বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৩
#আনিশা_সাবিহা
–“কি? আমি আপনার শেভিং ক্রিম মাখতে যাব কেন?”
–“বিশ্বাস না হলে নিজে স্মেইল নিয়ে দেখো।”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে নিজের হাতটা ঐশানীর নাকের কাছে ধরে অভয়। ঐশানী নাক শিটকে দূরে সরে যায়। ঠাস করে অভয়ের মুখের ওপর ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বলে ওঠে…..
–“সব আপনার জন্য হয়েছে। না আমি আপনার কথা ভাবতাম ঘুমের ঘোরে না আপনার এই বিদঘুটে শেভিং ক্রিম আমার মুখে লাগাতাম। ইয়াক…..”
কালো টাওজার প্যান্টের পকেটে দুটো হাত ঢুকিয়ে সরু চোখে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে….
–“হোয়াট রাবিশ? আমি কি করলাম?”
ওয়াশরুম থেকে চুল টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয় ঐশানী। ফোনে কথা বলছিল অন্যদিক হয়ে অভয়। আজকে তাদের একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে বেশ বড় একটা কোম্পানির সাথে। হুট করেই মিটিং ফিক্সড হয়ে যাওয়ায় খানিকটা টেনসড হয়ে পড়ে সে। সেই ব্যাপারেই ম্যানেজারের সাথে টুকটাক কথা বলছিল অভয়। কথা শেষ করে ফোনটা কানের কাছ থেকে নামিয়ে সামনে ফিরতেই চোখটা পড়ে ঐশানীর দিকে। ভূত দেখার মতো চমকে উঠে খাটে বসে পড়ে অভয়। ঐশানী তাতে কপাল কুঁচকে তাকায়। লোকটা কি তাকে প্রথম বার দেখছে? তারপর কিছু একটা ভেবে মুখে একটা দারুণ হাসি ফুটিয়ে নিজের চুল ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে ভাব নিয়ে বলে…..
–“কি ব্যাপার? আমাকে কি আজকে বেশি সুন্দর লাগছে নাকি? কার মতো লাগছে? দীপিকার মতো নাকি ঐশ্বরিয়ার মতো?”
অভয় যেন বাকশক্তি হারিয়েছে। তার চোখের পলকও পড়ছে না। অস্ফুটস্বরে বলে….
–“তোমার ডান পাশের আইভ্রো!”
–“কি হয়েছে আমার ভ্রু তে?”
হাত চোখের ওপর আইভ্রোতে রাখতেই ফাঁকা ফাঁকা লাগে ঐশানীর। সেই মূহুর্তে মনে হলো তার আইভ্রো গায়েব হয়ে গেছে। ঢক গিলে তড়িঘড়ি করে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। নিজেকে দেখতেই মাথা ঘুরে আসে তার। মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে যায়। দ্রুত আয়না থেকে মুখ সরিয়ে মিনমিন করে বলে ওঠে…..
–“ওটা আমি নই!”
অভয়ের মুখ ফুরে হাসি বেরিয়ে আসে। তাও আবার উচ্চশব্দে। ঐশানীর ডানপাশে ভ্রু গায়েব হয়ে গেছে। মাত্র দুই-একটা চুল অবশিষ্ট আছে ভ্রু-তে। দেখতে উদ্ভট লাগছে ওকে। অভয় পেট চেপে ধরে হাসছে। হাসির সুরেই সে বলে ওঠে….
–“ওটাই তুমি!”
–“আমি মানি না। আমার ভ্রু কোথায় গেল?”
–“মেবি শেভিং ক্রিম এর ইফেক্ট পড়েছে। অর্ধেক চেহারাতে লাগিয়েছে তাই যেই পাশে লাগিয়েছো সেখানকার ভ্রু গায়েব।”
বলে আরো জোরে জোরে হাসতে শুরু করে অভয়। ঐশানী সেখানেই চোখের ওপরে হাত রেখে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে। ছলছল চোখে অসহায়ের মতো বলে…..
–“আমাকে দেখতে কতটা অদ্ভুত লাগছে! আমার কি হবে? কেউ তো দেখবেই না। দেখলেও হাসবে।”
অভয় হাসি থামিয়ে বেড থেকে উঠে ঐশানীর কাছে গিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়ে। ঠোঁটে তার এখনো হাসির ছাপ। ঐশানীর হাত চোখের ওপর থেকে সরিয়ে বলে….
–“কি দরকার অন্য দেখার? আমি দেখব তো! আমার দেখতে ভালোই লাগছে তোমাকে। ডান সাইড থেকে তোমাকে কিছুটা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো লাগছে। ওদের আইভ্রো খুবই পাতলা থাকে। আমি তোমাকে একটা সাজেশন দিই শোনো।”
ঐশানী খুশিমনে এগিয়ে কান পেতে দেয়। সে ভাবছে অভয় হয়ত এই বিশ্রী অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কোনো সাজেশন দিতে চলেছে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে অভয়।
–“তুমি বাম পাশের আইভ্রোও তুলে ফেলো। তোমার একটা নিউ লুক ক্রিয়েট হবে। দারুণ আইডিয়া না?”
–“স্টুপিড মার্কা আইডিয়া নিজের কাছেই রাখুন।”
অভয়ের দুটো গালে আলতো থাবা মেরে উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে পড়ে ঐশানী। হাতে একটা আইভ্রো পেন্সিল নিয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজের ভ্রু কে ঠিক করার চেষ্টায় মগ্ন হয়ে পড়ে সে। বিরক্ত হয়ে আপনমনে বলে…..
–“কবে ভ্রু গজাবে কে জানে!”
অভয় ঐশানীর কান্ড দেখে প্রশ্নাত্মক চেহারা নিয়ে বলে…..
–“ওই পেন্সিল দিয়ে কি করছো?”
–“এটা শুধু পেন্সিল না! এটাকে আইভ্রো পেন্সিল বলে। এভাবে তো আর নিচে যেতে পারব না তাই না?”
–“তোমরা মেয়েটা আরো কত পেন্সিল নামাবে গড নোস! পেন্সিল আইলাইনার, লিপস্টিক পেন্সিল ব্র্যান্ড এখন আবার আইভ্রো পেন্সিল!”
–“বাবাহ….!! এতো কসমেটিকস এর নাম কি করে জানলেন আপনি? এক্সপেরিয়েন্স আছে নাকি?”
আয়নায় নিজের কাজে মন দিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল ঐশানী। অভয় কিছু বলতে উদ্যত হতেই ঐশানী নিজেই হেসে বলে দিল….
–“ওহ বুঝেছি। সায়রা তো ছিল আগে আপনার লাইফে। সেখান থেকেই এতো এক্সপেরিয়েন্স!”
‘সায়রা’ নামটা শুনে তিক্ততায় ভরে উঠল অভয়ে মন। মেয়েটা যে কেন কথায় কথায় সায়রা নামটা টানে কে জানে। বড় শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বলল….
–“ইডিয়েট কথাবার্তা বন্ধ করো। অনিন্দিতা মাঝে মাঝে আমায় লিস্ট করে দিতো মার্কেটে গেলে। সেখান থেকেই এসব নাম জেনেছি। আর শোনো, কথায় কথায় সায়রা নামটা না টেনে তোমার স্বামীর নামও তো টানতে পারো। হৃদয়টা ঠান্ডা হবে তবে।”
ঐশানী দাঁত বের করে হাসে। অভয় আয়নাতে ঐশানীকে দেখে ওর দিকে হালকা ঝুঁকে পড়ে ওর কাঁধে আলতো চুমু খায় অভয়। হকচকিয়ে উঠে পেন্সিল নড়ে যায় ঐশানীর হাত থেকে। অভয়ের দিকে ঘুরে বসে তেতিয়ে বলে ওঠে…..
–“শুনুন, এভাবে যখনতখন আমাকে চুমু খাবেন না।”
অভয় ঐশানীর হাত ধরে নিজের কাঁধে রেখে ঐশানীর কোমড়ে হাত রেখে চেপে ধরে দুষ্টুমির সুরে বলে….
–“তাহলে একটা শিডিউল করে দাও। যেখানে লিখা থাকবে, কখন তোমার সাথে রোমান্স করা যাবে আর কখন যাবে না! আমি সেই অনুযায়ীই চলব প্রমিস।”
–“আপনি না একটা যাচ্ছেতাই! বাবা আমাকে একটা লুচ্চা আর অসভ্য লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে।”
ঝাঁঝালো গলায় বলেই ঐশানী আইভ্রো পেন্সিল দিয়ে অভয়ের ঠোঁটের ওপরে একটা টান দিয়ে গোঁফের মতো এঁকে দিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
হাসিটা যেন অভয়ের বুকে গিয়ে লাগে। তার চোখের মণিতে আঁটকে গেছে শুধুই ঐশানী।
–“তুমি মুগ্ধময়ী ঐশানী। তুমি এই হাসিতে আমার প্রাণ কেঁড়ে নিতে সক্ষম।”
ঐশানীর হাসি থেমে যায় অভয়ের কথা শুনে। সেও অভয়ের চোখে চোখ রেখে বলে…..
–“কি দেখছেন?”
–“এমন একটা মেয়েকে দেখছি যে কিনা তার এই মুগ্ধময়ী হাসির পেছনে শতশত কষ্ট লুকিয়ে রাখে। এটা কি করে পারো তুমি?”
–“ভুল ভাবছেন আপনি। আমি অখুশি থাকি না। এটা আমার স্বচ্ছ হাসি। আমি অতীত ভুলতে চাই। এটাই আমার হাসির কারণ।”
আচমকা ঐশানীর ঠোঁটে আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে সরে আসে অভয়। ঐশানী শিরদাঁড়া সোজা করে বসে থাকে রোবটের মতো। গুনে গুনে দশ সেকেন্ড যাবার পর হুঁশ ফিরে ঐশানীর। নিজের মুখে রাগি ভাব এনে বলে….
–“আপনাকে না আমি বলেছি? যখন তখন এসব করবেন না?”
–“আমিও তোমাকে বলেছিলাম না? আমাকে শিডিউল তৈরি করে দিতে?”
–“ধ্যাত….আপনার সাথে কথা বলায় বেকার!”
বলেই উঠে যায় ঐশানী। অনেক বেজেছে। নিচেও যেতে হবে তার। অভয়ের সাথে শুধু শুধু কথা বলে লাভ নেই সে ভালোভাবে বুঝেছে। বাইরে গিয়ে পর্দার আড়ালে পিছু ফিরে তাকায় ও। ঠোঁটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।
সোফার ওপর দাঁড়িয়ে আছে ইশান। দুটো হাত ওপরে তুলে রয়েছে সে। ঐশানী সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ইশানকে উদ্ভট অবস্থায় দেখতে পেতেই ভ্রু উঁচিয়ে নিচে নামে সে। তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলে….
–“কি ব্যাপার ইশান ভাইয়া? সোফায় এভাবে অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
–“আসলে ভাবি, একটা ভালো খবর আছে। কিন্তু আজকে সকলেই যেন আলসে হয়ে পড়েছে। কেউ ড্রয়িংরুমে আসছেই না। তোমরাও যেমন আসতে লেট করেছিলে! আমি তো সর্বপ্রথম এই খবর অভয়কেই দিতে যাচ্ছিলাম কিন্তু যা দেখলাম!” (চোখ গোল করে)
ঐশানী ইশানের শেষ কথাটা বুঝতে পারে না। কনফিউজড হয়ে বলে….
–“মানে কি দেখলে?”
–“থাক আর না বলি। বললে তুমিই লজ্জায় পড়বে। এমনিতে অভয় আমাকে কম দৌড় করায়নি। সকাল সকাল জিমের কাজটা অভয় করে দিল।”
ঐশানী মাথা চুলকে ভাবতে থাকে ইশান এমন কি দেখল যেটা শুনলে সে লজ্জা পাবে? এসব আগামাথা ভাবতে ভাবতে অনিন্দিতার উদয় হলো। ফোন চাপতে চাপতে বড় বারান্দার দিক থেকে হেঁটে আসছে সে। তাকে দেখে তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ল ইশান। সে যেন অনিন্দিতারই অপেক্ষা করছিল। চিকন করিডোরে ঢুকে পড়ল অনিন্দিতা যেদিক দিয়ে হেঁটে আসছে। ঐশানী কিছু না ভেবেই রান্নাঘরে চলে আসে রেনুকে সাহায্য করতে।
ফোনে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা টাইপ করছে অনিন্দিতা। ঠিক সেই মূহুর্তে কেউ যেন তার থেকে এক প্রকার ফোনটা ছিনিয়ে নেয়। এমতাবস্থায় ফোনটা কেউ নিয়ে নেওয়ায় কড়া চাহনি নিয়ে তাকায় সে। ইশানকে দেখে সে খুব একটা চমকায় না। কারণ তার জানা আছে ইশানই একমাত্র তার সাথে এই কাজটা করতে পারে। জোর গলায় সে বলে…..
–“ফোনটা নিলে কেন? দাও আমাকে।”
–“আমি ওখানে নিজের জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্টের সুখবর দিতে যাচ্ছি আর তুই উম্মাদের মতো চোখ লাগিয়ে ফোন চালিয়ে যাচ্ছিস! তোর সাহস তো কম না। কি এমন দেখছিস ফোনে দেখি।”
বলেই ইশান ফোনের দিকে তাকায়। অনিন্দিতা ছোঁ মেরে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করেও লাভ হয় না। তার দুটো হাত ধরে নেয় ইশান তার এক হাত দিয়ে। ফোনের স্ক্রিনে কারো মেসেজ ঝুলছে। তাও আবার মেসেজে ‘আই লাভ ইউ’ লিখা। অনিন্দিতা ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয় ততক্ষণে। ইশান রেগেমেগে বলে….
–“তাই তো ফোন দেখাতে চাইছিলি না! সব বুঝেছি। কতদিন ধরে চলছে এই চক্কর? ঢাকায় এসে এসব করে বেড়াচ্ছিস? লজ্জা করে না?”
–“আরে আজব! লজ্জা লাগার কি আছে? এমন কি করলাম যে লজ্জা করবে? আর এতো রাগার কি আছে?”
–“রাগব না মানে? তুই আমার সামনে এগুলা করে বেড়াবি আর আমি হাসিমুখে তোকে বরণ করব? বেয়াদব!”
ক্ষুব্ধ হয়ে বলে ইশান। অনিন্দিতা চোখমুখ জড়িয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে….
–“আমি কি করছি হ্যাঁ? সব তো তুমি করেছো। নিজে দিনেরাতে অচেনা অজানা মেয়ের সাথে কথা বলছো আর আমাকে দোষারোপ করছো তাও মিথ্যে দোষারোপ? উনি আমার কলেজের সিনিয়র। একটা কারণে কল নম্বর দিতে হয়েছিল উনাকে। আর হুট করেই আই লাভ ইউ লিখে পাঠালেন। এর চেয়ে আমি বেশি কিছু জানি না হ্যাঁ?”
–“তুই কি করছিস আর না করছিস সব দেখেছি। আমাকে ভুলভাল বুঝাতে পারবি না। আমি এক্ষুনি তোর ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।”
রাগে গজগজ করতে করতে পায়ের কদম ফেলে ইশান। পেছন থেকে অনিন্দিতার একটা কথায় তার চলা থেমে যায়।
–“তুমি কেন অযথা বেশি রিয়েক্ট করছো ইশান ভাইয়া? এটা সিম্পল ব্যাপার। আর তোমার সামনেও বা যদি এসব করতাম তাতে তোমারই বা কি যায় আসে? মানছি তুমি আমার কাজিন। কিন্তু এমন কেউ না যে এতোটা রাগ হবে। এমন রাগ তাদেরই হয় যারা প্রিয় মানুষের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না।”
ইশানের থমকে যাওয়ায় তার সামনে এসে দাঁড়ায় অনিন্দিতা। ইশান অনিন্দিতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে রাগি ভাবটা ধরে রেখে বলল….
–“যাহ, তোকে এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু এই ছেলেটাকে তুই ব্লক করবি। কোনো আননোন ছেলেকে ভুলেও যদি এরপর নিজের নম্বর দিয়েছিস তাহলে কিন্তু ভালো হবে না। খেতে আয়।”
অনিন্দিতার পাশ কাটিয়ে চলে গেল ইশান। অনিন্দিতার সূক্ষ্ম মনের কোণে প্রশ্ন জাগল ইশানের এমন আচরণ করার কারণ কি?
অনিন্দিতার ধ্যান ভাঙ্গে ফোনের রিংটোনে। এই অসময় তার বান্ধবী ছাড়া কেউ কল করতে পারে না। কারণ কিছুক্ষণ পরেই তার কলেজ যেতে হবে। কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সে ভুল প্রমাণিত হয়। অচেনা নম্বর থেকে কল আসায় কনফিউজড হয়ে পড়ে সে। কলটা কি ধরবে নাকি ধরবে না? ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করেই ফেলল অনিন্দিতা। ঠোঁট কামড়ে ওপর পাশের মানুষের কন্ঠের অপেক্ষা করে থাকল সে।
–“হ্যালো, এটা কি অনিন্দিতার নম্বর?”
মেয়েলি কন্ঠ পেয়ে অনিন্দিতার চোখজোড়া ছোট হয়ে আসে। চিকন সুরে বলে ওঠে….
–“হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে বলছেন?”
–“আমি সায়রা।”
অনিন্দিতার মনে আগের থেকেই সায়রার প্রতি ক্ষোভ ছিল। কারণ তার ধারণা প্রথমে অভয়ের দিকে তার নজর থাকলেও তার বর্তমান নজর ইশানের দিকে। কাঠ কাঠ গলায় সে প্রশ্ন করে…..
–“কেন ফোন করেছো?”
–“ইশানকে ফোনে পাচ্ছি না। ওর ফোন বন্ধ বলছে। ও কি ঠিক আছে?”
–“ইশান তো অচেনা ছেলে না তোমার কাছে? ওর জন্য এতোটা ডেস্পারেট কেন হচ্ছো জানতে পারি? প্রথমে আমার ভাইয়ের জন্য ডেস্পারেট ছিলে আর এখন ইশান ভাইয়ার জন্য? হাউ ফানি না?”
নিজের রাগটাকে দমিয়ে শান্ত করেই কথাগুলো গড়গড় করে বলে দিল অনিন্দিতা। ওপাশ থেকে সায়রার বিস্মিত কন্ঠ শুনতে পেল সে।
–“তুমি ভুল ভাবছো। আমি তো ভাবলাম ইশানের কোনো প্রবলেম হলো কি না! কারণ ও আমার দুঃখের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ হঠাৎ ফোন রিসিভ না করায় একটু চিন্তায় পড়লাম। আর একটা কথা অভয়ের জন্য আজও আমি ডেস্পারেট। ও আমাকে ঠকাতে পারে কিন্তু আমি ওকে ঠাকবো না। আমি আজও ওকে ভালোবাসি।”
–“ব্যাস সায়রা! তুমি কেমন ধরণের মেয়ে বলো তো? অভয় ভাইয়া তোমায় ঠকায়নি। হ্যাঁ ও বাধ্য হয়েছিল বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে নামের যেই বন্ধন আছে না? সেটা মানুষকে বাধ্য করে নিজের পরিপূরক কে ভালোবাসতে। সেটা বাধ্য করে সেই মানুষটাকে ক্ষণিকের ভালো লাগা থেকে বের করিয়ে নিয়ে আসতে। আচ্ছা, তাও মানলাম। ভাইয়া তোমায় ঠকিয়েছে। কিন্তু তুমি একবার মনে করে দেখো তো! তুমি একবারের জন্যও ঠকাওনি ভাইয়াকে?”
সায়রা জবাব দেয় না। ভাবতে থাকে অতিতে কথা গুলো। লোভে পড়ে টাকা হাতানো, বাবার কথায় ভালোবাসার নাটক করা! ওপর পাশ থেকে আবার অনিন্দিতা বলে….
–“কি হলো? উত্তর দাও! অনেস্টলি উত্তর দেবে। আমি কিন্তু এটাও জানি তুমি একবার ভাইয়ার থেকে অনেক টাকা নিয়েছিলে।”
–“হ্যাঁ আমি মানছি। আমি প্রথম প্রথম বাবার স্বার্থের জন্য ওর সাথে নাটক করেছি। বাবার কথায় টাকাও নিয়েছি ওর থেকে। আমাদের ভালোবাসার শুরুটা ভুল ছিল কিন্তু আমি যে কখন ওকে সত্যিকারের ভালোবেসেছি তা জানি না।”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে অনিন্দিতা। তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে….
–“এলে তো নিজের আসল সত্যিটা বাইরে নিয়ে? আমি জানতাম এটা তোমার আর তোমার বাবারই চাল হবে। কিন্তু ভাইয়া সেটা বুঝত না। একটা কথা শুনে রাখো সায়রা। যেই সম্পর্কের শুরুটা ভুলভাবে হয়। যেই সম্পর্কের শুরু ভিত্তিহীন! সেটা কখনো সঠিক হতে পারে না।”
বলেই অনিন্দিতা এক মূহুর্ত দেরি না করে কল কেটে দেয়। ওর ফোনে অটোমেটিক রেকর্ডার অন করা আছে। সব কথা রেকর্ড হয়। এটাও হয়েছে। সেও অভয়কে জানাবে সায়রার আসল সত্যি।
চলবে……
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]