বোনু
সিজন_০১
ফিরে_দেখা
রাতের বেলায় খাবার খেয়ে মির্জা বাড়ির সোফায়, মনমরা হয়ে বসে আছে ইশাত,ঈশান ও অরূপ।তাদের এখন মহাবিপদ।কারণ উষা তার বিশাল মেকআপ বক্স নিয়ে বসেছে ওদের সাজিয়ে দিবে বলে।তিন ভাইয়ের মুখ এখন দেখার মতো।
ইশাতঃ বোনু ছেড়ে দে না রে।আমি ওসব আটা-ময়দা দিতে পারবো না।তোর যখন এতোই সাজানোর ইচ্ছে হয়েছে তা যা না নিজে গিয়ে সাজ।
ঈশানঃ আমি বুঝতে পারছি না। তুই এমন পাগলামি কেন করছিস বোনু? আমরা কি মেয়ে যে এগুলো দিবো?ভালোয় ভালোয় সরে যা।নয়তো চুল একটাও মাথায় থাকবে না।
অরূপঃ সেজু ভাই,ছোট ভাই তো ঠিক ছিলো।মাঝখান থেকে আমাকে কেন নিলি?তাদের দুজনকে সাজিয়ে দে।আমার অনেক কাজ আছে।এখন কাজ না করলে বড় ভাই আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।
উষাঃ একদম চুপ।সবাই ভালো ছেলের মতো বসে থাকো।নয়তো খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।আমি ইউটিউব দেখে দেখে কতগুলো মেকআপ টিউটোরিয়াল শিখেছি।সেগুলো যদি তোমাদের ওপর ট্রাই না করি তাহলে বুঝবো কি করে যে আমি কতটুক পারি।এখন বেশি ঝামেলা করলে মিথ্যে কথা বলে বড় ভাইয়ুর হাতে সবগুলোকে বকা খাওয়াবো বলে দিলাম।
ঈশানঃ তোর কপালে আমার হাতের মার আছে।
ইশাতঃ শান,চুপচাপ বসে থাক।ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। যদি বড় ভাইয়ার হাতে বকা খাওয়ায় তাহলে আমাদের অবস্থা ভালো হবে না।
অরূপঃ ছোট ভাই,সেজু ভাই ঠিক বলছে।আপনি তো জানেন বড় ভাই একবার বোনুর মন খারাপ দেখলে আমাদের হাল বেহাল করে দিবে।
ঈশানঃ তাই বলে এখন মেয়েদের মতো সাজবো।তাও ঐ আটা-ময়দা দিয়ে। মোটেও না। (রেগে)
উষাঃ খবরদার ছোট ভাইয়ু।আমার মেকআপকে আরেকবার আটা-ময়দা বললে তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।তখন কিন্তু মেকআপ গুলে তোকে রুটি বানিয়ে খাওয়াবো।মনে রাখিস কথাটা।
কোমড়ে দুই হাত রেখে ঝগড়া করার ভঙ্গিতে চোখ দুটো বড় বড় করে কথাগুলো বললো উষা।
ঈশানঃ নিজের ভালো চাইলে আমাকে এখান থেকে যেতে দে।তুই কি আমাদের এখনো এই বয়সে জ্বালাবি?তোকে জিবরানের হাতে তুলে দিতে হবে। তোর জ্বালানোর হলে তোর জামাইকে জ্বালা।
উষাঃ ভালো করে বলছিলাম গায়ে লাগেনি।এখুনি আমি বড় ভাইয়ু আর মেজু ভাইয়ুকে ডাকবো।তারপর তোদের সব কটাকে ভাইয়ুরা ইচ্ছে মতো বকবে।বড় ভাইয়ু,মেজু ভাইয়ু।কোথায় তোমরা?
উষা জোরে চিৎকার করে অর্ণব ও আদিলকে ডাকতে লাগলো।ওরা দুই ভাই ব্যবসা নিয়ে একসাথে বসে কথা বলছিলো।উষার ডাক শুনে দৌড়ে নিচে চলে এলো।ওরা ভেবেছিলো উষার কিছু হয়েছে।
আদিলঃ বোনু,কি হয়েছে তোর?তুই কি কোন ব্যাথা পেয়েছিস?কথা বলছিস না কেন?
অর্ণবঃ কি হয়েছে আমার বোনুটার?ভাইদের এভাবে ডাকলে কেন?কোন সমস্যা হয়েছে কি?কে কি বলেছে একবার বল আমায়।তাকে আমি মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।
দুই ভাই সামনে এসে উষাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।ওর হাত-পায়ে খুঁজতে লাগলো কোথায় ব্যাথা পেয়েছে। তারা তো ভালো করেই জানে উষা আবার একেক কিছুর সাথে বেজে ধপাস করে পরে ব্যাথা পায়।উষা মুখ ফুলিয়ে, ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো করে দুই হাত গুঁজে সোফায় বসে আছে।
অরূপঃ আগেই বলেছিলাম ছোট ভাই। এমনটা করিস না।কিন্তু তুই তো আমার কথাই শুনলি না।এবার বড় ও মেজু ভাইয়ের বকা শোনার জন্য প্রস্তুত হো।(নিচুস্বরে)
ইশাতঃ সব দোষ এখন তোর শান।কি দরকার ছিলো বোনুকে রাগানোর।এখন তো বোনুর হাতে সাজবিও সাথে ভাইয়াদের এক গাদা বকাও শুনবি।
ঈশানঃ আমি ঐ মেয়েদের সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে সাজতে পারবো না। বিশ্বাস কর ইশাত,অরূপ আমাদের ঠিক জোকারের মতো লাগবে।একটু কল্পনা করে দেখ তো তুই শার্ট-প্যান্ট পরে মেয়েদের মতো করে সেজে চুলগুলো মেয়েদের মতো করেই পেছনে নিচ্ছিস।একদম হাবলা আর বিচ্ছিরি দেখতে।জোকারও ফেল হয়ে যাবে।
ঈশান আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু অর্ণবের ধমকানিতে ওরা চুপ হয়ে গেলো।
অর্ণবঃ তোরা এখানে চুপ করে বসে আছিস কি করে? দেখতে পাচ্ছিস আমাদের বোনু মন খারাপ করে বসে আছে। আর তোরা ফুসুরফাসুর করে কি বলছিস?
অরূপঃ কিছু না বড় ভাই।এমনি কথা বলছিলাম আরকি।(আমতা আমতা করে)
আদিলঃ বোনু কি হয়েছে তোর?বলবি তো।না বললে বুঝবো কি করে?তোর মন খারাপ কেন?এই তিন হাঁদারাম কিছু বলেছে?
উষাঃ ???
অর্ণবঃ তুই কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে বল?ওরা যদি কিছু করে থাকে তাহলে ওদের খবর আছে।
উষাঃ ওদের আচ্ছা করে বকে দেও।ওরা আমার কোন কথা শুনছে না।এতো ভালো করে বললাম তাও শুনলো না। তোমাদের বকা খেলে ঠিকই শুনবে।জলদী বকে দেও।(ন্যাকা কান্না করে)
আদিলঃ আচ্ছা বকবো।আগে বল হয়েছেটা কি?
উষাঃ আমি ওদের বলেছি চুপ করে ভালো ছেলের মতো বসে থাক। আমি তোদেরকে সাজিয়ে মেকআপ টিউটোরিয়াল শিখি।কিন্তু ওরা আমার কথা শুনছে না। বরং আমাকে নানা কথা শোনাচ্ছে।
উষার কথা শুনে অর্ণব, আদিল একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
আদিলঃ এটা কেমন কথা বোনু?ওরা তো ছেলে।ওরা কেন সাজবে?
ইশাতঃ এই কথাটাই আমরা বোনুকে বোঝাতে পারলাম না।তোমরাও একটু বোঝাও।
ঈশানঃ বোনু বিষয়টা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
অরূপঃ ছোট ভাই তুই চুপ থাক।এখানে কথা বলার জন্য তো বড় ও মেজু ভাই আছে।তুই মাঝের থেকে শুধু শুধু মাথা গরম কেন করছিস।
অর্ণবঃ বোনু তুই নিজের ওপর মেকআপ টিউটোরিয়ালগুলো ট্রাই করতে পারিস।ওদেরকে এসবের মধ্যে টানছিস কেন?
উষাঃ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ ?।তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না।ভালোবাসলে এমন কথা বলতে পারতে না।তোমরা সবাই পঁচা। আমি থাকবো না তোমাদের সাথে। আজই আমি জিবরানের কাছে চলে যাবো।তোমাদের সাথে কোন কথা নেই। আর যদি আমাকে এখন ওদের সাজাতে না দেও তাহলে তোমাদের দুজনকেও আমি সাজিয়ে দিবো বলে দিলাম।তোমরা একটুও ভালো না।আমাকে ভুলে গেছো।ভালবাসলে এই ছোট আবদারটা রাখতে।
ঈশানঃ আমাদের সদর দরজাটা উত্তর দিকে। তুই সেখান দিয়ে চলে যেতে পারিস।যদি কোন হেল্প লাগে তাহলে আমাকে বলতে পারিস।আমি তোকে তোর গন্তব্য পৌঁছে দিবে।
উষাঃ শয়তান, তুই আমার সাথে কথা বলবি না।তুই হলো নাটের গুরু।সবাই ঠিক বলে ছোটগুলো বদের হাড্ডি হয়।তোর জন্য সবাই সাজতে মানা করছে।নয়তো সবাই সাজতো।(নাক টানতে টানতে)
অরূপঃ বোনু তুই কাঁদিস না।তুই কাঁদলে কিন্তু আমাদের ভালো লাগে না।
ইশাতঃ জলদী চোখের পানি মোছ।আমি আর নিতে পারছি না তোর চোখের পানি। তুই যদি এখন চোখের পানি না মুছিস তাহলে আমরা কেউ তোর সাথে কথা বলবো না। (কড়া গলায়)
উষাঃ তাহলে বলো তোমরা আমার কাছে সাজবে।নয়তো আমি চোখের পানি মুছবো না।
অরূপঃ আচ্ছা, আমরা রাজি।
উষাঃ সত্যি ?।
ইশাতঃ হুম।
উষাঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ। তোমরা আমার ভালো ভাইয়ু।আমি জানি তোমরা আমার কথা রাখবে।এতো ভালো ভাইয়ুরা কি আমার কথা ফেলতে পারে।
ঈশানঃ হয়েছে আর পাম মারতে হবে না।জলদী কর।আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। আগামীকাল ভোরে আবার কলেজের পরিষদের কাজে এক জায়গায় যেতে হবে।
ইশাতঃ আমি একটা কথা ভাবছি বোনু?।
(ভাবার অভিনয় করে)
উষাঃ কি?
ইশাতঃ আমাদের তিনজনকে শুধু সাজাবি কেন?বড় ও মেজু ভাইয়াকেও সাথে নে।তারাও তো আমাদের ভাই।তাদের ছাড়া কি আমরা কোন কাজ করি বল।তাছাড়া তোর আরো দুইটা মেকআপের এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাবে।আমার বুদ্ধিটা কেমন?
উষাঃ ভালো বুদ্ধি। বড় দুই ভাইয়ু বাদ যাবে কেন?তাদেরও আমি সাজিয়ে দেই।(খুশি হয়ে)
উষার কথা শুনে অর্ণব, আদিল একে অপরের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে একসাথে বললো।
অর্ণব,আদিলঃ একদম না।
ঈশানঃ এবার বোঝো ঠেলা।নিজেরাও এসে আমাদের মতো করে ফেঁসে গেলে।
অর্ণবঃ আমরা কেন?ওদের তিনজনের ওপর এক্সপেরিমেন্ট কর না বোনু।আমদের কি সেই বয়স আছে।
আদিলঃ মনে হচ্ছে উপরের থেকে এসেই এই রাতের বেলা ফেঁসে গেলাম।(বিরবির করে কথাটা বলে উষার দিকে তাকিয়ে বললো)এমনটা করিস না বোনু।তোর যতখুশি ওদের তিনজনের ওপর মেকআপ ট্রাই কর।আমরা কিছু বলবো না। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দে।
উষাঃ কাউকে ছাড়ছি না।চুপ করে তোমরা দুজনোও সোফায় বসো।আমি একে একে সবাইকে সাজিয়ে দিবো।আমার পাঁচ ভাইয়ু আজ সুন্দর করে আমার কাছে সাজবে।কি মজা!! কি মজা!! আমার যে কি খুশি লাগছে।
পাঁচ ভাই একসাথে বলে উঠলো —- ওহ্ নো।
ঘন্টাখানিক পর ওদের সাজানোর শেষে ওদেরকে দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে উষা।প্রত্যেকের মুখ মেকআপে সাদা হয়ে আছে।চোখে আইসেড,গালে ব্লাস,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। যা দেখা যাচ্ছে। তা আপনারা একটু কল্পনা করে নিন।মাথায় ছোট ছোট করে দুটো ঝুটিও করে দিয়েছে। পাঁচ ভাই আয়নায় নিজেকে দেখে জোরে আত্মচিৎকার দিলো।ওদেরকে এখন যা দেখাচ্ছে।তাতে নিজের চেহারার দিকে তাকাতেও পারছে না। জোকারের থেকে কোন অংশে কম নয়।উষা হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে ওদের সাথে সেলফি তুলতে লাগলো।তারপর আবার ওদেরকে দেখে সোফায় বসে পেট ধরে হাসতে লাগলো।পাঁচ ভাই মনে মনে ভেবেছিলো বোনকে অনেক বকে দিবে।কিন্তু ওর মুখে হাসি দেখে তা আর করতে পারলো না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে তার হাসি দেখতে লাগলো।বোনের মুখের হাসির জন্য সবকিছু করতে পারে তারা।এই বোনুই তো তাদের সব।
________________(সমাপ্ত)___________________
ওদের ছয় ভাই-বোনকে অনেক মিস করছিলাম।তাই একটা ফিরে দেখা পর্ব দিয়েই দিলাম।বিয়ের আগের ঘটনা দিয়েছি।তাই কোন ভাইয়ের বউ এবং জিবরান এখানে নেই। নুহাকেও রাখিনি।শুধু ওদের ৬ ভাই-বোনকে রেখেছি।মন চাইলে ওদের নিয়ে সিজন ০৩ দিতেও পারি।আবার নাও দিতে পারি ?।
বোনু সিজন ০১ এর লিংকঃ
https://m.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2967651016796964/