বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৭
#আনিশা_সাবিহা
রান্নাঘরে শাড়ির আঁচল নিজের কোমড়ে বেঁধে মালাই চা বানাতে এসেছে ঐশানী। বিষয়টা তার কাছে বিরক্তিকর! কারণ মিসেস. দিশা তাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিয়ের পর সব কাজ না করলেও টুকটাক কাজ তো জানতেই হবে। এটা হচ্ছে মিসেস. দিশার মক্তব্য। বিয়ের আগে যেই ঐশানী রান্নাঘরে উঁকি পর্যন্ত দেয়নি সেই ঐশানীকে এখন রান্নাঘরে পাঠিয়েছে তার মা। এটা মানতে পারছে না সে। চুলোয় আগুন ধরিয়ে চুলোর ওপরে পাত্র বসিয়ে দেয় ঐশানী। বিড়বিড় করে বলে ওঠে…..
–“আমার মা টাও পাল্টে গেল। এখন জামাই জামাই করছে। এই বিরক্তিকর শ্যামলা ঘোড়ার মধ্যে সবাই কি পায় আল্লাহ মালুম। এখন কিনা চা বানাতে হচ্ছে আমাকে তাও ওই লোকটার জন্য!”
–“বলছিলাম না? জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে বিয়ের পরে? শুনিস নাই তোর এই সত্যিকারের বান্ধবীর কথা।”
কিছু চেনা কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় ঐশানী। আবারও যেন কতদিন পর নিজের বান্ধবীদের সাক্ষাৎ পেয়ে মনটা নেচে ওঠে ঐশানীর। দিয়ার পাশে রিনি দিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে ঝাড়ি মেরে বলে….
–“চুপ কর তো! তা ঐশানী দোস্ত কেমন আছিস? বিয়ের পর কেমন চলছে সব?”
–“সব তো ঠিকঠাকই চলছে। শুধু ওই বাড়িতে দুটো জিনিস বিরক্তিকর! প্রথমটা ওই শ্যামলা ঘোড়া আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে এইযে প্রতিদিন শাড়ি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে থাকা। দুটোই অসহ্যকর।”
বিরক্তির শ্বাস ফেলে বলে ঐশানী। মেঘনা চোখ বড় করে পাকিয়ে বলে…..
–“বলিস কি? বাসর রাত কাটাবার পরেও তোরা দুজন নিরামিষ আর দুই প্রান্তের দুটো জীবই রয়ে গেলি? এক হয়ে যাওয়ার চান্স ছিল কাজে লাগালি না? তোর জন্য আফসোস হয় রে ঐশু!”
বান্ধবীদের লাগামহীন কথাবার্তায় রাজ্যের লজ্জা আর রাগ এসে ভর করে ঐশানীর ওপর। হাতে খুন্তি দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বলে…..
–“নিরামিষ কাকে বললি রে তুই? আমার মতো আমিষ আর দুনিয়াতে একটাও পাবি না। যদি সঠিক লোক আই মিন ভালো কোনো লোকের সাথে বিয়েটা হতো বুঝিয়ে দিতাম। আমারও তো একটা রুচি আছে নাকি?”
–“সত্যিই বাসর রাতে তোদের মাঝে কিছু হয়নি??” (উৎসাহ নিয়ে)
লজ্জা যেন আর ঐশানীকে টিকতেই দেয় না। বাসর রাতের কথা শুনলেই বার বার অভয়ের ওপর আরামে ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে তার। ঐশানীর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। অথচ বিয়ের আগে নিজেই এসব লাগামহীন কথাবার্তা কতশতই না বলেছে। কিন্তু বিয়ের পর সে নিজেই লজ্জায় প্রায় নেতিয়ে পড়েছে। এখন তার বান্ধবীগন দের না তাড়ালে যে কি ভয়ানক হাসাহাসিতে মাতবে ওরা সেটা ঐশানী খুব ভালো করেই বুঝতে পারে। পেছন থেকে পানির জগ নিয়ে মেঘনাদের দিকে পানি ছিটিয়ে দেয় ঐশানী।
–“ঐশানী, কি করছিস? গোসল তো আমরা করে এসেছি। আমরা দ্বিতীয়বার গোসল করে নয় তোর খবর নিতে আসছিলাম।”
রিনির কথা ঐশানীর কানে গিয়েও যায় না। ভিজে একাকার হবার আগেই সবাই রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। ঐশানী হাফ ছেড়ে বাঁচে। ওরা থাকলে আরো কত লাগাম ছাড়া কথাবার্তা বলতো তার ঠিক নেই। ও শুনতে চায় না অভয়ের সাথে যুক্ত কোনো কথা। কথায় আছে, যেই মানুষটার কথা শুনলে লজ্জা এসে তোমার ওপর ভর করে। তবে সেই মানুষটাকে ভালোবাসতে তোমার আর মাত্র কিছুক্ষণই লাগবে আবার হয়তবা তুমি ভালোবেসে ফেলেছো!
ঐশানী এমন কাউকে ভালোবাসতে চায় না যাকে ভালোবাসলে তার সুখময় এবং হাসিখুশি জীবনে আবারও ধসে পড়বে।
পানির জগটা রেখে দিয়ে তার নজর যায় মালাই এর কৌটোর দিকে। মুখে আপনাআপনি পানি চলে আসে তার। আশেপাশে চোরের মতো উঁকি দিয়ে খপ করে ওপর থেকে পেড়ে নেয় মালাই এর কৌটো। কৌটোর মুখ খুলে দেখে ভর্তিই আছে মালাই। চায়ের জন্য গরম হওয়া দুধের পাত্রের দিকে তাকিয়ে আপনমনে বলে….
–“মালাই তো চা তেও দিতে হবে। তাহলে কি আমার খাওয়া হবে না? একটু খেলে কিছু হবে না। খেয়েই নিই বরং।”
আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করে ঐশানী। মালাই জিনিসটা তার ছোট থেকেই বড্ড প্রিয়। রান্নাঘরে কতশত বার চুরি করে খেয়েছে তার ঠিক নেই।
খাওয়ার এক পর্যায়ে ঐশানীর খেয়াল হয় মালাই প্রায় শেষের দিকে। তলায় একটুখানি পড়ে আছে। ভয়ে শুকনো ঢক গিলে সে। কৌটোটা ঝাঁকিয়ে ভীতিকর সুরে বলে…..
–“মা জানতে পারলে সেদিনের মতো আমাকে দিয়ে চড় দিবস পালন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন কি করা যায়?”
চুলোর পাত্রে দুধটুকুও গরম হতে হতে শুকিয়ে গেছে। দ্রুত চুলো নিভিয়ে দিল ঐশানী।
–“আমার যতদূর মনে আছে আমার শ্বাশুড়ি মা তোমাকে মালাই চা বানাতে বলেছিল। কিন্তু রান্নাঘরে এসে গেছি এখানে পুরো মালাই ঐশানী তৈরি হয়ে গেছে।”
চেনা পুরুষালি কন্ঠে ভয়টা বেড়ে যায় ঐশানীর। রোবটের মতো ঘুরে তাকায় অভয়ের দিকে। অভয় একটা সুন্দর হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। হাসিটা সম্ভবত দুষ্টুমির হাসি! অভয়ের শেষ কথাটা বুঝতে না পেরে ঐশানী বলে….
–“মানে?”
–“মানেটা তো আয়নার সামনে গেলেই দেখতে পাবে। তোমার বয়স বাইশ বছর। তুমি শারিরীক দিক থেকেই বড় হয়েছো। মস্তিষ্ক একেবারে যতটুকু ছিল ততটুকুই আছে। গালে, ঠোঁটে, ঠোঁটের আশেপাশে, দুই হাতে সবখানে মালাই লাগিয়ে বসে আছো। শুধু চায়েই মালাই নেই।”
বলেই হু হা করে হাসতে শুরু করে অভয়। অভয়ের প্রাণখোলা হাসিটা বেশ সুন্দর। তবে এই সৌন্দর্যটা খুব বেশি দেখা যায় না। তবে তার হাসিতে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে ঐশানী। মৃদু চিৎকার করে বলে…..
–“আপনি এখানে কি করছেন?”
–“পানি খেতে এসেছিলাম। বাড়ির বড়দেরকে বলতে অস্বস্তি হচ্ছিল। ভাগ্যিস আমি নিজেই এলাম পানি খেতে। নয়ত এই দৃশ্য দেখতে পেতাম না।”
–“কেন? আমার বাড়ির মালাই। আমি খেয়েছি। আপনার বাড়ি থেকে চুরি করে তো খাইনি। আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না।”
অভয় ভ্রু উঁচিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মনোযোগ হবার ভং ধরে মাথা নাড়াতে নাড়াতে শুনতে থাকে ঐশানী কথা। তারপর দুষ্টুমির সুরে বলে…..
–“তুমিও বা ভয় পাচ্ছো কেন? আচ্ছা একটা কথা বলো। মালাই চা স্পেশালি আমার জন্য বানাচ্ছিলে। এখন তুমি নিজেই সব সাফ করে বসে আছো। আমি এখন কি খাব? তোমাকে খাব?”
অভয়ের মুখে এমন কথা কখনোই আশা করেনি ঐশানী। ঐশানী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায়। অভয় এখনো বুঝতে পারেনি আসলে কি মজার ছলে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। সে এখনো হাসতে মত্ত হয়ে পড়েছে। ঐশানীর সাথে থেকে তার কি হয়েছে সে নিজেই জানে না। সারাদিন হাসতে মন চায় তার। একসময় ঐশানীকে দেখে হাসি থামিয়ে ফেলে সে।
–“এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? রান্নাঘরেও ভূত-পেত্নী দেখছো নাকি আজকাল?”
ঐশানী জবাব দেয় না। ও একেবারেই বোবা হয়ে গেছে যেন। অভয় এবার চিন্তিত হয়ে তার বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। তখনই তার স্মরণে আসে সে বেশ বেহায়া কথা বলে ফেলেছে। তৎকালীন ঝড়ের গতিতে রান্নাঘর ত্যাগ করে সে। যাবার আগে ছোট্ট করে বলে যায়…..
–“সরি। আমি ওভাবে বলতে চাইনি।”
ড্রয়িংরুমে সবার মাঝে বসে আছে অভয়। ইমতিয়াজ সাহেবের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা চলছে তার। কিন্তু ভুলতে পারেনি কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটি। বারবার বুক ধুকধুক করছে তার। পাশে অনিন্দিতা আর ঐশী দুজনে রাজ্যের গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। দুজনে ইতিমধ্যে একেবারে প্রিয় বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছে।
খালি হাতে ড্রয়িংরুমে পা রাখে ঐশানী। তাকে নজরে পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেলে অভয়। সে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে এখন। সে বুঝতে পারেনা সে হঠাৎ করে এমন হয়ে গেল কেন? আগে তো দরকার ছাড়া মুখ থেকে একটা কথাও বের করা যেতো না তার। কবে এতোটা কন্ট্রোল হারিয়ে কথা বলতে শিখল? এটা কি ঐশানীর প্রভাব?
ঐশানীকে খালি হাতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে উঠলেন মিসেস.দিশা।
–“এই মেয়ে! জামাই এতোক্ষণ ধরে বসে আছে চা কোথায়? বানিয়ে আনিস নি? কি করলি এতোক্ষণ?”
–“মা আমি কি করব? তোমার জামাই তো মালাই চায়ের থেকে মালাই খেতে বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু বলতে না পারায় চুপি চুপি রান্নাঘরে গিয়ে সবটা মালাই খেয়ে ফেলেছেন লোভ সামলাতে না পেরে।চা কি দিয়ে বানাতাম তুমিই বলো?”
ফট করেই কথাগুলো বলে ফেলে ঐশানী। কথাগুলো কানে আসতেই থতমত খায় অভয়। কি বলছে মেয়েটা? নিজেই সবটা খেয়ে এখন কত সুন্দর করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিল!
লজ্জায় অভয়ের মুখ থেকে কথা বের হতে চাইছে না। তবুও জোর করে বলল….
–“আ…আমি খেয়েছি?”
–“লজ্জা পেতে হবে না। আমি জানি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন। কিন্তু এটা কিন্তু ঠিক না। আফটার ওল এটাও তো আপনারই বাড়ি না?”
–“ঐশানী একদম ঠিক কথা বলেছে। এটা তো তোমারও বাড়ি। মালাই কিন্তু আমারও খুব পছন্দের। (ফিসফিসিয়ে) একটা সিক্রেট বলি শোনো। আগে জোয়ান বয়সে আমিও শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে তোমার শ্বাশুড়ি যখন চা বানাতো আমি মালাই চুরি করে খেয়ে ফেলতাম।”
মজার ছলে কথাগুলো বলেন ইমতিয়াজ সাহেব। অভয় বেচারা তো এখনো বিস্ময় কাটাতে পারেনি। হা করে ঐশানী দিকে তাকিয়ে আছে। এটা মেয়ে নাকি আগুনের গোলা?
অনিন্দিতা খানিকটা এগিয়ে এসে অভয়ের কানে কানে প্রশ্ন করে…..
–“ভাইয়া আগে তো জানতাম না তুই মালাই খেতে এতোটা ভালোবাসিস! শেষমেশ কিনা শ্বশুড়বাড়িতে এই কান্ডটা করে বসলি তুই?”
বলেই ফিক করে হাসে অনিন্দিতা। অভয়কে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই ঐশীর সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অপমানের রাগে কটমট করে ঐশানীর দিকে তাকায় অভয়। ঐশানী সিঁড়ি দিয়ে তার রুমে যাচ্ছে। পেছন ফিরে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে উঠে যায় সে। অভয়ও তার অপমানের শোঊ তুলবে। সুদেআসলে শোধ তুলবেই তুলবে!
ঐশানীর ঘরে আড্ডা বসেছে। তার বান্ধবীরা ঐশানীকে পেয়ে নানানরকম গল্পের হাট শুরু করেছে। মাত্র একদিন ঐশানীকে না পেয়েই তাদের গল্পের আসর পানসে হয়ে গিয়েছিল। তাদের আড্ডার মূল বিষয়বস্তু হলো অভয় আর ঐশানীর সম্পর্ক।
–“এর মানে তোদের বিয়ে পরেও দুলাভাই অন্যকাউকে ভালোবাসে?”
দিয়ার প্রশ্নে মাথা নাড়ায় ঐশানী। সঙ্গে সঙ্গে রিনি হুমড়ি খেয়ে বলে…..
–“বলিস কি? এটা তো ঠিক না। তুই কি করবি এখন?”
–“কি করব আবার? আমার জন্য প্রথমে উনাদের সম্পর্ক ভাঙনের মুখে পড়েছে। সেহেতু আমিই ঠিক করব সম্পর্কটা। তারপরেই তো বিয়ের বাঁধন থেকে মুক্তি পাব।” (স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে)
–“তুই দুলাভাইয়ের বান্ধবী বা শুভাকাঙ্ক্ষী নস যে উনার প্রেমিকা আর উনার মাঝে সবটা ঠিক করে দিবি। তুই উনার বউ। বিয়ের বাঁধন থেকেও মুক্তি পেতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় ঐশানী। সময় থাকতে নিজের স্বামীকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখ। যদি কখনো দুলাভাইকে ভালোবেসে ফেলিস আর উনাকে বেঁধে রাখতে না পারিস তাহলে কিন্তু দুঃখের শেষ থাকবে না।”
রিনির কথায় স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল ঐশানী। তারপর বিরক্ত হওয়ার ভাব ধরে বলল….
–“তোরা চুপ কর। তোরা জানিস বিয়েটা আমি মন থেকে করিনি। বিয়েতে আমার রীতিমতো এলার্জি। তবুও এসব কথা কেন বলছিস তোরা? জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর।”
–“যে করেই হক বিয়েটা কিন্তু হয়েছে। তুই অস্বীকার করতে পারিস না। তুই কেন অন্য মেয়ের জন্য নিজের অধিকার ছাড়বি? আমার কথা শোন তোরা নতুন করে জীবনটা শুরু কর। দেখ তোরা ভালো থাকবি।”
–“তোরা চুপ কর তো। আমার দ্বারা এসব সংসার হবে না।”
মেঘনা কিছু ভেবে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে বলে….
–“আচ্ছা একটা কথা বল। দুলাভাই যখন সায়রা সায়রা করে তখন তোর খারাপ লাগে না?”
ঐশানী বলতে যায় তার খারাপ লাগে না মোটেই। কিন্তু কোথাও আঁটকে যায়। সে অনুভব করে কোথাও তারও মনের কোণে খারাপ লাগা কাজ করে। সেই সূক্ষ্ম খারাপ লাগা সে বুঝতে পারে না। প্রশ্নটা এড়াতে আড্ডার আসর থেকে উঠে পড়ে সে।
–“আমার ভালো লাগছে না এসব বলতে। ভাবলাম এতোদিন পর আমরা একটু হাসির আড্ডা দেব তোরা তা না করে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছিস। আমি বুঝি আমার জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। তোরাই কথা বল আমি যাচ্ছি।”
রাগ দেখিয়ে চলে যায় ঐশানী। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তার বান্ধবীরা।
নিজের ঘরে আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ঐশানী। মুখটা তার ভার। তার কারণ হচ্ছে আজ দুপুরের খাবার খাওয়ার পরেই তাকে নিজের বাড়ি থেকে আবারও চলে যেতে হবে। তাছাড়া কোনো উপায়ও নেই। কালকের পরেরদিনই আবার অভয়ের গ্রামের বাড়ি যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মিসেস. তনয়া। তাই তাদেরকে ফিরতেই হবে। দরজা লক করার শব্দে ঐশানীর ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটে। ব্যাগে জিনিস রেখে অভয়কে দেখে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে তার পা। সকালে ও যা করেছে এরপর অভয় যে তার সাথে খারাপ কিছু করবে সেটা সম্পর্কে সে জানে।
–“আপনি! দরজা আটকালেন কেন?”
কাঁপতে কাঁপতে পেছনে সরতে সরতে বলে ঐশানী। অভয় বাঁকা হাসি দিয়ে বলে…..
–“সকালে এতো ভালো কাজ করলে আমার জন্য। তার জন্য গিফট নিবে না?”
–“গি…গিফট?”
–“হ্যাঁ গিফট। কিচেনে মালাই কে খেয়েছিল?”
ঐশানী ঢক গিলে পিছুতে পিছুতে বলে…..
–“আমি।”
অভয় আরো এগিয়ে যায় ঐশানীর দিকে।
–“মালাই কার পছন্দ?”
–“আ…আমার।”
–“তাহলে আজ তোমায় না হয় তোমার পছন্দের জিনিস দিয়ে গোসল করিয়ে দিই।”
ঐশানীকে কিছু বুঝে উঠার আগেই অভয় নিজের ডান হাত আড়াল থেকে বের করে তার হাতে থাকা বড় মালাই এর কৌটোর সবটা মালাই ঐশানীর ওপর ঢেলে দেয়। সবটা গিয়ে পড়ে ঐশানীর মাথায় এবং শরীরে। রেগে অগ্নিমূর্তি রুপ ধারণ করে ঐশানী। অভয় হালকা হেলে বলে…..
–“আশা করি এরপর থেকে আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার আগে এই কথাটা মনে পড়বে।”
ঐশানী রেগেমেগে বলে ওঠে…..
–“আপনি! আপনি একটা……”
পুরোটা বলার আগেই অভয় তার গাল ডান দিয়ে স্পর্শ করে। কথায় বন্ধ হয়ে যায় ঐশানী। হালকা কাঁপুনি দিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ডান হাতে ঐশানীর গালে থাকা মালাই উঠে আসে অভয়ের হাতে। সেটা মুখে পুড়ে নিয়ে বলে…..
–“উমম….সুইট। মেবি দ্যা গ্রেট ঐশানীর স্পর্শ পেয়ে জিনিসটা আরো সুইট হয়েছে।”
চোখ মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অভয়। ঐশানী হা হয়ে সেখানেই অভয়ের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।
চলবে……
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]