প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৪৬+৪৭

0
265

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৬

আশপাশটা নিকষ কালো। আকাশটা বড্ড মেঘলা। সকাল হয়েছে তবুও যেন সন্ধ্যা। সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কালো রঙের মেঘের খেলা শুধুমাত্র। প্রকৃতির রঙটাও যেন কালো। জঙ্গলের পাতাগুলো শুঁকিয়ে ঝরে ঝরে পড়েছে। গাছগুলো নেতিয়ে গেছে। নিচে মাটিগুলো যেন শুঁকিয়ে চৌচির। সব জঙ্গল এবং অনেকটা শুঁকিয়ে যাওয়া নদী পেরিয়ে এক পাহাড়ের গা ঘেঁষে কালো পাথরের সিঁড়ি তৈরি করা। সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের সীমানায় এক কালো রাজপ্রাসাদ। সেখানে সকলে হম্বিতম্বি করে প্রবেশ করছে। প্রাসাদ পুরোটাই কালো। যেন কালোই প্রতীক সেই রাজ্যের। সেখানকার সকলের পরনেই কালো পোশাক। মুখে লেগে রয়েছেই একটা হাসি। হাসি থাকবে না-ই বা কেন? এতোদিন পর তাদের রাজ্য পরিপূর্ণ হয়েছে। তাদের রানীর পদার্পণ হয়েছে। প্রবেশ করেছে রাজ্যে। রাজ্য তো এবার সম্পূর্ণ। সকলে তো এক পলক দেখার জন্যই ছুটে চলেছে প্রাসাদের ভেতরে।

বড়সড় একটা জায়গা। চারিদিকে পানি। জায়গাটা পুকুরের মতো হলেও বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। পানিতে কতগুলো কালো গোলাপের পাপড়ি। সেখাকার সিঁড়িতে একটুখানি পা ভিজিয়ে বসে রয়েছে কালো কাপড় পরিহিত এক রমনী। উম্মুক্ত হাত পানি ও মধু মাখিয়ে দিয়ে চলেছে কয়েকজন দাসী। তাদের মনটাও খুশিতে পরিপূর্ণ। দাসীদের মধ্যে একজন বলে উঠল,
“এতো পরিচর্যার কি প্রয়োজন? আমার হবু রাণীর রূপের কি খামতি পড়েছে? ওমন সুন্দর স্বর্ণের মতো গায়ের রঙ! আমারই রঙ তো ঝলসে যাচ্ছে!”

“আহা! আজকের দিনটা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম আমাদের রাণী রাজসভায় বসবেন। সকলকে দেখা দেবেন। আজ যে অভিষেকের দিন ঠিক হবে। তাই তো এতো পরিচর্যা!”

সুন্দর রমনীটি রহস্যময় হাসি হাসে। হাসিতে যেন ঝরছে মুক্ত! সেই রমনী অন্য কেউ নয়। স্বয়ং ঐশ্বর্য। সম্পূর্ণ রূপে বদলে গেছে সে। নতুন এক রূপ পেতে চলেছে। সেই সাথে নতুন এক রাজ্য।

চারিদিকে বাজছে দামামা। উদ্ভট সুর। আনন্দের ঝঙ্কার। সুরটা অদ্ভুত এবং ভয়ানক। ঢোল পিটানো হচ্ছে। ঐশ্বর্য বসেছে আয়নার সামনে। পরনে একটা কালো পোশাক। পা ছেড়ে মেঝেতে অনেকদূর অবধি লম্বা সেই পোশাক। কোঁকড়ানো চুল ছেড়ে দিয়ে এক দাসী তার চুল আঁচড়ে দিয়ে চলেছে। তার হাতে পড়ানোর হলো নানারকম ব্ল্যাক স্টোনের আংটি। আংটি পড়ানোর সময় ঐশ্বর্যের হাতের অনামিকা আঙ্গুলে থাকা এক সাদা স্টোনের আংটি খুলে নিতে উদ্যত হলো এক দাসী। তা খেয়াল করে ঐশ্বর্য ধমকে উঠল।
“কি করছো? ওই আংটি খুলছো কেন?”

দাসী হাত সরিয়ে ফেলল। ঐশ্বর্য হাতের একটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো। সেই সময় আগমন হয় রোজির। আর বলে ওঠে,
“অপ্রয়োজনীয় কোনোকিছু রাখতে নেই কুইন। ফেলে দিন ওটা। রেখে কি হবে?”

ঐশ্বর্য আংটিতে হাত বুলিয়ে নিল। আনমনে প্রশ্ন করল,
“তোমরা কি করে জানলে? এটা অপ্রয়োজনীয়?”

“আমরা জানি বলেই বলছি। আপনার হয়ত কিছু মনে নেই। এটা আপনাকে সেই প্রেম দিয়েছিল। যে আপনাকে সবসময় অবহেলা করেছে। মনে পড়ছে?”

ঐশ্বর্যের ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে। অতঃপর চোখে জ্বলে ওঠে ক্রোধের আগু’ন। আংটিটা নিজে খুলে ছুঁড়ে মারে এক প্রান্তে। কোথাও একটা হারিয়ে যায় সেটা। বড় বড় শ্বাস ফেলে আয়নার দিকে তাকালো সে। তার চোখ ক্রমশ কালো হয়ে আসছে। রোজি শান্ত হয়ে বলল,
“রাগান্বিত হবেন না। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এই তোমরা সবাই সাজাও।”

তিন-চারজন মিলে ঐশ্বর্যকে তৈরি করতে থাকলো। নতুন রূপে তাকে যেন গড়ে তোলা হলো। কানে বড় বড় কালো স্টোনের দুল, গলায় কালো মালা। চোখ ভর্তি কালো কাজল। ঠোঁটেও লাগানো হলো কালো রঙ। হাত ভর্তি কালো আংটি। মাথার এক পাশে টায়রা। চুলগুলো হালকা করে বেঁধে দেওয়া হলো। সবশেষে উঠে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য। নিজেকে দেখতে থাকলো নিপুনভাবে। এ যেন কালো রাজ্যের রাণী। এ ‌যেন ভয়ং’করী অপরূপে। যার চোখে ও রূপে দুটোতেই যে কারো মৃ’ত্যু অনিবার্য। রোজি ঐশ্বর্যকে দেখে নিল। প্রশান্তির হাসি দিল। সে আজ সফল। ঐশ্বর্যকে এনে দেখিয়ে দিয়েছে সে নিজের কথা রেখেছে। সবখানে ডেভিলদের রাজত্বের বেশি সময় নেই তবে আর! ঐশ্বর্য আয়না দিয়ে রোজির দিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমি তৈরি।”

ঐশ্বর্য বেরিয়ে এলো। তার পেছন পেছন দাসীরা। সেই সাথে রোজি। সকলের আনন্দ দ্বিগুন হলো। সিঁড়ির ওপরে লম্বালম্বি বারান্দা দিয়ে প্রবেশ ঘটছে ঐশ্বর্যের। তার আশপাশটা যেন কালো ছায়ায় পরিপূর্ণ। খোলা বারান্দা পেরিয়ে প্রান্তে এসে সেখানে থাকা রেলিং ধরে নিচে তাকালো সে। নিচে সভায় কতশত প্রজা। সকলে হইচই ফেলেছে। সকলের কেন্দ্রবিন্দু শুধুই ঐশ্বর্য। সেখানে ছিল রোজির বাবাও। তিনি বললেন,
“আসুন। সভায় প্রবেশ করুন। আমাদের সিংহাসন যে আপনার জন্য খালি এতোগুলো বছর ধরে। সেই সিংহাসনে পুনরায় প্রা’ণ ফিরিয়ে দিন আপনি।”

ঐশ্বর্য আর কিছু বলে না। সরে এসে সিঁড়ি দিয়ে নামে। সকলে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিল ঐশ্বর্যের আগমনের অপেক্ষায়। অতঃপর তার দেখা পাওয়া মাত্র তার ওপর কালো রঙের গোলাপের অজস্র পাপড়ি বর্ষিত হলো। ঐশ্বর্য সভায় উপস্থিত হলো। সকলে মাথা নুইয়ে রাখলো তার সামনে। সভার সিংহাসনের কাছে পৌঁছুতে সিঁড়িতে পা রেখে উঠতে লাগল। তার সাহায্যের জন্য এক দাসী হাত বাড়িয়ে দিল। তা দেখে ঐশ্বর্য ক্ষুব্ধ হয়ে বলল,
“যার তার হাত ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য ধরে না।”

রাজসভার সকলে স্তব্ধ। মূহুর্তে থামে হইচই। রোজি এবং রোজির বাবা চকিতে তাকায়। ঐশ্বর্য সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। চোখেমুখে কোনো বিস্ময় নেই। ওর খেয়ালই নেই ও নিজেকে কোথায় কি বলে দাবি করেছে! ও নির্বিকার ভঙ্গিতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তখনও সকলে শান্ত। রোজির বাবা পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠলেন,
“সকলে শান্ত কেন? আনন্দ করো! আমাদের ডেভিল কুইনের আগমন হয়েছে এতো বছর পরে!”

বলেই সকলের উদ্দেশ্যে ইশারায় সবাইকে ঠিক থাকতে বলল। আবারও শুরু হলো শোরগোল, হইচই। সবাই হুড়োহুড়ি করতে লাগলো ঐশ্বর্যকে একটি পলক দেখার জন্য। রোজ তার বাবাকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
“যতই হক আমাদের রাজ্যের রাণী। আসল পরিচয় তো সে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। নিজের অস্তিত্ব যেন কিছুতেই ভুলতে পারছে না।”

“চুপ করো। কুইন শুনে নেবেন। উনার শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর।”
রোজি থামলো। অন্দরমহলে ছুটলো বাকি আয়োজনের জন্য।

অন্দরমহলে গিয়ে সবার আগে নিজের কক্ষে প্রবেশ করলো সে। কালো দেয়াল জুড়ে অদ্ভুত সব ছবির সমাহার। কোনো কোনো ছবিতে মালা। যাদের কেন্দ্র করে য’জ্ঞ করা হয়। সেখানকার কালো রঙের আসবাবপত্র পেরিয়ে জানালায় এসে দাঁড়াল সে। হাসতে থাকলো আপনমনে।
“ইতিহাসে আরো একবার একটা ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসকে নিজেদের রাজ্যের একজন করতে সফল। সেটাও আমি সফল হয়েছি। এর থেকে আনন্দের কি হতে পারে? বোকা শেখ আনন প্রেম। সেদিন রাতে কুইনকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু সেটা তোমার কাছে উনাকে রাখতে নয়। ছিনিয়ে নিতে বরাবরের মতো। তোমরা মানুষরা বড্ড বোকা হও। সেদিন রাতে কুইন ঐশ্বর্য রূপে ফেরতও এসেছিল। কিন্তু আজীবনের মতো নয়। সেদিন তো কুইন সম্পূর্ণ শক্তি রপ্ত করতে পারেনি।”

এটা বলে থামলো সে। তার ঘরের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। জানালার দিকে মেঘলা আকাশটার দিকে তাকিয়েই বলল,
“ভেতরে এসো।”

ভেতরে প্রবেশ করলো প্রহরী। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“আমাদের রাজ্যে একজন মানুষের আগমন ঘটেছে।”

কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ল রোজির। ঘাড় ফিরিয়ে প্রহরীর দিকে তাকালো। প্রহরীর এমন উত্তেজনা দেখে চিন্তাটুকু আরেকটু বাড়ল। শক্ত কন্ঠে বলল,
“মানুষ? কিভাবে? এই রাজ্যে মানুষের প্রবেশ মানে তার মৃ’ত্যু এটা তাকে বুঝিয়ে দাওনি?”

“দিয়েছিলাম। তার বুকে অ’স্ত্র ধরেছিলাম। কিন্তু সে বলেছে এই রাজ্যের রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়। শুধু একবারের জন্য।”

চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে এলো রোজির। সন্দেহি নজরে তাকালো বাহিরের দিকে। তৎক্ষনাৎ বাহিরের দিকে ঝড়ের বেগে চলে গেল। লম্বাটে বারান্দা পেরিয়ে শেষ প্রান্তের এক খোলামেলা বারান্দায় গিয়ে পৌঁছালো সে। যেখান থেকে স্পষ্ট নিচের দিকটা দেখা যায়। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল মানুষটির দিকে। রোজির পেছন পেছন এলো সেই প্রহরী। তার আগমন টের পেয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে রহস্যময় হাসি দিল সে। এবং বলল,
“যখন এতো করে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। ঢুকতে দাও। এবার ওর যা ব্যবস্থা করার আমাদের কুইন করবে। এই মানুষের থেকেই শুরু হক না কেন মৃ’ত্যু খেলার আরম্ভ!”

রাজসভায় সকলে উপস্থিত। নানারকম সুর বাজছে। বাজছে দম ফাটানো দামামা। রোজির বাবা এগিয়ে এসে বলে উঠলেন,
“এতোগুলো বছর পর! আবারও আমরা সফল হয়েছি। আমাদের সিংহাসনের অধিকারিনী আজ আমাদের সামনে। ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য! উনার অভিষেক ঘটবে এবং এই রাজ সিংহাসন এবং রাজ মুকুটের প্রাণ ফিরে পাবে।”

এসব কথাবার্তা শুনে যখন হইচই শুরু হলো। তাদের মধ্যে একজন প্রজা বলে উঠল,
“তবে কি এবার আমরা রাজত্ব করব? ধ্বং’স করতে পারব আমাদের শত্রুদের?”

এবারের উত্তরটা রোজির বাবা নয় বরং ঐশ্বর্য নিজে বলল,
“ঐশ্বর্য যেখানে রাজত্ব সেখানে। আমরা ডেভিল। কোনো দয়ামায়া নেই আমাদের মধ্যে। যেমনটা আমার পছন্দ না হলে ভ্যাম্পায়ার, মানুষ কাউকে পরোয়া না করে প্রা’ণ কেঁড়ে নেব। ঠিক তেমনটাই এই রাজ্যে এখন থেকে আমার কথা না মানলে শাস্তি একটাই হবে। মৃ’ত্যু।”

সকলে মাথা নিচু করল। ঐশ্বর্যের জয়ধ্বনি গাইলো। সকলের মনে প্রশ্ন জাগলো! কবে অভিষেক? বলাবলি করল আশেপাশে। তাদেরকে থামাতে যেই না রোজির বাবা কিছু বলতে উদ্যত হলেন তৎক্ষনাৎ হুংকার ছাড়া হলো। প্রহরীরা ভীড় সরিয়ে টেনেহিঁচড়ে আনলো একজনকে। সকলে তখন নিরব ভূমিকা পালন করে সরে সরে যাচ্ছে। শিকলের অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। ব্যক্তিটির হাতে শিকল দিয়ে বদ্ধ। ঐশ্বর্যের চোখ বর্ণের আঁখি যেন উৎসুক চাহনি নিয়ে তাকালো ব্যক্তিটির দিকে। একনাগাড়ে চেয়েই রইল। সেই পুরুষটি যখন মাথা তুলে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো। এক পলক দৃষ্টি ফেলল ঐশ্বর্যের গলা তখন শুঁকিয়ে এলো। যেন নিচের ভিত নড়ে গেল। এ কেমন মোহনীয় দৃষ্টি?

এসময় প্রবেশ ঘটে রোজির। দ্রুত ঐশ্বর্যের নিকটে এসে ধীর কন্ঠে বলে,
“কুইন এই হচ্ছে সেই মানুষ যে আপনাকে পদে পদে অবহেলা করেছে। মনে আছে তো? শেখ আনন প্রেম?”

ঐশ্বর্য শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। এবার তার দৃষ্টিতে যেন কেঁপে উঠল রাজপ্রাসাদ। কিছু মূহুর্তের জন্য সেই স্বচ্ছ সমুদ্রের পানির ন্যায় চোখ হারিয়ে অমাবস্যার আঁধার দেখা গেল তার চোখে। তখন প্রহরী ব্যক্তিটিকে আরো শক্ত করে ধরে বলে উঠল,
“কুইন, আমাদের রাজ্যে মানুষের প্রবেশ ঘটেছে। অত্যন্ত দুঃসাহস তার। আপনার সাক্ষাৎ পেতে চায়। আপনিই এর ব্যবস্থা করুন।”

এই দুঃসাহসী মানুষটির যেন কোনো খেয়াল নেই। সে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে এখনো তার সামনে থাকা সেই রঙে আবৃত নারীটির দিকে। ঝলমলে সেই লাবণ্যময়ী রূপে কালো রঙটাও যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তবে তার নেত্র দুটো চিনতে বেশ বেগ পেতে হলো প্রেমের। এ যেন সেই সৌন্দর্য যা সকলকে মোহের মাধ্যমে হ’ত্যা করবে।

ঐশ্বর্য সিঁড়ি দিয়ে একপা একপা করে নেমে আসে। তার কালো পোশাকের বর্ধিতাংশ আস্তে আস্তে সিঁড়ি ছুঁইয়ে আসছে। নিচের ভিত কেঁপে কেঁপে উঠছে তার পাদচারণে। চোখে মারা’ত্মক এক ক্রোধের আ’গুন। একটু একটু করে প্রেমের নিকটে এসে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। প্রেম ক্লান্ত কন্ঠে ধীর কন্ঠে বলে,
“ঐশ্বর্য!”

“ঐশ্বর্য নয়। ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য। আমার দেখা এতোই শখ?”

প্রেম হাসে। মাথা নাড়ায়। আগের মতোই বলে,
“তোমায় দেখতে নয় নিতে এসেছি। যাতে আজীবন দেখে যেতে পারি।”

ঐশ্বর্য কটমট করে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এতো সাধ করে নিজের মৃ’ত্যু ডেকে এনেছো তুমি সামান্য মনুষ্য! বোকা তুমি। বুঝতে পারো নি আমি আর তোমাকে প্রেম নিবেদন করব না। বরং আমাকে তাচ্ছিল্য, অপমান করবার অপরাধে গুনে গুনে মাশুল তুলব।”

“সেই অপেক্ষাতেই অনেকদিন ধরে আছি। পানিশমেন্ট আসলেই আমি চাই। তোমার হাতে তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব। শুধু আদেশ করো।”

ঐশ্বর্য আশ্চর্য হয়ে তাকালো। মানুষটির মনে সামান্য ভয় নেই? প্রেম আবারও থেমে থেমে বলল,
“তুমি যদি এই রাজ্যের রাণী হও তুমি আমার মনেরও রাণী। তাই তোমার আদেশ শিরোধার্য।”

“ভয় লাগছে না তোমার?”

প্রেম হালকা করে হাসে। নিজের শিকল বাঁধা হাত তুলে ঐশ্বর্যের হাতটুকু ধরে।
“ভয় যদি লাগতো আজ এ পর্যন্ত আসতাম না। ফিরে চলো নিজের রাজ্যে।”

তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে রোজি বলে ওঠে,
“ওর মন ভুলানো কথায় ভুলবেন না কুইন। ও তো আপনার মন কাবু করতেই এসেছে। এই নিন অ’স্ত্র। শে’ষ করুন এই মানুষটার অধ্যায়। আর সূচনা করুন ধ্বং’সাত্মক গল্পের।”

রোজি যেই না পেছন থেকে ছুঁড়ে দিল এক ধারালো তলো’য়ারের সেই মূহুর্তে কৌশলে তা ধরে নিল ঐশ্বর্য। সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে। প্রেমের মৃ’ত্যু দেখবে তারা। প্রেম এবার নির্বাক। ঐশ্বর্যের দিকে হতবিহ্বল নয়নে চেয়ে। তার প্রেয়সীর হাতেই হবে কি তার অন্তিম সমাপ্তি? প্রেম কিছু একটা ভেবে পিছিয়ে যায়। ঐশ্বর্য তা খেয়াল করে তলো’য়ার সোজা করে তাক করে ধরে বলে,
“ভয় পাচ্ছো? প্রেম বেরিয়ে গেছে না?”

প্রেমও মুচকি হেঁসে মাথা দুলায়। দুহাত শিকল ছড়িয়ে চিৎকার করে সকলের সামনে বলে ওঠে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি ঐশ্বর্য। ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।”

ঐশ্বর্য চকিতে তাকায়। তারপরও কর্ণকুহরে বাজতে থাকে রোজির কথা। রোজি বারংবার বলতে থাকে,
“এই মানুষটার জন্য আপনাকে অশ্রু ফেলতে হয়েছে। তবুও কি এর শাস্তি হবেনা?”

তলো’য়ার নিয়ে এগিয়ে যায় ঐশ্বর্য। তাক করে প্রেমের বুকে। প্রেম চুপচাপ দেখতে থাকে ঐশ্বর্যের কর্মকান্ড। সেও আজ দেখতে চায়। ঐশ্বর্য আচমকা বিদ্যুতের বেগে ঘুরে গিয়ে প্রেমের পেছনে দাঁড়িয়ে তার ঘাড় চেপে ধরে গলার সামনে তলো’য়ার ধরে। শক্ত গলায় বলে,
“ভয় লাগছে এবার? মৃ’ত্যুভয়?”

প্রেম সে অবস্থাতেও হাসে।
“মৃ’ত্যু যদি এতো ভালোবাসাময় হয় তবে ভয় আসবে কোত্থেকে রাজকন্যা?”

ঐশ্বর্যকে এবার পাগল পাগল লাগে। তলোয়া’র সরিয়ে প্রেমের সামনে এসে আঙ্গুল উঠিয়ে বলে,
“এই লোকটা তো পাগল একেবারে। একটা উন্মাদ!”

“তোমার ভালোবাসায় উন্মাদ হয়ে গেছি। ভুলে গেছো?”
পাগলের মতোই হেঁসে বলে উঠল প্রেম। শিকলযুক্ত হাতটা তুলে ঐশ্বর্যের কোমড় টেনে নিতেই সকলের চক্ষু চড়কগাছ। নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল ঐশ্বর্যকে। ঐশ্বর্য যেন মাথা ঘুরে পড়েই যাবে। তার এখনো তলো’য়ার দিয়ে উশখুশ করছে। প্রেমের এমন পাগলামি দেখে সকলে স্তব্ধ! বাকরুদ্ধ! ঐশ্বর্য তেতে বলে উঠল,
“তোমাকে আমি হ’ত্যা করব! সামান্য মানুষ! আমাকে স্পর্শ করার স্পর্ধা হয় কি করে তোমার?”

“অনেকদিন এই শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শ তোমার মোলায়েম ত্বকে পড়ে না তাই না?”

ভ্রু উঁচিয়ে বলল প্রেম। ঐশ্বর্যের হাত থেকে তলো’য়ার টুকু পড়ে যায় সেই মূহুর্তে। কন্ঠস্বর কাঁপতে থাকে। কিছু বলার আগ মূহুর্তে ঠিক তার ডান গালে পড়ল প্রেমের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ। পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল। বোকা চোখে তাকিয়ে রইল ডেভিল কুইন!

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৭

এবার যেন সকলের চোখ খুলে নিচে গড়াগড়ি খাবে। কি লজ্জা! সকল প্রজা, দাসদাসীর সামনে কিনা তাদের রাণীকে…? নাহ এটা মানা যায় না। কিন্তু কেউ কিছু বলতেও তো পারছে না। অনেকে নিজের চোখ ঢেকে রেখেছে। তার সঙ্গে কানাকানি শুরু হয়েছে। রোজি হতবিহ্বল! এই সাধারণ মানুষের এতো বড় সাহস? অন্যদিকে প্রেমের বাঁধনে বেঁধে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঐশ্বর্য। যেন সে পাথরের ন্যায় এক মূর্তি। অনুভূতি বলতে সকলের সামনে শুধু লজ্জায় আসছে তার। অন্য কারোর দিকে চোখ মেলানোর মতো দুঃসাহস পাচ্ছে না সে। এই মানুষটার এতো দুঃসাহসিক কাজকর্ম দেখে ঐশ্বর্যের মাথা ভনভন করে ঘুরছে! এখন তার কি বলা উচিত? অথবা কি করাই বা উচিত? হঠাৎ নিজের হৃৎস্পন্দনের উপস্থিতি গভীর ভাবে উপলব্ধি করে ঐশ্বর্য। তা যেন লাফিয়ে এই মানুষটার মাঝে ঢুকে পড়বে। সেই মূহুর্তেই চোখজোড়ায় ভেসে ওঠে আবছা কিছু স্মৃতি। একটা জায়গায় অনেক কয়েকজন মানুষের অবয়ব ভেসে ওঠে। এতো মানুষের মধ্যে একটা পুরুষ আর একটা মহিলার এমনই কাছাকাছি আসার কিছু অস্পষ্ট দৃশ্য। চেহারা মস্তিষ্কে আর আসেনা। এসব দেখে তাল সামলাতে পারে না। পড়ে যেতে নেয় নিচে। প্রেমের হাতের বাঁধন তাকে বেঁধে রাখে। শক্ত করে ধরে রাখে। ঐশ্বর্য চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে। তার কর্ণকুহরে ভেসে আসে প্রেমের শীতল কন্ঠে।
“এখনো নিজেকে সামলাতে এই সাধারণ মানুষের প্রয়োজন হয় তোমার মহারাণী! এতো এতো প্রজা সামলাবে কি হতে?”

নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠে সামলে নেয় নিজেকে রোজি। অতঃপর ক্রোধে একাকার হয়ে ওঠে সে। বিড়বিড় করে বলে,
“এই প্রেমকে সহজভাবে নিয়ে আমি ভুল করেছি। এ ততটা সহজ নয় যতটা ওকে দেখায়।”

রোজি উদ্ভট শব্দ করে উঠল। সৈন্যদের ইশারা করে। তৎক্ষনাৎ সৈন্যরা তেড়ে যায় প্রেম আর ঐশ্বর্যের দিকে। তারপরেই প্রেমকে দ্রুত টেনে নিয়ে ছিটকে ফেলে নেয়। ঐশ্বর্যও টাল সামলাতে না পেরে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয়। সৈন্যদের মধ্যে একজন বলে ওঠে,
“কুইন, আমাদের সকলের সামনে আপনার সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেছে এই সামান্য মানুষ। এখুনি ওর মৃ’ত্যুর ব্যবস্থা করা হবে। আপনার হাতে ম’রেনি তো কি হয়েছে? আমাদের হাতে মর’বে।”

আর বিলম্ব না করেই সকলের সামনে দ্রুত পড়ে থাকা তলো’য়ারটা তুলে নিলো সেই সৈন্য। হিং’স্র দৃষ্টি প্রেমের দিকে নিক্ষেপ করল। তার দিকে এগিয়ে গেল। ধারা’লো তলো’য়ার ভালো করে হাতে ধরে নিল। ঐশ্বর্যের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এলো। নিশ্বাস ওঠানামা করতে থাকল। ভেতরে কেন যেন চাপা আর্তনাদ সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের পরনে থাকা পোশাক খামচে ধরল। আর্তনাদ চাপতে না পেরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
“থামো।”

সকলে চাইছিল প্রেমের মৃ’ত্যু হক। সকলের দৃষ্টি ছিল উৎসুক। ঐশ্বর্যের চিৎকারে তার উপর নজর পড়ল সকলের। আসলে তাদের কুইন কি চাইছে কিছুই তারা বুঝতে পারছে না। তবে রোজি হয়ত কিছুটা বুঝেছে। সে ছুটে এলো ঐশ্বর্যের কাছে। হাঁপিয়ে বলল,
“থামতে কেন বলছেন কুইন? ও আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করল তার কি শাস্তি হবেনা? এমনিতেই আমাদের রাজ্যে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেছে। তার ওপর আপনার সঙ্গে এমন অসভ্য আচরণ!”

ঐশ্বর্য কিছু একটা বলতে উদ্যত হতেই প্রেম মেঝেতে পড়ে থেকে বলে উঠল,
“আশ্চর্য! আমি আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করলে সেটা অশ্লীল আচরণ হয় কি করে? আমি তো তোমাকে টাচ করিনি রোজি। ঐশ্বর্য আমার স্ত্রী! ওর সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। কেন? তোমাদের ডেভিল কিংডমে কি বিয়ের পরেও স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকে নাকি?”

ঐশ্বর্য কপালের টনক নড়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে প্রেমের দিকে তাকায়। ‘স্ত্রী’ শব্দটি শুনতেই আবারও বাড়ে হৃৎস্পন্দন। এই শব্দটির মধ্যে কি এমন রয়েছে? আর লোকটা তাকে তার স্ত্রী বলে কেন দাবি করছে? আশ্চর্য হয় ঐশ্বর্য। এমনটা তো তার জানা ছিল না? আধো আধো গলায় বলে,
“স্ত্রী?”

প্রেমকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না রোজি।
“এমন মিথ্যে কথা বিশ্বাস করবেন না কুইন। এই মানুষ আসার পর থেকে আপনাকে ভুলভাল কথা দিয়ে ভুলিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর এমন অশ্লীলতা!”

ঐশ্বর্য বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকলো। রোজি যেই বলল,
“তোমরা চেয়ে আছো কি? আ’ঘাত করো সেই তলো’য়ার দিয়ে। ছিন্ন’ভিন্ন করো দ্রুত!”

ঐশ্বর্য আবারও চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“কি হচ্ছে টা কি? আমি এ রাজ্যের রাণী সবার মতে তাই কিনা?”

সৈন্যগুলো মাথা নাড়ালো। আবার ঐশ্বর্য শক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
“তবে আমার অনুমতি ছাড়াই একজনকে হ’ত্যা করার কথা ভাবো কি করে তোমরা?”

রোজি বিষয়টাকে ঘুরানোর চেষ্টা করে। আমতা আমতা করে বলে,
“কিন্তু কুইন…”

“আমি কি বলেছি ওকে আ’ঘাত করতে?”

ঐশ্বর্যের কটমটে কন্ঠ শুনে মাথা নাড়ায় রোজি। ঐশ্বর্য আগের মতোই বলে ওঠে,
“তবে? তুমি অনুমতি দেওয়ার কে রোজি?”

রোজি মাথা নুইয়ে ফেলে। ঐশ্বর্য এবার তার প্রগাঢ় কালো দৃষ্টি রাখে সৈন্যদের ওপর। দৃষ্টিটা বজায় রেখে এগিয়ে যায় তলো’য়ার হাতে ধরে রাখা সৈন্যের হাত থেকে তলো’য়ার ছো মেরে নিয়ে বলল,
“আমার অ’স্ত্র দ্বিতীয়বার স্পর্শ করলে আমি হাত কে’টে রেখে দেব।”

সৈন্যটিও এবার ঐশ্বর্যের পায়ে পড়ে। ঐশ্বর্য সরে দাঁড়ায়। প্রেম একনাগাড়ে ঐশ্বর্যের দিকে পলকহীন নজরে চেয়ে। মেয়েটা আসলে কি চাইছে সেটা বুঝতে পারছে না প্রেম। ঐশ্বর্য একনজর প্রেমের দিকে তাকিয়েই নজর সরিয়ে নিল। রোজি তবুও সাহস করে এগিয়ে কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য তা বুঝে নিয়ে বলল,
“এই মানুষের শাস্তি হবে। আমি ওকে শাস্তি দেব নিজহাতে। তবে আজ নয়। একটু একটু করে ধ্বং’স করব। বন্দি করে এই মানুষটাকে। খাবার, পানি কিছু যেন ওর কাছে পৌঁছায়। সেই সাথে কালকুট কারাগারে নিক্ষেপ করো। কোনো আলোও যাতে ওকে ছুঁতে পারে।”

প্রেম ছাড়া সকলের মুখে হাসির রেশ দেখা গেল। সকলে এটাই চেয়েছিল। একটু আগে সকলে ভেবেছিলো এই প্রেমকে হয়ত সে চিনতে পেরেছে। হয়ত ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য নিজের আগের রূপে প্রেমকে দেখে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু ঐশ্বর্য তা মিথ্যে প্রমাণ করে দিল।

সৈন্যগুলো প্রেমকে টেনে দাঁড় করালো। টানতে টানতে ঐশ্বর্যের সামনে আনলো। ঐশ্বর্যের চোখজোড়া হঠাৎই প্রেমের চোখে পড়ল। থমকালো ঐশ্বর্য। একটা মানুষের চোখজোড়া কি সত্যিই এতোটা সুন্দর হয়? সত্যিই এতো ভাষা প্রকাশ করতে পারে? ঐশ্বর্য ঢক গিলে চোখ সরিয়ে ফেলতেই প্রেম হেঁসে উঠে বলল,
“ডেভিল কুইনও ভয় পায় বুঝি?”

তেতে উঠে আবারও তাকালো ঐশ্বর্য। আর বলল,
“কিসের ভয়?”

“আমার চোখে হারাবার ভয়। আমার ভালোবাসায় হারাবার ভয়।”

ঐশ্বর্য মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে কড়া গলায় জবাব দিল।
“তোমার মতো সামান্য একটা মনুষ্যকে ভয় পাওয়ার কোনো মানেই হয় না। আমি ডেভিল কুইন।”

“তাহলে আজকে আমাকে মার’লে না কেন?”

ঐশ্বর্য আগের মতোই অকপটে জবাব দিল,
“কারণ আমি তোমাকে একটু একটু করে শে’ষ করতে চাই। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাই। আমাকে অবহেলা করার শোধ তুলতে চাই। যেখানে যাচ্ছো সেখানে না পাবে খাবার আর না পাবে পানি। ভয় লাগছে না তোমার? এখনো হাসছো নির্লজ্জের মতো?”

প্রেম হেসেই জবাব দিল,
“হ্যাঁ হাসছি। পানি, খাবার কিছু লাগবে না। রাণী সাহেবা? শুধু আপনি এসে মাঝে মাঝে আমায় দেখা দিয়ে যাবেন। আমার চোখ জুড়ালেই হলো।”

ঐশ্বর্য চমকে তাকায়। তখনি তাকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। ঐশ্বর্য তাকিয়েই থাকে। প্রেম ঘাড় ফিরিয়ে তার বাকহীন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না ঐশ্বর্য তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।

কালকুট কারাগার। আলো অবধি পৌঁছায় না। চারিদিক অন্ধকার। তবে আশেপাশে পাহারাদার থাকে বলে রয়েছে আলো। আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয় সবসময়। প্রেমকে রাখা হয়েছে সেখানে। কারাগারের এক কোণায় হাঁটু ভাঁজ করে চোখ বুঁজে বসে আছে প্রেম। বুঝতেই পারছে বা কারাগারে থেকে কি করে ঐশ্বর্যকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনবে! আর কি করে ফিরিয়ে আনবে তাও জানা নেই। জানা থাকার কথাও নয়। কারণ এটা ডেভিলদের মধ্যে প্রধান কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। কথাটা মাধুর্য বলেছিল। আর প্রেম এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে ঐশ্বর্যকে আগের মতো করতে যা যা করতে হবে তার ব্যাপারে রোজি জানে। প্রেমের দুহাতে এবং দুপায়েও শিকল। পরনে থাকা শার্ট এবং প্যান্টও ধুলোয় মাখামাখি। একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা! যখন তার নাম কেউ উচ্চারণ করল তখন মাথা তুলে তাকায় প্রেম। আগুনের আলোয় দৃশ্যমান এক মুখ। কারাগারের ঠিক অন্যপাশে রোজি। মুখে বাঁকা হাসি। গা জ্বলে ওঠে প্রেমের। তবে কিছু বলে না। রোজি হাসি মুখ বজায় রেখে বলে ওঠে,
“কি দুঃখ! কি হতাশা! তাই না? কি ভেবেছিলে? প্রথমবার যখন কুইন নিজের রূপ করেছিল ওই অমাবস্যার রাতে সেই প্রথমবার যখন তুমি ছুঁয়ে তাকে আগের মতো বানিয়েছিলে। আবারও ঠিক কাজ করে ওকে ঠিক করে দেবে? এতোই সোজা নাকি?”

প্রেম তেজি সুরে বলে,
“যদি ব্যাপারটা সোজা হতো তাহলে তো হতোই। তোমরা যেমন এতো বছর তপস্যা করে ডেভিল কুইন পেয়েছো তখন বিষয়টা যে সোজা নয় আমি জানি।”

“তোমার বুকেরপাটা আছে বলতে হবে। সাহস করে তো এতোদূর অবধি এসেছো। কিন্তু মৃ’ত্যু কিছুই পাবে না।”

প্রেম আগের মতোই জবাব দেয়,
“কি পাব আর কি পাব না সেটা ভবিষ্যত বলবে। একটা কথা হয়ত খেয়াল করো নি। ঐশ্বর্য আমাকে আ’ঘাত করতে পারেনি। ও থেমে গেছে। অন্যকেও আঘা’ত করতে দেয়নি।”

রোজি এবার প্রেমের কথার মানে বুঝে চোখ ছলকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
“কি বলতে চাইছো? তোমার জন্য এখনো উনার মনে কোনো বিশেষ অনুভূতি অবশিষ্ট রয়েছে? তাহলে বলব তুমি বোকা কিছুই নও। ডেভিলদের মনে এসব অনুভূতি থাকেনা। ভালোবাসা, প্রেম এসব ডেভিলদের জন্য নয়। এই রাজ্যে বিয়ে হয় শুধু এবং শুধুমাত্র বংশবৃদ্ধি করার জন্য। আমাদের পক্ষ শক্তিশালী করার জন্য। কেউ কারোর পরোয়া করে না। কেউ কাউকে আ’ঘাত করতে দুইবার ভাবেনা। আমি নিজেই আমার ভাইকে হ’ত্যা করেছি। আমার বাবা আমার মাকে মে’রে ফেলেছে। এটাই আমাদের নিয়ম। নিষ্ঠুরতা! আর তোমাকে তো একটু একটু করে মার’তে চাইছে কুইন। তাই এই ব্যবস্থা! এর বেশি কিছু ভেবো না।”

প্রেম এবার উঠে দাঁড়ায়। রোজির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
“তুমি ভুলে যাচ্ছো ঐশ্বর্য তোমার রাণী হবার আগে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। সেই সাথে ও আমার স্ত্রী! আমাদের মানুষদের পৃথিবীতে একটা কথা খুব প্রচলিত! সেটা হচ্ছে, ভালোবেসেছিলাম বলে কোনো শব্দ নেই। হয় সে আমায় এখনো ভালোবাসে নয়ত সে কখনোই আমায় ভালোবাসেনি। আর এই কথাগুলো আগে না মানলেই এখন খুব মানি। আর এটাও জানি ঐশ্বর্যের ওই স্বচ্ছ চোখে ওই ভালোবাসার জোয়ার মিথ্যে নয়। শুধু তোমাদের শয়’তানি শক্তির স্তরে ঢাকা পড়েছে। আর তার থেকে বের হওয়ার উপায়ও আছে। সেটা তোমার জানা তাই না?”

চোখ দুটো সরু করে তাকায় রোজি। প্রেমকে সে যতটা বোকা ভেবেছে ততটা বোকা সে নয়। অনেকটা চালাক। তবে মনে মনে ভেবে নেয় প্রেমের কথায় দুর্বল বা ভয় পাওয়া যাবে না। গলা ঝেড়ে বলে ওঠে,
“জানা আছে। তুমি কখনোই জানবে না। আর মাত্র ৪ দিন বাকি কুইনের অভিষেকের। আর সেদিনই হবে তোমার অন্তিম সমাপ্তি।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। আর দুইদিন গল্প না দেওয়ার কারণ আমার কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ব্যক্তিগত জীবনে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। লিখতে মন দিতে পারছি না। তার জন্য দুঃখিত।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here