বেড নং ৯ পর্ব ১

0
3172

হাসপাতাল থেকে পরপর তিনটা মেয়ের লাশ চুরি হওয়ার পর পুরো হাসপাতাল কর্তিপক্ষের টনক নড়ল। ১,২ টা লাশ গায়েব হওয়াটা তাদের জন্য সাধারণ বিষয়। তবে ৩য় লাশটা চুরি হওয়ার পর সবাই একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। বিশেষ করে হাসপাতালে কর্তব্যরত প্রধান ইনচার্জ জনাব আশফাক। কেননা সব জবাবদিহি তো তাকেই করতে হবে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো চুরি হওয়া লাশগুলো মেয়েদের তাও অবিবাহিত। প্রায় প্রত্যেকের বয়স আনুমানিক ২০/২১ হবে। ৩য় লাশটা চুরি হওয়ার পর আশফাক সাহেব পুলিশকে খবর দিলেন। পুলিশ আসবে আরও ২০ মিনিট পর। এখন সকাল ৮ টা বাজে। আশফাক স্যার আমায় ডেকে পাঠালেন। আমি এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত আছি।

– মি.আদ্রিব আপনার কি মনে হয়? এসব কার কাজ হতে পারে ? হাসপাতালের কারো নাকি বাইরের লোক?
– আমি তো বলতে পারব না স্যার ,তবে বাইরের লোক হলেও হাসপাতালের কারো হাত থাকতে পারে।
– আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
– স্যার সন্দেহ তো আপনাকেও হয়। তবে এটা কতোটা সত্য তা তো জানি না।
– আপনার কথার মানে কি? আমি এসব করেছি ??
– হা হা হা,না স্যার আমি মজা করেছি।
– তাই বলুন।
– পুলিশ আসুক ,তারাই বলতে পারবে এর মূলে ঠিক কে আছে ,কিংবা কারা আছে। ততক্ষণ অপেক্ষা করুন !

প্রায় ৩০ মিনিট পর পুলিশ এলো। তদন্ত করতে মর্গে গেলো ২ জন পুলিশ ,একজল লেডি আরেকজন পুরুষ। তাদের প্রধান জনাব জলিল স্যার আমাদের প্রধান স্যার আশফাকের সাথে কথা বলছেন। আমাকে পাঠানো হলো মর্গে।

মর্গে সবটা তদন্ত করে পুলিশ,কিছুই পেল না। সবার সাথে কথা বলে জানা গেল শেষ কাল রাত ৮ টায় তারা লাশটা দেখেছিল। বেড নম্বর ৯ এ। এরপর সকালে মর্গ পরিষ্কার করতে এসে হারুন ভাই দেখে বেড নম্বর ৯ একদম খালি। তখনি সে বিষয়টা সবাইকে জানায়। আমিও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পুলিশ নাইটগার্ডের সাথে কথা বলে জানতে পারে সে কাউকে ভিতরে ঢুকতে বা বের হতে দেখে নি। তাহলে লাশগুলো কই গেল? কে নিলো? আর কেনই বা ?

কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম পুরো ব্যাপারটায়। অবশ্য এটা অশরীরি আত্মারও কাজ হতে পারে। যদিও আমি এসবে বিশ্বাস করিনা। তবুও এই হাসপাতাল নিয়ে যে গল্পগুলো আছে তা পুরোটা মিথ্যাও ধরা যায় না। অনেকে নাকি অনেক কিছু দেখেছে যদিও আমার সামনে কখনো কিছু পরে নি।

শুনেছি আগেও নাকি এই হাসপাতাল থেকে লাশ চুরি হতো। একদিন একজন নাইটগার্ড দেখে যে লাশ হাওয়ায় ভাসছে ,এটা দেখে সে ওখানেই জ্ঞান হারায়। পরে ওই লাশটা আর পাওয়া যায় নি। সকালে তাকেও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর উনি ওনার চাকরি ছেড়ে দেন।

যাই হোক বিষয়টা পুলিশের উপর ছেড়ে দিয়ে আমরা নিজেদের কাজে মন দিলাম। এরপর আগামী ২ দিনে কোন লাশ চুরি হয় নি। ৩য় দিন রাত ৭ টায় একটা লাশ এলো। যদিও আমি এসব লাশের ধারে কাছে তেমন যাই না তবুও শেষবার চেক করতে লাশটার নাড়ী পরীক্ষা করতে গিয়ে আমি বেশ অবাক হলাম। পুরো হাতটা জমে শক্ত হয়ে আছে। আমি লাশটার পরিবারকে জিঙ্গেস করলাম কখন মারা গেছে ?? ওরা বলল আজ বিকেল ৪ টায়। অথচ লাশটাকে দেখে মনে হয় আরও ২,৩ দিন আগে মারা গেছে কিন্তু লাশটাকে পচনের হাত থেকে বাঁচাতে ফ্রিজে রাখা হয়েছে। আমার মনের সন্দেহটা দূর করতে আমি পাশের কেবিনে থাকা রবিন স্যারকে ডেকে আনলাম। উনি এসে বললেন সবকিছু নরমাল আছে। অথচ তখনও আমি টের পাচ্ছি লাশটার হাতটা প্রচন্ড ঠান্ডা।

সবকিছু মিটে গেলে ওরা বলল ওরা আজ লাশটাকে নিতে পারবে না। ওদের সাথে নাকি কেউ নেই। ওরা ২ জন আর বাড়ি অনেক দূরে। অগ্যতা লাশটা মর্গে রাখার ব্যবস্থা করা হলো ! যখন লাশটা নিয়ে মর্গে যাওয়া হবে তখন মনে হলো কে যেন আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। খেয়াল করে দেখলাম সেই লাশটা। আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। অনেকটা জোর করেই হাতটা ছুটালাম। তবে আমার শার্টের হাতার একটা বোতাম ছিড়ে গেলো। তাও যে হাতটা ছুটাতে পেরেছি সেই ভাল।

যখন লাশটাকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমার চোখটা মেয়েটার মুখের উপর পড়ল। আমি যেন দেখলাম লাশটা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। নিজের চোখের ভুল ভেবে জলদি সেখান থেকে বের হয়ে এলাম।

পরের দিন সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙল আমার। সারারাত ঘুম হয়নি ভাল। মনে হচ্ছিল মেয়েটা আমার ঘরে বিরাজ করছে। সকালে তাই ডিউটিতে যেতেও লেট হলো। আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম তখন বেলা ১০ টা বাজে। হাসপাতালের করিডোরে বেশ ভীড় জমেছে। আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম করিডোরের মেঝেতে কাগজে মোড়ানো একটা লাশ। লাশটার পুরো শরীরটা পত্রিকায় মোড়ানো থাকলেও লাশের মুখটা খোলা। আমি আতকে উঠলাম। লাশের মুখের থেকে ঠোঁটটা কেটে নেওয়া হয়েছে সাথে চোখ দুটো উপড়ে ফেলেছে। আমি এতোটা বিভৎষ চেহারা আগে কখনো দেখি নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এটা সেই ১ম মেয়েটার লাশ যা আরও ৭ দিন আগে চুরি হয়ে গিয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় লাশটা একটু পঁচে নি। মনে হয় খুব যত্ন করে কেউ ফ্রিজে রেখেছিল লাশটা। ঠিক গতরাতের লাশটার মতোই ঠান্ডা।

গতরাতের লাশটার কথা মনে পড়তেই আমি আর হারুন কাকা মর্গে চলে গেলাম লাশটাকে নেওয়া হয়েছে কি না। আমরা মর্গে গিয়ে দেখলাম লাশটা সেখানে নেই। আমি হারুন কাকাকে জিঙ্গেস করলাম
– কাকা আপনি না কাল লাশটা মর্গে রাখলেন ?
– হ স্যার
– লাশটাকে কি নিয়ে গেছে?
– না তো স্যার ,আমি তো এই মাইয়ার লাশটা কাউরে নিতে দেহি নাই। তয় স্যার জানেন কাল রাইতে যখন আমি লাশটা বেড নম্বর ৯ এ রাখি তখন মনে হলো কে যেন হাসল।
– কে ছিল? আপনি দেখেছেন ?
– না স্যার ! কাউরে দেখি নাই ! আমি বড় স্যারের সাথে কথা কইয়া লই দাঁড়ান হে জানে নাকি যে লাশটা নিয়েছে কি না ?

খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম কাল যারা লাশটার সাথে এসেছিল তারা তখনি চলে গিয়েছিল আর আসে নি। তাহলে লাশটা কে নিলো? এটাও কি চুরি হয়েছে ? চুরির কথা মনে পড়তেই মনে হলো মেয়েটারও তো বয়স হবে ২০/২১ ! তবে কি এটা কোন অশরীরি আত্মার কাজ নাকি কোন মানুষের ? কিন্তু লাশ নিয়ে করবে টা কি ? আর লাশ ফেরত এই বা কেন দিচ্ছে ?

সকালে পাওয়া লাশটার ময়না তদন্ত করে জানা গেলো মেয়েটাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে ! শরীরে প্রচুর কাটা ছেড়া ! তবে এসব মেয়েটার মৃত্যুর পর করা হয়েছে ! বেশ অবাক লাগল এটা শুনে যে মেয়েটাকে ধর্ষণ করা হয়নি। বিষয়টা কেমন লাগলো ! কোন আত্মা কিসের জন্য ঠোঁট আর চোখ কেটে রাখবে? আর মানুষ হলে এসব কেন করবে? আমি যতোটা জানি এসব সাইকোরা করে ,তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের পৈশাচিক আনন্দ মেটায়। এই মেয়েটার ক্ষেত্রে তো এমন কিছু হয়নি। তবে? আসল ঘটনাটা কি ??

চলবে,,,,,
( বেড নং ৯)
Poly Talukder

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here