প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৭

0
1389

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৭

প্রজ্জ্বলিনীর আ’ক্রো’শ পূর্ণ দৃষ্টি তাচ্ছিল্যতার সঙ্গে উপেক্ষা করে চলে যায় আবিদ শাহরিয়ার!

আবিদের এমন আচরণ প্রজ্জ্বলিনীর প্রচন্ড আত্মসম্মানে লাগে। রীতিমতো রাগে ফুসঁছে সে। এদিকে প্রজ্জ্বলিনী আসছে না দেখে উজান পিছনে তাকিয়ে দেখে, প্রজ্জ্বলিনী আবিদের নেভিব্লু গাড়ির পানে তাকিয়ে আছে। উজান মিষ্টি হেসে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কাধে কারো হাতের উপস্থিতি পেয়ে প্রজ্জ্বলিনী চমকে উঠে আগ্রহের সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে উজান। প্রজ্জ্বলিনী নিশ্চিন্ত হয়ে সৌজন্যে হাসে। উজান হতভম্ব হয়ে যায় প্রজ্জ্বলিনীর হঠাৎ হকচকিয়ে যাওয়াতে।

‘এতো আগ্রহের সঙ্গে কি দেখছিলে, এইভাবে চমকে উঠলে যে?’

প্রজ্জ্বলিনী কি বলবে বুঝতে পারেনা, প্রচন্ড অসস্থিবোধ করে। নিজেকে সামলে মেকি হেঁসে বলে,

‘আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী ভিষণ ভালো তাইনা? প্রিয়দর্শিনীর জন‍্য কতোকিছু করল। এটাই ভাবছিলাম আবিদ চৌধুরী মানুষটা যেমন অমায়িক মনটাও ভালো।’

উজান হাসলো তার নিজেরও আবিদকে পছন্দ হয়েছে। সে ভাবল, স্নো হোয়াইটের সঙ্গে অনেক মানানসই লাগত আবিদ শাহরিয়ারকে। তবে আবিদ শাহরিয়ার একটু বেশিই লম্বা, কিন্তু মেয়ে হিসাবে স্নো হোয়াইটও লম্বা। পারফেক্ট ম‍্যাচ ফর ইচ আদার! আবিদের গমরঙা ত্বকে আলাদা মাধুর্য আছে। দুজনের জোড়া দারুণ হবে। প্রিয়দর্শিনীর অমত করা নিয়ে উজান অ’স’ন্তো’ষ। কিন্তু কিছু করার নেই ‘স্নো হোয়াইট’ নিজে বুঝতে না পারলে কি করার তবে একবার আবিদের জন‍্য সুপারিশ করাই যায়। হয়তো আবিদের অমায়িক ব‍্যাবহার আচরণ দেখে বিয়েতে ‘না’ ‘হ‍্যা’ হয়ে যেতে পারে। এদিকে প্রজ্জ্বলিনী নিজের উপর বিরক্ত সে কেনো প্রশ্ন এড়াতে আবিদের মিথ্যা প্রশংসা করতে গেলো। প্রজ্জ্বলিনী উজানের দিকে তাকাল। উজান আগ্রহের সঙ্গে বলে,

‘মন্দ বলোনি আসলেই লোকটি ভালো। স্নো হোয়াইটের জন‍্য একদম পারফেক্ট ছিল।’

অজান্তেই ক্রোধে ফেঁটে পড়ে প্রজ্জ্বলিনী। আবিদকে সহ‍্য করতে পারেনা সে। আর উজান কিনা আবিদের প্রশংসায় ভাসছে। অবশ্য শুরুটা ভুলবসত সে করেছে। কিন্তু প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আবিদকে ভাবতে পারবে না প্রজ্জ্বলিনী। প্রজ্জ্বলিনী প্রিয়কে প্রচন্ড ভালোবাসে অন‍্যদিকে আবিদকে সে পছন্দ করেনা। তাই বোনকে তার অপছন্দের লোকটির সঙ্গে সহ‍্য করতে পারবে না প্রয়োজনে যা করা লাগে করবে।
প্রজ্জ্বলিনী উজানের কথার প্রতিবাদে বলে,

‘আবিদ শাহরিয়ার ভালো হলেও প্রিয়র জন‍্য যোগ্য নয়।’

উজান প্রজ্জ্বলিনীর কথায় ভ্রুকুচকে জিগ্যেস করে,

‘কি বলছো এসব?কেনো মনে হলো এমনটা?’

‘আমার বোন অষ্টাদশী উজান। আবিদ শাহরিয়ারের থেকে গুনে গুনে চৌদ্দ- পনেরো বছরের ছোট। তুমি কিভাবে ভাবছো উনি আমার বোনের জন‍্য যোগ্য? মাথা ঠিক আছে তোমার?’

‘এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? তুমি খুব দ্রুত সিরিয়াস হয়ে যাও। আমাদের মাঝেও দশ বছরের এজ গ‍্যাপ আছে প্রজ্জ্বলিনী! দেখো তারপরও আমরা কতোটা হ‍্যাপি। ম‍্যারেজ লাইফে বয়সের গ‍্যাপ থাকলে তাদের মাঝে বনিবনা খুব সহজে হয়। একে অন‍্যের প্রতি আন্ডার্সস্ট‍্যান্ডিং, শেয়ারিং, কেয়ারিং থাকে। প্রিয়দর্শিনীর নাইনটিন হতে দেরী নাই। অতটাও ছোট নয় সে। যথেষ্ট ম‍্যাচুয়ার্ড আমাদের স্নো হোয়াইট!’

প্রজ্জ্বলিনী উজানের যুক্তিতে বিরক্ত। কারণ সেও জানে উজান ঠিক বলছে কিন্তু প্রজ্জ্বলিনী মানতে চাইছে না। প্রজ্জ্বলিনী উজানকে সিরিয়াস হয়ে বলে,

‘হয়েছে!এখন চলো বাবা মা কখন চলে গেছে।’

উজান প্রজ্জ্বলিনীর কাধ ধরে ধীরে ধীরে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়। বাবা, মা, বন্ধু- বান্ধবদের একসঙ্গে দেখে প্রিয়দর্শিনী খুশি হয়। আবিদ চলে যাওয়ার পর একা একটা কেবিনে শুয়ে থেকে দম বন্ধ লাগছিল তার। যতক্ষণ আবিদ ছিল তার একাকিত্ব লাগেনি। এখানে সবাই আছে শুধু আবিদ বাদে। প্রিয়দর্শিনী আবিদকে সবার সঙ্গে মিস করছে। উজান প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করতে করতে বলে,

‘লিটল চেরি ব্লসম! এটা কি শুনছি তুমি কি ভুলে গেছিলে তোমার স্ট্রবেরিতে এলার্জি?এমন ভুল কিভাবে করলে বলতো?

উজানের কথায় প্রিয়দর্শিনী কি প্রতত্তর করবে জানে না। সে তো আবিদ শাহরিয়ারের পাঠানো মিল্কশেকটা উপেক্ষা করতে পারেনি। হাজার হোক মানুষটা তার স্বপ্ন পুরুষ। তার জন‍্য বারবার একই ভুল করতে প্রিয়দর্শিনী ভাববে না। মানুষটা যদি বিষাক্ত হয়, প্রিয়দর্শিনী নিজ ইচ্ছায় বিষাক্ত হতে রাজি। আচ্ছা? কথাটা তার স্বপ্ন পুরুষ জানলে কেমন ভাবে রিয়েক্ট করবে? প্রিয়দর্শিনী খুব সন্তপর্ণে আবিদের অনুভূতি পরোক্ষ করেছে। আবিদের আচরণ বলে দিয়েছে তার প্রতি অনুভূতির প্রগাঢ়তা, যত্ন, ভালোলাগা এটাইতো চাইছিল প্রিয়দর্শিনী। এবার তার বিয়েতে কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রিয়দর্শিনী অজান্তেই হেসে ফেলে। উজান প্রিয়দর্শিনীকে বলে উঠে,

‘হাসছো কেনো আমরা সবাই সিরিয়াস ল‍্যাভেন্ডার?’

উজানের একেকবার একেকটা নামে প্রিয়দর্শিনী অভ‍্যস্ত। প্রিয়দর্শিনী বলার মতো কিছু পেলনা আমতা আমতা করল। মিথ্যা কথা সে বলতে পারেনা কোনরকম মিনমিন করে বলল,

‘আমি ভুলে গেছিলাম ভাইয়া। আর স্ট্রবেরি মিল্কশেকটার পরিবেশন সত্যি সুন্দর লাগছিল। আমি একটু ট্রাই করেছিলাম শুধু।’

আশরাফ মুহতাসিম প্রিয়মা বেগমের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ভাবেন এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেলো না।

প্রিয়দর্শিনীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে কিছুক্ষণ হলো। প্রিয়মা বেগম মেয়ের দেখভালে ব‍্যাস্ত। প্রজ্জ্বলিনী বোনের পাশেই ছিল। প্রিয়দর্শিনীর দাদা ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিম নাতনিকে দেখে গেছেন। লোকটি যেন নাতনির কোন কষ্টই সহ‍্য করতে পারেননা। তিনি নাতনিকে তো কিছু বলেনি আবিদের উপর বেশ বিরক্ত। আবিদ কেনো প্রিয়দর্শিনীকে স্ট্রবেরি মিল্কশেক দিলো এইটা নিয়ে প্রচন্ড অসন্তুষ্ট। আশরাফ মুহতাসিম বাবাকে বোঝাতে গিয়ে ঝাড়ি খেয়েছে তাই আর কিছু বলতে যায়নি। অন‍্যদিকে প্রজ্জ্বলিনী দাদুর কাছে আবিদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। প্রিয়দর্শিনী দাদু আর বোনকে বুঝিয়ে পারছে না সে ইচ্ছে করে খেয়েছে আবিদের দোষ নেই।

ঘটনা ক্রমে চৌধুরী বাড়িতে খবরটা পৌঁছে গেছে। আসফি বরাবরের মতো ভাইয়ের উপর ক্রু’দ্ধ। সে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আবিদকে বলেছে,”পছন্দ বলে আরেকজনের থেকে কেড়ে নেয় অথচ তার ব‍্যাপারে নূন্যতম জ্ঞান নেই এটাই তো পছন্দ!”

আবিদ চোখমুখ বুজে সবটা সহ‍্য করে নেয়। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়েছে। কারণ তার মনে হয় আসফি ভুল কিছু বলেনি। আবিদ সত্যি প্রিয়দর্শিনীর এর্লাজির ব‍্যাপারে জানতো না। আজ দর্শিনী তার জন‍্য বিপদে পড়েছে। আবিদ ঠিক করে প্রিয়দর্শিনীর ব‍্যাপারে খুটিনাটি সবকিছু জেনে নিবে। আর কোনদিন কষ্ট পেতে দিবে না। আদিবা আবিদকে জরিয়ে ধরে বলে,

‘ভাইয়া আমি প্রিয়কে দেখতে যাবো প্লীজ নিয়ে চলো না।’

আবিদ মিষ্টি হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বিকালের দিকে প্রিয়দর্শিনীকে পরিবারের কাছে রেখে এসেছে। এতোক্ষণে হসপিটাল থেকেও মনে হয় রিলিজ হয়ে গেছে। মেয়েটা বিপদ থেকে রক্ষা পেলো। আজ যাওয়া ঠিক হবেনা। আবিদ বোনকে বুঝিয়ে বলে,

‘আজ নয় কাল সকালে নিয়ে যায়? মনে হয় ডিসচার্জ করে দিয়েছে, হয়তো এতক্ষণে বাসাতে পৌঁছেও গেছে। এমন সময় ওদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবেনা। কাল নিয়ে যাবো!’

আদিবা ভাইকে জরিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,

‘ঠিক আছে ভাইয়া। কাল কিন্তু কথার খেলাফ করবে না।’

আসফি ভাই বোনের খুনসুটি দেখে বিরক্ত হয়ে ঘরে চলে গেলো। আসফির নিজেরও প্রিয়দর্শিনীকে দেখার ইচ্ছে করছে। কিন্তু আবিদকে তো বলা যাবেনা। আবিদ জানতে পারলে ঝামেলা করবে। মাঝে মাঝে আসফির আবিদের উপর প্রচন্ড ক্ষো’ভ হয়। এই মানুষটা তার লাইফের অর্ধেক হ‍্যাপিনেস ছিনিয়ে নিয়েছে। কোনদিন ক্ষমা করবে সে আবিদকে। একবার যদি প্রিয়দর্শিনী তার হয়ে যায় আবিদকে সে হাড়ে হাড়ে মজা বুঝাবে।

রাত ১১:৩০। আহানাফ প্রিয়দর্শিনীর পার্সোনাল নাম্বার নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। হৃদির থেকে অনেক রিকুয়েস্ট করে নিয়েছে। ফোন করার সাহস হচ্ছে না। আবার প্রিয়দর্শিনী কেমন আছে না জেনে শান্তি পাচ্ছে না। শেষে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ফোনটা দিয়েই দেয়।

হঠাৎ ঘুমে ব‍্যা’ঘা’ত ঘটাই প্রিয়দর্শিনী বিরক্ত হয়। অন্ধকারে ল‍্যাম্পের কাছে ফোনটা হাতড়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে ফোন। প্রিয়দর্শিনী বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে,

‘আসসালামু আলাইকুম! কে বললছেন?’

প্রিয়দর্শিনীর ঘুম জরানো মাদকতাময় কন্ঠ শুনে আহানাফের মন অস্থির হয়ে যায়। নিজেকে সামলে গলা ঝেড়ে বলে,

‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি আহানাফ।’

প্রিয়দর্শিনী হসপিটাল থেকে আসার পর ক্লান্ত ছিল। সারিদিনের ধকল তার শরীরে সহ‍্য হয়নি। সবাইকে রুম থেকে যেতে বলে ঘুমিয়েছিল। সেই ঘুমটা ভেঙে মাথায় পেইন হচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে বলল,

‘এটা তোর নাম্বার? এখন ফোন দিয়েছিস কেনো?’

আহানাফ ইতস্তত বোধ করে ও বুঝতে পারেনি প্রিয়দর্শিনী ঘুমাচ্ছিল। নাহলে সকাল পযর্ন্ত অপেক্ষা করতো।

‘হ‍্যা আমার নাম্বার। এখন কেমন আছিস জানতে ফোন দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি তুই ঘুমোচ্ছিলিস।’

‘ও! এইতো ভালো আছি। আর কোন সমস্যা হয়নি রাখি এখন! প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।’

আহানাফের মনটা ছোট হয়ে গেলো। তার ইচ্ছে করছে প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলতে। এইযে প্রিয়দর্শিনীর ঘুম কাতুরে স্বর তার হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া বয়ে যাচ্ছে এটা কি প্রিয় জানবে না?

কথা বলার মাঝেই আরেকটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসায় প্রিয়দর্শিনী আহানাফকে বাই বলে ফোনটা কেটে দেয়। আহানাফ হুট করে কেটে দেওয়ায় কষ্ট পায়। এদিকে প্রিয়দর্শিনী আরেকটি আননোন নাম্বার দেখে চোখমুখ কুচকে ফেলে। তার নাম্বারটা হাতে গোনা পরিচিত ছাড়া কেউ জানেনা অথচ আজ সব আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছে। প্রিয়দর্শিনী রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগে পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে তার ঘুম একলাফে ছুটে যায়। আবিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘বিরক্ত করলাম? আপনি মনে হয় ফোনে কথা বলতে ব‍্যাস্ত ছিলেন দর্শিনী।’

প্রিয়দর্শিনী ফোনের ওপাশ থেকে আবিদের কন্ঠ শুনে হতভম্ব হয়ে উঠে বসে। আবিদের উষ্ণ কন্ঠে দর্শিনী নামটা শুনে প্রচন্ড অস্থিরতায় তার হাত পা কেঁপে উঠে। আবিদ শাহরিয়ার ফোন দিয়েছে তাকে কথাটি ব্রেইন ক‍্যাচ করা মাত্র হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেইসঙ্গে আবিদ তাকে ভুল বুঝল ভেবে মিনমিন করে বলে,

‘একদমই না। আমি মোটেও বিরক্ত হইনি। আমি ঘুমোচ্ছিলাম আমার একজন ফেন্ড আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল। প্রচন্ড বিরক্তি হয়ে রিসিভ করেছিলাম তখনই আপনার ফোন আসল। আমি বিজি ছিলাম না!’

আবিদ সৌজন্যে হেসে সৌন্দেহ বসত জিগ্যেস করে,

‘আপনা সেই ফেন্ড কি আহানাফ দর্শিনী?’

প্রিয়দর্শিনী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মিথ্যা বলাটা তার পক্ষে সহজ না। আবিদ তাকে ভুল বুঝবে এটা ভেবে তার মস্তিষ্ক কাজ করা অফ করে দিচ্ছে। আর যাইহোক মিথ্যা বলে সে আবিদের কাছে ভালো সাজতে চায়না। নিজেকে ধাতস্থ করে মিন মিন কন্ঠে বলে,

‘হ‍্যা। কিন্তু আমি জানতাম না। আমি তাকে ফোন রাখতে বলছিলাম ঘুমাবো বলে তখনই আপনার ফোন এলো।’

আবিদের আহানাফের কথা শুনে রাগ হয়। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সেই সঙ্গে অনুভব করে প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে অসম্ভব জেলাসি। সে জানে প্রিয়দর্শিনী যা বলছে সব সত্যি। প্রিয়দর্শিনী সমন্ধে সব জানে। তবুও প্রিয়দর্শিনীকে যাচাই করার জন‍্য কন্ঠে নমনীয়তা বজায় রেখে বলে,

‘ও!’

প্রিয়দর্শিনীর আবিদের স্বাভাবিক কন্ঠ পছন্দ হলোনা। সে ভেবেছিল আবিদ জেলাস হবে। সোজাসুজি নিষেধ করবে অন‍্য কারো ফোন রিসিভ করতে। কিন্তু আবিদ স্বাভাবিক। প্রিয়দর্শিনী ইনিয়ে বিনিয়ে জিগ্যেস করে ,

‘শুধু ও? আপনার কিছু বলার নেই এই ব‍্যাপারে?’

‘আমার কি বলার থাকবে দর্শিনী?আপনি কি আমাকে বলার মত অধিকার দিয়েছেন?এতোবছর পরে কাউকে মন থেকে চাইলাম সে আমাকে প্রত‍্যাখান করে দিলো। এতে তার সম্পর্কে আমার কি বলার থাকতে পারে দর্শিনী?

আবিদের কথায় প্রিয়দর্শিনীর প্রচন্ড মন খারাপ হলো।বেশ বুঝতে পারছে আবিদ জেলাস সঙ্গে অভিমান করে আছে। তার সবটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু গলা কেঁপে উঠছে। প্রিয়দর্শিনী বলে,

‘আমি আহানাফের সঙ্গে প্রথম ফোনে কথা বললাম ম‍্যাজিস্ট্রেট স‍াহেব। ওরা সবাই আমার বন্ধু ঠিকই,কিন্তু নাদিম, আহানাফের সঙ্গে ক্লোজ নই আমি। ‘দে আর যাস্ট ফেন্ড’! ছেলেদের থেকে সবসময় দুরে থেকেছি। দিয়া, হৃদি ছাড়া তেমন কারো সঙ্গে মিশি নাই। আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লীজ্!’

আবিদ বুঝতে পারছে প্রিয়দর্শিনীর মনোভাব। প্রিয়দর্শিনী চায়না আবিদ তাকে ভুল বুঝুক। কিন্তু আবিদ তো প্রিয়দর্শিনীকে ভুল বুঝেনি। সে সব জানে প্রিয়দর্শিনীর ব‍্যাপারে। আবিদ শুধু প্রিয়দর্শিনীর মুখে বিয়েতে ‘হ‍্যা’ শুনতে চায়। আর যাইহোক এতটুকু সে বুঝেছে প্রিয়দর্শিনী তাকে অপছন্দ করেনা। এতেই চলবে ভালোবাসা নাহয় পরবর্তীতে তৈরি করে নিবে আবিদ। প্রিয়দর্শিনীর মুখে ম‍্যজিস্ট্রেট সাহেব কথাটি শুনে আবিদের প্রচন্ড হাসি পায়। আবিদ ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসি দমন করে কন্ঠে গভীরতা রেখে বলে,

‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছিলেন বলে ছাড় পেয়েছেন দর্শিনী। উত্তরটা কিন্তু এখনো পায়নি। আমি আপনার ‘না’কে ‘হ‍্যা’তে কনভার্ট হওয়ার অপেক্ষায়।’

প্রিয়দর্শিনী আবিদের কথায় তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে নেয়।
আবিদকে দেখার পর থেকে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখা দ্বায় হয়ে পড়েছে তার। আবিদকে সে ফেরাতে চায়না। যা জানতে চাইছিল সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে তার। এখন সত্যিটা বলার সময় এসে গেছে।

#চলবে

| আজ আরেকটি পর্ব থাকবে। ভুল ত্রু’টি ক্ষ’মা করবেন রি’চেক দেইনি। অবিরাম ভালোবাসা 🌺❤|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here