প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৪৮+৪৯

0
243

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৮

ইতিমধ্যে একদিন কেটে গেছে। একটা দিন একটা রাত! নির্জন আর অন্ধকার কারাগার। আলোর রেশ মাত্র নেই। নেই কোনো খাবারের ব্যবস্থা বা পানির ব্যবস্থা। সোজা হয়ে কারাগারের ভেতরে শেষদিকে শুয়ে প্রেম। নড়াচড়া নেই কোনো। উজ্জ্বল চেহারা আর তেমন নেই। উজ্জ্বল রঙ কেটে কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ। খাবার ও পানির অভাবে চোখমুখ বসে গেছে। কপালে হাত রেখে চোখ বুঁজে আছে প্রেম। তাকানোর শক্তি অবধি নেই। জীবন যেন বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রেম তো ছোট থেকে রাজপুত্রের মতোই বড় হয়েছে। ছিল না কোনো অভাব। খাবারের অভাববোধ করেনি কখনো। আজ প্রথমবার এমন হচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না। কোনোরকমে কাত হতেই কারো পায়ের আওয়াজ কানে আসতেই দুর্বল চোখ মেলে তাকায় সে। আগুনের আলোতে কারো হেঁটে আসা দেখা যাচ্ছে। অবশ্য পা দেখা যাচ্ছেনা। পোশাকে আবৃত। প্রেম মাথা তুলে তাকাবার চেষ্টা করল। বড় শ্বাস নিয়ে নিলো শক্তি জোগাতে।

মাথা তুলে একটু তাকাতেই কালো পোশাকে আবৃত নারীটিকে দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল প্রেম। বর্তমান তার পরিচয় এই বিষা’ক্ত রাজ্যের বিষা’ক্ত রাণী। ঐশ্বর্য! হেঁটে এসে কারাগারের বিপরীত পাশে দাঁড়ায় ঐশ্বর্য। তার বাম হাতে আগুনের মশাল। আরেকহাতে বড়সড় থালা। থালার একপাশে রাখা পানির গ্লাস। প্রেম কোনোরকমে উঠে বসল এবার। আগুনের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠেছে স্বর্ণের মতো চেহারা। মোহময়ী দুটো চোখ যেন কত দিন পর দেখতে পেলো প্রেম। বুকের ভেতর অনুভূতির তরঙ্গ উঠতে থাকলো। তীব্র আকাঙ্ক্ষা হলো প্রেয়সীকে ছুঁয়ে দেখার। নিজের বাসনা চাপিয়ে রাখতে না পেরে টলমল করতে করতে উঠে দাঁড়ালো সে। ধুলোমাখা শার্ট আর প্যান্ট বৃথা ঝাড়তে চেষ্টা করল। পারল না। দুলে উঠে এগিয়ে এলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ কেউ নেই পাহারা দেওয়ার জন্য। কিন্তু অন্যসময় তো কড়া পাহারা থাকে। আজ কেউ নেই কেন? প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল প্রেমের। কিছুটা সামনে হেঁটে থামলো সে। খাবারের মস্ত বড় থালায় খাবারদাবার চোখে পড়ল! সামনে থাকা বড় প্রাচীরের জন্য আর নিকটে যেতে পারল না প্রেম। সেখানেই দাঁড়িয়ে বলল,
“কি ব্যাপার রাণী সাহেবা? আমাকে না খাইয়ে মা’রছো তাতে শান্তি হচ্ছে না বুঝি? এখন নিজের খাওয়া দেখিয়ে মা’রতে চাও?”

“চুপ করো। যত্তসব আজেবাজে কথা।”

“আজেবাজে কি বললাম রাণী সাহেবা? এখানে নিশ্চয় আপনি আমায় খাওয়াতে আসবেন না। আপনারই তো কড়া নির্দেশ! এই প্রেম নামক মানুষটির কাছে যেন একটা পানির বিন্দুও না পৌঁছে।”

প্রেমের কথায় ঐশ্বর্য কিছু বলল না। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সেই চোখ দুটো সরু করে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে খাবারের থালা নিচে রাখলো। অতঃপর কোথা থেকে যেন চাবি বের করে তাড়াতাড়ি করে বড় কারাগারের সামনে ঝুলে থাকা তালাটা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রেম এবার বোঝার চেষ্টা করল মেয়েটার মনে কি চলছে? দুচোখে সবটা ঘোলা দেখছে। চারিপাশ ঘোলাটে হয়ে আসছে। শরীর খুব দুর্বল। ঐশ্বর্য তালা খোলা শেষে হাতে থালাটি তুলে নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঢুকে পড়ার সময় প্রেম সামলেই ছিল গেটের। ঐশ্বর্যের মাথা গিয়ে ঠুকে যায় প্রেমের বুকে। হালকা সরে দাঁড়ায় সে। হাত দিয়ে দেয়াল ধরে। মাথাটা এবার ঘুরছে। সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ নিজেকে সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে পড়তে নেয়। ঐশ্বর্যের এক হাতে আগুনের মশাল আরেক হাতে খাবার। বুঝতেই পারলো না এমতাবস্থায় কি করবে! সে নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভরাট হাতেই প্রেমকে ধরার চেষ্টা করল। প্রেম না পেরে তার কাঁধ ধরে এবারের মতো সামলে নিল। একহাতে নিজের কপাল ধরে দাঁড়িয়ে রইল। বড় বড় শ্বাস নিয়ে সেই দুর্বল চোখ খানি নিয়ে ঐশ্বর্যের পানে তাকাতেই ঐশ্বর্য অস্থির ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“না খেয়ে কি অবস্থা হয়েছে দেখো! অতিরিক্ত দুঃসাহসিকতা দেখাতে গিয়েছিলে না? এটা তার ফল! একটু ভয় পেতে পারতে। ছেড়ে দিতাম। এখন তাড়াতাড়ি করে পানি খেয়ে নাও। সাথে খাবারগুলো। তাহলেই ঠিক হতে পারবে।”

প্রেমের চোখ ভরে এবার দেখা যায় বিস্ময়। খাবারের দিকে একবার চেয়ে বলে,
“হঠাৎ আমার জন্য খাবার? আমার জন্য তো খাবার আর পানি নিষিদ্ধ ছিল তাই না?”

ঐশ্বর্য ক্ষুদ্ধ হয়ে জবাব দেয়,
“না খেয়ে ম’রবে নাকি? একদিনেই তো অবস্থা কাহিল। কাল হলে তো দেখা যাবে আর নিশ্বাসই চলছে না। তখন?”

“তুমি তো সেটাই চেয়েছিলে। আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেক। সেই সাথে আমার র’ক্তের চলাচল আর হৃদয়ের স্পন্দন সবটা যেন বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে এখন আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এতোটা চিন্তা কেন?”

ঐশ্বর্য খাবার রেখে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
“কারণ…”

একটা শব্দ বলে মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হয় না তার। কটমট করে প্রেমের দিকে চেয়ে তাকায়। আর বলে,
“তুমি খাবে?”

প্রেম ঐশ্বর্যের রাগের মাত্রা বাড়াতে আরো জোর দিয়ে বলে,
“না খেলে?”

তিরিক্ষি হয়ে চেয়ে রয় ঐশ্বর্য। প্রেম আবার টলমল করে টাল সামলাতে না পেরে ধপ করে বসে পড়তেই তার সামনে পানির গ্লাসটা ধরে একহাতে প্রেমের ঠোঁট টিপে ধরে পানি খাইয়ে দেয় ঐশ্বর্য। রাগে গজরাতে গজরাতে বলে,
“দেহে শক্তি নেই তবে মনে জেদ ঠিকই আছে!”

প্রেম দুর্বল অবস্থাতেও পেছনে দুটো হাত রেখে উপর দিকে তাকিয়ে চোখ বুঁজে হেঁসে বলে,
“তোমার থেকেই তো শিখেছি জেদটা।”

ঐশ্বর্য খাবারের থালা এগিয়ে দেয়। তারপর চটপটে গলায় বলে,
“দ্রুত খাবার খেয়ে নাও। বেশি সময় নেই হাতে। কখন যেন প্রহরীরা চলে আসবে।”

“হঠাৎ আজ প্রহরীরা নেই কেন? আমি ভুল না হলে তুমি কিছু করেছো তাই না? যাতে খাবার পানি নিয়ে আমার কাছে আসতে পারো?”

ঐশ্বর্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নিরব থাকে। উসখুস করে তবে জবাব দেয় না। প্রেম জানে ঐশ্বর্যই কিছু করেছে। মেয়েটার মন এখন দোটানায় পড়েছে। একদিকে এই রাজ্যকে নিজের রাজ্য ভেবে বসে আছে আর শয়*তানি শক্তিকে নিজের শক্তি। অন্যদিকে এসবের মাঝে চাপা পড়ে যাওয়া সেই ভালোবাসার অনুভূতি আগুনের মতো স্ফুলিঙ্গের ন্যায় ছোটাছুটি করছে মনে। তাই তো এখনো তার নেত্রদ্বয়ে স্পষ্ট প্রেমের জন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার খাবারের দিকে চোখ রাখে প্রেম। খিদে পেয়েছে খুব। এ জীবনে এতোক্ষণ না খেয়ে সে কখনোই থাকেনি। দ্রুত হাত নিয়ে খাবার ছুঁতেই লক্ষ্য করল তার হাত ময়লা। থেমে গেল সে। খিদে সহ্য হচ্ছে না। পানি সব খেয়ে শেষ করে ফেলেছে তৃষ্ণায়। হাত ধোয়ারও কোনো সুযোগ নেই। ঐশ্বর্যের নজর এড়ালো না বিষয়টা। লোকটার নিশ্চয় খুব খিদে পেয়েছে। এই নিষ্ঠুর মনে এতো মায়া জাগছে কেন তা জানা নেই নিষ্ঠুর রাজ্যের ভাবি রাণীর। শুধু মায়া জাগছে আর সেটা বেড়েই চলেছে। থামাথামি নেই কোনো।

ফট করে খাবারের ওপর হাত রাখলো ঐশ্বর্য। খাবার হাতে তুলে প্রেমের সামনে ধরল। প্রেম খাবার দেখে নিয়ে ভরাট গলায় বলল,
“খাবার দিয়ে এতো সেবাযত্ন করছো যে! আর তো মাত্র তিন দিন। তারপর তো তোমার হাতে অপেক্ষা আমার মৃ’ত্যু। তা হ’ত্যার আগে এতো যত্ন কিসের? শেষ যত্ন করছো?”

ঐশ্বর্যের কথাগুলো সহ্য হলো না। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আগের মতোই প্রেমের গাল টিপে ধরে খাবার তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। ধমকে বলে উঠল,
“আর কোনো কথা বলবে না। নইলে খাবার নিয়ে চলে যাব। অভুক্ত থেকে যাবে বলে দিচ্ছি।”

প্রেম কিছু বলল না। মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকলো ঐশ্বর্যময় ঐশ্বর্যকে। অন্যহাতে ভালো করে আগুনের মশাল ধরে রেখে দিয়েছে সে। অনবরত ঘামছে। ঘামগুলো বেয়ে গাল থেকে থুঁতনিতে এসে পড়েছে। চিকচিক করছে তা। কি সুন্দর দৃশ্য! তারপর হঠাৎ মাথায় খেলে গেল এক বুদ্ধি। খাবার চিবাতে চিবাতে বলল,
“আর ৩ দিন পর তো তোমার অভিষেক। এর মধ্যে যদি আমি প্রমাণ করে দিতে পারি তুমি এই রাজ্যের নও। তুমি আমার স্ত্রী আর এরাই তোমার চিরশত্রু। যাদের ভরসায় তুমি থাকছো। তখন কি করবে?”

চাতক পাখির মতো চেয়ে রইল প্রেম ঐশ্বর্যের উত্তরের আশায়। তবে ঐশ্বর্য কিছু একটা ভেবে উত্তর দিতে গিয়েও আশানুরূপ কোনো উত্তর দিল না। বলল,
“কিছুই না।”

রোজি রোজ একবার করে প্রেমের নামে অনেক কথা বলে। প্রেম তার সাথে কি কি ব্যবহার করেছে সেসব বলে। অবহেলায় তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল সেসব নিয়ে রোজ কথা ওঠে। এটাও বলে প্রেম বাঁচতে ঐশ্বর্যকে অনেকভাবে বোকা বানাতে চেষ্টা করবে সে যাতে সফল না হয়। যদি সফল হয় তাহলে ডেভিল কুইনের ক্ষতি। ডেভিল কিংডমের ক্ষতি। ঐশ্বর্য তা চাইছে না। শুধুমাত্র চাইছে লোকটাকে মৃ’ত্যু আগ পর্যন্ত ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখবে। মায়াজালে জড়িয়ে গেছে এ মন! প্রেম ঐশ্বর্যের উত্তরে হতাশ হয়। আবারও বলে ওঠে,
“এরা তোমাকে বোকা বানাচ্ছে। আচ্ছা তুমি কখনো ভেবেছো? তুমি যদি এ রাজ্যের হও তবে তোমার মা-বাবা কোথায়? কারা তোমার জন্মদাতা?”

ঐশ্বর্য খাবার তুলে দিতে গিয়ে থমকে তাকায়। চোখের পলক আর পড়েনা। সত্যিই তো! তার মা-বাবা কোথায়? থাকার কথা তো। সে নিশ্চয় মা-বাবা ছাড়া জন্ম নেয় নি! তবে? প্রেমের দিকে সন্দিহান নজরে তাকায় ঐশ্বর্য। অস্ফুটস্বরে বলে,
“মা-বাবা!”

“হ্যাঁ মা-বাবা! আমি জানি তোমার মা-বাবা কে। উনারা অধির আগ্রহে বসে আছেন তোমার জন্য। তোমায় একটি বার দেখবে বলে। ক্ষণে ক্ষণে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তোমায় না দেখতে পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছেন।”

ঐশ্বর্য থম মেরে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে সামাল দিয়ে খাবার ছেড়ে উঠে বলে,
“না। তুমি মিথ্যে বলছো। তোমার কথায় বিশ্বাস হয় না। খাবার দিয়েছি বলে এই নয় তুমি যা ইচ্ছা বলবে আর আমি বিশ্বাস করব। খেয়ে নাও যত তাড়াতাড়ি পারো। আমি চলে যাব।”

প্রেম বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মেয়েটা নিজ সিদ্ধান্তে অটল। ওকে বোঝাতে গেলে প্রহরীরা এসে পড়বে। ভাবতে ভাবতে তার মাথায় খেলে গেল একটা বুদ্ধি। খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য চকিতে তাকালো। এমন পুরুষালি, গাঢ় দৃষ্টি ঐশ্বর্যের মনের কুঠুরিতে অস্থিরতা তৈরি করে। চেহারা ফ্যাকাশে হতে থাকলো প্রেমকে আরো বেশি এগোতে দেখে। আবারও কি এই মানুষটা তাকে আগের বারের মতো চুম্বন জাতীয় কিছু করে বসবে? অসম্ভব! ঐশ্বর্য পিছু সরতেই প্রেম তার হাত থেকে ছো মেরে আগুনের মশালটা নিয়ে নিচে ফেলে দিল। নিচে ছিল বস্তা জাতীয় কিছু। সেটার সঙ্গে আগুনের সংস্পর্শ আসা মাত্র তা দাউদাউ করে জ্বলতে থাকলো। তাপে সবটা ঝলসে যেতে থাকলো। আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে আগুনের দিকে চেয়ে রইল ঐশ্বর্য। চিৎকার করে বলে উঠল,
“এটা কি করলে?”

প্রহরীরা সবে খেয়েদেয়ে শান্তিমতো চলতে চলতে আসছে। আয়েশ করে হাঁটতে হাঁটতে একজন আরেকজনের উদ্দেশ্যে বলল,
“আজকের খাওয়াদাওয়া একেবারে জম্পেশ হয়েছে তাই না রে?”

“ঠিক। কুইন আমাদের আজকে খাবারের স্থানে বসিয়ে বেশি বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন অভিষেকের আনন্দে। স্বাদটাও দারুণ ছিল।”

এভাবেই চলছিল খাবারের আলোচনা। রাজমহল পেরিয়ে কালকুট কারাগারে যাবার সরু রাস্তায় ঢুকতেই গরম লাগতে শুরু করল তাদের। পথের মাঝখানে তারা পেয়ে গেল আগুনের আভাস। তারা ঘাবড়ে একে ওপরের দিকে তাকালো। আরো একটু এগিয়ে কারাগারের সামনে যেতেই দেখলো রীতিমতো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। তখন সকলের চোখ কপালে। প্রেমের কথা তাদের স্মরণে আসতেই তারা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠল।
“আগুন!”

মহলের সকলে জড়ো হলো। ভালোই আগুন লেগেছে। কিন্তু তাতে কারোর কিছুই যায় আসেনা। সকলেই ডেভিল। তারাদের আগুনই শক্তি, আগুনই মুক্তি! কিন্তু সেই মানুষটার কি হলো? সকলের চিন্তিত। রোজি আর রোজির বাবারও ছুটে এলো। এই অবস্থা দেখে বলল,
“দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলো। ওই মানুষটা বেঁচে আছে নাকি ম’রে গেছে সেটা জানতে হবে। নয়ত শান্তি পাব না।”

রোজির কথায় চলল আগুন নেভানোর কাজ। আগুন নেভানো হলো। তোলপাড় করে খোঁজা হলো প্রেমের দেহ। পাওয়া গেল না। প্রহরী আর সৈন্যরা হতাশ হয়ে বলল,
“পেলাম না। হয়ত আগুনে পু’ড়ে ছাই হয়ে গেছে।”

তাদের এমন কথা শুনে রোজির দৃষ্টি রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। ক্রোধ মিশিয়ে বলে,
“মূর্খের দল। আগুন লেগেছে মাত্র কিছুক্ষণ হলো। আর এই কারাগারের দরজাও খোলা। মানে বুঝতে পারো না? ওই মানুষ পালিয়েছে। আর তখন তোমরা কি করছিলে?”

সকলের মুখ হয় থমথমে। মাথা নুইয়ে ফেলে। একজন মিনমিন করে উত্তর দেয়,
“খাচ্ছিলাম।”

রোজি যেন এবার ক্রোধে আগুনের লাভার মতো ফেটে পড়বে। হুংকার দিয়ে উঠল এবার।
“তোদের কে বলেছে এতো আয়েশে খেতে? ওই মানুষ পালিয়েছে! কুইন জানলে কি হবে?”

“আ…আমরা এখুনি ওকে খুঁজে বের করব! চিন্তা করবেন না।”

রোজির রাগ কমেনা। হাত দিয়ে দেয়ালে আ’ঘাত করে বার বার। মহল, রাজ্য জুড়ে চলে তোলপাড়। এতো খোঁজাখুঁজির মধ্যে ঐশ্বর্য একবারও নিজের ঘর থেকে বের হলো না। নিজের বেশ প্রেমকে খুঁজে এবার সন্দেহ জাগলো মনে। নিচতলা থেকে খুঁজে উপরে যেই না যেতে নেবে তখনি সিঁড়ির থেকে এলো অদ্ভুত ধ্বনি! ঐশ্বর্য আস্তে আস্তে এক পা একপা করে নামছে। চোখজোড়া নিচের দিকে স্থির। কালো পোশাকে স্পষ্ট তাজা র’ক্ত। সেই সাথে দুহাতে লাল বর্ণের র’ক্ত টপটপ করে সিঁড়িতে পড়ছে। ঐশ্বর্যের ভাবান্তর নেই। সে নামছে। একটা যন্ত্রের ন্যায় চলছে। রোজি সহ সেখানকার সকলে বাকহারা হয়ে তাকায়। সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে দাঁড়ায় ঐশ্বর্য। চোখমুখের রঙ পাল্টে গিয়েছে। রোজি কিছু বলতে উদ্যত হলেই ঐশ্বর্য থেমে থেমে বলে ওঠে,
“এতো খোঁজাখুঁজির দরকার নেই। হ’ত্যা করেছি শেখ আনন প্রেমকে।”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫০

জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল সকলে। কালো ফ্যাকাশে সেই মুকুট ঐশ্বর্যের স্পর্শে যেন প্রাণ পেল। অদ্ভুত এক রশ্মি তরান্বিত হতে থাকলো। সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ঐশ্বর্যের দিকে কেউ চোখ রাখতে পারল না। পাশে দাঁড়ানো অরুণের চোখ যেন ঝ’লসে যাবার উপক্রম! রশ্মির তীব্রতা ক্রমাগত বেড়ে উঠছে। সকলে চোখ বন্ধ করে নিল। আর তাকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। ঐশ্বর্য ঠাঁই দাঁড়িয়ে সকলের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকলো। সে নির্দ্বিধায় তাকিয়ে! যখন রশ্মির তেজ কমলো আস্তে আস্তে সকলকে চোখ খুলতে দেখা গেল। তবে ঐশ্বর্যের বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে যে ডেভিল কুইনের অভিষেকের সময় কি এমনটাই হয় সবসময়? এতটাই তীব্র আলো ছড়ায় বুঝি? নাকি অন্য কিছুর সংকেত!

আবারও সকলের জয়ধ্বনিতে চকিতে তাকালো ঐশ্বর্য। ভাবনা সুতো ছিঁড়ে গেল সেই মূহুর্তে। রোজি সহ সকলে একইভাবে বলে উঠল,
“জয় হক ডেভিল কুইনের। জয় হক!”

কথাটা শুধু বলল না অরুণ। সে শুধু একধ্যানে ঐশ্বর্যকে দেখে চলেছে। কখনো কখনো সকলের ধ্বনিতে হেসে উঠছে। যেন তারও কি আনন্দ! ঐশ্বর্যও সকলের এই জয়ের ধ্বনির জবাবে বাঁকা হেসে উত্তর দিল,
“জয় তো হবেই। আমার জয় নিশ্চিত!”

“ঠিকই বলেছো। তোমার জয় নিশ্চিত হবে না তো কার জয় নিশ্চিত হবে? এই রাজ্যের রাণী সাহেবা তুমি। ক্ষমতা, শয়’তানি শক্তি পরিপূর্ণ রয়েছে তোমার মাঝে। আর আগুনের স্ফূলিঙ্গের মতো ক্রোধ আর সীমাহীন জেদ তোমাকে জয়ী করবেই। আমাদের মহাশত্রু ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কেউ ছাড় পাবে না তোমার এই ক্রোধের বি’ষে। তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে।”

অরুণের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে নেয় ঐশ্বর্য। হাসিটা আরো রহস্যময় হয়ে ওঠে। তার কোঁকড়ানো ছড়িয়ে রাখা চুলগুলো পিছনের দিকে সরিয়ে দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
“হ্যাঁ। মহাশত্রুর সময় ফুরিয়ে এসেছে। শুধু রাগ আর জেদ নয়। আমার মাঝে আছে সেই আত্মবিশ্বাস যেটা দ্বারা আমি আজকে জিতব।”

ঐশ্বর্যের কথা শুনে সকলের টনক নড়ল। কিছুক্ষণ নিরব হলো। এখন গভীর রাত। এই রাতটা তাদের উৎসবের। কিন্তু ঐশ্বর্য কি করতে চাইছে? রোজি আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“কুইন, আজকে জিতবেন মানে ঠিক বুঝলাম না। আপনি আজকেই…!”

কথার মাঝপথে তাকে থামানো হলো। ঐশ্বর্য কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল,
“হ্যাঁ আজকেই। যেহেতু আজকে একটা বিশেষ রাত। এই ডেভিল কিংডমের জন্য উৎসবের রাত তাহলে উৎসব আরো জমকালো করতে আজকেই আক্র’মণ করতে ক্ষতি কোথায়?”

রোজি কিছু বলতে চাইলেও তাকে বলতে দেওয়া হলো না। অরুণ তাকে ইশারায় থামিয়ে দিল হাত নাড়িয়ে। আর নিজে সম্মতি জানিয়ে বলল,
“ঠিকই বলেছে ডেভিল কুইন। শুভ কাজে দেরি কিসের? আর কি নেই আমাদের? শক্তি, ক্ষমতা, বাহিনী। আর সবথেকে বড় হচ্ছে কুইন ঐশ্বর্য। সে তো একাই এই ধ্বং’সলীলা করতে যথেষ্ট। রোজি, আর দেরি নয়। আজকেই হবে সব কিছুর হিসাবনিকাশ। আজকেই গুনে গুনে সব যন্ত্রণা আর দুঃখ ফেরত পাবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রত্যেকে। বিশেষত ভ্যাম্পায়ার কুইন মাধুর্য!”

‘মাধুর্য’ নামটি শুনতেই মস্তিষ্কের শিরায় যেন বিদ্যুৎ উপলব্ধি করে সেই কালো রঙের মুকুট পরিহিত ঐশ্বর্য। তার সরু দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় অরুণের দিকে। অরুণ একটু থেমে বলে ওঠে,
“প্রায় পনেরো বছর ধরে তপস্যা, চিকিৎসা আর শক্তির আদানপ্রদান করার পর তবেই মৃ’তপ্রায় থেকে জীবিত হতে পেরেছি। তবুও হাঁটতে পারি না ঠিকমতো। কষ্ট করে হাঁটি। দুচোখে ঘোলা দেখি। ওই অনুভব আমার দুচোখে এমন আঘাত করেছিল যেন আমার চোখদুটো থেঁত’লে দিয়েছিল। বুকে এখনো ক্ষ’তের সেই গভীর চিহ্ন। চিনচিন করে ব্যথা করে। এই ব্যথা শুধু ক্ষ’তের জন্য নয়, প্রতিশোধেরও।”

রোজি বড় শ্বাস নিয়ে অরুণের কথার মাঝখানে বলে উঠল,
“এসব নিজের কষ্টের কথা বলে নিজের কষ্ট বাড়িয়ে লাভ নেই ওয়ারওল্ফ কিং অরুণ। এবারের সময় আর দাবার প্রতিটা গুটি আমাদের। তাহলে এসব বলে আফসোস করে কি লাভ আছে?”

বলে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে উঠল সে। অরুণও তার কথায় তাল মিলিয়ে বলে উঠল,
“হুমম ঠিক বলেছো। যাও ঐশ্বর্যের প্রধান অস্ত্র অগ্নি তলো’য়ার যেটা রাণীর স্পর্শের অভাবে প্রাণহীন হয়ে রয়েছে সেটাকেও সজীব করে তোলো।”

রোজি মাথা নাড়ায়। ঐশ্বর্য একবার রোজির পানে তাকায় একবার অরুণের পানে। অগ্নি তলো’য়ার? এ কেমন অ’স্ত্র? জানার ও দেখার তীব্র ইচ্ছা জন্মালো ঐশ্বর্যের মনে। রোজি তার বাবার থেকে একটা বড় চাবির গোছা নিয়ে নিল। এরপর ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে মাথা নুইয়ে বলল,
“আসুন। আপনাকে নিয়ে যেতে চাই সেখানে। যেখানে তুলে রাখা আছে রাণীর প্রধান অ’স্ত্র। যা দ্বারা পরাজিত হতে বাধ্য অধিক শক্তিশালী যে কেউ। হক সে ভ্যাম্পায়ার বা অন্যকেউ। আপনার ছোঁয়ায় আগের মতো করে তুলুন। যার তীব্র ধার এবং মারাত্মক বি’ষ প্রা’ণ শুষে নিতে পারবে।”

ঐশ্বর্য সেখানে যাবার জন্য পা বাড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো অরুণ নিজেও। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে কিছুটা কষ্ট করে হাঁটছে। ঐশ্বর্য তা লক্ষ্য করলেও কিছু বলল না তৎক্ষনাৎ। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে প্রসাদের এক কোণার রাস্তায় এসে পৌঁছালো তারা। যেখানে কঠিন পাহাড়া। এটা হচ্ছে প্রাসাদের নিষিদ্ধ স্থান। যেখানে ঐশ্বর্য আগেও এসেছিল তবে ঘুরে চলে গিয়েছে রোজির কথায়। এখানে নাকি তার জন্যই চমক রয়েছে যা খোলাসা হতো এইদিন। তাই ঐশ্বর্য অপেক্ষায় রয়েছে। কি সেই অ’স্ত্র?

পথ হেঁটে অবশেষে এক বড় দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো তিনজন। রোজি চাবি দ্বারা তালা খুলতে আরম্ভ করল। একটা দরজাতেই তিনটা তালা। এমন পাহারা আর নিরাপত্তা দেখে এবার ঐশ্বর্যের কৌতূহল বাড়লো! নিশ্চয় এটা সাধারণ কিছু নয়। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে ঐশ্বর্য অরুণের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
“তা আপনার মতো ম’রে যাবার কথা! আমি রোজির কাছে শুনেছিলাম ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভবের হাতে নাকি আপনার খুব জঘন্য মৃ’ত্যু হয়েছিল। তাও তার স্ত্রীর দিকে চোখ দেওয়ার অপরাধে? তাও বেঁচে রইলেন যে? জানতে খুব ইচ্ছে করছে।”

অরুণ আয়েশি ভঙ্গিতে বলল,
“অবশ্যই। তুমি তো এখন আমার নিজেরই মানুষ। তোমাকে তো সবটা বলতেই হবে। কারণ আমার হয়ে তোমাকেই শোধ তুলতে হবে। আমি সেদিন মৃ’ত্যুযাত্রী ছিলাম ঠিকই। কিন্তু রিমেম্বার, আমি মানুষ নই আমি ওয়ারওল্ফ। যার মৃ’ত্যু এতোটা সহজ। কৈ মাছের মতো প্রাণ আমাদের। সেদিন অনুভব আমাকে সেই র’ক্তাক্ত করে ফেলে রেখে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ওরা আমার মৃ’তদেহ পায়নি সেদিন। ওদের এমন ব্যস্ততার সুযোগে রোজির বাবা আসে আর আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কিন্তু আমার দে’হ নিয়ে ওরা মাথা ঘামায় নি বলে বিষয়টা সহজ হয়। তারপর থেকে পনেরো বছর ধরে আমাকে ঠিক করার চেষ্টা চলছিল। কারণ ডেভিল আর ওয়ারওল্ফের সখ্যতা অনেক পুরোনো। শুধুমাত্র মাধুর্যের দিকে নিজের দৃষ্টি দেওয়ার কারণে অনুভব আমার সাথে যা করেছে তা ভোলার মতো নয়। গুনে গুনে সব যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে তাদের।”

ঐশ্বর্য অরুণের কথায় মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু তাদের দুজনের কথোপকথন বন্ধ হয় রোজির কথায়। প্রথম দরজা খুলে যায়। তারপর তারা দরজা পেরিয়ে কিছু দূর হেঁটে আসে। তারপর সামনে দাঁড়িয়ে পরে আবারও আরেক দরজা। হা হয়ে যায় ঐশ্বর্য। আনমনে প্রশ্ন করে ওঠে,
“আর কয়টা দরজা রয়েছে?”

রোজি হেঁসে জবাব দেয়,
“এটা খুলতে পারলে আরো একটা।”

এই বলে সেখানকার তালাও খুলে দেয় রোজি। পরপর তিনটা তালা খোলার পর উপস্থিত হয় একটা কক্ষ। যদি সঠিকভাবে বলা হয় কক্ষটি আয়না কক্ষ। চার শুধু আয়নায় প্রতিবিম্ব তৈরি করেছে তিনজনের। এতো প্রতিবিম্বতে মাথা গুলিয়ে উঠছে ঐশ্বর্যের। তখনি কক্ষের ঠিক মাঝখানে রাখা এক কালো রঙ্গের খাপে মুড়ানো একটা তলো’য়ার। কেউ কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য এগোয়। এগিয়ে কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে দেয় সেই তলো’য়ারের দিকে। ঘাম ছুটে যাচ্ছে। দুরুদুরু বুকে যখন তলো’য়ার ছুঁয়ে নিমিষে আবরণ থেকে তলো’য়ার বের করল তখন সেটির বিকট শব্দে ভেঙে গেল আয়না। ফাটল ধরে চৌচির হলো সমস্ত আয়না। ঐশ্বর্য গোল গোল আঁখি দুটো রাখলো ধারালো তলো’য়ারের দিকে। রোজি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
“সেই তলো’য়ার নিজের সজীবতা শক্তি ফিরে পেয়েছে আপনার সংস্পর্শে।”

ঐশ্বর্য দেখলো তলো’য়ার চকচক করছে। আস্তে করে ঘুরালো সেটা। কৌশলে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
“তা নিয়ে দেখছি তোমার খুব আনন্দ!”

“আসলেই তাই কুইন। তা এই অ’স্ত্রের স্বীকার সর্বপ্রথম কাকে করতে চান?”

হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল রোজি। অরুণ নিরবভাবে হালকা হেঁসে দাঁড়িয়ে। সে এতোদিন প্রাণপণে চেয়েছিল যেই মাধুর্যের নিজের ভ্যাম্পায়ার জগত তার শৃঙ্খলা নিয়ে এতো গর্ব তা ছিন্ন করতে। আর সেটা তারই মেয়ে করবে এটা তার কাছে স্বপ্ন। এখন শুধু সে দেখতে চায় তাদের মৃ’ত্যু সচক্ষে।

ঐশ্বর্য কৌশলে তলো’য়ার চালনা করতে করতে রোজির কথার হাসিমুখে জবাব দিল,
“দ্যা ডেভিল রোজি! সে-ই হবে এই মারাত্মক অগ্নি তলো’য়ারের প্রথম স্বীকার।”

রোজি এতোক্ষণ শব্দ করে হাসছিল। হাসি টিকলো না বেশিক্ষণ। হেঁচকি উঠে গেল। হাসি বিলীন হলো আতঙ্কিত চোখেমুখে তাকিয়ে আবারও হাসিমুখে বলল,
“আপনিও না! মজা করছেন? অবশ্য এই সময়টাই তো মজার।”

অরুণ এবার মুখ খুলল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“অবশেষে আমার মনোবাসনা পূরণ হচ্ছে। মাধুর্যের তৈরি করা শৃঙ্খলার বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে কেউ। তার দয়ামায়ার শরীরে দাগা দিচ্ছে কেউ! এতো চরম আনন্দের সময়।”

ঐশ্বর্য অরুণের কথায় পাত্তা দিল না। সে রোজির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আর ভারি গলায় বলল,
“মজা আমি করছি না রোজি। আর ইউ রেডি?”

রোজি হাসতে হাসতে থামারও সুযোগ পেল না। আচানক তার পেট এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়ে গেল সেই ধারালো তলো’য়ারের। চিৎকার দেওয়ার মতো জ্ঞানও হারালো সে। চোখমুখ খিঁচে ফেলল। আকস্মিক ঘটনায় পিছিয়ে গেল অরুণ। ঐশ্বর্যের নেত্রযুগল ক্রমাগত হতে থাকলো সবুজ বর্ণ। সেই নেত্র দ্বারা অরুণের দিকে তাকিয়ে সে তলো’য়ারটা রোজির পেটে ধরেই বলে উঠল,
“একেই বলে যার ফাঁদে সে-ই পড়া। মিথ্যের বদলে মিথ্যে আর মৃ’ত্যুর বদলে মৃ’ত্যু।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। আজকের চমক কেমন লাগলো আপনাদের? আর বেশি নয় একটু ধৈর্য রাখার অনুরোধ রইল। ]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here