বাবার ভালোবাসা পর্ব-২

0
1796

#গল্পঃ #বাবার_ভালোবাসা।

লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।

পর্বঃ০২

রিক্সাটা যখন পার্কের সাইড দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় রাইসা বলে উঠল ‘ বাবাই দেখ তো, মম না ওইটা। আচ্ছা বাবাই মম ওই আঙ্কেলটাকে জড়িয়ে ধরে আছে কেন?
– আমি পার্কের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ পাথর তুলে দিয়েছে। মৌ এমন কিছু করবে স্বপ্নেও ভাবিনি। মৌ তো আমাকে ভালোবাসত। তাহলে কেন এসব নোংরামী করছে!
-কি হলো বাবাই ওটা মম না। মম কেন ওমন করছে?
-ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের প্রশ্নের উওর দেওয়ার মতো কোন কথা পৃথিবীতে অভিমানে খুঁজে পাচ্ছি না। চোখের পানি বাঁধা মানছে না। মনে মনে বলছি হে আল্লাহ এ অবুঝ মেয়েকে কি বলে স্বান্ত্বনা দিব?
-কি হলো বাবাই তুমি কাঁদছ কেন?
– নারে মা চোখে হয়ত বালি গিয়েছে। আর পার্কে যে মহিলাটাকে দেখলি সেটা তোর মম না।
– বাবাই তুমি মিথ্যা বলো কেন? তুমি না বলেছে মিথ্যা বলা পাপ।
– আরে পাগলী মেয়ে আমার। এই পৃথিবীতে একটা মানুষের মতো দেখতে হুবুহু সাতটা মানুষ হয়।

– ওহ্ আচ্ছা!

-রাইসাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়লাম। বাসায় এসে মৌ এর সাথে কাটানো মুৃহূর্ত গুলো ভাবছি আর চোখের পানি মুছতেছি। রাত ন’টা বাজতেছে এখনো মৌ এর আসার কোন খবর নেই! এদিকে জ্বরটাও বেড়ে গেছে। জ্বরে শরীর দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। রাইসা ছোট্ট মেয়ে বারবার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। আর মাঝে মাঝে বলছে ‘বাবাই এখন কেমন লাগছে? আমি মুখের কুনে হাসি ফুটিয়ে বলছি। মা এখন অনেক ভালো লাগছে। তুমি ঘুমাও।
– রাইসা আবার মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
– বাবাই তোমায় না বলেছি মিথ্যা বলবে না। তোমার তো অনেক জ্বর। আমি জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি। জলপট্টি দিতে গিয়ে রাইসার চোখে ঘুম এসে যায়। রাইসা জিমুতে জিমুতে আমার বুকে পড়ে যায়। আমি রাইসার মাথায় হাত বুলাতে থাকি। হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠল। কলিং বেলটা বাজার সাথে সাথে রাইসার ঘুম ভেঙে যায়। রাইসা ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে দরজা দিকে যায়। দরজা খুলেই মৌকে বলল’ মামনি বাবাইয়ের শরীরে অনেক জ্বর! গা পুড়ে যাচ্ছে। মৌ কোন কথা বলছে না। রাইসা খেয়াল করল মৌকে তার সাইফ আঙ্কেল ধরে আছে। মৌ ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। রাইসা দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। সজিব সাহেব মৌকে রুমে রেখে চলে গেল। আমি বুঝতে পারলাম মৌ পার্টি থেকে ড্রিংকস করে এসেছে। রাইসা আমার পাশে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর রাইসার কান্নার আওয়াজ পেয়ে বললাম’ কি হলো? মহারাণী কাঁদছে কেন?
– রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ বাবাই তুমি আমাকে রেখে কোথাও যেয়ো না। জানো বাবাই মম এখন আমাকে আর আগের মতো আদর করে না।
– রাইসার কপালে চুমু দিয়ে বললাম’ মা’রে তোকে রেখে তোর বাবাই কোথাও যাবে না।

– পরের দিন সকালে মৌ যখন ঘুম থেকে ওঠলে। আমি ক্র্যাচে ভর করে মৌ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
– মৌ তোমাকে কিছু বলতে চায়।
– হ্যাঁ বলো!
– কাল কোথায় ছিলে?
– কেন অফিসে।
– অফিসে এতো রাত পর্যন্ত? আচ্ছা তোমার বস কী তোমাকে নিয়ে অফিস করে? আর কাউকে রাখে না।
-রাজ কি বলতে চাচ্ছো?
– যা সত্য তাই বললাম। অফিসের বসের সাথে ড্রিংকস করে বাসা ফেরাটা অবশ্যই অফিস না। আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে ঘরে মেয়ে রেখে এসব নোংরামী না করলেই নয়?
– ঠাস! করে মৌ আমার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল ‘ ছোটলোক তোর কীভাবে সাহস হয় নোংরা কথা বলতে? ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তোর মতো ছোটলোককে বিয়ে করা। কি আছে তোর? ল্যাংড়া! ঠিকমতো দাঁড়াতে পারিস না। পৃথিবীতে টাকা ছাড়া চলা যায় না বুঝলি। আমি বাবার সাথে কথা বলেছি। আমি তোর সাথে থাকতে পারবো না।
-সত্যিই তো কেন থাকবে। আমার না আছে অর্থ না আছে স্বাভাবিক একটা জীবন। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারি না।
– এমন সময় রাইসা এসে বলল ‘ মম তুমি বাবাইকে চড় মারলে কেন?
– রাইসা মামনি তুমি যাও তো এখান থেকে।( মৌ)
– না যাবো না। তুমি আগে বলো বাবাই কেন চড় মারলে?
– তোমার বাবা পঁচা কথা বলেছে।
– না আমার বাবা ভালো। তুমি পঁচা তুমি বাবাইকে আর পারবে না। মারলে তোমাকে বকা দিব।
– তোর পাখনা গজায়ছে। ছোটলোকটার সাথে থেকে থেকে তুই ও এমন হয়েছিস।
– মৌ রাইসাকে কিছু বলো না। রাইসা ছোট মানুষ।
-মামনি তুমি তোমার রুমে যাও।
– না বাবাই আমি গেলে আবার তোমাকে মারবে। আবার মারলে আমিও মারবো হু।
– ঠাস! গেলে এখান থেকে। রাইসা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
– তুমি রাইসাকে মারতে পারলে?
– হুম মেরেছি বেশ করেছি। আরেকটা কথা আমি তোমার সাথে হ্যাপি না রাজ। আমি তোমার কাছে ডির্ভোস চাই।
– মৌ রাইসার কথাটা একবার ভাবো।
– সরি, আমি কোন ল্যাংড়ার সাথে থাকতে পারব না। আর বাবা বলেছে, রাইসাকে তুমি না পালতে পারলে কোন এতিমখানায় দিয়ে দিবে। এতে যা খরচ লাগবে সব বাবা দিবে। সো রাইসাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
– মৌ এর মুখে এমন কথা শুনে বুকটা কেঁপে ওঠলো। ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। মৌ আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকালো।
– মারলে তুমি আমায়।
– হ্যাঁ মারলাম। কারণ তুমি আমার কলিজাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছ।
– ছোটলোকের আবার কলিজা। শোন আমি চলে যাচ্ছি। কখনো যেন তোর এই মুখটা না দেখতে হয় যেন আমার। আর যদি আমাকে যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকিস তাহলে ডির্ভোস পেপার পাঠাবো সেটাতে সাইন করে দিস।
– আমি মাথা ন্যাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
– মৌ তার সবকিছু নিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে এমন সময় রাইসা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল’ মম তুমি কোথায় যাচ্ছো?
– কে তোর মম?
– মম মজা করো না তো। তুমি আমার মম। বাবার সাথে রাগ করো না বাবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসে। জানো মম তুমি যখন অফিসে থাকো তখন বাবাই তোমার ছবিটা বুকে নিয়ে শুয়ে থাকে।
– রাইসা সরো, আমার যেতে হবে!
-না আমি সরবো না। মম তুমি যেয়ো না।
– যত্তসব ছোটলোকের বাচ্চা বলে রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মৌ বের হয়ে গেল। বাসার নিচে তাকিয়ে দেখি সাইফ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না মৌ এখন সাইফ সাহেবের প্রেমে অন্ধ! আর অন্ধ হবেনই না কেন, একটা ল্যাংড়ার সংসার কে করতে চাই। রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি রাইসার কপাল কেটে গেছে। রাইসার কপালের রক্ত দেখে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। রাইসাকে বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি।
এদিকে মৌ চলে গেলে, রাইসা মাঝরাতে ঘুম থেকে ওঠে মা মা করে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
মৌকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। মৌ চলে যাওয়ার দু’দিন পরেই ডির্ভোস লেটায় পাঠায়। ডির্ভোস লেটার সই করার সময় চোখের পানিতে ডির্ভোস লেটার টা ভিজে যায়। সেদিন রাতে রাইসাকে বুকে নিয়ে অনেক কান্না করি।

– এদিকে প্রায় পনেরো দিন পরেই খবর পায়। মৌ এর বিয়ে সাইফ সাহেবের সাথে। বিয়ের কথাটা শুনেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা করতে লাগে। রাতে যখন মৌ এর ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছি এমন সময় রাইসা দেখে ফেলে। পরের দিন সকালে বলে, বাবাই নামায পড়ার জন্য ওযু কিভাবে করতে হয় আমাকে শিখাবা?
-কেন মা?
-ওহ্ বলো তো শিখাবা কিনা?
– আচ্ছা।
– চলো তাহলে। রাইসাকে যেমন যেমন বললাম তেমন করে ওযু করে নিলো।
– আচ্ছা বাবাই আল্লাহ নাকি সবার কথা শুনে? তাহলে আমার কথা শুনবে?
– হুম মা তিনি যে দয়ার ভান্ডার সবার কথাই শুনে।
– আচ্ছা বাবাই আমি যদি আল্লাহকে বলি ‘ আল্লাহ তুমি আমার বাবাইকে কষ্ট দিয়ো না। মমকে আমাদের মাঝে আবার এনে দাও। তুমি দেখো না আমার বাবাই মমের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদে । ‘ শুনবে তো বাবাই?
– রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। আমি কি বলল বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। রাইসা নামায পড়ে মোনাজাতে সবকিছু বলল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি। হঠাৎ মৌ এর বিয়ের কথা শুনে রাইসা বায়না ধরল। পড়ে রাইসাকে বিয়ে বাড়ি নিলে, যেসব ঘটনা ঘটে তা তো শুনলেনই।
– পরের দিন অটো করে রাইসাকে নিয়ে যখন স্কুলে যায় তখন একটা সিএনজি অটোকে ধাক্কা দেয়।

চলবে”’

বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here