#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ০৮
লেখাঃরাইসার_আব্বু।
ম্যাডাম প্রথমত আপনাকে ধন্যবাদ বিপদের সময় আপনার বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তার পর অফিসে চাকরি দেওয়ার জন্য। তবে আমি আপনার সম্মানন রাখতে পারিনি। আর কোন চরিএহীনের পক্ষে সম্মান রাখা সম্ভবও না।
– রাজ আমাকে বলতে দাও।
– আপনি যা বলবেন তা আমি জানি। আপনি চাননা কোন চরিএহীন আপনার অফিসে কাজ করুক। এতোদিন দয়া দেখানোর জন্য ধন্যবাদ। এই নেন আমার রিজাইনলেটার। আসি।
– আমি চেয়ার থেকে উঠে যখনি রুম থেকে বের হবো তখন পা দু’টো সড়াতে পারছি না। নিচের দিকে চেয়ে দেখি কথা পা দু’টি জড়িয়ে ধরে আছে। ম্যাডাম কি করছেন কেউ দেখলে কি বলবে? কার পা ধরেছেন আপনি? একটা চরিএহীনের পা। যে মেয়ে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
– রাজ প্লিজ স্টপ! আর বলো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি না জেনে তোমাকে অপমান করেছি তোমার গায়ে হাত তুলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়!
– আশ্চর্য ক্ষমা কেন চাচ্ছেন? আপনি ঠিক কাজ করেছেন। প্লিজ ম্যাডাম কেউ দেখার আগে পা টা ছেড়ে দেন।
– রাজ তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পা ছাড়বো না।
– ম্যাডাম গরীবরা মনে রাগ পুষে রাখে না। তারা জানে বড়লোকদের চড় খাওয়ার জন্যই হয়তো তাদের জন্ম। আর ক্ষমা সেটা তো আগেই করে দিয়েছি এখন পা ছাড়েন।
– সত্যি আমাকে ক্ষমা করেছ?
– হ্যাঁ ক্ষমা করেছি। তবে একটা কথা মনে রাখবেন। আপনারা যেমন রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। আপনাদের যেমন মন আছে তেমনি আমার মতো গরীবদেরও আছে। তাই কারো সম্পর্কে না জেনে এমন করবেন না।
– জানো রাজ, সত্যি বলতে আমি তোমার পাশে কেন জানি অন্যকে সহ করতে পারি না। কাল যখন তোমার উপর সাথি পড়েছিল। আর সাথির ঠোঁটের লিপিস্টিক লেগেছিল। তখন আমার হিতাতিত জ্ঞান ছিল না। আমার ছোটবেলা থেকেই একটু রাগ বেশি। বাট কাল সাথি যখন বলেছে তুমি তাকে কিস করেছ তখন রাগ চেক দিতে পারিনি। জানি তোমার প্রতি আমার কোন অধিকার নেই! তারপরও এসব আমার সহ্য হয় না। খুব কষ্ট হয়।
– জানো কাল রাতে যখন সাথি ফোন দিয়ে বলল দোষ তোমার না। সাথি নিজে ইচ্ছায় তোমার উপরে পড়ে গিয়েছিল। আর সাথি নিজে ইচ্ছায় তোমাকে কিস করতে গিয়েছিল। তুমি ওকে সড়িয়ে দিয়েছিলে। সাথি মজা করেই আমাকে বলেছিল তুমি ওকে কিস করেছ। কিন্তু আমি সেটা বুঝতে না পেয়ে তোমাকে সবার সামনে অপমান করেছি। সাথি কাল সবার সামনে বলতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। প্লিজ রাজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।
– আচ্ছা! রিজাইন লেটারটাতে সাইন করে দিলে খুশি হতাম।
– কথার চোখ দিয়ে পানি পড়বে পড়বে ভাব।
– এমন সময় সাথি এসে বলল ‘ দোস্ত, রাজকে নিয়ে একটু তোর রুম থেকে বেরো।
– কথা আমাকে নিয়ে, তার রুম থেকে বের হতেই দেখে অফিসের সব ষ্টাফরা দাঁড়িয়ে আছে।
– আমি সবাইকে দেখে চমকে গেলাম।
– হঠাৎ কর্মচারীদের মাঝে একজন বলে ওঠল’ চরিএহীন লোকটা আবার কেন এসেছে?
– সাথি কথার কাছে এসে বলল ‘ আপনাদের সবাইকে আমি চিনি না। আপনারাও হয়তো আমাকে চিনেন না? যাই হোক আমি সাথি তোমাদের ম্যাডামের বান্ধবী। তোমরা মিঃরাজকে তো চিনে? সবাই তাকে চরিএহীন বলেই চিনো তাইনা?
– আমি সাথির কথা শুনে মাথাটা নিচু করে ফেললাম।
– শুনেন তাহলে আপনারা সেই চরিএহীন রাজকেই আজ সবার সামনে বলছি ‘ আমি রাজকে ভালোবাসি। বলতে গেলে নিজের থেকেও বেশি।
– সবাই একে -অপরের দিকে তাকাচ্ছে! কথা ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি ম্যাডাম কেমন জানি রাগে ফুলতেছে। কিন্তু কিছু করার নেই?
– কি হলো আপনারা অবাক হলেন? একটা চরিএহীনকে কেন নিজের থেকে ভালোবাসি?
– তাহলে শুনুন, রাজ কালকে আমাকে কিস করেনি। আমি রাজের উপর পড়ে গিয়ে যখন কিস করতে চেয়েছি তখন সে মুখ সড়িয়ে নেয়। আর ফলস্বরূপ রাজের গালে লিপিস্টিকের দাগ বসে। কিন্তু আমি ওঠে গিয়ে কথাকে বলি, রাজ আমাকে জোর করে কিস করেছে। আমি কথাটা মজা করেই বলেছি। কারণ কথা জানতো আমি রাজকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কথাকে বলতেও বলেছি, যে রাজকে বলিস আমি ওকে ভালোবাসি। আর গতকাল কথা আমার মজাকে নিয়ে এতো বড় একটা ঘটনা করে ফেলল। আমি পরে বলতে চেয়েছিলাম। বাট কথা আমার কথা শুনেনি। পড়ে আপনাদের সবার সামনে বলার সাহস হয়নি। আর আপনাদের সহকর্মী কোন চরিএহীন নয়। চরিএহীন কেউ থাকলে আমি। আজ আপনাদের সবার সামনে কথাগুলো বললাম ‘ এতে কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন। আর রাজ আমি তোমার সবটা জেনেও তোমার পায়ের নিচে একটু আশ্রয় চাই দিবে?
– এই সাথি কি বলছিস এসব? রাজের মেয়ে আছে। তোর বাবা -মা মানবে না। পাগলামী করিস না।
– কথা আমি সবটা ভেবেই বলেছি। আমার প্রকৃত আশ্রয় রাজের পায়ের নিচে।
রাজ আজ সবার সামনে বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার বুকে একটু জায়গা দিবে। এ বলে যখনি সবার সামনে হাতটা ধরবে সাথি! তখনি ঠাস! করে চড় বসিয়ে দিলাম। লজ্জা করে না? এতোগুলো মানুষের সামনে ভালোবাসার কথা বলতে?ভালোবাসা কি বুঝেন? ভালোবাসা কি আপনার বাবাকে বা মা’কে জিজ্ঞেস করেন।
আর থাপ্পরটা দিলাম আপনার পাগলামোর জন্য। আপনার অবস্থান কোথায় আর আমার কোথায় জানেন? এতোগুলো মানুষের সামনে আমাকে ভালোবাসেন কথা বলে নিজের বাবা-মার মাথা নিচু করতে লজ্জা করে না। আর যে মেয়ে বিয়ের আগে অশ্লীলতা করে। কিস করতে যায় সেটা পতিতা পল্লিতে যাওয়া কোন পুরুষ নামে কাপুরুষের শোভা পায় আপনাকে বিয়ে করা। পর্দায় থাকেন। আর নেক্সট টাইমে আমাকে বলবেন না আমাকে ভালোবাসেন।
– আমি কিছু জানি না। আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর ভালোবাসব!
– ভালোবাসা বাজারের পণ্য না। আমায় ক্ষমা করবেন।
-সত্যি রাজ তোমাকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। আমি যা করেছি সব অন্যায় করেছি। তবে এটা ঠিক তোমার জন্য নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি। এক দিন আমি প্রমাণ করে দিবো তুমি শুধু আমার।
– আমি কিছু বললাম না। শুধু মনে মনে বললাম’ মৌ আর সাথি দু’জনের মাঝে কতটাই পার্থক্য!’
সাথি চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেল!
– কথা ম্যাডাম নিজের রুমে চলে গেল।
-অফিসের সবাই একে একে সরি বলে যাচ্ছে!
– আমি মুচকি হেসে মনে পাথর চেঁপে বলছি ইটস ওকে!
-ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– কি হলো কাঁদছিস কেন?
– ভাইয়া না জেনে কাল আপনাকে কি সব বলেছি।
– আরে পাগলী তুই তো জানতি না?
– সবাইকে বললাম, আমি আর আসবো না। তোমরা ভালো থেকো।
– অফিসের সবাই বললো’ রাজ ভাই তুমি অফিসে না আসলে আমরাও আসবো না! ম্যাডাম তোমাকে আর তাড়াতে পারবে না।
– আরে আমি নিজ ইচ্ছায় চলে যাচ্ছি। প্লিজ তোমরা এমন কিছু করো না যেন অফিসের কোনন ক্ষতি হয় এটা তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ।
– অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম কথা ম্যাডাম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ চোখের ভাষা বুঝার সাধ্য যেন আর কারো নয়।
– বিকেলে রাইসাকে নিয়ে আসতে স্কুলে গেলাম। স্কুল থেকে আসার পর রান্না করে রাইসাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে মৌ এর ছবিটা নিয়ে কাঁদছিলাম।
– রাত নয়টা বাজে এমন সময় করিম আঙ্কেল ফোন দিয়ে বললো তাদের বাসায় যেতে।
– আমি সকালে যেতে চাইলেও তিনি রাতেই যেতে বললেন।
– আমি একা যাবো ভেবে যখনি রুম থেকে বের হবো তখনি রাইসা বলে উঠল’ বাবাই কোথায় যাচ্ছো আমিও যাবো।’
– আর বাবাই তুমি ওই পচাঁ মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদলে কেন?
– রাইসা তুমি না ঘুমিয়েছিলে?
– আমার বাবাই কাঁদবে আর আমি ঘুমাবো। এটা সম্ভব কিভাবে বাবাই। তুমি জানো না তোমার চোখে পানি দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
– আচ্ছা আর কাঁদবো না চলো মামনি আমি আর তুমি বেড়াতে যাবো।
-আচ্ছা!
– রাইসাকে নিয়ে কথা ম্যাডামদের বাড়িতে যেতেই। রাইসা বলল’বাবাই তুমি এখানে আসলে কেন?
– বেড়াতে মামনি।
-ওহ!
– রাইসাকে নিয়ে ভেতরে যেতেই আঙ্কেল আমাকে ডেকে নিয়ে বলল’ বাবা রাজ, আমি তোমার বাবার বয়সী। আজ তোমার বাবা যদি তোমায় কাছে একটা অনুরোধ করত তুমি রাখতে না?
– হুম আঙ্কেল বলেন কি বলবেন?
– বাবা রাজ তুমি অফিস থেকে যেয়ো না। আমার মেয়েটা তোমার সাথে খুব অন্যায় করছে। জান বাবাই কথা গতরাত থেকে এক ফোঁটা পানিও স্পর্শ করেনি। আমাকে জড়িয়ে ধরে সব বলছে। তোমার সাথে যে অবিচার করছে। কথা নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। বাবা আমার মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আর অফিস থেকে যেয়ো না প্লিজ।
– তোমার কাছে বড়ো বয়সে অনুরোধটা করলাম। রেখো বাবা।
– আচ্ছা আঙ্কেল যাবো না।
– রাজ শুনে বড় খুশি হলাম। চলো সবাই মিলে ডিনার করি।
– আঙ্কেল কথা ম্যাডামকে ডিনার রেডি করতে বলল। ডিনার শেষ করে আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে বলতে রাত প্রায় বারোটা বেজে যায়।
– আঙ্কেল থাকতে বললেও রাইসাকে নিয়ে চলে আসি। একটা রিক্সা করে যখন আসছিলাম হঠাৎ রাস্তার পাশে একটা কার্র দাঁড়ানো।
– আর একটু সামনে যেতেই গলির মুখে মেয়েলি কন্ঠে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনলাম।
রিক্সওয়ালে দাঁড়াতে বললে রিক্সা ওয়ালে দাঁড়ালে। রাইসাকে রিক্সায় রেখে গলির মুখে নতুন বেল্ডিং এর কাজ চলছে সেখানে তিনজন ছেলেকে দেখলাম একটা মেয়েকে জোর করে রের্প করার চেষ্টা করছে। আমি কি করবো ভাবতে পারছি না। বেল্ডিং স্লাইডে পড়ে থাকা একটা দু’হাত লম্বা কাঠ দিয়ে একজনের শরীরে বারি দিতেই বাকি দু’জন আমার দিকে ত্যাড়ে আসে। কাঠ দিয়ে কয়েকটা এলোপাতাড়ি বারি মারতেই রিক্সাওয়ালাও এসে পড়ে। তারা আমাদের দু’জনকে দেখে ভাবে আরো মানুষ আছে। এভেবে পালাতে যাওয়ার আগে আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা লেগে কপালের কিছু অংশ কেটে যায়। এদিকে দেখি মেয়েটার বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে নিজের শার্টটা মেয়েটার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে। মেয়েটার মুখের দিকে যখনি মোবাইলের ফ্লাশ মেরেছি। তখন আমার বুকের ভেতরটা ধর্ক করে ওঠলো। চেয়েই দেখি মৌ। মৌকে ওঠানোর সাহস ধরছে না। রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে মৌকে নিয়ে রাইসাকে সাথে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার দেখে বলল’তেমন কিছু হয়নি ভয় পেয়ে সেন্সলেন্স হয়ে গেছে।
– নার্স এসে বললো আপনার কি হয়?
– রাইসা বলে ফেলল ‘ আমার মম হয়। আর এটা আমার বাবাই। কথাটা বলে জিবে কামড় দিলো।
– আশ্চর্য আপনার কপাল থেকে তো রক্ত ঝরছে।
– ঝরতে দিন এর চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ যে আমার বুকে হচ্ছে!
– কিছু বললেন?
– না কিছু বলেনি।
চলেন আপনার কপালের কাটা অংশ ডেসিং করে দেয়। আমি কপালে ব্যান্ডেজ করে এসে দেখি। রাইসা মৌ এর মাথার কাছে বসে জিমাচ্ছে।
– আমি আর বলতে পারলাম না ‘মামনি এটা তোমার মম হয় না! ‘ কি যেন অদৃশ্য মায়ায় মৌ এর পাশে বসে পড়লাম।
– নিজের অজান্তেই মৌ এর কপালে হাত রাখলাম। কে যেন বললো আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে? আমার ঘুম আসছে না।
– হঠাৎ করে অতীতের কথা মনে পড়ে গেল’ মৌকে ছোট্ট বাচ্চার মতো মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে ঘুমাতো না। কিন্তু আজ তো মৌ এর উপর কোন অধিকার নেই। তারপরও নিজের অজান্তেই মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই।
– সকাল বেলা মৌ এর জ্ঞান ফিরতেই দেখে আমি মৌ এর বুকে। আমাকে দেখে যতটা না চমকে তার চেয়ে বেশি রাগ ওঠে পড়ে তার।
– এই ছোটলোকের বাচ্চা ওঠ!
– প্লিজ আর একটু ঘুমাই?
– মৌ জোরে করে ধাক্কা মেরে বলে এই ছোটলোকের বাচ্চা তোর কতো বড় সাহস আমার বুকে তোর মাথা রাখছিস?
চলবে”””””””
বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।