প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :৬
(যারা অল্পতেই ভয় পান ৷দয়া করে আজকের পার্ট পড়বেন না ৷ভয় পেলে আমার কিছু করার নাই ৷)
প্রীতি চাপাটি টা একপাশে রাখলো ৷তারপর একটা কেঁচি হাতে নিল ৷ওসমানের কাছে যেয়ে ওর শার্ট কাটতে লাগলো ৷ ওসমানের শার্ট কাটঁতে কাটঁতে প্রীতি বলল ,
“কি রে অবাক হচ্ছিস নাকি হুমম ৷ তোকে কেন এভাবে বেঁধে রেখেছি বুঝতে পারছিস না তাই তো ৷ আর আমি কি করছি তাও বুঝতে পারছিস না তাই না ৷ সব বুঝতে পারবি কিছুক্ষনের মধ্যে ৷ ওসমানের শার্ট কেঁটে ফেলে দিল প্রীতি ৷ একটু দুরেই কয়লার আগুনে লোহার শিক গরম হয়ে লাল বর্ন ধারন করেছে ৷প্রীতি নিজের হাতে গ্লাভস পরে নিল ৷ তারপর একটা শিক হাতে নিয়ে ওসমানের দিকে আস্তে আস্তে প্রীতি এগিয়ে আসতে লাগলো ৷ এদিকে ওসমান ছটফট করছে ৷ প্রীতিকে তার স্বাভাবিক লাগছে ৷ প্রীতির স্বাভাবিক আচরন ভয়ংকর কিছুর আভাস দিচ্ছে ওসমানকে ৷
“প্রীতি বাকা হেসে ওসমানের মুখের টেপ খুলে দিল ৷ তারপর ওর খোলা বুকে শিকটা চেঁপে ধরলো ৷ওসমানের বুকে শিকটা চেঁপে ধরতেই সে চিৎকার করে উঠলো ৷ আর প্রীতির মুখে বাঁকা হাসি ৷ ওসমান ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে ৷ দুই মিনিট পর প্রীতি শিকটা উঠিয়ে নিল ৷ তারপর ওসমানের চুলের মুঠি ধরে বলল ,
“কিরে কষ্ট হচ্ছে খুব ! ঠিক এই ভাবেই আমার ভাই কষ্ট পেয়েছিল ৷ ঠিক এই ভাবেই আমার মা কষ্ট পেয়েছিল ৷”
প্রীতি কথাটা বলেই আরেকটা শিক নিল ৷আর ওসমানকে এলোপাথারী মারতে লাগলো ৷ গরম শিকের আঘাতের সাথে ওসমানের চামড়া উঠে আসছে ৷ ওসমান চিৎকার করছে ৷ আর প্রীতি পাগলের মতো আঘাত করছে ৷
অনেকক্ষন পরে প্রীতি শান্ত হলো ৷ ওসমান অস্পষ্ট ভাবে বলল ,
“কে তুই ? আমাকে কেন মারছিস এভাবে ?”
প্রীতি একটি সিগারেট লাইটার দিয়ে ধরাতে লাগলো ৷ সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে প্রীতি বলল ,
“আয়ান চৌধুরীর কথা মনে আছে ৷ যাকে নিজের পাপ লুকাতে তুই খুন করেছিস ৷ আমি তার মেয়ে প্রীতিলতা ৷এবার মনে হয় চিনেছিস ৷”
প্রীতির কথা শেষ হতেই ওসমান ছটফট শুরু করে ৷ ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে ওসমান বলল ,
“আমাকে ছেড়ে দে ৷ আমাকে মাফ করে দে ৷”
প্রীতি আবারো হাসলো ৷ তারপর টেবিলের উপর রাখা মরিচ গুড়ো আর লবনের বাটিটা হাতে নিল ৷ ওসমান কাপঁছে প্রচন্ড ভয়ে ৷প্রীতি ওসমানের ঘা গুলোতে এবার মরিচ , লবনের গুড়ো মাখতে লাগলো ৷আর ওসমান চিৎকার করতে লাগলো ৷ প্রীতি ওর শরীর মরিচ গুড়ো লাগাতে লাগাতে বললল
“যত ইচ্ছে চিৎকার কর ৷ তোর যন্ত্রনায় আমার সুখ ৷ তোর চিৎকার কেউ শুনবেনা ৷কারন ঘরটাই তো সাইন্ড প্রুফ ৷ তোর চিৎকারে আমি আমার দুঃখ নিবারন করবো ৷ তোদের পাপ যেমন কেউ জানে না ৷ ঠিক তেমনি তোদের চিৎকারেও কেউ আসবে না ৷”
ওসমান ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে ৷ ও খুব ভালো করেই জানে প্রীতি কি করবে ওর সাথে ৷ তবুও নিজেকে বাচাঁতে ওসমান কোনো ভাবে বলল ,
“তুই পাগল হয়ে গেছিস ৷ তোর মাথা ঠিক নেই ৷ তুই একটা সাইকো ৷ তুই যা করছিস এগুলো সাইকোরা করে ৷”
ওসমানের কথা শুনে প্রীতি হাসতে লাগলো পাগলের মতো ৷ হাসতে হাসতে প্রীতি বলল ,
” তুই একদম ঠিক বলেছিস ৷ আমি আসলেই একটা সাইকো ৷ তবে আমি সাইলেন্ট সাইকো ৷ যাকে সহজে ধরা যায় না ৷ দেড় বছর মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি কি এমনিই ছিলাম ৷ জানিস আমাকে ছাড়ার পর, ওখানের ডাক্তার আমার পালিত এসিপি বাপকে কি বলেছিল ?”
“ডাক্তার বলেছিল আমি নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ ৷ আমার নাকি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই ৷ নইলে নাকি আমি সাইকো হয়ে যাবো ৷ কিন্তু ডক্টর তো জানে না যে আমি তখন ওলরেডি সাইকো হয়ে গেছি ৷ তখন অলরেডি আমি দুইটা খুন করে ফেলেছি ৷জানিস তোর আগে আমি আরো পঞ্চাশটা খুন করেছি ৷ আর তোকে নিয়ে একান্নটা হবে ৷”
প্রীতির কথা শুনে ওসমান ভয়ে ওসমান ভয়ে কাছে ৷ ওসমানে বেহাল দশা দেখে প্রীতি বলল ,
” কি রে ভয় করছে খুব ? কষ্ট হচ্ছে তোর ? তোকে আরো কষ্ট দেব আমি ৷ এই ভাবেই আমার মা কষ্ট পেয়েছিল ৷ যখন তোরা ধর্ষনের পর আমার মায়ের গায়ে সিগারেটের আগুন দিয়েছিস ৷ আমার ফুলের মতো অবুঝ ভাইটাও তোদের হাত থেকে রেহাই পায় নি ৷ অপরাধ না করেও ওরা মরেছে ৷ এবার তোদের পালা ৷”
প্রীতি কথা গুলো বলতে যেয়ে হঠাৎ করেই কেদেঁ দিল ৷ তারপর ওসমানের কাছে যেয়ে মারতে মারতে বলল ,
“এই কেন করলি এমন ? আমার বাবা সৎ মানুষ ছিল এটাই তার অপরাধ ছিল ৷ আমার মা একজন সৎ ডক্টর ছিল এটাই তার অপরাধ ৷ কিন্তু আমার ভাইটার কি অপরাধ ছিল ৷”
প্রীতি কাদঁতে কাদঁতে আবারো বলল ,
“এই কেন তোরা মারলি ওদের ? আমি যে তখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম ৷ তোরা আমার পরিবারকে কেন শেষ করলি ? আমাকেও তোরা ছেড়ে দিস নি ঐ দিন ৷ তোদের জন্য আজ আমি জন্ম মৃত্যুর মাঝে দাড়িয়ে আছি ৷”
প্রীতি দুই হাটুতে মুখ গুজে কাদঁতে লাগলো ৷ হঠাৎ ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেল ৷ প্রীতি নিজের মাথা তুলে ওসমানের দিকে তাকালো ৷ তারপর ঘাড় একপাশে কাঁত করে প্রীতি হাসতে লাগলো ৷ তারপর ওসমানের কাছে এসে প্রীতি বলল ,
“এবার আমার পালা ৷তাইতো তোর ফোন মাঝ রাস্তায় বন্ধ করতে বলেছি ৷ যেন তোর ফোনের লাস্ট লোকেশন আন্দাজ না করা যায় ৷ আমাকে যেন কেউ সন্দেহ না করে ৷ তাই তোকে বলতে নিষেধ করেছি আমার কথা ৷ আর আজ যে নাম্বারটা দিয়ে তোকে কল করেছি ৷ ওটা আজ আমি চুরি করেছি বাস থেকে ৷ যেন আমাকে না ধরা যায় ৷ আমাদের মতো সাইলেন্ট সাইকোরা সব আস্তে আস্তে করে ৷ যা তোদের ধারনার বাইরে ৷”
প্রীতি ওসমানের দিকে এগিয়ে আসছে ৷ প্রীতি নিজের হাতে চাপাটি তুলে নিল ৷ তারপর ওসমানের একটা হাত ধরে বলল ,
” এই হাত দিয়ে তুই আমার মায়ের গায়ে হাত দিয়েছিস তাই না ৷ এই হাত দিয়ে তুই আমার বাবার মাথায় প্রথম আঘাত করেছিস ৷এ ই হাত দিয়ে তুই আমার ভাইয়ের গায়ে সিগারেট দিয়ে পুড়ে দিয়েছিস ৷ তোর এই হাত আমি রাখবো না ৷ রাখবো না আমি তোর হাত ৷”
প্রীতি এক কোপে ওসমানের ডান হাতের কবজিটা কেটে ফেললো ৷ ওসমান গগন কাঁপানো চিৎকার করে উঠলো ৷ প্রীতির চেহারায় এখন হিংস্রতা ভর করেছে ৷ মায়াবী চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে গেছছ ৷ প্রীতি ওসমানের দিকে তাকিয়ে আবারো বলল,
“তুই আমার বাবাকে আগে আঘাত করেছিস তাই না ৷ আমার বাবা যতটা কষ্ট পেয়ে ছিল ৷ আজ সেই সব কষ্ট তোকে আমি ফেরত দেব ৷”
প্রীতি ওর পাশে থাকা লোহার রড দিয়ে ওসমানের মাথায় এলোপাথারী মারতে লাগলো ৷ একের পর এক আঘাত দিতেই লাগলো ৷ ঐ দিকে ওসমানের মাথার যে একপাশ থেতলে গেছে সেই দিকে ওর হুশ নেই ৷একের পর এক আঘাত সে করতেই লাগলো ৷ আজ ওর মাথায় খুন চেপেঁছে ৷ ওসমান মারা গেছে অনেক আগেই ৷ প্রীতি ওসমানের দিকে তাকিয়ে হাসলো আবারো ৷ তারপর ওসমানের রক্ত নিজের শরীরে মাখতে লাগলো ৷ ওর মাথায় কাজ করছে না ৷ রক্ত মাখা শরীরটা নিয়ে প্রীতি ফ্লোরে হাটু ভাজ করে বসে রইলো ৷ হঠাৎ মনে হলো অন্ধকার ঘরে কেউ যেন প্রীতিকে বলছে ,
“কি রে আজও একটা খুন করলি ৷”
প্রীতি পাশে তাকালো ৷ তারপর হেসে বলল ,
“হ্যা আমি খুন করেছি ৷ ওরা তোমাদের মেরেছে ৷ এবার আমার পালা ৷ আর তুমি বারবার কেন আসো আমার কাছে ? তুমি জানো না ডাক্তার কি বলেছে ?ডাক্তার বলেছে আমি নাকি কল্পনায় তোমাকে দেখি ৷ এটা আমার মানসিক রোগ ৷ আমি একটা মানসিক রোগী ৷যাও তুমি যাওওওওওওও ৷ আমাকে একা থাকতে দাও ৷ আমি একা থাকবো ৷”
প্রীতি কথা গুলো বলতে বলতে সামনে তাকালো ৷ না এখন আর কেউ নেই ৷ অজান্তেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওর চোখ থেকে ৷ প্রীতি ওসমানের লাশের কাছে গেল ৷ তারপর ওর লাশটা গুম করার কাজে লেগে পড়লো ৷ ৷ অন্ধকার ঘেরা রাতে মানুষ যখন ঘুমাতে ব্যস্ত ৷ প্রীতি তখন ওসমানের শরীর টুকরো টুকরো করতে ব্যস্ত লাশ গুম করার জন্য ৷
পরের দিন প্রীতি নিয়ম করে ভার্সিটির দিকে রওনা দিল ৷ আজ তার মনটা অনেক ভালো ৷ ভার্সিটিতে যেয়ে প্রীতি নিজের ক্লাসে ঢুকছিল ৷ হঠাৎ করেই একটা মেয়ে ওকে ল্যাং মারলো ৷প্রীতি ঠাস করে নিচে পরে গেল ৷ প্রীতি উঠে সামনে তাকালো ৷ তার সামনে একটা মিনিস্কার্ট পরা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ আর ওর আশে পাশের সবাই হাসছে ৷ প্রীতিকে উদ্দেশ্য করে মর্ডান মেয়েটা বলল,
“এই কালো ভুতটা এখানে কি করছে রে ?”
পাশ থেকে একটা ছেলে বলল ,
” আমাদের এখানে নতুন এসেছে ও ৷ তুই কাল আসিস নি ৷ তাই জানিস না মিলা ৷”
“কি সব ড্রেস পরে আছে দেখ ৷ পুরো ক্ষেত একটা ৷
প্রীতি কাউকে কিছু বলল না ৷ সে মাথা নিচু করে আছে ৷ নিজের ব্যাপারে কাউকে কিছু কৈয়িয়ত দিতে চায় না ও ৷ তাই প্রীতি কিছু বলল না ৷ বরং মুচকি হেসে চলে গেল ৷
অন্যদিকে প্রীতিকে ফেলে দেওয়া মেয়েটা অবাক হলো ৷ কারন অন্য কেউ হলে তো তার সাথে ঝগড়া করতো ৷কিন্তু এই মেয়ে কি ? কোনো কথাই বলল না ৷
চলবে…..