এক রাতের বউ পর্ব_০১

0
873

#এক রাতের বউ
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_০১

ফজরের আজান দিচ্ছে…!
আজানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙে গেলো! চোখ ঢলতে ঢলতে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে চলে আসলাম ওযু করার জন্য শীত কাল চলে আসছে বাহিরে একটু একটু শীত পরেছে পানিও বেশ ঠান্ডা কিছু করার নেই প্রতিদিনের মতো এই ঠান্ডা পানি দিয়েই অযু করতে হবে।

অযু করে রুমে চলে আসলাম এবং ৪রাকাত ফজরের নামাজ ২রাকাত সুন্নত ও ২রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করে নিলাম। মোনাজাত শেষ করে রান্নাঘরে চলে আসলাম একটা সুয়েটার পরে আর একটা পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে প্রতিদিনের মতো শুরু করলাম। সংসারের কাজকর্ম শেষ করে পরে অফিস যেতে হবে। চুলায় চাল ধুয়ে বসিয়ে দিলাম আর অন্য দিকে তরকারি কাটছি একটু একটু শীতে কাপছি ভাত মাছ ডাল রান্না শেষ করলাম এখন ৬ঃ২০টা বেজে গেছে সব কিছু টেবিলের উপর সাজিয়ে রেখে চলে আসলাম শাওয়ার নিতে বাথরুমে।

৬ঃ৪০বাজে! আমি আমার মতো খেয়ে অফিসের জন্য রওনা দিলাম। প্রতিদিনের মতো সেই বাস স্টেশনে গিয়ে ওয়েট করতে হবে বাসের জন্য তারপর ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে হবে। যা বলেছিলাম ঠিক তাই বাস যে কখন আসবে।
ওই তো বলতে বলতে চলে আসছে আজ তো বাস থামার সাথে সাথে সবার আগে দৌঁড়ে উঠবো আমি!
এই এই এই সড়ো সড়ো সাইড সাইড প্লিজ সরুন আমাকে উঠতে দিন উফফ দীর্ঘ ২মিনিট ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠলাম কিন্তু এ কি একটা সিট ও খালি নেই মানে আজকেও দাঁড়িয়ে যেতে হবে মাঝেমধ্যেই বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হয় লোকাল বাস বলে কথা। চলুন বাস চলতে চলতে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেই আমি হচ্ছি প্রীতি পুরো নাম আনিশা রহমান প্রীতি সবাই ছোটো করে প্রীতি বলেই ডাকে আপনারা না-হয় প্রীতি-ই বলবেন আমার ভালো লাগবে। আমি হচ্ছি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একটা সাধারণ সিম্পল মেয়ে আমি গাজীপুর থাকি আর এখানেরই একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে P.A-র জব করি বস আমার ইয়াং না এক ছেলের বাবা। ছেলের কথা আমরা সবাই শুনেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ তাকে দেখেনি সাথে আমি প্রায় ৩বছর হলো আমি এখানে জব করি শুধু বসের ছেলের কথা শুনেই গেলাম আর কেউ দেখবেই বা কিভাবে সে তো পড়াশোনার জন্য দেশের বাহিরে থাকে ছোটো থেকে। আমাদের বস মারুফ খান ও উনার স্ত্রী নার্গিস খান খুব ভালো মানুষ এত বড়লোক হওয়ার পরেও তাদের কোনো অহংকার নাই। মিসেস নার্গিস মাঝে মাঝেই অফিস আসেন আর সবার সাথে গল্প করেন। আমি স্যারের পি.এ তাই একটু বেশিই আদর করে।
স্যার মাঝেমধ্যে শাসন করে কিন্তু নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। আমার পরিবার বলতে আজ থেকে ৮বছর আগে আমার মা স্টক করে মারা যায় মা যখন জীবিত ছিল তখন আমি ছিলাম আমার মা’য়ের আদরের মেয়ে আর বাবার রাজকন্যা অনেক আদর করতো আমাকে অনেক যত্ন করতো আমার। তারপর মা চলে যায় না ফেরার দেশে বাবা মা চলে যাওয়ার পর
নিয়ত করেছিলো সারাজীবন আমাকে নিয়েই পার করে দেবে আর বিয়ে করবে না। আমাকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানাবে আমার জন্যই বাঁচবে আমার মাকে বাবা খুব ভালোবাসতো আর আমাকেও মা চলে যাওয়ার পর ২বছর পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো। আমরা ধীরে ধীরে নিজেদের মত খুশি ছিলাম বাবা আমার আগের থেকে তখন আরও বেশি যত্ন নিতো শুরু করলো আমার বাবা হয়েগেলো দুনিয়ার বেস্ট বাবা। ২বছর পর বাবা যখনই বাহিরে যেতো মানুষ অনেক কথা বলতো…

” তোর বয়সই বা কত সারাজীবন পরে আছে একা কিভাবে থাকবি একটা মেয়ে আছে মেয়েরও তো মায়ের ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে আরেকটা বিয়ে করে নে। তোর জন্য না হলেও প্রীতির জন্য বাচ্চা মেয়ে মায়ের অভাব পূরণ হবে। লাগাতার এই সব কথা শুনতে শুনতে বাবা একদিন সত্যি সত্যি বিয়ে করে নিয়ে আসলেন একজন ভদ্র মহিলাকে আর আমাকে বললেন তোমার নতুন মা। ”

আমিও তাকে আপন করে নিয়েছিলাম শুরু শুরু সে কয়েকদিন ভালোই ছিলো তারপর তার আসল চেহারা দেখালো তার সামনে আব্বুও কিছু বলতে পারতো না ছোটো ছিলাম নিজের অজান্তেই ভুল করে ফেলতাম আর শাস্তি সরূপ সৎ মা আমাকে মারতো সাথে খেতেও দিতো না অনেক কান্না করতাম আমার সাস্থ শরীর অনেক ভালো ছিলো বলতে পারেন গুলুমুলু ছিলাম দিন দিন শুঁকিয়ে যাচ্ছিলাম বাবা সেটা লক্ষ্য করে মা’কে জিজ্ঞেস করলে সে হাজারটা মিথ্যে কথা বলতো। বাবা বুঝেও চুপ করে থাকতো কারণ কিছু বললেই ঝগড়া হতো একদিন বাবা আমাকে পুরো বাড়ি খুঁজে কোথাও পায়নি বাহিরে রাস্তায় চলে আসে খুঁজতে খুঁজতে তারপর কয়েকজন লোককে আমার কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন বলে কবরস্থানের দিকে যেতে দেখেছে বাবাও দৌড়ে এসে দেখে আমি মা’র কবরের উপর শুয়ে হাউমাউ করে কাঁদছি আমার কান্না দেখে বাবা নিজেকে সামলাতে না পেরে দৌঁড়ে এসে আমাকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে ।
বাবাঃ কি হয়েছে মা এভাবে একা এখানে এসে কাঁদছিস কেন?
আমিঃ বাবা আমার মা কে এনে দাও না বাবা মা কেনো চলে গেলো আমাকে একা ছেড়ে আমি মা’র কাছে যাবে! আআআআআআআআআ ?
বাবা আমাকে জরিয়ে ধরে ছিলো আমার কথা শুনে আমাকে নিজের থেকে সরালো আর আমার দুই হাতে চেপে ধরেছে আমার দিকে তাকালো.।
আব্বু: প্রীতি তোর গালে থাপ্পড়ের দাগ আর শরীরেও তো মারার দাগ তোকে মারছে কে?
আমি কোনো উত্তর দেইনি শুধু কেঁদেই যাচ্ছিলাম।
বাবা আবারও জিজ্ঞেস করে– তোর নতুন মা তোকে এভাবে মেরেছে।
আমি মাথা নাড়িয়ে হাবোধক উত্তর দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বাবা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় বাড়িতে এসে মা’কে জিজ্ঞেস করতেই মাও বেশ উল্টা পাল্টা কথা বলে অন্যের মেয়েকে সে নিজের মেয়ে বানাতে পারবে না যা করেছে বেশ করেছে তারপর আমার দিকে তেড়ে আসছিলো আর বলে।
সৎ মা: তবে রে ফাজিল মাইয়া বাপের কাছে আমার নামে বিচার দেস তোর তো আজকে হচ্ছে।

আমাকে মারতে যাবে তখনই বাবা মা’র হাত ধরে উল্টো হাতে ঠাসসস করে চড় মারে মার গালে।
মা তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যায়।
বাবা- আমার মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর আজ পর্যন্ত আমি একটা ধমকও দেইনাই আমার মেয়েকে আমার অনুজা (আমার আম্মুর নাম অনুজা) তুমি ছাড়া তুই কয় নাই কলিজার টুকরা রে তুই এতদিন কষ্ট দিছোস খাবার দেস নাই মারছোস আমি তো আগেই বুঝছিলাম যখন ওর সাস্থ দিনদিন নষ্ট হচ্ছিল যে মেয়েকে না খাইয়ে আমরা খাইনি আর তাকে তুই দিনের পর দিন খেতে দেস নাই।
আমসর মেয়ের ভালো থাকার ব্যবস্থা আমি করবো।

তার ২দিন পর বাবা আমাকে গার্লস হোস্টেলে ভর্তি করে দেয় আর সেখানেই থাকার ব্যবস্হাও করে দেয়!
মাঝে মাঝে বাড়ি আসলে সৎ মার ব্যবহার পছন্দ হত না তাই বাড়ি আসা বন্ধ করে দেই দিন যত গেলো বাবা ও অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেলো। আমার সেই আগের বাবা নয় সে এখন আমার সৎ মা’র স্বামী। আমার সৎ মা আজও আমাকে পছন্দ করে না তার নিজের কোনো সন্তান নেই কারণ তার ঝামেলা পছন্দ না তাই কখনো সন্তান নেয়নি। ওই যে অফিস যাওয়ার আগে বাড়ির কাজ কর্ম রান্না বান্না থালাবাসন ধুঁয়ে সব কাজ শেষ করে আসি আর সে ঘুম থেকে উঠে শুধু খাবে আর রাতে বাড়ি ফেরার পরও আমাকেই সব করতে হয় শরীর অনেক ক্লান্ত থাকে রোজরোজ আর এইসব ভালো লাগে না। কিন্তু না চাইতেও সব করতে হয় কারণ আমার কষ্ট বোঝার জন্য আমার যে মা নেই সত্যিই বলে লোকে যার মা নেই তার কেউ নেই দুঃখ প্রকাশ করার জন্য ও আপন কেউ নেই শুধু কয়েকজন কলিগ আছে আমার সম্পর্কে আমার বস ও ম্যাডাম সব জানে তাই আমাকে একটু আদর করে।
অনেক কথা বললাম কথা বলতে বলতে চলে আসছি আমি আমার অফিসের সামনে নামলাম।

অফিসে এসে আগেই কফি নিয়ে যেতে হবে স্যারের জন্য কফির মগ নিয়ে চলতে লাগলাম উদ্দেশ্য স্যারের ক্যাবিন!
-আসবো স্যার?
-হ্যা এসো এসো! তোমার আবার পারমিশন নিতে হয় না-কি?
– স্যার আপনার কফি!
– হুম রাখো!
-স্যার আজ ১১টায় আপনার মিস্টার রঞ্জিত এর সাথে মিটিং আছে।
– ও হ্যা ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো!
:- এখন আমি আসি স্যার
সারাদিন এইভাবে ছুটাছুটি করতে লাগলাম। মিটিং খুব ভালো হয় আজ বৃহস্পতিবার তাই আজ একটু তারাতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে এই আশাতেই বসে আছি সাথে দু’জন কলিগ তারা আর রাত্রি কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে!
কিছুক্ষণ পর প্রীতি তোকে স্যার এখনি ডাকছে।
কি বলিস তারাতাড়ি কফির মগ রেখে দিলাম উড়াধুরা দৌঁড় স্যারের ক্যাবিনের সাথে এসে থামলাম।
-আসবো স্যার!
-আসো!
-প্রীতি আমাদের বিকাল ৩টার মধ্যে একটা মিটিংয়ের জন্য গাজীপুরের বাহিরে যেতে হবে তাই ফাইল নিয়ে রেডি থেকো।
-ওকে স্যার!
বলে চলে আসলাম। লাঞ্চ টাইম!
সবাই এক সাথে বসে খাবার শেষ করে গল্প করছি।
ঠিক ৩টা বেজে ৫মিনিট!
গাড়ি চলছে আমিও বসে আছি অপেক্ষা করছি কতক্ষণে পৌঁছাবো।

চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here