#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_১৮
জাওয়াদ জামী
‘ কুঞ্জছায়া ‘ লোকজনের পদচারণায় মুখরিত। আত্মীয় স্বজনরা সবাই আনন্দে মেতেছে। তিনদিন পর সুপ্তির বিয়ে।
আজ মেহেদী উৎসব। সকলে কমিউনিটি সেন্টারে যাবার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে।
আজ দুপুরের দিকে কায়েস তার পুরো পরিবার নিয়ে বড় বোনের বাসায় এসেছে।
সিক্তা, আরোশি, তনয়া, দৃষ্টি খুশিতে লাফালাফি করছে। অনুষ্ঠানে কে কি পড়বে সেই নিয়ে তোড়জোড় চলছে।
আনান, তাহমিদ আর নাজমা পারভিনের ছেলে নিহান যাবতীয় দ্বায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
সামিউল রাশেদিন পরিবার নিয়ে দেশে এসেছেন কয়েকদিন হলো। তিনি বড় ভাইকে বিয়ের সকল দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই সব দেখাশোনা করছেন।
বিকেলে সবাই কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে যায়।
কুহুও এসেছে একটু আগেই। পার্লার থেকে তিনজন বিউটিশিয়ান এসেছে সুপ্তিকে সাজাতে।
সিক্তা, আরোশি, তনয়া বায়না ধরেছে তারাও সাজবে। আফরোজা নাজনীন বাচ্চাদের আবদার মেনে নেন। বিউটিশিয়ানদের বলে দেন যারা যারা সাজতে চায় তাদের সবাইকে সাজিয়ে দিতে। সেই সাথে তিনি কুহুকে ধরে এনে বলে দেন সাজাতে। কুহুর ইচ্ছে ছিলনা সাজার কিন্তু ফুপু কষ্ট পাবে ভেবে রাজি হয়।
বাড়িতে পাটায় গাছের টাটকা মেহেদী পাতা বেটেছেন কয়েকজন মিলে। বাটা মেহেদী পাতা সুপ্তির হাতে দিবে। আবার এখান থেকেই কিছু বাটা পাতা বরের বাসায় যাবে। বরকে ছোঁয়ানো হবে এই বাটা পাতা।
আবার বরপক্ষও আসবে সুপ্তিকে মেহেদী পড়াতে।
সন্ধ্যার পর মেহেদী উৎসব শুরু হয়েছে। মেয়েরা সবাই হাতে মেহেদী দিয়ে রানীর ন্যায় বসে আছে। তাদের পড়নে হালকা সবুজ রঙের শাড়ি। আর ছেলেরা পড়েছে হালকা সবুজ রঙের পাঞ্জাবী সাথে কালো জিন্স।
কুহু সেন্টারে আসার পর থেকে তাহমিদ ওর সামনে আসেনি। কুহু খেয়াল করল তাহমিদ ওর থেকে দূরে দূরে থাকছে। এমনকি ওর দিকে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত। কুহু হাঁফ ছাড়ে।
হলরুমে সুপ্তির বন্ধুরা নাচ-গানে মেতেছে। ওদের সাথে তাল মেলাচ্ছে সিক্তা, আরোশি, তনয়া, দৃষ্টি, সুপ্তির ছোট চাচ্চুর মেয়েরা এমনকি সুপ্তির বড় দুই বোনও।
একটু পরেই বরকে মেহেদী পড়াতে যাবে কনে পক্ষ। ভেতরে ডালা সাজাচ্ছেন বড়রা। কুহু এতক্ষণ ভেতরেই ছিল। সেখানে অত্যধিক চেঁচামেচিতে ওর মাথা ব্যথা করছে বিধায় ও বাগানে এসে দাঁড়ায়। বাগানে হরেকরকম ফুল গাছ। কতক গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুটেছে।
কুহু লক্ষ্য করল বাগানের এককোণে মাঝারি উচ্চতার একটা নাগচাঁপা গাছে ফুলে ছেয়ে গেছে। রাতের আঁধারে সাদা সাদা ফুলগুলো তারার ন্যায় জ্বলছে। কুহুর খুব ইচ্ছে করছে ফুলগুলো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেগুলো ওর নাগালের বাইরে। কুহু বাধ্য লাফ দেয় ফুলগুলো ছুঁতে। কিন্তু কুহু ব্যর্থ হয়। তবুও পুনরায় চেষ্টা করতে থাকে। কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন পারলনা, তখন মন খারাপ করে চলে আসতেই কয়েকটা ফুল ওর মাথায় পরল। অবাক হয়ে পেছনে ফিরতেই দেখল তাহমিদ নাগচাঁপার একটা ডাল ধরে ঝাঁকুনি দিচ্ছে । আর তাতেই ফুল ঝরে পরছে কুহুর উপর। জোরেসোরে আরেকটা ঝাঁকুনি দিতেই আরও কয়েকটা ফুল এসে পরল কুহুর শরীরে। যেমনভাবে এসেছিল ঠিক তেমনভাবে স্থান ত্যাগ করে তাহমিদ। একটাবারও কুহুর দিকে তাকায়না। কুহু এতসব চিন্তা না করে মাটিতে পরে থাকা ফুলগুলো কুড়াতে থাকে। ওর ঠোঁটের কোনে অস্পষ্ট হাঁসির আভাস। কিন্তু কেন এই হাসি তা সে বুঝতে পারেনা। লোকটা এত খেয়াল রাখে ওর! কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করল কুহু, তাহমিদ ওর দিকে একবারও তাকায়নি। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল!
কুহুরা কয়েকজন মিলে বরের বাসায় যায় মেহেদী পড়াতে। সাথে তাহমিদ, আনান, নিহানও আছে। ওরা সব কাজিনরা এক গাড়িতে বসেছে। সারাটা পথ হাসিঠাট্টা, গান গেয়ে অতিক্রম করে।বরের বাসায় পৌঁছতেই ওদের ফুলেল বর্ষনে স্বাগত জানায় বরপক্ষ।
কুহু বেশ কিছুক্ষণ থেকেই খেয়াল করছে বরপক্ষের একটা ছেলে ওর চারপাশে ঘুরঘুর করছে। কুহু ছেলেটাকে পাত্তা না দিয়ে সিক্তার কাছে আসে।
” হ্যালো, আমি সিফাত। রাহাত ভাইয়ার কাজিন। আপনি সুপ্তি ভাবির কে হন? ” সেই ছেলেটা কুহুর সামনে এসে জিজ্ঞেস করে।
কুহু সামনে তাকিয়ে দৃষ্টিকে দেখল। ওর বুকের ভিতর ভয়ে ধুকপুক করছে। দৃষ্টি যদি ছোটমাকে বলে দেয়, তবে ছোটমা ওকে আস্ত রাখবেনা।
তবে সিক্তা কুহুর মনোভাব বুঝতে পারে।
” হ্যালো, ভাইয়া। আমি সিক্তা আপনার সুপ্তি ভাবির ছোট বোন। আর ও আমার কাজিন। ”
” কিন্তু আমিতো উনাকে জিজ্ঞেস করেছি! উনার কি রা’গ হয়েছে? ”
” নাহ্ রাগ হবে কেন! ও একটু এমনই। ” বলেই সিক্তা কুহুর হাত ধরে স্টেজের একপাশে নিয়ে আসে।
দূর থেকে এতক্ষণ সব লক্ষ্য করছিল তাহমিদ। এমনকি ওদের এখানে আসার পর থেকেই ছেলেটা যে কুহুকে ফলো করছিল সেটাও লক্ষ্য করেছে।
তাহমিদ ধীর পায়ে এসে দাঁড়ায় সিফাতের পাশে।
” এক্সকিউজ মি, ব্রাদার। আমি তাহমিদ, সিক্তার ভাই প্লাস বন্ধু। ঐযে কোমড় ছাড়ানো চুলের মায়াবিনী কন্যাকে দেখছেন না, ও আমার উডবি। ও আবার একটু লাজুক কিনা। তাই অচেনা কারও সাথে কথা বলতে চায়না। ওর এমন আচরণে কিছু মনে করবেননা। ওর তরফ থেকে আমি সরি বলছি। ” সিফাত নামক ছেলেটাকে তব্দা খাইয়ে পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করতে করতে প্রস্থান করে তাহমিদ।
কিছুক্ষণ পর থেকে কুহু লক্ষ্য করল সিফাত ওর দিকে আর তাকাচ্ছেনা। কুহুর একটু খটকা লাগে। আসার পর থেকেই যে ছেলেটা ওর পিছে পরে ছিল সে হঠাৎ করেই ওর দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেনা। কিছু ঘটেছে নাকি! কুহু আল্লাহ আল্লাহ করছে, এখান থেকে যেতে পারলেই ও বাঁচে৷
সব কাজিনরা মিলে রাহাতকে মেহেদী পড়ায়। এরপর স্টেইজে কিছুক্ষণ হৈ-হুল্লোড় করে। কুহু বাদে সবাই নানান ভঙ্গিমায় সেলফি নিতে ব্যস্ত। কুহু শুধু অসহায়ের ন্যায় দেখতে থাকে ওদের কাজকর্ম। তবে এতকিছুর মাঝে কুহুর নজরে আসে এখানকার কয়েকটা মেয়ে তাহমিদের মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করছে। ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। যেচে তাহমিদের সাথে কথা বলছে আবার কারনে-অকারনে হাসতে হাসতে তাহমিদের গায়ে ঢলে পরছে। এসব দেখে কুহু খুব মজা পাচ্ছে। তার তাহমিদ বেচারা চিপায় পরেছে। সে যেখানেই যাচ্ছে মেয়েগুলো ওর সাথে সাথেই থাকছে।
বিষয়টা সিক্তা, আরোশিও লক্ষ্য করে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
” কি ভাই, খুব মজা লুটছ দেখছি! আহা, কি চাঁদ কপাল তোমার। না চাইতেও ললনারা তোমার চারপাশে ঘুরঘুর করছে। আর আমাকে দেখ, এত অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। আনান এই পো’ড়া কপাল মানুষকে দেখাবি কেম্নে! হায়রে নি’ষ্ঠু’র ললনা, তোমাদের কি একটুও দয়ামায়া হয়না এই অবোধ পুরুষের ওপর! ” আনানের কথা শুনে তনয়া হো হো করে হেসে উঠে।
” এই ছেমরি, চুপ। এভাবে হাসিসনা। তোর বি’ক’ট হাসির শব্দে বিয়ে বাড়ির সব আত্মীয় স্বজনরা পালাবে। আমি কাঁদছি দুঃখে, আর সে চিল-চিৎকারের সাথে হাসছে। ” আনানের ধমকও তনয়ার হাসি থামাতে পারেনা।
” ওহে, বৎস। এত উদাস হইয়োনা। দেখে নিও ললনারা না আসলেও তাহাদের দাদি-নানি ঠিকই তোমার টানে ছুটিয়া আসিবে। ” তাহমিদের এতটুকু কথাই আনানের ফুঁসে ওঠার জন্য যথেষ্ট ছিল।
” ভাই! এটা তুমি কি বললে? কোথায় আমি যেখানে যাই সেখানেই তোমার জন্য একটা ফুটফুটে ভাবি খুঁজে সময় নষ্ট করি। আর সেই তুমি কিনা আমার জন্য নানি-দাদিকে সিলেক্ট করছ! এটা অন্যায়, মহা অন্যায়। এ আমি কিছুতেই মানতে পারছিনা। ”
” শোন দেবদাস, আমার জন্য যেখানে সেখানে ফুটফুটে ভাবি না খুঁজে একটা শ্যামাঙ্গীনি ভাবি খোঁজ। দেখবি অতি সহজেই পেয়ে যাবি। এবার যা, কোন ললনা পোষবার মত বয়স এখনো তোর হয়নি। আগে নিজের মনকে বশ মানাতে শিখ, তখন দেখবি ললনারাও তোকে দেখে অটোমেটিক বশ মানবে। ”
” অপমান করলে নাকি উপদেশ দিলে! কিছুই তো বুঝলামনা! ”
” তুই যে অর্থে নিবি সেটাই। এখন এসব বাদ দিয়ে ঐটার খাওয়ার ব্যবস্থা কর। তোরা সবাই খেলি কিন্তু সে মাথা ব্যথার অযুহাতে কিছুই খায়নি। আবারতো সে হোস্টেলে ফিরে যাবে। সেখানে গিয়ে খাবার পাবেনা কিন্তু। ” তাহমিদের কথায় আনানের মনে পরল আসলেই তো কুহু কিছু খায়নি! এখন ওর জন্য খাবার কোথায় থেকে আনি? মেয়েটা নিশ্চয়ই ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে! ও যেমন মেয়ে ক্ষুধায় ম’রে গেলেও কারও কাছেই বলবেনা৷ এখন কার কাছে যাই খাবার আনতে? চিন্তায় মাথা চুলকাতে থাকে আনান। ঠিক তখনই তাহমিদ একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে হাজির হয়।
” এই নে, ঐটাকে দিয়ে ওর পাশে বসে থাকবি। ওর খাওয়া হলে তবেই আসবি। ” তাহমিদ একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে। ওর আরেক হাতে থাকা প্লেট থেকে খেতে শুরু করেছে।
আনান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাহমিদের দিকে। ভাই, সব সময়ই ওর খেয়াল রাখে। এতদিন কিছু মনে না হলেও আজ স’ন্দে’হ উঁকি দিচ্ছে মনে। ভাই কিছুক্ষণ আগে বলল, ফুটফুটে ভাবি নয় তার শ্যামাঙ্গীনি চাই। আবার সব সময়ই বলে সে তার ডাবল আত্মীয়। এভাবেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে আনান।
” এই যে জামাই মিঞা, এভাবে বউয়ের বড় ভাইকে রেখে গোগ্রাসে গিলছ, তোমার লজ্জা করছেনা? একটুতো সম্মান করতে শিখ। এভাবে অসম্মান করলে আমার বোন তোমার কাছে দিবনা। আর তুমি একটু আগে কি বললে? আমার ললনা পোষবার মত বয়স হয়নি! আমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট বুঝলে? একটা নয় দশটা ললনা পোষবার ক্ষমতা আমার আছে। ” আনান কৌতুহলী হয়ে এক ভুরু উঁচিয়ে তাহমিদকে খোঁ’চা দেয়।
” কানের নিচে দিব একটা। আমার বউকে না দেয়ার তুই কে। তোকে যা বলেছি সেটা কর। সম্মান পরে চাইতে আসিস। তখন ভেবে দেখব তোকে সম্মান করা যায় কিনা। এখন একটু খেতে দে। আর কি বললি যেন? তুই ললনা পুষবি মানে? ললনা কি পোষবার জিনিস! ওদের যত ভালোবাসা দিবি, দেখবি এমনিতেই পোষ মেনে যাবে, আলাদা করে পোষবার প্রয়োজন পরবেনা৷ ” তাহমিদের কথা শুনে আনানের সব ভাব ফুস করে হাওয়ায় মিলায়। ভাই এভাবে পাল্টি মারল কেন! সেই বলল পোষ মানাবার কথা এখন সেই আবার উল্টা গান গাচ্ছে! বিরস বদনে কুহুর নিকট আসে। ওর হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে একটা চেয়ার এনে দেয়। কুহুর খাওয়া না হওয়া পর্যন্ত বসে বসে পাহারা দেয়।
” ভাইয়া, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? আড্ডা ফেলে মুখ কালো করে আছো! ঘটনা কি ভাইয়া? ”
” এই মাইয়া, তুই চুপচাপ খা কইলাম। আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোকে এখানে রেখে আড্ডা দিতে যাব! শেষে দেখা যাবে গার্লফ্রেন্ডকে দেখানোর জন্য এই চুল ভর্তি মাথাটাই থাকলনা। ”
” আমি কি জিজ্ঞেস করলাম আর তুমি কি উত্তর দিলে! তোমার বোধকরি মাথার ব্যামো হয়েছে। ”
” ঐ চুপ কর কইলাম। আমি পাঁচ মিনিট আগ পর্যন্ত ঠিকই ছিলাম। কিন্তু এখন মাথা আউলায় গেছে। আচ্ছা কুহু, একটা কথা বলত। কি করলে একটা ছেলে কোন মেয়ের প্রেমে পরে? ” ফিসফিসিয়ে জানতে চায় আনান।
” আমিতো জানিনা ভাইয়া। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। ”
” খালি ঢং করস? এদিকে পাব্লিক ঠিকই হা’বু’ডু’বু খাচ্ছে। তোর মত বোকা মাইয়া! এসব কেম্নে কি! ”
আনানের কথার কিচ্ছুটি বুঝতে পারেনা কুহু। ও শুধু ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে থাকে আনানের দিকে। আবার কিছু জিজ্ঞেস করতেও ভয় পাচ্ছে। যদি ধমক দেয়।
” ঐ মাইয়া, তারাতারি খা। চেটেপুটে খাবি কইলাম। তাছাড়া দেখা যাবে প্লেট মুছে আমারই তোকে খাওয়ানোর হুকুমজারি হলো। আর ভাল্লাগেনা। কি বোকা আমি! এতদিন কিচ্ছুটি বুঝিনি! এত জল কোথায় রাখিস, তোরা মাইয়ারা! যে পাব্লিক ডু’বে’ডু’বে সেই জল পান করে? ”
” ছিহ্ ভাইয়া এসব কি বলছ? আমি তোমার ছোট বোন হই। লজ্জা-শরম কি বিকিয়ে দিয়েছ? ”
” যে ঝটকা খাইলাম। এখন লজ্জা-শরমও কাছে আসতে লজ্জা পাইতাছে। ” কথা মাঝেই আনানের চোখ যায় কিছুদূর সামনে দাঁড়ানো তাহমিদের দিকে। তাহমিদ চোখ পাকিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ততক্ষণে কুহুর খাওয়া শেষ। আনান কুহুর হাত থেকে প্লেট নিয়ে ডাষ্টবিনে ফেলে এসে বলে,
” শোন আমার কলিজার বইন, তোর যখন যা লাগবে আমাকে বলবি। সাথে সাথে আমি সেগুলো হাজির করার চেষ্টা করব। মনে রাখবি এই অধম ভাই সব সময়ই তোর পাশে আছে। ” আনানের ভাষন দেয়ার ভঙ্গিতে বলা কথা শুনে কুহু হাসতে থাকে। আনান ইশারায় কুহুকে সিক্তাদের কাছে যেতে বলে। কুহু চলে গেলে আনানও তাহমিদের কাছে আসে।
” আমি পাশ করেছি, ভাই? দশে দশ পেয়েছি তো? ”
” দশে পঞ্চাশ পেয়েছিস। এবার চল, অনেক রাত হয়েছে। বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নে। ”
” কবে থেকে এসব চলছে, ভাই? আমার চোখে ধুলো দিয়ে আমার সামনেই সবকিছু চালিয়ে গেলে! ”
” কিসব চলছে! তোর চোখে কোন ধুলা দেখতে পাচ্ছিনা আমি। বেশি কথা না বলে চল। আর শোন এখন কাউকে কিছুই বলিসনা। যা দেখছিস সব একতরফা। ” তাহমিদের কথা শুনে আরেকবার ঝটকা খায় আনান। একতরফাতেই এত খেয়াল, এত কেয়ার! বাপরে বাপ, এত ভালোবাসা কই থেকে আসে!
চলবে…