প্রেমপ্রেয়সী পর্ব ২+৩

0
1565

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_২ ও ৩
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া ফোনের স্ক্রিনে রুদ্রের নাম ভেসে উঠতে দেখে কাপা কাপা হাতে ফোনটা ধরে কানে দিল। সে ফোনটা কানে দিতেই ওপাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল,

— রাহিয়া তুমি ঠিক আছো তো? আসলে ওই সময় পরিবেশটা খুবই অন্য রকম হয়ে গেছিল। এজন্যই আমি চলে এসেছিলাম।

রুদ্রর কথা শোনার পরেও রাহিয়া কিছু বলল না। সে চুপ করে শুনতে লাগল। তাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রুদ্র আবারও বলে উঠল,

— রাহিয়া তুমি চুপ করে আছো কেন? কিছু বলছো না কেন? আচ্ছা নিরা কি তোমাকে আমাদের বিষয়ে কিছু বলেছে?

কথাটা শোনার পর রাহিয়া আর চুপ করে থাকতে পারল না। সে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে উঠল,

— হ্যাঁ বলেছে।

তার উত্তর শুনে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

— ওহ ভালোই হয়েছে ও তোমাকে আমাদের বিষয়ে বলে দিয়েছে। নাহলে আমাকেই এই বিষয়ে তোমাকে খুলে বলতে হতো। আর এতে তোমার অস্বস্তিও হতে পারত।

— হুম। আমি খুবই দুঃখিত। আমি আগে জানলে কখনোই তোমাকে এসব কথা বলতাম না। তাই আমি তোমাকে অনুরোধ করছি যে তুমি আজকে আমাদের দেখা করার কথা ভুলে যাও। আর এটাও ভুলে যাও যে আমি তোমাকে পছন্দ করি সাথে এসব কথা বলেছি।

— আচ্ছা আমি ভুলে যাব।

কথাটা বলে রুদ্র আরও কিছু বলতে গেলে রাহিয়া ওকে বলতে না দিয়ে বলে উঠল,

— আমি তোমাদের সম্পর্কে আগে জানলে কখনোই এই সব কথা তোমাকে বলে এতো বড়ো ভুল কখনোই করতাম না।

বলেই সে কিছুক্ষণ থেমে আবার শীতল কন্ঠে বলতে শুরু করল,

— রুদ্র তুমি তো আমাকে এই কথাটা আগে বলতে পারতে যে তুমি আমার ছোট বোনের সাথে সম্পর্কে আছো। আমি তো তোমাকে আমার ভালো ফ্রেন্ডও ভাবতাম। কিন্তু তুমি কি আমাকে ভাবতে না?

কথাটা শুনতেই রুদ্র সাথে সাথে বলে উঠল,

— না না সেটা না। আমিও তোমাকে আমার ভালো বন্ধু ভাবি।

— তাহলে এই কথাটা আমাকে বললে না কেন? কেন আমার থেকে লুকিয়ে গেলে? তুমি যদি আমাকে এই কথাটা আগে বলে দিতে তাহলে এমন সমস্যা কখনোই হতো না। আর আমার বোন আমাকে আবারও ভুল বুঝতো না।

— আসলে আমি তোমাকে এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। তবে সময় করে বলা হয়ে ওঠেনি। আমি আজকে তোমাকে এই কথাটা বলার জন্যই ডেকেছিলাম। কিন্তু তার আগেই তুমি আমাকে এই কথা বলে ফেললে।

রাহিয়া এবার আরও মন খারাপ করে ফেলল। সে নিচু স্বরে বলে উঠল,

— সরি। আমি আসলেই অনেক বেশি দুঃখিত। আমার হুট করে এমন কাজটা করা উচিত হয়নি।

— সমস্যা নেই। আচ্ছা রাহিয়া তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। শোনো রাহিয়া তুমি যখন আমাদের বিষয়ে জেনেই গেছ তখন কিছু বিষয় আছে যেগুলো তোমাকে আমি বলতে চাই। আজকে যেটা হয়েছে সেটা আমাদের সম্পর্কে বেশ কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। তাই এটাই ঠিক হবে যে তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। আর আজকে থেকে আমাদের একে অপরের সাথে দেখা না করাটাই ভালো। আমার মনে হয় তুমি আমাদের থেকে দূরে থাকলেই ভালো হবে। আমি চাই না তোমার জন্য আমার আর নিরার সম্পর্কে কোনো বাধা আসুক আর আমাদের মধ্যে ঝামেলা হোক।

— আরে না এসব কিছুই হবে। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো যে আমার জন্য তোমাদের সম্পর্কে কোনো সমস্যা আসবে না। আমি তোমার থেকে দূরেই থাকব।

কথাটা শুনে রুদ্র মুচকি হেসে বলল,

— ধন্যবাদ রাহিয়া। এজন্যই বন্ধু হিসেবে তোমাকে আমি এতো পছন্দ করি। তুমি সত্যিই আমার খুব ভালো বন্ধু।

রুদ্রের বলা কথাটা রাহিয়ার কাছে কিছুটা বি*ষের মতো লাগল। সে কথাটা ভাবতেই একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল,

— আচ্ছা ভালো থেকো।

বলেই সে ফোনটা কেটে দিল। সে ফোনটা পাশে রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার দুই চোখে অশ্রু টলমল করছে। সে কিছুতেই সেগুলোকে আটকাতে পারছে। সকল বাধা অতিক্রম করে তারা চোখের বাইরে আসতে চাচ্ছে। রাহিয়া চোখের পলক ফেলার সাথে সাথেই তার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সেই সময় রাহিয়ার আম্মু মিসেস নাদিয়া তাকে ডাকতে ডাকতে ওর রুমের দিকে আসছিলেন। ওনাকে গলার আওয়াজ শুনে রাহিয়া হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের অশ্রু মুছতে শুরু করল। তারপর সে নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। কিন্তু যখন দেখল সে সেটা পারছে সে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। সে অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই দেখল তার মা দাঁড়িয়ে আছেন। মিসেস নাদিয়া কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেলেন। তিনি চলে যেতেই রাহিয়া কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে লাগল। তারপর সে তার ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল দিল। ফোন দিতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠল,

— রাহিয়া কি অবস্থা? কি সিদ্ধান্ত নিলি? কবে বলবি তাকে তোর মনের কথা?

— সাবা তুই তো দুই বছরের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছিস তাই না?

— হ্যাঁ। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে তো কয়েকজনকে যেতে বলেছে। তোকেও তো বলেছিল। কিন্তু তুই তো আর যাবি না।

— সাবা আমিও তোদের সাথে যেতে চাই।

তার এমন কথা শুনে সাবা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— সত্যিই! কিন্তু তুই তো যাওয়ার জন্য না করে দিয়েছিলি। তুই তো বলেছিলি যে তুই রুদ্র ভাইয়াকে পছন্দ করিস। তাকে ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে চাস না। তাই তো না করে দিলি। তাহলে এখন আবার যেতে চাচ্ছিস কেন?

— কারণ আছে তাই। আমি এখন যেতে চাই। এখন কি যাওয়ার সুযোগ আছে?

— জানিনা। তবে তুই রাফাত স্যারকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারিস। উনি তোকে এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। এর দায়িত্বে তো উনিই আছেন।

— আচ্ছা।

— তবে যেতে বেশি সময় বাকি নেই তো তাই সমস্যাও হতে পারে। তুই বরং এখনি কল দে। কথা বলে আমাকে এই বিষয়ে বলবি।

— আচ্ছা আমি ওনাকে এখনি কল দিচ্ছি।

বলেই রাহিয়া কল কেটে দিল। তারপর সে তার ফোনটা নিয়ে উঠে বারান্দায় চলে গেল তার স্যারকে কল দেওয়ার কল দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর সে স্যারের সাথে কথা বলে ফিরে এলো। একটু পরই তার ফোনের তার বেস্টফ্রেন্ড সাবার কল এলো। সে ফোন ধরে কানে দিতেই সাবা বলে উঠল,

— রাহিয়া কি বললেন স্যার?

— স্যার বলেছে এখনো কিছুটা সময় আছে। আমার যদি পাসপোর্ট করা থাকে তাহলে আমি এখনো চাইলে যেতে পারি। আর আমার পাসপোর্ট আছে। তাই স্যার বলেছে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কালকে ওনার সাথে দেখা করতে।

কথাটা শুনে সাবা খুশি হয়ে বলে উঠল,

— এটাতো খুবই ভালো কথা। এখন আর আমাকে একা যেতে হবে না। শোন আমিও কালকে তোর সাথে যাব।

— আচ্ছা। এখন আমি রাখি। আমাকে কিছু কাগজপত্র খুঁজতে হবে।

বলেই সে কথা কেটে দিল। সে ফোনটা পাশে রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,

— যে আমাকে ভালোবাসেই না তার জন্য আমি কেন আমার স্বপ্নকে ছেড়ে দিব? আমি ওখানে যাব আমার নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য।

এসব ভেবে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরদিন রাহিয়া সাবাকে নিয়ে সেই স্যারের সাথে দেখা করতে গেল। যাওয়ার সময় সে সাবাকে আগের দিনের বিষয়ে সব বলে দিল। কয়েকদিনের মধ্যে রাহিয়ার যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেল। তারপর সে তার পরিবারের সবাইকে এই বিষয়ে বলল। তারা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে গেল। দেখতে দেখতে রাহিয়ার যাওয়ার দিন চলে এলো। সে মনে একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে দেশ ছাড়ল। যাওয়ার সময় সে নিজেকে কথা দিয়ে গেল যে সে যখন ফিরে আসবে তখন তার মনে রুদ্রের জন্য কোনো অনুভূতি থাকবে। সে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলবে।

রাহিয়ার দুই বছর থাকার কথা থাকলেও কাজের জন্য তাকে আরও কয়েক মাস তাকে ওখানে থাকতে হলো। আড়াই পর আজকে রাহিয়া দেশে ফিরছে। কিন্তু সে কাউকে বলেনি যে সে আজকে বাসায় ফিরছে। সে চায় না বলে বাসায় গিয়ে বাবা মাকে চমকে দিতে। তাই সে দেশে ফেরার পর সাবাকে বিদায় দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে একবারে বাসায় চলে যায়। কিন্তু বাসায় ফিরতেই চারপাশের পরিবেশ তাকে পুরো চমকে দেয়।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_৩
#লেখিকা_N_K_Orni

রাহিয়া সাবাকে বিদায় দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে একবারে বাসায় চলে গেল। কিন্তু সে বাসায় ফিরতেই চারপাশের পরিবেশ তাকে পুরো চমকে দিল। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই সে চারপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। সে ঠোঁট কা*মড়ে মনে মনে ভাবতে লাগল,

— বাসায় এতো মানুষ কেন? আজকে কি কোনো বিশেষ দিন? কিছুটা সাজানোও আছে দেখছি। কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি? যাই ভেতরে গিয়ে দেখি।

এসব ভাবতে ভাবতে সে বাসায় ভেতরে প্রবেশ করল। তখনই ওখান দিয়ে রাহিয়ার মামি যাচ্ছিলেন। ওকে দেখে তিনি ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন। একটু পরে ছেড়ে দিয়ে তিনি ওকে জিজ্ঞাসা করলেন,

— রাহিয়া কখন এলি তুই?

— এইতো বেশ কিছুক্ষণ আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছে ছিলাম। ওখান থেকে একবারে বাসায় এসেছি।

— ওহ ভালো করেছিল। তুই অপেক্ষা কর আমি তোর মাকে এখনি ডাকছি। বাসার সবাই তোকে দেখলে খুব খুশি হবে। আমি তোর মাকে তোর আসার কথা বলছি।

কথাটা শুনে রাহিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। উনি এবার রাহিয়াকে ছেড়ে সামনের দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলেন,

— আপু একটু এখানে এসো। তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি এসো।

উনি এসব কথা বলছিলেন তখন রাহিয়া ওনার মুখের দিয়ে তাকিয়ে মনে মনে বলে লাগল,

— মামি এতোদিন পর এসেছে বলে বাসায় এতো মানুষ এসেছে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? আম্মু আসলেই এই বিষয়ে জানা যাবে।

তখনই ওখানে রাহিয়ার আম্মু মিসেস নাদিয়া এলেন। তিনি ওখানে আসতেই ওনার চোখ প্রথমে গেল রাহিয়ার দিকে। এতোদিন পরে মেয়েকে দেখে তিনি দ্রুত ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলেন। রাহিয়াও খুশিতে তার মাকে জড়িয়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখার পর মিসেস নাদিয়া মেয়েকে ছেড়ে দিলেন। তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

— তোকে কতোদিন দেখি না। তোকে ছাড়া আমার এখানে একটুও ভালো লাগত না।

— আমারও অনেক কষ্ট হতো মা। কিন্তু আমি এখন পুরোপুরি ফিরে এসেছি মা। আমি এখন থেকে এখানেই থাকব। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।

— আচ্ছা। কিন্তু তোর সাথে তো আমার কালকে রাতেও তো কথা হলো। কিন্তু তুই তো একবারও বললি না যে তুই আজকে আসবি। আসার আগে তো বলতে পারতি। আমি তোকে আনার জন্য কাউকে পাঠিয়ে দিতাম। সেই এয়ারপোর্ট থেকে বাসা পর্যন্ত একা একা এলি।

মায়ের কথা শুনে রাহিয়া হালকা হেসে বলল,

— সমস্যা নেই। এয়ারপোর্ট তো খুব বেশি দূরে না। আর আমি তোমাদের চমকে দিতে চেয়েছিলাম। তাই তো আর বলিনি যে আজকে আমি আসব। আচ্ছা মা বাসায় কি কোনো অনুষ্ঠান আছে? মানে পরিবেশটা একটু অন্যরকম লাগছে।

কথাটা শুনতেই মিসেস নাদিয়া চুপ হয়ে গেলেন। রাহিয়া আবার তার মাকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আমতা আমতা করে বলে উঠলেন,

— আসলে কালকে নিরার বিয়ে।

কথাটা শুনে রাহিয়া যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। সে না জানিয়ে এসেছিল বাবা মাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে। কিন্তু সে এখানে এসে নিজেই একটা বড়ো সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে সেটা বুঝতেই পারেনি। তাকে এমন দেখে মিসেস নাদিয়া বলে উঠলেন,

— আসলে রাহিয়া আমি তোকে এই বিষয়ে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু…

তিনি বাকি কথা বলার আগেই রাহিয়া ওনাকে আর না দিয়ে থামিয়ে দিল। তার ওই কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগলেও সে নিজেকে শান্ত করে নিল। তারপর তার মাকে বলল,

— আমি বুঝতে পেরেছি মা। তোমার এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমি তেমন কিছু মনে করিনি। আচ্ছা শোনো আমি একটু বিশ্রাম নিতে চাই। অনেক দূর থেকে এসেছি তো। তাই আমি অনেক ক্লান্ত।

তখনই পাশ থেকে ওর মামি বলে উঠল,

— হ্যাঁ আপু। এসব কথা না হয় পরে হবে। মেয়েটা অনেক দূর থেকে এসেছে। তাই ওর বিশ্রামের দরকার।

— হ্যাঁ হ্যাঁ তুই রুমে যা। আমি কথা বলতে বলতে এসব ভুলেই গেছিলাম। আমি তোর জিনিসপত্র রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। তুই রুমে গিয়ে জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি তোর খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।

— আচ্ছা।

বলেই রাহিয়া ওখান থেকে তার রুমে চলে এলো। সে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে রুমের চারপাশ ঘুরে দেখতে লাগল। প্রায় আড়াই বছর পর সে তার রুমে এসেছে। এতোদিন সে তার রুমকে খুব মনে করেছে। তাই সে তার রুমের চারদিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল। তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। সে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,

— আমি আসলেই ভুল সময়ে চলে এসেছি। আমার এভাবে না বলে আসাটা উচিত হয়নি। কালকে তো নিরার বিয়ে। বিয়েটা নিশ্চয়ই রুদ্রের সাথে হচ্ছে। কিন্তু আমি এখন আর রুদ্রের জন্য কষ্ট পাব না। যতটা সম্ভব নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করব। আমার বিশ্বাস আমি ঠিক পারব।

তখনই কেউ ওর রুমের দরজা নক করল। রাহিয়া শব্দ শুনে উঠে বসল। তারপর গিয়ে রুমে দরজা খুলে দিতেই ওর জিনিসপত্র রেখে দিল। এরপর সে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। সে ফিরে আসার একটু পরেই মিসেস নাদিয়া ওর রুমে এলেন।

— রাহিয়া খাবার কি রুমে দিয়ে যাব? নাকি বাইরে গিয়েই খাবি?

— আম্মু রাত হতে তো বেশি সময় নেই। তাই এখন তেমন কিছু খাব না। রাতে একবারে ডিনার করব।

— আচ্ছা। তাহলে আমি তোর জন্য অন্য কিছুর ব্যবস্থা করছি।

বলেই তিনি যেতে নিলেন। কিন্তু তার আগেই রাহিয়া ওনাকে থামিয়ে দিলে বলে উঠল,

— আম্মু শোনো।

কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া পেছনে ঘুরে বললেন,

— কিছু বলবি?

— আম্মু তুমি তো আমাকে নিরার বিয়ের বিষয়ে জানাতে পারতে। আমি তো তোমার সাথে কাল রাতেই কথা বললাম। তখন তো একবার বলতে পারতে। নাকি ভয় ছিল আমি তোমার মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিব?

কথাটা শোনার সাথে সাথে তিনি বলে উঠল,

— আরে না, এসব কিছুই না। তুই ওখানে পড়ালেখার কাজে গিয়ে ছিলি। আর ওখানে যাওয়ার পরে একবারের জন্যও আসিসনি। হঠাৎ নিরার জন্য ভালো ছেলে পাওয়ায় তোর বাবা ওকে তোর আগেই বিয়ে দিতে চাইলো। আর নিরাও বিয়েতে রাজি ছিল তাই আর না করেননি। আমি তোকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই বিয়ের কথা শুনলে এখানে আসার জন্য মন খারাপ করতে পারিস। আর এতে তোর পড়ালেখারও সমস্যা হতে পারত। তাই নিরাই আমাকে তোকে বলার জন্য না করেছিল।

কথাটা শুনে রাহিয়া মুচকি হাসল।

— আচ্ছা আমি এখন আসি।

বলেই মিসেস নাদিয়া ওখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাতে রাহিয়া বাসায় সবার সাথে ডিনার করতে গেল। এদিকে সবাই এতোদিন পর রাহিয়াকে পেয়ে ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবাই নিরার বিয়ের কথা এক প্রকার ভুলেই গেল। আর এসব দেখে নিরা রাগে ফেটে পড়ল। সে রাহিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,

— এই মেয়েটা সবসময় আমার সুখ কেটে নেয়। এতোদিন ভালোই ছিলাম। এখন আবার চলে এসেছে আ*পদটা। আমার ওকে একদমই ভালো লাগে না। সবাই সবসময় ওকে বেশি প্রাধান্য দেয়।

পরদিন সকালে রাহিয়া ঘুম উঠে রুমের বাইরে গেল। বাসায় বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। একটু পরেই সবাই বিয়ের জায়গায় যাওয়ার জন্য বের হবে। নিরাকে সাজানো হয়ে গেলে রাহিয়া গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালো। নিরা তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সে সেটা দেখে মন খারাপ করে ওখান থেকে সরে গেল। সে মনে মনে ভাবল,

— আমাকে আরো শক্ত হতে হবে। আমি এখন আর আগের মতো নেই।

কথাটা ভেবে সে কিছুটা পেছাতে গেলেই কারো সাথে ধাক্কা খেল। সে সাথে সাথে সরি বলে পেছনে ঘুরল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here