প্রণয় রেখা পর্ব ৫

0
605

#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫.

মোহনা আর ভার্সিটিতে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। মন মেজাজ ঠিক নেই তার। মন বলছে কোনো এক ঝামেলা অবশ্যই হবে। এশা তার সাথে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু সে কারোর সাথে কোনোরূপ কথা না বলে নিজে নিজেই চলে আসে।

লায়লা বেগম দরজা খুলে মেয়েকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী ব্যাপার, আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?’

মোহনা জুতা খুলতে খুলতে বলল,

‘শরীরটা ভালো লাগছিল না আম্মু, তাই চলে এসেছি।’

‘আচ্ছা যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’

রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মাথাটা টনটন করছে। ক্লান্ত লাগছে। ভালো লাগছে না কিছু। ঐ বিদেশির কথা মাথা থেকে কোনো ভাবেই বের হচ্ছে না তার। দুশ্চিন্তায় অস্থির সে। কোনো উপায়ও আওড়াতে পারছে না। দিন যত যাবে ঝামেলা ততই বাড়বে। আর কোনো ভাবে যদি এসব বাবার কানে যায়, তবে তার মৃত্যু অবধারিত।

ভেবে ভেবে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মন নিয়ে মোহনা ওয়াশরুমে ঢুকে গোসল করতে। সে গোসল করতে করতেই তার ছোট বোন মাহিয়াও স্কুল থেকে চলে আসে। সে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে মোহনার ওয়াশরুমের দরজায় বার কয়েকবার ধাক্কা দেয়। মোহনা খুব বিরক্ত হলেও ভেতর থেকে কোনপ্রকার জবাব দেয় না। মাহিয়া ড্রেস চেঞ্জ করে খাটের উপর আরাম করে বসে। তার মন আকুপাকু করছে সব শোনার জন্য। অশান্ত মন নিয়ে সে আরো দু বার বোন কে ডাকল।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই মোহনা মাহিয়াকে আগে একটা জোরে ধমক দিল। তার ডাকাডাকির জ্বালায় সে ঠিকমতো গোসলটাও করতে পারেনি। কিন্তু মাহিয়া এসবে মাথা না ঘামিয়ে উল্টো খুব উত্তেজিত হয়ে মোহনাকে জিজ্ঞেস করল,

‘এই আপু, কী কী হয়েছে বলোনা।’

মোহনা জবাব না দিয়ে চুল মুছতে লাগল। মাহিয়া তাকে পুনরায় একই প্রশ্ন করল। মোহনা বিরক্ত হলো এতে। বলল,

‘কী হবে? কিছুই হয়নি।’

‘আরে, তুমি না ঐ বিদেশি ছেলেটার সাথে না দেখা করবে বলেছিলে; তা করেছ দেখা?’

মোহনা ভেজা টাওয়াল টা বিছানার উপর ছুঁড়ে মারল। রাগি গলায় বলল,

‘হ্যাঁ, দেখা করেছি।’

মাহিয়া আরো বেশি চটপটে হয়ে পড়ল। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

‘কী কথা হয়েছে তোমাদের?’

মোহনা ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ঐ পোলা বলেছে সে নাকি আমাকে ছাড়া তার দেশে ফিরে যাবে না। সে নাকি আমাকে বিয়ে করবে। আমার বাসায় এসে মা বাবার সাথে কথা বলবে।’

‘আল্লাহ, কী সাংঘাতিক! তারপর তুমি কী বলেছ?’

‘আমরা সবাই ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ও মনে হয় খুব ত্যাড়া, এত সহজে মনে হচ্ছে না বুঝবে।’

মোহনার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ দেখে মাহিয়া বলল,

‘থাক, চিন্তা করো না আপু। তুমি ওকে আর পাত্তা দিও না তাহলেই হবে। আর ফেইসবুক থেকেও ব্লক করে দাও, যেন ও তোমার সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখতে না পারে।’

‘হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। দাঁড়া, এখনই ওকে ব্লক করছি।’

যেমন কথা তেমন কাজ। মোহনা সঙ্গে সঙ্গেই লরিনকে ফেইসবুক আর মেসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দিল। এবার যেন কিছুটা হলেও শান্তি পাচ্ছে সে। লোকটার ফোন আর আজাইরা মেসেজ থেকে তো অন্তত রেহাই পাবে সে।

মোহনার বাবা বাইরে থেকে আসার পর সবাই একসাথে খেতে বসল। খাওয়ার মাঝেই মোহনার বাবা বললেন,

‘জানোতো মোহনার মা, আগামী সপ্তাহে নাকি আব্দুলের ছেলে অরূপ দেশে আসছে। ভাবছি ও আসলে, আমাদের বাসায় ওকে একবার দাওয়াত করবো, তুমি কী বলো?’

লায়লা বেগম সম্মতি জানিয়ে বললেন,

‘হ্যাঁ অবশ্যই। কতদিন পর ছেলেটা আসছে, ওর পুরো পরিবারসহ দাওয়াত করবে বুঝেছ?’

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’

“অরূপ” নামের মানুষটার সাথে মোহনার খুব একটা পরিচয় নেই। বাবার বন্ধুর ছেলে হওয়ার সুবাদে যা একটু পরিচয় ঐটুকুই। কখনো “কেমন আছেন, ভালো আছি” ব্যতিত তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয়নি। তবে মানুষটা কে সে যতবারই দেখেছে ততবারই মনে হয়েছে; যদি তার কাছে কোনো পারফেক্ট মানুষের সংজ্ঞা চাওয়া হয় তাহলে সে তার কথাই বলবে। ভেতরে আর বাহিরে কারোর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য থাকলে তাকে আর অন্য সৌন্দর্য খুঁজে বেড়াতে হয় না। আর সেই সৌন্দর্যের’ই একনিষ্ঠ অধিকারী হলো “অরূপ” নামের ব্যক্তিটি।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আজ কেউ ছাদে যায়নি। দুই বোন আজ ঘুমিয়েছে। সেই ঘুম তাদের ভেঙেছে সন্ধ্যা সাত’টা নাগাদ। মোহনা উঠে গিয়ে চা বানাল। তার হাতের মালাই চা দারুণ মজা। মাহিয়ার মতে তার বোনের হাতের এই মালাই চা একবার যে খাবে সে আর অন্য কোনো চায়ের কথা চিন্তাও করতে পারবে না। মোহনা আজ আবার মালাই চা বানিয়েছে। মা বাবাকে দুই কাপ দিয়ে বাকি দুই কাপ নিয়ে নিজের রুমে এল সে। মাহিয়া তখন তার চুলে বেনী করছিল। মালাই চা দেখে মাহিয়ার মুখে চমৎকার হাসি ফুটে উঠল। চুল বাঁধা রেখে সে চা পান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মোহনাও তার পাশে বসল। চা খেতে খেতেই ফোনটা হাতে নিল সে। দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল এসেছে। সময় দেখে বুঝল, সে যখন ঘুমিয়েছিল তখনই কলগুলো এসেছে। ফোনটা সাইলেন্ট মুডে থাকায় আর টের পায়নি। নাম্বার টা মোহনার অচেনা। তাই তার আর সেই নাম্বারে কল ব্যাক করতে ইচ্ছে করল না। সে নাস্তা টাস্তা খেয়ে পড়তে বসে গেল।

রাতের খাবারের পর মোহনা নিজের রুমে আসে। ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা তার ফোনটা ঠিক সেই সময়’ই বেজে উঠে। হাতে নিয়ে দেখে সেই আগের আননোন নাম্বার। কলটা এবার রিসিভ করল সে। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘হ্যালো, কে বলছেন?’

অপর পাশের লোকটি সালামের জবাব দিয়ে বলল,

‘আমাকে ব্লক কেন করলে, মোহানা? এক্ষুণি বারান্দায় এসো, আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।’

মোহনার আর বুঝতে বাকি রইল না লোকটি কে। ভয়ে তার গলা তখন শুকিয়ে গেল। এত রাতে লোকটি তার বাসার নিচে। কী ভয়ানক ব্যাপার! ফাঁকা মস্তিষ্কে সে ভেবে পাচ্ছে না কী করবে। কলের ওপারের ব্যক্তিটি তখন বলল,

‘আমি অপেক্ষা করছি তো মোহানা। কাম ফাস্ট।’

মোহনা দ্রুত বারান্দার কাছে গেল। গিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই রাস্তার ওপারে লরিন দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা ঝাপসা। তবে শরীরের গঠন দেখে তাকে চেনা যাচ্ছে। লরিন দূর থেকে মোহনাকে দেখে তৃপ্তি পেল খুব। উল্লসিত কন্ঠে বলল,

‘I miss you, Mohona.’

মোহনা কপাল কুঁচকাল। বলল,

‘আপনি আমার নাম্বার কীভাবে পেলেন?’

লরিন হেসে বলল,

‘It’s a magic.’

মোহনা রেগে গিয়ে বলল,

‘আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? বলুন, আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছেন? কে দিয়েছে আমার নাম্বার আপনাকে?’

লরিন বলল,

‘কেউ দেয়নি।’

‘তাহলে নাম্বারটা কি আকাশ থেকে টুপ করে আপনার মোবাইলে এসে পড়েছে?’

‘হা হা, কিছুটা এমনই। আচ্ছা আমি বলব, আগে ঠুমি আমাকে আনব্লক করো।’

‘কখনোই না।’

‘তাসলে আমিও তোমাকে কখনোই কিছু বলব না।’

মোহনা রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিল। নাম্বারটাও সাথে সাথে ব্লক করে দিল সে। কিন্তু পরক্ষণেই সে দেখল আরেকটা আননোন নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসছে। সে বুঝতে পারল, এত সহজে এই বিলাতি ইন্দুরের কাছ থেকে সে রেহাই পাবে না।

চলবে…

(এখনই কিছু বুঝতে পারবেন না। তবে হ্যাঁ, লরিন সত্যি সত্যিই মোহনার জন্য খুব বিরক্তিকর একজন লোক হবে। অপেক্ষা করুন…😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here