বোনু Part_15

0
664

বোনু
Part_15
#Writer_NOVA

আদিল গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজার অপর পাশের ব্যাক্তিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কখনি ভাবেনি তার সাথে দেখা হবে।এতো বছর পর প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা।

আদিলঃ কেমন আছিস দোস্ত?

অপর পাশের ব্যাক্তিটা আদিল কে জরিয়ে ধরলো।দরজার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আদিলের কলেজ জীবনের বন্ধু সৃজান ও তার ভাই সিয়ান।সৃজানে আদিলের সমবয়সী। কানাডায় নিজস্ব বিজনেস আছে।সেখানেই থাকে।গায়ের রং শ্যাম বর্ণের।উচ্চতা ৬ ফুট।সিয়ানের বয়স ২৪। ভাইয়ের মতো উঁচা, লম্বা।তবে গায়ের রং চাপা ফর্সা।ভাইয়ের সাথে কানাডা থাকে।একটা কনট্যাক্ট ডিল করতে দেশে এসেছে।

সৃজানঃ আমাদের খবর কে রাখে? গরিবের খবর কি কেউ নেয় নাকি?
আদিলঃ কোথায় ছিলি এতদিন? তোকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি তোর ধারণা আছে।
সৃজানঃ কত খুঁজেছিস তার নমুনা তো দেখলামই।আড়াই বছর যাবৎ তোর সাথে কোন দেখা, কথা হয় না। তোর কোন খোঁজ-খবর নেই। কত কষ্ট করে সেই সুদূর কানাডা থেকে তোর খোঁজ নিয়ে এখানে এসেছি।
আদিলঃ এটা কে?
সৃজানঃ আমার ভাই সিয়ান।তুই সিয়ান কে চিনতে পারছিস না।
সিয়ানঃ আসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন?
আদিলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কবে এসেছিস কানাডা থেকে?
সৃজানঃ সকালের ফ্লাইটে এসেছি।
অর্ণবঃ আদি কে এসেছে রে?

অর্ণব এগিয়ে এসে কথাটা বললো।সৃজান কে দেখে অবাক হয়ে গেলো। এত বছর পর সৃজান হঠাৎ এখানে এলো।

সৃজানঃ আসালামু আলাইকুম ভাইয়া।কেমন আছেন?
অর্ণবঃ আমি কিছু ভূল দেখছি না তো।আকাশের চাঁদ আজ আমাদের বাড়িতে পা রেখেছে।
সিয়ানঃ কেমন আছেন ভাইয়া?
অর্ণবঃ আরে সিয়ান। কত বড় হয়ে গেছো দেখছি? সেই কতটুকু দেখেছিলাম।কেমন আছো?
সিয়ানঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আদিলঃ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে আসবি।
সৃজানঃ কেন ভিতরে আসতে দিবি না? বাইরের থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস।
আদিলঃ আমি কি সেই কথা বলেছি। আগের মতো রয়েছিস। বদলালি না।

হাসতে হাসতে সৃজান,সিয়ান ভেতরে ঢুকলো। সোফায় বসে ইশাত,ঈশান,উষা বোঝার চেষ্টা করছে কে এসেছে?
ইশাতঃ এটা সৃজান ভাইয়া মনে হচ্ছে।
ঈশানঃ আমারও তো তাই মনে হয়।এত বছর পর আমাদের বাড়িতে। শুনেছিলাম ভাইয়ার সাথে কি জানি একটা ভেজাল হয়েছিলো তারপর কানাডা চলে গিয়েছিল।
ইশাতঃ S. A গ্রুপ অব কোম্পানির ওনার সৃজান ভাই। কানাডায় নাকি ভালো পজিশনে আছে।সাথে কি তার ভাই সিয়ান নাকি।
ঈশানঃ হুম। ভাইয়ের সাথে কানাডায় থাকে।শুনেছি দুই ভাই একসাথে বিজনেস সামলায়।
উষাঃ ভাইয়ু এগুলো কে রে?
ঈশানঃ মেজো ভাইয়ার বন্ধু ও তার ভাই।

আদিল ওদের ভেতরে নিয়ে এসে ভাই-বোনদের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছে।উষা কেন জানি মনে হচ্ছে এদের খুব চেনা।আবছা আবছা চেহারা ওর চোখে ভেসে উঠছে।কয়েক মাস আগেও ওদের দুজনকে কোথাও দেখেছে। আদোও কি ওদের কোথাও দেখেছে? নাকি মনের ভূল।

???

জিবরানের হাতে কত কাজ আগামীকালের পার্টির জন্য। কতখন ল্যাপটপে কাজ করছে কতখন মোবাইলে কথা বলছে।কোনটা ছেড়ে কোনটা করবে?বেচারার এখন নাজেহাল অবস্থা। মোবাইলে পার্টির ডেকারশন নিয়ে কথা বলছে।

জিবরানঃ আমার সবকিছুতে কমপ্লিট করা চাই। টাকার চিন্তা আপনাদের না করলেও চলবে।আমি আপনাদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিবো।সাথে ক্যাশও দিয়ে দিবো।তবে কাজ আমার সঠিক হওয়া চাই। কোন ভূল-ত্রুটি আমি বরদাস্ত করবো না।চারিদিকে কড়া বডিগার্ডের পাহারাও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।সব জায়গায় সি.সি টিভি ফুটেজ থাকা চাই। আর শুনুন আমি এখন যা বলবো তা মনোযোগ সহকারে শুনবেন।এক ফোঁটাও যাতে আমাদের প্ল্যান ব্যাঘাত না ঘটে।যা বলতে চাইছিলাম…………মনে থাকে যেনো। কোন এদিক সেদিক হলে আপনাদের বিজনেস আমি ধূলোয় মিশিয়ে দিবো।সো বি কেয়ার ফুল।

জিনিয়া খাবার নিয়ে ভাইয়ের রুমে ঢুকলো। এক দন্ডও হাঁফ ছাড়েনি জিবরান।অফিস থেকে ফিরে না খেয়ে আবার পার্টির ডেকারশনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।জিবরান অনেক এক্সাইটেড পার্টিটা নিয়ে। এক্সাইটেড হবে না কেন? আগামীকাল যে সে উষাকে সবার সামনে প্রপোজ করবে।জিনিয়া ভাইয়ের কাজে মিটমিট করে হাসছে।

জিনিয়াঃকতটা ভালবাসলে এরকম পাগলামি করতে পারে মানুষ?অর্ণবও এক সময় আমার জন্য এমন করতো। আমার তো পোড়া কপাল।ভালবাসার মানুষটাকে পেয়েও হারিয়েছে। অবশ্য পুরো দোষটা আমারি।তখন অর্ণব একটা বাজে পরিস্থিতিতে ছিলো। আর আমি স্বার্থপরের মতো নিজের কথা চিন্তা করে ওর হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলাম।আমার বিদেশে পড়াশোনা করার ভূতটা এমনভাবে জেঁকে বসেছিলো যে আমি ওর পরিস্থিতির কথা একটুও ভাবি নি।অথচ অর্ণব নিজে আমার বিদেশে পড়াশোনা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো।সত্যি আমি অনেক বড় স্বার্থপর।আমার মতো মেয়েকে অর্ণব এখন পাত্তা না দিয়ে ভালোই করছে।আমি কতটা নিচে নেমে গিয়েছিলাম তখন।ওর বোনের সাথে হিংসা করেছি।এই কথাও বলেছি অর্ণব তুমি হয় আমায় বেছে নিবে নয়তো তোমার বোনকে।অর্ণব তুমি সত্যিই আদর্শ ভাই হতে পেরেছো।তাইতো সেদিন প্রায় ৪ বছরের ভালবাসা কে গলা টিপে দিয়ে নিজের বোনকে আপন করে নিয়েছো।সত্যি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না।কখনও ক্ষমা করো না আমায় অর্ণব।

জিবরানের ডাকে হুশ ফিরে এলো জিনিয়ার।এতখন কত কিছু ভেবছিলো।সত্যি আমাদের জীবনটা কিরকম ঘোরানো প্যাঁচানো।

জিবরানঃ কি রে আপু কি ভাবছিস?নিশ্চয়ই অর্ণব ভাইয়ার কথা।
জিনিয়াঃ কিছু না।এই নে তোর রাতের খাবার। সারাদিন পেটে মনে হয় না একটা দানা পরেছে।এতো কাজ কাজ করিস কেন? নিজের দিকে একটু খেয়াল দে।বাবা মারা যাওয়ার পর সেই কতটুকু বয়স থেকে বিজনেস সামলাচ্ছিস।
জিবরানঃ মাম্মি কি ঘুমিয়ে পরেছে?
জিনিয়াঃ মাম্মিকে জোর করে খাবার খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছি।সে তো তুই না ফিরলে খাবার খাবে না বলে জেদ ধরে বসে ছিলো। অনেক কষ্ট করে তাকে সামলিয়েছি।তুই এবার খেয়ে নে তো।
জিবরানঃ কথা ঘুরালি কেন? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম?
জিনিয়াঃ বাদ দে তো এসব।জলদী করে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।কালকে তো কত কাজ করতে হবে।
জিবরানঃ তুই অর্ণব ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।আমার বিশ্বাস সে তোকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবে।
জিনিয়াঃ আমি যা করেছি তা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নয় রে ভাই।
জিবরানঃ তারপরও তুই চেষ্টা করে দেখতে পারিস।আমার বিশ্বাস সব ভূলে ভাইয়া তোকে আপন করে নিবে।তুই তো জানিস সে কেমন?
জিনিয়াঃ ছাড় তো ওসাব কথা।
জিবরানঃ কেন ছাড়বো? এখন আমার কত কাজ জানিস? তোকে অর্ণব ভাইয়ার হাতে তুলে দেওয়া মাম্মির জন্য তার মিষ্টি বউমা উষাকে ঘরে তোলা। তোকে বিদায় না করে তো ওকে ঘরে তুলতে পারি না। লোকে নানা কথা শুনাবে।
জিনিয়াঃ তবে রে পাঁজি। এই জন্য তোর আমাকে পাঠানোর এতো চিন্তা।
জিবরানঃ হুম ?। বউ ছারা আর একা থাকতে ভালো লাগে না।
জিনিয়াঃ ফাজিল কোথাকার?দাঁড়া তুই। তোর দুই কান মুলে ছিঁড়ে দিবো এখন।নিজের জন্য আমাকে পাঠানোর চিন্তা।

জিবরানের পেছন পেছন জিনিয়া পুরো রুমে চক্কর দিলো।এক সময় জিবরানকে ধরেও ফেললো।এক কান টেনে ধরলো জিনিয়া।
জিবরানঃ আপু ছাড় লাগছে তো।
জিনিয়াঃ একদম কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবো বজ্জাত।
জিবরানঃ এই মাসুম, ভোলি ভালি বাচ্চাটার সাথে এমন করতে পারিস না।সারাদিন পেটে দুইটা স্যান্ডওইচ ছাড়া কিছু পরে নি।তুই যদি এখন মারিস তাহলে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো।
জিনিয়াঃ আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
জিবরানঃ তুই খাইয়ে দিবি।তাহলে তো আমার নির্ঘাত পেট খারাপ হয়ে যাবে।আগে ভালো করে হাত ধুয়ে আসবি।তারপর খাবারে হাত দিবি।
জিনিয়াঃ কি বললি তুই? (জোরে কান টেনে)
জিবরানঃ ছাড় আপু লাগছে তো।তুই আমাকে এভাবে মারলে আমার বউ বিয়ের আগে বিধবা হয়ে যাবে।
জিনিয়াঃ ফাজিল।(মুচকি হেসে)

জিনিয়া কান ছেড়ে দিয়ে ভাইকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।শত হোক ওর ছোট ভাই তো।

???

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে। ইশাত ও ঈশানের মাঝখানে উষা বসেছে।উষার বরাবরি সিয়ান।আদিল,সৃজান,অর্ণব একসাথে বসেছে।ঈশানের কোণাকুণি নুহা বসেছে।অরূপ এখনো কাজের থেকে ফিরেনি।

ঈশানঃ বোনু দেখ ঐটা কি?
উষাঃ কি ঐ খানে?

উষা অন্য দিকে তাকাতেই ওর প্লেট থেকে ডিম নিয়ে মুখে পুরে দিলো ঈশান।উষা মুখ ঘুরিয়ে প্লেটের দিকে তাকাতেই দেখে প্লেটে ডিম নেই।
উষাঃ ছোট ভাইয়ু আমার ডিম কোথায়?
ঈশানঃ তোর ডিম মানে।তুই ডিম পারিস নাকি? আগে জানতাম না তো।কোথায় পেরেছিস ডিম?
উষাঃ ভালো হবে না কিন্তু। তুই শুধু শুধু আমার সাথে এমন করছিস।শয়তান,বিড়াল,হনুমান,বাঁদর।

উষা খাবার রেখে দুম দুম করে ঈশানের পিঠে মারতে লাগলো।অন্য দিকে ইশাত ওর বোনের প্লেট থেকে আস্তে করে সব গোশতের টুকরো নিজের প্লেটে চালান করে দিলো।বেচারি উষা তো মারামারি করতে ব্যস্ত।উষা ঈশানকে এতো মারছে তারপরও ঈশান ওর বোনের গায়ে একটা টোকাও দেয় নি।চুপচাপ খাবার ও মার খাচ্ছে। আর মিটমিট হাসছে।ঈশানকে ইচ্ছে মতো মেরে প্লেটে হাত দিতেই অবাক।
উষাঃ এ মা গোশতের টুকরো গেলো কোথায়? এটা নিশ্চয়ই সেজু ভাইয়ু তোমার কাজ?
ইশাতঃ বাটিতে কি গোশতের আকাল পরেছে যে তোরটা নিতে যাবো।(অবাক হওয়ার ভান করে)
উষাঃ তোরা কি আমায় শান্তি মতো খেতে দিবি?
ইশাতঃ আমি কিছু করিনি।
উষাঃ খাদকগুলো,পেটুক কোথাকার? আমার প্লেটে শুধু হামলা করে।দেখিস তোদের দুটোর পেট খারাপ হবে।আমি দোয়া করে দিলাম।
ইশাতঃ তুই গোশত না নিয়েই আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিস।বাটি থেকে নিয়ে নে।এতো কান্নাকাটি করে চোখের পানি শেষ করার কোন মানে হয় না।
উষাঃ তুমি মিটমিট করে হাসছো।তার মানে তুমি নিয়েছো।জলদী ফেরত দেও।
ইশাতঃ যা ভাগ এখান থেকে।
উষাঃ বড় ভাইয়ু,মেজো ভাইয়ু এই শয়তান দুটোকে কিছু বলবে?
অর্ণবঃ ইশাত,শান কি শুরু করেছিস?
আদিলঃ বোনুকে জ্বালাতন করিস না।
ঈশানঃ আমরা কিছু করি নি।ওর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।
ইশাতঃ পাগল হয়ে গেছে বোনু।
উষাঃ তোদের দুটোকে আমি কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেলবো। একটু লবণও নিবো না।শয়তান দুইটা।

ইশাত ও ঈশান মিটমিট করে শয়তানি হাসি দিতে লাগলো।বেশ রাগানো হয়েছে ওর বোনুকে।উষা রাগে বিরবির করতে করতে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।সৃজান ও সিয়ান অবাক হয়ে ওদের ভাই-বোনের খুনসুটি, ঝগড়াগুলো দেখলো।নুহা মুচকি হেসে খাবার খেতে লাগলো।এটা এখন ওদের নিত্যদিনের রুটিনে দাঁড়িয়েছে।

???

কিছু সময় পর উষার মনে হলো কেউ ওর পায়ে পা দিয়ে স্লাইড করছে।এটা তো ওর ভাইরা জীবনেও করবে না।সামনে তাকাতে দেখলো সিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।উষার বুঝতে বাকি রইলো না কার কাজ এটা।কয়েকবার চোখ লাল করে সিয়ানের দিকে তাকালো।তাতে কাজ হলো না।বরং সিয়ান দাঁত বের করে হেসে আবারো সেম কাজ করতে লাগলো।উষা এখন পারছে না সহ্য করতে আবার পারছে না কিছু বলতে।বেশ কয়েক বার অসহায়ের মতো করে ইশাত ও ঈশানের দিকে তাকালো।কিন্তু তারা আপনমনে খাবার খাচ্ছে।কেউ বোনের দিকে ভ্রুক্ষেপও করছে না।এদিকে সিয়ান পায়ে স্লাইড করেই যাচ্ছে।উষার এখন প্রচুর রাগ উঠছে ওর দুই ভাইয়ের উপর। ভাইদের এমন হেয়ালিপানা সহ্য হচ্ছে না উষার।তাই রেগে খাবার ছেড়ে উঠে যেতে নিলে ঈশান ও ইশাত দুইজন বোনের দুই হাত ধরে ফেললো।

ঈশানঃ কোথায় যাচ্ছিস বোনু?
উষাঃ আমার ভালো লাগছে না ভাইয়ু।আমাকে ছাড়, আমি আমার রুমে যাবো।
ইশাতঃ খাবার খেয়ে তারপর যাবি।
উষাঃ আমার ভালো লাগছে না।ছাড়ো আমায়।
(মুখ গোমড়া করে)
সিয়ানঃ এনি প্রবলেম উষা।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আদিলঃ কি হয়েছে বোনু?
অর্ণবঃ বোনু কোন সমস্যা হয়েছে?
উষাঃ কিছু হয় নি ভাইয়ুরা।তোমরা খাবার খাও।
ঈশানঃ বস তুই।
উষাঃ আমি…
ঈশানঃ আমি তোকে বসতে বলেছি।এক কথা দুই বার যাতে বলতে না হয়।(রেগে কড়া গলায়)
ইশাতঃ আমরা খাইয়ে দিচ্ছি।
উষাঃ আমি খাবো না।
ঈশানঃ ঠাটিয়ে চড় মারবো।খেতে বস।(রেগে)

উষা মন খারাপ করে বসে পরলো।ইশাত ও ঈশান ওকে খাইয়ে দিতে লাগলো।উষার চোখ দুটো ছলছল করছে।মনে হচ্ছে এখনি পানি পরে যাবে।উষা মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছে নিলো।সিয়ান টেবিলের নিচ দিয়ে পা দিতে নিলেই ওর পায়ে জোরে ইশাত লাথি মারলো।
সিয়ানঃ আউচ্।
সৃজানঃ কি হয়েছে ভাই?
আদিলঃ সিয়ান ঠিক আছো।
ইশাতঃ কি হলো সিয়ান?(শয়তানি হাসি দিয়ে)
ঈশানঃ একটু বেশি জোরে লেগেছে নাকি।
(টেডি স্মাইল দিয়ে)
সিয়ানঃ কিছু হয় নি।চেয়ারের সাথে ব্যাথা পেয়েছি।

উষা খেয়াল করলো সিয়ান মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে। অবাক হয়ে টেবিলের নিচে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটলো।ইশাত ও ঈশান দুজন দুই পা দিয়ে উষার পা আটকে রেখেছে। তাই সিয়ান পা দিতে নিলে ইশাতের পায়ে লেগেছে আর ইশাতও একটা ফুটবলের কিক মেরেছে।উষা এবার খুশি মনে ভাইদের হাতে খাবার খেতে লাগলো।

???

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই ইশাত ও ঈশান সিয়ানকে বললো।

ইশাতঃ সিয়ান এদিকে এসো।
সিয়ানঃ জ্বি বলুন।
ঈশানঃ তোমাকে আমরা একটা জিনিস দেখাবো।
চলো তো আমাদের সাথে।
সিয়ানঃ ভাইয়া বকবে।
ইশাতঃ তোমার ভাইয়া কিছু বলবে না।
সিয়ান ওদের সাথে যেতে চাই ছিলো না।ইশাত ও ঈশান জোর করে দুই ভাই মিলে ওর গলা ধরে উপরের রুমে নিয়ে গেলো।সৃজান,অর্ণব ও আদিলের সাথে কথা বলছে তাই ওদের খেয়াল করলো না।

কিছু সময় পর….

উপরের থেকে সিয়ান,ইশাত ও ঈশান ঠিক যেভাবে গলাগলি করে উপরে উঠেছিলো ঠিক তেমনি হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো। সিয়ানের মুখের একপাশে লাল দাগ হয়ে আছে।ঠোঁটের কোণা কেটে রক্ত পরছে।ভালো মতো হাঁটতেও পারছে না।

সৃজানঃ কি হয়েছে সিয়ান?তুই এরকম করে হাটঁছিস কেন?পায়ে কি হয়েছে?
সিয়ানঃ কিছু না ভাইয়া।ঐ যে তখন চেয়ারের সাথে ব্যাথা পেলাম। তাই হাঁটতে পারছি না।
ইশাতঃ বেশি না একটু ব্যাথা পেয়েছে। এভাবেই ভালো হয়ে যাবে।
অর্ণবঃ মুখে কি হয়েছে সিয়ান?
সিয়ানঃ কিছু না।ভাইয়া বাসায় যাবে না।
সৃজানঃ হুম যাবো তো।
সিয়ানঃ চলো তাহলে।আমার জরুরি কাজ আছে।
ঈশানঃ উপরের রুমে যা হয়েছে তা কেউ যদি জানতে পারে তাহলে এর থেকে চৌদ্দ ডবল ডোজ বেশি পরবে।মনে রেখো কেমন?
(কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে)
ইশাতঃ বাই চান্স কেউ যদি জানে? তোমার পা আর পায়ের জায়গায় থাকবে না।পা দুটো কেটে প্যাকেটে মুরিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিবো।(আস্তে করে)
সিয়ানঃ আমি কাউকে কিছু বলবো না।(ভয়ে ভয়ে)
ঈশানঃ গুড বয়।
আদিলঃ কি ফুসুর ফুসুর করছিস?
ইশাতঃ কিছু না ভাইয়া।আমরা সিয়ান কে আবার আমাদের বাড়ি আসতে বলছি।
(সিয়ানের কানের সামনে গিয়ে) খবরদার যদি বেঁচে থাকতে ফের মির্জা বাড়ি পা দিয়েছিস সেদিন তোর শেষ দিন হবে।
ঈশানঃ তুই শুধু আমার ভাইয়ের বন্ধুর ভাই বলে জানে বেঁচে গেলি।নয়তো তোকে এখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলতাম।তোর কলিজা কত বড় তুই আমার বোনুর পায়ে স্লাইড করেছিস।এবার যাস্ট ট্রেইলার দেখালাম।পরেরবার সোজা এক্যশন দেখবি।
সৃজানঃ সিয়ান চল তাহলে।আসি ভাইয়া,আসি আদি।ভালো থাকিস আদি।ইশাত,ঈশান আমাদের বাড়ি ঘুরে এসো।এখন কতদিন দেশেই থাকবো।
ঈশানঃ আবার আসবেন।আমরাও যাবো।যদি দরকার পরে।(সিয়ানের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে)
সিয়ানঃ আমাকে মারার মজা তোদের আমি ঠিক বুঝিয়ে দিবো। তোরাও জানিস না কার গায়ে হাত তুলেছিস।তোদের যদি আমি শেষ না করতে পারি তাহলে আমার নামও সিয়ান নয়।আমি এর বদলা অবশ্যই নিবো।রেডি থাকিস তোরা।(মনে মনে)

সৃজান ও সিয়ান চলে গেল।ইশাত ও ঈশান একে অপরে গলা ধরে উপরে উঠতেই দেখলো উষা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওদের সামনে পথ আটকে তাকিয়ে আছে।
ইশাতঃ কি হয়েছে বোনু?
ঈশানঃ পথ আটকিয়েছিস কেন? সর ঘুমাবো।
উষাঃ কি করেছিস তোরা সিয়ানের সাথে?
ইশাতঃ বেশি কিছু করি নি।ঈশানের রুমে নিয়ে দরজা আটকে দুই ভাই মিলে ইচ্ছে মতো কতগুলো ঘুষি মেরেছি।তারপর ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পায়ে দুটো কষিয়ে বারি মেরেছি।ওর কলিজা কত বড়?আমাদের সামনে আমাদের বোনুর পায়ে স্লাইড করেছে।
ঈশানঃ ভাগ্য ভালো তাই পা দুটো ঠিক নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলো।তুই যদি তখন না ধরতে ওর পা আমি প্যারালাইজড করে ফেলতাম স্ট্যাম্প দিয়ে বারি মেরে।
উষাঃ একদম ঠিক করেছিস।এই না হলে আমার ভাইয়ু।আমার ভালো ভাইয়ুরা।
ঈশানঃ আর পাম দিতে হবে না।এমনি অনেক ফুলে গেছি।সর তো সামনে থেকে। আমি ঘুমাবো।

উষাকে সাইড করে দুই ভাই রুমের দিকে যেতে লাগলো।উষা খুশি মনে দৌড়ে পেছন থেকে দুই ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে

আমি যদি এই গল্পটা আর কয়েক পর্বে শেষ করে দেই, তাহলে আপনারা কি আমাকে বকবেন????

#Part_14
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2950365265192206/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here