বোনু
Part_02
#Writer_NOVA
অর্ণব, আদিল,ইশাত,ঈশান চারজন থম মেরে বসে আছে।অরূপ যা বলেছে তাতে কারো মাথা ঠিক নেই। কিন্তু এখন এতো হাইপার হলে চলবে না।যেরকম ঠান্ডা মাথায় কেউ ওদের সাথে খেলছে ঠিক সেরকমভাবে গুটি চেলে হারাতে হবে।আপাতত নিজের বোনের দিকে খেয়াল দিতে হবে।পরে তাদের ব্যবস্থা করবে।ওদের শত্রুদের বুঝিয়ে দিতে হবে মির্জা বংশের ছেলেরা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।
আপন বলতে ওদের কেউ নেই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আত্মীয় -স্বজন তাদের একপ্রকার দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আপন চাচাও সেদিন সব সম্পত্তি জোর করে দখল নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। খেয়ে না খেয়ে ৪ ভাই জীবন চালিয়েছে তারপরও বোনকে এক বেলা অনাহারে রাখেনি।বাবা ক্যান্সারে মারা গেল তার ৩ মাস পর মায়ের মৃত্যু। গৃহহারা ৫ টা মানুষ কি করে বড় হয়েছে সেটা একমাত্র ওরাই জানে।তাইতো সবার ১মে ২ টা এতিমখানা খুলেছে। যাতে করে অন্য কোনো বাচ্চাকে ওদের প্রবলেম ফেস না করতে হয়।বাবা-মা যখন মারা গেল তখন অর্ণবের বয়স ১৮ বছর।ভালো মন্দ সবকিছু বোঝার ক্ষমতা হয়েছে।কিন্তু ওর ১০ বছরের ছোট বোনটাতো কিছুই বোঝে না।গল্পটা অনেকটা সিনেমার মতে তাই না।কিন্তু মনে রাখবেন বাস্তবতা সিনেমাকেও হার মানায়।বাস্তবের মতো করে সিনেমা তৈরি করা যায়। কিন্তু সিনেমার মতো করে বাস্তব তৈরি করা যায় না।বাস্তবটা খুব অদ্ভুত।
৪ ভাইয়ের কাছে তাদের বোনের এক্সিডেন্টটা ধোয়াসা লাগছে।মনে হচ্ছে সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন। ঘুম ভেংগে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাদের বোন আবার হেসে খেলে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। প্রত্যকের মুখ, চোখ ফোলা ফোলা।চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে মানা।তাদের অনেক কঠিন মনের অধিকারী হতে হয়।অনেকেই এই কথাটা বলে।কিন্তু কথাটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।কেন ছেলেরা কি মানুষ নয়?
ওদেরও তো ভালবাসা, অনূভুতি, আবেগ,সহ্য ক্ষমতা নামক বস্তু আছে।ওরাও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমরা কি ভাবি তাদের? টাকা উপর্জনের মেশিন। না, এটা ভাবা উচিত নয়।তারা হয়তো আমাদের মেয়েদের মতো এত সহজে কাঁদতে পারে না।তবে তারাও কাঁদে যখন আর সহ্য করতে পারে না।পুরো পৃথিবীতে তার নিজেকে একা মনে হয় ঠিক তখন।
অর্ণব সামনে এগিয়ে এসে আদিলের মাথায় হাত রাখলো।
অর্ণবঃ তোরা কি কিছু মুখে দিবি না।সেই বিকেল থেকে এখানে বসে আছিস।এখন প্রায় মাঝরাত।কিছু
একটা খেয়ে নে।নয়তো শরীর খারাপ করবে।
আদিলঃ তুমি এটা কি বলো ভাইয়া? আমাদের বোনু না খেয়ে জীবন -মরণের সাথে যুদ্ধ করছে আর আমরা ওকে ছেরে খেয়ে নিবো।তা কিছু তেই নয়।বোনু সুস্থ থাকতেই একটা আপেলের টুকরো ওকে ছারা মুখে দেইনি আজ ও অসুস্থ হয়ে আছে সেখানে আমরা খাবার খাবো।খাবার যে গলা দিয়ে নামবে না ভাইয়া।
অর্ণবঃ তোরা সবাই আমার আদরের। তোদের কথা তো আমাকে ভাবতে হবে।এখন যদি বোনুর মতো তোরাও অসুস্থ হয়ে যাস তাহলে আমি বাঁচবো কি করে?
মুখে হাত দিয়ে অর্ণব নিরবে কাঁদতে লাগলো।
ঈশানঃ ইশাত,তোর কালকে কম্পিটিশন আছে।তুই কি সেখানে পার্টিসিপেট করবি?
ইশাতঃ আর ইউ মেড শান? তোর মাথা ঠিক আছে। আমার বোনু সবার আগে তারপর আমার ক্যারিয়ার।
(রেগে)
অর্ণবঃ আগামীকালের কম্পিটিশনটা তো অনেক জরুরি। কাল পার্টিসিপেট না করলে জাতীয় দলে চান্স পেতে সমস্যা হয়ে যাবে।
ইশাতঃ তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো।আমার কলিজার টুকরো বোনুটার এই অবস্থা, কত কষ্ট পাচ্ছে আর তোমরা আমার খেলা নিয়ে পরলে।যদি আমার ক্যারিয়ার চলে যায় অন্যভাবে ক্যারিয়ার গড়ে নিবো।কিন্তু যদি আমার প্রাণর প্রিয় বোনুটার কিছু হয় তখন ওকে কোথায় পাবো।আমি ওকে ছেরে এক সেকেন্ডের জন্য ও বাইরে যাবো না।যদি ফিরে এসে দেখি ও…..
বাকি কথা বলার আগেই মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। সবকিছু এক মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে গেলো।
সব নিউজে হেডলাইনে এখন একটাই খবর, বিশিষ্ট শিল্পপতি অর্ণব মির্জা ও নর্থ ইস্ট ক্লাবের বাস্কেটবলের চ্যাম্পিয়ন ইশাত মির্জার একমাত্র বোন কার এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়ে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিডিয়ার মানুষ এসে হাসপাতালে ভিড় করেছে। কিন্তু চার ভাইয়ের এক ভাইও মিডিয়ার সামনে যায়নি।আসবে কি করে? তারাতো সেরকম পরিস্থিতিতে ছিলো না। এদিকে মিডিয়াতে তিল কে তাল বানিয়ে নানা কথা প্রচার করছে। তাতে মি. মির্জাদের কোন সমস্যা নেই।
উষা যদি ওর ভাইদের এই অবস্থা দেখতো তাহলে কি রকম রিয়েক্ট করতো তা আমার জানা নেই।হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত।নয়তোবা নাক টেনে দিয়ে প্রত্যককে কান ধরে উঠবস করাতো।এটা হতো সব ভাইয়ের পাগলামীর সাজা।আর ও খিলখিল করে হাসতো।আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি উষা বানান ভুল করেছি।উষা বানান করতে ঊ হয়।কিন্তু অর্ণবের মা ওদের ৫ জনের নাম বাংলা স্বরবর্ণের সাথে মিল রাখার জন্য ঊ এর বদলে উ ব্যবহার করেছে।
৪ জনের পাশাপাশি আরেকজন পাগল হয়ে গেছে উষার জন্য।সে পারলে এখনি চলে আসে আমেরিকা থেকে ।কিন্তু রাতের ফ্লাইটের টিকিট পাইনি বলে আসতে পারেনি।তাই মিনিটে মিনিটে চার ভাইয়ের মোবাইলে কল দিয়ে পাগল করে ফেলছে।
আবার কল করলো অর্ণবের কাছে।
—ভাইয়া,উষার শরীরের অবস্থা কেমন? ও কি ভালো হবে না।আমার সাথে কথা বলবে না।আমি ওর সব কথা শুনবো। প্লিজ ওকে আমাদের জন্য ফিরে আসতে বলুন।ওকে ছারা বাঁচতে পারবো না।
(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অধীর উৎকন্ঠার সাথে)
অর্ণবঃ শান্ত হও। আল্লাহ চাইলে আমাদের বোনুর কিছু হবে না।তুমি নামাজ পরে বোনুর জন্য দোয়া করো।
—-আমি কাল সকালের ফ্লাইটে দেশে আসছি।আমি ওর কিছু হতে দিবো না। আমি নফল নামাজ পড়ে উষাকে ফেরত চাইবো।ওর যদি কিছু হয় আমি বাঁচবো না ভাইয়া।আল্লাহ এমন কেন করলো?
(কাঁদতে কাঁদতে)
অর্ণবঃ ধৈর্য ধরো,আল্লাহ হয়তো আমাদের পরীক্ষা করছে।তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিশ্চয়ই আমাদের বোনু ভালো হয়ে যাবে।
—-সত্যি উষা ভালো হয়ে যাবে।ভাইয়ারা কি করছে?
অর্ণবঃ হ্যাঁ,সত্যি। আদি,ইশাত,ঈশান নফল নামাজ পরছে।তুমিও ওযু করে নামাজ পড়ে ওর সুস্থতা কামনা করো।আমিও নামাজ পরবো।তাই মোবাইল বন্ধ থাকবে।তুমি আর কল করো না।
—আচ্ছা ভাইয়া।রাখছি,আল্লাহ হাফেজ। তবে উষার শরীরের ২৪ ঘন্টার আপডেট আমায় দিবেন।আমি সকালে আসছি।
মোবাইল বন্ধ করে অর্ণবও নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।আই.সি.ইউ এর রুমের পাশের রুমে তারা নামাজ পড়ছে।রুমের পাশে বডিগার্ডের কড়া নজরদারী।তখন অরূপের কথা শুনে নজরদারী আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।একপাশে উষা বেডে শুয়ে আছে।আরেকপাশে নিঃশব্দে নামাজ আদায় করছে ৪ ভাই। চোখের পানিতে পাঞ্জাবী ভিজিয়ে ফেলছে।পুরো রুমে পিনপিনে নীরবতা।বোনের জীবনের জন্য আজ তার পরওয়ারদিগারের কাছে আর্জি জানাবে।যাতে তাদের বোনুটা ভালো হয়ে যায়।নামাজের মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে ঈশান।ওদের সাথে এমন হলেও এতো কষ্ট পেতো না।কিন্তু বোনের জন্য জান চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
সত্যি, থাকার মতো থাকলে একটা ভাই যথেষ্ট। চারজনের প্রয়োজন হয় না। সেখানে উষা চারটা ভাইয়ের প্রাণের সাথে জরিয়ে আছে। অনেক রেসপেক্ট ও স্যালুট পৃথিবীর সকল ভাইদেরকে।যারা তার বোনকে রক্ষার জন্য ঢালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর এতো পাগলামি করে।
মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে চার ভাই চোখের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। জানি না আল্লাহ তাদের কান্না শুনতে পাচ্ছে কি না।সবার মনে একটা বাসনা তাদের বোনু ঠিক হয়ে যায়।হঠাৎ করে আদিল মোনাজাত শেষ করে বোনের রুমের দিকে তাকালো। তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে ফেললো।যা দেখলো তাতে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।বাকি ৩ জন মাত্র সালাম ফিরিয়ে মোনাজাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।আদিলের চিৎকারে বোনের দিকে তাকালো।
আদিলঃ ভা—ই—-য়া
সবাই তাকিয়ে যা দেখলো তাতে সবার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।আল্লাহ কি ওদের কথা শুনলো না।শেষ পর্যন্ত কি বাবা-মায়ের মতো ওদের বোনুও — না আর ভাবতে পারছে না।শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।ওদের মনে হচ্ছে সব শক্তি কেউ নিয়ে নিয়েছে। মাথাটা ঘুরছে এমনভাবে যে পরে যাবে।
ইশাতঃ ভাইয়া, আমাদের বোনু কি রকম যেনো করছে? ডক্টর ডাকো।ও এরকম করে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ছারছে কেন?ওর কি হয়েছে? শান,জলদী ডক্টরকে নিয়ে আয়।বো—-নু……….
#চলবে
#Part_01
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2936966923198707/