বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৩+ ১৪

0
1897

পর্ব ১৩+১৪
#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৩

“সাইন দিস পেপারস ”
এতক্ষণের নিরবতা ভেংগে বলে উঠলো সায়ান, রুশির দিকে তিনচার পেজের একটি ফাইল এগিয়ে দিয়ে।

“কিসের পেপার এটা? ” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, এতদিন পর লোকটিকে দেখে প্রথম তরফায় তাকিয়ে থাকলেও এখন ঘোর কেটে গেছে, মনের গহিনে ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছুই আসছেনা।

“এটা একটা চুক্তিনামা যেখানে লিখা আছে রুহানের এটলিস্ট আঠারো বছর হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার স্ত্রীর মর্যাদায় আমার পাশে থাকবে, মানে এককথায় এটি একটি #বৈবাহিক_চুক্তি। ”

সায়ানের এহেন কথায় রুশি বেশ চেতে গেলো, এতক্ষণ যথেষ্ট ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি হেন্ডেল করতে চাইলেও এখন ধৈর্যের বাধের সমাপ্তি ঘটেছে, তাই চেঁচিয়ে বলে উঠলো
” আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয় না অবলা নারী? আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই শুনতে পাচ্ছেন আপনি?”

” আস্তে কথা বলো বউসোনা, এত চিল্লিয়ে কথা বলে কি লাভ হবে বলো ”

” ডোন্ট ডেয়ার টু কল মি দ্যাট, আপনাকে আমি চিনিনা আর চিনতেও চাইনা, আমাকে আমার মত থাকতে দিন, ভালোয় ভালোয় বলছি আমার ছেলেকে দিয়ে দিন ”

“তুমি আমাকে চিনো না! এত তাড়াতাড়ি আমার ছোঁয়া ভুলে গেলে নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছো? আমি মনে করিয়ে দিবো বউসোনা? ”

সায়ানকে নিজের দিকে ঝুঁকতে দেখে রুশি নিজের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে থাপ্পড় মারতে ধরলেই সায়ান হাত চেপে ধরে যেন এমন পরস্থিতি হবে আগে থেকেই অবগত ছিলো,হাত ধরে পেছন দিকে নিয়ে একহাতে চেপে ধরে আর আরেকহাতে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে বলে

” গতবারের থাপ্পড় মারার পরিণামের কথা ভুলে গেলে? তুমি যদি সেটাই চাও তাহলে আমার কিন্তু কোন সমস্যা নেই, এতদিন পর বউকে কাছে পেলাম। একটু আদর যত্ন তো করতেই পারি ”

রুশির খুব করে বলতে ইচ্ছা করলো “তোর বউয়ের মায়রে বাপ ” সাথে এমন কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করলো যা শুনে বলবে ” ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি “কিন্তু নিজের এই ইচ্ছাকে কোন মতে সংযত করলো। এই মুহুর্তে রাগের মাথায় কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে, তার থেকে ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে কথা বলতে হবে যাতে নিজে থেকে পিচু হটে যায়

” আপনি এতটা শিওর কি করে হচ্ছেন রুহান আপনার ছেলে, আমি কলকাতা শহরে থাকছি এখানে ওইধরনের সম্পর্ক খুব একটা কঠিন কিছুনা তার উপর একা থাকি আমি ”

রুশিকে ছেড়ে দিয়ে ও বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, রুশি এই দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলো সে অনেকটা কনভিন্স করে ফেলেছে তাই আবার বললো

” এবার বুঝতে পারছেন তো রুহান আপনার ছেলে নয়, ওকে আমার সাথে যেতে দিন ”

“আমার নাম কি জানো? সায়ান জামিল খান, আমাকে এত বোকা ভাবো তুমি?”

সায়ান জামিল খান, অন্যসব কিছু ভুলে গেলেও এই নামটা এই কয়বছরে স্পষ্ট মনে ছিলো তাইতো রুহানের বার্থডে সার্টিফিকেটেও ওর বাবার এটাই লিখা সাথে ওর নাম রুহান জামিল খান লিখা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই নামটি লিখিয়ে বড় ভুল করেছে ও।

” আপনি যেই হোন না কেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আমার ছেলের বাবা নেই আর না হবে কখনো। ওর মাই ওর জন্য যথেষ্ট, আপনি আমার ছেলেকে দিয়ে দিন আমাকে ”

” জানো রুশি, রুহান যদি আমার ছেলে না হতো তাহলেও আমি তোমাকে ছাড়তাম না সেখানে রুহানতো আমার সন্তান। তুমি কি ভাবছো অন্য হাজবেন্ডদের মতো বলবো ” এই সন্তান কার? ” আমি পাশে ছিলাম না বলে আমার বিশ্বাস এত ঠুনকো নয়, আমি জানি তুমি না বললেও এটা আমার সন্তান আর না হলেও আমার সন্তান হিসেবে রাখতাম ওকে কারণ ও তোমার সন্তান। আমি তো ভেবে অবাক হচ্ছি তুমি আমার থেকে বাচার জন্য নিজের চরিত্র নিয়ে এত জঘন্য কথা বললে? কি করে পারলে এটা। আমি তোমাকে কখনোই আমার থেকে আলাদা হতে দিবো না কখনো না ”

” কেন ভালোবাসেন আমাকে? “তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে

” কি মনে হয় তোমার?

” হাহাহা, আপনি আমাকে ভালোবাসেন!! আর এটা আমাকে বিলিভ করতে বলছেন? তাহলে ওইদিন ওভাবে ছুড়ে ফেলে যেতেন না, হাজবেন্ড হিসেবে না হোক একজন মানুষ হিসেবে হলেও রেস্পন্সিবিলিটি নিতেন”

” আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি না তুমি গিয়েছো?”

” আমি ছেড়ে গিয়েছি আপনাকে? আপনার মাথা ঠিক আছেতো নাকি?ঘুম থেকে উঠে ওই বিছানায় আমি একা ছিলাম আপনি ছিলেন না, আর দয়া দেখিয়ে খাবার রেখে গেছেন ”

” সাথে একটা চিরকুট ছিলো সেটা চোখে পড়েনি? ”

” পড়েছে তো যেখানে লিখা ছিলো ” খাবারটা খেয়ে নিয়ো এবং নিজের খেয়াল রেখো আর এদিকটা সামলে নিও”

“তাহলে ওইখানে লিখা ছিলো তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি আমি? ”

” লিখা ছিলো না কিন্তু বুঝতে পারা যায় নাকি যে আপনি সুন্দরমতে কেটে পড়েছেন ”

” তোমাকে এত বুঝতে বলেছে কে? কেউ ঠিকি বলে মেয়েমানুষকে একলাইন বললে তারা তিনলাইন আগবাড়িয়ে বুঝে , আমি ওইটা দ্বারা তোমাকে খাবারটা খেয়ে নিজের খেয়াল রাখতে বলেছি, চলে যেতে বলিনি। যদি চলে যাওয়ার থাকতো তাহলে কিছু না বলেই চলে যেতাম, ওইসব লিখতাম না। তুমি জানো ওইদিন কি হয়েছিলো? ওইদিন তুমি যাদের মারতে দেখেছো না তারা আমাকে মারতে এসেছিলো কিন্তু আমাকে যখন পায়নি তখন নিজের লোককেই মেরে ফেলেছে যা তুমি দেখেছো। ”

” মানুষের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই না আপনাকে সবাই মারতে যাবে?”

” আসলেই তাই কাজ নেই তাদের। ওইখানে একটা কলেজে ফাংশন ছিলো যেখানে আমি এটেন্ড করেছিলাম। আমার বডিগার্ডরা খোজ পায় যে আমার উপর হামলা হতে পারে তাই আমি কালো হুডি আর মাস্ক পড়ে বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু তারপরো ওরা টের পেয়ে যায় তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আর তখন দেখি একটা ডাম্বো গান পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিজে মরার জন্য ওয়েট করছে,তাই তাকে বাচাতে গিয়ে আমার হাত পর্যন্ত কেটে ফেলেছি। কিন্তু উনিতো অজ্ঞান হয়ে আমাকে উদ্ধার করে দিয়েছেন যে তাকে কেরি করতে হয়েছে। আর পারছিলাম না বলে আশেপাশের মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছি কিন্তু তারা হুট করে প্রশ্ন করে বসলো মেয়েটি সম্পর্কে আমার কি হয়, বোন বললে তো আর বিলিভ করবে না তাই বলেছি বউ। কিন্তু ওইলোকগুলো আমাকে বিশ্বাস করলো না আবার কিডন্যাপার বলা শুরু করে দিলো, এখন এমনিতেই পালাতে পালাতে হয়রান তারউপর গণপিটুনি খাওয়ার শখ হয়নি তাই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি ”

” বাই এনি চান্স আপনি কি কথাগুলো আমাকে মিন করে বলছেন? ”

” ওহ খোদা কাকে কি বললাম? সারারাত পড়ালাম রামায়ণ সকালে বলে সীতা কার বাপ।ভাগ্য ভালো আমার ছেলে আমার মতো হয়েছে ”

“তারমানে আমি ডাম্বো? আপনি আমাকে ডাম্বো বলেছেন? ”

” না আমাকে বলেছি, আসলেই আমি একটা ডাম্বো নাহয় ওইদিন লম্বা চৌড়া একটা অনুচ্ছেদ লিখে যেতাম যে দয়া করিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করিবেন জনাবা, তুমি জানো সকালবেলা তোমাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য সকাল সাতটায় আমি কত পথ হেটে বিরিয়ানির পেকেট জোগাড় করেছি? রাতের বেলা কান্না করে তুমি ক্লান্ত ছিলে তাই নিজের খেয়াল রাখতে বলেছি আর তোমার যাতে হাটতে না হয় তাই নিজের ফেলেরাখা গাড়ি খুঁজতে বেরিয়েছি সাথে ফোন করার জন্য যাতে বডিগার্ড আসে আর তোমাকে সেফলি ওইখান থেকে নিয়ে যেতে পারি কারণ যেকোন সময় আক্রমণ হতে পারে আমার উপর আর আমি তোমাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলাম না। তুমি ওই জায়াগায় সেফ ছিলে আর যাইহোক ওই জায়গার খোজ কেউ পেতো না। কিন্তু আমার সব মেনেজ করে আসতে প্রায় নয়টা দশটা বেজে যেতে পারে তাই তোমাকে বলেছি এদিকটা সামলে নিতে। কিন্তু সাড়ে নয়টায় ফিরে এসে তোমাকে আর পায়নি, ওইখানের মানুষকে জিজ্ঞেস করেও লাভ হয়নি, কেউ কিছুই বলতে পারেনি। জানো কত অসহায় মনে হচ্ছিলো নিজেকে?
একবার মনে হচ্ছিলো তোমাকে ওরা ধরে ফেলেছে আরেকবার মনে হচ্ছিলো নাহ তুমি ঠিক আছো। চারটি বছর ঠিক এই ধারণা নিয়ে বেচে আছি আর তোমাকে পাগলের মত খুঁজেছি কিন্তু পায়নি। কারণ যে নিখোঁজ হয় তাকে খুঁজা যায় কিন্তু যে ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় তাকে খুজা যায়না।”

সায়ান কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবার বললো “যাইহোক একবার পালিয়েছ আমার থেকে কিন্তু দ্বিতীয় বার সেই চান্স পাবে না,আর এখনতো আমার কাছে ট্রাম্পকার্ড আছে, তাই দেরি না করে পেপারস সাইন করো কারণ তুমি আবার পালিয়ে যেতে পারো তোমার বিশ্বাস নেই এন্ড আই ওয়ান্ট শিউরিটি যে তুমি আর পালাবে না ”

ফাইল আর পেন এগিয়ে দিলো রুশির দিলো সায়ান আর রুশি শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে, হয়তো কোন বড়সড় ঝড়ের পুর্বলক্ষন এইটা

#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১৪

“আপনার কি মনে হয়?এইসব গুছানো মিথ্যে কাহিনী আমাকে শুনাবেন আর আমি বিশ্বাস করে ফেলবো, এটা যদি আরো চারবছর আগে বলতেন হয়তো তখনকার ইমোশনাল রুশি আপনার কথা মেনে নিতো কিন্তু এই বাস্তবতা চিনে সাথে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষের আসল সত্য। আপনি কি বাংলা সিনেমা পেয়েছেন যে হিরোর পেছনে পুরো দুনিয়া পড়ে আছে।বোকা পেয়েছেন আমাকে যে আপনি বলবেন চার বছর ধরে খুঁজছেন আমাকে আর আমি মেনে নিবো!! আপনার সস্তা ভালোবাসা অন্যকারো সামনে দেখাবেন”
তাচ্ছিল্যের সাথে রুশি বললো কথাগুলো,সায়ান হাত মুঠো করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করছে, এইমুহুর্তে রাগের বশে কিছু করা যাবে না বরং ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে হবে।

” আমার ফিলিংসকে তোমার যাই মনে হোক না কেন তা দিয়ে তুমি সত্যিটা ঢেকে ফেলতে পারবে না, আমি তোমাকে কতটা চাই তা শুধু আমি জানি ”

“হুহ, আসলে আপনি এই ভালোবাসার মিথ্যে নাটক কেন করছেন জানেন? কারণ আপনি জানতে পেরেছেন আপনার একটা ছেলে আছে। ছেলেরা যতই খারাপ আর মেয়েবাজ হোকনা কেন নিজের বংশধরকে নিজের কাছে নেয়ার জন্য তারা সবকিছু করতে পারে যা আপনি করছেন। অনেক দেখেছি আপনার মতো বড়োলোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তানকে, আসলে আপনাদের মা বাবা টাকাতো ধরিয়ে দিয়েছে আপনাদের হাতে কিন্তু ভদ্রতা শিখায় নি। আর আপনি কতোটা অসভ্য তাতো আমি ওইদিনই বুঝে গিয়েছিলাম আপনার মা কি করে বাসায়? ”

কোন সান্তানই নিজের বাবা মা নিয়ে কথা শুনতে পারেনা সে যত ঠান্ডা মেজাজেরি হোকনা কেন আর সেখানে সায়ানের বাবা মা তো বেচেই নেই। ও কখনওই এতটা এগ্রেসিভ হতো না যদি ওর মা বাবা বেচে থাকতো। তাই ও এই কথাটা সহ্য করতে না পেরে এগ্রেসিভ হয়ে হাত দিয়ে রুশির চুল মুঠো করে ধরে কাছে এনে বললো

” আমার বাবা মাকে নিয়ে আর একটা কথা বললে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা ”

রুশি মাথায় খুব ব্যথা পাচ্ছে তবুও রাগ দেখিয়ে বললো ” দেখিয়ে দিলেন তো আপনার ঠুনকো ভালোবাসার নমুনা! আপনাকে আমার থেকে ভালো কে চিনবে বলেন?যে নিজের রাগ মিটাতে মেয়েদের আঘাত করতে পারে সে একটা কাপুরুষ ছাড়া আর কিছুই না। আপনারা কোন দায়িত্বই পালন করতে পারেন না শুধু জানেন পালাতে। আমি আমার ছেলেকে আপনার ছায়াতলে কোনদিন বড় হতে দিবো না ”

” চুপ, একদম চুপ তখন থেকে বলে যাচ্ছ আর আমি শুনে যাচ্ছি আর একটা কথা বললে খবর আছে তোমার ”

” কি করবেন আপনি আমাকে? মারবেন!ওইটাই তো বাকি রেখেছেন। মারুন না মারুন এই শখও পুরণ করুন ”

” ছিহ! এসব কি বলছো মারতে যাবো কেন আমি তো আদর করবো আদর ( বাকা হেসে) ট্রাই করে দেখো আর একটা কথা বলে ”

” আপনি ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?মনে করেন আপনি বলবেন আর আমি ভয়ে চুপ করে আপনার অত্যাচার সহ্য করবো?চে…”

রুশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, ও ভাবতেই পারেনি এই লোক যা বলেছে তাই করে দেখাবে। কি সাংঘাতিক ঘটনা। কিন্তু এই ছোঁয়া খুব পরিচিত মনে হলো

“ইউউউউউ, তারমানে ওইদিন গলিতে আপনি ছিলেন?”

“হাহাহা এতদিন পরে বুঝতে পারলে, তোমার কি মনে আমার সম্পদে আমি ছাড়া অন্য কারো হাত দেয়ার সাহস আছে? ”

” সেই আমি কি করে ভুলে গেলাম যে আপনার মতো অসভ্য অন্য কেউ কি করে হতে পারে?আমি কারো প্রোপার্টি নই যে আপনি নিজের বলে দাবি করবেন
ছাড়ুন বলছি আমাকে ছাড়ুন ”

” আমি প্রোপার্টি বলিনি ট্রেজার বলেছি মানে সম্পদ যেটা শুধু আমার আর কারো না, আর নিজের বউয়ের কাছে অসভ্য হবো না তো কার কাছে হবো হুম ” আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, এই লোকের থেকে যত ছুটতে চাচ্ছে তত আরো জড়িয়ে ধরছে।

” শুনো এতো কথা বলে লাভ নেই তাড়াতাড়ি এই পেপার সাইন করে দাও, আম ওয়েটিং ”

” আমি মরে গেলেও এই পেপার সাইন করবো না, আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন না কেন ”

” কেউ আসলে ঠিকি বলেছে তুমি প্রচণ্ড জেদি মেয়ে, সোজা কথা শুনবে না।কিন্তু সোজা কথায় ঘি না উঠলে আংগুল কি করে বাকাতে হয় তা আমার জানা আছে। তুমি যদি এই পেপারে সাইন না করো তাহলে ছেলেকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দাও”

” এই কথার মানে কি?”চোয়াল শক্ত করে বললো

“বাংলায় বলেছি আমি চাইনিজে বলিনি যে বুঝবে না ”

এবার অনেকটা রেগে গেছে রুশি, মন চাচ্ছে ধরে কতক্ষণ পিটাতে

“আমার ছেলেকে আপনি নিজের কাছে রাখার কে?”

” কখন থেকে নিজের ছেলে নিজের ছেলে বলে যাচ্ছো ভুলে যেওনা আমি ওর বাবা ”

” বাবা! বাবা হওয়ার একটা দায়িত্ব আজ পর্যন্ত পালন করেছেন?আমার সন্তানকে আমি একা জন্ম দিয়ে আর একাই মানুষ করতে পারবো। ওর জন্য নিজের দেশ পর্যন্ত ছেড়েছি আমি আর এতটাদিন একা মেয়ে হয়ে লড়াই করে গেছি। এই কলকাতা শহরে একা মেয়ে হয়ে বেচে থাকাটা কত টাফ সেটা আপনি কি জানবেন। কাউকে চিনতাম না আমি তবুও নিজের সন্তানের জন্য এতটুকু এসেছি আর আপনি হুট করে এসে বলছেন আপনি ওর বাবা আর অধিকার জামচ্ছেন?কান খুলে শুনে রাখুন আপনি আমার সন্তানের জন্মদাতা কিন্তু বাবা নন”

সায়ান কিছু বলতে চেয়েও পারলো না, রুশির রাগটা সম্পুর্ণ জায়েজ, একা একা কত ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে তবেঁ ওরও কোন দোষ ছিলো না। ও তো কিছুই জানতো না বরং ও খুজে বেড়িয়েছে ওকে। কিন্তু যাকে এত কষ্টে খুজে পেয়েছে তাকে আর কখনো হারাতে দিবে না। ওর রাগ -অভিমানগুলো ও ভাংগাবে কিন্তু তারজন্য পাশে থাকতে হবে ওকে

“তুমি বললেই সত্য, মিথ্যে হয়ে যাবে না।হয়তো কাছে জন্মদাতা ছিলাম কিন্তু এখন বাবা হয়ে দেখাবো। আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। তুমি যদি এই পেপার সাইন না করো তাহলে কালকের মধ্যে আমার ছেলেকে নিয়ে আমি দেশে ফিরে যাবো আর তুমি কিছুই করতে পারবে না। তাই ভেবে নাও কোনটা বেছে নিবে নিজের জেদ নাকি ছেলে। চয়েজ ইজ ইউরস এন্ড আই মিন ইট। ইউ হ্যাভ অনলি টু মিনিটস ”

“আপনার মতো জঘন্য মানুষ আমি দেখিনি, নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কি না করতে পারেন ”

” ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ মিনিটস, তাড়াতাড়ি ডিসিশন নাও নাহয় কাল থেকে ছেলেকে দেখার কথা ভুলে যাও”

রুশি বুঝতে পারলো এর সাথে লড়াই করে লাভ নেই কারণ এ হচ্ছে নাছোড় বান্দা। তারউপর বডিগার্ড অনেক আছে তারমানে রুহানকে নিয়ে যেতে পারে। অগত্যা উপায়ন্তর না দেখে সাইন করে দিলো। রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।

” এইতো ভালো মায়ের মত সিদ্ধান্ত নিয়েছ, আমি এটাই আশা করছিলাম। যাইহোক আজ রাত এখানে থাকো রুহানকে নিয়ে। অনেকরাত হয়ে গেছে অলরেডি ”

” জোর করে সবকিছু হাসিল করা গেলেও মন হাসিল করা যায়না, আপনি আমার নজরে আরো নিচে নেমে গেলেন ”

সায়ান কিছু বললো না শুধু তাকিয়ে রইলো, একজন বডিগার্ড রুহানকে এসে শুইয়ে দিয়ে গেলো কারণ ও অনেকক্ষন আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। গার্ডরা চলে গেলে রুশিও পাশে শুয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ চিল্লাচিল্লিতে মাথা ব্যাথা করছে।সায়ান সেটা দেখে বারান্দায় গেলো

জানে আজকের কাজটি ঠিক হয়নি, এতে রুশির রাগ আরো বেড়ে গিয়েছে কিন্তু কিছু করার নেই ওকে কাছে রাখার এইটাই একটা উপায় ছিলো। সিগারেট টানতে টানতে ভাবছে ” ওর বউটাকি জানে তার বিহনে কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে ও, শুধু ভেবেছে এখন কেমন দেখতে লাগছে তাকে?সেকি আমার কথা ভাবছে এখন?”
মেসেজের আওয়াজে ফোনের দিকে তাকালো, সুজি মেসেজ দিয়েছে যে রুশির ফ্রেন্ড।

” জিজ ওইদিকে সব ঠিকঠাক? মানাতে পেরেছেন ওকে?”

” না বরং আরো রেগে বম্ব হয়ে গেছে তোমার ফ্রেন্ড। যতটা বলেছো তার থেকে বেশি ঘৃণা করে তোমার ফ্রেন্ড ”
” এতদিনের অভিমান এত সহজে গলবে না জিজু, অনেক এফোর্ট দিতে হবে। শি ইজ আ টাফ গার্ল ”

“তাতো বটেই যাইহোক সাবধানে থেক তুমি”

” ওকে বায় জিজ”

সুজিই সেদিন রুহানকে কিডন্যাপ করার আইডিয়া দিয়েছিলো। ও ওইদিন রুশিদের ফ্লাটে গিয়েছিলো রুশির সাথে দেখা করতে কিন্তু ওকে পায়নি, পেয়েছে সুজাতা আর রুহানকে। ও সুজাতাকে সব খুলে বলে সব শুনে প্রথমে কতক্ষণ বকলেও পরে হেল্প করতে রাজি হয় ও বলে রুশি কখনওই রুহানের বাবার নাম মেনশন করে না আর রুহান বললেও চুপ থাকে। কিন্তু চোখমুখ দেখলে বুঝা যায় অনেক ঘৃণা করে তাকে। তাই ওকে সরাসরি স্যরি বললে কিংবা অনুনয় করলেও ও মানবে না। তাই অন্যভাবে ট্রাই করতে হবে। রুশির উইক পয়েন্ট রুহান তাই রুহানের জন্য রুশি তার সাথে থাকতে বাধ্য হবে। আর তারপর ধীরি ধীরে রাগ ভাংগাতে হবে। তাই প্ল্যান অনুযায়ী এসব করা।

সিগারেট ফেলে ঘরে প্রবেশ করলো সায়ান, রুশি আর রুহান একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। কি মায়াবী চেহারা তার শ্রেয়সীর, রাজ্যের সব মায়া যেন তার মুখে ছেয়ে আছে। আস্তে করে রুহানের পাশে সুয়ে পড়লো সায়ান। চুক্তি হোক আর যেভাবেই হোক ওর বউ আজ ওর পাশে। আর আজীবন পাশে রাখার জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত সায়ান।

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here