#প্রেমপ্রেয়সী
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_N_K_Orni
রাহিয়া ফোন হাতে নিতেই দেখল সেই নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। সেখানে লেখা ছিল,
“তুমি কীভাবে ভাবলে আমি তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হতে দেব? এটা কখনোই হবে না।”
লেখাটা পড়েই তার ভ্রু দুটি কুচকে এলো। সে কিছুক্ষণ ভেবে ওই লোকটাকে ম্যাসেজ দিল,
— কেন? আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন? আর যদি পছন্দ করেই থাকেন তাহলে সামনে কেন আসছেন না? দূর থেকে এসব কথা মানে কি?
রাহিয়া প্রথম ভেবেছিল ম্যাসেজটা যাবে না। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ম্যাসেজটা পৌঁছে গেল। এতে সে খুব খুশি হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই নম্বর থেকে আবারও ম্যাসেজ এলো। রাহিয়া সেটা পড়তে শুরু করল।
— আমি তোমাকে পছন্দ করি না। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই ভালো এটাই হবে তুমি নিজেকে অন্যদের থেকে দূরে রাখো। আমি সময় হলে নিজেই তোমার সামনে আসব।
লেখাটা পড়ে সে কিছুক্ষণ ভেবে ম্যাসেজ দিল,
— আমি আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে চাই। আর সরাসরি দেখাও করতে চাই।
ম্যাসেজটা দিয়েই রাহিয়া দ্রুত ফোনটা পাশে রেখে দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করল,
— রাহিয়া তুই এটা কি করলি? এই ম্যাসেজেটা কেন দিলি? তুই কেন তার সাথে দেখা করার কথা বললি? সে দেখা করতে চাইলে তুই কি সত্যিই যাবি?
রাহিয়া চোখ বন্ধ করে এরকম বিভিন্ন কথা বিরবির করে বলে যাচ্ছিল। তখনই তার ফোনে আবারও ম্যাসেজ আসার শব্দ এলো। ম্যাসেজ আসার শব্দে সে চোখ খুলে পাশে থাকা ফোনের দিকে তাকালো। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিল।
— লোকটা কি দেখা করতে চাইবে? তখন আমি কি করব? এভাবে অচেনা কারো সাথে দেখা করতে যাওয়া কি আমার জন্য ঠিক হবে?
এরকম বিভিন্ন কথা ভাবতে ভাবতে সে ফোনটা খুলল ম্যাসেজ দেখার জন্য। তার সব চিন্তাভাবনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ম্যাসেজে তো অন্য কিছুই লেখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল,
— সরি মাই লাভ। এখন আমি তোমার সাথে ফোনে কথা বলা বা সরাসরি দেখা করা এর একটাঔ করতে পারব না। সময় হলে আমি নিজে তোমার সামনে আসব। ততদিন তুমি অন্য ছেলেদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখো। নাহলে সেটা তোমার জন্য একদমই ভালো হবে না।
ম্যাসেজটা পড়ে রাহিয়া খুবই বিরক্ত হলো। সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে লোকটাকে আবারও ম্যাসেজ দিল। কিন্তু এবার আর ম্যাসেজ গেল না। সে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত ওই নম্বরে কল দিল। কিন্তু এবারও আগেরবারের মতো ফোন বন্ধ বলল। রাহিয়া এবার রাগ করে ফোনটা একপাশে রেখে দিল।
— আমি যখন ম্যাসেজ করছিলাম আমি উচিত ছিল তখনই কল দেওয়া। কারণ তখন ফোন খোলা থাকায় ম্যাসেজ দেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ করে দিয়েছে। আমার এই কথাটা কেন আগে মাথায় এলো না? তাহলে আমি সেই সময় কল দিতে পারতাম।
এভাবে সে এই বিষয় নিয়ে নিজেকে নিজেকে অনেক কথা বলতে লাগল। একটু পর মিসেস নাদিয়া ওর রুমে এলেন। রাহিয়া হঠাৎ তার মাকে দেখে ওই বিষয়ে বিরবির করে কথা বলা বন্ধ করে দিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
— আম্মু কিছু বলবে?
— রুদ্র হসপিটালে ভর্তি। তাই আমরা ওকে ওখানে দেখতে যাবো।
কথাটা শুনে রাহিয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠল,
— রুদ্র হসপিটালে কি করছে? ওর আবার কি হলো?
— জানিনা। ভাবি একটু আগে কল দিয়ে বলল রুদ্র নাকি হসপিটালে আছে। আর ওর অবস্থাও খুব একটা ভালো না।
রুদ্রের এমন অবস্থার কথা শুনে তার একটু খারাপ লাগল। কারণ একটা সময় সে রুদ্রকে পছন্দ করত।
— ওহ।
— আমি আর তোর বাবা এখন ওখানে যাচ্ছি। তুই কি আমার সাথে যাবি?
রাহিয়ার যতই খারাপ লাগুক রুদ্রকে এখন দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা তার একদমই নেই। তাই সে কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল,
— না আম্মু আমি যেতে পারব না। আমার বাসায় বেশ কিছু কাজ আছে। এখন তুমি আর বাবা যাও। আমি নাহয় পরে সময় করে যাবো।
— আচ্ছা। তাহলে তুই বাসায়ই থাক। আর তোর ভাই ফিরলে বলিস আমরা হসপিটালে রুদ্রকে দেখতে গিয়েছি।
রাহিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল,
— আচ্ছা।
এরপর মিসেস নাদিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি চলে যেতেই রাহিয়া ধপাস বিছানায় বসে পড়ল। তারপর সন্দেহের সুরে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,
— এই রুদ্রের আবার কি হলো? হঠাৎ হসপিটালে ভর্তি হয়ে গেল আবার ওর নাকি খারাপ অবস্থা?
কথাটা বলে সে পরক্ষণেই আবার ভাবল,
— ওর যাই হোক তাতে আমার কি? আমি ওর বিষয়ে এতো কেন ভাবছি?
বলেই সে উঠে চলে গেল। পরদিন সকালে যারা রাহিয়াকে দেখতে এসেছিল তারা কল দিয়ে জানালো তারা বিয়েতে রাজি। কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া আর রায়ান সাহেব খুব খুশি হয়ে গেলেন। মিসেস নাদিয়া গিয়ে রাহিয়াকে এই কথাটা বলতে ওর রুমে গেলেন। রাহিয়া হঠাৎ মাকে খুশি হতে দেখে খুবই অবাক হয়ে গেল। তারপর তিনি ওকে এই বিয়েতে তাদের রাজি হওয়ার কথাটা বলে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু এসব শুনে রাহিয়া ওখানেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর সে স্বাভাবিক হয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে তার মা আর বাবার গেল। সে ওনাদের কাছে গিয়ে বলে উঠল,
— সমস্যা কি তোমাদের? আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি? যদি হয়ে থাকি তাহলে বলো আমি বাসা থেকে চলে যাচ্ছি?
কথাটা শুনে মিসেস নাদিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— এসব তুই কি বলছিস রাহিয়া? আমরা এমনটা কেন ভাবতে যাব?
— তাহলে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করার মানে কি? আমার পছন্দ অপছন্দ তোমাদের কাছে কিছুই না। আমার মতামত না নিয়ে তোমরা বিয়ে কীভাবে ঠিক করতে পারলে?
— না রাহিয়া আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করিনি। আর না তো আমরা তোমার অপছন্দের কারো সাথে তোমার বিয়ে দিব। তোমার মা তো শুধু ওদের রাজি হওয়ার কথা তোমাকে বলেছে। এরপর তুমি ছেলেটার সাথে দেখা করো, কথা বলো। তারপর আমরা বিয়ের বিষয়ে যাব। তোমার পছন্দ না হলে আমরা কখনোই তোমাকে বিয়ে দিব না। তবে আমার মনে হয় ছেলেটার সাথে কথা বলার পর তুমি আর না করতে পারবে না।
রাহিয়া তার বাবার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলে উঠল,
— সত্যি তো? আমি না বলা পর্যন্ত তো বিয়ে ঠিক করবে না তো?
— না। তবে আমি তোমাকে একটু তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাই। তাই আশা করি তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে একটু তাড়াতাড়ি নিবে।
কথাটা শুনে রাহিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠল,
— হুম। তাহলে আমাকে ওই ছেলেটার নম্বর দেও। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।
— আচ্ছা।
বলেই তিনি একটা কাগজে নম্বরটা লিখে দিলেন। তিনি ওই কাগজটা রাহিয়াকে দেওয়ার সময় তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
— তোমার যদি পছন্দ না হয় তাহলে সাথে সাথে বলে দিবে। আমি তখন তোমার জন্য অন্য ছেলে দেখব। মনে রেখো যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভেবে নিবে কিন্তু কম সময়ে। নাহলে আমি তোমার সাথে রুদ্রের বিয়ে দিয়ে দিব। সেটা নিশ্চয়ই তুমি চাও না।
বলেই তিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাহিয়ার দিকে একটা হাসি দিলেন। আর রাহিয়া তো এই কথাটা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। সে দ্রুত তার বাবার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে রুমে চলে এলো। সে রুমে এসে মনে মনে ভাবতে লাগল,
— বাবা হঠাৎ আমাকে দ্রুত বিয়ে দিতে কেন চায়? আর রুদ্রের কথায়ই বা কেন বলল? আমি কিছুতেই ওকে বিয়ে করব না। তবে দ্রুত বিয়ে করলে একদিক দিয়ে সুবিধা হবে। আমার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে ওই গিফট দেওয়া লোকটা আর আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না। তখন বাবার কথাও রাখা হবে আর ওই লোকটার থেকেও নিজেকে সরানো যাবে।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )