বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৮

0
1416

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৮
#আনিশা_সাবিহা

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ঐশানী, অভয় আর অনিন্দিতা। অলরেডি কান্নাকাটি করে চোখমুখ ফুলিয়ে রেখেছে ঐশানী। মুখটা তার ভার। অভয় মাঝেমাঝে বাঁকা চোখে লক্ষ্য করছে ঐশানীকে। ঐশানীর জন্য হাসিখুশি চেহারায় যেন বেশি মানায়। কান্নাকাটি যেন তার জন্য নয়। একদমই নয়। মাঝেমধ্যে অভয়ের খুব করে ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে রামধমক দিয়ে বলতে….
–“এই মেয়ে এতো কাঁদতে হয় কেন? এই দেশেই তো আছো। যখন তখন ফ্যামিলির কাছে আসতে পারবে। তাহলে এতো কান্না আসছে কোত্থেকে? তোমায় কান্না মানাচ্ছে না। হাসো হাসো। একদম কাঁদবে না।”

কথাগুলো মনে মনেই অনেকবার বলে ফেলল অভয়। কিন্তু মুখ ফুটে আর ঐশানীকে বলাই হলো না। একেই হয়ত জড়তা বলে। আবার ইগোও হতে পারে। একসময় নিজের মনকে শান্ত করে জানালার বাইরের দিকে তাকায় সে। আকাশে কেমন যেন ঘন কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বৃষ্টি আসবে নাকি? বাতাসও হচ্ছে বেশ। সামনের সিটে গানে ইয়ারফোন গুঁজে গানের তালে হালকা মাথা দুলিয়ে চলেছে অনিন্দিতা। ওর আর কাজ কি?
চোখজোড়া ঘুরতে ঘুরতে আবারও গিয়ে পড়ে ঐশানীর দিকে। দিনের আলোয় স্পষ্ট হয়ে চোখে পড়ছে তার গাল ও নাকের লাল আভা। চোখ বন্ধ করে সিটে আয়েশ করে বসে চোখ বন্ধ করে সে।

বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই মিসেস. তনয়া ছুটে আসেন। বাড়িটা যেন তার এই তিনজনকে ছাড়া হাহাকার করছিল। তিনজনকে এক সঙ্গে পেয়ে উনার মুখে মুচকি হাসি ফোটে।
–“যাক তোরা ফিরেছিস আমার শান্তি। মাত্র একদিন ছিলি না কতটা একাকিত্ব বোধ করছিলাম তার বলার বাইরে। আর কোথাও যেতে দেব না তোদের।”
–“আমি তো যেতে চাইনি। তুমিই তো জোর করে পাঠালে মা।”
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বাড়িতে ঢুকে সটান হয়ে সোফায় বসে বলে অভয়। মিসেস. তনয়া বলেন….
–“ওটা নিয়ম। যেতেই হতো তোদের। তাছাড়া বাড়িতে থাকলে আহামরি কতক্ষণ থাকতি? অফিসে ছুটে যেতিস।”

–“বাড়িতে আর কতক্ষণ থাকা যায় বলো তো? এমনিতে এই বাড়িতে থেকে থেকে বোর হয়ে গেছি। দেশে আসার পর কোথাও বেড়াতে যাওয়া হলো না।”
–“কালকের পরেরদিন তো দেশের বাড়ি যাচ্ছি। সিলেট জায়গাটায় অনেক ঘুরে বেড়ানোর জায়গা আছে। যেই গ্রামের তোদের দাদুবাড়ি সেখানেই তো চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো জায়গা।”
অনিন্দিতার কথায় বড্ড তাড়াহুড়ো করে কথাগুলো বললেন মিসেস. তনয়া। কিছু একটা ভেবে আবারও ঐশানীর উদ্দেশ্যে বলেন……
–“তোমরাও তো আগে ওখানেই থাকতে না? কবে ঢাকায় এসেছো?”
–“বেশি দিন নয় আম্মু। চার-পাঁচ বছর!”

ঐশানীর কন্ঠ বেশ দুর্বল শোনায়। মেয়েটা কেমন জানি একটু জার্নি করলেই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বেশি কথা বাড়ালেন না মিসেস. তনয়া। সরাসরি বললেন….
–“আচ্ছা যাও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হও। বিশ্রাম নাও। আর অভয় তুইও যা। এভাবে বসে থাকিস না ফ্রেশ না হয়ে।”
ঐশানী মাথা দুলিয়ে ধীরেধীরে ওপরে ঘরের দিকে যায় নিজের লাগেজ নিয়ে। অভয় তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়। অন্যসব লাগেজ বা ব্যাগে হাত দিতে পারলেও ঐশানীর ওই ব্যাগটা নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসেছে। যেন কোনো গুপ্তধন আছে সেখানে। কিছুক্ষণ বসে থেকে অভয়ও পা বাড়ায় তার রুমের দিকে।

বিকেলের আকাশ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। সামান্য বাতাস হবার পর মেঘ কেটে গিয়ে রঙবেরঙের মেঘের মেলা বসেছে। ঐশানী মিসেস. তনয়ার নিজহাতে বানানো প্রিয় বাগানের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। গুনগুনিয়ে গানও গাইছে। গাছগুলো পানি পেয়ে যেন আরো সজীব হয়ে উঠেছে। একসময় পাইপলাইন থেকে পানি আসা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। ঐশানী তাতে বিরক্ত হয়ে পাইপলাইন নিজের দিকে করে ঝাঁকাতে থাকে।
–“এই বাড়িতে ওই শ্যামলা ঘোড়ার মতো কি সবকিছুতেই সমস্যা আছে? উনার যেমন হাসতে সমস্যা তেমনই সবকিছুতেই সমস্যা।”
পাইপ ঝাঁকিয়েও যখন কোনো লাভ হয় না তখন পাইপটার ওপর রাগ হয় তার।

অন্যদিকে ফিরতেই অভয়কে চোখে পড়ে তার। অজান্তেই পাইপের মুখটা অভয়ের দিকে ধরে ঐশানী। অভয় ফোনে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে। ওর পা দুটো পাইপের ওপর দাঁড় করানো। যার কারণে পানি আসা বন্ধ করে দিয়েছে। চোখটা ছোট করে ঐশানী চিল্লিয়ে বলে….
–“চোখ ফোনে লাগিয়ে হাঁটছেন ভালো কথা। তাই বলে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাবেন নাকি?”
–“চুপ চুপ। সায়রার নম্বর বন্ধ। মেসেজ করছি। দাঁড়াও।” (ঐশানীকে খেয়াল না করে)
–“তো করুন না মেসেজ। কিন্তু আমাকে গাছে পানি দিতে দিন। সরে দাঁড়ান।”

ফোন থেকে মাথা তুলে তাকায় অভয়। নিজেকে পাইপ লাইনের ওপর দেখে এক কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে….
–“ওহ হো। খেয়াল করি……”
কথাগুলো তার মুখেই রয়ে গেল। ঝর্ণার মতো পানি এসে ওপর তার ওপর। হা করে পানির মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকে এই বিকেলে। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় তার। ঐশানী সেখানেই স্তব্ধ হয়ে অভয়ের পানিতে ভেজা দেখছে। সে বুঝতেও পারছে না এতো পানি কোথায় থেকে পড়ছে উনার ওপর? তার খেয়ালেও নেই ঐশানীর হাতেরই পাইপলাইন দিয়ে পানি অঝরে পড়ছে অভয়ের ওপর। অভয় বার বার ইশারায় বলছে ঐশানীকে পানির লাইন বন্ধ করতে। কিন্তু সে বুঝলে তো? অবশেষে ব্যর্থ হয়ে দাঁত কিড়মিড় করে সেখানেই ঠাঁই দাড়িয়ে থাকে অভয়। ভিজেই তো গেছে সরে গিয়ে আর কি লাভ?

নিজের বোকামি খেয়াল হতেই ঝড়ের গতিতে পাইপটা সরিয়ে অন্যদিকে ধরে ঐশানী। অভয় ভিজে একেবারে চুপসে গেছে। কালো পরিহিত শার্ট দেহের সাথে লেগে গিয়ে প্রশস্ত দেহের পুরো গঠন বোঝা যাচ্ছে। ঐশানী এক অদ্ভুত ভাবনায় মেতে উঠল। সেটা হলো অভয়কে কেমন দেখতে? শ্যামলা চেহারার অধিকারী সে। হালকা মোটা নাক, ছোট চোখজোড়া, আবছা গোলাপি আভায় ছেয়ে থাকা ঠোঁটজোড়া। লম্বা ও চওড়ায় বেশ! ঐশানী হাইট একটু খাটো হওয়ায় তাকে মুখ তুলে কথা বলতে হয়। অভয়ের সঙ্গে কোনোদিন সেভাবে পাশাপাশি দাঁড়ায়নি ঐশানী। তবে আন্দাজ করতে পারছে সে অভয়ের কাঁধের থেকেও একটু নিচু। আচ্ছা তারা যখন দুজনে একসাথে হাঁটে তাহলে কি পেছন থেকে বাবা আর মেয়ে দেখাবে?

ঐশানী এবার বেশিই ভেবে ফেলছে। সে নিজের মনে ঝাড়ি মেরে বলল….’এতো ভাবছিস কেন? ওই শ্যামলা ঘোড়ার সাথে তোকে কেমন লাগে এটা জেনে তোর কি লাভ?’
মাথা ঝাঁকিয়ে হুঁশে ফিরে অভয়ের দিকে তাকায় সে। সে বোধহয় প্রচন্ড রেগে আছে। অভয়ের রাগ দেখে নিজের কথায় ভুলে যায় ঐশানী। এখন অভয় কি করবে তার সাথে? একটু একটু করে এগিয়ে আসে অভয়। তার পায়ের ধাপও যেন রাগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঐশানী ভয়ের চোটে পিছিয়ে যেতেও ভুলে গিয়েছে। অভয় এসে এক টান দিয়ে ঐশানীর থেকে পাইপলাইন নিয়ে নেয়। তারপর ঐশানীর দিকে ধরতেই ওকে ভিজিয়ে দেয় অভয়। ঐশানী কি রিয়েকশন দেবে তাও ভুলে গিয়েছে প্রায়। অভয়ের রাগি মুখে হুট করেই ফুটে ওঠে হাসির আভা। অট্টহাসিতে মেতে ঐশানীকে ভিজিয়ে চুপসে দেয় সে।

ঐশানী অপ্রস্তুত হয়ে অভয়ের হাত থেকে পাইপলাইন কেঁড়ে দিতে ছুটে আসতেই তার পা পিছলে যায়। পড়ে গিয়ে নিজের হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলার আগেই তার বাহু ধরে তাকে বাঁচিয়ে নেয় অভয়।
–“সাবধানে। প্রতিবার পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য আমি থাকব না।”
–“আপনি হয়ত থাকবেন না। অন্যজন থাকবে। আমার স্বামী থাকবে।”
অভয় ভ্রু কুঁচকায়। কি বলতে চায় এই মেয়ে? ঐশানীর স্বামী বলতে একমাত্র সে নিজেকেই চেনে। হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায় তার কন্ঠ।
–“মানে?”

–“মানে আবার কি? আপনার আর আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে যদি কখনো আমার ড্রিমবয় পেয়ে যাই তাহলে কি চুপচাপ বসে থাকব নাকি? বিয়ে করে সেটেল হয়ে যাব।”
ঐশানীর কথায় অভয়ের কি হলো তার অভয়ের নিজেরই অজানা। মাথাটা ক্রমশ গরম হতে থাকে তার। অজান্তেই সে চেপে ধরে জোরে ঐশানীর বাহু। হাসিতে চকচক করতে থাকা মুখ হঠাৎ করেই কালো করে চমকে ওঠে ঐশানী। অভয় তাকে এভাবে চেপে ধরল কেন? ভয়ে ভয়ে ভীতিকর সুরে বলে…..
–“কি হলো আপনার?”

সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয় অভয় ঐশানীর বাহু। পাইপলাইনটা ওপরে ধরে রেখেছে অভয়। অসাময়িক হাসি দেয় সে। তাদের ওপর বৃষ্টির ফোটার মতো পড়ছে পানি। ঐশানিও হেসে দেয়। এক পড়ন্ত বিকেলে পানিতে খুনসুটি করতে ব্যস্ত একজন রমনী এবং একজন পুরুষ।

রাতের খাওয়া শেষ করে ঘরে ঢোকে ঐশানী। অভয় ঘরে আগের থেকেই খাওয়া শেষ করে এসে বসে ছিল। লাইট ওফ করে শুধু একটা ড্রিমলাইট টাই জ্বলছে। ঘরটায় আবছা আলো। অভয় উবু হয়ে আছে খাটে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে। ভ্রুযুগল হালকা কুঞ্চিত করে রেখেছে। বাবা একাই আর কাজ সামলে উঠতে পারছে না বলে আজ থেকেই কাজে হাত দিয়েছে অভয়। ঐশানী এসে বেডের ওপর বসে বালিশ শেষ প্রান্ত নিয়ে এসে শুয়ে পড়ে। মাঝখানে দেয় বালিশ। অন্যপাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে নেয় সে।

রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে কাজ শেষ করে হাফ ছাড়ে অভয়। প্রেজেন্টেশন তৈরি করা মোটেও সহজ কাজ নয়। ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখে নেয় ঐশানীকে। সে গুটিশুটি মেরে ওপাশ ফিরে রয়েছে। এতোক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে হয়ত। অভয়ও ল্যাপটপ রেখে শুয়ে পড়ে। কপালে হাত ভাঁজ করে রেখে ওপরে ছাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ঐশানী আর তার বিয়ে হয়েছে। একই ঘরে একই বিছানায় তাদের বাস। কিন্তু কত দূরত্ব! অভয় কি ঐশানীকে দূরে সরিয়ে রেখে কোনো অন্যায় করছে? নাকি ও তাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে! না না তার তো সায়রার প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। ঐশানীর প্রতি নয়। কারণ ঐশানী নিজেও সুখি নয়। সুতরাং এটা তার প্রতি অন্যায় না। মনে মনে এটাই ভেবে নেয় অভয়।

–“কি ভাবলেন সায়রার ব্যাপারে? কবে ভাঙাচ্ছেন ওর অভিমান?”
ঐশানীর কন্ঠ এই সময় আশা করেনি সে। তাও সায়রার ব্যাপারে তো একদমই না।
–“এখনো ঘুমাও নি তুমি?”
–“না। ঘুম আসেনি এখনো। আমি যে আইডিয়া দিয়েছি। আই মিন একে একটু রোমান্টিকলি প্রপোজ করে অভিমান ভাঙানোর কথা। এই ব্যাপারে কি ভাবলেন?”
মেয়ে জাতি নাকি মরে গেলেও নিজের স্বামীর সাথে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। অথচ ঐশানী তার উল্টো। অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অভয় গলা খাঁকারি দিয়ে বলে….
–“ভাবছি। কাল ওর সাথে কথা বলব।”

–“শুধু কথা?”
–“আচ্ছা তুমি কেমন স্ত্রী বলো তো? স্বামীকে পরকীয়ায় জড়াতে সাহায্য করছো?”
ঐশানীর হাসির শব্দ শোনা যায়। সে ওইপাশ ফিরে আছে বলে তাকে দেখা যাচ্ছে না। ও কি তাচ্ছিল্য করে হাসছে? হাসি থামিয়ে সে বলে….
–“আমরা যদি সত্যিই এমন কোনো স্বামী-স্ত্রী এর বাঁধনে আঁটকে থাকতাম অবশ্যই আপনাকে এসব করতে দিতাম না। দরকার হলে গলায় ছুরি ধরে নিজের করে রাখতাম। তবে যেই সম্পর্কে ভালোবাসা নেই সেই সম্পর্কের চেয়ে ভালোবাসাময় সম্পর্ক ভালো নয় কি?”
অভয়ের নিরুত্তর। মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেন? ওকে বোঝার ক্ষমতা এখনো হলো না অভয়ের।

অভয়কে চুপ থাকতে দেখে আবার ঐশানী বলতে শুরু করে…..
–“আপনি কালকেই না হয় সায়রার অভিমান ভাঙিয়ে দিন। অভিমান বড্ড কষ্ট দেয়। অভিমান হলে আশপাশটা বিষের মতো লাগে। ওই বিষ যন্ত্রণা থেকে সায়রাকে মুক্তি দিন।”
–“তুমি বলছো এসব করতে?”
–“হুমম। কিন্তু কাল। আজ নয়। ঘুমান এখন। গুন নাইট।”
ঐশানীর আর গলা পাওয়া গেল না। অভয় সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিল। শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে এলো যেই মেয়ে তাকে ভালোবাসতে চায় না তার ওপর মায়া বাড়িয়ে কি করবে? অন্তত অনিন্দিতার দেওয়া চ্যালেঞ্জ টা জিততে পারবে। তাই ঐশানীর ভাবনা মাথায় আনতে চায় না সে।

সকাল হতে না হতেই ব্যস্ত শহরের মানুষ নিজেকে নিজের কাজে ব্যস্ত করে তুলেছে। ঐশানী এবং তার শ্বশুড়বাড়ির পরিবারও বাদ নেই। যে যার কাজে ব্যস্ত। সকালের খাবার খেয়ে রাহাত সাহেব ও অভয় একসাথে বেরিয়ে গেছে অফিসের জন্য। মিসেস. তনয়া বসে মনের সুখে কাঁথা সেলাই করছেন। ঐশানী আর অনিন্দিতাও বেরিয়েছে কিছু শপিং করতে। মিসেস. তনয়া পাঠিয়েছেন ওদের। কালকে কতবছর পর গ্রামে যাবে তারা। কিছু না নিয়ে গেলে চলে নাকি? তাই সকলের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে পাঠিয়ে দিয়েছেন মিসেস. তনয়া ওদের দুজনকে।

শপিংমলে প্রচন্ড রকমের ভীড়। সকলে যেন শপিং করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আশপাশটা এতো ভীড়ের জন্য গরম ও উত্তপ্ততর হয়ে উঠেছে। তাই দ্রুত শপিং শেষ করে নিল ঐশানী আর অনিন্দিতা। দুজনেই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অনিন্দিতা নিজের হাতে থাকা ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে….
–“বারোটা বাজে ভাবি। সকলের জন্য সব কেনা হয়ে গেছে?”
–“হুমম মোটামুটি হয়ে গেছে। অনেক গরম পড়েছে। ঠান্ডা কিছু না খেলেই নয়। শরীর আর চলবে না। মলের বিপরীতে একটা রেস্টুরেন্ট দেখেছিলাম। চলো সেখানে গিয়ে বসা যাক।”

ঐশানীর প্রস্তাবটা খারাপ নয়। অনিন্দিতারও পা চলছে না। তাই হেসে মাথা দুলিয়ে চলতে শুরু করে। দুজনেই মল থেকে বের হওয়ার রাস্তার দিকে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে আসে ঐশানী। সে খেয়াল করেনি অনিন্দিতা তার সঙ্গে আসেই নি। ব্যাগ চেক করতে করতে হেঁটে চলছে সে। রেস্টুরেন্টের কাছে এসে সোজাসুজি সেখানে ঢুকে পড়ে। ও এটাও খেয়াল করেনি রেস্টুরেন্টের দরজায় বুকড লিখা আছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে বেশ অন্ধকার দেখে ঘাবড়ে গিয়ে সে আশেপাশে তাকায়। অনিন্দিতাকে যখন খুঁজেও পায় না তখন ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে ঐশানীর। তৎক্ষনাৎ ওর ওপর লাইট পড়ায় চোখটা বন্ধ করে নেয় ও। চোখ খুলে দেখে আশপাশটা কত সুন্দর করে সাজানো। সফট মিউজিক চলছে। টেবিলে টেবিলে ফুল দিয়ে সাজানো।

কারো স্পর্শ পেয়ে তার হাড় হিম হয়ে আসে ঐশানীর। শরীরে বয়ে যায় এক অজানা স্রোত। কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে। ঐশানীর হাত থেকে ব্যাগ গুলো পড়ে যায়।
–“আই এম সরি সায়রা। আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝেছি তুমি আমার ডিস্টেনি। আমার ভাগ্য। ঐশানী নয়। যদি হতো তাহলে কবেই ওর সাথে আমার মিল হতো। সেটা হয়নি। আই এম সরি।”
চেনা পরিচিত কন্ঠ শুনে নিশ্বাস আঁটকে আসে ঐশানীর। জোর করে ধাক্কা দিয়ে সরে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে অভয়কে দেখতে পায় সে। অভয়ও তাকে দেখে ততটাই অবাক হয়েছে যতটা ঐশানী হয়েছে। ঐশানী মুখ ফুটে বলে ওঠে…..
–“আপনি?”

চলবে……

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here