প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৮

0
1394

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৮

“আমার হৃদয় হরণকারী দর্শিনী! আমার জীবনে পর্দাপণ করার জন‍্য প্রস্তুতি নিন। খুব শিগ্রই আপনাকে আমার মাঝে আবদ্ধ করে নিবো। আপনি শুধু আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর একমাত্র ব‍্যাক্তিগত।”

আবিদের উষ্ণতায় ভরপুর গভীর কন্ঠে প্রিয়দর্শিনী কেঁপে উঠে। অনুভূতিরা সব প্রজাপ্রতির মতো ভালোলাগায় দিক বেদিক হারিয়ে বসেছে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে আবিদের শ্বাস প্রশ্বাস। অন‍্যদিকে নিজের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর তার প্রতি এতো সম্মোহনী অনুভূতি রয়েছে জানা ছিল না প্রিয়দর্শিনীর। নিজেকে কেমন উ’ন্মা’দ মনে হচ্ছে। প্রিয়দর্শিনীর অবচেতন মন মানুষটাকে এই মুহুর্তে দেখবার প্রবল ইচ্ছে প্রোষণ করছে। কিন্তু নিজের অনুভূতিকে এখনই এতটা প্রশয় দেওয়া যাবে না। প্রিয়দর্শিনী নিজেকে সামলে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে,

‘দেখা যাবে রাখছি।’

শুধু এতটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়েছিল প্রিয়দর্শিনী। অপরপাশে আবিদের মুখে ছিল সু’ক্ষ্ম হাসির বিচরণ। প্রিয়দর্শিনী এতটা লজ্জা পাবে জানলে ফোনে নয় সরাসরি বলতো আবিদ। ইশশ! লজ্জা পেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে নিশ্চয় সবচেয়ে আকষর্ণীয় লাগছে। প্রিয়দর্শিনীর লজ্জা মাখাদৃষ্টি দেখার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে আবিদের।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যায় প্রিয়দর্শিনী। কাল সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়েছিল আবার আবিদের সঙ্গে কথা বলার পর কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই। মনটা ভিষণ ফুরফুরে। কালকে আবিদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছিল। ম‍্যাজিস্ট্রেট মানুষ এতো রোমান্টিক হবে কল্পনা করেনি সে। প্রিয়দর্শিনী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে কেউ নেই।আজকে শুক্রবার অফডে সবাই ঘুমাচ্ছে। প্রিয়মা বেগম রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করছে। প্রিয়দর্শিনীদের কাজের মেয়ে মধ‍্যবয়স্ক শেফালী পুরো বাড়ি ঝাড়ুমোছা করে ঝকঝকে পরিস্কার করছে। মাঝে মাঝে প্রিয়মা বেগমকে সাহায‍্য করছে।

প্রিয়দর্শিনী আহমেদ মুহতাসিমের ঘরের দিকে উকি দিয়ে দেখে। আহমেদ মুহতাসিম এই সময়টাতে হাটতে গার্ডেনের এরিয়ায় যায়। প্রিয়দর্শিনী কাউকে কিছু না বলে গার্ডেন এরিয়ায় পা বাড়ায়। সকাল বেলার মৃদু শীতল বাতাস, সুন্দর আবহাওয়া প্রশান্তি এনে দেয়। প্রিয়দর্শিনীদের গার্ডেন এরিয়ায় লোহার একটা ছোট্ট বেঞ্চ আছে। প্রিয়দর্শিনী আহমেদ মুহতাসিমকে বেঞ্চে বসতে দেখে মিষ্টি হেসে এগিয়ে যায়। আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনীকে খেয়াল করে মৃদু শব্দ করে হাসলেন। কম্পনরত ডান হাতটা নাড়িয়ে পাশে বসতে ইশারা করলেন। প্রিয়দর্শিনী দাদুর পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘কেমন বোধ করছো? দিন দিন তুমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো দাদু। নিজের খেয়াল একটুও রাখো না। কেনো বলতো?’

আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনীর কথায় অভিমান লক্ষ‍্য করে হাসলেন। প্রিয়দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘বয়স হয়ে যাচ্ছে দাদুভাই। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। তোমার দাদিমার কাছে যাওয়ার আগে নাত জামাইকে দেখে যেতে চাই। তবেই তো তোমার দাদিমার কাছে গিয়ে গল্প করতে পারবো।’

প্রিয়দর্শিনী দাদুর চলে যাওয়ার কথা শুনে ফুঁসে উঠে। আহমেদ মুহতাসিমের হাতটা ধরে ছলছলে চোখে আদুরে কন্ঠে বলে,

‘কেনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো দাদুভাই। তুমি কোথাও যাবেনা। আরো দশ-বারো বছর বেশি বাচঁবে। খবরদার যদি দুরে যাওয়ার কথা বলেছো তোমার সঙ্গে কথা বলবোনা।’

আহমেদ মুহতাসিম নাতনিকে কান্না করতে দেখে কষ্ট পেলেন। ব‍্যাস্ত হয়ে প্রিয়দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে থামতে বললেন,

‘কান্না করোনা দাদুভাই। আচ্ছা আমি আরো অনেক বছর বাচবো ঠিক আছে? তুমি কান্না করলে আমার কষ্ট লাগে দাদুভাই।’

‘তাহলে বলো দাদিমার জন‍্য কষ্ট পাবেনা আর। হাসিখুশি প্রাণবন্ত থাকবে সবসময়। সারাজীবন!’

‘আচ্ছা ঠিক আছে দাদুভাই। চলো আমাকে ঐদিকটাই হাটতে সাহায্য করো।’

প্রিয়দর্শিনী চোখ মুছে আহমেদ মুহতাসিমের হাত ধরে উঠতে সাহায্য করল। তারপর দাদু নাতনি মিলে গল্প করতে করতে বেশ খানিকটা হাটলো। প্রিয়দর্শিনী কথার ফাঁকে আবিদের ব‍্যাপারে প্রসঙ্গ টেনে তুলল। আবিদকে অপছন্দ করার বিষয়টি সে জানতে চায়। যাতে আবিদকে জানালে সে সুধরে নিয়ে আহমেদ মুহতাসিমের মন জয় করতে পারে।

‘আচ্ছা দাদু ম‍্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে তোমার অপছন্দ কেনো?’

প্রিয়দর্শিনীর কথায় আহমেদ মুহতাসিম নিশব্দে হাসলেন। আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনী আর আবিদকে লক্ষ‍্য করেছেন ভালোভাবে। দুজনের মধ‍্যে কিছু তো ব‍্যাপার আছে। অষ্টাদশী প্রিয় নাতনীর মন পড়া ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিমের জন‍্য কঠিন নয়। সে তো কথার ছলে আবিদ আর প্রিয়দর্শিনীকে পরীক্ষা করতে চায়। আবিদ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আহমেদ মুহতাসিম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বিয়ে দিবেন। আহমেদ মুহতাসিমের মন বলছে আবিদ প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আগে থেকে পরিচিত। আহমেদ মুহতাসিম নাতনীর হাত ধরে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলেন,

‘আবিদ শাহরিয়ারকে আমার অপছন্দ কারণ ছেলেটি তোমার জন‍্য একটু বেশিই যোগ্য দাদুভাই। তবে ছেলেটির মাঝে সবাইকে ডমিনেট করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে! তার সুশীল ব‍্যাবহার, অমায়িক আচার-আচরণ দিয়ে সবাইকে সম্মোহন করে ফেলার ব‍্যাপারটা দারুণ হলেও আমি কিন্তু জেলাস দাদুভাই। আমার যদি ভুল নাহয় তুমি আবিদ শাহরিয়ার চ‍ৌধুরীকে আগে থেকে পছন্দ করো ঠিক না?’

প্রিয়দর্শিনী স্তব্ধ হয়ে গেছে দাদুর কথাতে। বয়স্ক আহমেদ মুহতাসিম ভুল বলেনি সত্যি আবিদ শাহরিয়ারের ব‍্যাক্তিত্ব এমন যে কেউ অপছন্দ করে থাকতে পারেনা। প্রিয়দর্শিনী দাদুর কথার জবাব দেয়না। আহমেদ মুহতাসিম শব্দ করে হেসে বললেন,

‘বুঝেছি বলতে হবে না। বাসায় যাওয়া যাক? চলো!’

প্রিয়দর্শিনী নির্বাক নিশ্চুপ। আহমেদ মুহতাসিম যে এই বয়সে এসেও সবাইকে ঝটকা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন কল্পনাতীত ছিল। প্রিয়দর্শিনীর কি খুশি হওয়া উচিত? তার মন বলছে এই বিয়েতে আর সমস্যা থাকবে না আর কোনো। বেশকিছু ক্ষণ কথা বলার পর দাদু নাতনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাসায় চলে আসল।

চৌধুরী বাড়িতে সবাই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে। শুক্রবারের সকালটায় সবাই ভালো ভাবে ঘুমিয়ে নেয়। সবাই যখন ঘুমাচ্ছিলো আবিদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। সাস্থ্য সচেতন আবিদ লেট করে ঘুম থেকে উঠা পছন্দ করেনা। বলিষ্ঠ সুন্দর ফিগারের আকষর্ণীয়তা মেনটেইন করতে দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হয়। এছাড়া সকালবেলার সুন্দর আবহাওয়ায় জগিং, পুশআপ, ভার উত্তলন তার নিত্যদিনের কাজ। সময় স্বল্পতা, ব‍্যাস্ততার মাঝে ঠিক মতো জিমে যেতে পারেনা। মাঝে মাঝে জিম মিস হয়ে যায় কিন্তু পুশআপ, জগিং না করলে চলেনা আবিদের। ঠিক এই কারণে বাড়িতে জিমের সামগ্রী দিয়ে ছোট খাটো ব‍্যায়ামাগার তৈরি করে ফেলেছে। এজন্যই বত্রিশ বছর বয়সী আবিদ সুপুরুষ হলেও তাকে সাতাশ আঠাশ বছর বয়সী মনে হয়। আবিদ ট্রি-শার্ট টাওজার পরে রেডি হয়ে বাড়ির গার্ডেন এরিয়ায় বেশ খানিকক্ষণ দৌঁড় দেয়। একটু জিরিয়ে একসঙ্গে চার পাচবার পুশআপ করে। আদিবা ঘুম থেকে উঠে নিজের রুমের বেলকুনিতে গিয়ে দাড়াঁয়। জায়গাটা ফাঁকা। আদিবা ভাইকে বেঞ্চে বসে পানি খেতে দেখে চিৎকার করে বলে,

‘ভাইয়া আজকে কোথাও যাওয়ার কথা। মনে আছে তো? প্রিয় আপুদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল ভুলে যেয়ো না।’

আবিদ পিছনে তাকিয়ে দেখে আদিবা বেলকুনির রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ প্রিয়দর্শিনীর কথা ভেবে সুক্ষ্ম হেসে বলে,

‘মনে আছে। আশরাফ মুহতাসিম আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। রেডি হয়ে থেকো।’

আদিবা খুশি হয়ে যায়। আবিদকে বাই বলে ড্রেস চুজ করতে শুরু করে। আবিদ বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। আবিদ গার্ডেন এরিয়া থেকে ভিতরে আসতে আসফির মুখোমুখি হয়। আসফি মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে সোফায় বসে পেপার পড়ছিল। আবিদ পাত্তা না দিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। অনুসা বেগম পুস্পিতা, কাজের মেয়ে সুফিয়ার সাহায্যে পরোটা, ডিম,আলুর তরকারি, মাংস রান্না করছে। শুক্রবার মানেই খাবারের তালিকায় ডিম, মাংস থাকবেই। আবিদ গ্লাসে জুস নিয়ে খেতে থাকে। এদিকে আদিবা নাচতে নাচতে আবিদের পাশে বসে। আরহান সদ‍্য ঘুম থেকে উঠেছে, ঘুমের রেস এখনো চোখেমুখে বোনের পাশে বসে বলে,

‘এতো আনন্দ কিসের তোর?’

আদিবা আবিদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। আবিদ চোখ সরু করে তাকালে আদিবা উল্টো মুখে ভেঙচি কাটে। আবিদ বোনের আচরণে প্রচন্ড বিষম খায়। আরহান ভয় পেয়ে ভাইয়ের পিঠে বারি দিতে থাকে। আবিদ ভ্রু কুচকে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আমাকে বাচ্চা পেয়েছো?এমন করা লাগবে?’

আরহান নির্বিকারভাবে আবিদের দিকে তাকাল। আদিবা হাসতে হাসতে বলে,

‘না ভাইয়া তোমাকে বুড়ো পেয়েছি। বিয়ে করছো না কেনো তুমি? বয়সের খেয়াল আছে তোমার?’

আরহান আদিবার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,

‘বড়দের সঙ্গে এভাবে কথা বলে? ছাগল।’

আবিদ মুখটা গম্ভীর করে বলে,

‘আমার বয়স বত্রিশ হলেও সাতাশ-আঠাশ মনে হয়। তুমি বড় হয়ে যাচ্ছো। তোমার জন‍্য পাত্র দেখছি ওয়েট! দ্রুত বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবো তোমাকে।’

আবিদ মজা করে বললেও আদিবার চোখ ছলছল করে উঠে। মূলত সে বিয়ে করতে চায়না। বিয়ে করলে তাকে পরিবার ছেড়ে যেতে হবে এটা সে মানতেই পারবে না। পরিবার তার কাছে মূল‍্যবান রত্ন যা সে হারাতে চায়না, পরিবারের থেকে সে দুরে যেতে চায়না।

আবিদ বোনের ছলছলে চোখের দিকে তাকিয়ে দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বিরক্তিতে ‘চ‍’ শব্দ করে বলল,

‘এইযে শুরু হলো। নিজে মজা করবে কিন্তু তার সঙ্গে আমরা মজা করতে পারবো না। ভাই প্লীজ ওকে বলে দেও এমন ফ‍্যাচ ফ‍্যাচ করে কান্না করলে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবোনা।’

আদিবা আবিদের নিয়ে যাবোনা কথা শোনা মাত্র চোখ মুছে জোর করে হেসে বলে,

‘আমি কান্না করিনি। আমাকে না নিয়ে গেলে তোমার সঙ্গে কথা বলবোনা ভাইয়া।’

সকাল ১১:০০টা। প্রিয়দর্শিনী, প্রজ্জ্বলিনী, উজান সবাই দাদুর পাশে বসে চায়ের আড্ডা দিচ্ছে। প্রিয়মা বেগম রান্নাবান্নার কাজে ব‍্যাস্ত। আশরাফ মুহতাসিম পেপার পড়ছিলেন। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। আশরাফ মুহতাসিমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। প্রিয়মা বেগম রান্নাঘর থেকে উকি দিয়ে বলেন,

‘দেখো তো কে আসলো।’

উজান প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,

‘কিওপেট্রা! দেখো গিয়ে কে আসলো।’

প্রিয়দর্শিনী উজানের একেকবার একেক রকম নামে অতিষ্ঠ।উজানের জন‍্য মাঝে মাঝে নিজের নামটাও ভুলে যায়। প্রিয়দর্শিনী নিজেকে ঠিক ঠাক করে শিফনের সাদা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে পরিপাটি হয়ে এগিয়ে গেলো। প্রিয়দর্শিনী হঠাৎ দরজা খুলতে বড়সড় ঝটকা খেলো। সামনে থাকা পুরুষটিকে দেখে হ’ত’ভ’ম্ব সে।

#চলবে

নোট ~ এখানে আমি আদিবা এবং প্রিয়দর্শিনীকে প্রায় সমবয়সী বলেছিলাম কিন্তু আদিবা ক্লাস এবং বয়সে প্রিয়দর্শিনীর চেয়ে একবছরের ছোট হবে।

| প্রিয় পাঠক বেশি বেশি রেসপন্স করার অনুরোধ রইল। যত দ্রুত ২k হবে তত দ্রুত পর্ব দিবো। ভালোবাসা অবিরাম 🧡|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here