বোনু
Part_14
#Writer_NOVA
নিউ ইয়র্ক……..
সূর্যটা পূর্ব দিগন্তে এক চিলতে হাসি দিয়ে উদয় হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক শহরের মানুষ তাদের কাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছে।একটা প্রবাদ আছে।
“Early to bed and early to rise
Makes a man healthy and wise”
এখানকার মানুষ বিখ্যাত সেই প্রবাদে বিশ্বাসী। তারা খুব শীঘ্র ঘুমিয়ে পড়ে।আবার খুব সকালে উঠে কাজে চলে যায়।এখানকার মানুষ অনেক পরিশ্রমী।আমরা উপরোক্ত প্রবাদটা কতটুকু মানি বলুন তো।আমরা বাঙালী শান্তশিষ্ট, আরামপ্রিয়, বিলাসী,অলস জাতি।এটা আমার কথা নয়।বাঙালির নারী জাতির অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কথা।আরাম নামক শব্দটা আমরা পেলে সবকিছু ভূলে যাই।
বারান্দার রেলিং এক হাতে ধরে আরেক হাতে কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাসফি।পূর্ব আকাশের সূর্যের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিলো সে।গভীর ভাবনায় মগ্ন। কত কাজ বাকি তার।শিকদার বংশের বড় ছেলে এবং মুসফিক শিকদারের একমাত্র ছেলে মাসফি শিকদার। আরানের চাচাতো ভাই।নিউ ইয়র্ক শহরে নিজস্ব বিজনেস আছে। দেখতে, শুনতে সব দিক থেকে মাশাল্লাহ।হাইট ৬ ফুটের কাছাকাছি। চোখের মণি দুটো একটু বেশি কালো।গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।বেশ ছিমছাম গঠনের। খুব গম্ভীর প্রকৃতির ছেলে মাসফি।হাসি নামক বস্তুটা অনেক আগেই তাকে ছেড়ে বিদায় নিয়েছে।যেদিন থেকে তার ছোট বোনটা আত্মহত্যা করেছে ঠিক সেদিন থেকে হাসি ভূলে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে।
বিশাল বড় দোতলা বাড়ি। মানুষ মাত্র ৫ জন।মাসফি,জিকু আর তিনজন সার্ভন্ট।বডিগার্ড রাখার প্রয়োজন মনে করে না মাসফি।কারণ সে ফাইটিং-এ একাই একশো।কেউ তার সাথে পারবে বলে মনে হয় না।কফির মগে চুমুক দিয়ে উষাকে মারার নতুন প্ল্যান তৈরি করতে ব্যস্ত মাসফি।তখনি পেছনে এসে দাঁড়ালো জিকু।
মাসফিঃ এনি ইনফরমেশন জিকু?
জিকুঃ ইয়েস বস।
মাসফিঃ টেল মি।
জিকুঃ আগামীকাল খান ইন্ড্রাস্টির ওনার মোঃ জিবরান খান তার ভালবাসার মানুষ আই মিন উষার সুস্থতার জন্য একটা বড় করে পার্টির আয়োজন করেছে।
মাসফিঃ আই সি।(কফির মগে চুমুক দিয়ে)
জিকুঃ এখন আমরা সেখানে কি করতে পারি যদি বলতেন?
মাসফিঃ নতুন কোন প্ল্যান করতে হবে।
জিকুঃ এই ব্যাপারে কি আমরা আরানের সাথে কথা বলবো।আমার মনে হয় আরান আমাদের সাহায্য করতে পারবে।
মাসফিঃ কিন্তু ও তো সবসময় ভেজালে ফেলে দেয়।ওর কাছে দুইবার কাজ দিয়ে ব্যর্থ হয়েছি।৩য় বার হারতে চাইছি না।গত ২ বছর আগের থেকে আমার বোনের আত্মহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি কুড়ে কুড়ে মরছি।কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি আমার বোনের জন্য কিছু করতে পারলাম না।
জিকুঃ যদি কিছু মনে না করেন বস, আমি একটা কথা বলি।আপনি পারমিশন দিলেই বলবো।
মাসফিঃ হুম বলো।
জিকুঃ আপনি কি শিউর আপনার বোন মির্জাদের জন্য আত্মহত্যা করেছে। এমনও তো হতে পারে আপনি যা জানেন বা শুনেছেন তা ভূল।আমার জানামতে মির্জারা কারো কোন ক্ষতি করে না।আর যদি কারো ক্ষতি করে তাহলে তার পেছনে অবশ্যই কারণ থাকে।মির্জা বংশের ছেলেরা কখনও ভালো মানুষের ক্ষতি কখনি করবে না।
জিকুর কথা শুনে মাসফি রেগে হাতের মগটাকে ফ্লোরে আছাড় মারলো। তারপর জিকুর শার্টের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
মাসফিঃ তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমার বোন খারাপ ছিলো।তাই ওরা আমার বোনকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জিকুঃ বস আমি কথাটা সেভাবে বলি নি।আপনি যেভাবে ভাবছেন।
মাসফিঃ তাহলে কিভাবে বলেছো?
জিকুঃ বস,অনেক সময় আমাদের দেখার মাঝেও ভূল থাকে।আমরা অন্যের থেকে যা শুনি তাও ১০০% সত্যি হয় না।কারণ আমরা প্রত্যকেই আলাদা আলাদাভাবে নিজস্ব ভঙ্গিমায়,নিজস্ব ভাষায় বর্ণনা করি।একটা কথা সত্যি থেকে মানুষের কাছে ঘুরতে ঘুরতে এমন পর্যায়ে যায় যেখানে সেই সত্যিটার কোন ছিটেফোঁটাও থাকে না।তাই বলে কি অন্যর কথা বিশ্বাস করবো না।না,ব্যাপারটা সেটা নয়।বরং কাউকে বিশ্বাস করার আগে যাচাই-বাছাই করে নিবেন।সত্যি কিন্তু একটাই থাকে।আর মিথ্যার ডালপালা অনেক বিস্তৃত। তবে মনে রাখবেন বস জয় কিন্তু সত্যরি হয়।
মাসফি জিকুর কথার মর্ম বুঝে ওর কলার ছেড়ে দিলো।চোখ দুটো ছোট ছোট ছোট করে, মুখে চিন্তার ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো।
মাসফিঃ তবে কি আমি যা জানি তা সত্যি নয়।আমার বোনের মৃত্যুর আগে করা ভিডিওটা কি মিথ্যে?
জিকুঃ বস,এমনও তো হতে পারে ম্যাম জীবিত থাকতে কেউ তাকে দিয়ে এরকম করে ভিডিও করে রেখেছিলো।আচ্ছা বস,যে আপনাকে এই ভিডিওটা পাঠিয়েছিলো তাকে কি আপনি চিনেন?
মাসফিঃ না তো।একটা আননোন নাম্বার থেকে কেউ ভিডিওটা সেন্ড করেছে।পরে আমি সেই নাম্বারের হাজার বার ট্রাই করেছি।কিন্তু সিম বন্ধ করে দিয়েছে।লোকেশন চেক করেও খুঁজে পাই নি।
জিকুঃ আপনি সত্যি যাচাই না করে একটা আননোন নাম্বারে দেখা ভিডিও এর উপর ভিত্তি করে মির্জাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া কি আদো ঠিক হচ্ছে বস।
মাসফিঃ আমিতো এমন করে তোমার মতো করে ভেবে দেখিনি জিকু।তাহলে আমি জানবো কি করে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা?
জিকুঃ হাজার মানুষকে জিজ্ঞেস করে আপনি যদি সবার মধ্যে একটা কথা পান তাহলে সেটাই সত্য।তবে সত্য নামক বস্তুটা অনেক দামী তো তাই মাঝে মাঝে ওকে খুঁজে পেতে হলে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।
যত কষ্টই হোক সত্য একদিন নিশ্চয়ই বের হবে।কারণ তার যে পাওয়ার সেটা হাজারটা মিথ্যার মাঝেও নেই। আপনি সত্যকে যত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, খুটিয়ে দেখবেন।সত্যি একটাই থাকবে।আর মিথ্যা ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে হাজারটা হয়ে যাবে।এখনও সময় আছে বস,আপনি ম্যামের মৃত্যুর আসল রহস্য খুঁজে বের করেন।আমার বিশ্বাস উনার মৃত্যুর পিছনে অনেক বড় একটা কারণ রয়ে গেছে। যেটা আমাদের সবার অজানা।
মাসফিঃ আমি কি তাহলে কোন ভূল করছি জিকু?
জিকুঃ সেটা তো আমি বলতে পারবো না বস।তবে আসল রহস্যটা আপনাকে উদঘাটন করতে হবে। আপনি কোন নিরাপরাধ মানুষকে মারতে পারেন না।
মাসফিঃ তুমি আমাকে আরো আগে এভাবে বললে না কেন? আমি তো বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার দিক পাশ কোন দিকে হুশ ছিলো না।
জিকুঃ আসলে বস,আমি আনেক দিন বলতে চেয়েছি।কিন্তু আপনি শুনতে চান নি।প্লিজ বস যা করার করেছেন এবার না জেনে শুনে আর মির্জাদের ক্ষতি করেন না।এখন কি করবেন বস?
মাসফিঃ এখন আমি আমার প্ল্যান মোতাবেক আগাবো।আমার বিশ্বাস আমি আসল নাটের গুরুকে খুঁজে পাবো।আমার মনে হয় সেও চায় মির্জাদের ক্ষতি করতে।তাই আমাদেরকে দাবার গুটি বানিয়েছে।
জিকুঃ আমারও তাই মনে হয় বস।এর পেছনে অন্য কেউ আছে।
মাসফিঃ আমরাও দেখি এর পেছনে কে আছে? শোনো জিকু আগামী প্ল্যান আমরা ঠিকই করবো উষাকে মারার তবে তা বাস্তবায়ন করবো না।আমার বিশ্বাস আমাদের জালে সে অবশ্যই ধরা দিবে।তুমি আরানকে সব জানিয়ে দিও।আমার বিশ্বাস এর মধ্যেই কেউ প্ল্যানের কথা জেনে যাবে।আর তাকে ধরতেও আমাদের বেগ পেতে হবে না।আমার তো মনে হচ্ছে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হবে।
জিকুঃ প্ল্যানটা কি বস?
মাসফিঃ শোনো তাহলে………
???
মির্জা কুঠির…..
বিকালে ছাদে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে ঈশান।আজকাল নুহার প্রতি একটু বেশি দূর্বল লাগছে।এক মূহুর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে মন চায় না।হঠাৎ দেখলো নুহার ওড়না রেলিং এর থেকে কিছুটা দূরে গাছের ডালে বেজে আছে।সেটা নামাতে রেলিং এর ওপর উঠতেই সেখানে উষার আগমণ।
উষাঃ কি করছিস ছোট ভাইয়ু?আরে দাঁড়া। পরে যাবি তো।নিচে নাম বলছি।
ঈশানঃ মরে যাবো।
উষাঃ এই দোতালা থেকে লাফ দিলে কিচ্ছু হবে না।মানুষ ১০ তালা থেকে লাফ দিয়ে মরে না। আর তুই দুই তালার থেকে লাফ দিয়ে মরবি।হাসালি তুই।এক কাজ কর ২০ তালার থেকে লাফ দিস।তাহলে সোজা নিচের থেকে উপরে শিফট হয়ে যাবি।
ঈশানঃ বকবক না করে সর তো।
উষাঃ মরতে চাইলে তোকে আমি আইডিয়া দিতে পারি।তুই এক কাজ কর বাজার থেকে ইঁদুর মারার বিষ এনে খেয়ে নে।
ঈশানঃ কি বললি তুই? (রেগে)
উষাঃ আইডিয়াটা তোর পছন্দ হলো না।অবশ্য হবে কি করে বল তো।আজকাল ইঁদুর মারা বিষও দুই নাম্বার হয়ে গেছে। বিষ খেয়ে ইঁদুরাও খুশিতে ছোটাছুটি শুরু করে আর তোর মতো দাঁমড়া ষাঁড়ের তো আরো আগে কিছু হবে না।
ঈশানঃ বোনু তুই চুপ থাকিস কিন্তু। আমার রাগ উঠছে।
উষাঃ তোর রাগ দিয়ে আমার ঘন্টা হবে।যা ভাগ।তোকে আমি এতো সুন্দর সুন্দর আইডিয়া দিচ্ছি আর তুই আমার সাথে কেমন করছিস?
ঈশানঃ তোর ঐ রকম বস্তা পঁচা আইডিয়া তোর কাছে রেখে এখান থেকে ভাগ।
উষাঃ ভাইয়ু তুই এখানে না মরে ফ্যানের সাথেও তো ঝুলে মরতে পারিস।অবশ্য বেচারা ফ্যান তোকে নিয়েই পরে যাবে।তুই যে হাতি।
ঈশানঃ আমি যদি এখান থেকে পরে যাই তাহলে তোকে আচাড় দিয়ে রোদে শুকাতে দিবো।
উষাঃ এই জন্য বলে কারো উপকার করতে নেই। আমি তোকে মরার জন্য এতো সুন্দর আইডিয়া দিচ্ছি আর তুই আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করছিস।আমি বড় ভাইয়ুকে বলে দিবো।তুই আমাকে বকেছিস।
ঈশানঃ আমি মরলে মনে হয় তুই অনেক খুশি হবি।
উষাঃ অনেক খুশি হবো।আমাকে জ্বালানোর কোন মানুষ থাকবে না।
ঈশানঃ তোকে যে কবে বিয়ে দিবে? তোকে এ বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারলে আমি শান্তি পাবো।
উষাঃ তুই আমায় এমন কথাটা বলতে পারলি ভাইয়ু।
উষা ঠোঁট চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো।ঈশান বোনের কান্ডে অবাক।
ঈশানঃ যাক বাবা,মাত্র আমায় কত কিছু বললো তাতে দোষ নেই।আর আমি একটু বিয়ের কথা বলতেই কান্না করে সমুদ্র বানিয়ে ফেলছে।
উষাঃ তুই আমায় একটুও ভালো বাসিস না।ভালোবাসলে এসব কথা কখনি বলতে পারতি না।
ঈশান রেলিং থেকে নেমে বোনকে জরিয়ে ধরলো।বেচারি উষা এর মধ্যেই চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে।
ঈশানঃ আমি এমনি বলেছি।আর তুই কি থেকে কি ধরে নিলি।যা তোর জামাইকে এবাড়ির ঘর জামাই রাখবো।
উষাঃ ইস,শখ কত?আমি ঘর জামাই থাকছি না।
ঈশান ওর বোনকে ছেরে দিলো।উষা চোখ মুছে স্বাভাবিক হলো।ঈশানের হাতে নূহার ওড়না দেখে ভ্রু কুঁচকে উষা জিজ্ঞেস করলো।
উষাঃ কি রে তুই মেয়েদের ওড়না দিয়ে কি করিস ভাইয়া? তোর কি মাফলারের আকাল পরলো নাকি।
ঈশানঃ ওহ্।এটা নুহার ওড়না। বেচারি ছাদে রোদ দিয়েছিলো বাতাসে উড়ে গাছের ডালে বেজে গিয়েছিলো।সেটা আনতেই রেলিং এ উঠেছিলাম।
উষাঃ তুই তো দেখছি অনেক কেয়ার করিস নুহার।
তা এখনো বলতে পেরেছিস? নাকি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?
ঈশানঃ এখনো পারি নি।(মুখ গোমড়া করে)
উষাঃ আমি তোকে সাহায্য করতে পারি। তবে একটা শর্তে।আমি যা চাইবো তা দিতে হবে।
ঈশানঃ এখানেও ঘুষ নিবে।
উষাঃ ঘুষ কোথায় দেখলি? এটা তো আমার পারিশ্রমিক।
ঈশানঃ আচ্ছা দিবো।তবে যদি নুহা তোর আইডিয়ায় পটে।নইলে তোর ভাগ্যে কাঁচকলা জুটবে।
উষাঃ হা হা হা। তোকে কে আইডিয়া দিবে? আমি তো তোর থেকে কথা বের করলাম।আমি এখন বড় ভাইয়ু কে গিয়ে সব বলে দিবো।তুই আমাকে ঐ জেব্রা নাকি কি যেনো নাম?(একটু ভেবে)ও মনে পড়েছে জিবরান। ওর সাথে জোর করে সকালে পাঠিয়েছিলি।সেটার শাস্তি এটা।তখন খুশি হয়ে দাঁত কেলেয়েছিলি।আমিও মনে মনে পণ করেছিলাম তোকে কি পানিশমেন্ট দিবো। এখন আমি পেয়েও গেলাম।
ঈশানঃ তবে রে ফাজিল মেয়ে। দাঁড়া তুই….
তার আগেই উষা ছুটে নিচে চলে গেল। উষার পেছন পেছন ঈশানও ছুট।ওদের এরকম কান্ড দেখলে কে বিশ্বাস করবে যে এদের বিয়ের বয়স হয়েছে।
???
রাতে সব ভাই-বোন একসাথে বসে টিভিতে নিউজ দেখছে।উষা,ইশাত,ঈশান তিনজন মিলে টম এন্ড জেরি মারামারি শুরু করেছে।তিনজনের হাতে সোফার বালিশ।ইশাত পেছন দিয়ে উষার মাথায় একটা টোকা মারলো।উষা ভাবলো ঈশান দিয়েছে।তাই দুম করে ঈশানের পিঠে একটা ঘুষি মারলো।
ঈশানঃ তুই আমায় মারলি কেন?
উষাঃ তুই আমার মাথায় টোকা মারলি কেন?
ঈশানঃ আমি তোকে কখন টোকা মারলাম?
উষাঃ মিথ্যা বলিস না।
ব্যাস শুরু হয়ে গেলো দুজনের বালিশ যুদ্ধ। ইশাত মুখ টিপে হাসছে।
ঈশানঃ আমি তোকে টোকা মারিনি।
উষাঃ না তুই মেরেছিস।
ঈশানঃ এটা ইশাতের কাজ।দেখ ও মুখ টিপে হাসছে।
উষাঃ আবারও সেজু ভাইয়ুর নামে মিথ্যা বলছিস।
ঈশানঃ তুই তাকিয়ে দেখ। ইশাত হাসছে।
উষা তাকিয়ে দেখলো ইশাত হাসছে।ওর বুঝতে দেরি হলো না এই কাজটা ইশাতের।উষা বালিশ নিয়ে ইশাতের পিছনে দৌড়াতে লাগলো।ইশাত পুরো ড্রয়িং রুম চক্কর মারছে।ওর পিছনে উষা।উষার পিছনে আবার ঈশান।ওদের কান্ড দেখে অটোমেটিক চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে গেলো নুহার।
নুহাঃ সত্যি ভাই-বোন সম্পর্কটা কত মধুর? এতো বড় হয়ে গেছে তারপরও তাদের মাঝে বাচ্চামো গুলো যায়নি।এখনো মনে হয় সেই ছোট ছোট বাচ্চা।আমার ভাগ্যটাই খারাপ।ভাইয়ের আদর,স্নেহ, ভালবাসা কি তা জানলাম না।উনাদের ভাই-বোনের বন্ডিংটা দেখে মাঝে মাঝে হিংসা হয়।যদি আমারও এরকম একটা ভাই থাকতো।(মনে মন)
আদিলঃ কি রে তোরা কি শুরু করলি?
উষাঃ আমরা কিছু শুরু করি নি।সব শুরু করেছে এই সেজু ভাইয়ু।
অর্ণবঃ বোনু সাবধানে।পরে গেলে ব্যাথা পাবি।
ইশাতঃ আমি কিছু করি নি।সব দোষ শানের।
ঈশানঃ আরেকবার মিথ্যা বললে তোর মাথা ফাটিয়ে ফেলবো।
উষাঃ দাঁড়াও আজকে সেজু ভাইয়ু। তোমাকে চাটনি বানাবো।
তিন ভাই-বোন অলিম্পিকের দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে।কে কার হাত থেকে আগে বাঁচবে সে চিন্তা।
আজকাল রান্নাসহ অনেক কাজ নুহা নিজ হাতে করে।কোন জিনিস চুরি তো দূরে থাক, আজ পর্যন্ত ওদের না বলে কোন কিছু তে হাতও লাগায়নি।নুহার কাজে ওরা সবাই অনেক খুশি। আর ঈশান তো নুহার দিওয়ানাই।নুহা চা নিয়ে আদিল ও অর্ণবকে দিলো।
নুহাঃ ভাইয়া আপনাদের চা।
অর্ণবঃ ও নুহা দেও।
আদিলঃ ধন্যবাদ বোন।
আদিলের মুখে বোন ডাক শুনে নুহার চোখে পানি চলে এলো।যা দুই ভাইয়ের চোখের আড়াল হলো না।
অর্ণবঃ কি হয়েছে নুহা? তুমি কাঁদছো কেন?
নুহাঃ কই কিছু হয় নি তো ভাইয়া?
অর্ণবঃ তুমি আমাদের বোনুর মতো বড় ভাইয়ু, মেজু ভাইয়ু বলে ডাকতে পারো।
নুহাঃ আ আ আ আমি। (আমতা আমতা করে)
আদিলঃ হ্যাঁ বোন।তুমি আমাদের ভাইয়ু বলে ডাকবে।
তোমার কি আপত্তি আছে?
নুহাঃ না না ভাইয়ু।
অর্ণবঃ তোমার কি এখনে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?
নুহাঃ না না ভাইয়ু। আপনাদের মতো ভাই যাদের আছে তার কি কোন কষ্ট থাকতে পারে।
আদিলঃ তোমার যা লাগবে নিরদ্বিধায় আমাদের বলবে।যাও গিয়ে তোমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসো।আমাদের সাথে চা খাবে।
নুহাঃ আচ্ছা।
নুহা রান্নাঘরে গিয়ে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলো। তবে সেটা দুঃখের নয় খুশির।অনেকক্ষণ কেঁদে মনটা হালকা করে নিলো।তারপর মুখে পানির ঝাপটা মেরে চা নিয়ে ভাইদের সামনে হাজির হলো।নুহা যেই নিচে বসতে যাবে ওমনি আদিল বলে উঠলো।
আদিলঃ আরে তুমি নিচে বসছো কেন?
নুহাঃ আমি নিচেই ঠিক আছি।
অর্ণবঃ ভাইদের কথা মানবে না নুহা।সোফায় বসো।
নুহা চা নিয়ে সোফায় বসে পরলো।ভাবতে লাগলো সত্যি এই বাড়ির মানুষগুলো একটু বেশি ভালো।উষা,ইশাত,ঈশান তিনজন চক্কর মেরে ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসেছে।বেচারা ইশাত, উষাও ঈশানের হাতে ঢের মার খেয়েছে।সার্ভেন্টরা রাতের খাবার রেডি করছে।হঠাৎ সদর দরজার কোলিং বেল বেজে উঠলো।
অর্ণবঃ এমন সময় কে আসলো?
নুহাঃ আমি দেখছি।
আদিলঃ তোমার দেখতে হবে না।তুমি চা শেষ করো।আমি খুলে দিচ্ছি।
আদিল গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজার অপর পাশের ব্যাক্তিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে
আমি অনেকগুলো প্যাঁচ খুলে দিছি।এখন শুধু মেইন ভিলেন ও তার কান্ড কারখানার প্যাঁচগুলো রয়েছে।অপেক্ষা করুন আস্তে আস্তে সেগুলোও খুলে যাবে।
#Part_13
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2949477528614313/