর পুরো নাম।মির্জাদের রক্তে বৈঈমানী নামক কোন শব্দ নেই। মির্জারা কখনও কারো সাথে বৈঈমানী করেও না।নিজেদের সাথে করতে দেয়ও না।
সৃজানঃ আমাদের এতগুলো টাকা দিয়ে তোকে কিনে নিয়েছি আর তুই।
অরূপঃ নিকুচি করি তোর টাকার।আমি ঐ টাকার একটা নোটেও হাত লাগাইনি।গুছিয়ে টাকাগুলো নিয়ে শহরের ৫ টা এতিমখানায় দিয়ে এসেছি। হারামজাদা,আমার টাকার কি অভাব পরেছে।বড় ভাইয়া আমার নামে কতবড় একটা বাড়ি কিনে দিয়েছে সেটা তুই জানিস?আমাকে ভাইয়া বাড়ি,গাড়ি সব দিয়েছে।সবকিছু নিয়ে চলে যেতে বলছে।তারপরও আমি তাদের ভালবেসে তাদের সাথেই আছি। একমাত্র মৃত্যু ছারা আমি তাদের কে ছারবো না।নিজের সবটুকু দিয়ে জীবনের শেষ মূহুর্ত অব্দি তাদের সাথে কাটাবো।আমার নিঃশ্বাস চলাকালীন কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আমি ক্ষতি করতে দিবো না।নিজের জীবন বাজি রেখেও আমার ভাই ও বোনুর জীবন রক্ষা করবো।
আদিলঃ সৃজান তোরা কি ভেবেছিস তোদের কথা মতো সব হয়েছে। তোদের প্ল্যান মোতাবেক সবকিছু সাকসেসফুল হয়েছে। একদম না।তোরা যেভাবে নাচিয়েছিস আমরা সেভাবে নেচেছি।না রে বোকা।আমরা তোদের খেলার পুতুল ছিলাম না।বরং তোদের ওপর দিয়ে আমরা প্ল্যান করে নিয়েছি।মূল খেলার প্ল্যানার ছিলাম আমরা ৫ ভাই। আমরা তোদের খেলনা পুতুল বানিয়েছিলাম।আমাদের প্রত্যকটা জালে তোরা ধরা দিয়েছিস।আমরা শুধু আজকের দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।
অর্ণবঃ অরূপ তোকে না বলেছিলাম ওদের সব গার্ডদের কিনে নিতে।তুই তা করিস নি কেন?গার্ডগুলো কে কিনে নিলে কি এতো কষ্ট করে ফাইটিং করতে হতো?
অরূপঃ বড় ভাইয়া ওরা বৈঈমান।কিন্তু ওদের গার্ডগুলো বৈঈমান না।তাই তো এতগুলো টাকার লোভ দেখিয়েও ওদেরকে কিনতে পারিনি।মেজো ভাইয়া তোমার এই বিশ্বাসঘাতক বন্ধুকে কি শাস্তি দিবে?
আদিলঃ ওর শাস্তি আমি দিবে না।যে ভাইয়ের আদরের বোন কেড়ে নিয়েছে সে দেবে ওর শাস্তি।
উষাঃ ভাইয়ুরা তারাতাড়ি বাসায় চলো। আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে।
তারিনঃ আল্লাহ তোর পেটে কি রাক্ষস ঢুকছে উষানি?পুরো ফলের ঝুড়ি খালি করে ফেলছিস।এতগুলো ফল খেয়েও তোর ক্ষুধা লেগে গেছে।
উষাঃ একদম চুপ করে থাক। বেশি কথা বললে তোর ইশাত কিন্তু তোর থেকে মাইনাস করে দিবো।
তারিনঃ না উষানি বেবি। আমি চুপ হয়ে গেলাম।
ইশাতঃ সৃজান আহমেদ আশা করি আপনি আমাদের কথা এবং সব প্ল্যান বুঝতে পেরেছেন।
ঈশানঃ কিন্তু ভাইয়া সবকিছুর মাস্টার প্ল্যানার কে?
আদিলঃ সৃজান তুই যদি বাঁচতে চাস তাহলে এসব কিছুর মূলে কে আছে তা বলে দে?
সৃজানঃ মরে যাবো তাও বলবো না।

—-তহলে তো তোকে মেরেই ফেলতে হয়।

কারো গলার স্বর পেয়ে সবাই সামনে তাকালো। তারিন উল্টো দিকে সোফায় বসে আছে।উষা সোফা ছেরে একটা চেয়ারে বসে আছে।ওর বাদামি কুকুর ছানা কোলে নিয়ে অসহায় ফেস করে সামনে তাকালো।ঈশান ওর বোনের পেছনে এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাত চেয়ারে রাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আদিল এক হাতে বোনের চেয়ার ধরে সামনে তাকালো।আদিলের পাশে ইশাত।ইশাত ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে রেখেছে। বাম হাত উঁচু করা।ওর দৃষ্টিও সামনের দিকে। ঈশানের পাশে অর্ণব দুই হাত গুঁজে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চার ভাইয়ের মাঝখান দিয়ে অরূপ উঁকি দিয়ে সামনে থাকা ব্যাক্তিটার দিকে তাকালো।সবার চোখ সামনের দিকে স্থির হয়ে আছে।সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে দেখে তো সবাই অবাক।

#চলবে

সবার অরূপের প্রতি কনফিডেন্স দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।তাই বেচারাকে খারাপ বানালাম না।আমি আশা করি সকল রহস্য খুলে গেছে।শুধু মেইন ভিলেন ছারা।আজকে সবাই তারাতাড়ি দিতে বলেছেন তাই দিয়ে দিলাম।তবে কেউ দয়া করে বোনাস পার্ট চাইবেন না।আজকে আমাকে আবার #অশ্রু_বিন্দু গল্পটা দিতে হবে।

#Part_19
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2955503101345089/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here