বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১

0
3815

অন্ধকারে বিবস্ত্র অবস্থায় ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো রুশি। আবছা আলোয় পাশে থাকা পুরুষালি অবয়বকে দেখতে পাচ্ছে সে তবে মুখখানি স্পষ্ট ঠাউর করতে পারছে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে সে তার স্বামীকে এখন পর্যন্ত দেখেনি তবে নিজের সবচেয়ে দামি জিনিসটা হারিয়ে ফেলেছে। তবে এতে কি আদোও পাশে থাকা লোকটির দিকে সে আংগুল তুলতে পারবে সে? সে তার বউ, আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা। তার তো ওর উপর সম্পুর্ণ অধিকার রয়েছে হোক না পরিচয়টা একরাতের!
কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পুরো জীবনের খাতা বদলে গেলো?
সবে মাত্র আঠারোতে পা সদ্য কিশোরী রুশানি আনাম। জন্মের সময় সে তার মাকে খেয়েছে এমনটাই ছোট থেকে শুনে আসছে সে এমনকি তার বাবাও বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে নি। স্ত্রীর মৃত্যুর দায় রুশির ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের বাবা নামক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাই বাবার আদর কেমন হয় তা জানা হয়ে উঠেনি তার। তবে মনের গভীর এক প্রশ্ন বারবার কড়া নেড়ে যায়, স্ত্রীকে যদি এতই ভালোবাসতেন তবে তার মৃত্যুর একমাসের মাথায় তারই ছোটবোনকে নিজের সহধর্মিণী হিসেবে গ্রহণ করলো কি করে? কি এই প্রশ্নটি করার সাহস আর ইচ্ছে কোনটিই নেই, হয়তো সত্য জানার ভয়ে।
বড় হওয়ার পর থেকে সৎ জিনিসটা খুব ভালো করে বুঝে গেছে সে। বাড়ির সকলের কাজ একা হাতে সামলানোর দায়ভার তারই ছিলো। এইট পাশ কোনমতে বাবার পয়সায় শেষ করতে পারলেও নাইন থেকে আর বাবা আর খরচ চালানোর সাহস দেখাননি। হ্যা সাহস! কারণ ছোট মার কথা ছাড়া তিনি নিঃশ্বাস ছাড়তেও ভয় পান বড় আদরের বউ কিনা! আর পড়াশোনার খরচ বন্ধের কারণ হলো তানহা মানে রুশির সৎ বোন ভালো রেজাল্ট করেনি। সেই থেকে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে এইচএসসি অবদি এসেছে।তবে একজন ব্যাক্তি খুব সাহায্য করেছে এমনকি টিউশনিও সেই খুজে দিয়েছে।

আজ বিকালে টিউশন করেই বাসায় ফিরছিলো তখনি গুলির শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ায়। আর আওয়াজ উৎস খুঁজে সে দিকে তাকাতেই দেখে একটি লোক মাটিতে পড়ে আছে আর রক্তে সাদা ধুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আর সামনে একজন লোক গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি ওকে নোটিশ করতেই দৌড়াতে চাইলো সে কিন্তু অসাড় পা দুটো নড়তে ভুলে গেলো যেন। সামনের লোকটি উপায়ন্তর না দেখে গান তাক করলো ওর দিকে, মৃত্যু নিশ্চিত জেনে চোখ বন্ধ করে নিলো তখনি এক বলিষ্ঠ হাতজোড়া খুব দ্রুত তাকে সরিয়ে নিলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই সেই বলিষ্ঠ হাতের মালিক তাকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো। কতক্ষণ দৌড়েছে জানেনা তবে হঠাত ওর পা দুটো চলা বন্ধ করে দিলো আর চোখ দুটো বুঝে এলো। তবে পড়ে যাওয়ার আগে ঝলঝল করে উঠা বাদামি চোখ দেখতে পেলো। সেই চোখে কত মায়া! মনে হয় যুগযুগ ধরে তাকিয়ে থাকতে পারবে সেই চোখের গভিরতায়।

…চোখ মেলে নিজেকে জীর্ণশীর্ণ এক তাকিয়ায় দেখতে সে। মাথাটা খুব ভার ভার লাগছে। ঘরে একটা মোমবাতি জলছে সেই আবছা আলোয় ঘরভর্তি কিছু লোক দেখতে পেলো আর সাথে একজন লোককে কয়েকজন লোক ধরে রেখেছে, ঠিক লোক নয় চব্বিশ কি পঁচিশের যুবক বলা চলে। কপালে আর ঠোঁটের কোনে রক্ত জমাট বেধে আছে মনে হচ্ছে কেউ মেরেছে কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো ছেলেটি মাস্ক পরে আছে। তখনি কেউ ধাক্কা দিলো রুশিকে। পাশ ফিরে দেখলো এক মাঝ বয়সী মহিলা কিছু একটা বলছে। কথা ধরতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ওর। মহিলাটি ওকে কবুল বলতে বলছে কিন্তু কবুল! কিসের কবুল। আহাম্মকের মত তাকিয়ে থেকে রুশি প্রশ্ন করলো

“কবুল? কিসের কবুল বলতে বলছেন আপনি?”

“তোমরা নাকি জামাই বউ তাইলে কবুল বলতে এত তামাসা করতাছো কেলা ”

“জামাই বউ! কিসের জামাই বউয়ের কথা বলছেন আপনি? আমার তো বিয়েই হয়নি তাহলে জা..”

তখনি রুশিকে আর না বলতে দিয়ে মাস্ক পড়া ছেলেটি বললো “আরে কি বলছেন আপ…তুমি মানে কি বলছো তুমি? আমি জানি তুমি রেগে আছো তাই বলে মিথ্যে বলে মার খাওয়াবে আমাকে?”

পাশ থেকে একবলিষ্ঠ পুরুষালি কন্ঠেবলে উঠলো পঞ্চাশউর্ধ এক লোক “মিয়া ভাই এগেই কইছিলাম এই ব্যাটার মধ্যে ঘাপলা আছে, দেহেন না এত মাইর খাওয়ার পরেও ব্যাটা মাস্ক খুলে নাইক্কা আবার বলতাছে এই মাইয়্যা নাহি তার বউ, মনে মাইয়্যারে কিডন্যাপ করছে, এই যে মা জননী বলেন তো এই পোলা আপনার কেঠা লাগে? ”

তাদের কথা শুনে বুঝলাম ছেলেটি আমাকে নিয়ে এসেছে এইখনে কিন্তু কে এই ছেলে, এটা কি সে যে আমাকে বাঁচিয়েছে! ছেলেটা আমার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে কিছু না বলার জন্য মিনতি করছে। আমার কোন জবাব না পেয়ে তারা ধরেই নিয়েছে যে ছেলেটি আমাকে কিডন্যাপ করছে তাই তারা তাকে পুলিশে দেয়ার কথা বলছে। এই ছেলেটি যদি আমাকে বাচিয়ে থাকে তাহলে আমার জন্য সে ফেসে যাবে তা কি করে হতে দেয়

তাই অবশেষে মুখ খুলে বললাম ” জি উনি আমার স্বামী ”
তখনি সাদা পাঞ্জাবি পরা এক লোক বলে উঠলো “আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই। আপনারা দ্বিতীয়বার বিয়ে করতেই পারেন। তাহলে বলেন মা আপনি কি সায়ান জামিল খানকে একশত এক টাকা দেনমোহরে বিবাহ করতে রাজি আছেন? বলেন কবুল ”

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, তবে কি আমার ভাগ্যে ছিলো? একটা অচেনা অজানা লোকের সাথে বিবাহ নামক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া? মন এই সম্পর্কের বিরোধিতা করলেও বিবেকের কাছে হেরে গেলাম। আমার জীবন্টাই তো এই লোকের উসিলায় বাচলো তাকে আমি বিপদে ঠেলে দেয় কি করে তাই মনের বিরোধিতা করে কবুল বলে দিলাম। সাথে অজানা ভয় গ্রাস করলো আমায় এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি আর বাবাকেই বা কি জবাব দিবো?

সবাই একে একে ঘর ছেড়ে দিলো আর রয়ে গেলাম আমরা অপরিচিত দুই প্রানী। কি হবে এই সম্পর্কের শেষ? এটি কি আমার জীবনের নতুন ভোর হয়ে আসবে নাকি মেঘে ঢাকা কোন এক কালো রাত হয়ে?

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#সুচনা_পর্ব

(কেমন হয়েছে জানিনা, এই ধরনের গল্প প্রথম লিখলাম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here