প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ২

0
480

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২

“আহ, এই ডক্টর আস্তে ড্রেসিং করুন। লাগে তো নাকি? আর একবার লাগলে আপনাকেও…”
রাগে কটমট করে চোখ খিঁচে বলল ঐশ্বর্য। মেজাজটা তার তুঙ্গে উঠে গেছে। এর ফলে ডক্টরকে বেশ জোরেশোরে ধমক দিয়ে বসল সে। অতঃপর তার মনে হলো কথাগুলো একটু বেশি জোরে বলে ফেলেছে তখন একচোখ মেলে তাকালো সে। ডক্টর ঐশ্বর্যের কপাল ক্লিন করা ছেড়ে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঁড়চোখে তাকাতেই ঐশ্বর্য দেখল হাত বুকে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফর্সা চেহারার এক ব্যক্তিকে। ব্যক্তিটি প্রেম। আচ্ছা মানুষটার নাম প্রেম সেকারণেই সবার প্রতি তার প্রেম? কি জানি!

প্রেম আচমকা ঐশ্বর্যের এমন চেঁচিয়ে বলা কথায় কিছুটা চমকেছে। হাসিও পেয়েছে খানিকটা। তবে যার-তার সামনে হাসাটা কেমন যেন বেমানান লাগে প্রেমের কাছে। দৈনন্দিন সব মানুষের সামনে সে গম্ভীর একজন লোক যে কিনা যেকোনো বিষয় নিয়ে বেশ সিরিয়াস! তবুও সে মুখ খুলে বলল,
“একটু শান্ত হয়ে বসো। একটু তো লাগবেই।”

ঐশ্বর্য না চাইতেও মুখ কাঁচুমাচু করে বসে থাকল। সে কেন প্রেমের কথা শুনছে সে জানে না। সে তো কারোর কথা শোনার মেয়ে না তবে? ঐশ্বর্যের এসব ড্রেসিং এর দরকারই নেই। তবুও সে এমন একজন লোকের কথায় এসব করাচ্ছে যাকে কয়েক মূহুর্ত আগে সে চিনতোই না।

প্রেম গম্ভীর মুখোভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি ঐশ্বর্যের দিকে। এতো ঝামেলায় মেয়েটার দিকে নজর পড়েনি। এতো সময় কোথায় তার? এখন না চাইতেও নজর পড়ছে। কারণ সে একেবারে অদ্ভুত! গোলাপি ফর্সা চেহারায় ডাগরডাগর চোখ। চোখগুলো যেন মেয়েটাকে একটু আলাদা করে। স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় চোখ রয়েছে তার। ঘন চোখের পাপড়ি তা আড়াল করে রেখেছে। মাঝে বড় বড় গোল নীল রঙের চোখের মনি। রেয়ার চোখ! ভেবে আরো একটু মনোযোগ বাড়ায় প্রেম। সরু নাক আর চিকন ঠোঁট! চুলগুলো বেঁধে রাখা ওপরদিকে। হালকা কোঁকড়ানো চুল পিঠে কালো জ্যাকেটে ছড়িয়ে রাখা। ঘাড়ের বাম দিকে বেয়ে নেমেছে একটা ট্যাটু। একটা ড্রাগনের ট্যাটু। তার ড্রেসআপও আধুনিক। কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স, হাতে চিকন চেইনের ন্যায় ব্রেসলেট। গলায় ঝুলিয়ে রাখা একটা চেইন। হাতের দিকে খেয়াল করতেই প্রেমের নজর যায় একটা দাগের দিকে। ঠিক দাগ বললে ভুল হবে। ট্যাটুই করেছে হয়ত।

চোখ সরিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল প্রেম। এমন মেয়ে তার খুব একটা পছন্দ নয়। দেখলে বিরক্তি আসে। ঐশ্বর্যের একাধিক সৌন্দর্যের মান রয়েছে ঠিক কিন্তু মেয়েলি কোনো গুন খুঁজে পায়নি প্রেম। তাছাড়া মেয়েটা উশৃংখল। কোনো মেয়েলি গুন এখন অবধি দেখতে পেলো না প্রেম। ভাবনা বাদ দিয়ে আবারও ডক্টরের দিকে তাকায় প্রেম। এতো ভেবে লাভ আছে কি? মেয়েটাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে গেলে আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা সন্দেহ!

ড্রেসিং শেষে ঐশ্বর্যের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিল ডক্টর। ঐশ্বর্যের বিরক্ত লাগলেও চুপচাপ তা হজম করে নিল সে। জীবনে প্রথমবার ব্যান্ডেজ লাগিয়েছে সে। বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে প্রেমের দিকে তাকাতেই বিগড়ে যাওয়া মেজাজ হঠাৎ করেই পাল্টে গেল। একধ্যানে ফোন ঘাঁটছে প্রেম। ভ্রু কুঁচকে দেখছে কিছু একটা। ডক্টরের কথায় ধ্যান ভাঙে প্রেমের। মুখ তুলে তাকায় সে।
“হয়ে গেছে। বেশ গভীরভাবে আঘাত লেগেছে। তবে সমস্যা নেই। সেড়ে যাবে। ব্যান্ডেজ তিনদিন পর খুলবেন। আর আপনি যেন পেশেন্টের কে হন? হাজবেন্ড?”

কাশি উঠে গেল প্রেমের। ঐশ্বর্য চোখ বড় বড় করে তাকালো। কি বলল এটা ডক্টর। ভাবতেই চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেল ঐশ্বর্যের। অতঃপর ঐশ্বর্যের নিজেরও কাশি উঠে গেল। দুজনেরই কাশি দেখে ডক্টর নিজেও থতমত খেলো। প্রেম কাশি থামিয়ে আগের ন্যায় গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
“কেউ না ও আমার। আমি ওর নামটা অবধি জানি না।”

“তাহলে?”

“আমাদের দেখা কিছুক্ষণ আগে। ওর জন্য কোনো মেডিসিন বা কিছু লাগবে?”

ঐশ্বর্য ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। আর বলল,
“আমার এসব কিছু লাগবে না। এমনি ঠিক হয়ে যাবে।”

প্রেম আর কিছু বলল না। পেমেন্ট করার সময় প্রেম পেমেন্ট করার সময় ঐশ্বর্য পেমেন্ট দিল। প্রেম কিছু বলল না। হনহনিয়ে বেরিয়ে এলো সে। পিছু পিছু বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য। এই লোকটা দেখি প্রয়োজনের বেশি একটা ওয়ার্ডও উচ্চারণ করছে না। একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত নয় কি যে তার এখন কেমন লাগছে? এবার ঐশ্বর্যের মনে হলো লোকটা এতোটাও প্রেমিক লোক না। একবারে গম্ভীর!

গাড়িতে এসে বসল প্রেম। ঐশ্বর্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকালো সে। প্রেম গাড়ির জানালা থেকে মাথা বের করে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি একা বাড়িতে যেতে পারবে?”

ঐশ্বর্য কি বলবে ভাবতে শুরু করল। কিন্তু বলবে তা ভেবে পেল না। প্রেম নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত প্রায় ১২ টা ছুঁইছুঁই। এতো রাতে একটা মেয়েকে ছাড়া ঠিক বোধগম্য হলো না তার। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
“গাড়িতে বসো।”

ঐশ্বর্য হতবাক হয়ে বলল,
“হোয়াট?”

“গাড়িতে বসো। তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমি নিজে বাড়িতে যাব। ফাস্ট!”

ঐশ্বর্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে প্রেমের ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল। মেয়েটা কি কানেও শুনতে পায় না? বিরক্তে চোখ বুঁজে ঐশ্বর্যকে কিছু বলতেই হঠাৎ নিজের পাশে ঐশ্বর্যের কন্ঠ পেয়ে চোখ খুলল সে।
“আই এম রেডি। লেটস গো!”

অবাক হলো প্রেম। এই মেয়েটা না এখনো গাড়ির বাহিরে ছিল? এখনি গাড়ির ভিতরে কি করে? হাউ? ঐশ্বর্য মুচকি হাসলো। যেন সে জানতো প্রেম অবাক হবে। নিজেকে সংযত করে গাড়ি স্টার্ট দিল প্রেম।

এক শহর থেকে অন্য শহরে এসেছে প্রেম। সে ভেবেই পাচ্ছে না মেয়েটা এতো দূর এসেছে তাও একা?
“আর কত দূর তোমার বাড়ি?”

প্রেমের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে ছিল ঐশ্বর্য। তার কন্ঠস্বরে কিছুটা নড়েচড়ে বসল সে। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“সামনে গিয়ে বাম রাস্তায় মোড় নিলেই আমার বাড়ি।”

“নেক্সট টাইম এমন কোথাও যাবে না যেখানে সম্মানহানি হতে পারে। বার বার সবাই তোমাকে বাঁচাতে আসবে না।”

“আমাকে বাঁচাতে এসে তো ওই কৌশিককে বাঁচিয়ে দিলেন।”

বিড়বিড়িয়ে বলল ঐশ্বর্য। তা ভালো করে শুনতে পেয়ে সে বলল,
“হোয়াট?”

“নাথিং।”
হকচকিয়ে বলল ঐশ্বর্য। প্রেম গাড়ি ব্রেক করে ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার বাড়ি এসে গেছে।”

নিজের জানালার ডানপাশে তাকালো ঐশ্বর্য। নিজের বাড়ি দেখে বলল,
“আপনি চিনলেন কি করে?”

“কমন সেন্স! এখানে এই বড় বাড়িটা একটা আছে। আর তুমি বড়লোকের উশৃংখল মেয়ে দেখলেই বোঝা যায়। এই বাড়িটা নিশ্চয় তোমার হবে।”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। মুখ কাঁচুমাচু করে বসে রইল। তারপর বসে থেকে নেমে গেল। একবার প্রেমের দিকে তাকালো সে। আচমকা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের গতিতে চলে গেল প্রেম। ঐশ্বর্য তাকিয়ে রইল সেই পানে। মনটা যেন পড়ে রইল গাড়িতেই প্রেমের কাছে!

বাড়িতে ঢোকার আগে মেইন দরকার সামনে দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ ঐশ্বর্য। এখন বাড়িতে ঢুকলে নির্ঘাত কোনো না কোনো ঝড় বয়ে নিয়ে আসবে তার মা তার ওপর। ঢক গিলে বাড়িতে নক করতেই খুলে গেল দরজা। পিছিয়ে গেল ঐশ্বর্য। তার মা স্বয়ং সামনে দাঁড়িয়ে। মাধুর্য সিনহা! তার মা। মাধুর্যের চোখমুখে ভয়ানক রাগ। মেয়ের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে রাগটা উবে গেল তার। অস্থিরতার সঙ্গে এগিয়ে এসে বলল,
“কি হয়েছে? নিজের কি অবস্থা করেছো এটা? কি করে হলো এটা?”

“তেমন কিছু না মা ওই একটু লেগে গিয়েছে।”

“কোথায় গিয়েছিলে? তোমাকে খুঁজে হয়রান হয়েছে সবাই। আর নিজের কি অবস্থা করে বাড়ি এসেছো? নিশ্চয় কিছু ঘটিয়েছো? সত্যি করে বলো ঐশ্বর্য!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বাড়িতে মেহমান রয়েছে তাই পর্বটা বেশ ছোট। গল্পটা পুরোটা কাল্পনিক।]

লেখিকার গ্রুপ : আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here