বৈবাহিক চুক্তি পর্ব, ৯+১০

0
1951

পর্ব ৯+১০
#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ৯

হুগলি নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত কলকাতা শহর যাকে আনন্দনগরী বলা হয়ে থাকে, এই কলকাতা নামকরণের পেছনে একটি মজার মত হচ্ছে ‘খাল’ ও ‘কাটা’ এই দুইয়ের বিকৃতির ফলে নাকি এর উৎপত্তি। নাটক, রঙ্গ মঞ্চ আর থিয়েটারে রমরমা এই কলিকাতা শহর যাকে অনেকে ক্যালকাটা বলেও চিনে। অনেক কবির সাহিত্যচর্চা এই শহরকে কেন্দ্র করেই হয়েছিলো যার মধ্যে বাংলার কবি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ ও রয়েছে। সমরেশ মজুমদারের ‘কলকাতা’ রচনায় কলকাতায় নানাধরনের মানুষের বাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, এটিকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। ভারত সম্রাজ্ঞী ‘রাণি ভিক্টোরিয়া’ এর স্মৃতিসৌধ হিসেবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল রয়েছে এই শহরে।এই হল থেকে ১৫ মিনিট দূরত্বে রুশিদের ফ্লাট।

রাত ১০ টার কাছাকাছি সময়, রুশি কাজ শেষে ফ্লাটে ফিরছে। আজ 5 দিন হল কলকাতা ফিরেছে, আবারো আগের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। সেই রেডিওতে কাজের পাশাপাশি তিনদিন ধরে একটি ফাইভ স্টার হোটেলের পারটাইম জব করছে ও।
সুজির বাবার বন্ধুর হোটেল এটি, তাই কাজ পেতে বেগ পেতে হয়নি, বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা৩০মিনিট পর্যন্ত শিফট ওর, যেহেতু রুহান বাসায় তাই ওভারটাইম করেনা ও। বাংলাদেশে যাওয়ার কারণে বেশ কিছুটা ঋণের নিচে আছে ও তাই এই জব বেছে নেয়া যা সেফ।

কিন্তু তিনদিন ধরে বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে ও, সবসময় সিক্সথ সেন্স বলে ওকে কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কেউ ওর পিছু নিচ্ছে কিন্তু পিছনে ফিরতেই যেন সব ঠিকঠাক। এই যে অফিসে, বাসে, বাড়ির পাশে এমনকি রেস্টুরেন্টে থাকাকালীনও এমন হয় ওর সাথে, প্রথমে মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিলেও তিনদিন ধরে মনের ভুল কি করে হতে পারে? কোন ভুতটুত পেছনে লাগলো নাতো? আজকে কেমন জানি একটু ভয় লাগছে তাই ব্যাগটি শক্ত করে ধরে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো নিজ ছায়া ব্যতীত অন্য একটা ছায়া তার পিছু নিচ্ছে, সে স্থির হতেই ছায়াটিও স্থির হয়ে গেলো। এটা দেখেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।

ভুতদেরতো ছায়া থাকে না তারমানে আস্ত জলজ্যান্ত মানুষ পিছু নিয়েছে, ভয় আড়ষ্ট হয়ে দ্রুত হাটা শুরু করলো কারণ এত রাতে ছিনতাইকারী ছাড়া আর কে পিছু নিবে! সামনে কয়ফুট লম্বা গলি দেখেই গলির মাথায় দাঁড়িয়ে পড়লো, সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না।এবার ও স্থির হলেও ছায়াটি স্থির হলো না বরং ক্রমশ তার নিকটে আসতে লাগলো,রুশি ভয়ে আটশাট হয়ে গেছে, ছায়া যত নিকটবর্তী হচ্ছে হৃদস্পন্দন যেন তত দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে। খুব নিকটবর্তী হতেই ও ব্যাগ খামছে ধরে খিচে দাঁড়াল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ছায়ার মালিক কাছে না এসে পাশ কাটিয়ে গলিতে চলে গেল।ভয়ে লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল, গলিতে ঢুকতে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলো রুশি, না যা ভাবছিল তা নয় কেউ ওর পিছু নিচ্ছিল না।
কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে অন্ধকার সেই গলির ভেতর দিয়া হাটা শুরু করলো, শেষমাথার কাছাকাছি আসতেই হেচকা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এমন ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব রুশি, মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও যে ধাক্কা দিবে সেই শক্তিটাও মনে হচ্ছে নেই, ও নিশ্চুপ হয়ে ব্যাক্তিটির লাভ-ডাভের আওয়াজ শুনছে। লোকটি হঠাত তার হাত কিছুটা আলগা করলো, হাত দিয়ে মাথা উচু করে রুশির অধরযুগল নিজ আয়ত্তে নিয়ে নিলো, রুশির কয়েকসেকেন্ড লাগলো বুঝতে যে কি হচ্ছে, বুঝতে পেরেই লোকটিকে ধাক্কা দিতে লাগলো কিন্তু লোকটি যেন এই পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো, লোকটি ওর হাত দুটো ধরে পেছনে নিয়ে আকড়ে ধরলো আর সচেতন ভাবে অধর সুধা পান করতে লাগলো।

রুশি চেয়েও একফোঁটা নড়তে পারেনি, ওর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, এতক্ষণ ছুটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে ও শান্ত হয়ে গায়ের ভার লোকটির গায়ে ছেড়ে দেয়। ও শান্ত হতেই লোকটি ঠোট ছেড়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজ করে বলে
“যতই পালিয়ে বেড়াও না কেন তোমার গন্তব্য কিন্তু আমি তাই যেই রাস্তায় তুমি চলো না কেন আমাতেই তোমার সমাপ্তি হবে, সো বি রেডি ফর বিং মাইন ”

তারপর ওকে ছেড়ে দেয় লোকটি, ছেড়ে দিতেই এদিক ওদিক না তাকিয়ে রুশি ছুটে গেলো ফ্লাটের রাস্তায়। গলির শেষমাথায় আসতেই সোডিয়াম লাইটের আলোয় মুখখানি স্পষ্ট হয়ে উঠলো লোকটির, আংগুল দিয়ে ঠোটের কোনা ঘষতে ঘষতে মুচকি হেসে বললো

“আজ তো ছেড়ে দিলাম কিন্তু দ্বিতীয় বার কিন্তু ছাড়বো না বউসোনা, তোমাকে আমার হতেই হবে শুধু আমার আর আমাদের মাঝে যে আসবে তাকে আমি শেষ করে দিবো, মাত্র আর কয়েকঘন্টা তারপর…”

🌸🌸🌸

রুশি ঘরে এসেই রুহানকে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো, ব্যাগটা খাটের কোনায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য,ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোট ঘষতে লাগলো, এতক্ষণ যাবত সাবান দিয়ে ঘষার পরও যেন শান্তি লাগছেনা, মনে হচ্ছে ঠোট কেটে ফেলি। লজ্জায় মাথা, নাক, কান সব কাটা যাচ্ছে, একটা ছেলে ওকে কিস করে চলে আর ওকে শায়েস্তা না করে ও পালিয়ে চলে এসেছে ভাবতেই রাগ উঠছে
” এত ভিতু কবে থেকে হলি রে তুই রুশি, একটা লোক ছিনতাই করার পরিবর্তে তোর কিস করে চলে গেলো আর তুই হাবার মত দাঁড়িয়ে ছিলি! যেই ছাড়লো ওমনি পালিয়ে এলি, তোর ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দেয়া উচিৎ ছিলো।বেয়াদব, অসভ্য ছেলে একা মেয়ে পেয়ে আমার সর্বনাশ করে দিলো, যদি আবার সামনে পাই একদম ঠোট কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো খচ্চর কোথাকার ”

চিরুনি শক্ত করে খামচে ধরে রাগি ফেস নিয়ে বললো যেন পেলে এখনি কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে, রুশির এহেন কাজ দেখে শব্দ করে হেসে দিলো সায়ান। ওকি জানে স্বয়ং ওর স্বামী ওকে কিস করেছে! জানলে কি লজ্জা পেতো ও নাকি এমন রাগই দেখাতো? ভেবে পায়না ও

” চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড ওয়াইফি, কাল তোমাকে লুকিয়ে নয় সামনে দেখা দিবো, দেখি কি করে কাটো আমার ঠোট, হাহা আবার বলে এমন ভিতু হলো কবে থেকে! ভিতু তো আগে থেকেই ছিলো নতুন করে হবে কি? তোমার দুষ্টু মিষ্টি চেহারা খুব কাছ থেকে চাই আমি, এই দূরত্ব যে আর প্রাণে সয়না, খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে তোমায় আর সেই দিন খুব দূরে নয়”

দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো সায়ান, এয়ারপোর্টে ও খুব হেল্পলেস হয়ে বসে ছিলো ও তখনি সায়ান এসে বললো “বস আপনার জন্য কলকাতায় যাওয়ার ইমার্জেন্সি ভিসা লাগয়েছি,কয়েকঘন্টায় হাতে পেয়ে যাবেন, আর ওইখানে লোক লাগিয়ে দিয়েছি আপনি পৌঁছানোর আগেই ম্যাডামের খবর পেয়ে যাবেন, আর ওইখানে হোটেল বুক করাও হয়ে গেছে, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন ম্যাডামকে শিগ্রই পেয়ে যাবেন ”

সায়ানের তখন খুব ইচ্ছে করেছিলো সাহিলকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু জড়তার কারণে হয়ে উঠিনি। থ্যাংকস বলে প্যাকিং করতে চলে যায় ও বাসায়। কলকাতায় আসার পর রুশিকে এই কয়দিন ধরে ফলো করছে ছায়ার মতো। ওর প্রত্যকটা গতিবিধি লক্ষ্য করছে একমিনিটের জন্য ও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না তাই রুশিদের পুরো ফ্লাটে ইলেক্ট্রিসিটি চেক করার নামে সিসিটিভি ফুটেজ লাগিয়ে দিয়েছে। এখন বাসায় এসেও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। চারবছরের নয়ন তৃষ্ণা যেন মিটাচ্ছে ও, উজ্জলশ্যাম বর্নের মুখ, খাড়া নাক, টানা টানা চোখ আর গোলাপি ঠোট সবমিলিয়ে সৃষ্টিকর্তা যেন খুব নিপুণ ভাবে বানিয়েছে তাকে। সবচেয়ে আকর্ষনীয় হচ্ছে ঠোটের উপরে বামপাশের তিলটা যেন এই অপরুপ সৌন্দর্যে কারো নজর না লাগে তাই এই নজরটিকা। আর সুন্দর নারিটিই তার বউ শুধু তার, যার দিকে হয়তো ও হাজার বছর তাকিয়ে থাকতে পারবে। মন আচমকাই যেন গেয়ে উঠলো

” পড়েনা চোখের পলক
কি তোমার রুপের ঝলক
দোহাই লাগে মুখটি তোমার
একটু আচলে ঢাকো
আমি জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো
বাচাতে পারবে নাকো ”

#পর্বঃ১০

“দ্যা গড অফ কুকারি” রেস্টুরেন্ট এর প্রধান ফটকের বামপাশের একটি টেবিলের সামনে বসে আছে সায়ান, বারবার ঘড়ি দেখা দেখে একটা মেয়ে ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করলো
“স্যার আর ইউ ওয়েটিং ফর সামওয়ান? ”

সায়ান জোর পুর্বক হেসে বললো “নো”

“নো একচুয়ালি, ইউ আর কন্টিনিউয়াসলি লুকিং এট দ্যা ডোর এন্ড এরাউন্ড ইউ, আর ইউ লুকিং ফর সামওয়ান? ”

” নো, নট লাইক দেট ”

মেয়েটি ওর কাছ থেকে সরতেই ফোন বের করে সাহিলকে ফোন দিলো ” এই রেস্টুরেন্ট এ ও কাজ করে তাহলে এখনো আসছেনা কেন? হোয়ার ইজ শি ডেম ইট ”

“স্যার আমি কি করে জানবো, আমিতো বাংলাদেশে আছি”
” আমি কিছু জানিনা, আমি ওকে দেখতে চাই রাইট নাউ”
” সাহিল… আমি জানিনা তুমি কি করবে বাট এখুনি খুজে বের করো ও এখনো আসেনি কেন?”
” ইয়েস বস”

দুপুর তিনটা থেকে পাচটা পর্যন্ত দীর্ঘ দুই ঘন্টা ১৫ মিনিট ধরে ও অপেক্ষা করছে, মেয়েটি এত কেয়ারলেস! ওর জন্য ওয়েট করতে করতে দশ কাপ কফি অলরেডি খেয়ে ফেলছে আর কিছু ডিনারের জন্য পেটে ঢুকাতে পারবে কিনা সেই টেনশনে আছে ও আর এদিকে এই মেয়ের কোন খবর নেই! সায়ান জামিল খান রেস্টুরেন্টে একটা মেয়ের জন্য ওয়েট করছে! দাদাজি এই কথা শুনলে হয়তো তৃতীয়বারের মত স্ট্রোক করবে, গড সায়ান কি দিন আসলো তোর!!

” স্যার একচুয়ালি আজ তো সানডে তাই.. ”

আজ সানডে? ওহ ডেম কি করে ভুলে গেলাম আমি ইন্ডিয়ায় সানডে ইজ হলিডে, এই মেয়ের চক্করে কিনা আমার ভুলনেকি বিমারি শুরু হোগাই, ওয়েট…

” রেস্টুরেন্টে কিসের সানডে? এই দিনেই তো ওয়ার্কার্সরা বেশি বিজি থাকে কজ কাস্টোমার বেশি থাকে, সো হোয়াই শি ইজ নট হেয়ার? এত ইরেস্পন্সিবল মেয়েকে রাখলো কে?”

“বাট স্যার মেয়েটা তো আপনার বউ ”

সাহিলের কথাটা শুনেই হালকা কেশে উঠলো ও, থেকে থেকে নিজের ভেতরে থাকা বিজনেসম্যান জেগে উঠে তবে ও হলে কিন্তু এমন ইরেস্পন্সিবল ওয়ার্কারকে না থাক বউটা তো ওরই। আসলে কেউ ঠিকি বলেছে
“পুরুষ মানুষ যতই বাইরে বাঘ হয়ে বেড়াক ঘরে কিন্তু সে ভিজা বিড়াল হয়েই ফিরে আসে ”
কারণ নারিরা এত শক্তিশালী যে পুরুষকে নিজের বাড়ির বাইরে রাত কাটাতে বাধ্য করতে পারে, আর ওরতো রাতবিরাতে ঘরে ফিরার অভ্যাস। না জানি কত রাত বাইরে কাটাতে হতো, নাহ এই অভ্যাস অচিরেই পরিবর্তন করতে হবে।

” স্যার মেম আসলে ছুটিতে আছে একদিনের তার ছেলেকে নিয়ে নাকি ঘুরতে যাবে কোন পার্কে এটাই বললো ম্যানেজার ”
” ছেলে? ”
” ইয়াহ ছেলে যাকে আপনি বাঁচিয়েছিলেন আর ওইযে হসপিটালে ছিলো, ভুলে গেলেন! কিন্তু স্যার আপনি তো মেম এর সাথে ছিলেন না তাহলে কি বেবিটা এডপ্টেড? ”
” ওই বাচ্চার বয়স কত? “কাপা গলায় বললো সায়ান
” স্যার প্রেসক্রিপশনে তো তিন বছর দেখেছিলাম ”

সায়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, নাহ বাচ্চাটি এডোপ্টেড না কি সেটা জানা নেই তবে বাচ্চাটি অন্যকারো নয়, কারণ রুশানিকে ফলো করার আজ পঞ্চম দিন কিন্তু তার সাথে কোন ছেলেকে দেখেনি সে। আর যদি কেউ থেকেও থাকে তাহলে তাকে সরে যেতে হবে নাহয় নিজে মেরে ফেলবে তাকে। ওর বউ শুধু ওর যার এক চিমটি ভাগ ও কাউকে দিবে না, কাউকে না। রুশিতে এতটাই মগ্ন ছিলো যে বাচ্চাটিকে দেখেও দেখে নি ও, ওর দৃষ্টি সর্বদা ওতেই ছিলো যে অন্যসব খেয়ালই করেনি।
তাহলে বাচ্চাটি কি ওর?যদি হয়ে থাকে তাহলে ও নিজেকে কি বলে মনে করবে এই মুহুর্তে?
সুখি মানুষ! যার কিনা বউ বাচ্চা নিয়ে একটা সুন্দর ফ্যামিলি আছে।নাকি সবচেয়ে অভাগা! যে এই মুহুর্তে জানতে পারলো তার তিনবছরের একটা বেবি আছে।ও তাকে জন্মাতে দেখেনি, বড় হতে দেখেনি নাহ এখন পর্যন্ত সরাসরি দেখেছে। রুশিকে দেখার জন্য যতটা না ডেস্পারেট তার থেকে বেশি ওর ছোট্ট বাচ্চাটাকে দেখতে ডেস্পারেট ও। কার মত দেখতে হয়েছে ওর ছেলে? ওর মত নাকি ছোট্ট বউটার মত!

” সাহিল গিভ মি দ্যা পার্কস এড্রেস, আর হ্যা রুশানি এই চারবছর কি করেছে না করেছে আই ওয়ান্ট এভরি পিস অব ইনফরমেশন, কালকের মধ্যে চাই ”

“ইয়েস বস, হয়ে যাবে”

🌸🌸🌸

সাহিলের দেয়া পার্ক এড্রেসে এসে বেঞ্চে বসে আছে ও, চারপাশে অনেক মানুষ সাদা-কালো, বাদামির মিশ্রণে যাদের মিউলেটো বলে, এশিয়া মহাদেশের হয়তো প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশীয় মানুষগুলো মিশ্র প্রকৃতির, তাদের মাঝে সকল দেশের ছোঁয়া পাওয়া যায় যেন আস্ত পৃথিবীটা এখানে বসবাস করে। অনেকগুলো বাচ্চা এখানে খেলা করছে, সবাই পাচের নিচে আর তারপাশে তাদের বাবা মা বসে আছে। চারপাশে তাকাতেই আমগাছের নিচে বসে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটির দিকে নজর পড়লো ওর, কোন একদিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে গম্ভীরভাবে, দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই দেখে একটা লোক তার ছেলেকে নিয়ে খেলছে।ছেলেটিকে দেখে নিজের সন্তানের কথা মনে পড়লো সায়ানের, তার ছেলেটিও কি এভাবে অন্যবাবা সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকে?ওর খুব কষ্ট হলো এটা ভেবে, এতোগুলা বছর বাবা ছাড়া কি করে কাটিয়েছে ও। বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে পড়লো ও,

” নামকি তোমার বাবু?”

” আমি কোন বাবু নই, অলরেডি থ্রি ইয়ারস ওল্ড। আর মাম্মা বলেছে অচেনা কাউকে নাম বলতে না” গম্ভীর চেহারা নিয়ে বললো বাচ্চাটি, সায়ান মনে মনে ভাবছে বাচ্চাটিতো ওর থেকেও এক লেভেল উপরে, এত ম্যাচিউরড বাচ্চা ও কখনো দেখেনি।

” ওকে বলবো না বাবু, আমি তোমার অপরিচিত তাইতো? তাহলে চেনা হলে তো বলবে তাইনা? ওকে মাই নেম ইজ সায়ান জামিল খান আর তোমার? ” হাত বাড়িয়ে

” নিজের নাম বললেই চেনা হয়ে যায়না, তবে আপনাকে দেখে জেন্টলম্যান মনে তাই বলছি, মাই নেম ইজ রুহান ওকে ” হাত মিলিয়ে হ্যান্ডশেক করে।

” বাহ তুমি খুব স্পষ্ট কথা বলতে পারো এতটুকু বয়সেই ”
” কারণ আমি বড় হয়ে গিয়েছি, আচ্ছা আপনিও তো ফর্সা দেখতে আপনাকে কেউ ইংরেজের বাচ্চা বলে না”

সায়ান ভ্রু কুচকে তাকালো, এই শব্দটা তার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর শব্দ। ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে প্রায় শুনতে হতো এটা এমনকি ওর তখনকার বেস্ট ফ্রেন্ড তো ওকে প্রায় চেতাতো এটা বলে, এখন যে কোথায় আছে কে জানে। তবে জেনে ভালো লাগলো ও একা নয় আরেকজনকেও এটা বলে।

” বলতো তবে এখন বলে না ”
” তারমানে বড় হলে আর বলে না তাইতো ”
” আচ্ছা তুমি কার সাথে এসেছে এখানে?”
” মাম্মা আর মাসির সাথে ”
” বাবা আসে নি?মিস করছো তাকে?”
” নাহ, রুহানের বাবাই তো নেই, কখনো আসে না দেখা করতে তাই রুহান রাগ করেছে বাবাইয়ের উপর, রুহান হেটস বাবাই ”

“রুহান কার সাথে কথা বলছো তুমি? তোমার মাম্মা অচেনা কারো সাথে কথা বলতে হয়না? মাম্মাতো খাবার কিনতে গিয়েছে তাই বলে তুমি অন্যদের সাথে কথা বলবে”

রুহান আর সায়ান দুজনই পেছনে তাকিয়ে বাইশ – তেইশ বছরের মেয়ে দেখতে পেলো, সায়ান কথা বলতে বলতে রুহানকে কোলে বসিয়ে ছিলো তাই রুহান কোল থেকেই তাকিয়েছে, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সায়ান চিন্তায় পড়ে গেলো কোথায় যেন দেখেছে তাকে কিন্তু মনে পড়ছে না

” ইটস ওকে মেম, আমি জাস্ট কথা বলছিলাম”

“আপনি কথা বলছেন তা আমিও দেখছি কিন্তু সবাইতো আর আপনি হবেন না তাইনা, আমাদের তো সচেতন থাকতে হবে ”

” জি আমি আপনার কন্সার্ন বুঝতে পারছি ”

তখনি পেছন থেকে নারি কন্ঠ ভেসে উঠলো,হাতে আইস্ক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুশি, ঠোটের কোনে মুচকি হাসি।
“রুহান… সুজি”

রুশিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে গেলো সায়ান,ওর কোলের বাচ্চাটি ওর নিজের সন্তান, ওর ছেলে রুহান…
সায়ানের কোল থেকে রুশির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো রুহান।
“মাম্মা,তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ? ”
” আইস্ক্রিম কিনছিলাম বেবি, নেও এটা তোমার জন্য ইউর ফেভারিট স্ট্রভেরি ফ্লেভার ”

সায়ান রুশির কোলে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়, অজানা গন্তব্যে হাটছে ও। এতোগুলা কো ইন্সিডেন্স, সবথেকে বড় কথা ওর ছেলে ওকে দেখতে পারে না, ছোট্ট শিশুটার মনে বাবার জন্য এতটা আক্ষেপ, ওকি জানে ওর মাকে কতদিন যাবত খুজে বেড়াচ্ছে ও, যদি আগে পেয়ে যেত তাহলে ওর ছেলে ওকে বলতো যে ” রুহান হেটস বাবাই “,
“আম স্যরি বাবা, আমি ভালো বাবা হতে পারিনি না ভালো স্বামী।তবে এরপর থেকে বাবা তার বেস্ট ট্রাই করবে দুটোয় হওয়ার, আই প্রমিস ইউ ”

#চলবে

( জানিনা কি লিখছি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here