বোনু Part_01

0
1118

হাসপাতালের গেইট দিয়ে পাগলা কুকুরের মতো দৌড়ে চারটা ছেলে ভেতরে ঢুকলো।চার ভাইয়ের কলিজার টুকরো, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস,বেঁচে থাকার অস্তিত্ব তাদের একমাত্র বোন আজ এক্সিডেন্ট করেছে।চোখে, মুখে আতংক চার ভাইয়ের।হাসপাতালে পাগলামী করে মাথায় তুলে ফেলেছে ৪ ভাই। হাসপাতালের মধ্যে বলা যায় ছোট-খাটো ঘূর্ণিঝড় এসেছে।

অর্ণবঃ ডক্টর আমার বোনু কোথায়?
আদিলঃ আমাদের বোনুকে কোথায় রেখেছেন?
ইশাতঃ কি ব্যপার এনসার দিচ্ছেন না কেন?
ঈশানঃ হোয়ার ইজ মাই সিস্টার?
ডক্টরঃ মি. মির্জা আপনারা শান্ত হোন।আপনাদের বোনের কন্ডিশন আগের তুলনায় কিছুটা ভালো বলা যায়।তিনি এখন আই সি ইউ তে আছে।

ইশাত রেগে গিয়ে ডাক্তারের কলার ধরে বললো— আমার বোন আই.সি.ইউ তা আছে আর আপনি বলছেন আগের তুলনায় ভালো।যদি আমার বোনের কিছু হয় তাহলে আপনাদের একজনকেও এই হসপিটালে রাখবো না।আপনাদের হসপিটালও আমি বন্ধ করে দিবো।
অর্ণবঃ ইশাত কি করছিস টা কি? ডক্টরের কলার ছার।আমাদের বোনের কিছু হবে না।

বাকি ৩ ভাই অনেকটা ধস্তাধস্তি করেই ইশাতকে ছারালো।ওর এখন রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
ঈশানঃ আমাদের বোনু কোথায়?
নার্সঃ আসুন আমাদের সাথে।

আই.সি.ইউ এর সামনে নীরবে চোখের পানি ফেলছে ৪ ভাই। যে বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত পরতে দেইনি।সে বোন আজ জীবন-মরণের সাথে লড়াই করছে।হাত-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ।মুখে অক্সিজেন মাস্ক।ছোট বোনটা তার কত কষ্ট পাচ্ছে। যার গায়ে একটা মশা বসলে চার ভাই পাগল হয়ে যায় কিভাবে কি করবে? সামান্য একটু ব্যাথা পেলে ভাইদের জান বেরিয়ে যায়।সে বোন আজ একাই মৃত্যুর সাথে বাজি ধরেছে।সে নিজেও জানে না জিতবে নাকি হেরে যাবে।

আদিলঃ ভাইয়া,আমদের বোনু কি আমাদেরকে আর ভাই বলে ডাকবে না? ও কথা বলছে না কেন? বোনু জানে না ওর সাথে কথা না বললে আমাদের ভালো লাগে না।
অর্ণবঃ শান্ত হো আদি।আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ।তিনি যদি এই এতিমদের ওপর দয়া করে।

অর্ণবের বুক ফেটে চিৎকার আসছে।কিন্তু ওকে তো কাঁদলে হবে না।ও সবার বড়, আজ যদি ও ভেংগে পরে তাহলে ওর বাকি তিন ভাইতো চোখে অন্ধকার দেখবে।তাই ঠোঁট চেপে অন্য দিকে মুখ করে রেখেছে। চেয়ারে বসে মুখ ঢেকে ডুকরে কাঁদছে ঈশান।ওর সাথেই উষার সারাক্ষণ লেগে থাকতো।ইশাত নিশ্চুপ হয়ে এক ধ্যানে আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে বোনকে দেখছে।চোখর পাতা গরিয়ে দুই ফোঁটা নোনা জল গরিয়ে পরলো।তখনি আই.সি.ইউ থেকে ডাক্তার বের হয়ে তাদের সামনে এলো।

আদিলঃ ডক্টর আমার বোনের কন্ডিশন কেমন?
ডক্টরঃ সি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।কিন্তু তারপরও পুরোপুরি বিপদ কাটে নি।মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত পেয়েছে। যদি ৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে তাহলে সৃতি শক্তি হারিয়ে যেতে পারে।আর যদি জ্ঞান না ফিরে তিনি কোমায় চলে যেতে পারে।আমরা আমাদের সর্বশ্ব চেষ্টা করছি।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা কারো হাতে নেই। আল্লাহ যদি চায় উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে।সেটা তার ইচ্ছা। হায়াতের মালিক আল্লাহ। আপনারা তাকেই ডাকুন।

ডক্টর আদিলের কাঁধে হালকা করে চাপর মেরে বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেল।আদিল,ইশাত,ঈশান ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।অর্ণব নিশ্পলক চাহনীতে তাকিয়ে আছে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ঠিক যেমনটা নিঃশ্ব লেগেছিলো আজ ঠিক তেমন লাগছে।

ইশাতঃ আমাদের বোনু কি ভালো হবে না ঈশান?
ঈশানঃ আল্লাহ কে ডাক ভাই।তিনি সব ঠিক করে দিবে।আমাদের কিছু চাই না। আল্লাহ যেনো শুধু আমাদের বোনটাকে ভিক্ষা দিয়ে দেয়।এই এতিমগুলোর ওপর রহম করে।আমাদের এতো ধন-দৌলতের কোন প্রয়োজন নেই। তার বিনিময়ে আমার বোনের জীবনটা ফেরত দেয়।
আদিলঃ সবসময় কি আল্লাহ আমাদের প্রিয় জিনিসটাই নিয়ে যায়।বাবা-মা কে হারিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। এখন বোনটাকে ছেরে কি করে থাকবো।হে আল্লাহ, একটু রহম করো এই অধমদের ওপর।আমরাতো ৫ ওয়াক্ত তোমার ইবাদত করি।আমাদের কথা শুনবে না।আমাদের বোনের জীবনটাকে ভিক্ষাই দিয়ে যাও।
ইশাতঃ আমাদের ওকে একা ছারা উচিত হয়নি।আগে যদি জানতাম ওকে কখনি একা ছারাতো দূরে থাক চোখের নজরেও হারাতাম না।

আসরের নামাজের আজান হচ্ছে। ৪ ভাই পাথরের মতো বসে আছে আই.সি.ইউ এর বাইরে।
অর্ণবঃ চল আসরের নামাজ পড়ে আসি।
ইশাতঃ ভাইয়া আমাদের বোনু।
অর্ণবঃ বোনকে আল্লাহ দেখবে।নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ওর জীবনটা ভিক্ষা চাইতে হবে তো।না চাইলে তিনি দিবে কিভাবে? উনি হয়তো আমাদের দোয়ার অপেক্ষা করছে।আমাদের দোয়ার উসিলায় এবং আল্লাহর রহমতে যদি আমাদের বোনটা ঠিক হয়ে যায়।
ঈশানঃ আমি যাবো না ওকে ছেরে কোথাও।আমি এখানেই নামাজ আদায় করে নিবো।আমরা সবাই চলে গেলে বোনু যদি আমাদের সাথে অভিমান করে না ফেরার দেশে চলে যায়।তখন আমরা ওকে কোথায় পাবো।
আদিলঃ এসব কথা বলবি না শান।খুব ভয় করে।
অর্ণবঃ কিছু হবে না আমাদের বোনুর।আমরা কিছু হতেই দিবো না।চল নামাজ পরতে।

ঈশানকে জোর করেই নামাজ পরতে গেল ৪ ভাই। নামাজ নিয়ে তো কোন অজুহাত চলে না।আই.সি.ইউ এর বাইরে বডিগার্ড দিয়ে কড়া পাহারায় রেখে তারা চারজন হসপিটালের মসজিদে নামাজ আদায় করতে চলে গেল।

মির্জা বংশের চার ছেলে।বড় অর্ণব মির্জা,মেজো আদিল মির্জা,সেজো ইশাত মির্জা,ছোট ঈশান মির্জা এবং তাদের অর্ধেক প্রাণ একমাত্র বোন উষা মির্জা।৫ জনের নাম বাংলা ৫ স্বরবর্ণ অ,আ,ই,ঈ,উ দিয়ে রেখেছে তাদের মা।মুসলিম পরিবারের এই ৫ ভাই-বোনের মা- বাবা মারা গেছে সেই ছোট বেলায়।
৪ ভাই আজ অনেক কষ্টে নিজেদের পরিচয় গরেছে।দেশের অন্যতম বিজন্যাস ম্যান অর্ণব।বয়স ৩০ এর কোঠায়।ভাই-বোনের জন্য আজও বিয়ে করেনি।নিজের কষ্ট দূরে রেখে ভাই-বোনের খুশিটা সবার আগে।তার ২ বছরের ছোট আদিল।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য। তবে কেউ জানে না।ইশাত ও ঈশান জমজ। ইশাত বাস্কেটবল খেলতে বেশ পারদর্শী। সে এখন নিজেকে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করছে।ঈশান রাজনীতিতে যুক্ত আছে।সারাক্ষণ নানা ভেজালে জরিয়ে থাকে।তবে দুজন জমজ হলেও চেহারা ততটা মিল নেই। দুজনের বয়স ২৫ বছর।৪ ভাই দেখতে, শুনতে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। কারো মনে আঘাত পাবে বা কোন কষ্ট পাবে এমন কাজ কখনি করে না।বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করতে পারে।৪ জন দেখতে হ্যান্ডসাম।স্টাইল,বডি,লুক সব দিকে এক কথায় পারফেক্ট।

ওদের একমাত্র বোন উষা।বয়স ২০। এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে। ভীষণ মিষ্টি, লাজুক ও মিশুক স্বভাবের মেয়ে।মনের মধ্যে হিংসা নামক বস্তুটা নেই। সবার সাথে সদালাপী। হাসি-খুশি এই মেয়েটাকে সবাই পছন্দ করে।গায়ের রং গোলাপি ফর্সা।চেহারার গঠন,উঁচা, লম্বায় মাশাল্লাহ দেখতে।ভাইদের আদরের রাজকন্যা। কোন ভাই বোনকে নাম ধরে ডাকে না।সবসময় বলে বোনু।

প্রত্যকের চুল উসকো-খুসকো, চেহারার মলিনতা,একরাশ বিষন্নতা নিয়ে বসে আছে।
সারা সময়ে এক ফোঁটা পানিও পান করেনি ৪ ভাই। তাদের বোনেকে রেখে কখনও কিছু মুখে দেয়নি। সে বোনকে রেখে আজ কি করে মুখে খাবার তুলবে।প্রত্যেক ভাই নিজে খাওয়ার আগে সেই খাবারটা বোনের মুখে তুলে দিবে।যদি বোন সেটা খায় তারপরে সেই খাবার মুখে তুলবে।হঠাৎ ওদের বডিগার্ডের মধ্যে একজন দৌড়ে ওদের কাছে এলো, যার নাম অরূপ।অরূপ এসে ওদের ৪ ভাইকে যা বললো তা শুনে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরার সাথে সাথে রাগ উঠে গেল।যে এই কাজটা করেছে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।কিছুতেই ছারবে না।

#চলবে

বোনু
Part_01
Writer_NOVA

দুঃখীত ছোট করে দেয়ার জন্য। পরবর্তী পর্ব বড় করে দিবো ইনশাল্লাহ্।আপনাদের রেসপন্সের ওপর ভিত্তি করছে আমার পরবর্তী পর্ব দেওয়া।হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here