বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ২৪

0
1369

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২৪(শেষ)
#প্রথমাংশ

“ইচ্ছে তো করছে মেরে ফেলি তোকে কিন্তু না এত সহজে তোকে মরতে দেয়া যাবে না, এখনো আরো অনেক কিছু বাকি আছে ”

“হাহাহা হাহাহা “হাসিতে ফেটে পড়লো সায়ান, হাসতে কষ্ট হচ্ছে তবুও হাসছে, তারপর উঠে দাঁড়াল আর শার্ট ঠিক করে চুলে হাত দিয়ে বললো

“কেমন লাগে যখন মনে হয় সবকিছু তোর অনুযায়ী চলছে অথচ তোকেই অন্য একজন নাচাচ্ছে, বুঝলিনা তো?সাহিল… ”

তখনি সায়ানের দিকে পয়েন্ট করা গান সাহিল ইনানের মাথায় ঠেকালো, ইনান অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাহিলের দিকে

“তোর সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস, তুই আমাকে সায়ান জামিল খানকে আন্ডারেস্টিমেট করেছিস। ভুলে গেছিস তুই আমার এক আঙুলের ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড হেলে যেতো, আর তুই আমাকে আন্ডারওয়ান্ড কিং কে বোকা বানাচ্ছিলি?আমি ওই জগত ছেড়ে দিয়েছি তবে মানুষটি কিন্তু আমিই আছি। এই যে তোর আশেপাশের যাদের ভাবছিলি যে তোর কাজ করেছিলো! ওরা আসলে আমার কথায় তোর সাথে ছিলো। তাকিয়ে দেখ ভালো করে সব আমার লোক আর আমার ইশারায় তোকে মেরে গেড়ে রেখে দিবে ”

“সেই আমি এত সহজে ভুলে গেলাম কি করে যে তুই একটা খুনি, দ্যা গ্রেট ভিলেন সায়ান জামিল খান ” ইনান ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো।

“আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর কিং ছিলাম কথাটা সত্য কিন্তু আমি কখনো কোন নির্দোষ মানুষকে মারিনি, যারা আমাকে মারতে এসেছে আমি তাদের মেরেছি ”

“তাহলে ছবিগুলো মিথ্যে, এইখানের মানুষটি তুই নস? ”

“আমি তা বলিনি, এইছবির সিন সম্পুর্ণ সত্যিই তবে তুই যা জানিস তা পুরোটা সত্যি নয় ”

“হুহ পুরোটা সত্যি নয়! তুই যতই নির্দোষ প্রমাণ করতে চাসনা কেন তুই খুনি ছিলি আর থাকবিও। আমাকে মেরে ফেললেও সত্য মিথ্যে হয়ে যাবে না”

“তুই জানিস তোর বাবা কার পক্ষ হয়ে কেস লড়ছিলো? লরেন লিউস এর হয়ে যে কিনা রেপ, উইমেন ট্রাফিকিং, মার্ডার, কিডন্যাপ এমন কোন কাজ নেই যে করেনি, ক্যালিফোর্নিয়ার ডন ছিলো সে। একটা মেয়েকে রেপ করার ট্রাই করেছিলো তার লোক কিন্তু করতে না পারায় মেয়েটিকে মেরে ফেলে ও আর আমার দলের লোক সেটাই দেখেছিল। যেহেতু ওকে ওইখানে শেষ করতে পারেনি তাই ওর নামে মিথ্যে রেপিং এর কেস দিয়ে দিয়েছে আর এমেরিকা এই ব্যাপারে কত স্ট্রিক্ট তা তো জানিসই তুই। আমি তোর বাবাকে বারবার বলেছি লরেন লিউস এর হয়ে কেস লড়তে না কিন্তু সে শুনে নি।তাই তাকে কিডন্যাপ করে এনে বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু সে বুঝেনি ”

“আর তাই তাকে মেরে দিয়েছিস? তাইনা!”

“নাহ মারিনি বরং বুঝাচ্ছিলাম তবে আমার হাতে গান ছিলো যেটা দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে পিছু হটতে বলছিলাম কিন্তু সে সরেনি। পরে লরেন লিউসের বিরুদ্ধে তথ্য তাকে দিয়েছি সাথে প্রমাণও আর সে কেস বন্ধ করে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে বলেছিলো লড়বেনা তাই আমি নিজে তাকে তার অফিসের নিচে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”

“এই মিথ্যে কাহিনী বানাতে কতক্ষণ সময় লেগেছে তোর?”

“আমি মিথ্যে বলছি! সব স্বিকার করে নিলাম যদি এটা করতাম তাহলে এটাও স্বিকার করতাম ” বলেই ইনানকে ঘুষি মারলো সায়ান,ইনানের কলার চেপে ধরে বললো

“কিন্তু তুই, তুই কি করেছিস? আমার বদলা আমার ছেলের উপর নিচ্ছিলি? ওকে ড্রাগস দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিলি?তোর যা বদলা তুই আমার উপর নিতি, আমাকে মেরে ফেলতি কিন্তু আমার ছেলের দিকে নজর দিলি কেন?”

বলেই পাল্টাক্রমে দুজন দুজনকে মারতে লাগলো, সাহিল এগিয়ে এসেও থামাতে পারেনি তাই রুশিকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য, কারণ সায়ানকে একমাত্র রুশিই থামাতে পারবে।

“আর ইউ মেড আমি তোর ছেলেকে কেন টার্গেট করবো? হ্যা মানছি অনেক আগে আমি তোর ছেলে সন্তানকে খুজে তোকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিলো না। তাছাড়া আমি প্লেন অনেক আগেই চেঞ্জ করে তোর কোম্পানিকে টার্গেট করেছি যা তুই নিশ্চয় টের পেয়েছিস ”

“তাহলে তুই আসার পর থেকে আমার ছেলের এই অবস্থা কেন হয়েছে?আর ওর শরীরে ড্রাগস কোথা থেকে আসলো? ”

“সেটা আমি কি করে জানবো? আমি তোর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি কিন্তু তোর ফেমিলিকে কখনো টার্গেট করিনি। তুই ভাব যদি ফেমিলিকে টার্গেট করারই থাকতো তাহলে তোর একমাত্র বোনকেই তো টার্গেট করতে পারতাম আমি কিন্তু আমি এতোটাও নিকৃষ্ট নই। তাছাড়া আমি সামুকে ভালোবাসি অনেক টাই বেশি ওর কিছু হওয়া কল্পনাও করতে পারিনা। আর ভাবি আর রুহানকে তো কখনোই টার্গেট করবো না, ও ছোট একটা বাচ্চা সায়ান। এত নির্দয় আমি নই ” সায়ান ওকে মারার জন্য হাত উঠিয়েও নামিয়ে ফেললো, কারণ ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও যা বলছে সত্যি বলছে আর ওর কথা ঠিক। চাইলেই ও সামুকে টার্গেট করতে পারতো কিন্তু ও তা করেনি এর মানে অন্যদেরও টার্গেট করবে না। তাহলে এসব করছে কে?

“ইনান আমার মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমাদের মধ্যে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট করছে, আমি তোর বাবাকে সত্যিই মারিনি ” শান্ত স্বরে বললো সায়ান।

“তাহলে কে মেরেছে বল আমার বাবাকে? বল?”সায়ানের দিলে তেড়ে এসে বললো।

“ইনান স্যার, বস যা বলছে সত্যি বলছে, বস তার যে লোকের কথা বলেছে সেই লোকটি আমিই ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আপনার বাবা কেস লড়ছিলো কিন্তু শেষ মুহুর্তে উনি বলেছিলেন যে এই কেস উনি লড়বেন না। আমরা নিজে ওনাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”

“আচ্ছা এইটা বল তোর বাবা কিভাবে খুন হয়েছে?”

“তাকে গুলি করা হয়েছিলো আর শরীরে অনেক আঘাত ছিলো ”

“দেখ এই ছবিতে আমি গান হাতে ছিলাম কিন্তু আমি মেরেছি এমন কোন প্রমাণ আছে?”

“ওয়েট বস… স্যার আপনার বাবা কত তারিখে খুন হয়েছে? মনে আছে আপনার? ”

“ওই তারিখ আমি কি করে ভুলতে পারি, ২৭ আগস্ট ছিলো সেই দিন”

“দেখুন এই ছবির এইখানে ২৫/৮ দেয়া, মানে এটা ২৫ আগস্টের ঘটনা, মানে তার দুইদিন পর আপনার বাবা খুন হয়েছে। এই দুইদিন আপনার বাবা বাসায় যায়নি? ”

“হুম এসেছে আর ২৬ তারিখ আমরা ঘুরতেও গিয়েছিলাম ”

“তাহলে আপনি জানেন আপনার বাবা ওই কেস থেকে সরে গিয়েছিলো, তাই আমাদের তাকে মারার কোন রিজনই ছিলো না তাছাড়া আমরা নির্দোষ মানুষকে কখনো মারিনি”

“তাহলে আর কে মারবে আমার বাবাকে? তুই যদি না মারিস ”

“বাকি কে থাকে তাহলে যার হয়ে তোর বাবা কেস লড়েনি?”

“লরেন লিউস?”

“হুম, তুই জানিস! আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম ক্লাবে ফাইটিং করার পর থেকে, আমাকে বলেছিলো ফাইট শিখাবে কিন্তু কখন যে জড়িয়ে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। আর দুই বছরের মধ্যেই আন্ডারওয়ার্ল্ড কিং হয়ে গিয়েছি কিন্তু তবে আমি কোন পাপকাজে নিজেকে জড়াইনি ”

“যদি তুই নির্দোষ হয়ে থাকিস তাহলে ছেড়েছিস কেন?”

“কারণ ওইযে ওই কর্ণারের ছেলেটি আছেনা? ওর নাম হচ্ছে এমরে, ও একটা মেয়েকে পছন্দ করতো কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ড এ থাকার কারণে তাকে মেরে ফেলেছে শত্রুরা, এটা দুই বছরে প্রথম ভয় হয় আমার সামুকে নিয়ে, কারণ ওইমেয়েটির জায়াগায় আমি সামুকে দেখতে পাচ্ছিলাম তাই ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমি চাই আমার ভুলের মাশুল আমার বোন দিক। ছাড়াটা সহজ ছিলো না কিন্তু আমি জোর করে চলে এসেছি
ওই জগতে ঢুকা যত সহজ কিন্তু বের হওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। আমার অতীত আমার পিছু ছাড়েনি। তুই জানিস কতবার মৃত্যুর দ্বার থেকে বেচে ফিরেছি আমি?”

“তারমানে তুই বাবাকে মারিস নি তাহলে আমাকে এমন ছবি পাঠিয়ে তোর বিরুদ্ধে খেপালো কেন?”

“কেউ একজন চায় আমরা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলি আর সে এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ফেলুক ” বলেই দুজন সায়ানের চাচার দিকে তাকালো তখনি দেখে ওর চাচা ওদের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আর সাহিল ওর চাচার দিকে বন্দুক তাক করে আছে।

“চাচাজান বলে দিন কেন এসব করেছেন? ”

“অবশ্যই সম্পত্তির জন্য, তোর দাদা তোদের বেশির ভাগ সম্পদ দিয়েছে কিন্তু আমাকে ফিফটি পার্সেন্ট বলে মাত্র ৩০% দিয়েছে।ওই লোককে তো আমি প্রায় মেরেই ফেলেছিলাম কিন্তু বেচে ফিরলো কি করে কে জানে! কিন্তু আমি তোর একা শত্রু না আরো…”
আর কিছু বলার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, রক্তে মেঝে লাল হয়ে গেলো, সায়ান ইনান দুজনেই ভরকে গেলো। সায়ান গুলির উৎস খুজতে লাগলো তখনি পরিচিত কন্ঠ ভেসে উঠলো

সায়ান অস্ফুট স্বরে বললো “লরেন লিউস”

#চলবে

(রাত্রে ফাইনাল পার্ট দিবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here