বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৪
#আনিশা_সাবিহা
–“আমাকে একবার বোঝার সুযোগ তো দেবে সায়রা? আর তুমি এসব জানলে কী করে?”
অভয়ের কথায় ওপাশ থেকে তাচ্ছিল্যের হাসির আওয়াজ আসে। তার মানে সায়রা তাকে তাচ্ছিল্য করছে! অভয়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সায়রা বলে….
–“আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয় অভয়? আমার চোখ আছে আর বোঝার মতো ক্ষমতাও আছে। আজ ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাগ্যিস ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। নয়ত এসব দেখতেও পেতাম না। ইভেন আমি তোমায় কলব্যাক করব ভেবেছিলাম। দেশে আসার পর তুমি পাল্টে গেছো অভয়।”
–“ওহ সায়রা, লিসেন টু মি প্লিজ! ওই মেয়েটার হেল্প করেছি মাত্র। তুমি ছাড়া আমি আর কারোর কথা ভাবতে পারি না। আমি তোমাকে সবসময় নিজের জীবনসঙ্গিনী বানানোর কথা ভেবেছি। তোমার জায়গা আর কাউকে দিতে পারব না আমি। বিলিভ মি!”
–“যদি তাই হতো তাহলে অন্য কারোর সাথে বিয়ে ঠিক করে আসতে না গিয়ে। এসব মিথ্যে স্বপ্ন তুমি অন্য কাউকে দেখিও। আমাকে না।”
অভয় থমকায়। ওর বিয়ের কথা সায়রা কি করে জানল? আগামাথা ভেবেও পায় না অভয়। টেনশনে কপাল থেকে ঘাম ঝড়তে থাকে। দেশে আসার পর থেকে সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে তার সাথে। কিছুই তার মনমতো হচ্ছে না।
–“কি হলো? কথা বন্ধ হয়ে গেল? তুমি তো বিয়ে করে নেবে। কিন্তু সমস্যাটা কি জানো? আমি তোমায় ভুলতে পারব না।”
–“তোমায় আমার বিয়ের কথা কে জানালো?”
–“কেন? যে জানিয়েছে সে তো ভালোই করেছে? নাকি অন্য কোনো প্ল্যান ছিল তোমার? বউ আর গার্লফ্রেন্ড দুটো নিয়েই থাকতে চাইছিলে নাকি?”
আর রাগ দমাতে পারে না অভয়। চেঁচিয়ে ওঠে সে।
–“সায়রা!!!”
ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসে না। অভয়ও এক মূহুর্তে চুপ হয়ে যায়। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে গুনগুন করে কাঁদার শব্দ। সায়রা কাঁদছে। অভয় সায়রার কান্নায় কাতর হয়ে পড়ে। বাইরে থেকে সে যতটাই শক্ত ভেতর থেকে সে ততটাই ইমোশনাল মানুষ। বিশেষ করে সায়রার কষ্টে সে ব্যথিত হয়।
–“অনেস্টলি আমি বিয়ে করতে চাই না সায়রা। আমি শুধু তোমার সাথে জীবন কাটাতে চাই। ঐশানীর সাথে নয়। কিন্তু বাবা-মা কেউ মানতে চায় না সেটা। তারা ঐশানীর সাথে বিয়ে দিতে চায় যেকোনো মূল্যে। স্পেশালি বাবা নিজের প্রিয় বন্ধুর কাছে ছোট হতে চায় না।”
অভয়ের এতো কিছু বলার পরেও যখন ওপাশ থেকে জবাব এলো না তখন কান থেকে ফোন সরায় সে। সায়রা আগেই ফোন কেটে দিয়েছে। বিরক্তির শ্বাস ফেলে ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে অভয়। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে টেবিলে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস এবং সাজিয়ে রাখার জিনিসগুলো এক হাত দিয়ে ছুঁড়ে মেরে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। এখন একমাত্র ঘুমই পারে তার রাগ কমাতে।
হালকা করে অভয়ের ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয় অনিন্দিতা। সে এতোক্ষণ সবকিছুই দেখছিল এবং শুনছিল। নরম সুরে ধীর গলায় সে একা একা বলে ওঠে….
–“আই এম সরি ভাইয়া। আমি জানি তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস। কিন্তু কিছু করার নেই। মাঝে মাঝে সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার থেকে কয়েকদিন কষ্ট পাওয়া ঢেড় ভালো। সায়রাকে মেসেজ দিয়ে আমিই জানিয়েছিলাম তোর বিয়ের কথা। যাতে সে তোর থেকে দূরে থাকে। সবার মনে হয় ও সুবিধার মেয়ে নয়। শুধু তুই-ই ওকে ভালোবাসার চোখে দেখিস।”
অভয়ের রুম থেকে সরে আসে অনন্দিতা। সে জানে, সায়রা তার বাবার শত্রুর মেয়ে। বিজনেসের দিক থেকে সায়রার বাবা রাহাত সাহেবের সাথে অনেক শত্রুতা করেছে। প্রথমে শেয়ারিং বিজনেস করেছিল তারা। একসময় রাহাত সাহেবের সমস্ত বিজনেস সায়রার বাবা কেঁড়ে নিতে চান। যার ফলে রাহাত সাহেব অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অভয় এসব ব্যাপারে অবগত হলেও তার বিশ্বাস হয় না সায়রার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে। তার ধারণা, দোষটা সায়রার বাবার। সায়রা এসম্পর্কে কিছু জানে না। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা আজও কেউ জানে না।
এসব ভেবে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অনিন্দিতা নিজের ঘরে এসে ফোন নিয়ে বসে পড়ে।
সকালে…..
–“ঐশানী! ঘুম হয়নি? উঠে পড়।”
বলেই ঐশানীর রুমের দরজা খুলে ঢুকে পড়েন মিসেস. দিশা। বেডে বালিশ ও চাদর এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে ঐশানী বেডে নেই। তা দেখে বিস্ময় কাটাতে পারলেন না তিনি। রুমে থাকা জানালার ওপরে বড় ঘড়ির দিকে তাকান মিসেস. দিশা। সকাল প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। এসময় ঐশানীকে বেডে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মিসেস. দিশাকে সবসময় তিন-চার বার করে ডেকে দিতে হয়। তাই আজকের ব্যাপারটা উনার কাছে পশ্চিম দিকে সূর্য ওঠার মতো।
ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙে মিসেস. দিশার। আগ্রহ নিয়ে এসে দাঁড়ান ওয়াশরুমের সামনে। এবার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না উনি। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আবারও তাকান। তার গুনধর মেয়ে কাপড় ধুয়ে দিচ্ছে। গলা থেকে ক্ষীণ সুর বের করে বলেন…
–“ঐশানী, তোর কি হয়েছে মা?”
ঐশানী ভেজা এবং সাবান মাখা পোশাকে পানি ঢেলে মায়ের দিকে তাকায়। তিনি বিচলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বলে…..
–“আমার আবার কি হবে মা?”
–“তুই আর কাপড়? তুই লাস্ট কবে নিজের কাপড়চোপড় ধুয়েছিস তোর মনে আছে? এটা কার কাপড়?”
–“শ্যামলা ঘোড়ার কটি!”
মুখ ফসকে বেড়িয়ে এলো ‘শ্যামলা ঘোড়া’ নামটি। সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন মিসেস. দিশা ঐশানীর দিকে।
–“শ্যামলা ঘোড়া মানে? দেখি দেখি। ওটা তো অভয়ের পোশাক মনে হচ্ছে। কাল যেটা পরে বাড়ি ঢুলেছিলি। তুই ওকে শ্যামলা ঘোড়া ডাকিস?”
–“প্রথম দিন ঘোড়ার মতো ছুটেছিল তো আর শ্যামলা নামটা বেশ সুট করে উনার ওপর। তাই মাথায় উনার জন্য ইউনিক নাম এসেছে।”
এবার মিসেস. দিশা ধমকে উঠলেন……
–“আবার এক থাপ্পড় লাগাবো। বেয়াদব মেয়ে। কয়েকদিন পর যার সাথে বিয়ে হবে তাকে উল্টো পাল্টা নামে ডাকিস কোন সাহসে? বিয়ের পর অভয়কে আপনি বলে সম্মোধন করবি।কখনো এসব নামে ভুলেও ডাকবি না।”
বলেই থেমে গেলেন মিসেস. দিশা। কাপড় ধুয়ে দিতে দেখে মেয়ের একটু সুবুদ্ধি হয়েছে ভেবে বেশি কিছু না বলে বিদায় নিলেন সেখান থেকে।
ঐশানী ব্যঙ্গ করে বলে উঠল….
–“আপনি বলে ডাকব? অ্যাহহহ! আসছে সম্মানীয় ব্যক্তি। ঠেলায় পড়ে কাপড় ধুয়ে দিতে হচ্ছে। জীবনটা তামা তামা করে ছেড়ে দিল আমার।”
অভয়ের পোশাকের ওপরেই সব রাগ ঝাড়তে থাকে ঐশানী। যেই কাপড় ধুয়ে দুই হাতে তুলে টান দিল রাগের চোটে হুট করেই শব্দ করে কটি মাঝখান দিয়ে ছিঁড়ে দুইভাগ হয়ে গেল। অজান্তেই ওষ্ঠদ্বয় ফাঁক হয়ে গেল ঐশানীর। তার নির্যাতন কি সামান্য পোশাক সইতে পারে? না পেরে বেচারা অবশেষে ছিঁড়ে গেল। হাত থেকে কাপড়ের দুই টুকরো ছেড়ে দিতেই নিচে পড়ে গেল। পানি মাখা হাত গালে লাগিয়ে ছলছল নয়নে তাকিয়ে ভাবতে লাগল, এখন সে কি করবে?
সকাল দশটা বেজে পনেরো মিনিট। অভয়ের মা মিসেস. তনয়া বসে বসে কাঁথা সেলাই করছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে চিকন ফ্রেমের চশমা পড়ে একনাগাড়ে কাঁথা সেলাই করতে দেখে অনিন্দিতা একসময় এসে বসে মায়ের পাশে। মিসেস. তনয়া অনিন্দিতার উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন….
–“অভয় এখনো ওঠেনি ঘুম থেকে?”
–“না মা। উঠলে তো নিচে নেমে আসে।”
–“ও তো এতো সকাল পর্যন্ত ঘুমোয় না। কিছু হয়েছে নাকি?”
থমথমে হয়ে যায় অনিন্দিতার মুখ। প্রসঙ্গ পাল্টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।
–“মা, আমি কি করে জানবো? তবে তোমার কী হয়েছে বলো তো? তুমি কাঁথা সেলাই করছো! ব্যাপারটা রহস্যজনক।”
মিসেস. দিশা মুখ তুলে তাকান না। সেলাই করতে করতেই এক গাল হেসে জবাব দেন….
–“বারে আমার ছেলের ঘরে বউ আসতে চলেছে। আমার নাতি-নাতনির মুখ দেখতে কতক্ষণ? আমায় রেডি হয়ে থাকতে হবে না?”
কথাটা শেষ হতেই পেট ধরে হাসতে শুরু করে অনিন্দিতা। ওর হাসি দেখে খানিকটা রাগ হন মিসেস. তনয়া।
–“হাসির কি বলেছি? নাতি-নাতনি হবে না আমার?”
হাসি কোনোমতে ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখে অনিন্দিতা। অস্পষ্ট ভাষায় বলে….
–“বিয়েটাই তো হলো না। ভাইয়াকে দেখে মোটেও মনে হয় বিয়ে নিয়ে ইন্টারেস্টেড। আর তুমি কি না বাচ্চা-কাচ্চার প্ল্যানিং করে রেখেছো?”
–“উঁহু, বিয়ের না হওয়ার মতো অলক্ষুণে কথা বলবি না। আমার অভয়ের পাশে ঐশানীকে কত সুন্দর মানায়। দুজনকে দেখেই মনে হয় একে ওপরের জন্য তৈরি। আমি তো স্বপ্নেও দেখেছি একদল নাতিপুতির সাথে খেলছি।”
আবারও দম ফেটে হাসতে শুরু করে অনিন্দিতা। মিসেস. তনয়া বিরক্ত হন এবার নিজের মেয়ের প্রতি। তাই ওকে পাত্তা না দিয়ে সেলাইয়ে মনোযোগ দেন। অনিন্দিতার হাসি থামে বাড়ির সদর দরজায় ঠকঠক আওয়াজে। নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ ভেসে আসে তাদের কানে। সেই সঙ্গে উঁচু জুতো পড়ে হাঁটার শব্দ। মিসেস. তনয়া এবং অনিন্দিতার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে ঐশানীকে। নীল রঙের লং জামা পড়ে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে একটুআধটু করে হেঁটে ঢুকছে ঐশানী। তার দুচোখ বাড়ির লোকজনকে খুঁজছে। অনিন্দিতার চিনতে ভুল হয় না ঐশানীকে। সে ছবিতে একবার ঐশানীকে দেখেছে। তাই মেয়েটাকে দেখামাত্র উঠে ছুটে যায় সে।
ঐশানী ভয়ে ভয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ তাকে কেউ জাপ্টে ধরায় চিৎকার করতে যাবে তার আগেই কেউ জোরে জোরে বলে উঠল….
–“ভাবি, ভাবি, ভাবি!”
‘ভাবি’ নামটি শুনে বোকা বোনে গেল ঐশানী। বিয়ে না হতেই ভাবি নামটা শোনায় তার উদ্ভট মনে হলো। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো কথা।
–“বিয়ে না হতেই ভাবি? এই বাড়ির বানর মুখো ছেলের সাথে যে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি শুকরিয়া আদায় করা উচিত।”
জোরে জোরে হেঁসে ওঠে অনিন্দিতা। এসে দাঁড়ায় ঐশানীর সামনে। ঐশানী মনোযোগ দিয়ে দেখেও চিনতে পারে না অনিন্দিতাকে। নতুন মুখ। এই মুখ আগে কখনো দেখেনি সে।
–“চিনতে পারলে না? আমি হচ্ছি সেই বানর মুখো ছেলের বোন।”
অনিন্দিতার হাসি হাসি মুখ দেখে ঐশানীর মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো….
–“চেনার কথাও না। ইভেন ওই বানর মুখো ছেলেকে যে দেখবে সে মানতে রাজি হবে না তুমি ওর বোন। একই মানুষের থেকে দুটো আলাদা প্রডাক্ট। তুমি তোমাকেই আমার ভালো লেগেছে।”
কথাটা বলে নিজেই থম মেরে গেল ঐশানী। কি বলছে সে? বেশ ইনোসেন্ট চেহারা করে তাকালো সামনে। অনিন্দিতা হেসে বলে….
–“তবে বিয়েটা আমার নিরামিষ ভাইকেই করতে হবে।”
ঐশানী হাসি দিলেও অভয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা শুনে তার মোটেও হাসি পাচ্ছে না। তার ইচ্ছে করল গরম ফুটন্ত তেলে অভয়কে ভাজতে।
–“মা আমায় একটু কফি বানিয়ে দাও তো তাড়াতাড়ি। মাথাটা ব্যাথা করছে।”
ফোলা ফোলা চোখমুখ নিয়ে, হাই তুলতে তুলতে এলোমেলো চুল নিয়ে ড্রয়িংরুমের বাম পাশে কাঠের ফাঁক ফাঁক সিঁড়ি দিয়ে ধীর গতিতে নেমে আসে অভয়। তাকে দেখে পিলে চমকে ওঠে ঐশানী। তার হাতে থাকা ব্যাগের দিকে তাকায় সে। ব্যাগে আছে তার ধুয়ে এবং ছিঁড়ে দেওয়া নোবেলপ্রাপ্ত অভয়ের জামা।
নিচে নামতে নামতে অভয়ের চোখে পড়ে ঐশানীকে। এক চোখ থেকে হাত সরিয়ে গমগমে আওয়াজে বলে ওঠে….
–“তুমি এখানে এইসময় কি করছো?”
–“ও কি করছে মানে? এবার থেকে তো ও-ই আসা-যাওয়া করবে বাড়িতে। তুই ওকে এসব অদ্ভুত প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করছিস কেন?”
বলেই এগিয়ে আসেন মিসেস. তনয়া। ঐশানী সঙ্গে সঙ্গে উনাকে সালাম দেয়। সালাম নিয়ে মাথায় হাত রাখেন মিসেস. তনয়া।
–“আসলে আন্টি, অভয় ভাই থুরি উনার কিছু জিনিস আমার কাছে রয়ে গেছিল। তাই দিতে এলাম।”
–“তুমি কেন এলো কি জন্য এলে এসবের কৈফিয়ত একদমই দিতে হবে না। তোমার ইচ্ছে হলেই আসবে। কারণ বাড়িটা তো একসময় তোমাকেই সামলাতে হবে না?”
ঐশানী একটা প্লাস্টিক মার্কা হাসি দেয়। অভয়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতেই দেখে অভশ বিরবির করে চলেছে কিছু একটা। একটু পর জোরেই বলে…
–“কফিটা কি পাবো?”
–“পাবি না কেন ভাইয়া? আমি আনছি।”
একপ্রকার দৌড়েই রান্নাঘরে ঢোকে অনিন্দিতা। অভয়ও পেছন ঘুরে ওপরের সিঁড়ির দিকে উঠতে থাকে। পেছন থেকে বাঁধ সাধেন মিসেস. তনয়া।
–“এই ছেলে এই। ওপরে কোথায় যাচ্ছিস? মেয়েটা প্রথমবার এসেছে কথাবার্তা বল। নিচে নাম।”
বিরক্তির শব্দ নিয়ে থেমে যায় অভয়। মিসেস. তনয়া আবারও বলেন….
–“কি হলো নিচে আয়।”
–“আমি এখনো ফ্রেশ হইনি মা।” (জোরে)
–“এইদিকে তাকিয়ে বল। তুই ফ্রেশ না হয়ে রুম থেকে কখনো বের হস না। সেটা আমি জানি। নিচে নাম।”
মনের ওপর জোর খাটিয়ে নিচে নামে অভয়। ঐশানীকে মিসেস. তনয়া বসিয়ে দেন সোফায়। নিজেও চলে যান রান্নাঘরে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ঐশানী। ধীরেধীরে ফোন বের করে কাউকে কল করার ভান ধরে সে। অভয় সেসব দেখেও দেখে না। মেয়েটাকে তার দেখতেও ইচ্ছে করে না। তারও কারণ আছে যথেষ্ট। সে তার জীবনে না এলে সায়রার সাথে তার সম্পর্ক ঠিক থাকত। হয়ত অনেক দূর গড়িয়ে যেত সম্পর্কের ধাপ। সামনে একটা ম্যাগাজিন ধরে বসে পড়ে অভয়। ঐশানী ফোন কানের কাছে ধরে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে….
–“আরে না। সিলভার লিফ সিগারেট কিনবি। আমায় দিবি একটা প্যাকেট। তুই তো জানিস আমি সিগারেট ছাড়া থাকতে পারি না।”
কিছুক্ষণ থেমে আবারও বলে….
–“হ্যাঁ হ্যাঁ মদের সাথে গাঞ্জা মিশিয়ে খেলেই তো ভালো লাগবে। গাঞ্জাও দিবি বেশি করে।”
কথাটুকু বলেই ফোনটা নামিয়ে রাখে ঐশানী। পায়ের ওপর পা তুলে ভাব নিয়ে বলেন….
–“আসলে কি জানেন তো? আমি মদ-সিগারেট ছাড়া থাকতেই পারি না। মদের সাথে গাঞ্জা মিশিয়ে খেতে যা টেস্টি। এই বাড়িতে তো এসব চলে না তাই না? সেকারণেই তো বিয়ে করতে চাইছি না।”
অভয় টেবিলে থাকা গ্লাস তুলে পানি পান করছিল। ঐশানীর কথাগুলো শুনে বিষম খেল সে। মুখ থেকে পানি পড়ে গিয়ে ভিজে গেল তার গেঞ্জি। ভ্রু কুঁচকে গেঞ্জির দিকে তাকিয়ে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে….
–“মদের সাথে গাঞ্জা মিশিয়ে খায় সেটা আজ শুনলাম। আমার জানা মতে গাঞ্জা সিগারেটের সঙ্গে খায়। আর সিলভার লিফ নামক সিগারেট কি তুমি লঞ্চ করেছো? ফর ইউ কাইন্ড ইনফরমেশন গোল্ড লিফ সিগারেট হয়। এসব করে কি বিয়ে ভাঙার ধান্দায় ছিলে? আমাকে তোমার গাধা নাকি গরু মনে হয়?”
চলবে…..
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]