প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ৪০+৪১

0
243

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪০

ঐশ্বর্য মাথা নিচু করে ফ্লোরে পড়ে রয়েছে। মুখে কোনোরকম কথা নেই। চোখমুখ ফ্যাকাশে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে চলেছে। তার আসল রূপ এখনো অবধি জ্বলজ্বল করছে। তীক্ষ্ণ নখ মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করেও হচ্ছে না। তার সবুজ বর্ণের নয়নে চেয়ে রয়েছে সামনে ক্রোধে ফেটে পড়া প্রেমের দিকে। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়েছে ইফান রূপি এরিক। জোরে জোরে কাশছে। কাশতে কাশতে নিস্তেজ হয়ে পড়ল ফ্লোরে। আধশোয়া হয়ে পড়ল। নিজেকে দুর্বল উপস্থাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল প্রেমের সামনে। ঐশ্বর্য নড়েচড়ে না উঠে দাঁড়িয়ে হতভম্ব হয়ে রইল। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলো প্রেমের এখানে আগমন কি করে হলো? সে তো ঘুমোচ্ছিল! তবে?

একে একে সমস্ত পরিকল্পনা বুঝতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হলো ঐশ্বর্যের। প্রেমও একটু নিচু হলো। তা দেখে ঐশ্বর্যের বোধ হলো যে প্রেম তাকে ধরে দাঁড় করাবে। তবে তার ভাবনা ভুল। সে মুখোশধারী ইফানকে টেনে তুলল। অস্থির হয়ে পড়ল প্রেম।
“ইফান, তুই ঠিক আছিস? কষ্ট হচ্ছে না তো তোর? তোর গলাতে তো গভীর ক্ষ’তের সৃষ্টি হয়েছে। ইমিডিয়েট ডক্টরের কাছে যেতে হবে।”

ইফান ভয় পাওয়ার ভান করে প্রেমের উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাই, ঐশ্বর্য মানুষ না ভাই। ভাবি মানুষ না। ও ভ্যাম্পায়ার। সবাইকে মে’রে ফেলবে। সবার র’ক্ত শুষে নিতে এসেছে। আমার উপর আজ আ’ক্র’মণ করেছে। কাল তোমার উপরেও করতে পারে।”

প্রেম কিছু বলার জন্য উদ্যত হলো। তার আগেই ঝড়ের বেগে উঠে দাঁড়িয়ে ইফানকে ছিটকে দিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল ঐশ্বর্য। চিৎকার দিয়ে প্রেমের বলল,
“প্লিজ, এর কথা বিশ্বাস করবেন না। ও ইফান নয়। ও শুধু ইফানের রূপ ধরে রয়েছে। আসল ইফান…”

ইফানের হাসি মুখ দেখে থামল ঐশ্বর্য। তাদের থেকে প্রেমের দূরত্ব বেশ দূরেই। ঐশ্বর্য তাকে ঠেলে ঘরের শেষ মাথায় নিয়ে এসেছে। ইফান হিসহিসিয়ে বলল,
“আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। কিন্তু একটা ছোট্ট চালাকির পেছনে আমি ফিকে পড়ে গেছেন। আমি চেয়েছিলাম সেকারণেই আমার হাতের স্পর্শ আপনার হাতের সাথে লেগেছিল। আমি চেয়েছিলাম আপনি আমার উপস্থিতি বুঝুন। আপনি যখন হোটেলে প্রবেশ করেছেন তখন আপনার আগমন টের পেয়েছিলাম আমি। তৎক্ষণাৎ প্রেমকে ফোন করে এখানে আসতে বলেছি। বলেছিলাম, আমি খুব বড় বিপদে পড়েছি। ব্যাস…আমার কাজ এখানেই শেষ।”

আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল ঐশ্বর্য। ইফানকে আঁচড়ে ফেলে দিক ফ্লোরে। তার বুকের ওপর পা তুলে দিল সে। আর্তনাদ করে উঠল ইফান। ছুটে এলো প্রেম। ঐশ্বর্যের হাত ধরল। মিনতির কন্ঠে বলে উঠল,
“আমার ভাইয়ের প্রা’ণ তুমি নিও না। ফর গড সেক, ওকে ছেড়ে দাও। তোমার কি র’ক্ত চাই? আমার র’ক্ত শুষে নাও। আমার সামনে ইফানের প্রা’ণ যাক আমি চাই না। ও আমার ভাই হয় ঐশ্বর্য!”

ঐশ্বর্য ক্রোধে একাকার হয়ে পড়েছে। প্রেমের কথা ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না। ও একইভাবে ইফানের ওপর পা রেখে পা দিয়েই তাকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে যাচ্ছে। তা দেখে প্রেমের নিজেরও প্রা’ণ যায় যায় অবস্থা। নিজের ভাইয়ের এই দশা দেখার নয়। ঐশ্বর্যের হাত জোরে চেপে ধরে প্রেম। তাকে টেনে সরিয়ে আনতে চায়। তাতে ব্যর্থ হয় সে। উল্টে ঐশ্বর্যের হাতের নখের আঁচড়ে তার হাতের অনেকটা কেটে যায়। ছু’রির মতো ধারালো তার নখ। প্রেম মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে। সাথে সাথে ঐশ্বর্যের হুঁশ আসে। ইফানের থেকে সরে এসে নিজের মনুষ্য রূপ ধারণ করে সে। গায়েব হয় তার নখ। প্রেমের নিকটে এসে তার হাত থেকে র’ক্ত ঝরতে দেখে ঐশ্বর্য। ব্যাকুল হয়ে পড়ে। প্রেমের হাতখানি ধরে। র’ক্ত তাকে আর্কষণ করছে। গলা শুঁকিয়ে আসছে। তবুও নিজেকে সামলে নেয় ঐশ্বর্য। ঢক গিলে নেয়। আকুলতার সাথে বলে ওঠে,
“আই এম সরি, মি. আনস্মাইলিং! আবারও আমি আপনার কষ্টের কারণ হলাম। ব্যাথা করছে? আমার নখে তো বি’ষও আছে। আপনার তো জ্বালা করবে।”

বলেই দেরি না করে নিজের মুখ দিয়ে প্রেমের হাতের ক্ষত স্থান চেপে ধরল ঐশ্বর্য। শুষে নিল প্রেমের র’ক্ত। ঐশ্বর্য বেসামাল হয়ে পড়ছে। র’ক্তের ঘ্রাণ ও স্বাদ তাকে মাতাল করে তুলছে। তবে প্রেমের বি’ষ শুষে নেওয়া আবশ্যক। কোনোমতে নিজের উদ্দেশ্য স্থির রেখে ঠোঁট সরিয়ে নেয় ঐশ্বর্য। প্রেমের দিকে চোখ যেতেই দেখল লোকটার দৃষ্টি স্থির। সে যেন জীবন্ত মূর্তি। সযত্নে নিজের হাত সরিয়ে নিল প্রেম। নির্জীবভাবে বলল,
“আমার প্রতি এতো সংযত হচ্ছো কেন? তোমরা তো ভ্যাম্পায়ার না? কাউকে ছাড় দাও না। আমার প্রতি এতো দরদ? তাহলে আমার ভাইকেও ছেড়ে দেবে প্লিজ?”

ঐশ্বর্য অসহায় পানে তাকালো। লোকটা এভাবে কেন কথা বলছে? আগে তো বলতো না! কেমন যেন নিষ্ঠুর লাগছে তাকে। ঐশ্বর্য মোলায়েম কন্ঠে জবাব দিল,
“আপনার মধ্যে আমার প্রাণভোমরা লুকায়িত মি. আনস্মাইলিং!”

একটু থামলো ঐশ্বর্য। ইফানের দিকে তাকালো অতঃপর আবার বলতে শুরু করল,
“আপনি আমার স্বামী! আমরা ভ্যাম্পায়ার মানছি! কিন্তু আমাদের জগতেরও কিছু নিয়ম থাকে। সেই নিয়ম অনুযায়ী আমরা যাকে তাকে মা’রতে পারি না।”

“তাহলে আমার ভাইটাকে কেন মারছো? হি ইজ ইনোসেন্ট? ও কি ক্ষতি করেছে তোমার? আর আমাদের পেছনেই বা কেন পড়েছো কি উদ্দেশ্য তোমার?”

হুংকার ছেড়ে বলল প্রেম। ঐশ্বর্য তার হুংকারে কেঁপে উঠল। প্রেম অচেনা হয়ে উঠছে তার কাছে। ঐশ্বর্য নিচু সুরে বলে,
“বিলিভ মি! ও ইফান নয়। ও ইফান রূপি ডেভিল। ও আমাদের ভ্যাম্পায়াদের চিরশত্রু। ওর উদ্দেশ্য ভালো নয়। প্লিজ একটু আমাকে বিশ্বাস করুন।”

আচমকা প্রেম তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সেই সঙ্গে উত্তরে বলে,
“বিশ্বাস? অনেস্টলি, তোমার প্রতি বিশ্বাস আসছে না কেন যেন! ও ডেভিল? ইউ মিন শয়’তান? তাহলে ও দেখতে আমার ভাইয়ের মতো কেন? বোকা বানাচ্ছো? অবশ্য এতোদিন তো তাই বানিয়ে এসেছো। বোকা বানিয়ে এসেছো শেখ আনন প্রেমকে। আর বানাতে পারবে না।”

ঐশ্বর্যের কান্না পায় ভীষণ। হেঁচকি ওঠে। কষ্ট হচ্ছে। প্রেমের কথাগুলো তার বুকে তীরের মতো বেধে গিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ঠিক এই ভয় পেয়েছিল সে। সে চায়নি তার পরিচয় প্রেম জানুক! তাদের মাঝে দূরত্ব আসুক। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে ঐশ্বর্য। নজর পরে বাহিরের দিকে। বৃষ্টির বেগ জোরে হয়েছে। মালদ্বীপে বৃষ্টি মানে প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া! হোটেলের নিচেই রয়েছে ঠান্ডা পানির সুইমিংপুল। মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল ঐশ্বর্যের। ফট করে বলল,
“আপনাকে যদি প্রমাণ করে দিই ও একটা ডেভিল! তবে?”

প্রেম সন্দিহান চোখে তাকায়। মেয়েটাকে এখন ভয় করছে তার। উত্তরে কিছু বলে না। ঐশ্বর্য পিছু ফিরে এগোয় ইফানের দিকে। ইফান ওঠার চেষ্টা করছে। সে বেশ আ’হত হয়েছে বটে। সেও পারবে পাল্টা আঘাত করতে। তবে প্রেমের সামনে বর্তমানে ইফান সেজেই থাকতে চাইছে সে। আর ডেভিল কুইনকে আঘাত করবার মতো সাধ্য বা সাহস কোনোটাই তার নেই। ঐশ্বর্য তার দিকে হেলে হঠাৎ করে তার গেঞ্জির কলার ধরে দাঁড় করালো। চোখের পলকে টেনে নিয়ে দাঁড় হলো বেলকনির কিনারায়। ইফান ছটফট করে। তার ঠান্ডা সহ্য হয় না। বৃষ্টির ঠান্ডা পানি গায়ে লাগে। শরীর কেঁপে ওঠে। প্রেম হতভম্ব হয়ে শুধু চেয়ে থাকে। আচানক ওপর থেকে সুইমিংপুলের দিকে বেলকনি ছাড়িয়ে ইফানকে ধাক্কা দেয় ঐশ্বর্য। ইফান তাল হারায়। হাওয়ায় ভেসে পড়ে যায় সোজা সুইমিংপুলে।

দূর থেকে এসব দেখে ছুটে বেলকনিতে আসে প্রেম। চিৎকার হয়ে ওঠে ভয়ে।
“ইফান!”

ঐশ্বর্যের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। প্রেমের নিজেকে পাগল পাগল লাগে! কি হচ্ছে এসব? কি করে আটকাবে ঐশ্বর্যকে তা বোধগম্য হয়ে ওঠে না। চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ঐশ্বর্যের বাহু চেপে ধরে প্রেম। নিজের সমস্ত রাগ ঢেলে বলে ওঠে,
“তুমি এতোটা নিষ্ঠুর! ওকে ফেলে দিলে? ওর কিছু হয়ে গেলে আমি তোমায় ছাড়ব না ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তোমার মাঝে যতই শক্তি থাক। তোমার যতই ক্ষমতা থাক। আর আমি যতই মানুষ হই না কেন! তোমাকে আমি ছাড় দেব না।”

ঐশ্বর্য পাগলের ন্যায় হাসে। প্রেমের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে বলে,
“আমি এমনিতেও ছাড় পেতে চাই না আপনার থেকে। আমার বাহুডোর থেকে। আমি হতে পারি ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু এই লোকটার কাছে আমি নিষ্ক্রিয়।”

প্রেমের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে ওঠে সেইসব কথা। কিন্তু সে পাত্তা দিতে চায় না। মাথায় একটাই কথা ঘুরতে থাকে, সামনের মেয়েটি নিষ্ঠুর! সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। সব করতে পারে। ঐশ্বর্যের বাহু ছেড়ে প্রেম একপ্রকার দৌড় লাগায় বাহিরের দিকে। ঐশ্বর্য ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে।

সুইমিংপুলের কাছে যেতে যেতেই দৃশ্যমান হয় ঐশ্বর্যের মুখশ্রী! সে নিরব হয়ে সুইমিংপুলের পানিতে তাকিয়ে আছে। প্রেম আসতে আসতে আশ্চর্য হয়ে দেখল ঐশ্বর্যকে। মেয়েটা তো তার পেছনে ছিল সেই রুমে। এখনি এখানে তার আগে কি করে পৌঁছালো? তারপর তার স্মরণে এলো, মেয়েটা তো তার মতো সাধারণ মানুষ নয়। তার কি ক্ষমতার শেষ আছে? এসব মাথা থেকে বের করে দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে সুইমিংপুলের কাছে এলো প্রেম। চিৎকার করে ডাকলো,
“ইফান! আমার ভাই!”

প্রেমের উপস্থিতি টের পেয়ে পিছু ফিরে তাকায় ঐশ্বর্য। তারই অপেক্ষায় ছিল ঐশ্বর্য। দ্রুত এসে পানির দিকে তাকিয়ে ইফানকে খোঁজে প্রেম। তাকে না পেয়ে পানিতে ঝাপ দিতে প্রস্তুত হয়। সেই মূহুর্তে ঐশ্বর্য তাকে আঁটকায়। প্রেম তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তিক্ততার সাথে বলে ওঠে,
“ডোন্ট টাচ মি। তুমি খু’নি। আর কোনো খু’নিকে ভালোবাসা যায় না।”

ঐশ্বর্যের ভেতরটা ভাঙতে থাকে। চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে। বহু কষ্টে কান্না চেপে রেখে বলে,
“পানিতে ঝাপ দেওয়ার আগে দেখে তো নিন যে কাকে বাঁচাতে ছুটছেন আপনি!”

পানির নিচ থেকে ধড়ফড়িয়ে বেরিয়ে আসে ইফান রূপি এরিক। তার আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। নিজের চেহারা ধারণ করেছে। বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছে যায় প্রেম। নেত্রপল্লবের পলক পড়তেই থাকে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“আ…আমার ভাই? ইফান কোথায়?”

“ও ইফান নয়। ও ডেভিল। ওর আসল চেহারা আপনি নিজেই তো দেখতে পাচ্ছেন। এতোদিন ও ইফানের রূপ নিয়ে ঘুরেছে। ওর উদ্দেশ্য আমার জানা নেই। কেন এই ডেভিল আমাদের পিছু নিয়েছে তাও জানি না। আর ডেভিলরা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। কারো রূপ ধারণ করলে তার আসল চেহারায় আনতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় যথেষ্ট! এখন তো আমায় বিশ্বাস করছেন তাই না মি. আনস্মাইলিং?”

প্রেম বাকরুদ্ধ। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। ঐশ্বর্যের কথা শুনেও চুপ রইল সে। তাকিয়ে রইল এরিকের দিকে। ঐশ্বর্য চোখ বুঁজে নিল। তার আগের রূপে ফিরলো। সেই চোখ ঝলসানো রূপ! ভয়াবহ সুন্দর রূপ। যেই রূপে যেমন মোহ রয়েছে তেমনই ভয়াবহতা! তার ঠোঁটের দুই ধার দিয়ে বেরিয়ে এলো চিকন আর ধারালো দাঁত। ভার কন্ঠে বলল,
“এখন নিশ্চয় ওকে মারতে আপনি বাঁধা দেবেন না?”

প্রেম নিরব রইল। কথা বলার শক্তি সে হারিয়েছে। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে সেটা গুলিয়ে ফেলেছে। ঐশ্বর্য আর উত্তরের অপেক্ষা না করে লাফ দিয়ে হাওয়ায় ভেসে পানিতে গিয়ে পড়ল। পানিতে যেন ঝড় সৃষ্টি হলো। পানি কেঁপে উঠল। বড় ঢেউ দিয়ে উঠলো। এরিক সহ ঐশ্বর্য পানির নিচে ডুবল। প্রেম তবুও নিরব। আজ অনেক বড় সত্যির মুখোমুখি সে। যা আর নিতে পারছে না। ক্রমাগত শরীর কাঁপছে।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে তাজা লাল র’ক্ত ভেসে ওঠে। টলটলে পানিতে মিশে র’ক্ত যেন রঙ হয়ে গেল। পানি যেন হয়ে উঠেছে র’ক্তের এক জলাশয়। ভয়া’বহ সেই দৃশ্য। শিউরে উঠল প্রেম। না চাইতেও দৃষ্টি যেন সেই নিষ্ঠুরতম মেয়েটিকেই খুঁজতে লাগল। মনটা প্রশ্ন করে উঠল, ‘মেয়েটার কিছু হলো না তো আবার?’ মনের কোথাও এখনো তার জন্য চিন্তা প্রেমকেই ভাবিয়ে তুলল। ইতিমধ্যে পানির নিচ থেকে উপরে উঠে এলো ঐশ্বর্য। ভিজে চুপসে যাওয়া সেই মুখটাকে দেখে প্রেমের মন মস্তিষ্ক যেন আপনাআপনি স্বস্তি পেল।

পানি থেকে উঠল ঐশ্বর্য। প্রেমের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই হুইসিল বাজল। সিকিউরিটি গার্ড হুইসিল বাজাচ্ছে। হয়তবা এতো পানিতে শোরগোল পেয়ে এদিকেই আসছে। ঐশ্বর্য দ্রুততার সাথে বলল,
“তাড়াতাড়ি চলুন এখান থেকে।”

“কেন? ভয় হচ্ছে? তোমাদের ভয়ও হয়?”

ঐশ্বর্য নিরব চাহনি নিয়ে তাকালো। প্রেম হাঁটতে শুরু করল। পিছু পিছু হাঁটতে লাগল ঐশ্বর্য। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। বৃষ্টিতে ঘোলাটে হয়ে আসছে প্রেমের দৃষ্টি। সবটা আবছা লাগছে।

ঠান্ডায় কাঁপছে ঐশ্বর্য। খেয়ালে এলো তার হাতের চিহ্নটাও জ্বলছে। প্রচন্ডভাবে জ্বলছে। হঠাৎ ঠান্ডা লাগার কারণ বুঝল না ঐশ্বর্য। প্রেম রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। টাওয়াল দিয়ে নিজের মাথা মুছছিল ঐশ্বর্য। প্রেমের আগমনে তার দিকে এগিয়ে এলো ঐশ্বর্য। টাওয়ালটা প্রেমের দিকে বাড়িয়ে বলল,
“নিন। মুছে নিন।”

প্রেম একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো। কোনো হেলদোল নেই। আচানক প্রশ্ন করে উঠল,
“তাহলে ইফান কোথায়?”

ঐশ্বর্য চমকালো। এদিক-ওদিক তাকালো। কন্ঠস্বর কাঁপছে তার। প্রেম আবারও বলল,
“মিথ্যে বলবে না। সত্যি যতটাই তিক্ত হক। আমি হজম করে নেব। তোমার আসল পরিচয় যদি জেনে এখনো চুপ থাকতে পারি তবে সব জেনে মেনে নেব।”

ঐশ্বর্য বড় শ্বাস নিতে নিতে থেমে থেমে বলল,
“ইফান মা’রা গেছে। কারণ একটা ডেভিল কোনোদিন একটা মানুষ না ম’রে যাওয়া অবধি তার রূপ ধারণ করতে পারে না।”

প্রেম আবারও চুপ। যেন সত্যিই হজম করছে কথাগুলো। চোখ বুঁজে নিল সে। স্মৃতিচারণ করল। কতশত স্মৃতি ইফানের সাথে। ইফানের বোকা কথাগুলো! ছোট থেকে কতশত সময় কাটিয়েছে তার সাথে। স্বর্ণ দিয়ে যেন মুড়ানো। চোখে আপনাআপনি অশ্রু এলো তার। তবে তা গড়িয়ে পড়ল না। পুরুষদের নাকি অশ্রু ফেলতে নেই! চোখ খুলল প্রেম। সেখান থেকে চলে এসে বেলকনির দরজা খুলে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। ঐশ্বর্য পেছনে দাঁড়িয়ে দেখল লোকটার মতিগতি। লোকটা কষ্ট পেয়েছে। তাকে সামলাবে কি করে? ঐশ্বর্য এগিয়ে তার নিকটে এসে দাঁড়ালো। টাওয়াল দিয়ে একটু উঁচু হয়ে প্রেমের মাথার চুল মুছতে যেতেই ছিটকে সরে এলো প্রেম। ধমকে বলে উঠল,
“ডোন্ট টাচ মি!”

ঐশ্বর্য অবাক হলো। তারপরেই নিজেকে সামলে নিল। তারপর বলল,
“আমি মানুষ নয় আমি মানছি। তাই বলে কি আপনাকে ছোঁয়ার অধিকার, আপনার কাছে যাওয়ার অধিকার আমি হারিয়েছি?”

“আমি কোনো বিশ্বাসঘাতকের স্পর্শ চাই না। আর তোমার মতো চরম বিশ্বাসঘাতকের স্পর্শ তো কোনোদিন না। যে কিনা দিনের পর দিন নিজের পরিচয় লুকিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছে। সত্যি করে বলো, তোমার উদ্দেশ্য কি?”

“কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই আমি আপনার জীবনে প্রবেশ করেছি। আমি এক ছন্নাছারা এক ভিন্ন জগতের রাজকন্যা। যে আপনার খোঁজে এই মানুষের পৃথিবী আপন করে নিয়েছে। আর কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার। আমি আপনাকে শুধু ভালোবেসেছি।”

প্রেম হাসে। চাপা কন্ঠে বলে,
“ভালোবাসলে কোনো লুকোচুরি চলে না ঐশ্বর্য। ওপসস… সরি, ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য।”

ঐশ্বর্যের চোখে পানি টলমল করতে থাকে। ঘোলাটে হয় দৃষ্টি। কান্না চেপে বলে,
“আমি মানুষ নই বলে কি আমি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়? আমি জানি আমার মতো খারাপ মেয়ে কোনো যোগ্যতাই নেই আপনার মতো একটা ভালো মানুষের ভালোবাসা পাবার। কিন্তু দয়া করে ঘৃণা করবেন না আমাকে। আমি বাঁচতে পারব না।”

“তোমাকে ঘৃণা করার যোগ্যতাও আমার নেই। কিন্তু তোমার আর আমার মধ্যে যে অসীম দূরত্ব সৃষ্টি করেছো সেটা মিটবে না। তুমি ছলনাময়ী। তুমি নিষ্ঠুরতম রাজকন্যা। বলা তো যায় না, যদি তোমার সাথে থেকে আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি হয়? ইতিমধ্যে আমার ভাইটার প্রা’ণ শেষ হয়ে গেছে। আমি আর চাই না। আমার থেকে দূরে থাকো তুমি। তোমার আর আমার জগত ভিন্ন। সেই ভিন্নতা থেকে মিলন অসম্ভব! কে বলতে পারে? কাল তুমি আমায় আ’ক্রমণ করে বসলে?”

ঐশ্বর্য অবিশ্বাস্য নয়নে তাকায়। নিরবে বেয়ে পড়ে অশ্রু। অস্ফুটস্বরে বলে,
“এতোটাই অবিশ্বাস?”

প্রেম কিছু বলে না বেরিয়ে যায় ঘর থেকে দ্রুততার সাথে। ঐশ্বর্য ফ্লোরেই হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। সবটা অন্ধকার লাগে। এই জগতটাকে অসহ্য লাগে। হু হু করে কেঁদে দেয়।
“ওই প্রেম নামক ব্যক্তির ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম আমি। সেটা যখন পেয়ে গেলাম যেন নতুন অস্তিত্ব পেলাম! আবার নিজের আরেক অস্তিত্বের জন্য তা হারিয়ে বসলাম। কি লাভ আমার অস্তিত্ব রেখে। হারিয়ে যাক সেই অস্তিত্ব!”

রাতটা গভীর এবং নিরব। পাশের ল্যাম্পশিটের হালকা আলো মাধুর্যের চোখে পড়েছে। পায়ে জড়ানো ব্ল্যাঙ্কেট। চিন্তাতে পরিপূর্ণ তার মুখশ্রী। বিষণ্ণ তার মন। একটা অস্থির অস্থির ভাব। পাশেই অনুভব ঘুমিয়েছে। যদিও লোকটা বেশ ক্লান্ত ছিল! মাধুর্য অনুভবের দিকে তাকায়। পায়ের ওপর থেকে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে বেডে পা নামিয়ে বসে। কিছু একটা ভাবতে থাকে। গভীর চিন্তার মাঝপ বাগড়া দিয়ে যখন তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলা হয় চকিতে তাকায় সে। বুঝতে এক মূহুর্তও দেরি হয় না এই কাজটা করার লোকটা কে! ঘাড়ে আলতো ঠোঁটের স্পর্শ পড়তেই নড়েচড়ে ওঠে মাধুর্য। অনুভবের শীতল কন্ঠ কানে এসে বাজে।
“কি হয়েছে? এতো রাতে না ঘুমিয়ে হঠাৎ বসে আছো?”

“ভালো লাগছে না আমার অনুভব। কেমন যেন অস্থির লাগছে। মনটা কেমন করছে!”

অনুভব কিছু একটা বুঝে উত্তর দেয়,
“মেয়ের জন্য মন খারাপ করছে?”

“আচ্ছা, ওকে একটা কল করি?”

“কয়টা বাজে দেখেছো? এসময় হয়ত ঘুমোচ্ছে। তোমার মেয়ে তো খুব ঘুম কাতুরে। দেখবা তোমার ওপর ঘুম ভাঙার রাগ ঝাড়তে না পেরে প্রেমের ওপর ঝাড়ছে!”

মাধুর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“ঠিকই বলেছো। ও আমার ওপর অনেক রেগে আছে জানো তো? কাল সকাল হলেই প্রেমকে একবার ফোন করব। বলব কাল রাতটা যেন ঐশ্বর্যকে একদম হাতছাড়া না করে। আমার খুব ভয় করছে।”

অনুভবের মুখ ভার হয়। মাধুর্যকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। ভয় তো তার নিজেরও হচ্ছে। আত্মা কাঁপছে! তবুও মাধুর্যকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আমি জানি তোমার ভয় করছে। কিন্তু প্রেম আছে। আর ঐশ্বর্য নিজেকে সামলে নেবে।”

“কাল রাত তো আমাদের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক একটা রাত হতে চলেছে। বিশেষ করে আমাদের মেয়ের জন্য। ও তো জানেও না কাল রাতে কি হতে পারে ওর সাথে। কাল আমাদের শক্তি পুরোপুরি গ্রাস করে নেমে অমাবস্যা! কাল রাতে ডেভিলদের শক্তি দশগুন বেশি হয়ে যাবে। আমরা না হয় আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রবেশদ্বারের শক্তি থেকে বাঁচবো। কিন্তু ঐশ্বর্য?”

“ওর কাছে প্রেম আছে। ওর ভালোবাসার মানুষ আছে। ওর পরিপূরক প্রেম। কখনো এমন কিছু হবেনা। আমি জানি কাল ঐশ্বর্যের জন্য একটা অন্যরকম রাত। কাল রাতে ওর পরিচয় বদলে যেতে পারে। কিন্তু ঐশ্বর্য তো এইখানেই নেই। ডেভিলরা ওর ধারের কাছেও যেতে পারবে না। চিন্তা করো না।”

মাধুর্য হাফ ছাড়ে। অনুভবের কথা তার বিশ্বাস হয়। অনুভবের বুকে মাথা রাখে সে। স্বস্তিতে চোখ বুঁজে নেয়।

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪১

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আকাশে লাল আভা। সকাল হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। আকাশের রক্তিম বর্ণ জানান দিচ্ছে, নব্য দিনের সূচনা। সূচনা হবে নতুন অধ্যায়ের। শুরু হবে নতুন কোনো প্রণয়ের। পানির শুরু থেকে শুরু হয়েছে একটা সরু ব্রিজের। কোনো রেলিং জাতীয় কিছুই নেই। লেকের ওপর ব্রিজটি। কাঠ দিয়ে তৈরি করা। কাঠের রঙটাও বেশ ইউনিক। বিদেশে যেমন হয় আরকি! ব্রিজটার শেষ প্রান্ত গিয়ে থেমেছে লেকের মাঝখানেই। আশেপাশে কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই। শেষ প্রান্তে পা নামিয়ে আকাশের দিকে স্থির নয়নে চেয়ে রয়েছে প্রেম। চোখজোড়া ভয়া’নক লাল। উষ্কখুষ্ক চুল। চেহারায় মলিনতা। ধূসর ও গোলাপি রঙের সংমিশ্রণের ঠোঁট শুঁকিয়ে গিয়েছে একেবারে। লেকের পানির অন্যরকম শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে। মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছেনা সেই নিষ্ঠুর রাজকন্যার কথা। প্রেম খুব করে বের করতে চাইছে তার মস্তিষ্ক থেকে রাজকন্যাকে। তবে হচ্ছেই না। একপ্রকার অসহ্য হয়ে সে বলে উঠল,
“এ কেমন জাদু করেছো তুমি প্রিন্সেস? মন মস্তিষ্ক সর্বাঙ্গ যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তোমার জন্য। এটা জানার পরেও যে তুমি বিশ্বাসঘাতক।”

ফোনের রিংটোন নিজ ছন্দে বেজে উঠল তৎক্ষনাৎ। ধ্যান ভাঙে প্রেমের পাশে রাখা ফোনের দিকে তাকায়। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে ‘মিসেস. এ্যাংরি বার্ড’ লিখাটি। প্রেম তা দেখেও না দেখার ভান করল। বাজতে বাজতে অফ হলো ফোনটা। আবারও বেজে উঠল। প্রেম চোখমুখ খিঁচে ফোনটা সুইচ অফ করে বসে রইল।

“কেন এমনটা করলে ঐশ্বর্য? হুয়াই? কেন নিজের অস্তিত্ব লুকালে তুমি? তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি আমার কাছ থেকে লুকিয়ে গেছো। আমাকে এতো বড় ধাক্কা দিয়ে কি পেলে তুমি?”

“আপনাকে হারানোর ভয়ে নিজের অস্তিত্ব লুকিয়েছিলাম। #প্রেমের_ঐশ্বর্য হবার লোভে নিজের আসল রূপ আড়াল করেছিলাম।”

প্রেম চকিতে তাকায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরে তাকায় তৎক্ষনাৎ। ঐশ্বর্য তার থেকে দুহাত পিছনে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। যেন অনেকটা পথ পেরিয়ে দৌড়ে এসেছে। প্রেম ভেবে পেলো না যে ঐশ্বর্য কি করে জানলো সে এখানে রয়েছে? বিষয়টাকে নিয়ে তেমন মাথা না ঘাঁটিয়ে আবার সোজা হয়ে বসে ভার কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কেন এসেছো? আর কি করে জানলে আমি এখানে? আর জানা মাত্র আবারও চলে এসেছো? আরো কিছু বাকি আছে বলার? আরো কিছু লুকিয়েছো বুঝি?”

ঐশ্বর্য হতাশ হয় প্রেমের এমন প্রশ্নে। তবুও কোমল সুরে উত্তর দেয়,
“আপনার উপস্থিতি আমার কাছে সেই গোলাপ বাগানের ঘ্রাণের মতো। যা দূর থেকেও অনুভব করা যায়।”

একটু থামে ঐশ্বর্য। অতঃপর আবারও আকুলতা নিয়ে বলে,
“রাত ৩ টা থেকে খুঁজে যাচ্ছি আপনাকে। সি বীচ থেকে শুরু সবখানে। কোথাও পাইনি। অবশেষে এখানে এলাম।”

“মন গলানোর চেষ্টা করো না ঐশ্বর্য। যাই বলো, এই মনকে তুমি পাথরের ন্যায় শক্ত বানিয়ে দিয়েছো। আমাদের মানুষদের মন যে একটুতেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।”

ঐশ্বর্য এসে ধপ করে প্রেমের পাশে বসে। প্রেমের রক্তিম চোখের দিকে তাকিয়ে নিষ্প্রাণ সুরে বলে,
“আমি মানুষ নই বলে কি আমার মন নেই? হ্যাঁ, ছিল না আমার কোনো মন। মনের উপস্থিতি কখনো অনুভব করিনি আমি। কিন্তু হঠাৎ একদিন এমন একজনের দেখা পেলাম যাকে দেখে হৃদয়টাই থমকে গেল। তার স্বচ্ছ মনটাকে দেখে আমার মনটা জেগে উঠল।”

প্রেম জবাব দিল না। কিছুক্ষণ নিরব থেকে শক্ত কন্ঠে বলল,
“তোমাদের মনও আছে জেনে খুশি হলাম। কিন্তু তোমাদের মনের ঠিক ঠিকানা নেই। যখন খুশি তোমরা ভালোবাসতে পারো। যখন খুশি তোমরা যে কাউকে মে’রেও ফেলতে পারো।”

“এতোটা অবিশ্বাস আমার প্রতি?”

প্রেম দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। দূরে সরে আসে। আর বলে,
“অবিশ্বাসের সৃষ্টির মূল কারণ তুমি। আজ ভোর রাতের টিকিট বুক করেছি। সেখান থেকে দেশে ফিরে তোমাকে তোমার ফ্যামিলির দিয়ে আসব।”

ঐশ্বর্যের দুর্বল চোখ দুটো কেঁদে ফ্যাকাশে হয়েছে। সেই চোখে আবারও দেখা মিলল অশ্রুর। থেমে থেমে জিজ্ঞেস করল,
“আমার প্রতি কয়েকটা মিনিটের ব্যবধানে এতোটাই ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে যে আপনি আমার পাশে বসতেও পারছেন না?”

প্রেম চুপ রইল। তার চুপ থাকা দেখে ঐশ্বর্য ফের বলে উঠল,
“আমি আমার ফ্যামিলির কাছে কেন যাব? বিয়ের পর থেকে আপনার ফ্যামিলিই তো আমার ফ্যামিলি তাই না?”

“না ঐশ্বর্য। আমার ফ্যামিলির সাথে রিস্ক নিতে পারব না আমি। এমনি আমার ভাইটার প্রা’ণ শেষ হয়ে গেছে। তাও অকারণেই। এসব ঝামেলার মাঝে অযথা ওকে এতো কষ্ট কেন দেওয়া হলো বলতে পারো? খালামনি আর আঙ্কেলকে কি জবাব দেব কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যাস… অনেক হয়েছে। আর কারোর ক্ষতি আমি চাই না। আই এম সরি!”

ঐশ্বর্য ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। তারপর মনে করে, আসলেই তো! ইফানকে এতো কিছুই মধ্যে অযথা শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। এর কারণ তো শুধুই ঐশ্বর্য। যদি ঐশ্বর্য না ওদের জীবনে থাকতো তাহলে তো ওর প্রা’ণ সংশয় হতো না। সেসব বুঝে হাফ ছেড়ে ঐশ্বর্য বলল,
“আমি তো আপনাদের জন্য অভি’শাপ। কিন্তু ভাগ্য দেখুন, এই অভি’শাপ আপনাকে ভালোবেসেছে। যেই অভি’শাপ আপনাদের বিনা’শ সেই অভি’শাপ শুধু আপনাকে চায়।”

“চলে যাও ঐশ্বর্য। চোখের সামনে থেকে চলে যাও।”

ঐশ্বর্য মাথা দুলায়। সেও রাজি চলে যেতে। কান্না চেপে মুখে আলতো হাসি ফুটিয়ে বলে,
“ধন্যবাদ আপনাকে। স্বল্প সময়ের জন্য ভালোবাসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই ভালোবাসা আমার জন্য অতি সুখময় ছিল!”

প্রেম ঢক গিলে নেয়। কথা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা এভাবে কথা বলছে কেন? তার কি সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে? প্রেমের মন বারংবার জানতে চাইলো। তবে প্রেম যে কঠোর হয়েছে! সে নিজের মনকে বাঁধা দিয়েই চলেছে।

প্রায় মিনিট দশেক চলছে নিরবতা। তারপর প্রেম সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়ায়। সেখানে থাকলে হয়ত সে অস্থিরতায় ম’রেই যাবে! বেশ কিছুটা দূর এগিয়ে আসার পরই ঐশ্বর্য আর্তনাদ শুনতে পেয়ে সেই মূহুর্তেই হাঁটা থামিয়ে দেয় প্রেম। তার প্রাণপাখি যেন সেই আর্তনাদ শুনেই উড়ে গেছে। অস্থিরতা নিয়ে ফিরে তাকায় পেছনে। ঐশ্বর্য নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। তার চোখমুখে আর পুরো শরীরের সূর্যের তীব্র আলো পড়েছে। খোলা জায়গা! আশেপাশে নেই কোনো গাছপালা, নেই কোনো ছায়া! রাতভর বৃষ্টি হয়ে বর্তমানে মেঘের চিহ্নটুকুও নেই। সূর্য ঝলমল করছে। সেই রোদে পুড়ছে ঐশ্বর্য। প্রেমের হৃদকম্পন যেন মূহুর্তেই থমকে যায়। ছুট লাগায় ঐশ্বর্যের দিকে। কেন লাগায় সে জানে না! শুধু জানে ঐশ্বর্যকে এমন দেখে সে ভালো নেই।

দ্রুততার সাথে ছুটে এসে ঐশ্বর্যের হাতখানি ধরে নেয় প্রেম। হাতটা লাল হয়ে গেছে। ঐশ্বর্য চিৎকার করছে!
“কি হয়েছে তোমার?”

“আ…আমরা ভ্যাম্পায়ার। আমাদের শরীরের স্কিন এতোটাই পাতলা যে সামান্যতে পুড়ে যায়। বিশেষ করে সূর্যের তাপে। আমার খুব যন্ত্রণা করছে।”

প্রেমের প্রশ্নের উত্তরে এসব বলে চোখমুখ খিঁচে ফেলে যন্ত্রণায় ঐশ্বর্য। প্রেম সূর্যের দিকে তাকায়। এরপর তাড়াহুড়ো করে নিজের শার্ট টুকু খুলে নেয়। প্রেমের পরনে ছিল ধূসর বর্ণের গেঞ্জি তার ওপর কালো রঙের শার্ট। শার্ট টা খুলে তাড়াতাড়ি করে জড়িয়ে নেয় শার্ট দিয়ে ঐশ্বর্যকে। ঐশ্বর্য হতভম্ব! পলকহীন নজরে তাকায় প্রেমের দিকে। কিছু আগেই প্রেম তার সাথে বসতেও চাইছিল না! আর এখন?

শার্ট ঐশ্বর্যের গায়ে দিয়েও থামেনা প্রেম। নিজের সাথে ভালো করে জড়িয়ে নেয় যাতে রোদ ঐশ্বর্যের গায়ে না লাগে। চোখ কপালে ঐশ্বর্যের। এখনো কি তবে কিছু অনুভূতি অবশিষ্ট রয়েছে প্রেমের মনে?

রাস্তায় এসে থামে প্রেম। তার বুকের সাথে জড়িয়ে রাখা ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য নিরব চাহনি নিয়ে শুধু প্রেমকেই দেখে চলেছে। এটাই বোধহয় প্রেম! যত যাই হক কখনো কারোর দুঃখ নিতে পারে না। তার মনে শুধু প্রেম আর প্রেম!

প্রেম ঐশ্বর্যকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রাস্তায়। এমনভাবে তাকে বুকের মাঝে লুকিয়েছে যেন সূয্যিমামার রোদ ঐশ্বর্য অবধি পৌঁছাতে না পারে। সে ভুলেই গেছে যেন তাদের দূরত্বের কথা, ঐশ্বর্যের পরিচয়ের কথা। ফাঁকা ক্যাব খুঁজছে। পাচ্ছেনা। সবে সকাল হলো মাত্র! যা ক্যাব যাচ্ছে সবই বুক করা। অবশেষে একটা ফাঁকা ক্যাবের দেখা মিলল। কথা বলে নিল ড্রাইভারের সাথে প্রেম। কথা বলার সময়ও ঐশ্বর্যকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে ধরে কথা বলছিল। এই সুখানুভূতি যেন ঐশ্বর্যের কাছে বড়ই আনন্দের! কথা বলার শেষে প্রেম দ্রুততার সাথে বলল,
“তাড়াতাড়ি ক্যাবে উঠে পড়ো। রিসোর্টে ফিরলে আর রোদ লাগবে না।”

ঐশ্বর্য তাড়াহুড়ো করে ক্যাবে উঠে পড়ে। হাত-পা শুধু জ্বলছে। প্রেমও ক্যাবে উঠতে গিয়ে থেমে যায়। মস্তিষ্ক জানান দিয়ে ওঠে, এ কি করছিস প্রেম? তুই কি ভুলে গেলি সব ইতিমধ্যে?
গাড়িতে না উঠে দাঁড়িয়ে থাকে প্রেম। ঐশ্বর্যের যন্ত্রণা, কষ্ট দেখে তারও মন কেঁদে উঠেছিল। ব্যাকুল হয়েছিল। সে যে সহ্য করতে পারে না মেয়েটার সামান্য দুঃখ! হৃদয়ে গিয়ে কাঁটার মতো বিঁধে। থাকুক না যতই দূরত্ব। তবে মনকে শক্ত করে প্রেম। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। ঐশ্বর্য তা খেয়াল করে বলে,
“কি হলো? আসুন!”

“তুমি যাও। আমি একবারে রাতে যাব। লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব।”

ঐশ্বর্য আঁতকে উঠে বলে,
“আমার সাথে যাবেন না কেন?”

“তোমার কি মনে হলো? মূহুর্তেই সব ভুলে গেছে প্রেম? ভুলিনি। আর এতো কিছুর পরেও তোমার মনে হলো যে তোমার সাথে আমি সবকিছু ভুলে একসাথে যাব?”

এতটুকু বলে ঐশ্বর্যের জবাবের অপেক্ষা না করেই প্রেম ক্যাবের ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“ড্রাইভার, প্লিজ গো!”

ঐশ্বর্য ছলছল নয়নে তাকায়। প্রেম চোখ সরিয়ে নেয়। অন্যদিকে ফিরে যায়! সব যেন ঠিক হয়েছিল স্বপ্নের মতো। ভালোবাসা যেন ফিরে এসেছিল। আবারও সব ভেঙে গেল কাঁচের মতোই।

নিকষ কালো রাত। এই রাতটা যেন অন্য রাতের থেকে একটু বেশিই কালো। রাত প্রায় ১২ টা বাজতে চলেছে। কেমন যেন গা ছমছমে ভাব। প্রেম রিসোর্টে ফিরেছে। তাড়াহুড়ো করেই ফিরেছে। মনে অস্থিরতা। লিফটের সুইচে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। আনমনে বলে উঠল,
“একটু বেশিই করে ফেলেছি। এতো কথা বলা আমার ঠিক হয়নি। মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। এতোটা নিষ্ঠুর কি করে হলাম আমি?”

লিফট খোলা মাত্র সে লিফটে প্রবেশ করল। যেন উড়ে যেতে পারলে তাই যেতো। তার মাথা ঠান্ডা হয়েছে। তাই সবটা বুঝতে পারছে। ঐশ্বর্যের কান্নামাখা চোখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সেই কান্না, সেই কষ্ট মিথ্যে হতে পারে না। এতোটুকু অন্তত বুঝেছে প্রেম। অন্তত ঐশ্বর্যের সাথে বসে ভালোভাবে কথা বলা দরকার। তার চোখে যেই ভালোবাসা হারানোর কষ্ট দেখেছে প্রেম অন্তত সেটা মিথ্যা হতে পারে না। ভালোবাসা ছলনা হতে পারে না!

“আই এম সরি মাই এ্যাংরি বার্ড। আমি বুঝতে পারিনি তোমায়!”

আপনমনে কথাগুলো বলতে বলতে লিফট খুলতেই একপ্রকার দৌড় লাগালো প্রেম। তার রুমের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দরজায় টোকা দিতে উদ্যত হলো। তৎক্ষনাৎ খেয়াল করল দরজা খোলা! চোখ ছানাবড়া হলো প্রেম। হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকল। আশেপাশে চোখ মেলে চাইলো। রুমটা ফাঁকা। ঐশ্বর্যের চিহ্নমাত্র নেই। কোথায় গেল মেয়েটা? আশপাশটা চোখ বুলিয়ে ওয়াশরুম অবধি খুঁজল। কোথাও নেই সে। বুকটা ধুকধুক করে উঠল। খাঁ খাঁ করতে থাকল। মনে সংশয় কাজ করল! মেয়েটা কি কষ্ট পেয়ে চলে গেল কোথাও?

দুপাশে ঘন জঙ্গল। মাঝখানে পাকা রাস্তা। পায়ে হাঁটার শব্দ স্পষ্ট। পেঁচার ডাক নিঝুম রাতটাকে করে তুলেছে আরো অন্যরকম ভূতুড়ে। সেসবের কোনোরকম পরোয়া না করে একমনে হেঁটে চলেছে ঐশ্বর্য। সে যেন অনুভূতিহীন। সমানে হেঁটেই চলেছে অজানা উদ্দেশ্যে। হারিয়ে ফেলতে চাইছে নিজেকে। উদ্দেশ্যহীন জীবন! হারিয়ে ফেললেই বা কি যায় আসে? সকালে রিসোর্টে পৌঁছেছিল সে ঠিকই। তবে সন্ধ্যে হতে না হতে বেরিয়ে পড়েছে সেখান থেকে। আর মনটা মানছে না এতো ঘৃণা, এতো দূরত্ব! ভালোবাসার পর ঘৃণা পাওয়ার মতো যন্ত্রণা যেন আর কোনোকিছুতে নেই। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে বেরিয়েছে ঐশ্বর্য। খুব করে চাইছে আজকে কিছু একটা হয়ে যাক। এমন কিছু হক যাতে তার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। থাকবে না তার প্রা’ণ। হাঁটতে হাঁটতে ঐশ্বর্য বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“আমাদের জন্ম হয়ই তো অর্ধ’মৃ’ত আর অর্ধ’জীবিত। আজ চাইছি পুরোপুরি মৃ’ত হতে!”

“আপনার জন্ম তো মৃ’ত হওয়ার জন্য হয়নি। আপনার জন্ম এই পৃথিবীতে রাজত্ব করার জন্য হয়েছে। আপনি খামাখা একটা সামান্য মানুষের জন্য নিজের প্রা’ণ ত্যাগ করতে কেন যাবেন?”

ঐশ্বর্য হকচকিয়ে তাকায় আশেপাশে। পেছনে তাকাতেই দৃশ্যমান হয় একটা মেয়ে। এই কুটকুটে কালো রাতেও দেখতে ভুল হয় না ঐশ্বর্যের। তার সামনে বর্তমানে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বয়ং রোজি! চমকে ওঠে ঐশ্বর্য। চোখজোড়া জ্বলে ওঠে ক্রোধে! তেড়ে আসে তখনি। রোজি সরে যায়।
“পুরো কথাটা না শুনেই কেন এমন করছেন?”

“তুই আবার এসেছিস? তোর দলের লোককে তো মে’রে দিয়েছি। তার প্রতি’শোধ নিতে এসেছিস বুঝি? তোকেও শে’ষ করার মনোবাসনা ছিল সেদিনই যেদিন তুই আমার মি. আনস্মাইলিং এর দিকে হাত বাড়িয়েছিলি। আজ তবে সেই মনোবাসনা পূরণ হতে চলেছে!”

রোজি শব্দ করে হেঁসে বলে,
“আমরা ডেভিল। আর আমাদের রাজ্যের কেউ মা’রা গেলে তাকে স্মরণ করে আমরা শো’ক পালন করে সময় নষ্ট করি না। এটাই তো আমাদের সবার থেকে আলাদা করে ডেভিল কুইন!”

ঐশ্বর্য আশ্চর্য হয়। চেঁচিয়ে উঠে বলে,
“কে ডেভিল কুইন?”

“আপনি! আপনি ডেভিল কুইন। আমাদের রাজ্যের রাণী। আমাদের সিংহাসনের অধিকারিনী। এই কথা আমি আপনাকে সেদিন থেকে বলে আসছি। আজও বলছি। মেনে নিন।”

“অসম্ভব! আমাকে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করিস না। আমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তোকে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করি না।”

রোজি এগিয়ে এসে বলে,
“আমি প্রেমকে নিজের করে নিতে চাই।”

ঐশ্বর্য কটমট করে তাকায়। ক্রোধে ফেটে পড়ে। তা দেখে রোজি আবারও বলে,
“প্রেম শুধু আমার। আপনার থেকে ওকে ছিনিয়ে নেব আমি।”

ঐশ্বর্য রাগে চেঁচিয়ে ওঠে। চোখ বুঁজে নেয়। আবার চোখ খোলে। হতভম্ব হয়ে যায়। আশ্চর্য! তার রূপ বদলে গেল না কেন? কি হচ্ছে? তার ভ্যাম্পায়ার রূপ কোথায় হারালো? রোজি হাসে।
“আজ অমাবস্যা। শত শত বছর পর আসে এই অমাবস্যা। যেদিন ভ্যাম্পায়ারদের সকল শক্তি হারায়। শক্তি বাড়ে ডেভিলদের। আজকেই সেই রাত, যেই রাতে ডেভিল কুইন নিজের আসল রূপ প্রথমবারের মতো ধারণ করে। আপনিও করবেন।”

ঐশ্বর্য শুধু অবাক নয়নে চেয়ে থাকে। আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যতই শক্তি কমে যাক। তোকে আমি ছাড়ব না।”

ঐশ্বর্য হাত উঠিয়ে দৌড়ে আসে। রোজি নিজে থেকে তার কাছে এসে তার দুটো হাত ধরে নেয়। চোখ বুঁজে খুলতেই ফুটে ওঠে রোজির লাল জ্বলজ্বল করা চোখজোড়া। ঐশ্বর্য সেইদিকে তাকায়। সেই মাত্র জ্ঞান হারায় সে। ঢলে পড়ে রাস্তায়। রোজি ঐশ্বর্যের চারিপাশে ঘোরে। জঙ্গলের পাশ থেকে আরো কয়েকজন ডেভিল বেরিয়ে আসে। ঐশ্বর্যের চারিপাশে গোল হয়ে দাঁড়ায়। জ্বলে ওঠে ঐশ্বর্যের হাতের সেই চিহ্ন। নীল বর্ণ ধারণ করে জ্বলতে থাকে। রোজি নিঃশব্দে হেঁসে বলে,
“চলো! এরিক ম’রে যাবার আগে অন্তত একটা সুবিধা করে দিয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে প্রেম আর ডেভিল কুইনের মধ্যে দূরত্ব। এই দূরত্বের কারণে চিহ্ন আবার প্রাণ পেয়েছে।”

সবাই মাথা দুলিয়ে হাসে। তাদের মধ্যে একজন মনে ওঠে,
“১২ টা বেজে গেছে!”

রোজি বড় শ্বাস নেয়। মনে করে তার বাবার কথা। তার বাবা বলেছিল, ‘ঠিক ১২ টা যখন বাজবে! রাতের অন্ধকারে চাঁদ ঢেকে যাবে। সেই অন্ধকারই হয়ে উঠবে আমাদের শক্তি। সেই অন্ধকারের মাধ্যমে আমাদের শয়’তানি তলো’য়ার জেগে উঠবে। আর এটা দ্বারা ডেভিল কুইনকে পর পর তিনবার আ’ঘাত করার পর সব শয়’তানি শক্তি উনার মধ্যে প্রবেশ করবে।’

রোজি ত’লোয়ার বের করে। অন্তত ধারা’লো সেটা। অন্ধকারেও চকচক করছে। সবাই চোখ বুজল। তলো’য়ারে অদ্ভুত আলো প্রবেশ করতেই কিছু একটা বিরবির করে অচেতন ঐশ্বর্যের বুকের ঠিক বাম পাশে সেই তলো’য়ার দিয়ে আ’ঘাত করল। একটু নড়েচড়ে উঠল ঐশ্বর্য। উদ্ভট হেঁসে উঠল রোজি। এরপর আরো দুইবার আ’ঘাত করেই দম নিল রোজি। হঠাৎ করে একটা চোখ ধাঁধানো লাল রঙের আলো জ্বলে উঠল। সবাই যেই আলোর তেজে পড়ে গেল। রোজি তলো’য়ার সহ পড়েছে। অনেক কষ্ট চোখ মেলল রোজি। তারপর যা দেখল তাতে তার আনন্দের সীমা রইল না। ঐশ্বর্য চোখ মেলছে। চোখের রঙ কুচকুচে কালো। সাদা অংশটুকুও কালো বর্ণ ধারণ করেছে। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়েছে তার দুটো দাঁত। আঙ্গুলগুলো নিষক কালো বর্ণ ধারণ করেছে। গায়ের সমস্ত রগও ফুলে কালো হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত ভয়ং’কর সুন্দর সেই রূপ। কালো বর্ণের চোখ দ্বারা যার দিকে দৃষ্টিপাত করবে তার ধ্বং’স যেন অনিবার্য!

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। এত্তবড় পর্ব দিয়েছি। একটু গঠনমূলক মন্তব্য চাই! আর সকলের ঈদ কেমন কাটছে?]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here