প্রীতিলতা আসবে বলে(পর্ব ৫)

0
578

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :৫

আবেশ আজ রাতের খাবার তার ছেলে , মেয়ের সাথে বাইরে খাবে ৷ বাচ্চা দুটো অনেক দিন ধরেই বায়না করছিল ৷ কিন্তু সময়ের অভাবে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় না ৷ তাই আজ সময় পেয়েই আবেশ তার পরিবার নিয়ে বাইরে ডিনার করতে চলে যায় ৷ বেশ ভালোই যাচ্ছে তার দিন কাল ৷ অন্য দিকে আরেকটা মানুষ অপেক্ষা করছে আবেশের ছেলে , মেয়েকে কেড়ে নেওয়ার জন্য ৷ সে বসে আছে তারই বাড়ীর সামনে অধির আগ্রহে ৷

রাত নয়টা বাজে আবেশ তার ছেলে , মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ীর দিকে চলে আসে ৷ গেটের কাছে আসতেই দেখলো আবেশ দেখলো দারোয়ান একটা মেয়েকে বকা দিচ্ছে ৷আবেশ গেটের কাছে গাড়ী থামিয়ে দারোয়ানকে বলল ,

“কি হয়েছে রহিম ভাই ? মেয়েটাকে এভাবে বকছো কেন ?”

দারোয়ান বিরক্ত ভরা কন্ঠে বলল ,

“স্যার দেহেন কহন থেইকা যাইতে কইতাছি এই ম্যাইয়ারে ৷ কিন্তু এই কালা ছেড়িডা যাইতাছে না ৷”

আবেশ এবার মেয়েটার দিকে তাকালো ৷ মেয়েটার শরীরে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট ৷ চোখে মুখে হতাশার চিহ্ন স্পষ্ট ৷ আবেশ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল ,

“এই ভাবে ঝামেলা কেন করছো বোন ? রাস্তার মানুষ খারাপ ভাববে ৷”

আবেশের কথা শেষ হতেই মেয়েটা বলল ,

“স্যার আইজকা দুই দিন ধইরা কিছু খাই নাই ৷ আমার মেলা খিদা লাগছে ৷ তাই কিছু খাওন চাইছিলাম এই ব্যাডার কাছে ৷ কিন্তু দেহেন আমারে কেমনে ধমকাইতাছে ৷”

আবেশের কেন যেন খুব মায়া হলো মেয়েটার উপর ৷কোনো কিছু না ভেবেই আবেশ বলল ,

” কাজ করবে আমার বাড়ীতে ?”

“কি করা লাগবো স্যার ? আপনে খালি কন ৷ আমারে খাইতে দিলে আমি সব করমু ৷আমার কেউ নাই ৷”

“ঠিক আছে ভেতরে চলো ৷”

নিরুপমা নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল ,

“এইভাবে একটা অচেনা মেয়েকে বাড়ীতে ঢুকতে দেয়া টা কি ঠিক ৷”

“মেয়েটাকে খারাপ মনে হচ্ছে না নিরুপমা ৷ আর ওর তো কেউ নেই বলছে ৷ আর মেয়েটাকে বেশ সহজ সরল মনে হচ্ছে ৷”

“তোমার যা ইচ্ছে করো ৷ শেষে খারাপ কিছু হলে আমার দোষ দিতে পারবে না ৷”

আবেশ অচেনা মেয়েটাকে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে এলো ৷ মেয়েটা বাড়ির প্রতিটা কোনায় নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে ৷ বাড়ির কোথায় কি আছে তা সে ঠিকঠাক ভাবে পরীক্ষা করে নিচ্ছে ৷ হঠাৎ মেয়েটাকে আবেশ বলল ,

“তা তোমার নাম কি ৷”

আবেশের হঠাৎ ডাকে মেয়েটা চমকে ওঠে ৷ তারপর হালকা হেসে বলে ,

“স্যার আমার নাম পাখি ৷ আমারে আপনারা পাখি কইয়া ডাইকেন ৷”

আবেশের চোখ দুটা ছলছল করে উঠেছে ৷ সে তার বোনকেও পাখি বলে ডাকতো ৷ আবেশ বাম হাতে নিজের চোখের পানি টুকু মুছে নেয় ৷ সবার চোখের আড়ালে পানি টুকু মুছলেও ৷ অচেনা মেয়েটার চোখ ফাকিঁ দিতে পারলো না আবেশ ৷ আবেশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল ,

“আমরা দুপুরের দিকে কেউ বাসায় থাকি না ৷ দুপুরের পর ছেলে মেয়েরা বাসায় একা থাকে ৷ বাধ্য হয়ে স্কুলে দিয়েছি ওদের এই ছোট বয়সে ৷ ওদের মা আর আমি বাইরে থাকি ৷ তুমি যদি দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ওদের দেখে রাখতে তাহলে খুব ভালো হতো ৷ আগে যে ছিল সে ওদের বকাঝকা করতো অনেক ৷ তাই বাদ দিয়ে দিয়েছি ৷”

পাখি নামের মেয়েটা মাথা নিচু করে বলল ,

“স্যার আইছ থাইকা ভাববেন আমি আপনের বুইন ৷ আমি ওগো নিজের পোলা পাইনের মতোই আদর করুম ৷ আপনে চিন্তা কইরেন না ৷”

“ঠিক আছে ৷ আর এই নাও দুই হাজার টাকা ৷ কিছু খেয়ে নিও ৷”

মেয়েটা টাকা গুলো নিয়ে নিল ৷তারপর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল আস্তে আস্তে ৷ আবেশের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে মেয়েটা কিছু দূর হাটলো ৷ তারপর একটা প্রাইভেট কারের ভেতর ঢুকে গেল ৷ কোমর থেকে নিজের ফোনটা বের করে মেয়েটা কাউকে কল করলো ৷ তারপর বলল,

“স্যার কাজ হয়ে গেছে ৷ বাচ্চা দুটোকে খুব তাড়াতাড়ি উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছি ৷ ঐ আবেশ চৌধুরী শুধু বোকা না ৷ একটা হাদারাম আবেশ চৌধুরী ৷ আর আপনার কথা মতো আমার নাম পাখি বলেছি ৷ বলদটা নিজের মরা বোনের কথা চিন্তা করে চোখের জলও ফেলেছে ৷ আপনার কথা মতো আমি সব করে ফেলবো ৷ কেউ আমাকে সন্দেহও করবে না ৷”

ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় বলল ,

“সাবধানে সব করবে জেসিকা ৷ কাজটা করার বিনিময়ে দুই কোটি টাকা পাবে তুমি ৷”

“ওকে স্যার ৷”

ঘড়িতে রাত বারোটা বাজে ৷ প্রীতি দ্বীপ চোধুরীর বাড়ীর দেওয়াল খুব সাবধানে টপকে নিল ৷ গার্ডরা গভীর ঘুমে আছে এখন ৷প্রীতির ধারনা অনুযায়ী দোতলার দক্ষিন দিকে দ্বীপ চৌধুরী থাকে ৷ প্রীতি আস্তে আস্তে লোহার রেলিং ধরে বারান্দায় প্রবেশ করলো ৷ যদিও কাধেঁর ব্যাগটার জন্য তার একটু কষ্ট হয়েছে ৷ দ্বীপ চৌধুরী ঘুমাচ্ছে এখন ৷প্রীতি নিজের পকেট থেকে চেতনা নাশক স্প্রে টা বের করলো ৷ তারপর খুব সাবধানে দ্বীপ আর তার বৌয়ের মুখে স্প্রে করে দিল ৷ স্প্রে করার পাচঁ মিনিট পর প্রীতি দুইজনের কোমরে চিমটি কাটলো ৷কিন্তু না তাদের হুশ নেই ৷ এবার প্রীতি নিজের কাঁধ থেকে ব্যাগটা খুললো ৷ ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু জিনিস বের করলো ৷ তারপর নিজের কাজে লেগে গেল ৷ দুই ঘন্টার মধ্যে প্রীতি নিজের কাজ করে নিল ৷ তারপর একটা বাকাঁ হাসি দিল দ্বীপ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ৷ তারপর সে বেড়িয়ে গেল বারান্দা দিয়েই ৷

পরের দিন সকাল নয়টা বাজে প্রীতি নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল ৷ না তাকে দেখে কেউ আর সুন্দরী বলবে না ৷ মেকাপের কি জাদু ? সুন্দর মানুষটাকেও কেমন কুৎসিত বানিয়ে দিয়েছে ৷ প্রীতিকে নকল সাজে একদম কালো কুচঁকুচে লাগছে ৷ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ পরনে গোল একটা ঢিলা জামা ৷ প্রীতি নিজেকে আরো একবার আয়নায় দেখে বেড়িয়ে পড়লো ৷

বর্তমানে প্রীতি দাড়িয়ে আছে একটা বড় ভার্সিটির সামনে ৷ প্রীতি কিছু না ভেবে ভেতরে পা বাড়ালো ৷ সবাই তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ৷ হয়তো এতো কুৎসিত মেয়ে তাদের ভার্সিটিতে আর একটাও নেই ৷ প্রীতি যাচ্ছিলো হঠাৎ তার মাথায় কিছু একটা ঠাস করে পড়লো ৷ প্রীতি ব্যাথায় আহ করে শব্দ করলো ৷ আর নিজের কপাল হাত দিয়ে চেঁপে ধরলো শক্ত করে ৷ তারপর বাম দিকে তাকিয়ে দেখলো একদল ছেলে , মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ ছেলে , মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন বেশ সুদর্শন আছে ৷ প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ার মতো দেখতে মানুষটা ৷ ছেলেটা বাইকের উপর বসে আছে ৷ প্রীতিকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটা বলল ,

“এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন ? ভার্সিটিতে নতুন নাকি ৷”

প্রীতি বোকা চেহারা করে বলল ,

“জ্বী আমি নতুন ৷”

প্রীতির কথা শেষ হতেই ছেলেটা একটু ঝুকে বলল ,

“তোমার কপালে যেই পাথরটা পড়েছে ৷ ওটা আমিই মেরেছি ৷ এখন থেকে আমাদের দেখলে সালাম দেবে বুঝেছো ৷ তা কোন ইয়ার এ ভর্তি হয়েছো তুমি ?”

“তৃতীয় বর্ষে ভাইয়া ৷ আপনি কোন ইয়ারে ভাইয়া ৷”

ছেলেটাভাইয়া ডাক শুনে বিরক্ত হয় ৷ তার চোখ মুখ কুচঁকে আসে ৷ ছেলেটা বেশ শক্ত গলায় বলে ,

“একদম ভাইয়া বলবে না মামুনি ৷ ভাইয়া ডাক আমার পছন্দ নয় ৷ আর তাছাড়া তোমার যা শ্রী তাতে সমস্যা নেই ৷ আর হ্যা আস্তে আস্তে আমার ব্যাপারে জানতে পারবে ৷ এবার যাও ৷”

প্রীতি মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো ৷ তারপর চলে গেল নিজের গন্তব্যে ৷ প্রীতি চলে গেল ভিসির রুমে ৷ ভিসিকে প্রীতি নিজের পরিচয় দিতেই তিনি বললেন ,

“আমি গোলাম মোস্তফা ৷এই ভার্সিটির ভিসি ৷তুমি এখানের মেয়েদের বাচাঁও মা ৷ আমি কাউকে কিছু বলতেও পারছি না ৷ আমাকে আর তিনমাসের মধ্যে দুইশ মেয়েকে পাচার কারীদের হাতে তুলে দিতে হবে ৷ নইলে আমার পরিবারকে নাকি শেষ করে দেবে ৷ আমার মাথায় এখন কিছুই কাজ করছে না ৷”

প্রীতি লোকটাকে শান্তনা দিয়ে বলল ,

“আপনি ভয় পাবেন না ৷কারো কিছু হবে না ৷ ওরা এখন আপনাকে যা বলবে আপনি শুধু হ্যা বলে যাবেন ৷ আর আমার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবে না ৷ যা করার আমি করবো ৷ আর হ্যা আমার যখন যার ব্যাপারে তথ্য লাগবে ৷ আপনি ঠিক তখন তা যোগার করে দেবেন ৷ আমি এখন যাচ্ছি ৷বেশিক্ষন থাকলে যে কারো সন্দেহ হতে পারে ৷”

প্রীতি বেড়িয়ে গেল রুম থেকে ৷ তারপর ভার্সিটিতে ক্লাস করে বাড়ির দিকে চলে গেল ৷ ভার্সিটির কেউ প্রীতির সাথে কথাও বলে নি ৷হয়তো প্রীতি কালো তাই ৷ এতে তার কিছু আসে যায় না ৷ কারন দুনিয়াটাই টাকা আর সৌন্দর্যের গোলাম ৷

নিজের ঘরে বসে কিছু কাজ করছে প্রীতি ৷ তার একমাত্র লক্ষ দ্বীপ চৌধুরীকে সে চব্বিশ ঘন্টা নিজের নজরে রাখতে চায় ৷ প্রীতি নিজের কাজ শেষ করলো ৷তারপর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে কর্নেল ওসমানকে কল করলো ৷ প্রীতি কল যেতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো ৷ ওপাশ থেকে একটা ভারী কন্ঠ ভেসে এলো প্রীতির কানে ৷

“কে বলছেন ?”

প্রীতি বেশ আবেদন ভরা কন্ঠে বলল ,

“সিআইডি অফিসার প্রীতিলতা ৷”

“কেমন আছো বিউটিফুল ৷”

“একদম ভালো লাগছে না ৷ সারাদিন একা একা ভালো লাগে না ৷ আপনি কেমন আছেন স্যার ৷”

“উফফ আমারো ভালো লাগছে না কিছু তোমাকে দেখার পর ৷ আর এই সব স্যার বলো না তো ৷ ভালো লাগে না ৷ওসমান বলে ডাকো ৷”

প্রীতি ওসমানকে আরেকটু উসকে দিয়ে বলল,

“ইশশ আমার লজ্জা লাগে ৷”

প্রীতি কথা শুনে বুড়ো ওসমান যেন বৃদ্ধ থেকে যুবক হয়ে গেছে ৷ ওসমান দাঁত কেলিয়ে বলল ,

“আমি কিছু বুঝি না আজ থেকে নাম ধরে ডাকবে ৷ তা তোমার মনটা কি করলে ভালো হবে ?”

“আজকে সন্ধ্যায় একবার আসুন না আমার বাড়ীতে ৷ আপনি আর আমি না হয় একটু এনজয় করলাম ৷ কি বলেন ?”

ওসমান ঢোগ গিললো একবার ৷ তারপর বলল ,

“তুমি সত্যি বলছো !”

প্রীতি এবার বেশ অভিমানী কন্ঠে বলল ,

“আপনি আমাকে মিথ্যেবাদী ভাবছেন ৷ ঠিক আছে আসতে হবে না ৷ রাখলাম ৷”

“নো নো আমি আসবো ৷”

“তবে একটা কথা কাউকে বলবেন না যে আপনি আমার কাছে আসছেন ৷ আর আসার আগে মাঝ রাস্তায় ফোনটা বন্ধ করে দেবেন ৷”

“কেন কাউকে বললে কি হবে ? আর ফোন কেন অফ করবো ?”

“উফফ আপনি বোঝেন না কেন ? কেউ যদি জানে আমরা দেখা করছি ৷ তাহলে লোকে সন্দেহ করবে আমাদের ৷ আর মাঝ রাস্তায় ফোন বন্ধ করবেন যেন কেউ আপনাকে কেউ ডিস্টার্ব না করতে পারে ৷ দেখা গেল কোনো জরুরী কাজের কথা বলে আপনাকে নিয়ে গেল ৷”

“ওকে তুমি যেমন বলবে ডার্লিং ৷”

প্রীতি ফোন রেখে দিল ৷তারপর ওসমানের জন্য বাকি আয়োজন শুরু করলো ৷ কেননা মেহমানকে সেবা করা সকলের দায়িত্ব ৷ আর প্রীতির বাড়ির মেহমানদের জন্য কিছু বিশেষ সেবার ব্যবস্থা থাকে সব সময় ৷

অপর দিকে আবেশের বাড়ীতে আসা নতুন মেয়েটার প্রতি সবাই বেশ খুশি ৷ বাচ্চারাও তাকে আপন করে নিয়েছে ৷আবেশ আজ বাসায় এসে দেখে মেয়েটা তার ছেলে , মেয়ের সাথে খেলছে ৷ না সে ভুল কাউকে নিয়ে আসে নি ৷ ওপর দিকে মেয়েটার মনে চলছে অন্য কিছু ৷ এই ভালো ব্যবহারের পেছনে হয়তো অন্য কিছু লুকিয়ে আছে ৷

সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে ৷প্রীতির আয়োজন শেষ ৷ নিজের মা , বাবার ছবি হাতে নিয়ে সে বলল ,

“আজ আমি আমার প্রথম লক্ষ্যকে শিকার করবো ৷ তোমরা আমার জন্য দোয়া করো ৷”

প্রীতির কথার মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠলো ৷ প্রীতি ছবিটা ডয়ারে রেখে দরজার দিকে চলে গেল ৷ প্রীতি দরজা খুলে একটা নেশালো দৃষ্টি ওসমানের ওপর নিক্ষেপ করলো ৷ ওসমানের যেন প্রান যায় যায় অবস্থা প্রীতিকে দেখে ৷ সাদা ফ্রকে একদম পরীর মতো লাগছে তাকে ৷ প্রীতি ওসমানকে নিজের বাড়ীতে অতি সম্মানের সহিত ঢুকালো ৷তারপর তাকে সোফায় বসতে দিয়ে বলল,

“আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো ৷”

” না কোনো সমস্যা হয় নি ৷ তুমি বললে রোজ আসতে পারি আমি ৷”

প্রীতি ওসমানের সামনে দাড়িয়ে বলল ,

“আপনার ফোনটা কি খোলা ?”

“না তোমার কথা মতো বন্ধ করে ফেলেছি ৷”

“ওও আচ্ছা ৷কাউকে এখানে আসার কথা বলেছেন ?”

“না কেউ জানে না ৷ আর তখন যে কল করলে ঐটা তোমার নাম্বার ৷”

“ঐ টা সময় হলেই জানতে পারবেন ৷ আপনার জন্য আমি একটা স্পেশাল শরবত বানিয়েছি ৷ আমি বরং ওটা নিয়ে আসি ৷”

কিছুক্ষন পর প্রীতি একটা ট্রেতে করে শরবত নিয়ে এলো ৷ তারপর বলল ,

“আসুন স্যার আপনাকে খাইয়ে দেই ৷”

ওসমান বেশ অবাক হয়ে বলল ,

“তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে !”

“হুমমম ৷ কেন খাবেন না ?”

“দাও খাইয়ে ৷তোমার হাতে বিষও খেতে পারি আমি ৷”

প্রীতি ওসমানকে খুব যত্ন করে শরবত খাওয়াতে লাগলো ৷ বোকা ওসমান এক চুমুকে সব শরবত খেয়ে নিল ৷ কিন্তু একি শরবত খাওয়ার পর তার মাথা ঘুরছে ৷ সব ঘোলা দেখছে সে ৷ তারপর আর কিছু মনে নেই ওসমানের ৷

রাত বারোটা বাজে ৷ একটা বদ্ধ ঘরের ভেতর চেয়ারে সাথে ওসমান বাঁধা ৷ ঘরটাতে সমান্য আলো ৷ ওসমান নিজের চোখ আস্তে আস্তে খুললো ৷ কিন্তু একি নড়তে পারছে না সে ৷কিছু বলতেও পারছে না ৷ তার মুখ যে বাঁধা ৷ ওসমান সামনে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে গেল ৷

প্রীতি দাড়িয়ে আছে ৷ কিন্তু তার একি অবস্থা ৷ তার দিকে প্রীতি এমন ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে কেন আছে ? আর প্রীতির হাতে ওটা কি ?

প্রীতি ওসমানের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ আবারো করতে লাগলো ৷ ধারানো চাপাটি টা আরো ধার দিতে লাগলো ৷ যেন এক নিমিষেই যে কোনো কিছু কেটে যাবে চাপাটির আঘাতে ৷ এমন ভাবে ধার দিতে লাগলো ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here