প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৪২+৪৩

0
251

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪২

উঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐশ্বর্য। আগের মতো মোহময় রূপ বদলে এক চোখ ঝ’লসানো রূপ ধারণ করেছে সে। কুচকুচে কালো নখ। চোখটা সম্পূর্ণভাবে নিকষ কালো। সেই কালো নেত্রে যেন আছে সমস্ত প্রলয়। গায়ের সব রগ কালো হয়ে বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার ঐশ্বর্যময় রূপখানি। একসময় মাধুর্য ঐশ্বর্যের এই রূপটার সাথে মিলে নাম রেখেছিল ঐশ্বর্য। যাকে দেখলে যেকোনো মানুষ দ্বিতীয় বার চোখ ফেরাতে বাধ্য। সেই রূপটা যেন ঐশ্বর্যকে বিশ্রী লাগতে দিচ্ছেই না। শুধু ভয়া’নক গা শিউরে ওঠা রূপবতী লাগছে তাকে।

বার বার নিজের হাত-পা দেখে নিচ্ছে ঐশ্বর্য। মুখে হাত বুলাচ্ছে। মস্তিষ্ক তার শূন্য। মাথা ঝিমঝিম করছে। গা ভর্তি র’ক্ত! তবে নেই কোনো আ’ঘাতের চিহ্ন। সেইসব অদ্ভুত রশ্মি ঐশ্বর্যের মাঝে প্রবেশ করবার পরপরই মুছে গেছে সেই আ’ঘাতের স্থান। নিজের মাথা চেপে ধরতেই রোজি সহ সকলে তার সামনে মাথা ঝুঁকে হাঁটু গেঁড়ে বসল। আর একসঙ্গে বলল,
“জয় হক আমাদের ডেভিল কুইন ঐশ্বর্যের । আদেশ করুন। আপনার আদেশ আমাদের জন্য শিরোধার্য!”

নিজের মাথা থেকে চমকে হাত সরায় ঐশ্বর্য। ঢুলতে ঢুলতে বলে,
“ডেভিল কুইন? কে ডেভিল কুইন? আমি তো তোমাদের চিনি না।”

“অবশ্যই চেনেন। সামান্য আঘা’তে আপনি কিছু সময়ের জন্য আপনার স্মৃতিশক্তির ক্ষয় হয়েছে। আপনি আমাদের ডেভিল কিংডমের কুইন।”

রোজির কথায় ঐশ্বর্য তেতে উঠল। বেশ তেজ নিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠল,
“আঘা’ত? কে করেছে আমায় আঘা’ত? কার বড় স্পর্ধা?”

রোজি তার বাকি সঙ্গীদের দিকে তাকায়। হালকা হাসে তারা। কারণ তারা সফল হয়েছে। আর সফলতার মূল লক্ষ্মণ হলো ঐশ্বর্যের ক্রোধ। কথায় কথায় সে রাগবে। সকলের ধ্বং’স করতে উদ্যত হবে। আঘা’ত হানবে। এটাই তো সবথেকে বড় লক্ষ্মণ। আর কি লাগে? রোজি উঠে দাঁড়ালো। আর বলল,
“করেছে একটা সামান্য মানুষ। আপনার মতো একটা ক্ষমতাবান রাণীকে আঘা’ত করেছে। আপনি শুধু তার কাছে প্রেম নিবেদন করেছিলেন। আর ওই সামান্য মানুষ আপনাকে অবহেলা করেছে। কষ্ট দিয়েছে, যন্ত্রণা দিয়েছে। এর শো’ধ আপনি নেবেন না কুইন?”

“নেব না মানে? তিলে তিলে নেব। কিন্তু আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। সব কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগছে। আমি যদি সত্যিই ডেভিল কুইন হয়ে থাকি তবে আমি কি করে ওসব অবহেলা সহ্য করলাম। তখনি তো শে’ষ করে দেওয়া উচিত ছিল ওই লোককে।”

বেশ ভাবুক হয়ে বলল ঐশ্বর্য। জবাবে তড়িঘড়ি করে রোজি বলে উঠল,
“কারণ আপনি তখন ডেভিল কুইন ছিলেন না। আজ মহা অমাবস্যার রাত। আজই ছিল আপনার প্রথম রূপ প্রকাশের দিন। ভ্যাম্পায়ার কিংডম মানে আমাদের চিরশ’ত্রু আপনাকে এতোদিন নিজেদের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল। যাতে আপনি নিজের শক্তি না পান।”

ঐশ্বর্য চকিতে তাকায়। ভ্যাম্পায়ার শব্দটা শুনে মাথা ঘুরে ওঠে। অস্পষ্ট কোনো শব্দ কর্ণকুহরে বাজতে থাকে। সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশ্বর্য হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,
“শে’ষ করে দেব আমি। ডেভিল কুইন ঐশ্বর্য আমি। ধ্বং’স করব সব। রাজত্ব করবে ডেভিলরা। বিনা’শ হবে মনুষ্য জাতি। শে’ষ হবে ভ্যাম্পায়ার। সবার আগে তার সূচনা হবে সেই ব্যক্তির থেকে যে আমাকে অবহেলা করেছে। কি নাম তার?”

রোজি আর দেরি করে না। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠে,
“প্রেম। শেখ আনন প্রেম।”

সমুদ্রের মেইন পয়েন্ট থেকে শুরু করে পুরো জায়গা খুঁজে নেওয়া শেষ প্রেমের। সকালে যে লেকের ব্রিজে বসে ছিল সেখানেও খুঁজেছে। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ফিরেছে রিসোর্টে। হাঁপিয়ে গেছে সে। মনে মনে মূহুর্তে মূহুর্তে দোষারোপ করে চলেছে। নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় সে। কপাল থেকে চুল সরিয়ে উঠিয়ে নেয় উপরে। ঘর্মাক্ত কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখেমুখে অস্থিরতার ছাপ! বিচলিত প্রতিটি পায়ের ধাপ। চিন্তিত সুরে বলল,
“হোয়ার আর ইউ মাই এ্যাংরি বার্ড? আই নো, আমি খুব বেশি রুড বিহেব করেছি তোমার সাথে। এতোটা করা উচিত হয়নি আমার। জানি না আমি এতোটা রুক্ষ হলাম কি করে? তোমাকে খুঁজে না পেলে আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাবো!”

কথাগুলো বিরবির করতে করতেই তার ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। ব্যস্ততার সাথে বের করে পকেট থেকে ফোনটা। মাধুর্য ফোন করেছে। অবশ্য ফোনটা সকাল থেকেই করছে। প্রেম রিসিভ করেনি। মাধুর্যের ওপরেও রাগ ছিল তার। হয়ত সত্যিটা চেপে যাওয়ার একটা ক্ষোভ প্রবেশ করেছিল তার মধ্যে। বর্তমানে ইচ্ছে করল ফোনটা ধরতে প্রেমের। শান্ত হয়েছে তার মন ও মেজাজ। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বিচলিত কন্ঠ ভেসে এলো।
“ঐশ্বর্য! ঐশ্বর্য আমার মেয়ে ঠিক আছে তো?”

প্রেম নিরব। অনুতপ্ত সে। কিছু বলার সাহস নেই এই মূহুর্তে! কোন মুখে বলবে ঐশ্বর্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
“কথা বলছো না কেন প্রেম? সারাদিন কল করে গেছি তোমায়। রিসিভ করো নি কেন? ওদিকে সব ঠিক আছে তো? প্লিজ একটা বার আমার ঐশ্বর্যের খবর দাও। আর তোমরা ঠিক আছো কিনা সেটা বলো নয়ত আমি শান্তি পাব না।”

“সব ঠিকই আছে বাট…”

প্রেমকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে মাধুর্য আবার বলে ওঠে,
“যাক শান্তি লাগছে। শোনো, আজ রাতে ওকে কিছুতেই কাজ ছাড়া করবে না। প্রতিটা মূহুর্ত যেন তোমার সঙ্গে থাকে। ওকে এক সেকেন্ডের জন্যেও বাহিরে যেতে দিও না। রুমেই থাকো আজ রাতটা। আজ মহা অমাবস্যার রাত। এই রাতটা ভীষণ ভয়া’নক!”

ভ্রু কুঁচকে যায় প্রেমের। কপালে ভাঁজ পড়ে। নিরস গলায় জিজ্ঞেস করে,
“কেন?”

“ঐশ্বর্য কি তোমায় একদম কোনোকিছু বলেনি? ওর কিছু সত্যি। আমাদের কিছু গোপনীয় সত্যি। তোমার হয়ত তা বিয়ের আগেই জানা উচিত ছিল। কিন্তু আমার মেয়ের প্রা’ণের সংশয়ে বলতে পারিনি। আই এম সরি।”

“আপনি কি আপনাদের পরিচয়ের কথা বলতে চাইছেন? ঐশ্বর্য যে একজন মানুষ নয়, ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। সেটা কি জানাতে চাইছেন?”

মাধুর্য সন্দিহান হয়ে বলে,
“তার মানে ঐশ্বর্য তোমায় সব কিছু বলে দিয়েছে? এরপরেও তুমি ওকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানবে তো?”

প্রেম চোখ বুঁজে ফেলে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আর কানে বাজতে থাকে সেইসব আক্রম’ণাত্মক কথা যা প্রেম নিজে ঐশ্বর্যকে বলেছিল তার আসল অস্তিত্ব জানার পর। কি তিক্ততা ছিল সেসব কথায়! ঐশ্বর্য কেঁদে উঠেছিল এসব শোনার পর। প্রেম তখন তোয়াক্কা করেনি। প্রেমের ছোট লাগছে নিজেকে। প্রেমের নিস্তব্ধতা দেখে মাধুর্য আবারও প্রশ্ন করল,
“কি হলো? মানবে না? দেখো, আমি লজ্জিত। আমি দুঃখিত। তোমাকে হয়তো আমি ঠকিয়েছি। তার কষ্ট আমার মেয়েকে দিও না। আমরা মানুষ নই ঠিকই। কিন্তু মানুষের মতোই একটা হৃদয়ের অস্তিত্ব আছে আমাদের মাঝে। সেই হৃদয়ের কার্যক্ষমতা নেই ঠিকই তবে আমরা যেই নিস্তব্ধ হৃদয়ে যাকে জায়গা দিই সে আজীবন আমাদের অভ্যন্তরে রয়ে যায়।”

মাধুর্য একটু থামে। আবারও বলতে শুরু করে,
“ঐশ্বর্য জন্মের পর থেকে কারো তোয়াক্কা করেনি। ও ভ্যাম্পায়ার হলেও আমাদের থেকে আলাদা ছিল। নিজের অস্তিত্ব নিজে ঘৃণা করতো। মনে হয়েছিল তাকে কখনো আমি কোমল নারী হিসেবে দেখতে পারব না। কিন্তু তুমি ওর জীবনে এসে সবটা পাল্টে দিলে। যেই মেয়ে ওয়েস্টার্ন ছাড়া কিছু পছন্দ করতো না সেই মেয়ে তোমার জন্য শাড়ি পড়া শিখল। যেই মেয়ে কখনো কারো সামনে মাথা নিচু করতো না। যে কথায় কথায় সকলের মৃ’ত্যু ডেকে আনতো সেই মেয়ের মনে ভালোবাসার তৃষ্ণা জাগিয়ে দিলে। যাকে আমি জন্মের পর কখনো কাঁদতে দেখিনি তার চোখে তোমার জন্য অশ্রু দেখেছি। ওর চাহিদা শুধুই তুমি।”

প্রেমের কন্ঠস্বর কাঁপছে। বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। অবিশ্বাস্য লাগছে। অদ্ভুত রাজকন্যার ভালোবাসা উপলব্ধি করেছে। শুধু তার ভালোবাসা পেতে যেই রাজকন্যা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। আর প্রেম কি করেছে? শুধুই অবহেলা? এতো সেই রূপবতী রাজকন্যার কাম্য নয়। প্রেমের নয়ন দুটোতে অশ্রু চলে এলো আপনাআপনি। ঢক গিলে নিল তাড়াতাড়ি। ফোন কেটে দেওয়ার আগে সে শুনতে পেলো,
“আজ রাতটা ওর জন্য অনেক অভি’শপ্ত। ডেভিলরা ওর পিছু করছে। ওর কোনো ক্ষতি করে দেবে। ওকে…”

প্রেম ফট করেই কেটে দিল। এসব কথা তার আর সহ্য যে হচ্ছিল না। ভেতরটা যেন পুড়ে যাচ্ছিল। দরজায় কিছুক্ষণ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে রুমের দরজার লক খুলে ঘরে প্রবেশ করল প্রেম। মনটা অস্থির অস্থির করছে। যেন কিছু একটা নেই। বুকটা ফাঁকা লাগছে ভীষণ! রুমের দরজা মাথা নিচু করে লাগিয়ে দিতেই কিছুর শব্দে ফট করে পিছু ফিরে তাকালো প্রেম। ল্যাম্পশিটের পাশের সিঙ্গেল সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকা এক স্পষ্ট অবয়ব চোখে ভেসে উঠল তার। ল্যাম্পশিট একবার অন করছে আর একবার অফ করছে! ক্লান্ত পায়ে একপা একপা করে এগিয়ে এলো প্রেম। মূহুর্তের মাঝেই সেই অবয়ব ঝট করে তার নিকটে এসে তার টিশার্টের কলার ধরে চেপে ধরে তাকে ধাক্কিয়ে দেয়ালের সাথে জোরে ঠেকিয়ে ধরল। আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল হলো প্রেম। বড় বড় চোখে চাইলো সামনে থাকা সেই অবয়বের দিকে। অবয়ব এখন লাল রঙের সফট লাইটের আলোতে বেশ বোঝা যাচ্ছে। মুখটা হয়ে উঠেছে দৃশ্যমান। ল্যাম্পশিটের আলোয় আরো ভালোভাবে ফুটে উঠেছে মুখশ্রী। অতি পরিচিত প্রেমের! তারই প্রেয়সী। প্রেমের যেন তার প্রাণ ফিরে পেলো। যেন তার শুঁকিয়ে চৌচির হয়ে যাওয়া হৃদয়ে কেউ পানি ঢেলে দিলো! অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে থাকতেই ঐশ্বর্যের অদ্ভুত রূপ দেখে ভ্রু কুটি কুঁচকে গেল প্রেমের। কালো চোখজোড়া দেখে শিউরে উঠল। যেন সকল আঁধার জমা হয়েছে তার চোখেই। চোখে শুধু হিং’স্রতা। মুখচোখের রগ ফুলে উঠে কেমন যেন হয়ে গেছে। এমন লাগছে কেন?

ঐশ্বর্যের গালে আলতো রাখে প্রেম। কি হয়েছে তার? ঐশ্বর্যের এমন রূপ দেখে যেকোনো মানুষ দূরে ছিটকে যাবে। পালিয়ে যাবে। কিন্তু প্রেমের ভয় কেন যেন লাগছে না। ভয় লাগছে তবে অন্য কারণে। মাধুর্য বলেছিল এই রাতটা ঐশ্বর্যের জন্য ভয়ংক’র, অভিশ’প্ত। তবে কি ডেভিলরাই তার কিছু করে বসলো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকালো প্রেম। ঐশ্বর্যকে পুনরায় ফিরে পাবার আনন্দ, মাধুর্যের বর্ণানুযায়ী ঐশ্বর্যের সীমাহীন ভালোবাসা এবং ঐশ্বর্যের ক্ষতির ভয়। সবকিছুর সংমিশ্রণে প্রেমের কান্না পাচ্ছে।

অন্যদিকে ঐশ্বর্যের চোখে ও মনে শুধু হিং’স্রতা এবং প্রতিশোধের স্পৃহায় ভেতরে পুড়ছে। সামনের মানুষটার চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ খানিকক্ষণ থমকে ছিল সে। তবে আর নয়! সে আক্র’মণের প্রস্তুতি নিল। দাঁতে দাঁত চেপে হাত তুলতেই প্রেম আচমকা তার সাথে জড়িয়ে ধরল। নিজের দুহাত দ্বারা আগলে নিল ঐশ্বর্যকে। তার ঘাড়ে বেশ কয়েকটা ঠোঁটের পরশ দিয়ে আরো খানিকটা চমকিয়ে দিল প্রেম। অনবরত ঠোঁটের স্পর্শ দিয়েই চলেছে প্রেম উম্মাদের মতো। ঐশ্বর্যের গালে, ঘাড়ে, কানে। ঐশ্বর্য নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলছে যেন। প্রতিশোধ স্পৃহা গলে যাচ্ছে। মনটা শান্ত হয়ে আসছে। তৎক্ষনাৎ প্রেমের কন্ঠস্বর তার কানে পৌঁছায়,
“কোথায় ছিলে তুমি? তোমাকে না পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কি হয়েছে তোমার ঐশ্বর্য? এ কেমন রূপ তোমার? এমন কি করে হলো? আই এম সরি! আই লাভ ইউ।”

ঐশ্বর্যের মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে। নিজের মাথা একহাতে চেপে ধরে। হারাতে থাকে তার কালো চোখের রঙ। মিলিয়ে যায় কালো রগ। জ্বলতে থাকা সেই চিহ্ন নিভতে থাকে!

চলবে…
#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৩

নীলাভ হয়ে এলো ঐশ্বর্যের নেত্রপল্লব। বুঁজে এলো দুটো চোখ। সে যেন বড়ই ক্লান্ত। তাকে জড়িয়ে আগলে রাখা মানুষটাকে দুটো হাত দিয়ে নিজেও জড়িয়ে নিল। প্রেম হালকা চমকে ওঠে। ঐশ্বর্যকে ছেড়ে দেয়। ঐশ্বর্য প্রেমের দিকে তাকায়। প্রেম কিছুটা অবাক হয়। ঐশ্বর্য আগের মতো হয়ে গেছে। একেবারে যে সমুদ্রে নীল কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি মতো থাকে ঠিক তেমনটাই হয়েছে ঐশ্বর্যের আঁখি দুটি। একটা তীব্র বাহিরের রশ্মি চিকন হয়ে তার দুটো চোখ বরাবরই পড়ছে। আবছা আলোতে বোঝা যাচ্ছে শরীরের রগ সব আগের মতো স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসেছে। ঐশ্বর্যের গালে কপালে অস্থিরভাবে স্পর্শ করে করে দেখে নেয় প্রেম। ঐশ্বর্য তাকিয়ে রইল নিরব থেকে। মাথায় যেন কিছুই আসছে না। অতঃপর প্রেম উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠল,
“থ্যাংক গড! তুমি আবার আগের মতো হয়ে গেছো। আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার কিছুক্ষণ আগের রূপ আমার হৃদয় কাঁপিয়ে তুলেছিল।”

ঐশ্বর্যের কোনোকিছুই বোধগম্য হয় না। প্রেমের কথার একটা শব্দও বুঝতে পারে না। মাথাটা ঘুরে ঘুরে উঠছে। হালকা মাথা চেপে ধরে সে। স্মরণে আসে, সে তো বাহিরে চলে গিয়েছিল। পথ হাঁটতে শুরু করেছিল কোনো অজানা উদ্দেশ্যে। হারিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারপর কি হলো? ঐশ্বর্য অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
“আমি…আমি এখানে এলাম কখন আর কীভাবে? আমি তো এখানে ছিলাম না। আমি তো চলে গিয়েছিলাম।”

“মানে? তোমার মনে নেই কিছু? তুমি চলে গিয়েছিলে আর আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল তোমায় কখনো খুঁজে পাব না। পাগল পাগল লাগছিল নিজেকে। সবজায়গায় খুঁজেও তোমায় যখন পাইনি রিসোর্টে রুমে এসে দেখি তুমি এখানে রয়েছো। তুমি তো নিজে থেকেই এখানে এসেছো। আর তোমার সেই অদ্ভুত রূপ আমি এখনো ভুলতে পারছি না।”

ঐশ্বর্য মাথায় চাপ দিয়ে সব মনে করবার চেষ্টা করে। কিন্তু পেরে ওঠে না। সবটা ঘোলাটে, ঝাপ্সা। তারপর মনে পড়ে সামনে থাকা মানুষটির কথা। মানুষটির বলা সেইসব তিক্ত ভরা কথাগুলো। সেইসব কথায় ছিল যেন প্রা’ণ কেঁড়ে নেওয়া বি’ষ। যেই বি’ষ ঐশ্বর্যের শিরায় শিরায় প্রবেশ করেছে। আর বিশেষত হৃদয় কুটিরে। সেসব মনে পড়তেই শক্ত মনের অধিকারিনী ঐশ্বর্যের চোখে অশ্রু জমে। বুক ফেটে কান্না আসে। তারপর তার খেয়ালে আসে প্রেম তাকে একহাতে জড়িয়ে অন্যহাত দিয়ে তার গালে আলতোভাবে স্পর্শ করে আছে। ঐশ্বর্য মলিন মুখে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে,
“আমার মনে পড়ছে না আমি কীভাবে এখানে ফেরত এলাম। আমি আবারও ভুল করেছি ফেরত এসে। চলে যাব। চিন্তা করবেন না। আপনার ছায়ার আশেপাশেও থাকবে না ঐশ্বর্য।”

“তুমি না থাকলে প্রেম কি করে বাঁচবে ঐশ্বর্য?”

ঐশ্বর্য ফিরে তাকায়। কান্নামাখা সুরে বলে,
“আমি থাকলে আপনি বাঁচবেন কি করে? আপনারা ভালো থাকবেন কি করে? আপনিই তো বলেছিলেন না? যে আমি যদি আপনার হয়ে থাকি তবে আপনাদের মাঝেও কোনো বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে? আক্র’মণ আমি আপনাদের উপরেও করতে পারি? আমি মানুষ নই বলে আমার প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই। যেকোনো মূহুর্তে যে কারোর প্রা’ণ নিয়ে নিতে পারি? আপনিই তো এসব বলেছিলেন। আর আপনাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্যই তো আমি চিরতরে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।”

প্রেম নিরব থাকে। ঐশ্বর্য তাকে একটা একটা করে কথা ফিরিয়ে দিচ্ছে। আসলেই প্রেম তাকে এসব বলেছিল। এখন যেন আসলেই কথাগুলো তার নিজের কাছেই বি’ষের মতো শোনাচ্ছে। ঐশ্বর্য দূরে সরে আসে। জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। ঠান্ডা বাতাস তাকে ছুঁইয়ে দিয়ে যায়। চুল দুলতে থাকে। চাঁদ এখনো মেঘে ঢাকা। অমাবস্যা আজ। তার ধারণামতে তার ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে যাবার কথা। তবে প্রেম কোন রূপের কথা বলছিল? ঐশ্বর্য ভাবুক হয়ে ওঠে। তবে কিছুই বুঝতে পারে না তবুও। সেই মূহুর্তে আগমন ঘটে শীতল এক স্পর্শের। তার কোঁকড়ানো চুল সরিয়ে সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে তার কাঁধে থুঁতনি রাখে প্রেম। দুহাত দিয়ে আঁটকে ধরে তাকে। গভীরভাবে নিজের সাথে আগলে নেয়। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“এতো অভিমান করলে হয় অভিমানিনী?”

ঐশ্বর্য জবাব দেয় না। চুপ থাকে। শুধু কর্ণগোচর অবধি আসে ঐশ্বর্যের শ্বাস নেওয়ার শব্দ। প্রেম আবারও বলে,
“কেন একা একা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে তুমি? খুব বড় হয়ে গেছো না? আমি জানি তুমি আমার থেকেও বেশি সাহসী আর ক্ষমতাবান। কিন্তু তুমি যতটুকু সময় নিখোঁজ ছিলে তুমি কি জানো, তোমার এই মি. আনস্মাইলিং অর্ধেকটা ম’রে গিয়েছিল? সে শ্বাস নেওয়া ভুলে গিয়েছিল। সে শুধু সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে খুঁজে গিয়েছে নিজের প্রেয়সীকে। আর প্রতি মূহুর্তে নিজেকে দোষারোপ করেছে তোমায় সেই তিক্ত ভরা কথাগুলো শোনাবার জন্য।”

ঐশ্বর্য যতই নিজের কান্না আটকাবার চেষ্টা করছে ততই যেন প্রেমের প্রতিটা শব্দ চারণ তার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রয়েছে সে। প্রেম ঐশ্বর্যের জবাবের অপেক্ষা করছে। তবে ঐশ্বর্য একেবারেই নিস্তব্ধ। এমন নিস্তব্ধতা দেখে ঐশ্বর্যকে নিজ দিকে ফিরিয়ে নেয় প্রেম। ঐশ্বর্য মাথা হেলিয়ে চুপ করে থাকে। তাকায় না প্রেমের দিকে। প্রেম ঐশ্বর্যের কোমল দুটো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দুটো হাঁটু গেঁড়ে ধপ করে বসে পড়ে ফ্লোরে।
“আমি সেই ব্যর্থ প্রেমিক যে নিজের প্রেয়সীকে আগলে রাখতে পারেনি। আমি সেই ব্যর্থ স্বামী যে নিজের স্ত্রীকে সেই কষ্ট দিয়েছে যেটা কিনা আগুনের পোড়ার থেকেও বেশি যন্ত্রণার। এই ব্যর্থ মানুষটাকে আর একটাবার সুযোগ দেওয়া যাবে রাজকন্যা?”

ঐশ্বর্য হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। নিঃশব্দে অশ্রুপাত করে তার চোখজোড়া দিয়ে। আবারও দূরে ছিটকে গিয়ে বলে,
“আমি তো মানুষ নই মি. আনস্মাইলিং। কি দরকার আমার সাথে প্রা’ণ সংশয় নিয়ে থাকার? নাকি আবারও আমাকে করুণা করছেন?”

প্রেম উঠে দাঁড়ায়। ফের ঐশ্বর্যের নিকটে আসে। তার বাহু আঁকড়ে ধরে চাপা সুরে বলে,
“একবার বলেছিলাম আবার বলছি। ভিনদেশের রাজকন্যা, তোমায় করুণা করবার আগে আমার হৃদয় বরাবর যেন তী’র বর্ষিত হয়। ছিন্নভিন্ন যে হয়ে যায় শেখ আনন প্রেম।”

এতোটুকু বলে থামে প্রেম। বড় একটা শ্বাস ফেলে ঐশ্বর্যের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“তুমি মানুষ হও আর না হও তা নিয়ে আমার কোনোরকম মাথাব্যথা নেই। আমি শুধুমাত্র এটাই জানি তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। তোমায় ছাড়া আমি অচল। তুমি আমার প্রাণ সংশ’য়কারী নও রাজকন্যা! তুমিই আমার প্রাণভোমরা। তুমি আমার স্বস্তি।”

ঐশ্বর্য এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে। প্রেম তাকে জড়িয়ে ধরে আবেশে। ঐশ্বর্যের মাথার চুলে চুমু খেয়ে নেয়। প্রেমের বুকে হাত রেখে ঐশ্বর্য কেঁদে কেঁদে বলে,
“বিশ্বাস করুন, আমি বিশ্বাসঘাতক নই। আমি ছলনাময়ী নই। আমি শুধু ভেবেছিলাম যে কিছু বললে হয়ত আপনি আবারও সেই দূরে সরিয়ে দেবেন। ঘৃণা করবেন। আর যা আমি সহ্য করতে পারব না। তাই আমি বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছি। আর আমি মানুষ নই তো তবে আমারও মন আছে। অনুভূতি আছে। আর আপনার প্রতি ভালোবাসা আমার যে একেবারে স্বচ্ছ। আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

প্রেম ঐশ্বর্যের মাথায় হাত বুলায়। শান্ত কন্ঠে বলে,
“তুমি মানুষ নও বলে আমি তোমায় ওসব কথা বলেছি, দূরে সরিয়ে দিয়েছি তা নয় ঐশ্বর্য। আমার তো রাগ হয়েছিল যে তুমি কেন এতোদিন আমার কাছ থেকে এতো বড় সত্যি গোপন করেছিলে। এটা আমার রাগ হয়েছিল। তোমার এই সত্য আর ইফানের মৃ’ত্যু গভীরভাবে আমার মস্তিষ্কে আঘা’ত করেছে। যা আমি মানতেই পারছিলাম না। এলোমেলো লাগছিল সব। তাই ওই বিহেভিয়ার আমি করে ফেলেছিলাম। তাই বলে তুমি চলে যাবে এভাবে? আমাকে মা’রো, ঝগড়া করো। কিন্তু এভাবে ফেলে যেও না প্লিজ।”

ঐশ্বর্য মাথা তুলে তাকায়। উৎসুক হয়ে বলে,
“আমি যে আপনার মতো একটা মানুষ নই জেনেও আপনি আমায় ভালোবাসবেন?”

ঐশ্বর্যের কপালে চুমু দিয়ে নেয় প্রেম। ঐশ্বর্য আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে। প্রেম বলে,
“ভিনদেশের রাজকন্যা! আপনাকে ছাড়া যে এই সাধারণ মানুষটা নিঃস্ব।”

ঐশ্বর্য ছলছল নয়নে তাকিয়ে হাসে। প্রেম তার দুটো হাত দিয়ে সুন্দর করে ঐশ্বর্যের দুটো চোখ থেকে অশ্রু মুছিয়ে দেয়। তারপর বলে,
“অনেক রাত হয়েছে। খিদে পায়নি তোমার? আর অনেকটা ক্লান্ত তুমি দেখেই মনে হচ্ছে। খাবার নিয়ে আসতে হবে। আর ফ্রেশও হতে হবে। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।”

ঐশ্বর্য মাথা দুলায়। সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালায়। লাইট জ্বালাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে চারিদিকে সবটা। তৎক্ষনাৎ উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে ওঠে প্রেম। দৌড়ে এগিয়ে আসে ঐশ্বর্যের দিকে। আর ধড়ফড়িয়ে বলে ওঠে,
“র’ক্ত? কোত্থেকে এলো এই র’ক্ত? ঐশ্বর্য কি হয়েছে তোমার? তোমার কোথায় আ’ঘাত লেগেছে? এতোগুলো র’ক্ত। তোমার কোথাও গভীর আ’ঘাত লেগেছে মনে হচ্ছে।”

ঐশ্বর্য নিজের দিকে তাকায়। আসলেই তো র’ক্তে পুরো ড্রেস লাল হয়ে গিয়েছে। ঐশ্বর্যেড কপালে ভাঁজ পড়ে। প্রেম অন্যদিকে বিচলিত হয়ে পড়েছে। ঐশ্বর্য বলে,
“আমার তো কোথাও কিছু হয়নি। আ’ঘাতও লাগেনি। জানি না এসব কোত্থেকে এলো! হয়ত অন্য কোনোভাবে লেগেছে।”

“এটা কি করে সম্ভব?”

“ওহ হো! আঘাত লাগলে তো টের পেতাম। যন্ত্রণা হতো! তেমন কিছুই হচ্ছেনা। চিন্তা করবেন না। আপনি যান। ফ্রেশ হয়ে নিন। তারপর আমি ফ্রেশ হবো।”

প্রেমকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠায় ঐশ্বর্য। অবশ্য সে নিজেও এখনো বুঝে উঠতে পারেনি আসলে র’ক্ত কোথা থেকে এলো আর কিভাবে এলো! রাস্তায় হাঁটতে থাকার পর কি হয়েছিল। এসব ভাবতে ভাবতে পায়চারি করতে করতে এক পর্যায়ে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়ায় সে। নিজেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ক্লান্তমাখা চোখমুখ। পোশাক র’ক্তে মাখানো। চুলগুলোও অগোছালো। হঠাৎ মনে হলো তার সামনে থাকা নিজের অবয়ব পাল্টাচ্ছে। একটু একটু পরে পাল্টে যাচ্ছে। আচমকা বদলে গেল সামনের প্রতিচ্ছবির রূপ। প্রতিচ্ছবিতেও ঐশ্বর্য তবে তার পরনে একটা শুভ্র সাদা রঙের পোশাক। যা পা ছুঁয়ে আরো নিচ অবধি নেমে গিয়েছে। মাথায় চকচক পড়েযায় ছে একটা মুকুট। মুকুটের রশ্মি যেন চারিদিকটাকে মাতিয়ে রেখেছে। মুখে কি সুন্দর প্রাণবন্ত হাসি। ঐশ্বর্য হতবিহ্বল হয়। নিজের দিকে তাকায়। আরো আশ্চর্য হয়। তার পরনে যেন কালো পোশাক। যা পা পর্যন্ত ছুঁয়েছে। হাতের চিহ্ন জ্বলে উঠছে। চারিদিকে অন্ধকার ছড়াচ্ছে। নিজের হাত-পায়ের দিকে তাকায় সে। তার হাত-পায়ের রগ হয়ে উঠেছে কালো। চকিতে আয়নার দিকে ফের তাকায়। তার প্রতিচ্ছবি অথচ হাসছে অন্যরূপে। হেঁসে প্রতিচ্ছবি বলে,
“ভুল করেছো তুমি। অনেক বড় ভুল। ভুলের মাশুল দিতে হবে তোমায়।”

ঐশ্বর্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“কে তুমি?”

“ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য। কিন্তু তুমি সে নও। সময় আছে। বেরিয়ে এসো। নয়ত সব ধ্বং’স হয়ে যাবে।”

ঐশ্বর্য আয়নায় প্রতিচ্ছবিতে হাত রাখে। আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় সেই প্রতিচ্ছবি। স্বাভাবিক হয়ে ওঠে তার অবয়ব। এমনকি তার নিজের রূপও। ঐশ্বর্য তখনও থমকে দাঁড়িয়ে থাকে।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।]

লেখিকার গ্রুপ ’ আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here