প্রিয় তুই পর্ব ২৮

0
627

#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৮

তিতাস সেভাবে শুয়েই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এসবের মানে হয়? মেয়েদের এই এক সমস্যা কোথায় কী শুনে এসে যাচাই বাছাই না করে রিমান্ড শুরু করবে। রিমান্ডে নিতে তো বাঁধা নেই। অ’ ন্যা/য় করলে রিমান্ড নয় ফাঁ/সি দিলেও মঞ্চুর করা যাবে। কিন্তু অপরাধী জানেই না তার কী অপরাধ? সে আসলে করেছেটা কি? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে তাকে ফাঁ/সি/র মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। না বলার সুযোগ দিচ্ছে; আর না ভোর নিজে বোঝার করছে।এ আবার কেমন ধারার বিচার? বিচার শব্দটা ব্যবহার করাও তার ভুল হচ্ছে। কারণ ভোর তার বিচার করছে না বরং ”ডাইরেক্ট একশান” নিচ্ছে।
যাচাই-বাছাই না করে অপরাধী বানিয়ে কঠিন শা/স্তি জারি করেছে। আর ভোরের আচানক এহেন আচরণ সে মানতেও
পারছে না। তাছাড়া সে কী কী যেন বললো, “ওর ঘৃণা হচ্ছে, তার ছোঁয়া ওর শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। আর সে রোজ যার শরীরের টানে ছুটে যায়, সেখানে যেতে।”
এসব অবান্তর কথা বলার মানে হয়! মেয়েটা নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে। সব পাগল তার কপালেই কেন জুটে, কে জানে।
কিন্তু কথা হচ্ছে, সে কারো শরীরের টানে ছুটে যায় একথাটা ভোরকে জানাল কে? কে বুঝিয়ে এসব কথা? হুম, তারমানে
এখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির হাত আছে। সেই ধূর্ততার সঙ্গে কলকাঠি নেড়েছে। না, তার এই জীবনে স্বস্তি পাওয়ার আর হবে না।একটার পর অন্য ঝামেলার আর্বিভাব হতেই আছে। মুখ্য কথা, সিনিয়র বউটাও যদি অবুজের মতো করে তাহলে কীভাবে হবে। তার তো একটু বোঝা উচিত। এসব ভেবে সে শার্টের বোতাম খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারল। ঘার্মে ভেজা শার্ট মেঝেতে লুটোপুটি খেতে লাগল।তারপর সে দুই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে ভোরের অপেক্ষা করতে লাগল।প্রায় মিনিট দশেক পরে ভোর চোখ মুখ লাল করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ভীষণ কেঁদেছে চেহারাতে তা স্পষ্ট। তিতাস চটজলদি উঠে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,

-“নুডলস খাবেন, রান্না করে দেই?”

ভোর জবাব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে তোয়ালে না নিয়ে আঁচলে মুখ মুছল। ভাবখানা এমন যেন তিতাসকে দেখতেই পায় নি।
তিতাস পুনরায় ওর পথ আঁটকে জোরপূর্বক হেসে বলল,

-”আমি কি করেছি? কেউ কিছু বলেছে? বলুন আমাকে, না বললে বুঝবো কীভাবে?”

ভোর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে।
সে অহেতুক তর্কে না জড়িয়ে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। ওর নীরবতা তিতাসের সহ্য হলো না। সে ফ্রেশ না হয়েই তার সিনিয়র বউয়ের রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ভোর জবাব দিচ্ছে না দেখে আরো উতলা হয়ে উঠল। বসে থেকেই গলার স্বরে মধু ঢেলে কয়েকবার ডাকল,

-”ভোর শুনছেন? এই সিনিয়র বউ এদিকে তাকান না প্লিজ।”

ভোর নেত্রজোড়া বন্ধ করে অনড় হয়ে শুয়ে আছে। যেন তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। অথচ সে জেগে থেকে ঘুমের ভান করছে। তার মুখ থমথমে। ভাবভঙ্গি প্রকাশে অনিচ্ছুক। তার চোখের কোণে অশ্রুফোটাঁ চিহ্ন রেখে নিমিষেই বালিশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। শব্দহীন সেই কান্না। ওকে কাঁদতে দেখে তিতাস উঠে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলল,

-”সিনিয়র বউদের এত রাগতে নেয় জুনিয়র বর’রা এতে কষ্ট পায়। তাদের বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হয়, নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। জুনিয়র বররা তাদের বউকে খুব ভালোবাসে, সন্মান করে। অন্যের শরীরের প্রতি তাদের টান নেই। তারা দু’মুখো হতেও পারে না। কারণ তাদের মস্তিষ্কে সর্বদা গেঁথে থাকে বউ নামক ভাইরাসের কথা। যে ভাইরাস তাদের দেহ ও মনে বিশাল স্তর জুড়ে জায়গা দখল করে আছে। আর নানান ঝামেলায় ওরা সময় দিতে না পারলেও বউকে তারা হেলা করে না, তুচ্ছ’ও ভাবে না। প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না,আমাকের মারুন, বকুন, যা ইচ্ছে করুণ তাও কান্না বন্ধ করুন প্লিজ।”

-” ঘুমা নয়তো পাশের রুমে চলে যাবো।”

-”বউ কাঁদলে ঘুম আসে?”

একথা বলে সে ভোরকে আরো শক্ত করে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। ঘাড়ে মুখ ঘষে চুমু একেঁ দিলো পরপর।তার এক হাত বিচরণ করছে ভোরের পেটে। আজকে তিতাস তার অজান্তে ভোরের একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে। হয়তো ঘনিষ্ঠ হতে চাচ্ছে, নিষিদ্ধ কোনো চাওয়াতে। তার রাগান্বিত বউয়ের রাগ
মোচন করতে চাচ্ছে, আদরের তাল টেনে।ভেসে যেতে চাচ্ছে
অচিন এক সুখরাজ্যে। তিতাস যখন ধীরে ধীরে তার বাসনা পূরণের পথে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই ভোর পায়ের নখ বিঁধে দিলো তিতাসের পায়ের পাতায়। একই সঙ্গে স্বজোরে এক ধাক্কা দিলো তিতাসের প্রশস্ত বুকে।তিতাস ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে বসল। তাৎক্ষণিক ঘোর কেটে সে ভোরের দিকেই তাকিয়ে আছে। ভোর পূর্বের মতোই পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
তখন তিতাস রাগ না করে মনে মনে বলল,

-”তুই আমার একমাত্র বউ, কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরবি, ভালোবাসবি। এমন রোমাঞ্চকর প্রহরে আমাকে সঙ্গী করে রোমান্টিকতার সাগরে ভেসে বেড়াবি। আদরে আদরে উন্মাদ করে তুলবি আমায়। তা না করে তুই কেন রাগ করবি, খামচি দিবি, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবি?”

এসব ভেবে তিতাস মুখটা করুণ করে বসে রইল।কয়েকবার
জিজ্ঞাসা করলেও ভোর টু শব্দ করল না। এভাবেই কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর, ভোর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল,

-”বাইরে থেকে শূন্য হাতে ফিরেছিস বোধহয় তাই না?এতদিন তো ভুলেই বসেছিল তোর বউ আছে?আজ হঠাৎ এত কাছে
টানছিস, ওহ হো শরীরে টান পড়েছে বুঝি?”

ভোরের কথা শুনে তিতাস নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন খোঁচা মারা কথা সে সহ্য করতে পারে না। রাগে গা নিশপিশ করে। এখন ভোরের স্থানে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো। শুধু ভোরের উপর রাগ দেখাতে পারে না বলে নিজেকে সামলে সুন্দরভাবে জিজ্ঞাসা করল,

-”আপনার সমস্যা কী বলবেন আমায়?”

-”আমার কোনো সমস্যা নেই তো।”

-”তাহলে কাছে গেলে দূরে সরান দূরে গেলে কাছে টানেন, কেন? আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমার অনুভূতির মূল্য নেই, এত তুচ্ছ আমি?

-”তোর জীবনে প্রেমিকা আর প্রেম কোনোটার অভাব আছে নাকি? তা কতজনের উপর অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছিস?”

-”তা ঘটাব কেন? তাছাড়া এই যুগে প্রেম করে না কে দেখান আমায়? সেই হিসেবে আমিও করেছি বিয়ের আগে। প্রেমের ছলে ইন্টিমেন্ট হয়ে কাউকে অবৈধভাবে প্রেগনেন্ট তো আর করি নি। আপনি নাহয় বিশ্বের সবচেয়ে নম্রভদ্র এবং পড়াকু এক মেয়ে। বরের জন্য জীবনের সবটুকু প্রীতি সৌহার্দ্য তুলে রেখেছেন। অথচ বর কাছে গেলে উশখুশানি আরম্ভ করেন।
যত রকমের রং ঢং আছে নিজের মধ্যে জাহির করেন। সেই
আপনিই আবার সুন্দরভাবে আমার দিকে আঙুল তুলে এক মনগড়া গল্প সাজিয়ে দোষী সাবস্তও করলেন। বিনাঅপরাধে
কথা দিয়ে আমাকে হিট করছেন, দূর্বল পয়েন্ট আঘাত করে মজা নিচ্ছেন। যত অপরাধই করি না কেন আপনি জিজ্ঞাসা করলে আমি সত্যিটাই বলি, ভবিষ্যতেও বলবো। আজকেও এর ব্যতিক্রম হতো না। তবে না জেনে দোষ দিয়ে অকারণেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তিটা আপনাকে পেতেই হবে ভোর, পেতেই হবে। যে কারণে আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন আমি ঠিক সেই কাজেরই পূর্ণতা চাই, আর সেটা এই মুহূর্তে।”

-”আম আমার কথা শোন।”

-”উহুম না, আর কত? এবার যে দূরত্ব কাটানোর সময় এসে গেছে। রাগ বা জেদের বশে প্রাপ্য অধিকার চাচ্ছি না আমি। স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় আমি আপনাকে কাছে পেতে চাচ্ছি ভোর, খুব কাছে। প্লিজ আমার আর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিবেন না।”

একথা বলে তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো।
আর ভোর হতভম্ব হয়ে নত মস্তকে বসে রইল। ততক্ষণে তার
ওষ্ঠে তিতাসের ওষ্ঠজোড়া রাজত্ব শুরু করছে। ভোর ভুলেও আজ বাঁধা সৃষ্টি করল না। বরং বিনাবিঘ্নে মেনে নিলো তার জুনিয়র বরের আবদার। অতঃপর তিতাসের স্পর্শে শিহরণ বয়ে আনল তার সর্বাঙ্গে। তারপর….তারপর…..তারপর…!
_____________________

পরেরদিন সকালে কানের কাছে তিতাসের ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল। ফোন দেখে তিতাসের স্মরণে আসল, সে রাতে ফোনটা বাসায় ফেলে গিয়েছিল। তিতাস পাশ ফিরে ভোরের বন্ধ চোখজোড়ায় চুমু এঁকে, মিটিমিটি হাসল। বেশ আদুরে লাগছে ভোরকে দেখতে। ওর আদরে আদরে আদুরে ভাবটা ফুটে উঠেছে। এসব ভেবে হেসে সে ফোন হাতে নিয়ে বিরক্তই হলো। ফোনের স্ক্রিন জুড়ে জ্বলজ্বল করছে তার এক্স গফের (রুম্পার) নাম। ততক্ষণে কল কেটে যাওয়াতে তার এটাতেও
দৃষ্টি গেল, গতরাতে এই নাম্বারেই কথা হয়েছে তিন মিনিটের মতো। অথচ ফোন তার কাছেই ছিলো না। তিতাসের বুঝতে আর বাকি রইল না প্যাঁচ ঠিক কোথায় বেঁধেছে। সে ভোরের উপরে তার শরীরের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে স্পিকার দিয়ে কলটা রিসিভ করল। হঠাৎ নিজের উপরে ভারি কিছু অনুভব করে
ভোরের ঘুমটা ভেঙে গেল। কিছু বলতে গেলে তিতাস ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে একটা চুমুও খেলো।তখন শোনা গেল রুম্পার ন্যাকামিযুক্ত কন্ঠস্বর,

-” তিতাস, আমার জানপাখিটা কি করছো তুমি?”

-” এভারেস্টের চূড়ায় উঠে তোমার কথায় ভাবছিলাম সোনা পাখিটা।”

-” ওয়াও সো কিউট। রাতে কল রিসিভ করে কথা বলছিলে না কেন বাবু? আমি ভেবেছিলাম আমার কথা ভুলে গেছো। এজন্য আমাদের প্রথম মিট থেকে শুরু করে লং ড্রাইভের ঘটনা বলে মনে করাচ্ছিলাম। ওমা পরে দেখি সব না শুনেই কল কেটে দিয়েছো। জানো আমি ভয় পেয়েছিলাম, তোমার কিছু হলো ভেবে।”

-”তখন আমি না আমার দুষ্টু বউ টা কল রিসিভ করেছিলো। যাইহোক, আমাকে কল দিও না আমার বউ পছন্দ করে না। সে আবার মারাত্মক রাগী, পরে গালি টালি দিলেও আমার কিছু করার থাকবে না তাই সাবধান। এখন বাইই।”

কল কেটে তিতাস ভোরকে বলল এই মেয়েটা ওর এক্স গফ। বড় লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ললনা। এদের পাখি ধরতে যেমন সময় লাগে না তেমনি ছাড়তেও।তার সঙ্গে ওর গভীর সম্পর্ক ছিলো না, আর না এখন আছে। শুধু সে কেনো, তার ছাব্বিশটা গফের কারো সঙ্গেই তার গভীর সম্পর্ক ছিল না। এরা শুধু টাইম পাসের মাধ্যম। তবে বর্তমানে ভোর এবং ওর মা ছাড়া সে কোনো মেয়েকে ওর জীবনে ঠাঁই দেয় নি, আর দিবেও না। কারণ এরাই তার মুখে হাসি, বাঁচার অবলম্বন।

To be continue………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here