প্রেমানুরাগ পর্ব ১৬

0
507

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১৬

সময়ের সাথে কেটে যায় মানুষের ব্যস্ত জীবন। হঠাৎ দেখায় কখন মনের মাঝে ভালোলাগা কাজ করে কেউ বুঝতে পারে না। ভালো লাগা থেকেই শুরু হয় ভালোবাসা। ঠিক যেমন শশী আর রবির মাঝে হয়েছে। এই কয়েকদিন দুজনের মাঝে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। একে অপরের সাথে দেখা করা, হাতে হাত রেখে পাশাপাশি ঘুরতে যাওয়া, রাত জেগে ফোনালাপ করা তাদের নিত্যদিনের কাজ। তবে দেখা করা টা খুব বেশি সহজ হয় না। কারণ একটাই শশীর বাবা। সোহরাব এখনো গার্ড ছাড়া শশীকে একা ছাড়তে চায় না। তাই শশী তাদের চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে রবির সাথে চলে যায়। আজও ঘুরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরলো শশী। গুনগুন করে গান গেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল সে। তখন পিছন থেকে ডেকে উঠলো সোহরাব।

‘কোথায় গিয়েছিলে শশী?’

সিঁড়ির মধ্যভাগে এসে দাঁড়িয়ে পরলো শশী। হাসিমুখে পিছে ফিরে প্রতিত্তুর করলো, ‘ভার্সিটিতে ছিলাম।’

ভ্রুঁ কুঁচকালো সোহরাব। পরনে তার সাদা পাঞ্জাবি। দুই হাত পিছে নিয়ে গম্ভীর মুখে সটান হয়ে দাঁড়ালো। বললো, ‘তোমার আম্মুও এক কালে ছুটির দিনে ভার্সিটিতে যেত।’

বাবার কথা শুনে ভ্যাঁবা চেকা খেলো শশী। হ্যাঁ আজকে ভার্সিটি ছিল না তার। ছিলো না বলতে গেলে তার ডিপার্টমেন্টের ক্লাস নেই আজ। পাপা কিভাবে জানলো সেটা? আম্মুও এমন করে পাপার সাথে দেখা করতো? হাসি পেল তার। সিঁড়ি থেকে নেমে সোহরাবের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর ভ্রুঁ নাঁচিয়ে দুষ্টুমির কন্ঠে বললো, ‘তোমরা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে?’

মৃদু হাসলো সোহরাব। বললো, ‘লুকিয়ে বলতে গেলে আমাদের সম্পর্কের কথা বাসার কেউ জানতো না। তাই শিশির আমার সাথে দেখা করতে আসলে মিথ্যে বলে আসতো। ঠিক আজ যেমন তুমি বললে।’

খুকখুক করে কেশে উঠলো শশী। গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে শুধাল, ‘আমি মোটেও তোমাদের মতো মিথ্যে বলে লুকিয়ে প্রেম করি না।’

‘জানি আমি। তুমি যে গার্ডদের প্রাণের ভয় দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখো সেটাও জানি। আর আমি এটাও জানি যে ওই ছেলের সাথেই তুমি ঘুরতে যাও।’ গম্ভীর কন্ঠে বললো সোহরাব। তার গম্ভীর কন্ঠ শুনে শশী কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। শুকনো ঢুক গিলে বলে উঠে, ‘আসলে বাবা..!!”

‘থাক বাদ দাও। শুনো শশী, ওই রবি ছেলেটা যদি তোমাকে কষ্ট দেয় তাহলে কিন্তু আমি তাকে জানে মে’রে ফেলবো। গট ইট!’

সোফায় বসে গম্ভীর কন্ঠে সিরিয়াস হয়ে বললো সোহরাব। শশী এগিয়ে তার পাশে বসলো। তারপর সোহরাবের এক হাত ধরে আশ্বাস দিয়ে বললো, ‘রবি অনেক ভালো ছেলে পাপা। আমাকে কখনো কষ্ট দিবে না।’

সন্তুষ্ট হলেন সোহরাব। ঠোঁটে হাসি রেখে মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘তুমি একদম তোমার মায়ের মতো হয়েছো শশী।’

শশী মিষ্টি হাসি দিল। বললো, ‘মাম্মামের চুল গুলো অনেক বড় ছিল। আর আমার গুলো ছোট মাত্র পিঠ পর্যন্ত।’

সোহরাব মেয়েকে বুকে জড়িয়ে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, ‘দেখতে কিন্তু এক।’

হাসলো শশী। সোহরাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর উচ্ছোক কন্ঠে বললো, ‘আচ্ছা পাপা কোথায় ঘুরতে যেতে তোমরা?’

সোহরাব হেসে উত্তর দিল, ‘আশেপাশেই ঘুরতাম দুজন।’

শশী সোহরাবের বাহু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ঘুরতে যাবার পর একটা মজার ঘটনা বলো।’ সোহরাব এবার ঠোঁট প্রসারিত করে প্রাপ্তির হাসি দিলো। তারপর মেয়েকে শুনাতে লাগলো শিশিরের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো।
________________

রাত্রীর মধ্যভাগ! চারপাশ নিস্থব্ধতায় ঘেড়া। ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ আজ। হাল্কা ঝড়ো হাওয়া ভয়ছে চারপাশে। আকাশ কাঁপিয়ে তীব্র ভাবে মেঘ ডাকছে। মেঘের ডাকের সাথে সাথে বিদ্যুৎ চমকে পৃথিবী আলোকিত করছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরলেও কিছুসময় পর বোধহয় তা মুষলধারের বৃষ্টির রূপ নিবে। শীতল পরিবেশে রুমের ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে সোহরাব। চোখ তার নিদ্রাহীন। হাতে রয়েছে জ্বলন্ত সিগারেট। যা থেলে ভ্যাঁপসা গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিছুসময় পর পর সিগারেটে প্রাণ ভয়ে টান দিচ্ছে। তারপর ফুঁস করে ধোঁয়া ছড়াচ্ছে চারপাশে। সোহরাবের এমন ছন্নছাড়া ব্যবহারে ক্রোধান্বিত হলো ইকবাল। বিছানা ছেড়ে উঠে এসে সোহরাবের হাত থেকে সিগারেটের টুকরো ফেলে বজ্র কন্ঠে বলে উঠলো, ‘তুই কি এই জন্মে শুধরাবি না?’

বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করলো সোহরাব। কপালে চরম বিরক্তির ছাঁপ ফেলে বললো, ‘তুই সব সময় এমন করছ।’

ইকবাল বিছানায় বসলো। বুকে হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘ভেবেছিস কিছু?’

সোহরাব গা ছাড়া ভাবে চেয়ারে পিঠ ঠেকালো। তারপর হাই তুলে বললো, ‘কোন ব্যাপারে?’

রেগে গেলো ইকবাল। এই কিছুদিন ধরে সোহরাবকে রবির ব্যাপারে বুঝানোর চেষ্টা করছে। ওইদিন ভদ্রমহিলার সঙ্গে ব্যবহার খারাপ করায় অবশ্যই তাকে ক্ষমা চেয়ে সব ঠিক করতে হবে। কিন্তু সোহরাবকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না ইকবাল। সোহরবাব কিছুতেই রোজিনার সঙ্গে কথা বলতে চায় না। না মানে না। রাগ দমালো ইকবাল। দাত চিবিয়ে বললো, ‘শা:লা, শশী আর রবির কথা বলতেছি।’

সোহরাব চোখ বন্ধ করে শুধাল, ‘আমি পারবো না ওই শাঁ’ক’চু’ন্নির সাথে কথা বলতে।’

‘ভাই ভুল টা তো তোর। তুই খারাপ ব্যবহার করেছিলি রবির সাথে। তোর ভাগ্য ভালো মহিলা তোর বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নেয়নি। তাছাড়া শশী রবি একে অপরকে ভালোবাসে। তো আমাদের কি উচিত না তাদের বিয়ে দেওয়া?’

চোখ খুলে তাকালো সোহরাব। সোজা হয়ে বসে ক্ষুন্ন মনে বলল, ‘শশীকে বিয়ে দিলে চলে যাবে।’

তপ্ত শ্বাস ফেললো ইকবাল। বন্ধুকে বুঝাতে লাগলো, ‘দোস্ত, শশী বড় হয়েছে। তাকে বিয়ে দেওয়া এখন ফরজ। সারাজীবন কি ঘরে বসিয়ে রাখতে পারবি? তুই কি চাস না শশী তার ভালোবাসার মানুষকে পাক? সুখি হোক? ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর যন্ত্রনা কতটা তুই তো জানিস। প্লিজ ইয়ার শশী মামনিকে কষ্ট দিস না।’

হাসলো সোহরাব। এ হাসি কোনো মজার হাসি নয়। এই হাসি হলো অসহায়ত্বের হাসি। হাসতে হাসতে সোহরাব কেঁদে ফেললো। হতভম্ব হলো ইকবাল। সোহরাব বললো, ‘আমি চাইনা শশী কষ্ট পাক। সে সারাজীবন ভালো থাকুক। রবির সাথেই তাকে বিয়ে দিব। কিন্তু আমার মেয়ে আমার থেকে দূরে চলে যাবে। তাকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে?’

কাঁদতে লাগলো সোহরাব। এগিয়ে সোহরাবকে ধরে। বুঝিয়ে বলে, ‘শশী দূরে যাবে না। প্রতিদিনই ওর সাথে তোর দেখা হবে। এতো আপসেট হচ্ছিস কেন? বোকা তুই? কাল রবির মায়ের সাথে দেখা করতে যাবি। সব কিছু ঠিক করে বিয়ে দিবি তাদের। বুঝছোস?’

মাথা উপর নিচ করে সম্মতি দিল সোহরাব। নাক টেনে চোখের পানি মুছলো। কিন্তু বেশিক্ষণ রইলো না। আবারো বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেললো। ইকবালকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ইকবাল আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। এখানে, এখানে ব্যাথা হচ্ছে।’ বুকের বা পাশটা দেখিয়ে বলতে লাগলো সোহরাব।

‘শিশির আমাকে ছেড়ে চলে গেলো কেন? আমি কি ওকে কম ভালোবাসতাম? যতেষ্ট সময় দিয়েছি ওকে। কথা ছিল কেউ কাউকে কখনো ছাড়বো না। এখন দেখ সে ঠিকই চলে গেছে কিন্তু আমাকে সাথে নিয়ে গেল না। আমিও তো মরে যেতাম। কিন্তু, কিন্তু বেঁচে থাকার ছোট্ট একটা প্রাণ দিয়ে গেছে আমাকে। শশীকে নিয়ে এখন আমার জীবন। শিশিরকে অনেক মিস করি ইকবাল। ওকে ফিরে আসতে বল নাহয় আমাকে সাথে নিয়ে যেতে বল। আমার কষ্ট হয় অনেক।..!!”’

ইকবালের চোখ লাল হয়ে এলো। বুঝানোর মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। শশী বাবার কান্নার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে আসলো। এসেই অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, ‘কি হয়েছে? পাপা কাঁদছে কেন? পাপা?’

ইকবাল চোখের ইশারা দিল শশীকে। বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে সোহরাবকে জড়িয়ে ধরলো শশী। আশ্বাস দিল। শান্ত হতে বলল, ‘প্লিজ পাপা। তুমি অনেক বড়। এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছ কেন? আমি তো সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো। কোথায় নআ যাচ্ছি আমি। না তো যাবো না। বিয়ের পর দরকার হলে ঘর জামাই বানিয়ে ফেলবো তাও শশী ইমতিয়াজ তার বাবাকে ছেড়ে যাবে না।’

হাসলো সোহরাব। নাক টেনে চোখের পানি মুঁছলো। শান্ত হলো সে। বললো, ‘কোথাও যাবি না তুই প্রমিস কর।’

শশী হাসি মনে সোহরাবের হাতে হাত রেখে বললো, ‘যাবো না। প্রমিস! এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। আসো।’

সোহরাবকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করলো শশী। ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে বিছানায় বসে সোহরাবের মাথায় ছোট ছোট হাত দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শশী। ইকবাল ফুঁশ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখে জমে থাকা পানি মুছে বেরিয়ে এল রুম থেকে। সোহরাব কি এই ফোভিয়া থেকে বের হবে না আর? এতো ভয় কবে কাটবে তার? বন্ধুর এই কষ্ট যে আর নিতে পারছে না ইকবাল। তার নিজেরও কষ্ট হয় বন্ধুকে এভাবে দেখলে। ভালো লাগে না। সাধ্য থাকলে শিশিরকে এনে দিতো ইকবাল। কিন্তু শিশির তো না ফেরার দেশে। কিভাবে সে শান্ত করতে সোহরাবকে?

চলবে?

নোট : আপনাদের কি মনে হয় সোহরাব কি রোজিনার সাথে কথা বলতে যাবে? দন্ড ভেঙ্গে কি রবি শশী এক হবে? নাকি আলাদা হয়ে স্যাড ইন্ডিং হবে? ? কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here