প্রস্থান — ৯ম পর্ব।
রিফাত হোসেন।
বেলা গড়িয়েছে। চারিদিকে আঁধার নেমে আসতেই ছাদ থেকে নেমে এলো চিত্রা আর রশ্মি। রশ্মি আজ বেশ খুশি। দীর্ঘদিন পর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ হয়েছে তাঁর। সুযোগটা হাতছাড়া করেনি সে। মুগ্ধ হয়ে আকাশ দেখেছে, আর নির্বিঘ্নে, প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়েছে। বিকেলে আকাশের মেঘগুলো কেমন বরফের মতো জমাট বেঁধে যায়, সন্ধ্যায় পূর্বাকাশে যে রংমহলের সমবেত হয়, তা আজ স্ব-চোখে দেখল সে। এর পুরোপুরি কৃতিত্ব চিত্রার! মেয়েটা না থাকলে আজ সে এখানে আসতে পারতো না। এত যত্নে কেউ আগে সময় উপভোগ করা শেখায়নি তাকে। সময়ের মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছে সে চিত্রাকে দেখে। মেয়েটা প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করে, আনন্দে কিংবা দুঃখে। তাঁর মতো জীবন নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে সময়ের অপচয় করে না।
মাগরিবের আজানের আগেই বাড়িতে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো সে। চিত্রা বেশ ক’বার অনুরোধ করল, রাতের খাবারটা যেন ওদের সাথে খেয়ে যায়। কিন্তু রশ্মি রাজি হলো না। অজুহাত হিসেবে জানালো, ‘বাড়িতে মা অপেক্ষা করবে আমার জন্য!’
গেইট দিয়ে বেরোতে যাচ্ছিল রশ্মি, চিত্রা পিছনেই ছিল, হঠাৎ ঝড়ের বেগে এক লোক বাইরে থেকে এসে থমকে দাঁড়াল সম্মুখে। হকচকিয়ে উঠল রশ্মি, চিত্রাও কিছুটা ঘাবড়াল। দুজনেই মাথা তুলে তাকালো লম্বা দেহের সুব্রত ভাইয়ের দিকে। খানিক বিস্মিত আর চঞ্চল হলো দুজনেই।
সুব্রত ভাই একপলক চিত্রাকে দেখে আবার সামনের রশ্মির দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অকস্মাৎ বলল, “তুমি কে?”
‘হা’ হয়ে গেল রশ্মির মুখ! সুব্রত ভাই যে তাকে চিনতে পারছে না, সেটা ভাবতেই তাঁর শরীর শিউরে উঠছে! সে কয়েক মুহূর্ত পর কী হলো জানা নেই, সে হঠাৎ চোখ-মুখ শক্ত করে বিদ্রুপের সুরে বলল, “সারাদিন ছোটছোট কাপড় পরা মেয়েদের সাথে চলাফেরা করেন তো, সেজন্য আমার মতো সাধারণ পোশাক পরা মেয়েদের মনে থাকে। ব্যাপার না।”
কথাটা শুনে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না সুব্রত। নিঃশব্দে, এক দৃষ্টিতে রশ্মির দিকে তাকিয়ে আছে সে। কী যেন ভাবছে মনেমনে! ভাবতে ভাবতেই সহসা বলল, “এত সেজেছ কেন? কী ভেবেছিলে, সাজলেই তুমি ওদের মতো হয়ে যাবে?”
রশ্মির আত্মসম্মান ক্ষত হলো। তাঁর চেহারা মলিন হয়ে এলো। এভাবে কেউ অপমান করে?
রশ্মিকে নির্বিকার দেখে সুব্রত ভাই আবার বলল, “সবাই যদি সেজেগুজে রানী হতে চায়, তাহলে রাজ্যের প্রজা কিংবা দাসী কে হবে? সব প্রজাতির মানুষকেই তো প্রয়োজন।”
অপমানে আর লজ্জায় রশ্মির চোখ ভিজে এলো। গলা ধরে গেল। নাক টানতে লাগল বারবার।
সুব্রত আবার বলল, “রূপোর গায়ে স্বর্ণের প্রলেপ দিলেই যেমন সেটা স্বর্ণ হয়ে যায় না, তেমনি মুখে সাদা পাউডার দিলেই তুমি বিশ্ব সুন্দরী হয়ে যাবে না। বুঝেছ?”
নিচের দিকে তাকিয়ে মাথাটা ঝাঁকালো রশ্মি। সে বুঝেছে; এ জীবনে আর সাজা হবে না তাঁর। দুই চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তাঁর। চোখে পলক ফেলা বাকি মাত্র! একটা পলক ফেললেই চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করবে, যেভাবে বৃষ্টি শেষ হলে টিনের চাল মাটিতে পানি পড়ে। সুব্রত ভাই আরও কিছু বলার আগে আচমকা ছুটে বেরিয়ে গেল সে।
রশ্মি চলে যেতেই বড় একটা শ্বাস ফেলে ভিতরে এলো সুব্রত। চিত্রাকে পাশ কাটিয়ে এগোতেই চিত্রার কথা কানে এলো। সে থেমে গেল।
চিত্রা সুব্রতর দিকে ঘুরে, চোখে চোখ রেখে বলল, “আপনি এমন কেন সুব্রত ভাই? সাজলে মেয়েদের প্রশংসা করতে জানেন না?”
সুব্রত তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, “জানা ছিল না।”
“তাই বলে মেয়েটাকে এভাবে বললেন?” ক্রোধে চিত্রার গলার আওয়াজ বেড়ে গেল। তাঁর কথায় ধমকের সুর। ইতোমধ্যে তাঁর শ্বাশুড়ি এবং কনা উপস্থিত হয়েছে ড্রয়িংরুমে। সে ওদিকে না তাকিয়ে আগের মতোই রুক্ষ গলায় বলতে লাগল, “আপনার মতো পাষাণ লোক আমি জীবনে দেখিনি। ভালো মেয়েদের দেখলে ছেলেদের মন নরম হয়ে যায়, শান্ত হয়ে যায়, আর আপনি কী-না ক্ষোভ ঝাড়লেন।”
আজও সুব্রতর চোখে চশমা, অভ্যাসগত ভাবেই! সে সেভাবেই মাথাটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, “তুমি কি সারাক্ষণই এত বকবক করো? চার্জ শেষ হয় না তোমার? যখনই দেখা হয়, একটা না একটা ব্যাপার লেগেই থাকে। আমি তো জানতাম বিয়ের পর অন্তত প্রথম ছ’মাস মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় মাথা থেকে ঘোমটা সরায় না। চোখ তুলে কথা বলে না। আর তোমার তো বিয়ের আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
চিত্রা মুখটা ঈষৎ বাঁকা করে, কটাক্ষ করে বলল, “মেয়েদের ব্যাপারে কত জানেন, সে তো নিজের চোখেই দেখতে পেলাম। আপনি এখান থেকে যান তো সুব্রত ভাই। ইচ্ছে করছে আপনাকে গলা টিপে..।”
সুব্রত চোখ থেকে চশমা সরিয়ে চিত্রার চোখের দিকে তাকাতেই চিত্রা স্তব্ধ হয়ে গেল। মুখ দিয়ে আর একটা শব্দও বেরোলো না। সুব্রতও দাঁড়িয়ে থাকলো না বেশিক্ষন। অত সময় কই তাঁর? সে ছুটলো আপন নীড়ে!
সন্ধ্যার পর খালেদ সাহেব একটা খুশির সংবাদ দিলেন সবাইকে। তিনি একটা বড় অর্ডার হাতে পেয়েছেন। অর্ডারটা এত বড় যে, সব ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই তাঁদের কোম্পানির নাম অনেক উপরে ওঠে যাবে। উন্নতি হবে খুব। ভদ্রলোক এর অনেকটা কৃতিত্ব চিত্রাকে দিলেন। তিনি বললেন, “বুঝলে মা, অফিসটা কিছুতেই দাঁড় করাতে পারছিলাম না। লাভ হচ্ছিল না তেমন। বড় কোনো অর্ডারও আসেনি। কিন্তু এবার দেখো, তুমি আসার পরপরই আমাদের ভাগ্য খুলে গেল।”
শ্বশুরের কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল চিত্রা। সে লজ্জায় লাল হয়ে বলল, “কী যে বলেন না, বাবা। আমি আর কী করেছি? এইসব তো আল্লাহর রহমত। তাঁর মেহেরবানি।”
খালেদ সাহেব বললেন, “সে তো ঠিকই। কিন্তু তুমি আমাদের জন্য লাকী। নাহলে তুমি বাড়িতে আসার পরপরই কী এমন খুশির সংবাদ আসে? বুঝলে, বিদেশি ক্লায়েন্ট, খুব বড় অর্ডার। আমাদের গার্মেন্টস এর সব প্রডাক্ট বিদেশে যাবে এবার। শুধু দেশে না, বিদেশেও ছড়িয়ে যাবে আমাদের কোম্পানির নাম।”
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই। উৎসবে মুখরিত একটা পরিবেশ। সবার মুখেই প্রশস্ত হাসি।
হঠাৎ কনা একটা প্রস্তাব দিলো; সে বলল, “বাবা, এই আনন্দের মুহূর্তটা আরও চমকপ্রদ হলে কেমন হয়?”
“কী করতে চাচ্ছিস?” ফিরোজ বোনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল।
কনা বলল, “আমরা আজ ডিনারটা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে করতে পারি। অনেকদিন বাইরে কোথাও খাওয়া হয় না। কী বলো, ভাবী?” ভুরু নাচিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো কনা।
চিত্রা ঠোঁট টিপে বলল, “বাবা-মা যদি রাজি হয়, তাহলে অবশ্যই যাবো।”
খালেদ সাহেব স্ত্রীর দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালেন, অনুমতি নেওয়ার জন্য! দীপালী বেগম কর্তাসুলভ ভঙ্গিতে, গম্ভীর গলায় বললেন, “ছেলে-মেয়ে যখন আবদার করছে, তখন চলো যাই আজকে। তাছাড়া আজ এত আনন্দের দিন।”
“তাহলে তোমরা রেডি হয়ে নাও। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।” উঠতে উঠতে খালেদ সাহেব বললেন।
চিত্রা দাঁড়াল। বাবার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল, “বলছিলাম কী বাবা, সুব্রত ভাই যাবেন না আমাদের সাথে?”
“ও যদি যেতো, তাহলে অনেক আগেই ওকে ডেকে আনতাম। আনন্দের সংবাদটা ওর সামনেই দিতাম।” খালেদ সাহেবের উৎফুল্ল কণ্ঠস্বর হঠাৎ কাতর হয়ে উঠল।
দীপালি বেগম এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে উঠেছে। ফিরোজ আর কনা হঠাই খুব বিরক্ত হলো চিত্রার উপর। কী দরকার ওর নাম নেওয়ার? ও তো এই পরিবারের কেউ না।
চিত্রা ভাবান্তর ভঙ্গিতে বলল, “আপনি একবার বলে দেখুন না। এমন খুশির সংবাদ, হয়তো যাবে।”
“আমি বললে কখনোই যাবে না। উল্টো রাগান্বিত হবে। জানি না কেন ও আমার উপর এত রেগে আছে।”
চিত্রা কিছুক্ষণ ভেবে, ভীতসন্ত্রস্ত ভাবে বলল, “বলছিলাম কী বাবা, আমি একবার চেষ্টা করব?”
“তুমি?” ভুরু উপরে তুলে, অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন খালেদ সাহেব।
দীপালি বেগম কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে উঠলেন, “না না। ওকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ওর কথাবার্তা আমার সহ্য হয় না। নিজেকে অনেককিছু মনে করে ও।”
ফিরোজ মা-কে সমর্থন করে বলল, “তাছাড়া তুমি বললেই যে ও আমাদের সাথে যেতে রাজি হবে, এমনটা ভাবছ কেন? সেদিন কী হয়েছিল মনে নেই? তুমি ওর ঘরে গিয়েছিল বলে কেমন আচরণ করেছিল তোমার সাথে!”
চিত্রা বলল, “সেদিন পরিস্থিতিটাই অমন ছিল। আমি উনার ব্যক্তিগত কিছু জিনিসে হাত দিয়েছিলাম বলেই রেগে গিয়েছিল।।এর পরেও তো আমি চা নিয়ে গেছি, খারাপ আচরণ করেনি তো আমার সাথে। তাছাড়া আজ তো একটা অনুরোধ নিয়ে যাচ্ছি আমি।”
“সেদিন সবটা বলার পরও, চিত্রা?” ফিরোজ অবাক চোখে দেখতে লাগল চিত্রাকে।
চিত্রা কোমল সুরে বলল, “দেখো, আমি অনেক ভেবে দেখেছি। সুব্রত ভাই পূর্বে যা করেছে, তাঁর জন্য উনি শাস্তিভোগ করেছেন। ৫টা বছর! নিতান্তই কম সময় না। এখন যদি আমরা পরিবারের লোকেরা উনার পাশে না দাঁড়াই, তাহলে উনি যাবে কোথায় বলো? মানুষটা যতক্ষণ বাড়িতে থাকে, একটা যন্ত্রের মতো ঘরে পড়ে থাকে। কারোর সাথে কথা বলতে পারে না। এভাবে একটা মানুষ বাঁচতে পারে?”
খালেদ সাহেব খুশি হলেন চিত্রার কথা শুনে। তিনি বললেন, “চিত্রার সাথে আমি একমত। অনেক তো হলো। ১টা বছর ধরে ছেলেটা বাড়িতে আছে, অথচ এক মিনিট বসে আমাদের সাথে কথা বলতে পারেনি। আমরা কী সেই সুযোগ দিয়েছি ওকে? জেল থাকতে তোমরা কেউ একবারের জন্যও দেখা করোনি ওর সাথে। ভুল তো মানুষেরই হয়। আবার শুধরে নেয় নিজেকে। ওকে অন্তত একটা সুযোগ দাও তোমরা। না জানি কত কষ্ট, কত অভিমান জমে আছে ওর মধ্যে! এভাবে ও আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
ফিরোজ বলল, “ওটা কোনো ভুল ছিল না, বাবা। অপরাধ ছিল। ভুলে গেছ, ওর জন্য গোটা এলাকা আমাদের পরিবারকে কতটা অসম্মান করেছিল। কত হেসেছিল আমাদের নিয়ে। আমাদের সবার দিকে আঙ্গুল তুলেছিল, আমরা নাকি বাড়ির বউকে নির্যাতন করেছি দিনের পর দিন। অথচ এইসব ও নিজে করেছে। আমরা থামাতে চেয়েছি।”
চিত্রা ফিরোজের দিকে আকুতি ভরা চাহনি ঢেলে বলল, “প্লিজ। অন্তত আজকের দিনটার খুশির সামান্য ভাগ উনাকে দিই। আমার জন্য অন্তত।”
ফিরোজ কিছু বলল না। সোফায় বসে থাকল। কনা প্রথম থেকেই নিশ্চুপ। এইসব ব্যাপারে সে খুব কমই কথা বলে। তবে বাবা আর ভাবীর কথা শুনে আজ তাঁরও মন চাচ্ছে, সুব্রত ভাইকে সাথে নিতে! নরম হৃদয় তাঁর, গলে যায় সহজে!
সবাই ফিরোজের মায়ের দিকে তাকালে, ভদ্রমহিলা বললেন, “জানি না। সবাই যখন বলছ, তখন আমি না করলে সব দোষ আমাকে দিবে। তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।”
শেষ বাক্যে একটু যেন সম্মতির ছোঁয়া পেলো চিত্রা। উজ্জীবিত হয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, “যাবো?”
ফিরোজ বলল, “যাও। তবে একবার না বললেই চলে আসবে। অত খোশামুদি করতে হবে না।”
নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরল চিত্রা, খুশিতে। এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালু ডলে, খুব উত্তেজনা নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।
খালেদ সাহেব আর কনা নিজেদের ঘরের দিকে অগ্রসর হলো, তৈরি হওয়ার জন্য। ফিরোজ উঠতে চাইলে সহসা দীপালি বেগম বাধা দিলেন, “ফিরোজ, শোন। বোস একটু।”
উঠল না ফিরোজ। বসে কৌতূহল ভরা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
দীপালি বেগম কিছুক্ষণ পর ভীষণ গম্ভীর গলায় বললেন, “তোর বউয়ের ভাব-গতিক আমার কাছে ভালো ঠেকছে না কিন্তু। অল্প বয়সী মেয়ে, দেখিস, আবার কোনো অঘটন না ঘটে যায়।”
“মানে? কী বলছ এইসব?” মায়ের কথা শুনে ফিরোজের চোখ ছানাবড়া!
দীপালি বেগম ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ চোখ তাক করে বললেন, “ঠিকই বলছি। সারাক্ষণ তোর বউ যেভাবে সুব্রতর গান গেয়ে বেড়ায়, এতে অঘটন ঘটতে বেশিদিন লাগবে না।”
মায়ের কথার প্রতিবাদে ফিরোজ মুখ শক্ত করে বলল, “কীসব বলছ তুমি, মা? আমি এইসব কখনো ভাবিনি। তাছাড়া চিত্রার উপর আমার ভরসা আছে। ও অত খারাপ কিছু কখনো কল্পনাই করবে না।”
“উঠতি বয়সী মেয়েদের অত ভরসা করতে নেই। আমি বলি কি, বউয়ের কথায় না নেচে, নিজে বউকে নাচা।”
“কী বলতে চাইছো তুমি, মা?” ফিরোজের কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বেরোতে লাগল মায়ের কথা শুনে। লাল টকটকে হয়ে এলো দুই কান। মায়ের কাছ থেকে এই ধরনের কথা সে প্রত্যাশা করে না।
“অল্প বয়সে তোর বাবা-ও এমন উড়তো। সারাক্ষণ বড় ভাইদের নিয়ে ভাবতো। বড় ভাইয়ের বউ, বড় ভাইয়ের ছেলে, এদের চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খেতো সবসময়। অফিস থেকে এসে আগে যেতো বড় ভাইয়ের বউ-বাচ্চার খবর নিতে৷ তোর তখন জন্ম হয়নি। উনি তো নিজের বাচ্চার কথা তখন ভাবতোই না। বলতো ভাইয়ের বাচ্চাই সবকিছু। বড় ভাইয়ের বাচ্চা ওর বাচ্চা নয়? অবস্থা বেগতিক দেখে আমার মায়ের পরামর্শে শেষমেশ তোর বাবাকে একটু টাইট দিলাম। সেই শুরু, আজও তোর বাবা আমার দিকে চোখ তুলে কথা বলার সাহস পায় না। এখনো সময় আছে। বউকে একটু টাইট দে। এত সুব্রত ভাই-সুব্রত ভাই করতে মানা কর। না-হলে পরে কপাল চাপড়াতে হবে।” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ওঠে চলে গেলেন দীপালি বেগম।
মা চলে যাওয়ার পরেও ফিরোজ একভাবে বসে রইল, ঠিক পাথরের মতো শক্ত হয়ে। যেসব ভাবনা আগে তাঁর মাথায় আসেনি, আজ সেসব ভাবনার থেকেও জঘন্য ভাবনা ভাবতে লাগল সে। চিত্রা আর সুব্রতকে নিয়ে তাঁর মনে এমন একটা সম্ভাবনার জন্ম হলো, যা অত্যন্ত ভয়ংকর!
৯ম পর্ব এখানেই সমাপ্ত। পরবর্তী পর্বে শীঘ্রই আসছে।
গত পর্বের লিংক – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=827499351528100&id=100028041274793