প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট :২
প্রীতিলতা চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে ৷ সে সামনে থাকা বিশাল পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ হঠাৎ ওর মোবাইলটা বেজে ওঠে ৷ প্রীতি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে ,
“ম্যাডাম আপনার কথা মতো ঢাকা যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে ৷ আর চার দিন পর আপনার ফ্লাইট ৷ একজন সফল সিআইডি অফিসার হওয়ায় আপনাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে ৷ ঢাকাতে কয়েক বছর যাবত হত্যা ,গুম ,ধর্ষন বেড়েই চলেছে ৷ কিন্তু অপরাধীদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না ঠিক মতো ৷ আপনি তো ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেই পরপর প্রমান সহ যেই ভাবে কেস গুলো সমাধান করেছেন ৷ তা সত্যি কল্পনা করা যায় না ৷ এবার আপনার কথা মতো পোস্টিং ঢাকাতে করা হয়েছে ৷”
প্রীতিলতা ফোনটা কেটে দিল ৷ হাতের সিগারেটটা শেষ হয়ে গেছে ৷ সে আবারো আরেকটা সিগারেট হাতে নিল ৷ তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে নিল ৷ দীর্ঘ একটা টান দিল সে সিগারেটে ৷তারপর কালো ধোয়া গুলো উড়িয়ে দিল শূন্যে ৷ প্রীতি পাশের টেবিল থেকে একটা ছবি হাতে নিল ৷ছবিটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে ৷ অতঃপর মুচকি হেসে বলল ,
“আমার জগতে তোমায় সুস্বাগতম দ্বীপ চৌধুরী ৷আমার অন্ধকার রাজ্যে এবার তোমার আগমন হবে ৷ যেখানে আসা যায়৷ কিন্তু ফেরত যাওয়া যায় না ৷ তোমায় আমি মারবো না ৷তোমায় কেবল নরক যন্ত্রনা দেব ৷ তুমি মরতে চাইবে কিন্তু মরবে না ৷মরলে তো মুক্তি পেয়ে যাবে ৷ কিন্তু তোমায় আমি মরতে দেব না ৷”
প্রীতি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল ,
“জানো এই সুন্দর হাত দিয়ে এই পর্যন্ত আমি অর্ধশত খু/ন করেছি ৷ রক্তে লাল হয়ে আছে আমার দুনিয়া ৷ আমি কাদের মেরেছি জানো ৷তোমার মতো টাকা ওয়ালা জানোয়ারদের ৷ যারা অসহায় মেয়ে গুলোকে ধর্ষন করার পর খুন করে ৷ কিন্তু গরিব মেয়ে গুলো বিচার পায় না ৷ আর সেখানে তো তুমি আমার মাকে ধর্ষন করেছো ৷ তোমায় কি করে ছাড়বো বলতো ?”
প্রীতিলতা সিগারেটে টান দিতে দিতে বলল ,
“আজ আমার পঞ্চাশটা খু/ন পূর্ন হয়েছে ৷ ঐ দেখ একটু আগেই একটাকে ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ শালা একটা সাত বছরের মেয়েকে ধর্ষন করে ছিল ৷ তাই ওকে ওর শাস্তি দিয়ে দিলাম ৷ জানো ও মরার আগে কি বলেছে ? আমি নাকি সাইকো ৷ আমি নাকি পাগল ৷ ওর একটা একটা অঙ্গ কেটেছি ৷ আর আস্তে আস্তে মেরেছি ৷ তিনঘন্টা সময় নিয়ে মেরেছি ৷ কিন্তু কেউ কোনো এই ব্যাপারে জানবে না ৷ কারন আমার রাজ্যের বাইরে আমি একজন সৎ সিআইডি অফিসার ৷”
প্রীতিলতা পৈশাচিক হাসি হাসতে লাগলো ৷ তারপর হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলল ,
“হ্যা আমি সাইকো ৷ হ্যা আমি পাগল ৷ আমি রক্তের জন্য পাগল দ্বীপ চৌধুরী ৷ তোমার মতো জানোয়ারদের রক্তে আমি আনন্দ পাই ৷ আমি পৈশাচিক সুখ পাই ৷কিন্তু আমাকে প্রথম রক্তের স্বাদ তুমি দিয়েছো ৷এবার তোমার রক্তের স্বাদ নেবে প্রীতিলতা ৷”
কাগজের ছবিটা হাত দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে প্রীতি ৷ তারপর পাশে পরে থাকা লাশটার কাছে যায় ৷ লাশটার দিকে তাকিয়ে প্রাতিলতা বলল ,
“কি রে কেমন লাগছে এবার ?তোকে ওপারে পাঠিয়েছি ৷এবার তোকে গুম করে দেব ৷কেউ কোনো দিন আর খুজে পাবে না তোকে ৷ ওপারে ভালো থাকিস ৷”
অতঃপর প্রীতি নিজের কাজ শুরু করতে লাগলো ৷ নিজের পরিকল্পনা অনুসারে লাশ গোপন করতে ব্যস্ত হয়ে গেল সে ৷
অন্যদিকে আবেশ চৌধুরী বিশাল এক বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে আছে ৷ হ্যা এই অভিশপ্ত বাড়ীটাই তার মা ,বাবা , বোন আর ছোট ভাইকে কেড়ে নিয়েছে ৷ এটা এখন একটা পরিত্যাক্ত বাড়ী ৷পোড়া বাড়ীটা দেখতে ভুতুরে প্রাসাদের মতো লাগছে ৷ কোথাও প্রানের কোনো ছোয়া নেই ৷ আবেশ চৌধুরী নিজের চোখের জল মুছে নিল ৷দুনিয়ার বুকে একেবারে নিঃস্ব সে ৷ কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই পেছনে ঘুড়ে তাকায় আবেশ ৷ নিজের প্রান প্রিয় স্ত্রীকে দেখে বলল ,
“দেখেছো আমাদের বাড়ীটায় আজ কোনো হাসির শব্দ মেলে না ৷ আমার আট বছরের ছোট অবুজ বোনটা এখন আর আমার কোলে দৌড়ে আসে না ৷ এই সর্বনাশা বাড়ী সব কেড়ে নিল নিরুপমা ৷”
স্বামীর চোখের পানি মুছে দিয়ে নিরুপমা বলল ,
“তুমি এভাবে কাঁদবে না ৷ দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ৷বাবুরা কাদঁছে ৷চল বাড়ী যাই ৷রাত হয়েছে অনেক ৷”
রাত প্রায় দুইটা বাজে ৷ প্রীতি নিজের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ৷চারিদিকে অন্ধকার ৷হঠাৎ ওর মনে হলো কেউ ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে ৷প্রীতি মুচকি হেসে বলল ,
“কি ব্যাপার বাবা আজও এলে যে ? তোমাকে তো আসতে না করেছি এখানে ৷”
“এখনো ঘুমাস নি কেন ?”
“দুই চোখে ঘুম আসে না ৷ঘুমালে তোমাদের দেখতে পাই ৷ সব জীবন্ত লাগে ৷”
“কেন এত কল্পনা সাজাস আমাদের নিয়ে ৷ আমরা শুধুই তোর কল্পনা ৷”
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে প্রীতি ৷ তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ,
“তোমরা আমার কল্পনা নও ৷”
“এই পর্যন্ত যত জনকে খু/ন করেছিস ৷ সবাই তোকে সাইকো বলেছে ৷ তুই রক্তে নেশায় পাগল হয়ে গেছিস প্রীতি মা ৷ আমাদের কল্পনা করে আর কত খুন করবি ? আমরা যে আর নেই ৷ ”
হঠাৎ প্রীতি রেগে গেল ৷ তারপর চিৎকার করে বলল ,
“আমি পাগল নই ৷ না আমি পাগল নই ৷ আমি সাইকো নই ৷ আমি কাউকে কল্পনা করি না ৷”
প্রীতি পাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই ৷ সে একা একাই চিৎকার করছে ৷
চলবে….