প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব ১

0
1713

ক্লাবে সকলের সামনে কুপ্রস্তাব ও অশালীন আচরণ করার কারণে নিজের হাতে থাকা গ্লাসের সব শ্যাম্পেইন ছুঁড়ে মারে ঐশ্বর্য কৌশিক শাহিনের দিকে। চোখেমুখে লাল আভা ক্লাবের লাল, নীল হরেক রঙের আলোতে বোঝা না গেলেও চেহারার অঙ্গিভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে ঐশ্বর্য ভয়ানক রেগে আছে। শুধু তাই নয় তার সামনে থাকা কৌশিকও রেগে আছে। তার শার্টে, মুখে শ্যাম্পেইন ছুঁড়ে মারার ভয়াবহ অপরাধ যেন করে ফেলেছে ঐশ্বর্য।
“হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার মতো মেয়েদের রাতে বেডে আর পরেরদিন টিস্যু পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলি। একটু বেশি সুন্দরী জন্য এমাউন্ট বেশি দিতে চেয়েছিলাম জন্য এটিটিউট দেখাচ্ছো?”

“শাট আপ! ইউ ব্লাডি, তোমার ওইসব টাকা নিজের চরিত্রের ঢেলে যদি চরিত্রবান হতে পারো তাহলে কাজে লাগবে। ওইসব আমাকে দেখাতে আসবে না। নয়ত…”

রাগে চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে ঐশ্বর্যের। নাইট ক্লাবের নানানরকম আলোতে ঢাকা পড়েছে তার লাল চোখজোড়া। বড় শ্বাস নিয়ে যুবকটির পাশ কাটিয়ে যেতেই যুবকটি রাগে-জেদে শক্ত করে চেপে ধরে ঐশ্বর্যের হাত। যুবকটির সম্মানে আঘাত লেগেছে। এভাবে তাকে কেউ রিজেক্ট করেনি। তার ওপর চোখেমুখে যেভাবে শ্যাম্পেইন ছুঁড়ে মেরেছে! এই মেয়ের সাহস আছে বলতে হয়। নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ঐশ্বর্য। কিন্তু খুব একটা লাভ হয় না। বরং কৌশিক তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য অন্য হাত দিয়ে তার গালে থাপ্পড় মারতে চাইলে কৌশলে সেটাও ধরে নেয়। নাইট ক্লাবের লোকজনদের এসব দেখার সময় নেই। কেউ নেশা করছে নয়ত ডান্স করছে নয়ত কারো হুঁশই নেই। দুই-একজন দেখলেও এসব পাত্তা দেয় না।

“আমাকে টাচ সাহস করছো তুমি। ফল খুব একটা ভালো হবেনা। ছাড়ো আমাকে।”
রাগে দাঁত চেপে বলল ঐশ্বর্য। বড় বড় আঁখিতে তার ভয়াবহ দৃষ্টি কৌশিকের কাছে বেশ মজার! সে হেঁসে বলল,
“কাম অন বেবি। ইটস নরমাল। সকালে কেউ কাউকে চিনব না। তাছাড়া তোমার মতো তেজি মেয়েকে আরো ভালো লাগে আমার।”

রাগে ফুঁসে উঠল ঐশ্বর্য।
“আমি তোর এমন অবস্থা করতে পারি যে সকালে এমনিতেই তুই চেনার অবস্থায় থাকবি না।”

“এই মূহুর্তে আমি সেটাই চাইছি। লেটস গো!”

কৌশিক ছাড়ল না ঐশ্বর্যকে। বরং তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে সিঁড়ির দিকে উঠে যেতে লাগল। একসময় সিঁড়ি দিয়ে বেয়ে উঠে ঘরে আনা হলো ঐশ্বর্যকে। ছিটকে ফেলে দিল কৌশিক তাকে। ঐশ্বর্য গিয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। পেছন ফিরে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো সে। হালকা আলোতে মোটামুটি সবকিছু দৃশ্যমান। ঐশ্বর্য নেশার ঘোরে থাকলেও এসব টানাহেঁচড়াতে কেটে গেছে নেশা। এখন তার মনে অন্যকিছুর নেশা কাজ করছে।

কৌশিক এগিয়ে এলো ঐশ্বর্যের দিকে। ফিসফিস করে বলল,
“জোরজবরদস্তি একটুও ভালো লাগে না মিস. বিউটিফুল। তার থেকে বলো তোমার কত চাই। ততই দেব আমি। টাকাই ভরিয়ে দেব।”

ঐশ্বর্য মুচকি হাসে। ঘাড় বাঁকিয়ে হেঁসে হেঁটে গিয়ে চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে। চোখ ছোট করে মুখে হাসির রেশ রেখে বলে,
“টাকা, গয়নাগাটি, লাক্সারি এসব তো কমন জিনিস। বাট আই এম নট কমন। আমি যেহেতু কমন না আমার পছন্দও নিশ্চয় কমন হবেনা!”

“তো বলো বলো কি চাই তোমার?”
বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসে জিজ্ঞেস করল কৌশিক।

“তোমার মৃত্যু!”

বেশ খুশি হয়ে থাকলেও নিমিষে মুখটা জড়িয়ে গেল কৌশিকের। মেয়েটা কি পাগল নাকি? তবুও কৌশিক মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“মজা করছো নাকি?”

“এতক্ষণ মজাই করছিলাম বাট নাউ আই এম সিরিয়াস। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না? আমার কি চাই? এই মূহুর্তে তোমার প্রাণ আমি নিজের হাতে কেঁড়ে নিতে চাই।”

ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে আসে কৌশিকের দিকে। তার মুখে এখনো হাসি তবে হাসিটাতে কেমন জানি ভয়ানক হাসি নামে মানায়। সে কৌশিকের বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বলে,
“হঠাৎ করে এখানে যেই হার্টবিট চলছে সেটা বন্ধ হয়ে গেলে কেমন লাগবে তোমার? তুমি কি ভেবেছিলে তুমি চেয়েছো জন্য আমাকে এই রুম অবধি আনতে পেরেছো? না, আমি চেয়েছি জন্য তুমি আমাকে এই অবধি আনতে পেরেছো। নাউ ইটস মাই টার্ন।”

কৌশিকের মনে হলো নেশার ঘোরে মেয়েটার মাথা পুরোটাই গেছে। তাতে কৌশিকের কি? সে তো চায় তো ঐশ্বর্যকে। সে স্বাভাবিক আছে কি নেই সেটা কি দেখার দরকার আছে? ঐশ্বর্যের হাত ধরতে নিল কৌশিক। হাত ধরতেই যেন ধারালো তীক্ষ্ণ কিছু একটা তার হাতে আঘাত করল। ‘আহ’ করে দুই ধাপ পিছিয়ে গেল সে। নিজের হাত চেপে ধরে ঐশ্বর্যের হাতের দিকে নজর নিল। কি আছে ওর হাতে? নিজের হাত তুলে ধরল ঐশ্বর্য। তার হাতে যেন নখ নেই! ছুরির ন্যায় ধারালো একেকটা নখ। স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে তার নখ। সেই সাথে নখের মাথা সরু হয়ে এসেছে। যা দিয়ে সহজে কাউকে আঘাত করা যায়। চোখ তুলে তাকালো ঐশ্বর্য।

ঐশ্বর্যে চোখজোড়া দেখে আরো ঘাবড়ে গেল কৌশিক। এটা কি মানুষ? চোখে যেন রক্ত বইছে। লাল চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। হা করল ঐশ্বর্য। দুইধার দিয়ে বেরিয়ে এলো ধারালো ও তীক্ষ্ণ দুটো দাঁত।

গায়ের লোম শিউরে উঠল কৌশিকের। হাসল ঐশ্বর্য। ঘাড় কাঁত করে বলল,
“টাচ করবে না আমাকে?”

“দূ…দূরে যাও। কে তুমি? দূরে যাও আমার থে…থেকে।”

ঐশ্বর্য আরো এগিয়ে গেল। আচমকা চোখের পলকে ঐশ্বর্য কৌশিককে ধরে এনে দেয়ালে ঠেকিয়ে তার গলা টিপে ধরল। সবই হলো ঝড়ের গতিতে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করল কৌশিক। এতে ভাবান্তর হলো না ঐশ্বর্যের। তার চোখে জ্বলছে আগুন। মানুষ মেরে ফেলা তার নেশা! শুধু মানুষ কেন প্রাণ নেওয়া যেন মজার খেলা আর যদি কেউ তার অপছন্দের কাজ করে তাহলে তো কথায় নেই! ছটফটিয়ে পাশেই একটা ফ্লাওয়ার ভাস পেল কৌশিক। সেটা কোনোরকমে হাতে নিয়ে ঐশ্বর্যের কপালের বাম পাশে আঘাত করতেই কৌশিককে ছেড়ে দিয়ে নিজের কপালে হাত দিল ঐশ্বর্য। চোখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড। চোখ খুলতেই সে দেখল কৌশিক পালানোর জন্য প্রাণপণে দরকার দিকে ছুটছে। সেকেন্ডেই বিদ্যুতের গতিতে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। থমকে গেল কৌশিকের পা। ঐশ্বর্য থেমে থেমে গর্জে উঠে বলল,
“ভ্যাম্পায়ারের সাথে ছুট লাগানো এতোটা সহজ নয় কৌশিক!”

“ভ্যা….ভ্যাম্পায়ার?

” ইয়েস! ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য।”

হাত-পা কাঁপছে থরথর করে কৌশিকের। কূলকিনারা পাচ্ছে না সে। গলা জ্বলছে তার। রক্তও পড়েছে হয়তবা। সে বাঁচতে চায়। বুদ্ধি না পেয়ে এবার ঐশ্বর্যের গলা টিপে ধরে সে। ঐশ্বর্য কিছুটা চমকে গেলেও রেগে ওঠে প্রচুর। নিজের হাত কৌশিকের হাতে রাখতে যাবে তৎক্ষনাৎ খুলে যায় রুমের দরজা। বাহিরের আলোতে আর লোকজনের উপস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হয়ে উঠল ঐশ্বর্য। চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকল, ‘সামনের লোকজন কি সব দেখে ফেলল? তাহলে আজই ওদেরও শেষ দিন হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।’

এমন ভাবনায় ডুবে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে অনুভব করল কেউ তার কপালের আঘাত লাগা জায়গায় কিছু একটা চেপে ধরেছে। আস্তে করে চোখ মেলল ঐশ্বর্য। নাকে এলো এক অদ্ভুত সুভাস। মানুষের শরীরের ঘ্রাণ তবে একটু অদ্ভুত। হয়ত পারফিউমের কারণে এমনটা লাগছে। চোখ খুলে স্পষ্ট তাকাতেই সামনে একটা প্রশস্ত বুক হাজির হলো। যা কালো কোট, লাল টাই আর সাদা শার্টের আস্তরণে ঢাকা। একবারে ফর্মাল ড্রেসআপ যাকে বলে! একজন পুরুষ তাকে স্পর্শ করেছে। পুরুষটি তার একটা হাত কপালে অন্যহাত মাথা ধরে রেখেছে। কোনো বিশ্রী স্পর্শ নয় এটা। মাথা তুলে তাকালো ঐশ্বর্য। একটা সুন্দর মুখ তার চোখের সামনে। সুদীর্ঘ চোখে রাগি দৃষ্টিতে বেশ মানিয়েছে। চোয়াল শক্ত করে আছে লোকটা। কপালের চামড়াতে ভাঁজ পড়েছে কয়েকটা। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে সে যেন একেবারে মানানসই। হঠাৎ ঐশ্বর্য লক্ষ্য করে লোকটা তার দিকে তাকালো। বুকের ভেতরটা যেন ধক করে উঠল তার। লোকটার চোখে হারিয়ে যাওয়া যায় নাকি? দেখতে থাকলো ঐশ্বর্য। এই দৃষ্টিতে ঐশ্বর্য হারিয়ে যাচ্ছে।

“আর ইউ ওকে? আই এম সরি। আমার আসতে লেট হয়ে গেল।”

ঐশ্বর্যের সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। হয়ত কিছু না বলাই ভালো। লোকটার ঠোঁটজোড়া আবারও নড়ছে।
“হয়ত একটু আগে এলে এই আঘাত লাগতো না তোমার। কি করব? আই ওয়াজ হেল্পলেস! একটা ডিলের জন্য এসেছিলাম। সেটা ফেলে রেখে আসতেও পারছিলাম না।”

ঐশ্বর্যের বেশ লাগছে কন্ঠস্বর। সে চাইছে লোকটা আরো বলুক কিছু কথা কিন্তু বলছে না। এতে বিরক্তও লাগছে তার। কিন্তু তার বিরক্ত লাগার কথা তো নয়। অস্ফুটস্বরে ঐশ্বর্য বলল,
“ইটস ওকে।”

“আর তুমি! কৌশিক শাহিন হও আর যেই হও পুলিশে কল করেছি আমি। মেয়েদের অশ্লীলতার অপরাধে কত প্রকার শাস্তি হয় সেটা জানো তো? তোমাদের মতো ছেলেদের জন্য কোনো মেয়ে কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারে না। যদি পারতাম তোমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলতাম। ডিজগাস্টিং ম্যান!”

কৌশিক হতবাক। সে বাকরুদ্ধ। বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। আসলে কি বলার দরকার? ঐশ্বর্যের যে রুপ সে দেখেছে সেটা বলবে? তৎক্ষনাৎ পুলিশ আসে। কৌশিককে ধরে। কৌশিক দ্রুত বলে ওঠে…
“ও…ও মানুষ না। ও একটা… মানুষ না ও।”

হকচকিয়ে তাকায় ঐশ্বর্য। চোখ গরম করে তাকায় কৌশিকের দিকে। ওর কথা এখন কেউ শুনছে না এতে সে নিশ্চিন্ত হলেও আশঙ্কা রয়েই যায়। তাকে তো ছাড়া যাবে না! এখন ধরাও যাবে না। মহা মুসিবত!

“আর তুমি! এটা ভেবো না ভুলটা শুধু ওর ছিল। তোমারও ছিল। তুমি একটা মেয়ে। আর যতই হক এতো রাতে এভাবে এমন একটা জায়গায় নাচ-গান যারা করে তাদের ভালো মেয়ে বলে না। এখানে আসাও তোমার একটা ভুল।”

ঐশ্বর্য কিছুটা ঠোঁট উল্টে বলে,
“আপনিও এসেছেন এখানে ভুলে যাচ্ছেন বুঝি?”

“শেখ আনন প্রেমের এমন জায়গায় পা দেওয়ার রুচি নেই। কিন্তু যাদের বিজনেস ডিল ছিল তাদের আসতে হয়েছে। আর ভাগ্যক্রমে দেখা হলো। নয়ত… বাই দ্যা ওয়ে, তোমার পরিবার তোমাকে কেমন শিক্ষা দিয়েছে জানি না কিন্তু এরপর থেকে এসব জায়গায় না এলেই নিরাপদ হবে তোমার জন্য। আন্ডারস্ট্যান্ড?”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। শুধু সরে আসতে চাইল। কিন্তু কপালে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করল সে। ‘আহ’ করে উঠতেই প্রেম নামক পুরুষটি আবারও তার আঘাত লাগা জায়গায় তার রুমাল চেপে ধরল।
“ব্লিডিং হচ্ছে। তোমার ইমিডিয়েট ফার্স্ট এইড হওয়া দরকার। অনেকটা কপাল কেটেছে।”

ঐশ্বর্য মুগ্ধ হয়েছে আজ। মুগ্ধ নয়নে দেখছে মানুষটাকে। এই প্রথম সে কারো ওপর মুগ্ধ। সে ভাবছে, লোকটা এতো মনোমুগ্ধকর কেন? প্রেম নাম বলে সবার প্রতি এতো প্রেম নাকি শুধু তার প্রতি?

চলবে….

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১

[বি.দ্র. অনেকদিন পর নতুন গল্প। গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক। ফান্টাসি ক্যাটাগরির গল্প। তাই কেউ বাস্তবতার সাথে তুলনা করবেন না এবং প্রথম পর্বেই পুরো গল্প বিচার করবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here