বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৫
#আনিশা_সাবিহা
–“সত্যিই আপনারা আমাদের বোঝেন না। বিশেষ করে আমাকে বুঝতে কখনোই সফল হবেন না।”
চোখ থেকে আলতো করে পানি মুছে হাসির রেশ ফুটিয়ে বলে ঐশানী। অভয় কোমড়ে হাত দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার ভঙ্গি করে বলে…..
–“কি করে বুঝব? তোমরা কিছু হলেই কেঁদে ভাসিয়ে দাও। রাগ, অভিমান, খুশি, দুঃখ সবকিছুর একটাই সলিউশন তোমাদের কাছে সেটা হলো কান্না। এখন তোমরা যদি না বলো কীসের জন্য কাঁদছো তাহলে আমরা বুঝব কি করে? সব কিছুতেই একরকম রিয়েকশন দিলে একটা পন্ডিতকে ডেকে এনে বুঝতে বললেও সে শহীদ হয়ে যাবে।”
ঐশানী ফিক করে হেসে দেয়। অভয়কে পেছন দিকে ঠেলার চেষ্টা করে বলে…..
–“এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন। খেতে হবে।”
–“এই তুমি খেয়েছো?”
ঐশানী যেন অভয়ের এই সামান্য কথায় বিপাকে পড়ে যায়। অভয় নিজের শরীর থেকে ব্লেজার খুলতে খুলতে বলে…..
–“মনে হচ্ছে কেমিস্ট্রি বা ফিজিক্সের কোনো কঠিন প্রশ্ন করেছি যার কারণে বলতে এতো হচ্ছে।”
–“হ্যাঁ খেয়েছি।”
–“নাটক টা তুমি আদোও করতে জানো না ঐশানী। তুমি খাওনি। সত্যি বললে পৃথিবী উল্টে যেত না।”
শার্টের বোতামের দিকে চোখ রেখে হাত দিয়ে খুলতে খুলতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে অভয়।
–“আপনি কি করে জানলেন আমি খাইনি?”
–“তোমার পেট।” (ইশারা করে)
ঐশানী মাথা নিচু করে পেটের দিকে তাকায়। শাড়ির আঁচলের অনেকাংশ সরে গেছে। পেটের মাঝে যে কোনো দানা পড়েনি সেটা অনায়াসে বোঝা যাচ্ছে। শাড়ির আঁচল টেনে ভালোভাবে পেট ঢেকে নিল ঐশানী। তীক্ষ্ণ চোখে অভয়ের দিকে তাকিয়ে জোড়ালো কন্ঠে বলে…..
–“আপনার নজর খারাপ। মেয়েদের দিকে নজর দেন।”
অভয় বাঁকা হাসি দেয়। টাওয়ালটা নিজের কাঁধে নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে…..
–“তুমি মেয়ে না।”
কথাটা কানে আসামাত্র মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায় ঐশানী। চোখের পলক পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। সেকেন্ড দুয়েক পরে নিজের হাত ও মুখমণ্ডল স্পর্শ করে সে। নাহ সব ঠিকঠাকই আছে মনে হচ্ছে। বিস্ময়ের সুরে বলে ওঠে…..
–“আমি মেয়ে না মানে? তো আমি কি?”
–“তুমি আমার বউ। নজর দেওয়ার লিগ্যাল রাইট আমার আছে। দরকার পড়লে কাগজপত্র দেখাতে পারি। দেখবে?”
–“না থাক।”
এই বলে স্বস্তির শ্বাস নেয় ঐশানী। অভয়ের কথা শুনে তার নিশ্বাসই একটু জন্য আঁটকে গেছিল যেন। লোকটাও মাঝে মাঝে অদ্ভুত রকমের কথা বলে। অভয় কিছু একটা ভেবে ঐশানীর দিকে এগিয়ে আসে।
–“তুমি তাহলে মিথ্যে বললে কেন? বললে কেন যে খেয়েছো?”
ঐশানী অভয়ের এগিয়ে আসাতে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে আমতা আমতা করতে থাকে। অভয় বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে…..
–“এর উত্তরও আমার কাছে আছে। উত্তরটা হলো, তুমি আমার কাছে ধরা দিতে চাও না। তুমি আমায় ভালোবাসো ঐশানী। এখন হয়ত বলবে তুমি তো সায়ানকে ভালোবাসো। কিন্তু এক জীবনে যখন প্রথম ভালোবাসার মানুষকে কেউ চিরতরে হারিয়ে বসে সেই মানুষটার মনে দ্বিতীয়বারও ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার চান্স থেকেই যায়। তুমিও আমায় ভালোবাসো। কিন্তু স্বীকার করো না। দ্যাটস ইউর প্রবলেম। তুমি যদি বলে দিতে, তুমি ডিনার করো নি শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করছো। তাহলে তুমি আমার ভালোবাসার তুমি ডুবে যেতে।”
কথাটা বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় অভয়। ঐশানী এক ধ্যানে অভয়কে দেখতে থাকে। ততক্ষণ দেখতে থাকে যতক্ষণ অভয় ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে না দিচ্ছে। দরজা লাগিয়ে দেওয়া পর ছলছল চোখে জানালার বাইরে আকাশের দিকে চোখ রাখে ঐশানী। চোখ বন্ধ করতেই বাম চোখ দিয়ে পড়ে যায় অশ্রুধারা। চোখ বুঁজে অভয়ের নামে যতসব অনুভূতি রয়েছে তা অনুভব করতে থাকে। প্রথম প্রথম অভয় তার মনে প্রবেশ করতে না পারলেও একটা সময় অভয় তার অনুমতি না নিয়েই মনের দখলদারি করতে শুরু করেছে। এটা অভয়ের বড়ই অন্যায় নয় কি? এভাবে মনের মাঝে ঢুকে ভালোবাসা পোড়ানোর খুব দরকার ছিল কি?
চোখ খুলে উঠে দাঁড়ায় ঐশানী। শাড়ি ঠিকঠাক করে হাঁটা দেয় বাইরের দিকে খাবার আনবার জন্য।
ভেজা ভেজা শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ঐশানীকে দেখতে পায় খাবার নিয়ে বসে থাকতে। অভয় গম্ভীর মুখে এসে বসে সোফায়। অভয় নিজহাতে প্লেটে ঐশানীকে খাবার বেড়ে দিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে খেতে শুরু করে। দুইবার খাবার মুখে নিতেই অভয় লক্ষ্য করে ঐশানী তার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত ঘোর লেগেই রয়েছে। খাবার যেমনটা ছিল তেমনটাই রয়েছে ঐশানীর প্লেটে। সে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অভয়কে। তার কাছে অভয়ের থুঁতনিটা বেশ সুন্দর লাগে। খাঁজকাটা থুঁতনির অধিকারী অভয়। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকলেও তা বোঝা যায়।
–“কি হলো খাচ্ছো না কেন?”
ঐশানী নড়েচড়ে ওঠে। তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে প্লেট হাতে নেয়। প্লেটের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলে…..
–“আমাকে খাইয়ে দেবেন?”
ঐশানীর এমন অদ্ভুত আবদারের মুখোমুখি অভয় কোনোদিনও হয়নি। আগে তো ঐশানী অভয়কে সহ্যই করতে পারত না। হয়ত এখন ওর মনে তাকে নিয়ে অনুভূতি জন্মেছে। এই ভেবে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলে…..
–“আমার হাতে খাবে সত্যি?”
–“হুমম। খাওয়াবেন?”
অভয় তাড়াতাড়ি নিজের খাওয়া ছেড়ে ঐশানীর প্লেটে হাত দিতেই ঐশানী আবারও নারাজি কন্ঠে বলে……
–“উঁহু, ওই প্লেটটা রাখলেন কেন? ওখান থেকেই খাওয়ান।”
–“আমার এঁটো?”
–“হু! শুনেছি একই পাতে খাবার খেলে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা বাড়ে।”
চোখ নামিয়ে লজ্জায় জবুথবু হয়ে বলে ঐশানী। অভয়ের মন নেচে ওঠে আনন্দে। প্রিয় মানুষকে খাওয়ানোর আনন্দ এতোটা হয় তার জানা ছিল না। খাবার তুলে ধরে ঐশানীর মুখের সামনে। হা করে খাবার মুখে নেয় ঐশানী।
অভয় মুচকি হেসে ঐশানীর খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঐশানীর মনেও আনন্দেরা ঢেউ খেলে চলেছে। স্বামীর হাতে খাবার খাওয়ার অনুভূতি এতো সুখকর কেন? আহা…! আনন্দের ঢেউ ঐশানীর চোখে আবারও অশ্রু এনে দিল। তবে ওর মুখে হাসি বিদ্যমান।
–“আবার কাঁদছো? এবার কি খুশিতে নাকি রাগে?”
–“ভালো লাগছে খুব তাই।” (খাবার চিবুতে চিবুতে)
–“আজ তুমি একটু বেশিই অশ্রুবর্ষণ করিয়ে যাচ্ছো ঐশানী। এমন করলে আমি আর খাওয়াবো না।”
বিষন্ন মনে বলে ওঠে অভয়। তা শুনে ঐশানী দ্রুত নিজের হাত দিয়ে চোখ ডলে তাকায়। অভয়ের বিষন্ন মনটা ভরে ওঠে খুশিতে আবারও।
খাবারের প্লেট নিচে রেখে এসে ঘড়ি দেখে নেয় ঐশানী। অভয় আগেই শুয়ে পড়েছে। শরীর আর চলার মতো অবস্থাতে নেই। রেস্ট প্রয়োজন। ঐশানীও অভয়ের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। আজ হঠাৎ করেই নিজ থেকে দুই হাত দিয়ে অভয়কে জড়িয়ে ধরে সে। বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে। অভয় চোখ খুলে হকচকিয়ে তাকায়। ঐশানী অভয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলে….
–“কি ব্যাপার? সূর্য কি অন্যদিকে উঠেছিল নাকি?”
–“এখন সূর্য নেই চাঁদ আছে।”
–“চাঁদই বোধহয় অন্যদিকে উঠেছে। যাই দেখে আসি।”
–“কি দরকার দেখার? ওকে ওর মতো থাকতে দিলেই তো হয়।”
অভয় হালকা শব্দ করে হেসে দেয়। তবে হাসিটা বেশিক্ষণ টিকে থাকে না তার। ঐশানী অভয়ের বুকের ভর করে আধশোয়া হতেই অভয় দ্রুত বলে ওঠে….
–“কি করছো?”
–“ভালোবাসছি।”
অভয় হতবাক নয়নে চেয়ে থাকল। ঐশানী অভয়ের বুকে মাথা রাখতেই অভয় একটু কেঁপে ঐশানীর চুলে হাত বুলিয়ে বলে ওঠে….
–“তুমি ঠিক আছো তো? আজ তোমার কি হয়েছে? শরীর খারাপ?”
ঐশানীর বেশ রাগ হয়। অভয়ের গেঞ্জির কলার টেনে ধরে সে। ক্ষোভ নিয়ে বলে…..
–“আপনি বলেছিলেন না? আমি আপনাকে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছি? আমার মনে আপনার নামে করা অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি? এখন তো প্রকাশ করছি। শুনুন আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসি। বুঝেছেন আপনি?”
ঐশানীর সকল কথা অভয়ের মাথার ওপর দিয়ে গেল। ওর মাথাতেই আসছে না ঐশানী ওকে ভালোবাসার কথা বলছে নাকি হুমকি দিয়ে চলেছে? অভয় অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নিজেকে আর ঐশানীকে সামলাতে গলা খাঁকারি দিয়ে ওর গালে হাত রেখে শান্ত বাক্যে বলে…..
–“হ্যাঁ আমি বুঝেছি। আমার ভুল হয়েছে ওসব বলা। এখন শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে তো।”
–“কেন কেন? এখন শুয়ে পড়তে বলছেন কেন? ঘুমাবো না আমি। আজ আমার মনে থাকা সকল ব্যক্ত কথা প্রকাশ করে তবেই আমার হবে শান্তির ঘুম। আজ আপনিও নিজের অনুভূতি উজার করবেন আর আমিও। ডিল ফাইনাল!”
–“আরে অদ্ভুত? আমি কখন এই ডিল করলাম? আর আমি তো বুঝতেই পারছি না তুমি আমায় নিজের অনুভূতির কথা বলছো নাকি হুমকি দিচ্ছো? আবার ডিলও করছো। তোমার কি হয়েছে আজ? আমার মনে হচ্ছে তুমি উল্টাপাল্টা কিছু খেয়ে ফেলেছো।”
–“নট এট অল। আমি আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি শ্যামলা ঘোড়াকে। আর ভালোবাসতেও চাই। কিন্তু….. ”
–“কিন্তু কি?”
ভ্রু কুঁচকে বলে অভয়। ঐশানী মাথা নাড়িয়ে বলে….
–“কিছু না। আজ থেকে আপনি আমার, আমি আপনার ডিল ফাইনাল। আর এটা আমৃত্যু অবধি থাকবে।”
–“আমি জানি ঐশানী। তুমি আমার মনে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বেঁচে থাকবে।”
–“আজ আমাকে নিজের করে নেবেন অভয়?”
অভয় বিষম খেয়ে তাকায়। ঐশানীর বলা একটু আগের কথা বারংবার তার কানে বাজছে। অভয় বিস্ময় কাটাতে পারছে না। কিছু বলতে উদ্যত হতেই ঐশানী অভয়ের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। অভয় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। এই প্রথম নিজের প্রেয়সীর ঠোঁটের স্পর্শ পড়ল। শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। ঐশানীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় অভয়। গালের পাশ থেকে চুলটা যত্নের সাথে সরিয়ে দিয়ে আলতো হাসি দিয়ে ঐশানীর দুই গালেও ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আজ ঐশানীর নিজ থেকে কাছে আসা অভয়ের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও নিজেকে আটকানো বড্ড দায় হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে নিজেকে হয়ত না আটকিয়ে নিজের মনের কথাও শুনতে হয়। মনের কথা শুনতো গিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রগাঢ় হতে থাকে। দৃঢ় ভাবে অনুভব করতে থাকে একে ওপরকে। এ যেন এক মোহনীয় রাত!!
নতুন সকালের আগমন ঘটে। সময় নিজ গতিতে চলতে শুরু করে। আর প্রত্যেকটা মানুষও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করে। তবে অভয়ের কাছে এটা যেন এক অন্যরকম সকাল। কেননা কাল রাত থেকে তার আর ঐশানীর পথ চিরতরে এক হয়ে গিয়েছে। দুজন আজ দুজনের কাছে বিলীন হয়ে পড়েছে। অভয় কোন ব্লেজার পড়বে তা নিয়ে কনফিউজড হয়ে পড়েছে। আলমারির মাঝে হ্যাঙ্গারের সাথে ঝুলানো সবই কালো রঙের ব্লেজার হলেও সে কনফিউজড। এরইমাঝে তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে আসে ঐশানী। অভয়কে রেডি হতে দেখতে পেয়ে সুন্দর হাসির ঝিলিক দেয় সে। আচমকা বলে বসে…..
–“এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছেন?”
অভয় ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়। ঐশানীর কথায় একটু অবাক হয়েই বলে….
–“তাড়াতাড়ি? ঐশানী, ঘড়ি দেখেছো? সাড়ে নয়টা বাজছে। আর এতোদিন তো আরো তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেছি।”
–“ওহ। হয়ত আমারই ভুল।”
–“ভুলটা মনে হয় আমার বউ ইচ্ছাকৃতই করছে। উহুম…বরকে ছাড়তে চাইছো না নাকি হুমম? আরেকটু ভালোবাসা চাই?” (ফিসফিসিয়ে)
ঐশানী চোখ নামিয়ে নেয়। তার শ্যামলা ঘোড়া লজ্জা দিতে ওস্তাদ। দৃঢ় কন্ঠে বলে….
–“যান তো। অফিসে যান।”
–“প্রথমে তো যেতেই দিতে চাইছিলে না। এখন তাড়িয়ে দিচ্ছো?”
হেসে নিজের হাতের কাছে থাকায় ব্লেজার গায়ে শার্টের ওপর জড়িয়ে নেয় অভয়। দম নিয়ে বলে….
–“ওকে দেন। আমি যাচ্ছি। তুমিও এসো খেতে।”
অভয় ঐশানীর পাশ কাটিয়ে যেতেই পিছুডাকে ঐশানী।
–“শুনুন!”
অভয় ঘুরতেই ঐশানী আবারও বলে…..
–“যাওয়ার আগে আমায় একবার জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ?”
অভয় ঐশানীর কথায় আর কান্ডে অবাক হয়েই চলেছে। মেয়েটা কাল থেকে এমন সব অদ্ভুত আবদার করছে অভয়েরও ভালো লাগছে। আবার হতভম্বও হয়ে পড়ছে।
অভয় অপ্রস্তুত হেসে হাত প্রসারিত করতেই ঐশানী ছুটে এসে অভয়ে বুকে পড়ে। শক্ত করে চেপে ধরে অভয়কে। ঐশানী বড় বড় শ্বাস ফেলছে। পা একটু উঁচু করে জড়িয়ে রেখেছে অভয়কে। লোকটা বেশ লম্বা। তার শ্বাসপ্রশ্বাস অভয়ের ঘাড়ে পড়ছে। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর নিজের থেকেই অভয়কে ছেড়ে দাঁড়ায় ঐশানী। মুচকি হাসি দিয়ে বলে…..
–“চলুন নিচে।”
ঐশানী ও অভয় একসঙ্গে নিচে নামে।
ব্রেকফাস্ট করছে টেবিলে সকলে। অনিন্দিতাও উপস্থিত সেখানে। সে সুযোগ খুঁজছে তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার। আজ যে কোনোমতেই অভয়কে সবটা না বলে ছাড়বে না। অভয়ের তাড়াহুড়ো করে খেয়ে উঠতেই অনিন্দিতা ফট করে বলে….
–“ভাইয়া শোন। আমার কিছু কথা আছে তোর সঙ্গে।”
–“আমার সঙ্গে কি এমন কথা বল?”
–“এখানে না আমি খেয়ে উঠে আসছি যা।” (ইতস্তত বোধ করে)
–“আমি বাইরে বাগানে আছি। তুই আয়।”
বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় অভয়।
অনিন্দিতাও মুখে একবার পুরো স্যান্ডউইচ ঢুকিয়ে শরবত এক নিশ্বাসে খেয়ে উঠে পড়ে। মিসেস. তনয়া তা দেখে বিরক্ত হয়ে বলেন…..
–“এই, এভাবে খায় কেউ?”
–“মা সময় নেই। আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি।”
মিসেস. তনয়াকে পাত্তা না দিয়ে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতা।
গাড়ির সামনে একমনে দাঁড়িয়ে আছে অভয়। অনিন্দিতার পায়ের শব্দে পিছু ফিরে তাকায় সে। অনিন্দিতা তাড়াতাড়ি করে আসে। ওর হাতে ফোন। অভয় ঘড়িতে টাইম দেখে বলে…..
–“বল কি বলবি?”
অনিন্দিতা একটু থেমে বলে….
–“ভাইয়া তুই ভাবিস যে তুই সায়রাকে ঠকিয়েছিস। তুই ভুল করেছিস। তাই না?”
সায়রার প্রসঙ্গ তুলতেই অভয়ের কপাল কুঁচকে যায়। ওকে সে পাল্টা প্রশ্ন করে বলে…..
–“সায়রার কথা বলতে তুই আমায় অপেক্ষা করতে বললি?”
–“হ্যাঁ ভাইয়া। বিষয়টা জানা তোর জরুরি। সি ইজ এ লায়ার। তোকে ও প্রথমেই ঠকিয়েছে ওর বাবার কথায়।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে অনিন্দিতা। অভয় অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠে…..
–“হোয়াট?”
–“হ্যাঁ। কয়েকদিন আগে ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু তুই ব্যস্ত থাকায় বলার সুযোগ হয়নি।”
অভয়কে সব কথা খুলে বলে অনিন্দিতা। ওকে নিজের ফোনে থাকা রেকর্ডিং-ও শুনিয়ে দিতেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অভয়। সে অন্তত সায়রার কাছ থেকে এটা আশা করেনি। তার বাবা কতবার এই কথা বোঝানোর চেষ্টা করে গেছে তবুও সে পাত্তা দেয়নি।
–“আই কান্ট বিলিভ। বাবা আর তুই কতবার বলেছিস আমাকে এই কথা। তবুও আমি….”
–“দেখ সায়রার সঙ্গে তোর সামনাসামনি বোঝাপড়া করা উচিত। ওর সঙ্গে সব একবারে শেষ করে দিয়ে আয়। এই কয়দিন ও আমায় সারাদিন কল করে তোর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে চেয়ে আমার মাথা খারাপ করে রেখেছে। তুই ওর সাথে শেষবারের মতো দেখা করে সব মিটিয়ে দিয়ে আয়। এতে সকলের ভালো হবে।”
অভয় প্রথমে যেতে রাজি না হলেও নিজেদের ও সায়রার ভালোর জন্যই রাজি হয়। সায়রা যদি এমন করতে থাকে তাহলে ওরই ক্ষতি হবে। আজ অভয় যাবে সায়রার সাথে বোঝাপড়াটুকু করতে।
চলবে……
[বি.দ্র. গল্পের অন্তিম প্রায় চলেই এসেছে। আর মাত্র কয়েকটা পর্ব। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]