বাবার ভালোবাসা পর্ব-২৫

0
609

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্ব:২৫

লেখা: #রাইসার_আব্বু।

-রাইসা। আলহামদুলিল্লাহ্ বলে দৌড়ে চলে যায় রাজের কাছে। রাজকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। চোখের পানিতে রাজের বুক ভেসে যায়। রাজের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কণা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের কেমেস্টি দেখছে। এমন সময় মৌ দৌড়ে রুমে এসে বলে ‘ আমার রাজের তো কিছু হয়নি? ও ডাক্তার আমার রাজের কি হয়েছিল।
– রাইসা মৌকে দেখেই বলতে লাগল’ কি চান? আমরা বেঁচে আছি না মরে আছি দেখতে আসছেন? আপনি চলে যান। আপনার মুখটা দেখতে চাই না। আপনি প্রতারক। এই যে ডাক্তার আন্টি উনাকে বের করে দেন। বাবা উনাকে দেখলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।

.
মৌ কিছু বলছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাইসা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে।

.
ডাক্তার ম্যাডাম রাজের অবস্থা কেমন?
এখন মোটামুটি বিপদ মুক্ত। আর আপনি রোগীর কি হোন?
-আমি রাজের স্ত্রী।
– ডাক্তার কণা কিছু না বলে চলে গেল। সারারাত ঘুম হয়নি। যাওয়ার আগে রাইসাকে বললো’ মামনি তুমি আমার ফিসটা কিন্তু এখনো দাওনি।
– রাইসা কণার দু’গালে পাপ্পি দিয়ে বলে’ লাভিউ ডাক্তার ম্যাম।’ আপনার জন্য আল্লাহর রহমতে বাবাইকে আবারো ফিরে পেয়েছি। ধন্যবাদ।
-স্বাগতম মামনি। আর হ্যাঁ মি:রাজ আপনি সত্যিই ভাগ্যবতী। সোনার টুকরা একটা মেয়ে পেয়েছেন।

-আমি রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
– ডাক্তার চলে যেতেই, মৌ আমার মাথায় কাছে এসে বসল।
– আমি মৌ এর দিকে তাকাতেই মৌ মাথাটা নিচু করে ফেলল!
– কিছু বলবে?
– হুম, তুমি তো রাগ করবে না?
– রাগ করার কি আছে?
– বলো কি বলবে?
– রাজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। দরকার হলে সারাজীবন তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকব।
– আশ্চর্য! আর কি চান?ভালোবাসা কি বুঝেন? ভালোবাসলে আপনি আমাকে মৃত্যুর মুখে রেখে আসতে পারতেন না। আমি মরে গেলে কোন অাফসোস ছিল না। আমি তো সেদিনই মরে গিয়েছিলাম। যেদিন আপনি আমাকে ছেড়ে আপনার বসকে বিয়ে করেন। সেদিনই আমার মনের মৃত্যু হয়। আর কি চান? আমার মৃত্যু?
– প্লিজ চুপ করো রাজ। তুমি মরে গেলে আমি কার জন্য বাঁচবো? আমি যে ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।
– বাহ মিস মৌ বাহ! আপনার অভিনয়ের তারিফ করতে হয়। আচ্ছা বলুনতো সেদিন সুসাইডের কথা বলে আপনার বাসায় আমাকে ডেকে নিয়ে কি করেছিলেন? যার জন্য আমি ঘুমিয়ে যায়?
– আর যে ভিডিও বের হয়েছে, সেটা কিভাবে?
– রাজ প্লিজ ক্ষমা করে দাও। কিভাবে সেটা বলতে পারবো না। আমি শুধু জানি তুমি আমার শুধু আমার। তোমাকে হারালে আমি বাঁচবো না।
– প্লিজ তুমি এখন যাবে?
– আর কিছু বলতে পারলাম না। মাথাটা কেমন যেন ধরে আসছে।
– পাশেয় রাইসা বসে আছে। রাইসা দেখে রাজ সেন্সলেন্স হয়ে গেছে। রাইসা বারবার বাবাই বাবাই করে ডাকছে কিন্তু কোন কথা বলছে না। রাইসা কান্না করে করে বলতে লাগল। বাবাই কি হয়েছ, কথা বলো বাবাই। তুমি কথা বলবে না।
– পাশে বসে থাকা মৌও বলছে কি হলো তোমার। কথা বলো প্লিজ। মৌ যখন রাজের হাতটা ধরতে যাবে এমন সময়, রাইসা চিৎকার দিয়ে বললো’ আপনি পঁচা আপনি বাবাই এর হাত ধরবেন না। আপনি চলে যান। আপনার জন্য বাবাই কথা বলছে না। প্লিজ চলে যান।
– মামনি, আমি তোমাদের নিতে এসেছি। আর তোমার বাবাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
– প্লিজ চলে যান। আপনি চলে যাচ্ছেন না কেন? ডাক্তার ও ডাক্তার আমার বাবা কথা বলছে না ।
– ডাক্তার এসে দেখল রাজ জ্ঞান হারিয়েছে। বাট তেমন কিছু না। শুধু বলল দু’একদিন সেন্সলেন্স হবেই।
– কি হলো আপনি যাচ্ছেন না কেন?
– আর কি চান?
– মামনি তুমি রাগ করো না। বুকে আসো। তোমাকে কতদিন বুকে নেয় না। আমি না তোমার মম হয়।
-ছি:আপনি আমার মম হন ! কি বলছেন এসব। আমার মম নেই আমার বাবাই আমার সব। আপনি চলে যান প্লিজ আপনাকে দেখতে মন চাচ্ছে না। আপনি যাবেন না?

.
রাইসা মা আমার আর রাগ করে থেকো না।
– যাবেন আপনি। এই যে নার্স আন্টি দেখেন না, মহিলাটা ডিস্টাব করছে বাবাইকে। যেতে বলেন তো।
– মৌ আর কিছু না বলে চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে চলে গেল।

– রাইসা রাজের পাশে শুয়ে আছে। ক্ষুধাও লাগছে। কিন্তু ক্ষুধার কথা কাকে বলবে? তার বাবা যে অসুস্থ। রাইসা ভাবল একটু পানি খেয়ে আসলে ভালোই হয়। হসপিটালের ট্যাপ ছেড়ে যখন গ্লাস ভরে পানি মুখের কাছে নিবে এমন সময় মনে পড়ল বাবাই কি খেয়েছে? বাবাইকে ছাড়া খায় ক্যামনে। রাইসা পানি না খেয়ে রাজের কাছে চলে যায়। রাইসা দেখে তার বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে। তার বাবাকে দেখলেই রাইসার মন ভরে যায়। আচ্ছা বাবাই সজাগ পেলে যদি খেতে চায়, তাহলে কি দিবো? বাবাইয়ের মনে হয় খুব ক্ষুধা পেয়েছে। পরশু থেকে বাবাই কিছুই খায়নি। রাইসা রাজের কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে রাজের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়।

– কণা বাসায় যেতেই, তার মা বললো’ মারে আজ এতো দেরী করলি কেন?
– আর বলো না মা, আজ জীবনে অবাক করা কিছু দৃশ্য দেখলাম। দেখলাম কিছু ভালোবাসার নির্দশন।
– তাই বুঝি। বলতো শুনি।
– জানো মা, একটা ছেলেকে মারপিঠ করে হসপিটালে এডমিট করে। ছেলেটার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, যে বাঁচার সম্ভাবনাছিল না বললেই চলে। কিন্তু অলৌকিক ভাবে ছেলেটা বেঁচে যায়। জানো, ছেলেটার ছোট্ট একটা মেয়ে আছে। আর মেয়েটার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস -ভালোবাসা দেখে, সাথে তার বাবার প্রতি ভালোবাসা দেখে চোখের পানি আঁটকিয়ে রাখতে পারিনি। বাবাকে ছোট্ট একটা মেয়ে এতটা ভালোবাসতে পারে তা কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি। জানো মা ছোট্ট মেয়েটা যখন মোনাজাতে প্রার্থনা করছে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, মেয়েটা স্বয়ং আল্লাহর সাথে কথা বলছে। এরকম মেয়ে লাখেও পাওয়া যায় না। বর্তমানে মা-বাবারা ছেলে মেয়ে জন্মের পরপরই নাচ গান শেখায় কিন্তু সে লোকটা মেয়েকে আল্লাহর পথের দিশারী বানিয়েছে। নামায পড়া শিখিয়েছে। তবে দু:খের বিষয় মেয়েটার মা এতটাই হতভাগী এতো সুন্দর মেয়ে আর স্বামীকে রেখে নাকি চলে গিয়েছে।
– কিরে মা তুই কাঁদছিস কেন?ডাক্তারদের কাঁদতে হয় না। আচ্ছা বলতো বিয়ে কবে করবি?
– মা তুমিও না, আচ্ছা মা আমি কি তোমার শত্রু হয়ে গেছি। যার কারণে তাড়াতে চাচ্ছো আমায়?
-ধূর! কি বলছিস। তবে জানিস কি মা, মেয়ে বড় হলে মা-বাবার দায়িত্ব। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। আর আমি কবে না কবে মারা যায়। আর তোর তো বাবাও নেই।
– মা এসব বলবা না। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
– হুম বুঝলাম। সেজন্যই ভাবছি একটা ঘর জামাই দেখবো।
– মা আবারো। খেতে দাও তো। ক্ষুধা লাগছে।
-আচ্ছা। তুই ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার নিয়ে আসছি।
– কণা যখন খেতে বসেছে, এমন সময় রাইসার কথা মনে পড়ল। ছোট্ট মেয়েটা কি খেয়েছে? আর মেয়েটার তো কেউ নেই। কণা আর খেতে পারলো না।
– কি হলো মা খাওয়া বাদ দিয়ে আবার কোথায় যাচ্ছিস?
– হসপিটালে মা।
– এখনিতো আসলি আবার কেন যাবি?
– মা কাজ আছে।
– আচ্ছা যা ভালো কথা টিফিন টা তো নিয়ে যা ।
– ওকে আমার সুইর্ট হার্ট। বাই।
– হইছে, যা।
– কণা খাবার টিফিন বক্সে করে নিয়ে হসপিটালে রওয়ানা দেয়।

.

কথা এদিকে রাজ আর মৌ এর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও দেখছে। আর চোখের পানি ফেলছে। রাজের একটা ছবি নিয়ে বুকের উপর রেখে বলছে, আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করতাম রাজ। কেনো করলে তুমি এসব? আমার কি অপরাধ ছিল? আমি তোমাকে ভালোবাসতাম এটা কি আমার অপরাধ ছিল? নাকি রাইসাকে নিজের মেয়ে ভেবে আপন করে নেওয়া অপরাধ ছিল? কেন করলে আমার সাথে এমন আমি কি নিয়ে বাঁচবো। জানো রাজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব। তোমাকে দেওয়া প্রতিটি আঘাতই আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। প্রায় বিশ থেকে তিরিশটা ছবি রাজ আর মৌ এর। প্রতিটা ছবিই রোমান্টিক। যখন দেখল রাজের আর মৌ এর গায়ে কাপড় নেই। দু’জনই অশালীন কাজ করছে। কথা আর সহ্য করতে পারে না। মন চাচ্ছে রাজকে গিয়ে খুন করি। কিন্তু না, রাজ আমার না। ওকে দেখলে আমার আরো কষ্ট হবে। মৌ এর কথায় ঠিক। মৌকে ব্ল্যাকমেল করে টিস্যুর মতো ব্যবহার করছে। সত্যি মৌ আপুর জন্য কষ্ট হয়েছে। রাজ সবকিছু করেছে আমার সম্পত্তির জন্য। আচ্ছা রাজ একবার বলতো এতো নোংরামির কি আছে! আমি আমার সম্পত্তি দিয়ে দিতাম। জীবনটাই তো ওর জন্য দিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু ও আমার সাথে এতো প্রতারণা করবে। আর রাইসাকে দিয়ে নাটক সাজাবে। কথার খুব কান্না পাচ্ছে। বালিশে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আল্লাহ কেন তার সাথে এমন করল। ও তো প্রতিওয়াক্তে নামাযের শেষে রাজকে চাইতো। মাঝরাতে ওঠে নফল নামায পড়তো। হঠাৎ কথার ফোনটা বেজে ওঠে।
– ফোনটা বের করতেই দেখে নিলয়ের নাম্বার। তাই কেটে দেয়। এভাবে কয়েকবার কেটে দেওয়ার পর নিলয় আবার ফোন দিলে। কথা ফোনটা রিসিভ করেই বলে’ কেন ফোন দিয়েছো?
– কথা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে যা করেছি সব ভুল করেছি। অন্যায় করেছি। আমাকে একটাবার সুযোগ দাও।
– এই কুত্তা তোর কি মনে হয়? আরেকবার যদি আমাকে ফোন দিস তাহলে খবর আছে। ফোনটা কেটে দিয়ে আবারো রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে বলতে লাগল ‘রাজ আমি যে তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। ‘কিন্তু কেন করলে এমনটা? এখন আমি কি করবো? কাকে নিয়ে বাঁচবো।
.
এদিকে রাজের সেন্স ফিরতেই দেখে রাইসা তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
– রাজ রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ রাইসার ঘুম ভাঙতেই দেখে তার বাবাই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

– বাবাই তুমি কেমন আছো?
– মা খুব ভালো। আমার মা টার মুখ শুকনা কেন?
– আমার মা’টা খায়নি?
– রাইসা কোন কথা বলছে না।
– কি হলো মা কিছু খেয়েছ?
– রাইসা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল খায়নি।
– রাইসার দিকে তাকাতে পারছি না। রাইসার মুখটা শুকিয়ে গেছে।
– মা খাবে না তুমি?
– বাবাই তুমিওতো খাওনি। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে খায়?
– অামি কিছু বলতে পারছি না। চোখ থেকে এমনিতেই পানি পড়ছে। পকেটেও একটা টাকা নেই। এ শহরে আপন বলতে কলিজার টুকরাটাই। রাইসার দিকে তাকাতেও পারছি না। বুঝতে পারছি রাইসা ক্ষুধার কথা বলতেও পারছে না।
– কি হলো বাবাই কাঁদছো কেন?
– বাবা তুমি থাকো আমি এখনি আসছি।
-রাইসা বুঝতে পারল তার বাবাই এর ক্ষুধা লাগছে। কিন্তু এক টাকাও তো নেই ছোট মানুষ টাকা কোথায় পাবে। হঠাৎ খেয়াল করলো ‘ তার বাবার দেওয়া সোনার মালা। ঠিক করলো এটা বিক্রি

করে দিবে। রাইসা যখন হসপিটাল থেকে নেমে একটা জুয়েলারির দোকানে গিয়ে মালাটা দেখিয়ে বললো ‘ আঙ্কেল মালাটা বিক্রি করে দিবো। ‘
– দোকানে থাকা একটা ছেলে বললো’ বস মালাটা মনে হয় চুরি করে আনছে। কিছু টাকা হাত ধরিয়ে বিদায় করে দেন।
– মামনি মালা দাও তো দেখি। মালাটা নিয়েই বললো ‘ এই পুলিশকে ফোন দাও তো। বাচ্চাটা কার জানি মালা চুরি করে নিয়ে আসছে।

– ছি:আমার বাবার দেওয়া মালা। চুরি কেন করবো। আপনি মালাটা নিয়ে টাকা দেন বাবাইয়ের জন্য খাবার নিবো। আমার বাবার ক্ষুধা লাগছে। দেন না আঙ্কেল?আর পুলিশ ডাকবেন না। আমার বাবাই খুব অসুস্থ। প্লিজ দয়া করেন আঙ্কেল।

চলবে””’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here